#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১১.
#writer_Mousumi_Akter
‘লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কথা শুনছেন,কেনো শুনছেন?আমার ব্যাক্তিগত কথা থাকতেই পারে কারো সাথে আপনি কান পাতবেন কেনো?
‘
রোশান স্যার হাতা গোটাতে গোটাতে আড়চোখে আমাকে পরখ করে বললেল,
‘তোমার পারসোনাল কথা কি সব সময় আমাকে নিয়েই থাকে।আমি জেলাস ফিল করি,আমি রোমান্টিক, তোমাকে রাতে ঘুমোতে দিচ্ছিনা এসবের মানে কি সারাহ সিদ্দিকী।’
‘যা সত্য তাই ই বলেছি,আপনি কি কারো বর হওয়ার যোগ্য নাকি।’
‘বর হওয়ার যোগ্য হতে হলে কি করতে হবে আমাকে?রোমান্টিক হতে হবে।’
উনি ভ্রু উচিয়ে কথাটা বললেন।
‘বরেরা এরকম গম্ভীর,মুডি, থমথমে হয়ে থাকে না।আর অবশ্যই রোমান্টিক হতে হবে।’
উনি দু’পা এগিয়ে এসে থমথমে কন্ঠেই বললেন,
‘বর হবার যোগ্যতা আছে কিনা প্রুভ দেই।’
বলেই আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে উনার দিকে টেনে নিলেন।সাথে সাথে গিয়ে উনার বুকে আচড়ে পড়লাম আমি।ওষ্টদ্বয় গিয়ে উনার বুক স্পর্শ করল।হঠাত অজানা এক অনুভূতিতে শিউরে উঠলাম ।শরীরের লোমকূপ মুহুর্তের মাঝে জেগে উঠেছে।উনার গায়ে শার্ট থাকা সত্ত্বেও যেনো উনার শরীরের উষ্ণতা আমার ওষ্ট সম্পূর্ণভাবে অনুভব করেছে।আমি স্পষ্ট অনুভব করেছি আমার সামনে থাকা পুরুষটিকে আচমকা ভাবে চুমু খাওয়ার স্বাদ।কাউকে চুমু খেলে কি অনুভূতি এমন ই হয়।হঠাত ই লজ্জারা এসে দু’ঠোঁট জুড়ে নৃত্য শুরু করে।অস্বাভাবিক লাগে সব।বুকের মাঝে দুরু দুরু শব্দ হয়।শরীর অবস হয়ে আসে।এটা কি সবার ক্ষেত্রেই হয় নাকি শুধু উনার ক্ষেত্রেই এমন হল।শ্বাস-প্রশ্বাস সবটায় যেনো ভারী হয়ে এসছে।এক একটা নিঃশ্বাসের ওজন অনেক বেশী।উনি কি বুঝতে পেরেছেন আচমকা একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটে গিয়েছে।আমার এতকিছু অনুভব হয়ে যাচ্ছে, উনার কি কিছুই অনুভব হচ্ছেনা।উনার হাতের আড়ষ্ট বাঁধন আমার কোমর চেপে ধরে রেখেছে। এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।যার গভীরতা অনেক।এই দৃষ্টিতেই আমাকে পুড়িয়ে ফেলতে যথেষ্ট। ওই চোখে আর বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকা যাবেনা।সর্বনাশ হয়ে যাবে।এমনিতেও আমার আজন্মের ক্রাশ উনি,আমার প্রথম ভাল লাগা,প্রথম অনুভূতি, সবটাই উনি।আমার কিশোরি মনে প্রথম বার প্রেমাবেগের সৃষ্টি হয়েছিলো উনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ফলে।প্রেমান্দোলনের ঝড় উঠেছিলো মনে।আমার থেকে বয়সে এতটা সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমার হৃদয় ব্যাকুল হয়েছে উনার প্রতি।উনার প্রতি আমার দুইটা অনুভূতি এক বাইরের,দুই ভেতরের।বাইরের অনুভূতিতে আমি বিরক্ত, চরম বিরক্ত উনার প্রতি।ঝ’গ-ড়া করে জিতে যাচ্ছি আমি।অথচ ভেতরের অনুভূতিতে রয়েছে সুক্ষ্ম এক অনুভূতি, সুক্ষ্ম এক ভাল লাগা।যেখানে আমি হেরে বসে আছি।থর থর করে কাঁপতে থাকা হৃদস্পন্দন এর ভয়ানক গতি উনাকে বুঝতে দিবোনা বলে সরে আসার চেষ্টা করলাম কিন্তু ব্যার্থ আমি।পুরুষালি হাতের শক্ত বাঁধন আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।সরে আসার চেষ্টা করতেই আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরলেন।উনার আর আমার মাঝে চুল পরিমাণ জায়গা নেই,যেখান দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবো।ভারী আর অবস হয়ে আসা কন্ঠ নিয়ে রিনরিনিয়ে বললাম,
‘আমাকে ছেড়ে দিন,ধরে রেখেছেন কেনো?’
উনি আমার কথার উত্তর দিলেন না।সেই চাহনিতে তাকিয়েই আছেন।
‘দেখুন ছাড়ুন,আর মিথ্যা কথা বলব না।সত্যি বলব না।আপনার নামে আর একটা কথা ও বলব না।’
‘এত ছটফটে মেয়ে হঠাত নিশ্চুপ হয়ে গেলে কেনো?’
‘আর ছটফট করব না ছাড়ুন আমাকে এইবার।’
‘ছাড়ব কেনো?’
‘কারণ আমার..’
‘কারণ কি?’
‘বললাম তো আর কিছুই বলব না,ছাড়ুন।’
‘তার আগে বলো এত নার্ভাস কেনো তুমি?কি সমস্যা। ‘
‘কি..কি..কিছুই না।’
‘যা ভাবছ তা নয় ওমেন,অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা টি আমিও টের পেয়েছি।’
সাথে সাথে আমার চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেলো।কি টের পেয়েছেন উনি।এরই মাঝে উনি আমাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে বললেন, ‘আজ তোমার এমন অবস্থা করব, জীবনে আমাকে নিয়ে আর মিথ্যা বলবেনা।’
উনি যে আমাকে কোলে তুলতেও পারেন এটা আমার কল্পনাশক্তির বাইরে ছিলো।এই লোকটার ব্যবহারে তো রীতিমতো থমকে গেলাম আমি।উনি কি সত্যি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছেন নাকি অন্য কিছু।কি বোঝাতে চাইছেন উনি আমাকে।অন্য কিছু করার প্লান করছেন নাকি।সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলাম,
‘দে’খুন আমার সাথে কি উল্টা পালটা করার প্লান করছেন নাকি।বাংলা সিনেমার ভিলেন দের মতো।’
উনি আরো গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
‘ন্যারো মাইন্ডেড কথাবার্তা ছাড়া মাথায় আসেনা তাইনা?’
‘আপনি আমার মাইন্ড ন্যারো বললেন।’
‘তো কি বলব।আমি তোমার কে হই।বাংলা সিনেমার ভিলেন।’
‘না।’
‘তাহলে?’
‘বলব না আমি।’
‘না বললে ছাড়ব না আমি।’
‘আপনি জানেন না আপনি কি হন।আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেনো?’
‘আমি তোমার মুখে শুনতে চাই।’
‘আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেনো?’
‘তুমি আমাকে লজ্জা পাও।’
সাথে সাথে লজ্জায় দুইহাতে মুখ ঢাকলাম।আমাকে লজ্জামিশ্রিত হতে দেখে রোশান স্যার বলে উঠলেন,
‘উফফ!এই মেয়ে আমাকে খু’ন করে ফেলবে।একদম ফাঁসিয়ে ফেলছে এসব করে করে।’
আমি মুখ থেকে হাত সরিয়ে এক চোখ খুলে উনার মুখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম।আমি আবার কিভাবে ফাঁসালাম উনাকে কি অদ্ভুত।
এরই মাঝে রোহান ছুটতে ছুটতে আমাদের রুমে প্রবেশ করল।উনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে লজ্জায় স্বাভাবিক ভাব রাখতে হাত চালালেন চুলে।রোহান কে কোলে তুলে নিয়ে বললেন,
‘কি ব্যাটা বল খেলা শেষ।’
‘বড় পাপ্পা আমি আর বল খেলব না।’
‘কেনো?’
‘আমি বিয়ে করব বড় পাপ্পা।’
রোশান স্যার রিতীমত ভড়কে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমি হেসে দিয়ে বললাম,
‘তোমার বড় পাপ্পা বুড়ো হয়ে বিয়ে করেছে।আর তুমি মায়ের পেটে থেকেই বিয়ে কর।’
‘বড় পাপ্পা বুড়ো নয়, নতুন আম্মা।বড় পাপ্পা নায়ক।’
‘তোমার নতুন আম্মার ধারণা আমি বুড়ো। ‘
‘বড় পাপ্পা তোমার বয়স কত?’
‘ত্রিশ হবে হয়ত।’
‘নতুন আম্মা তোমার?’
‘২১- ২২ চলে আমার।’
‘তাহলে আমি যাকে বিয়ে করব তার বয়স কত হবে?’
‘তোমাকে বিয়ের কথা কে বলেছে ব্যাটা।’
‘দাদু ভাই বলেছে,তোমার শ্বাশুড়ির সাথে আমার বিয়ে দিবে।’
আমি রোশান স্যার কে বললাম,
‘আম্মাকে গিয়ে বলুন তরী আমাদের সাথে যাবে।’
‘তাহলে বাড়িতে রান্না কে করবে?’
‘আপনি এতদিন বিয়ে করেন নি,নিয়ম অনুযায়ী আপনার ভাই এর ও বিয়ে করার কথা নয়।তাহলে কে রান্না করত এতদিন শুনি।’
‘আম্মা ই করত।’
‘দু’দিন আম্মা রান্না করলে কি খুব অসুবিধা হবে।’
‘না বাট,আম্মা আগুনের কাছে যেতে পছন্দ করেনা।’
‘ওহ আর তরী খুব পছন্দ করে তাইত।’
‘সেটাও না।’
‘আপনার যে না হওয়া প্রেমিকা ছিলোনা জিনাত।আম্মার ভাতিজি তাকে ফোন করে ডাকুন আর বলুন এসে রান্নাকরে দিয়ে যেতে।তবে শর্ত আছে, আপনি এ বাড়ি ত্যাগ করার বিশ মিনিট পরে সে এ বাড়িতে ঢুকবে।আবার আপনি ব্যাক আসলে বিশ মিনিট আগে বেরিয়ে যাবে।’
‘বিশ মিনিট আগে- পরে কেনো?’
‘কারণ আপনার শরীরের ঘ্রাণ যে এ বাড়িতে বাতাসে ছড়িয়ে থাকবে।সেটা ২০ মিনিটে বিলীন হয়ে যাবে।আমি চাইনা আপনার বাতাস ও ওর গায়ে লাগুক।আবাত জিনাত এ বাড়িতে থাকলে ওর বাতাস ও এ বাড়িতে থাকবে।তাই ও বেরিয়ে যাবার বিশ মিনিট পরে আপনি ঢুকবেন।তাহলে জিনাত ফিনাত এর দূষিত বাতাস ও আপনার গায়ে লাগবেনা।’
‘আল্লাহ কি ডা’কি’নী র হাতে ফেলেছো আমায়।’
ঘর থেকে বেরিয়ে শুনি তরী কাঁদতে কাঁদতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।তরীর হাত টেনে ধরে বললাম,
‘কি হয়েছে বেবি তরী।’
‘কিছুনা ভাবি।’
‘কথা লুকাও ক্যান। বলো আমায়।’
‘আম্মা পায়ে মালিশ করিয়েছেন এক ঘন্টা ধরে।মালিশ শেষ খাবার চাচ্ছেন।বললাম আম্মা একটু দেরি হবে এক ঘন্টা তো এখানেই কেটে গিয়েছে।আম্মা কাশার বাটি ছুড়ে মে’রে’ছেন।বিশ্রি গালি গুলো তো আছেই।খাওয়ার জন্য পড়ে আছি এই খোটা শুনে খাবার পেটে যায় না ভাবি।’
তরীর কপাল ফুলে উঠেছে খানিকটা।দেখেই র’ ক্ত টগবগ করে উঠল আমার।কোনো কথা না বলে রান্নাঘরে গিয়ে সমস্ত খাবারের ঢাকনা উঠিয়ে অতিরিক্ত লবন,মরিচের গুড়া,হলুদেদ গুড়া দিয়ে ভরে ফেললাম।ভাতে ও অতিরিক্ত লবন মেশালাম।আমাকে এমন পা’গ’ল পানা করতে দেখে তরী আমাকে বারবার আটকানোর চেষ্টা করল।কিন্তু আমার মাথা ঠিক নেই।সব ভেঙে চুরে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে।র’ক্ত টগবগ করে জ্বলছে।চোখে ভয়ংকর চাহনি,ঠোঁট জোড়া কাঁপছে।রাগে ফুসতে ফুসতে বললাম,
‘আজ খাওয়া ই বন্ধ সবার।’
‘ভাবি দাদু কি খাবেন।’
‘দাদু দুজন ই আমাদের সাথে যাবেন।হোটেলে খাওয়াবো।আগে এই শ্বাশুড়ি কে দেখে নেই আমি।’
খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।রোশান স্যার তার আম্মাকে বললেন,
‘আম্মা তরী রোহান আর দাদু আমাদের সাথে যাবে।’
‘কথাটা শুনেই শ্বাশুড়ির চোখ কপালে।সাথে সাথে বলে উঠলেন।না না বাবা।তরী গেলে কিভাবে হবে।ও যেতে পারবেনা।রান্না বান্না ঘর সামলানো এসব কে দেখবে।’
‘মাত্র দুজনের রান্না পারবেনা তুমি।জিনাত কে আমি ফোনে বলে দিবো।ও এসে হেল্প করবে।’
‘তরীর ভাল শাড়ি নেই।নতুন আত্মীয়ের বাড়ি যা তা পরে গেলে ইজ্জত থাকবেনা।’
‘কেনো নেই কেনো আম্মা।’
‘আমি তো টাকা দিয়ে দেই ওর হাতে।ও কি করে আমি জানিনা।ব্যাংক ব্যালেন্স গোছাচ্ছে।’
‘তরী ব্যাংক ও চিনে। ‘
তাদের কথা থামিয়ে দিয়ে বললাম,
‘তরী আমার শাড়ি পরবে।আর পথে গিয়ে ওর জন্য শপিং করব।’
ওশান বলল, ‘ও যেখানে যাবে আনকালচার এর মত চলাফেরা করবে।ওর যেতে হবেনা।’
রোশান স্যার চোখ তুলে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালেন ওশানের দিকে।ওশান মাথা নিচু করে রইলো।
এরই মাঝে সবাই খাবার মুখে দিয়ে শিটকে পড়ল।এমন জঘন্য স্বাদের খাবার আগে কেউ খায়নি বোঝায় যাচ্ছে।সবাই তরীকে কিছু বলার আগে বললাম,
‘আমি রান্না করেছি কেমন হয়েছে।’
রোশান স্যার বললেন,
‘অদ্ভুত।’
আমার দাদু বললেন, ‘দিদি তুমি এটা রান্না করেছো বিশ্বাস হয়না।’
‘চুপ করোতো দাদু।’
শ্বাশুড়ি বললেন, ‘আমি কি আজ না খেয়ে থাকব।এ খাবার তো খাওয়া যাচ্ছেনা।’
শ্বাশুড়িকে বললাম,
‘আম্মা লবন একটু বেশী হতে পারে কষ্ট করে খেয়ে নিন।খেতে খারাপ হয়নি।’
দাদু বললেন, ‘ হ্যা বউমা খেয়ে নাও।’ বলেই হেসে দিলেন।
মনে মনে লা লা লালালা গান গাইতে গাইতে ডায়নিং ছেড়ে উঠলাম।তরীকে আমার একটা শাড়ি পরিয়ে দিলাম।রওনা হলাম আমার আম্মু-বাবার কাছে।আমার প্রশান্তির শহরে।
চলবে?..
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন অবশ্যই।’