অবেলায়_তুমি (পর্ব-২)

0
888

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-২)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আজ সকালেই কন্ট্রাক্ট পেপারের মাধ্যমে তনু আকাশকে বিয়ে করেছে। আবার অন্যদিকে এখন তনু কেবিনে বসে ফোনের সাহায্যে অন্য কোনো ছেলের সাথে প্রেমালাপ করছে। আকাশের সমস্ত কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে৷ কারণ আকাশ নিজ ইচ্ছায় তনুর জীবনে কদম ফেলেনি। তনু নিজেই এক প্রকার ব্লাকমেইল করে কন্ট্রাক্ট পেপারের সাহায্যে আকাশকে বিয়ে করেছে। এখন আবার সেই মেয়ে নিজেই ফোনের সাহায্যে অন্য কোনো ছেলের সাথে রংতামাশা করছে। আকাশ তনুর মতিগতি কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কি দরকার ছিল তনুর এমনটা করার। সে তো চাইলে ফোনে যার সাথে প্রেমালাপ করছে তাকেই বিয়ে করতে পারতো। কিন্তু তনু সেটা না করে অযথা ব্লাকমেইল করে আকাশকে কেন বিয়ে করলো। তনু আসলে কি করতে চাইছে আকাশ তনুর দিকে তাকিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় মগ্ন হয়ে পড়ে। অপরদিকে তনু প্রচন্ড রেগে যা আকাশ বিনা অনুমতিতে কেবিনে প্রবেশ করায়। ফোনটা মুখের কাছ থেকে সরিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে আকাশকে বলে,

–‘এই অকর্মার ঢেঁকি বিনা অনুমতিতে কোন সাহসে তুই আমার কেবিনে প্রবেশ করেছিস? তোর মধ্যে কি কমনসেন্স বলতে কিছু নেই নাকি? তুই কি জানিস না কারোর কেবিনে বা কারোর কক্ষে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়? নাকি তোদের যখন অফিস-আদালত ছিল তখন কর্মচারীরা বিনা অনুমতিতেই কেবিনে প্রবেশ করতো, যার জন্য তুই এমনটা করেছিস?’

তনুর রাগান্বিত কন্ঠে কথাবার্তা শুনে আকাশ থতমত খেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে তনুর বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা বাদ দিয়ে কোনো ভাবে নিজেকে আগে সংযত করে। এরপর তনুকে বলে,

–‘ম্যাডাম আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে ম্যাডাম আমি অন্যমনস্ক হয়ে থাকায় বেখেয়ালি ভাবে কেবিনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করে ফেলেছি। ম্যাডাম আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত। আগামীতে এই রকমটা আর কখনো হবে না।’

–‘মিস্টার আকাশ মাহমুদ আমার সাথে অভিনয়টা একদম কমিয়ে করিস। শুন তুই যেই মঞ্চে অভিনয় করতে নাম লেখিয়েছিস, আমি সেই মঞ্চটার মালিক। তুই কি ভেবেছিস তুই আমাকে উল্টো-পাল্টা বুঝ দিলে আমি সেসব বুঝবো? শুন আমি ভালো করেই জানি তুই ইচ্ছাকৃত ভাবে কেবিনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছিস।’

–‘না ম্যাডাম এমনটা নয়। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।’

–‘দ্যাখ আমি আগেই বলেছি আমাকে উল্টো-পাল্টা বুঝ দিতে আসিস না। আমি ভালো করেই জানি তুই ইচ্ছাকৃত ভাবে কেবিনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছিস। আর কেন অনুমতি নিস নি সেটাও আমি জানি। আর অনুমতি ছাড়া কোন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রবেশ করেছিস সেটাও আমার জানা। তুই হয়তো ভেবেছিস তুই আমার স্বামী আর আমি তোর স্ত্রী। আমার কাছে অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই তোর। আর তুই আমার কেবিনে না বলে প্রবেশ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে অপ্রস্তুত ভাবে দেখা। শুন আমি ভালো করেই জানি তোর মনে শয়তানি চেপেছে। কারণ যেভাবেই হোক তোর আর আমার বিয়ে হয়েছে। তাই তুই সেটার ফায়দা উঠাতে চাচ্ছিস। শুন মিস্টার আকাশ মাহমুদ তোকে একটা কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেই। তোকে আমি বিয়ে করার উদ্দেশ্য কিন্তু মোটেও এটা না, যে আমি তোর সাথে ঘনিষ্ট হবো। বা তোর সাথে সাধারণ বাকি পাঁচ-দশটা দম্পতির মতন আগামী তিন বছর কাটাবো। তোকে আমার বিয়ে করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তোকে হাতের মুঠোয় জিম্মি করে তোর জীবন থেকে সমস্ত সুখ-শান্তি কেঁড়ে নিয়ে তোর পুরো লাইফ টা জাহান্নাম বানিয়ে দেওয়া। গত পাঁচ বছর আগে তুই আমাকে যেই কষ্টটা দিয়েছিস, আমি আগামী তিন বছরে তোর দেওয়া কষ্টের চাইতেও কয়েক হাজার গুণ বেশি কষ্ট তোকে আমি দিব। সেজন্যই তোকে আমি কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে জিম্মি করেছি।’

তনুর কথা শুনে আকাশের এবার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়। কারণ একে তো তনু তার উপরে জোরজবরদস্তি দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত তনু তার উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই খালি তাকে বিয়ে করেছে। আকাশ সব কিছু শুনার পর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তনুর মুখের উপরে বলে উঠে,

–‘এই মেয়ে নিজেকে কি ভাবিস তুই হ্যাঁ? দুনিয়ায় খালি একমাত্র তোর কথা গুলোই সঠিক? আর বাকি সবার কথা মিথ্যা? আর তুই একটু আগে কি বললি? আমার জীবন থেকে সুখ-শান্তি কেঁড়ে নিয়ে আমার জীবন জাহান্নাম বানাবি? শুন তোর চাকরি আমি করবো না। আমি অন্য কোথায় চাকরির জন্য আবেদন করবো। তারপর দেখি তুই আমার সুখ-শান্তি কি ভাবে কেঁড়ে নিস।’

আকাশের মুখে তুইতোকারি শুনে তনু ফোন কেটে দিয়ে টেবিলের উপরে রাখে। এরপর বসা থেকে উঠে ডেস্কের উপরে থাকা তনু তার কথা বলার ছোট ফোনটা হাতে নিয়ে সজোড়ে আকাশের উপরে ছুঁড়ে মা~রে। যার ফলে ফোনটা আকাশের কপালে লেগে আকাশের কপাল ফেটে রক্ত পড়তে আরম্ভ করে। তনুর এমন আচরণে আকাশের আরো রাগ উঠে যায়। নিজেকে সামলানো বাদ দিয়ে কোনো কিছু না ভেবে আকাশ সোজা তনুর দিকে তেড়ে গিয়ে তনুর গলা চে~পে ধরে পিছনের দেয়ালের সাথে তনুকে ঠেসে ধরে৷ এরপর গর্জন করে বলে উঠে,

–‘এই মেয়ে কিসের এতো দেমাগ তোর? আমাকে কি তোর মানুষ বলে মনে হয় না? আজ সকাল থেকে আমার সাথে যা খুশি করে যাচ্ছিস, যা খুশি বলে যাচ্ছিস। তার উপরে এখন আবার এসে মিথ্যা দোষ চাপিয়ে আমার উপরে ফোন ছুঁড়ে মে~রেছিস। এই মেয়ে আমাকে কি তোর খেলনার পুতুল মনে হচ্ছে নাকি? আর আমার জীবন নষ্ট করার তুই কে? পাঁচ বছর আগে তোকে না হয় অপমান করেছি। তাই বলে কি তুই আমার পুরো জীবনটাই তসনস করে দিবি নাকি?’

তনু আকাশের কথার কোনো জওয়াব দেয় না৷ আর জওয়াব দিবেই বা কি করে, আকাশ তনুর গলায় যে জোরে চে~পে ধরেছে, তাতে করে তনু বহু চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারে না। প্রচন্ড ব্যথা লাগছে তনুর। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে তনুর চোখ দিয়ে পানি পড়তে আরম্ভ করে। তনু অসহায়ের মতন চোখে পানি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অপরদিকে তনুর কান্নারত দৃষ্টি দেখে আকাশের রাগ মাঠি হয়ে যায়। মনের ভিতরে কেমন যেনো এক ধরনের খারাপ লাগা অনুভব করছে আকাশ। যদিও বা তনু আকাশের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। কিন্তু মেয়েটার চোখের পানি দেখা মাত্রই আকাশ কেমন যেনো একদম শান্ত হয়ে যায়। তনুর গলা থেকে হাতটা চুপচাপ নামিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আকাশ। অন্যদিকে তনু আকাশ থেকে ছাড়া পাওয়া মাত্রই কাশতে কাশতে বলে উঠে,

–‘তোকে আমি ছা/ড়বো না। পাঁচ বছর আগের করা আচরণের কারণে আগামী তিন বছরের জন্য তোকে জিম্মি করেছি। কিন্তু বর্তমানে তুই যেটা করেছিস সেটার জন্য তোর অনেক ভয়াবহ শাস্তি পেতে হবে। আর তুই একটু আগে কি বলেছিস আমার চাকরি করবি না। অন্য কোথাও চাকরি দেখবি? শুন এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। না হয়তো কন্ট্রাক্ট পেপার নিয়ে গিয়ে থানায় মামলা করে তোকে লকআপে বন্দী করবো। আর তোর পরিবারকে একদম রাস্তায় নামিয়ে দিব। এমনিতেই তোর পরিবারের অবস্থা ভালো না। তার উপরে তোকে লকআপে দিলে তোর পরিবার রোডে নেমে আসবে। কি ভেবেছিস তুই আমাকে? আমি কাঁচা খেলোয়াড়? শুন একদম আমার সাথে সেয়ানামী করতে আসিস না। তাহলে কিন্তু তুই আর আর তোর পরিবার একদম ধ্বংস হয়ে যাবি।’

আকাশ তনুর কথার প্রত্যুত্তরে আর কিছু বলে না। কারণ আকাশ ভালো করেই বুঝে গেছে সে ইতিমধ্যে ভুল করে ফেলেছে। তার উপরে সে এখন আরো কিছু বললে বিষয়টা আরো জটিল হবে। যার দরুন তাকে আর তার পরিবারকে শাস্তি পেতে হবে। এমনিতেই তনু যে ডেঞ্জারাস। তার উপরে এখন যদি আকাশ উল্টো-পাল্টা কিছু বলে, তাতে করে সত্যিই তনু আকাশের বারোটা বাজিয়ে দিবে। তাই আকাশ পরিস্থিতি টাকে সামাল দেওয়ার জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আর তনু রাগে ফসফস করতে করতে চেয়ারের উপরে গিয়ে বসে পড়ে। কিছুটা সময় এভাবেই কেটে যায়। কেউ কারোর সাথে কোনো কথা বলে না। কিছুক্ষণ পর তনুর রাগ কমে যায়। রাগ কমার পর তনু কি মনে করে যেনো ডেস্কের ডয়ার খুলে ডয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর আকাশকে বলে,

–‘চুপ করে আমার চেয়ারটায় বস।’

আকাশ তনুর আচরণ দেখে পুরো তাজ্জব হয়ে যায়। আকাশের মাথায় কাজ করছে না এটা কি সত্যিই সেই তনু, যে একটু আগেই আকাশের জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলেছিল। আকাশ এক নজরে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে হা করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠে,

–‘এই অকর্মার ঢেঁকি তোকে আমার চেয়ারটায় বসতে বলেছি। আমার কথাটা কি তোর কানে যায়নি?’

তনুর কথায় আকাশের হুঁশ ফিরে আসে। আকাশ তাড়াতাড়ি তনুর কথা অনুযায়ী চুপ করে তনুর চেয়ারটায় গিয়ে বসে। আকাশ তনুর চেয়ারে বসার পর তনু ফাস্টএইড বক্সটা খুলে নিজেই তুলো নিয়ে শুরুতে আকাশের কপালের রক্ত পড়া বন্ধ করে। এরপর তনু আকাশের কপাল ওয়াশ করে আকাশের কপালে পট্টি বেঁধে দেয়। তনুর আচরণ দেখে আকাশের মনে হচ্ছে তনু যেনো তার বিয়ে করা বউ। আর এমনটা মনে হওয়ার আরো একটা কারণ রয়েছে। তনু আকাশের কপালে পট্টি বেঁধে দেওয়ার জন্য যখন আকাশের কাছাকাছি যায়, তখন আকাশ তার থুঁতনিটা নিজের অজান্তেই অনেকটা সময় তনুর পেটের সাথে ঠেকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু তনু তাকে কিছুই কিছুই বলেনি। তার উপরে তনু তাকে নিজেই পট্টি বেঁধে দিয়েছে। আকাশ তনুর এমন শোভনীয় আচরণ দেখে প্রথম দিনেই তনুর মায়ায় আঁটকে যায়। যদিও বা তনুর সাথে আকাশের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি, কিন্তু তার পরেও আকাশের কেন জানি ইচ্ছে করছে বিয়ের পরের সমস্ত ভুমিকা তনুর সাথে পালন করতে। আকাশ এক ধরনের মোহের মধ্যে আঁটকে গেছে। অপরদিকে তনু আকাশের কপালে পট্টি বেঁধে দেওয়া শেষ করতেই আকাশকে বলে

–‘তোর কপালে পট্টি বেঁধে দিয়েছি। এবার তুই উঠে দাঁড়া আমি চেয়ারে বসবো। তারপর তুই আমার পা টিপে দিবি। হিসাব বরাবর। আমার কেন জানি মনে হয়েছে প্রথমদিন হিসেবে তোর উপরে অন্যায়টা একটু বেশি করে ফেলেছি। তাই মানবতা দেখিয়ে পট্টি বেঁধে দিয়েছি। এবার তুই নিজের মানবতা দেখেয়ে আমার পা টিপে দে। এটা তোর দিক থেকে মানবতা হলেও আমার দিক থেকে এটা তোর জন্য শাস্তি। কারণ তুই আমার গলা চে~পে ধরেছিস। যেটা তোর করা কখনোই উচিত হয়নি। তুই সাময়িকের জন্য ভুলে গিয়েছিস আমি তোর অফিসের ম্যাডাম। তাই জিনিসটা তোকে মনে করিয়ে দিতে তোকে দিয়ে আমার পা টেপাবো। দেখি এবার কাজে লেগে পড়।’

এতো সময় সব কিছুই ঠিক ঠাক ছিল। কিন্তু বর্তমানে তনুর কথাবার্তা গুলো শুনে আকাশের ভিতরে জন্মাবো সমস্ত মোহ লেজ গুটিয়ে পালায়। শেষমেশ তনুর পা টিপতে হবে আকাশের কথাটা শুনতেই আকাশের শরীর কেমন যেনো গুলিয়ে উঠে। তার বাবার ও অফিস ছিল। যেই অফিস আকাশ নিজেও বহুদিন সামলেছে। তবে আকাশ কোনোদিন কারোর সাথে এমন নির্মম আচরণ করেনি যেটা আজ তনু তার সাথে করছে। আকাশ বুঝে উঠতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত। বেচারার ভিতরে চরম পরিমাণে লজ্জা লাগছে তনুর কথা শুনে। সেই সঙ্গে বেশ অপমান ও লাগছে। কারণ শেষমেশ তাকে দিয়ে অফিসের ম্যাডাম পা টেপাতে চাইছে। যদি অফিসের বস একটা ছেলে হতো তাহলেও বিষয়টা মানা যেতো। কিন্তু অফিসের বস একজন মেয়ে। যার কারণে আকাশের লজ্জা লাগার পাশাপাশি ভিষণ আনকম্পোর্ট লাগছে। যার কারণে
কিছুক্ষণ আগের ন্যায় তনুর মতন করে আকাশ এবার তনুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যদি তার এই কাজ থেকে মুক্তি মিলে। কিন্তু আকাশের তো কখনো মিলবার নয়। তনু একটা কথা মুখ দিয়ে বের করেছে মানে সেটা সে করিয়েই ছাড়বে। তনু আকাশকে চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে,

–‘দ্যাখ আমি যেটা বলেছি সেটা তোকে করতেই হবে। জলদি পা টিপতে শুরু কর। না হয় বড় ফোনটা তোর দিকে ছুঁড়ে মে~রে কপালের আরেক পাশ ফাটিয়ে দিব।’

তনুর কথা শুনে অপারগ হয়ে আকাশ তনুর পায়ে হাত দেয়। লজ্জায় মাথা কা/টা যাচ্ছে মতন অবস্থা আকাশের। তবে তার কিছুই করার নেই। কারণ এই মেয়ের কথা না শুনলে অনেক বড় মুসিবত আসবে তার কপালে। তাই সে বাধ্য হয়ে তনুর পা টিপতে আরম্ভ করে। কিছু সময় পা টেপার পর অফিস ছুটির সময় হয়ে আসে। তাই তনু আকাশকে বলে,

–‘হয়েছে এবার পা ছেড়ে উঠে দাঁড়া। আর মিনিট দুয়েকের মধ্যেই অফিস ছুটি হবে। যা আজকের মতন তোর ছুটি। আগামীকাল দশটার আগে অফিসে এসে হাজির হবি।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ চোখ-মুখ মলিন করে তনুর কথার জওয়াব দিয়ে কেবিন থেকে বের হতে যাবে, তখনি তনু আবার পিছন থেকে আকাশকে ডেকে বলে,

–‘এই যে একটু দাঁড়া। তোর বেতনটাই তো এখনো ঠিক করা হয়নি। তোকে কতো করে পারিশ্রমিক দিলে তোর পোষাবে বল? সাধারণ আমার আগের এসিস্ট্যান্টকে আঠারো হাজার করে দিতাম। তবে তোকে কতো দিলে তুই খুশি হবি বল? ত্রিশ হাজার?’

আকাশ ত্রিশ হাজারের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়। কারণ তার এই সামান্য চাকরির জন্য ত্রিশ হাজার বেশ মোটা অঙ্কের একটা সেলারি। আকাশ তনুর মুখে ত্রিশ হাজার টাকা মাসিক বেতনের কথা শুনে অবাক হয়ে তনুকে বলে,

–‘ম্যাডাম সত্যিই কি আমি হ্যাঁ বললে আপনি আমায় ত্রিশ হাজার পারিশ্রমিক দিবেন?’

–‘হুম তোকে সত্যিই ত্রিশ হাজার পারিশ্রমিক দিব। কারণ তোর মতন অকর্মাকে দিয়ে আমি এক মাসে ত্রিশ লাখ টাকার বেশি কাজ উশুল করে নিব। তাই তোকে ত্রিশ হাজার টাকা মাসিক পারিশ্রমিক দিতে আমার মোটেও গায়ে বাঁধবে না। এবার বাড়ি যা। তোর বেতন ত্রিশ হাজার টাকা নির্ধারন করে দিলাম।’

আকাশ চুপচাপ আর কথা না বলে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। এদিকে আকাশ চলে যাওয়ার পর তনুও অফিস থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে যায়। বাসায় যাওয়ার পর হাসি মুখে তনু নিজের মা’কে বলে,

–‘মা তোমার মনে আছে পাঁচ বছর আগের সেলিম সাহেবের কথা?’

–‘হ্যাঁ অবশ্যই মনে আছে। উনার কথা মনে না থাকলে কি করে হবে। উনি যে তোর বাবার বিজনেস পার্টনার ছিল।’

–‘মা সেই সেলিম সাহেবের ছেলে আকাশ আজ আমার অফিসে চাকরি নিয়েছে।’

–‘মা-শা আল্লাহ এটা তো বেশ ভালো সংবাদ।’

–‘হ্যাঁ মা বেশশ ভালো সংবাদ। কারণ সেলিম সাহেবের পরিবারের সাথে আমাদের এতো ভালো সম্পর্ক থাকা সত্বেও গত পাঁচ বছর আগে তারা আমাদের অসময়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। তার উপরে সেলিম সাহেবের ছেলে গত পাঁচ বছর আগে আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে আমাকে অপমান করেছে। আমি সমস্ত কিছুর প্রতিশোধ নিব এবার সেলিম সাহেবের ছেলে আকাশের কাছে। একদম আকাশের জীবন টাকে নড়ক বানিয়ে দিব। পরিশেষে আকাশ তো পথে নামবেই সেই সঙ্গে আকাশের পরিবারকেও পথে নামাবো। যেমনটা গত পাঁচ বছর আগে আমাদের সাথে হয়েছিল।’

আকাশ তনুর অফিসে জয়েন করেছে সেই কথাটা শুনা মাত্রই তনুর মা ভিষণ খুশি হয়। তবে পরবর্তীতে তনুর কথা শুনে তনুর মা’য়ের হাসিমাখা মুখ খানা মুহূর্তের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে যায়। তনুর মা তনুর কথা শুনে ভূত দেখার মতন করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে….

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here