#তাসের_ঘরে_তুমি_আমি
#পর্ব_১৭
#লেখক_আয়াশ
শান রিকশা থেকেই দেখলো পুতুলের বাবা রাস্তার পাশের বাস কাউন্টার থেকে বের হচ্ছে। শানের মাথায় প্রথম থেকেই কথাটা ঘুরছিল যে প্রথমদিন পুলিশ খবর দেয়ার পর থেকে তো পুতুলের বাবা মাকে আর দেখা যায়নি পুলিশ স্টেশনে!!
পুতুলের বাবাকে দেখে শানের খটকা লাগলো।
কিরকম লুকিয়ে লুকিয়ে যাচ্ছে পুতুলের বাবা। সবার অগোচরে, কেউ যেন তাকে লক্ষ্য না করে ওইভাবেই।
শান তড়িঘড়ি রিক্সা থেকে নামলো পুতুলের বাবার পিছনে ধাওয়া করার জন্য। দ্রুত হাটছে লোকটি। শানও তার পিছন পিছন হাটছে। ডাক তো দেয়া যাবে না, তাহলে শানের চোখের ভাল হওয়ার খবর জেনে গেলে তো আরো বেশি সন্দেহ করবে তার উপর। মনে করেই নেবে যে তাদের মেয়ে পুতুলকে শানই মেরেছে। কোথায় যায় দেখার জন্য শান তার পিছু নিতেই থাকলো।
ঠিক তখনই একটা লোকের সাথে ধাক্কা লাগলো শানের। দোষটা পুরোপুরি লোকটির দেয়া যায় না। কারণ শান তো পুতুলের বাবার দিকে তাকিয়েই দ্রুত হাটছিল।
‘কি ভাই চোখ কি বাসায় রেখে রাস্তায় হাটেন?’ সামনে দাঁড়ানো মধ্যবয়সী লোকটির তেজী স্বরে শান থেমে তাকালো৷
‘সরি ভাই।’ বলে শান আবার যখন লোকটিকে পাশ কাটিয়ে পুতুলের বাবাকে ফলো করবে তখনই দেখলো পুতুলের বাবা নেই।
এক সেকেন্ডে কোথায় গেল লোকটা!! শান চারপাশে তাকালো, দ্রুত হেটে ফ্লাইওভারে উঠলো চারিদিকে দেখার জন্য কিন্তু কোথাও নেই।
নিজের ব্যর্থতায় মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল তার। হয়ত কিছু জানাও যেত!!
মোবাইল অনবরত বেজে চলেছে। ডিআইজি স্যারের ফোন হয়ত। হ্যা ঠিক তাই। সে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলল।
——-
পুলিশের সাথে একটি শপে দাঁড়িয়ে আছে শান। এই শপে নাকি এরকম আর্টিফিশিয়াল কংকালের হাত, খুলি সহ বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়।
পুলিশ আগেই শপের মালিককে জিজ্ঞেস করেছে টুকরাটা দেখিয়ে এবং সেটা তার দোকানে থাকা আরেকটা হাতের সাথে হুবহু মিলেও গেছে।
পুলিশ শানকে ডাকার কারণ হচ্ছে দোকানের মেমোতে কংকালের হাতটি যার নামে ক্রয় করা হয়েছে সেখানে শানের নাম লেখা আছে।
শান তো দেখে অবাক। সে সাথে সাথে ডিআইজি স্যারকে বলল,
‘স্যার আমি তো এখানে আসিই নি আগে কোনদিন।’
‘হুম। তবে তোমার নামে কেনা কেন?’
‘আমিও সেটাই ভাবছি স্যার।’
‘এটাই যদি হয় তবে কেউ তোমাকে ফাসাতে চাচ্ছে শান।’
সেই শপের মালিককে জিজ্ঞেস করা হলঃ
‘আচ্ছা আপনি কি এনাকে হাতটা বিক্রি করেছেন?’
‘না স্যার, আসলে তখন দোকানে আমার কর্মচারী ছিল।’
‘তো তাকে ডাকুন।’
‘জি স্যার।’
অই দোকানের মালিক হাত বিক্রির সময় যে সেলসম্যান ছিল তাকে খবর পাঠিয়েছে, সে বাড়িতে ছিল তখন। সবাই তার আসার অপেক্ষাই করছে। ত্রিশ মিনিট পর সে আসলো৷
তার কাছে আরো চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেল।
হাতটি নাকি দুইজন বোরকা পড়া মহিলা কিনতে এসেছিল। এসে শানের নামে রিসিপ্ট করেছে বিল দেয়ার সময়।
শানের মাথায় আরো জট পেকে গেল সাথে পুলিশের সবারও। সবাই ভাবছে কি থেকে কি হচ্ছে এগুলো!! আবার দুইজন মেয়ে?? কোনো কুলকিনারা তো হচ্ছেই না কেসের বরং দিন দিন আরো জটলা পাকাচ্ছে।
ডিআইজি স্যার শানকে তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করে তাকে আবার হসপিটালে যেতে বলল। শানও সেদিকেই গেল। কারণ মিথিলার কাছে তো আরো অনেক কিছু জানার আছে তার।
রিক্সা ঠিক করে আবার হাসপাতালের দিকে আসছে তখন হঠাৎ শানের মাথায় একটা কথা মনে পড়ল।
‘আচ্ছা, পুতুলের বাবাকে তো আমি একটা বাসের কাউন্টার থেকে যেতে দেখেছিলাম। ইসস জিনিসটা এত সময় পর কেন মাথায় আসলো!!! আসলে আমার মাথাটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে এত চিন্তায় চিন্তায়। সেখানে গেলেই হয়ত কিছু জানা যাবে।’
কিছু সময় পর শান আবার সেই বাসের টিকিট কাউন্টারে পৌছালো।
গিয়ে সেখানকার রিসেপশনিস্টকে বলল,’আমার পরিচিত একজন, এই নাম (পুতুলের বাবার), একটু দেখেন তো এই নামে টিকিট বুক করা হয়েছে নাকি।’
‘সরি স্যার আমরা পারসোনাল ইনফরমেশন কাউকে দেই না।’
‘আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আমি তার কলিগ। সে আমাকে বলেছে তার আর তার স্ত্রীর দুইটা টিকেট বুক হয়েছে কিনা দেখতে। আর না হলে নতুন করে আমাকে কিনে নিয়ে যেতে বলেছে।’
‘অহ আচ্ছা। স্যার নামটা কি বললেন? আর কোথাকারা টিকেট?’
শান পুতুলের বাবার নাম ও তাদের ঠিকানা অর্থাৎ যে জেলায় থাকে সেখানকার নাম বলল।
কিন্তু বিনিময়ে রিসিপশনিস্ট যা বলল তাতে শানের মাথা ঘুরে গেল।
‘স্যার এই নামে কিছু সময় আগেই টিকেট বুক করা হয়েছে। কিন্তু,,,’
‘কিন্তু কি?’
‘কিন্তু সে তো যশোরের বেনাপোলের টিকিট কেটেছে।’
‘মানে!!’
শান কি বলবে বুঝতে পারছে না। পুতুলের বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ। তারা যশোরের বেনাপোলে যাবে কেন!
‘আরো একটা কথা স্যার।’
‘জি!’
‘আপনি বললেন তিনি আর তার স্ত্রী। কিন্তু এখানে তো তার নামে তিনটা টিকেট আছে। রাত নয়টায় বাস।’
শেষের কথাটা শুনে শান যেন নিজের ভেতরেই নেই।
‘তিনটা টিকেট!! মানে!!! আরেকজন কে!!’
‘আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমার আর কেনা লাগলো না। থ্যাংক ইউ।’
‘অয়েলকাম স্যার।’
শান বাস কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে হতবাক হয়ে রাস্তার পাশেই বসে পড়ল। পুতুলের মা বাবার সাথের সঙ্গীটা কে সেটা নিয়েই সে চিন্তা করছে অনবরত। তাহলে তারা একা না? তাদের সাথে আরো কেউ আছে?
কে সেই তৃতীয় ব্যক্তি!! এখান থেকে নড়া যাভে না। রাত নয়টার সময়ই সব খোলাসা হবে তার।
তখনই তার ফোনে তার মায়ের ফোন আসলো।
‘হ্যালো, বাবা!’
‘মা কি হয়েছে! গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? বাবা ঠিক আছে তো!!’
‘বাবা মিথিলাকে তো কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘মানে!!!’
চলবে,
আজকের প্রশ্নঃ তৃতীয় ব্যক্তিটি কে হতে পারে বলে মনে হয়?
আর সর্বোচ্চ দুই তিন পর্ব আছে গল্পটায়। আমার আইডি ডিজেবল হওয়ায় গল্প অনেকজন পড়তে পারছেন না। আপনারা আয়াশের গল্পকথা পেজটিকে বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। যেন সবাই পড়তে পারে।
সকলের ভালো রেসপন্স পেলে কাল সকালে আরো একটা পর্ব আপলোড করব। সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ভালো থাকবেন সবাই। অগ্রিম ধন্যবাদ সবাইকে।❤️❤️