গল্পঃ বেপরোয়া ভালোবাসা
পার্টঃ ৭ ম
লেখকঃ মনা হোসাইন।
ছয় বছর পর আদিত্য বাসায় পা রাখল। সবার মাঝে আদিত্যকে দেখার আকুল প্রয়াস কিন্তু আদি কারো দিকে ফিরেও তাকায় নি সোজা ঘরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ল। যদিও তার আচারনে সবার মনঃক্ষুণ্ণ হওয়ার কথা কিন্তু আকর্ষনীয় ভাবে তার দুদর্শন চেহারা সবার দৃষ্টি কারছে।
ধবধবে ফর্সা চেহারা,ছোট করে কাটা চুলের একাংশ কিছুটা লম্বা যা কপালের উপড় ছড়িয়ে আছে যেন বেশ নিয়ম করেই এলোমেলো হয়েছে সিল্কি চুল গুলো। পরনে কুচকুচে কাল সুটের সাথে দুধ সাদা ফুল হাতা শার্ট। এক হাতে নামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি। জুতো জোড়ার চকচকে ভাব দেখে যেকেউ বলে দিতে পারবে চামড়ার তৈরি। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বুঝা যায় আদিত্য বেশ আয়েসি জীবন যাপনে অবস্থ্য। আদিত্য ঘরে ঢুকার পরে ২ জন লোক এসে কয়কয়েকটি লাগেজ ঘরে রেখে গেল। আদি চারদিকে চোখ বুলিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল। রুবিনা বেগম নিজের ছেলেকে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন।
কিন্তু সেই কান্না আদিকে ছুঁতে পারল না আদি এদিক ওদিক তাকিয়ে বেশ মুড নিয়ে বলল,
-“বোনের বিয়ে তাই মনে হল আমার কিছু দায়িত্ব আছে আর সেটা পালন করতই এখানে আসা। তাই প্লিজ নাটক করবেন না।
-“তুই এসব কী বলছিস বাবুনী…
-“বাংলাতেই তো বল্লাম অন্য কোন ভাষায় বলি নি না বুঝার কী আছে… যাই হোক এই বাসায় আমার একটা ঘর ছিল সেটা কী এখনো আছে নাকি আমাকে হোটেলে যেতে হবে..?
-“বাবু তুই এখনো রেগে আছিস..?
-“আমি রাগ করি না। রাগ করতে পারলে হয়ত ভাল হত…
আদির কথা শেষ হওয়ার আগে অরিন ছুটে গিয়ে আদির পায়ের কাছে বসে পড়ল।
-“ভাইয়া তুই এসেছিস ভাইয়া…
আদি অরিনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল।
-“আমার একমাত্র বোনের বিয়ে আমি না এসে পারি বল..?কিন্তু তুই বোকার মত কাঁদিছিস কেন..?
-“তুই আমাদের ছেড়ে আর যাবি না তো..?
-“মুডের উপড় ডিপেন্ট করছে যদি মনে হয় এখানে থাকা উচিত তাহলে থাকব না হলে চলে যাব যাইহোক সবাই কেমন আছো তোমরা..?
-“সবাই ভাল আছে..তুই আগে একটু বিশ্রাম নিয়ে নে তারপর অনেক কথা বলব
“হুম ঠিক বলেছিস। সবার জন্যে গিফট আছে পরে এসে দিচ্ছি কেমন।
বলে উঠে দাঁড়াল আদি পরনে থাকা কালো সুট টা খুলতে খুলতে বলল
-“আমার জানামতে আমাদের বাসায় একজন মহারানী আছেন তা কোথায় তিনি দেখতে পাচ্ছি না কেন..??
আদির কথায় কারোরি বুঝতে বাকি রইল না সে আদিবার কথা জিজ্ঞাসা করছে। সবাই এদিক ওদিক তাকিয়ে আদিবাকে খুঁজতে লাগল কিন্তু আদিবা কোথাও নেই দেখে সবাই অবাক হল।
আদিত্য অরিনের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় আবারো প্রশ্ন করল।
-“এখানেই তো ছিল ভাইয়া এখন কোথায় যে গিয়েছে…আমি এখনী দেখছি
-“উনি কী জানেন না আমি আসছি? যাইহোক তাকে এক মিনিটের মধ্যে আমার রুমে দেখতে চাই বুঝেছিস..?
বলে হন হন করে নিজের ঘরের দিকে চলে আদিত্য। অরিন আদিবাকে খুঁজতে খুঁজতে রান্না ঘরের দিকে গিয়ে দেখল বাইরের কার্নিশে দাঁড়িয়ে আদিবা কাঁদছে। বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে অরিন গিয়ে বলল,
-‘কিরে এখানে দাঁড়িয়ে কি কতছিস আদিবা…?ভাইয়া এসেছে জানিস না?
আদিবা তাড়াতাড়ি চোখ মুছে জবাব দিল
-‘কিছু করছি না আপু…
-“ভাইয়া তোকে ডাকছে তাড়াতাড়ি যা…
-“কিন্তু আপু…
-“কোন কিন্তু না তাড়াতাড়ি যা ভাইয়াকে তো চিনিস কথা না শুনলে…
অরিনের কথা শেষ হতে না হতেই রুবিনা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন
-“কইরে মুখপুড়ি ছেলেটা কখন থেকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছিস না? এখনী শরবত দিয়ে আয় যা…
আদিবা এবার আর কথা বাড়াতে পারল না তাড়াতাড়ি শরবত নিয়ে গেল আদিত্যের ঘরে। আদিবার যথেষ্ট সংকোচ বোধ হচ্ছে এতদিন পর কিভাবে আদির সামনে দাঁড়াবে ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেল আদি ঘরে নেই হয়ত ওয়াশরুমে গিয়েছে তাই আদিবা ফিরে আসবে কি আসবে না ভাবছিল তখনী ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এল আদিত্য।
খালি গা পরনে সাদা টাওয়াল, হাতে আরও একটি টাওয়াল দিয়ে সিল্কি চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে আসল আদি। আদিবা একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে নিল। আদিবার হাত কাঁপছে। কোনমতে শরবত টা রেখে বলল,
– বাংলা প্রেমের গল্প
-“আপনার শরবত টা…
আদিত্য ভারী গলায় প্রশ্ন করল
-“আমি চলে আসায় খুব অসুবিধে হয়েছে মনে হচ্ছে..
-“ম ম মানে…?
-“এত বড় ঘোমটা দিয়েছিস কোন দুঃখে
-“না মানে…
-“আমি তোর মুখ দেখে ফেললে মুখে ফুসকা পড়বে..?
-“আমি কি তা বলেছি..?
-“তাহলে আমি বাকি সব কিছু খোলে নেওয়ার আগে ঘোমটা টা খোল…
আদির কথা কানে ঢুকলেও মাথায় ঢুকে নি আদিবার তাই পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে দেখে আদিত্য এগিয়ে এসে এক টানে ওড়না টা ফেলে দিল।
দুধে আলতা গায়ের রং,লম্বা চুলে বেনুনী করা
অল্প কিছু এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে এদিক ওদিক। ভীত হরিনির মত টানা টানা চোখ ২ টি ভয়ের পরিপূর্ন। পটল ছেড়া ঠোঁট দুটি বারবার কেঁপে উঠছে।
আদিত্য আদিবাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে বলে উঠল,
-“এত খারাপ দেখতে হবি ভাবিনি…
-“ম ম মানে…?
-“এই জন্যেই এতদিনেও বিয়ে হয় নি তাই না…?
আদিবা উত্তর দিল না শুধু তাকিয়ে রইল
-‘ বলছি ছোট বেলায় ত দেখতে ভাল ছিলি এখন এমন হয়েছিস কেন..?
-“আ আ আমি এখন যাই ভাইয়া…
-“আমি তো যাওয়ার অনুমতি দেই নি…
বলেই আদিত্য এক অসম্ভব কান্ড ঘটিয়ে বসল হুট করে এসে আদিবাকে জড়িয়ে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। আদিবা ছাড়া পাবার প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হল। বেশ কিছুক্ষন পর আদিত্য নিজেই আদিবাকে আগলা করে দিয়ে বেশ ধীরে সুস্থে বিছানায় বসল আদিবা ছাড়া পেয়ে ফুফাতে লাগল চোখ দিয়ে এই বুঝি পানি গড়িয়ে পড়বে।
-“এতক্ষন কোথায় ছিলি? আমি আসব জানতি না?
(ধমক দিয়ে)
আদিবা এবারেও চুপ তবে চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে…
-“উম আমার সাথে এমন ভাব নেওয়া যাবে না। তোর জীবনে এখন থেকে সেটাই ঘটবে যেটা আমি চাইব তাই এভাবে তাকাবি না..
-“আপনি এত খারাপ হয়েছেন ভাবতেও পারছি না..
-“খারাপের দেখেছিস কী এত কেবল শুরু তোর জন্য আরও অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। আমি আসব জানার পরেও তুই নিচে ছিলি না তাই এটা তোর শাস্তি…
-“আমি এখানেই ছিলাম
-“তাহলে ডেকে আনতে হল কেন? নিজেকে কি ভাবিস তুই..?
-“আ আ আ….
-“তোতলাতে হবে না এখন থেকে আমার কথার বাইরে এক পা ফেলবি তো তোর কপালে দুঃখ আছে যা লাগেজ থেকে কাপড় চোপড় বের করে দে।
আদিবা কথা বাড়াল না তাড়াতাড়ি লাগেজ নিয়ে বসল কিন্তু ভয়ের ছুটে কাপড় বের করার বদলে সব কাপড় এলোমেলো করছে আদিত্য বসে বসে আদিবার কান্ড দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে…
যেন এতদিনের সব ইচ্ছে পূরনের সুযোগ পাচ্ছে সে..
চলবে