#তোর_শহরে_মেঘের_আনাগোনা (সমাপ্ত পর্ব)
#Rawnaf_Anan_Tahiyat
‘ পানি দে আমাকে সাকিব, কাপুরুষের মতো এভাবে বন্দি করে রেখে কি প্রমাণ করতে চাইছিস তুই?’
‘ এটাই যে তোকে আমি এতো সহজে মা’র’বো না। ধীরে ধীরে কষ্ট দিয়ে দিয়ে শেষ করবো তোকে, আমার বোন টাকে তুই তোর হাত করেছিলি তাই না?যতদিন ও তোর কাজ করেছে ঠিক ততদিন ও তোর কাছে প্রিয় ছিল,যেই ও তোর কাজ করতে মানা করে দিলো অমনি শেষ করে দিলি তাকে? পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিলি তাকে, কেন? তোর শত্রুতা আছে আমার সাথে আছে,এর মাঝে তুই আমার বোন কে কেন টেনেছিস?’
সাকিবের কথা শুনে মিল্লাত হো হো করে হেসে উঠলো, এমন ভাবে হাসলো যেন এই কথাটায় ও খুব মজা পেয়েছে। সাকিব মিল্লাত কে হাসতে দেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে যেখানে রাত আছে সেখানে গেল। মাথার ব্যথায় কুঁকড়ে গেছে সে, কপালের বাম সাইডে প্রচুর আঘাত লেগেছে।ওর পাশে বসে ব্যান্ডেজের বাকি কাজ টা ধীরে সুস্থে শেষ করলো, এরপর ওকে ঘুমের+ ব্যথার একটা ইনজেকশন দিয়ে দিলো। মুখে বললো,,
‘ এখন চুপটি করে এখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়, ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি ব্যথাও কমে যাবে আর ঘুম ও পাবে। রুমের বাইরে আসবি না একদম, বুঝতে পারলি?’
রাত বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে শুয়ে পড়ল বেডে। জঙ্গলের মধ্যে বাসা টা হওয়ায় দিনের বেলায় ও রুমে লাইট জ্বলছে।লাইট অফ করে দিয়ে রুমের বাইরে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিল সাকিব, শান্তিতে ঘুমাক ও। রুমের বাইরে একটা টেবিলের উপর একেবারে ছোট একটা টেপ রেকর্ডার রাখা, সেটা অন করে বুক পকেটে ঢুকিয়ে মিল্লাত, রায়হান আর সিমরান কে যেই রুমে রাখা হয়েছে সেই রুমে চলে গেল।
_________________________
ভোর পাঁচটার দিকে হঠাৎ এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখে আসমা রহমানের ঘুম ভেঙ্গে গেল,রাত বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলেন তিনি। কালকে বুবুর কাছ থেকে ওসব শোনার পর যদিও বা রাত কে নিয়ে চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছিলেন কিন্তু এই স্বপ্ন দেখার পর থেকে সে চিন্তা বহুগুণে বেড়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে রুমের বাইরে চলে এলেন, ভোরের আলো এখনও ঠিক ভাবে ফুটে উঠেনি। বাগানের মধ্যে অস্থির হয়ে পায়চারি করতে লাগলেন আসমা রহমান, দুঃস্বপ্ন দেখার পর আর কোন কিছুতেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
_____________________
‘ ইন্সপেক্টর স্যার,এরেস্ট করুন এই তিন জন কে। এরা সবাই মিলে প্লান করে আমার ছোট বোন কে মে’রে ফে’লে’ছে আর আমাদের পরিবারের ও অনেক বড় ক্ষতি করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি থাকায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। অনেক বড় মাপের ক্রি’মি’না’ল এরা, সবসময় আমার পরিবারের ক্ষতি করার ধান্দায় থাকতো।আর তার সবকিছুর প্রমাণ আছে আমার এই ছোট্ট টেপ রেকর্ডার এ, জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় আমি এটা নিজের কাছে রেখেছিলাম।’
এক দমে কথা গুলো বলে থামলো সাকিব। সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই পুলিশ কে ফোন করে এই জঙ্গলে ডেকেছে, পুলিশ কে ডেকে সবকিছু খুলে বললো। প্রথমে কোন কথা বিশ্বাস করতে না চাইলেও পরে মিল্লাত কে দেখে সব কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো পুলিশ।কারণ মিল্লাতের নামে এর আগেও অনেক কেইস হয়েছে, সেই সবগুলো ও মা’র্ডা’র রিলেটেড। কিছুক্ষণ সাকিবের সাথে এই বিষয়ক কথা বলে,তথ্য সমূহ নিয়ে পুলিশ সিমরান, রায়হান আর মিল্লাত কে এরেস্ট করে নিয়ে গেল। রাত কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এইসব দেখছিল, সিমরান কে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে এটা দেখে যদিও বা খুব খারাপ লাগছিল তার কিন্তু সেটা কে পাত্তা দিলো না মোটেই। একটু পরে সাকিব রাত কে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো, কতদিন ধরে এই জঙ্গলে রয়েছে সে। বাসায় যে কি অবস্থা এখন কে জানে, রাত বাসায় নেই দেখে হয়তো অনেকে এটা সেটাও ভেবে বসে আছে। সবাই কে এই টেনশন থেকে মুক্ত করতে হবে এখন।
শান্ত হয়ে ড্রাইভ করছে সাকিব, পাশের সিটেই রাত বসে আছে। একবার ওর দিকে তাকালো সাকিব,ভেবেছিল মেয়ে টা বুঝি তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু ও সামনের দিকে তাকিয়ে কি দেখছে কে জানে, খুব সুক্ষ্ম একটা দূর্বলতা অনুভব করলো রাতের প্রতি।ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে,কে জানে কেন এমন হচ্ছে আজকে?
এতোক্ষণ ধরে আড় চোখে সাকিবের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ওর দিকে যে ও তাকিয়ে আছে সেটা লক্ষ্য করছিল রাত। ঠিক মতো গাড়ি ড্রাইভ না করে ওর দিকে তাকিয়ে এতো কি দেখছে সাকিব ভাই মাথায় খেলল না, তড়াৎ করে হঠাৎ ওর দিকে ঘুরলো রাত।ভ্রু দুটি ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করল,,
‘ আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো সাকিব ভাই? আমাকে কি আজকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে নাকি সিমরানের সাথে আমার চেহারার মিল খুঁজে পেলে?’
‘ সবসময় এক লাইন বেশি বুঝিস কেনো তুই? তোর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে সেজন্য তাকিয়ে আছি ,এর বেশি কিছু না।’
‘ কি বললে?’
‘ কেন কানে শুনতে পাস নাই?’
আর কিছু বললো না রাত, চুপ করে বসে রইল। সাকিব ভাইয়ের মনে কি তার জন্য কোন জায়গা আছে কি না সেটা ভাবতে লাগল, সত্যিই কি কোনো জায়গা আছে তার জন্য? এই কয়দিন ধরে যেভাবে ওর সাথে বিহেবিয়ার করেছে সাকিব ভাই, নিজের হাতে সব যত্ন নেওয়া, খাবার খাইয়ে দেওয়া সবকিছু এতো টা যত্ন নিয়ে করেছে কি শুধু মাত্র খালাতো বোন বলে নাকি একটু হলেও ওকে অন্য ভাবে দেখে?আর ভাববে পারলো না রাত, কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে তার।
____________________________
বেশ কিছুক্ষণ ধরে কলিং বেল বেজেই চলেছে কিন্তু কেউ দরজা খুলে দিচ্ছে না দেখে বিরক্ত হয়ে আসমা রহমান নিজেই এসে দরজা খুললেন। দশটা মতো বাজছে,বুবুর কাছে চুপ করে বসে ছিলেন তিনি এসময় কলিং বেলের শব্দ। দরজা খুলতেই যেন চারশো চল্লিশ ভোল্টের একটা শক খেলেন তিনি,এ কাদের দেখছেন তিনি? সাকিব আর রাত দু’জনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে যে, কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন। এর পর পরই চিৎকার করে বাসার সবাই কে ডাকতে শুরু করলেন,আসমা রহমান কে দেখে মনে হলো যেন তিনি জীবনে এর থেকে বড় খুশি আগে হননি।
* বিকেল চারটা *
ছাদের এক কোণে এক চড়ুই পাখির জোড়া বসে আছে।বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিরবতা চলার পর, সাকিব নিরবতা ভেঙ্গে রাত কে প্রশ্ন ছুড়লো,,,,
‘কি ব্যাপার বুড়ি, বাসার সবাই যেই মিথ্যে ব্যাপার টা ভেবে এতো হইহুল্লোড় করছে সেটা তে তুই এতো খুশি কেন?বাই দা রাস্তা তুই কি আমাকে ভালো টালো বাসিস নাকি?’
‘ হু বাসি তো কিন্তু কখনও তোমাকে বলার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কি করেই বা বলতাম তোমাকে বলো,যেদিন বলবো ভেবেছিলাম সেদিন শুনতে পেলাম তুমি নাকি অন্য কাউকে ভালো বাসো।যেখানে চলছে তোমার শহরে অন্য কারো আকাশের মেঘের আনাগোনা সেখানে আমি তোমাকে কি করে বলি আমার এক আকাশ সম ভালোবাসার কথা?’
‘ জানিস তো বুড়ি, আমি সিমরান কে ভালোবাসি বললেও ওর প্রতি কখনো দুর্বল হইনি যেটা আমি তোর প্রতি আগে থেকেই ছিলাম। তুই যদি আমাকে একটা বার মুখ ফুটে বলতি যে তুই আমাকে ভালোবাসিস তাহলে দেখতিস বুক উজাড় করে ভালোবাসতাম তোকে, সিমরানের মতো থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে প্রেম করতে যেতাম না।’
‘ এখন বলছি তো ভালোবাসি?আপন করে নেবে তো আমার শহরের মেঘ গুলো?’
‘ধুর পাগলি।’
এক হাতে রাতের পিছনে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে টেনে নিলো রাত কে। মুখে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু বললো না।সব ইচ্ছে কে পাত্তা দিতে নেই,সব ভালোবাসারা যেমন ভালো হয় না তেমন সব ইচ্ছে গুলো ও পূরণ হয় না। সবাই যে মিথ্যা টাকে সত্যি ভাবছে, এখন সেটাকে সত্যি তে পরিণত করে দেওয়ার সময় চলে এলো যে……………………..
#সমাপ্তি হয়েও অসমাপ্ত কাহিনী………
* কি রেগে আছেন সবাই আমার উপর? ভাবছেন আমি বোনাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেন দিলাম না। গল্প টা সমাপ্ত করে সবচেয়ে বড় একটা ঝটকা দিলাম আপনাদের সবাইকে। কি করবো বলুন,মরণ ব্যাধি রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে আমার। কতটা অসহ্যকর যন্ত্রণা নিয়ে এই পার্ট টুকু লিখেছি আপনারা কল্পনা ও করতে পারবেন না, এই গল্প টা থ্রিলার ধর্মী ছিল। ইচ্ছে ছিল অনেক বড় করে লেখার কিন্তু মস্তিষ্ক তাতে সায় দিল না। অসুস্থতার কারণে কালকে এতো এতো টেস্ট করাতে হলো,ডাক্তার একগাদা ওষুধ সহ নির্দেশনা দিয়েছেন ফোন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করতে অন্তত ছয় মাসের জন্য। সবাই বলে আগে নিজের জীবন তারপর বাকি সব, সেজন্য জীবন বাঁচাতে আমাকে এই অপ্রিয় কাজ টা করতে হলো। কিন্তু কেউ চিন্তা করবেন না, হতাশ হবেন না কারণ গল্প টা শেষ হয়ে যায় নি,এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে এখান থেকে। আমি আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে ফিরে এসে আবার দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ শুরু করবো এটার,যেই লাইন থেকে শেষ হয়েছে সেই লাইন থেকেই শুরু হবে।আর যদি আপনারা সবাই রাগ করে বলেন আর পড়বেন না এই গল্প তাহলে তো এইখানেই সব শেষ, সবাই একটু দয়া করে আমার জন্য ছোট করে দোয়া করবেন যেন আমি সুস্থ হয়ে উঠি। আব্বুর একমাত্র রাজকন্যা তো, আমার কিছু হলে তিনি সহ্য করতে পারবেন না। উনার কথা ভেবে হলেও ফোন নিষিদ্ধ করলাম আমার জন্য?। আল্লাহ হাফেজ, ভালো থাকবেন, হাসিখুশি থাকবেন সবাই।*