রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ৩১+৩২

0
657

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩১,,,৩২
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

পূর্ণ ভালোবাসার মধ্যে শূন্যতা থাকে৷ আর সেটা হচ্ছে হারিয়ে ফেলার শূন্যতার ভয়৷ একেকটা দিন, একেকটা মূহুর্ত স্মৃতির জন্য তুলে রাখাতে ইচ্ছে হয় না৷ আমার প্রচুর অ’স্বস্তি হচ্ছে৷ অ’স্বস্তি নামক শব্দটা হলেও ভালোলাগা আছে৷ লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছি বারেবারে৷ উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছেন৷ ঘুমিয়ে আছেন৷ কাল রাতে উনি আমার পাশে দ্বিতীয় বারের মতো শুয়েছেন ভেবেই কেমন লজ্জায় পড়ে গেলাম৷ কিন্তু ঘুমিয়েছি কখন ভেবে পেলাম না৷ রাস্তায় ছিলাম..! তাহলে আসলাম কখন৷ মনে করার চেষ্টায় আছি৷ উনার কাঁধে মাথা রেখে বসেছিলাম পার্কে৷ কখন ঘুমিয়েছি বুঝতেই পারি নি৷ ইশ..! এতো সুন্দর একটা রাত ঘুমিয়ে শেষ ভেবেই মন খারাপেরা ভীড় করলো৷ তবে উনার হাতের বাঁধনে থাকতে কেমন জানি লাগছে৷ অ’স্থিরতার সাথে কাঁপানো হা’র্ট বি’ট৷ তীব্র আওয়াজে ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ উনি আমাকে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছেন৷ আমার হাঁত তার হাতের নিচে৷ মাথা উঁচু করে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম, ৯ টা বেজে ২৫ মিনিট৷ মূহুর্তেই ভ্রু কুঁচকে এলো৷ আজ কি উনার ক্লাস বা অফিসের কাজ নেই? আমি নড়তেই উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,
–‘ শো”ল মা”ছের মতো এমন নড়ছিস কেন?’
মানে কি?শো”ল মা’ছে এলো কোথা থেকে৷ আমি ভাবছি৷ উনি আমার কোমর ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন৷ থমকানো পৃথীবির নিস্তব্ধ বিচরণ দেখেছেন কখনো? হাওয়া না বইলেও শীতল হাওয়ার পরশ লেগেছে কখনো? বা কখনো মনের মাধুরি গুলো তীব্র ভাবে হুট করেই অ’স্ব’স্ততিতে পড়লেও ভালোলাগার বেড়াজালে আবদ্ধতা? এই ঘটনা গুলো আমার সাথে হচ্ছে৷ আমি চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিলাম৷ উঠে যাওয়ার বাহানা খুজলাম৷ পেলাম না কোনো বাহানা৷ চুপ করে তার উষ্ণ পরশ গ্রহণ করতেই ফোন বেজে উঠলো৷ ফোনের আওয়াজ টা আমার কাছে ভালো লাগছে৷ উনি বিরক্তি কন্ঠে বললেন,
–‘ রাতে বউয়ের ঘুমের জ্বালা আর দিনে মোবাইল বা কাজের জ্বালা৷ রো’ম্যান্সের টাইম পাবো কই৷ ‘

–‘ আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷ ‘ আমি কাঁপা ভাবে বললাম৷ উনি আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলেন৷ আমি আরেকটু কেঁপে উঠলাম৷ উনি নে’শা’তুর কন্ঠে বললেন,

–‘ আমি কিছু করেছি? শ্বাস আটকানোর মতো কাজ৷ অবশ্য রাতে ঘুমিয়ে পড়লেই আমার সুবিধা এমন… ‘

আমি এক ঝাটকায় উনার দিকে ঘুরে গেলাম৷ অনেক কাছে তাকে পেলাম৷ চোখের পাঁপড়ি গুলো এখনো ঘুমের রেশে টান দিচ্ছে৷ আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি৷ কিছু একটা বলার জন্য ঘুরেছিলাম৷ কিন্তু? তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে সেই কথাটুকু মুখ থেকে বেরুলো না৷ উনি আমাকে আরো টেনে নিলেন৷ থমকানো পৃথীবিতে যেমন নিস্তব্ধতার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই তেমন টা৷ আ’লি’ঙ্গনটা প’বিত্রতায় ঘেরা৷ না চাইতেও অনেক কিছুর আকৃ’ষ্টতা৷ পূর্ণতায় বেড়াজালের কিছুটা স্পর্শের মূহুর্ত৷ একরাশ ভালোলাগার মুগ্ধতা৷
_______________________
লজ্জা নামক শব্দটা দুনিয়া থেকে মুছে দিতে পারলে বোধহয় ভালো হতো৷ এই একটা শব্দের জন্য আমি কা’ট’কা’ট হয়ে যাচ্ছি৷ ওয়াশরুমের দরজা আটকে বসে আছি এক ঘন্টার উপর৷ আয়নায় নিজেকে দেখে আরো কিছুটা লজ্জার আবরণে ডাকা পড়লাম৷ ম্যা’চু’রিটি হঠাৎ করেই এসে পড়েছে মনে হচ্ছে৷ নিজেকে কেমন পূর্ণ বিবাহিতা নারীর কো’ঠায় ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ গলার কাছে ছোট একটা দা’গ জানান দিচ্ছে, ‘ তুমি তার..তুমি সম্পূর্ণ রুপে তার..! ‘
দরজায় তার টোকা পড়তেই আমি আবারও একটু আগের কথা ভেবে মিইয়ে গেলাম৷
–‘ বের হবি? না দরজা ভেঙে ফেলবো৷ ‘ শীতল কন্ঠের থ্রে’ট শুনে আমি শু’কনো ঢোক গিললাম৷ তাড়াহুড়ো তে কাপড় আনি নি৷ শুধু তোয়ালে নিয়ে এসেছি৷ এইবার? আমার কাছে থেকে উত্তর না পেয়ে উনি আবার বললেন,
–‘ ওকে ফাইন, মহারাণী..! আপনার বোধহয় শা’ওয়ার রো’ম্যান্স করতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ আমি দরজা ভেঙেই আসছি আপনার কাছে৷ ‘
আমি তবুও দরজা খুললাম না৷ তার সামনে যাবো কিভাবে৷ হুট করে আ”লি’ঙ্গনটা মেনে নিতে যেমন আনন্দ রয়েছে তেমনি লজ্জাও আছে৷ আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনিও চুপ৷ কিছুক্ষণ নীরবতা৷ তারপর হুট করে উনি বললেন,
–‘ নীতু, ‘
তার কন্ঠে কেমন বি’ষাদের ছায়া৷ আমি এইবার উত্তর না দিয়ে পারলাম না৷ ছোট করে, ” হু ” বলতেই উনার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ কানে এলো৷ হয়তো সিরিয়াস কিছু বলবেন৷ কিন্তু কি? আমি দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম৷
–‘ আমার অনুমতি নেওয়ার প্র‍য়োজন ছিলো৷ আ’ম সর‍্যি..হুট করে সব কিছু… ‘
উনাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না৷ যেখানে আমার মনের সম্মতি রয়েছে সেখানে কেনো লুকোচুরি? আমি ভেজা কাঁপড়েই বেরিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালাম৷ উনার দৃষ্টি অ’স্থির৷ মাথা নীচু করে ফেললেন৷ কেন যেনো সুপ্ত একটা শ্রদ্ধা বোধ জেগে উঠলো৷ যে মানুষ টা অপর মানুষটার অনুমতি বিহীন কাজ করার জন্য এতো টা অ’নুতপ্ত আর যাই হোক সেই মানুষটাকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারি না৷ আমার আর তার মাঝের দূরত্ব ঘুঁ’চে যাক৷ তাকে ভালোবেসে থাকতে চাই৷ কারণ এই মানুষটা ছাড়া নিজেকে খুঁজে পাই না যে৷ বড্ড ভালোবাসি৷ অনেক বেশিই৷ প্রেম গুলো প’বিত্র আর সেটা অনুমতি বিহীন প’বিত্রতার সা’ক্ষী৷ প্রেমের বৃষ্টি গুলো আনন্দের৷ আমি শক্ত করেই ভেজা কাপড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম৷ বললাম,

–‘ নীরবতা যে স’ম্মতির ল’ক্ষণ সেটা আপনি জানেন? ‘

–‘ সব ক্ষেত্রে নীরবতা মানায় না৷ আমি তোকে নিজের মতো চাইলেও তোর মনের মতো হতে চাই৷ যেখানে শুধু আমার বিচরণ থাকবে৷ কোনো ভয়ের কারণ থাকবে না৷ ‘
উনি আমার মাথায় চুমু খেয়ে বললেন কথাটা৷ শিহরণ বয়ে যাওয়া হাওয়া দোল খেয়ে গেলো৷ আমর গলার স্বরে একরাশ খুশির ছোঁয়া নিয়ে বললাম,
–‘ আপনাকে চাই..এর বাইরে আর কিছুই না৷ আপনি আমার অভ্যেস হয়ে গেছেন৷ আপনার মাঝে আমি নিজেকে খুজে পাই৷ ‘

–‘ মনের কোণে আর কি জমা রেখেছিস? কতোটা ভালোবাসিস আমায়? ‘
হুট করে তাকে জ্ঞান দেওয়ার মতো একটা সুযোগ পেয়ে আমি তাকে ছেড়ে দিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বললাম,
–‘ ভালোবাসা সীমাবদ্ধ নয়..!মন উজাড় করে ভালোবাসতে হয়৷ আর আমার ভালোবাসা আকাশের রৌদ্দুরের মতো যেটা রাঁতের আঁধারে চাঁদের সাথে মিলে আলোকিত করবে৷ স্নিগ্ধতা বিরাজ করবে৷ কখনো ফুরাবে না৷ আমাবস্যাতেও হালকা আলো দিবে৷ যেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকবে রৌদ্দুরের আলোতে ভরে যাবে৷ ‘
উনি আমার কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন৷ নিজেকে জ্ঞানী মনে হচ্ছে৷ হাসি পাচ্ছে৷ উনি আমার দিকে ঝু কে এলেন আমি না সরে তার দিকে এগিয়ে গেলাম৷ এইবার উনি সত্যি ভ’ড়কে গেলেন৷ তাকে অপ্রস্তুত হতে দেখে বেশ মজা লাগছে আমার৷ আমি এইবার তার দিকে এগিয়ে গেলাম৷ উনি অবিশ্বাসের সুরে বললেন,

–‘ নীতু কোথায়? এই মেয়ে তুমি কে৷ ‘

উনার অপ্রস্তুত কথা শুনে হাসি পেলো৷ আমি উনার কোমরে হাত রাখলাম৷ যদিও আমি তার বুক সমান৷ হৃ’দ’পি’ন্ডের কাছাকাছি৷ আমার চোখেমুখে দু’ষ্টুমি ছাঁপ দেখে উনি ইনোসেন্ট সাজলেন৷ কিছুই বললেন না৷ আমার পিঠে থেকে হাত সরিয়ে পকেটে হাত গুজে নিরলস দাঁড়ালেন৷ আমি নিজেই এবার থতমত খেয়ে গেলাম৷ তবুও নিজের কাজে অটুট রইলাম৷ পা উঁচু করে তার সমান হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি৷ উনি বাঁ’কা হাসলেন৷ উপায় না পেয়ে তার পায়ের উপর দাঁড়ালাম৷ উনি মুখ কুঁ’চকালেন৷ আমি তার কুঁচকানো মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম৷ উনি এইবার স্লো ভয়েসে বললেন,

–‘ একা একটা ছেলেকে পেয়ে ই”জ্জৎ হর”ণের চেষ্টায় আছিস বলে মনে হচ্ছে? ‘

উনার ঠোঁটের কাছাকাছি আমার কঁপাল৷ তার নিশ্বাস ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার কপাল৷ ভেতরের ক’ম্পন বুঝতে পেরেও আমি চোখ উঁচু করে উনার দিকে তাকালাম৷ উনার দৃষ্টি আমাতেই নিবদ্ধ৷ হয়তো বুঝতে চাইছেন,আমি কি করবো৷ উনার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আরো উঁচু হলাম৷ পড়ে যেতে নিলেই আমার কোমরে ধরলেন৷ কপাল কুঁচকানো৷ আমি হাসলাম৷ খিলখিল করে হাসলাম৷ উনার ভ”য়ার্ত চোখের ভাষা পড়তে বেশ লাগছে আমার৷ তবে যে কাজ টা করার জন্য এতোটা কাছে আসা সেটা না করলে পা”প হবে মহা’পা”প৷ আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম, আবারও নিজের গলার স্বরে গা”ম্ভীর্য এনে বললাম,

–‘ নড়ছেন কেন? চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ ‘

–‘ নড়ছিস তো তুই..! দো”ষ আমার৷ ‘

আমি আঙুল দিয়ে উনার ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ হুশশশ! ‘
উনি অবাকে উপর অবাক হচ্ছেন৷ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলেন৷ তারপর স”ন্ধিহান গলায় বললেন,

–‘ কুল কাব্য..! এই পিচ্চি তোর কিছুই করতে পারবে না৷ ‘

আমি ভ্রু কুঁচকালাম৷ আবার অ”পমান৷ আমি উনার জাম রাঙা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছি৷ যে কাজটার জন্য এসেছিলাম সেটা নিমিষেই ভুলে আকৃ”ষ্ট হয়ে পড়লাম৷ কি হলো! কি হচ্ছে সব ভুলে যাচ্ছি৷ আমার মনের কিনারায় জানান দিচ্ছে,

‘ অধিকার তোর৷ এতো ভাবছিস কেন? সে যে তোর৷ ‘

পৃথীবি থ’মকে যাক৷ আমি আমার পরশ তার মাঝে বি’লিয়ে দিলাম৷ যাকে শুদ্ধ বাংলাতে যাকে আদরের পরশ বলে৷ তার জাম রাঙা ঠোঁটের পরশ৷ ভালোবাসার পরশ৷ উনি তালে তাল মিলাচ্ছেন৷ নিজের জালে নিজেই ফেঁ”সেছি৷ এইবার নিজে থেকে সরে আসতে গেলে উনি আসতে দিলেন না৷ একদম না৷ ছোট ছোট মূহুর্ত গুলো হুট করেই হয় আর সেটা হয় সবথেকে দামী মূহুর্ত৷ এই মূহুর্ত নিয়ে সব সময় বেঁচে থাকা যায় যে।

আমি শ্বাস আঁ’টকে বসে আছি। উনি আমার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। সেম ভুল আবারো,,কাপড় আনি নি। উনি দরজার দিকেই তাকিয়ে আছেন এখনো। আমি আবার তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে কাপড় নিয়ে আসলাম। ন্যা’নো সেকেন্ডের ব্যাপারটা ঘটলো। উনার হাসির আওয়াজে হা’র্ট বি’ট মিস হলো। ইশ,না হাসলে হয় না তার? আমি যে লজ্জার আবরণে আবার ঢাকা পড়ছি…!

চলবে,,,,

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩২
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

সুন্দর সকাল গুলো সুন্দর ভাবেই শুরু হয়৷ সিনে’ম্যা’টিক ভাবে৷ বাইরে কোথাও পাখির ছুটোছুটি,ঝ’ড়ো হাওয়া৷ সূর্যের আলোর মাখামাখি৷ আর প্রিয় মানুষটার বাহুডোরে আবদ্ধতা৷ লজ্জা মাখা সকাল৷ একরাশ ভালোবাসাময় সকাল৷ সে এখনো ঘুমিয়ে আছেন৷ আমি পিটপিট চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ তার উষ্ণ আলি”ঙ্গনে থাকতে বেশ লাগছে৷ বাইরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে৷ মাথার পাশের থাই গ্লাস টা রাতে খুলে রাখি৷ সেখান থেকে চাঁদের আলো এসে ঘর আলোকিত করে৷ আর প্রতিদিন সকালে সূর্যের সকালের ফ্রেশ আলোক র”শ্মিটাকেও উপভোগ করা যায়৷ সেই খোলা জানালা দিয়েই হাওয়া আসছে৷ ব্লা”ঙ্কেটের ভেতর দিয়ে হাওয়া ঢুকে ঠান্ডা শিহ”রণ দিচ্ছে৷ আমি আরেকটু এগিয়ে তার বুকের সাথে মিশে গেলাম৷

–‘ আপনার মাঝে কিছু একটা খুজে পাই আমি৷ ‘

সে উত্তর দিলেন না৷ শুধু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন৷ দিনে দিনে কেমন পা”গল হয়ে যাচ্ছি৷ তার মাঝে আস’ক্ত হয়ে যাচ্ছি৷ কিছুক্ষণ পর সে চোখ মেলে তাকালো৷ আমার দিকে তাকিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি দিলো৷

–‘ ভালোবাসাময় মনিং মহারাণী৷ ‘

আমি হাসলাম৷ তার সব কিছুতে ভিন্নতা৷ আমি একগাল হেসে বললাম,

–‘ শুভ সকাল৷ ‘

–‘ প্রত্যেকটা সকাল শুভ কিন্তু আজকেরটা ভালোবাসাময়৷ ‘

আমি কিছু বললাম না৷ সব কিছু সপ্নের ন্যায়৷ সেদিনের জেদের জন্যই আজ আমি তার আর সে আমার৷ আমিরের সাথে কেমন থাকতাম,কি হতো ভেবেই একটু শিউরে উঠলাম৷ তবে সব কিছুর জন্য আমির নামক মানুষটার ধন্যবাদ প্রাপ্য৷ তার খাম খেয়ালি কাজের জন্য কাব্য ভাইয়ার জে’দ৷ জীবনটা ট্রা”জেডি৷ সব কিছুর ভেতরে সুখের খোজ থাকে বলেই এতোটা ট্রা”জেডি৷ তবে সব কিছুর মূলে এতোটা সুখ আছে সেটা আমি ভাবতেই পারি নি৷ আমাকে হঠাৎ অন্যম”নস্ক হতে দেখে সে বললো,

–‘ মুখটা হঠাৎ শু’কিয়ে যাওয়া রসগোল্লার মতো করে রেখেছিস কেন৷ ‘

–‘ মানে?’

উনার আজব কথা শুনে ভ্রু কুচকে এলো৷ শুকিয়ে যাওয়া রসগোল্লা৷ হাও ফা’নি৷ আমাকে সিরিয়াস হতে দেখে হেয়ালি করে বললেন,

–‘ তোর ছোট মাথায় এতো কিছু ঢুকবে না৷ ‘

–‘ কেন ঢুকবে না৷ অবশ্যই ঢুকবে৷ আপনার মতো আ’স্ত এক মানুষের সব সহ্য করতে পারলে ছোট একটা কথা কেন বুঝবো না বলেন তো? ‘

উনি বড়সড় একটা ধা’ক্কা খেলেন মনে হয়৷ ধা’ক্কা খাওয়ার কারণ খুজতে কোন কথার মানে কি বের করেছেন আল্লাহ মা”লুম৷ আমি উনার থেকে উঠে বসার জন্য তাড়া দিলাম৷ উনি দু”ষ্টুমি করার মু’ডে আছে এখন৷ উঠতে গেলে আবার আটকে ফেলছেন৷ আমি বির’ক্ত হলেও প্রকাশ করছি না৷ মূহুর্ত গুলো যে দামী..! ‘
__________________
হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা৷ এখানে থেকে সম্পূর্ণ ভার্সিটি দেখা যাচ্ছে৷ সবাই ফরেনার৷ আমি আজ জি’ন্স আর কামিজ পড়ে এসেছি৷ নিজেকে কেমন অচেনা লাগছে এই আধুনিকতার ভীড়ে৷ আর সে,ব্লু জি’ন্স,হোয়াইট টি শার্ট, চোখে সানগ্লাস ঝুলিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমি উনার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে আছি৷ দিনে দিনে আরো হ্যান্ডসাম আর কিউট হচ্ছেন৷ তার কিউটনেস দেখে মহা বির’ক্ত লাগলো আমার৷ বিদেশিদের সাদা চামড়ার ভীড়েও তাকে ধবধবে সাদা লাগছে৷ হোয়াইট জার্মানি ক্যা”ট৷ ভেবেই বিরক্তিতে হাসি পেলো৷ ধূসর বর্ণের মণি গুলো সানগ্লাস খুলতেই নজরে পড়লো৷ আমি বিরবির করছি, ‘ বউকে ভার্সিটি তে দিতে আসে নি নিজেই ভর্তি হতে এসেছেন মনে হচ্ছে৷ ‘

–‘ কোথাও জ্ব’লে যাওয়ার গ’ন্ধ পাচ্ছি৷ ‘ উনি হাত দিয়ে বাতাস করে বললেন৷ কথাটা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা সেটা আমি বুঝতে পারছি৷ আমি দাঁতে দাঁত চে’পে বললাম,

–‘ সাদা বে”ড়াল চেনেন? আপনাকে সাদা বে”ড়াল লাগছে৷ ‘

উনি হো হো করে হাসলেন৷ মাথা দুলিয়ে৷ আমি রেগে ফে’টে পড়ছি৷ ওয়েট এন্ড সি..! আপনাকে আপনার ট্রি”কসে পু”ড়াবো মিস্টার কাব্য৷

আ’জব নিয়মের বে”ড়াজালে বেঁধে পড়েছি৷ ভাষা আয়ত্ত করতে বেশ বেগ পেতে হবে মনে হচ্ছে৷ ইংরেজি টা চলে কিন্তু জার্মান ভাষা৷ সেটা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ আমি অবাক চোখে তাকিয়ে শুধু শুনেই যাচ্ছি৷ ক্লাস শেষে আজ ভাষা শিখবো৷ উফফ! এতো ঝা”মেলা জানলে আমি আসতাম না৷ অফ পি”রিয়ডে বিশাল করিডোরে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছি৷ নির্জন, কোলাহল মুক্ত৷ সবাই ডিসিপ্লিনের মধ্যে চলে৷ কথা বলতে গেলেও বোধহয় ভেবে নেয় সবাই৷ আমি উদাস চোখে তাকিয়ে আছি৷ নিজের ভাষা আর আর কোলাহল মিস করছি৷ নিজের দেশ মানেই স্বাধীনতা৷ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ালাম৷ কবে যাবো আবার সেই মাটিতে? জ্যাম হোক বা দূ”ষণ সব কিছু মিস করছি৷

–‘ ক্যান আই টক টু ইউ?’ পাশে থেকে পুরুষ কন্ঠে শুনে ঘুরে তাকালাম৷ ছিপছিপে গড়নের শ্যাম বর্ণের একটি ছেলে৷ মুখে বাঙালি ছাঁপ৷ আমি কথা বললাম না৷ ঘুরে ফেরত আসতে গেলে আবার বললো,

–‘ হেই ম্যাম, আপনি কি বাংলাদেশী৷ ‘

আমি এইবার ঘুরে তাকালাম৷ মিষ্টি হেসে জবাব দিলাম৷ নিজের দেশের কাওকে পেয়ে হঠাৎ করেই ভুলে গেলাম সে ছেলে৷ উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে সালাম দিলেন৷ সচারাচর এমন দেখা যায় না৷ আমিও সালামের জবাব দিলাম৷ সে ভদ্র ভাবে বললো,

–‘ ক্যান্টিনে যাবেন? আপনাকে দেখেই বাঙালি মনে হয়েছিলো৷’

ই”তস্তত করে আমি তার সাথে গেলাম৷ অ’স্বস্তি হলেও এখন ঠিক লাগছে৷ উনার নাম রাতিব৷ চিটাগাং থাকেন আমার ডিপার্টমেন্টেই পড়েন৷ সব ডিটেইলস শুনে মূহুর্তেই ফ্রী হয়ে উঠলাম তার সাথে৷ ছেলেটা মিশুক৷ ভালো৷ এর আগের ক্লাসের সমস্ত নোটস আমাকে দিলো৷ ক্লাস শেষ করে তার সাথেই ক্যাম্পাস থেকে হেটে মেইন গেইটের কাছে গেলাম৷ কাব্য ভাইয়া নিরলস ভাবে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমায় দেখে সানগ্লাস শার্টের মাঝে গুজে দিলেন৷ আমি রাতিবের সাথেই তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ উনি কিছুটা অবাক হয়েছেন৷ তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,

–‘ ক্লাস কেমন হলো? ‘

আমি মুচকি হেসে জবাব দিলাম, ‘ ভালোই..! আপনার ক্লাস আর মিটিং? ‘

উনি কিছু বললেন না৷ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালেন আমার বেশ লাগছে৷ সকালে ওভার স্মার্ট সা”জার ছোট একটা শা”স্তি দেওয়া যায়৷ রাতিব উৎসুক চোখে তাকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ উনি কে৷ ‘

আমি দাঁত বের করে হেসে জবাব দিলাম,

–‘ ওওও,,মিট হিম৷ আমার কাজিন ব্রাদার৷ ‘

উনি আমার দিকে রা’গী চোখে তাকালেন৷ রাতিব মাথা দুলিয়ে “ওহ ” বলতেই আমার হাসি পেলো৷ উনি গম্ভীর ভাবেই আমাকে একটানে উনার কাছে নিয়ে বললেন,

–‘ ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমার মিসেস. সে৷ হুটহাট ভুলে যাওয়ার রো”গ আছে তাই আমাকেও ভুলে যায়৷ আমি ড্যা’ম সিউর কাল আপনাকেও ভুলে যাবে৷ ‘

আমি উনার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম৷ উনি আবার আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,

–‘ তাই না বেইব? ‘

আমি উপায় না পেয়ে ” হ্যাঁ ” বলতেই উনি আমাকে কোলে উঠিয়ে নিলেন৷ রাতিব তাকিয়ে আছে৷ আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম৷ ছিঃ! ও কি ভাবছে৷ উনি গাড়িতে আমাকে বসিয়ে জোরে গাড়ি টান দিয়ে শুধু বললেন,

–‘ কাজিন ব্রাদার..! বাহ.. আজ ব্রাদারের ভূমিকা পালন করবো সিস্টার৷ ‘

আমি মানে বুঝলাম না৷ ব্রাদারের ভূমিকা মানে৷ আমি তাকিয়ে আছি উনি রহ”স্যময় হাসি দিয়ে বললেন,

–‘ ওয়েট সিস্টার৷ সর‍্যি কাজিন সিস্টার৷ ‘
চলবে,,,,

(একেকটা নতুন চরিত্রের পেছনে সু’প্ত কাহিনি আছে৷ তাদের দরকার বলেই আসছে৷ তবে নে”গেটিভ বা প”জিটিভ কোনো কারণে নয় তাদের ভূমিকা অন্য সেটা জানবেন৷ ৷ ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here