গল্পঃ বেপরোয়া ভালোবাসা।
পার্টঃ ২
লেখকঃ মনা হোসাইন
আদিবার সাথে আজ প্রথমবার এমন হয় নি। বুঝ হওয়ার পর থেকেই সে দেখে আসছে ভাইয়া নামক ব্যাক্তিটি তার সাথে এমন করে।
সেদিন বন্ধুদের সাথে ছাদে বসে ছবি তুলছিল আদিবা হটাৎ করে আদি কোথা থেকে এসে সবার সামনে থেকে তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে ছাদের চিলেকোঠায় ঢুকে পড়ে। তারপর আদিবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদিবা পরনে থাকা শাড়িটা টেনে খুলে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছিড়ে ফেলেছিল।
সেদিনো ভয়ে কান্না করেছিল আদিবা। কিন্তু আদির সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না। তার যেন কোন হুঁশ ছিল না সে কি করছে।
আদিবা কোনো উপায় না আদিকে বলেছিল,
– কি করছো ভাইয়া,আমার লাগছে। ছাড়ো প্লিজ শাড়িটা ছিড়ে ফেলছো কেন? প্লিজ শাড়িটা ছাড়ো আম্মু আমাকে মারবে।
আদিবা একমনে বলেছিল কিন্তু তার কথা যেন আদির কানেই যায় নি। সে আদিবার দিকে তাকিয়ে আরো অস্থির হয়ে টান দিয়ে পুরো শাড়িটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রক্তচোখে দিকে তাকিয়ে বলেছিল,
– “শাড়ি পরেছিস কেন..?
-” ভাইয়া আজ পহেলা ফাল্গুন…..
-“তো..? ফাল্গুন বলে শাড়ি পরতে হবে এমন কোথাও লিখা আছে?তোর সাহস কি করে হয় শাড়ি পরার?আমি তোকে শাড়ি পরার অনুমতি দিয়েছিলাম?
-“ভাইয়া সবাই তো পরেছে…
-“আদি সবার ভাই না শুধু তোর ভাই বুঝেছিস? তাই সবার অনুমতি না লাগলেও তোর লাগবে।
-“অরিন আপু সাদিয়া ওরাও তো পরেছে ভাইয়া…
-“চুপ,একদম চুপ সবাই পরলেও তুই পরবি না। আমার কথার বাইরে তুই কিছুই করবি না বুঝেছিস?
এ নিয়ে আর একটা কথা বললে এই শাড়ী তোর গলায় পেচিয়ে এখানেই ঝুলিয়ে দিব সবাই ভাব্বে সুসাইড করেছিস বুঝেছিস?
– আ আমি কয়েকটা ছবি তুলেই খুলে ফেলতাম ভাইয়া..
-” তুই মাত্র ক্লাস নাইনে পড়িস এখনো এতটা বড় হোস নি যে শাড়ি পরে ঢং করবি।আর এসব বান্ধুবীদের বাসায় এনেছিস কেন? বান্ধুবী মানেই কুটনীতিবীদ এসব মেয়েদের থেকে দূরে থাকবি বুঝেছিস..??
আর সহ্য করতে না পেরে আদিবা কেঁদে দিয়ে বলল,
“- আমি এতটাও ছোট নেই ভাইয়া ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়ের পরনের শাড়ি যে এভাবে খুলে নেয়া যায় না সেটা কি তুমি বুঝো না?
আদি রক্তচক্ষুতে তাকালো আদিবার দিকে। ধমক দিতে গিয়েও থেমে গেলো। নিমেষেই অসহায় ভঙ্গিতে শাড়ীটা আবার কুড়িয়ে এনে আদিবার কোমড়ে গুজতে গুজতে বললো,
“” এভাবে কাদিস না,। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা। তোর ভুল গুলো যেমন আমাকে কষ্ট দেয় তেমনি তোর কান্নাও আমাকে বড্ড জ্বালায়।
আদির কথা আদিবার কানে ঢুকলেও মাথায় ঢুকল না ও কি বুঝাতে চাইল তাও বুঝল না।
আদি জোরে ধমক দিয়ে বলল,
-“কান্না থামা…কিরে তোকে কান্না থামাতে বললাম তো কথা কানে যায় না..??
সেদিন আদির মা চলে আসায় আদিবা রেহাই পেয়েছিল।
এরপর যেদিন আদিবাকে স্কুলে ভর্তির কথা হল সেদিন আদির বাবা মানে বড় চাচা আদিবাকে প্রশ্ন করেছিল,
-“সে কোন স্কুলে ভর্তি হতে চায়
আদিবা উত্তর দিয়েছিল,
-“অরিন মানে আদির বোন যে স্কুলে পড়ে সেই স্কুলে।
কিন্তু আদির তাতেও আপত্তি ছিল। সে চেয়েছিল আদিবা যেন তার স্কুলে ভর্তি হয় আর তাই আদিবাকে হুমকি দিয়েছিল যদি সে অরিনের স্কুলে ভর্তি হয় তাহলে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
উপায় না পেয়ে আদিবা, আদির স্কুলেই ভর্তি হয়। তারপর থেকে আদিবার জীবন থেকে স্বাধীনতা নামক শব্দটি হারিয়ে গিয়েছে। স্কুলে কোন মজা করা তো দূর ক্লাসের বাইরেও যেতে পারে না সে।
আদিবা যাই করে তাতেই আদির সমস্যা আদিবা কোন কারনে ব্যাথা পেলে সেটাও অন্যায়। আজ সে ব্যাথা পায় নি কিন্তু ব্লাড দেখে আদি ভেবেছে আদিবা ব্যাথা পেয়েছে আর শাস্তিস্বরুপ বাথরুমে বন্ধ করে রেখে চলে গিয়েছে।
প্রায় ২ ঘন্টা পর আদি বাসায় ফিরল। আদি একা ফিরেছে দেখে আদির মা বেশ অবাক হলেন কারন তিনি জানেন পৃথিবী উল্টে গেলেও আদিবাকে একা রেখে আদি ফিরবে না।
-“আদি তুই একা কেন…? আদিবা কোথায়?
-” যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে
-“এটা কেমন উত্তর…??
-” ও আগেই বাসায় রেখে গিয়েছিলাম
-“মানে কী বাসায় ফিরে ত দেখলাম না।
-“আমার রুমে আছে..
কথাটা শুনে আদির মায়ের আত্মাটা ধ্বক করে উঠল। তারমানে অরিন যা বলছিল তাই ঠিক আদির ঘরে আদিবা কাঁদছিলো..?
আদির মা অস্থির হয়ে প্রশ্ন করলেন,
-“মানে কী…?? কি করেছিস ওর সাথে..? আদি দিন দিন তুই সব সীমা পেরিয়ে যাচ্ছস।
বলেই একটানে চাবি নিয়ে দৌড়ে গেলেন আদির ঘরে। রুমে আদিবাকে না পেয়ে ডাকতে লাগলেন।
আদিবা বাথরুম থেকে সাড়া দিতেই ছুটে গেলেন। আদিবা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আদভেজা অবস্থায় ফ্লোরে বসে আছে দেখে আদির মা পুরোপুরি হতবাক হয়ে গেলেন।
আদিবাকে তুলে ঘরে নিয়ে আসলেন ততক্ষনে আদিও ঘরে এসেছে আদির মা মিনা বেগম ঘরে এসে আদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঠাস করে থাপ্পর বসিয়ে দিলেন।
তারপর বললেন
-“তুই কী মানুষ…?? এমন অমানুষের মত কাজটা কী করে করলি।আজকে তোর বাবা বাসায় আসুক তারপর তোর হবে..
আদির ফর্সা গালে থাপ্পরের দাগ পড়ে গিয়েছে হয়ত ব্যাথাও পেয়েছে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই সে একমনে আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে।
সে তার মাকে অগ্রাহ্য করে আদিবার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-“তুই ভিজেছিস কি করে..? আর ড্রেস চেঞ্জ করিস নি কেন?
আদিবা ভয় পেয়ে আদির মায়ের আড়ালে গিয়ে লুকাল। সাথে সাথেই আদির মা বলে উঠলেন,
-“থাম অমানুষের বাচ্চা, এখন আর দরদ দেখাতে হবে না।
-“মা আমি ওকে এমনি এমনি বাথরুমে আটকে রাখিনি ও স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা বাদ নাচানাচি করে আর তা করতে গিয়েই ব্যাথা পেয়েছিল তাই শাস্তি দিয়েছি যেন ভবিষ্যতে আর এমন করার সাহস না পায়। তুমি জানো কত ব্লিডিং হয়েছিলো…??
-“ব্লিডিং…?? আদিবা ও কি বলছে তুই ব্যাথা পেয়েছিস..?
আদিবা ফিসফিস করে মিনা বেগমকে কি যেন বলল। মিনা বেগম আর কিছু না বলে আদিবাকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
তার কিছুক্ষন পর তিনি একটুকরো কাগজ আর কিছু টাকা নিয়ে আদির ঘরে আসলেন। আদি মুখভার করে বসে আছে দেখে মিনা বেগমের মন খারাপ হল কারন এই প্রথম বার তিনি আদির গায়ে হাত তুলছেন। আদি ছোট থেকেই বুদ্ধিদীপ্ত সচারচর অন্যায় করে না শুধু আদিবার সাথেই একটু বাড়াবাড়ি করে। যতই হোক একমাত্র ছেলে
তাই মা বাবা তাকে সবসময় একটু বেশিই আদর করেন তাই অন্যায় করলে শাস্তি দিলেও অপরধ বোধ করেন।
মিনা বেগম এসে ছেলের পাশে বসলেন তারপর কাগজের টুকরো টা ছেলের হাতে দিয়ে বললেন,
-“ফার্মেসি থেকে নিয়ে আয় গিয়ে..
আদি অস্থির হয়ে প্রশ্ন করল,
-“অল্পই তো ব্লাড ছিল তাহলে ওষুধ লাগবে কেন মা? তারমানে কি ও অনেক বেশি ব্যাথা পেয়েছে…?ওর কোন ক্ষতি হবে না তো মা..? ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই?
-“এত অস্থির হওয়ার মত কিছু হয় নি। দেখ আদি তুই আদিবাকে আদর করিস সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু তুই কি বুঝতে পারছিস না তোর এই অতিরিক্ত কেয়ার আদিবার কষ্টের কারন হচ্ছে।
-“মা যে বিষয়ে আমাকে বলে লাভ নেই সেটা কেন বলতে আসো। আমি এর আগেও বলেছি আমি আদিবার ব্যাপারে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। হতে পারে এটা আমার মানুষিক সমস্যা। এতে আমার কোন হাত নেই।
বলেই কাগজ টা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল আদি।
-“স্কুল ড্রেস টা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে যা।এখনী আনতে হবে না।
-” কি বলছো মা আদিবা ব্যাথা পেয়েছে আর আমি এখন খাব..?
-“ও ব্যাথা পায় নি আদি। তোকে যেটা কিনতে বললাম সেটা কিনার পর প্যাকেটের গায়ের লিখা গুলো ভালভাবে পড়বি ঠিক আছে..?
-“কিসব যে বলছো কে জানে ব্যাথা না পেলে ওষুধের দরকার হয়..? যাইহোক আমি যাব আর আসব বলেই আদি বেরিয়ে গেল।
মিনা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলেন এই আদির বেপরোয়া ভালবাসার শেষ কোথায়..??
চলবে…