রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২৫,,,২৬
রুবাইদা_হদি(sheikh ridy rahman)
সপ্নের মতো বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা৷ আমার একহাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন উনি৷ মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমি এই অচেনা রাজ্যে হারিয়ে যাবো৷ আমিও তার হাত ধরে চারদিকে তাকিয়ে দেখছি৷ আবারো সব ফর্মালিটি শেষ করে আমরা বাইরে বের হতেই অবাক হয়ে যাই৷ বার্লিনের কোল জুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে৷ আঁকাশের কোলে হালকা মেঘের ভেদ করে একফালি রোদ এসে বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে রাঙিয়ে দিচ্ছে৷ রৌদ্দুরে বৃষ্টি..! এর চেয়ে বড় ওয়েলকাম আর হতেই পারে না৷ আমি উচ্ছ্বসিত চোখে তাকিয়ে আছি..মুখে হাসি৷ এতো সুন্দর একটা সারপ্রাইজ পাবো ভাবতেই পারি নি৷ আমিও কাব্য ভাইয়ার হাত ঠে’সে ধরলাম৷ উনিও খুশি হয়েছেন..! সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে রৌদ্দুর আর বৃষ্টির খেলা৷ আর আমাদের মনে প্রেমের ছোঁয়া লাগছে৷ কেন এতোটা সৃতিময় আজকের দিনটা? আমাদের স্বাগতম জানানোর জন্য? অচেনা ভালোবাসার শহরে প্রথম রৌদ্দুরে বৃষ্টি..! বার্লিনের প্রথম পাঁ রাখার অনুভূতি এতোটা সুখময় কেন? উনিও আমার মতোই উচ্ছ্বসিত..! যা তার চোখে-মুখে ফুঁটে উঠেছে৷ জার্মানি এক লোক এসে দাঁড়াতেই উনি লাগেজ গুলো গাড়িতে উঠাতে বলেন৷ সেইদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই৷ রোদের আলো আর বৃষ্টির খেলার সাথে রঙধনুর সাত রঙ ফুঁটে উঠেছে৷ আমি উনার হাত ধরেই প্ল্যাটফর্মের একদম সামনে এগিয়ে গেলাম। একপ্রকার টেনেই উনায় নিয়ে যাচ্ছি। আমার এইভাবে টেনে নেওয়া দেখে উনি অবাক হয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে আমার সাথে দৌড়াতে থাকলেন। একটু রাগীস্বরে বললেন,
–‘ পা’গলের মতো দৌড়াচ্ছিস কেন? আরে .. আরে পড়ে যাবো তো। ‘
আমি উনার কথা একদম পাত্তা দিলাম না৷ আমি রঙধনু ধরবো৷ এতোকাছে থেকে আগে কখনো দেখি নি৷ আমি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই প্ল্যাটফর্মের বাইরে বেরিয়ে এলাম৷ মাথায় ব্যা”ন্ডেজ করা সেইদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই৷ আমিতো নিজের খেয়ালে আছি৷ বৃষ্টি মাথায় পড়তেই উনি হ্যাচকা টান দেন আমায়৷ আমি একদম উনার বুকের উপর হু’মড়ি খেয়ে পড়তেই উনি নিজেকে পড়ে যাওয়া থেকে সামলিয়ে নেন৷ রাগীদৃষ্টিতে তাকিয়ে শা’সনের সুরে বলল,
–‘ পা”গল হয়ে গেছিস? বার্লিনের হাওয়া লাগতেই মাথার তার সব ছিড়ে গেছে কি? এইভাবে বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে এলি কেন? মাথা ভিজে যাচ্ছে সে খেয়াল কি আছে..!’
উনার কথা শুনে বড্ড অভিমান হলো আমায়৷ এতোসুন্দর দেখি নি কখনো তাই বেশির এক্সসাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম৷ আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই উনি আবার হাত ধরে টান দেন৷ আমি আবারও পিছিয়ে উনার বুকের সাথে গিয়ে ধা’ক্কা খাই৷ উনি আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন৷ আমি চোখ ঘুরিয়ে নিলাম৷ কিছু বললাম না৷ উনার সাথে কথা বলবো না একদম৷ উনি চুপ করে আছেন দেখে আমি আবার তাকালাম উনার দিকে৷ চুলগুলো ব্যা”ন্ডেজের উপর দিয়ে বেরিয়ে আছে৷ ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছে৷ আমার অভিমান মিশে গেলো মূহুর্তেই৷ মাথা ভিজে যাচ্ছে দেখে তাড়াহুড়ো করে বললাম,
–‘ সর্যি..আমি বুঝি নি! আপনার মাথা যে ভিজে যাচ্ছে..’ আমি নিজে উঁচু হয়ে তার মাথার উপর হাত দিলাম যাতে পানি না পড়ে৷ উনি আমার কাজ দেখে হাসলেন৷ আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললাম,
–‘ ভেতরে চলুন,,আমি রঙধনু ছুঁবো না..! ‘
উনি এখন আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে হাত উঁচিয়ে জার্মানি সেই ব্যাক্তিকে ডেকে বললেন,
–‘ hey man.. give me umbrella please..! ‘
আমি উনার কথা শুনে ভ্রুকুচকে ফেললাম৷ ছাতা দিয়ে কি হবে? গাড়িতে উঠলেই হয়৷ লোকটা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো৷ আমাকে ভ্রুকুচকে থাকতে দেখে উনি আমাকে ছেড়ে নিজের ব্লে””জার খুলে ফেললেন৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,
–‘ খুলছেন কেন? এমনি ভিজে যাচ্ছেন আরো ভিজে যাবেন তো৷ ‘
–‘ হুশশ..! রৌদ্দুরের বৃষ্টির রঙে রাঙাবো তোকে৷ ‘
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি৷ ব্লে’জার খুলতেই সাদা শাদা শার্ট আর কালো জিন্সে তাকে অপূর্ব লাগছে৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো কিছু জার্মানি মেয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছে৷ ভাব দেখিয়ে ব্লে’জার খোলার কি দরকার ছিলো? ওহহ হ্যাঁ নিজের ফিটনেস বডি মেয়েদের দেখানোর জন্য৷ আমি মেয়েগুলোর দিকে রাগী চোখে তাকিয়েও লাভ হলো না৷ ওরা তাকিয়ে আছে৷ আমি রেগে উনার কাছে গিয়ে হুট করেই জড়িয়ে ধরি৷ আমার এহেন কাজে সে হত’ভ’ম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন৷ আমি জড়িয়ে ধরতেই ওরা হেঁসে দিলো৷ আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মনে মনে বললাম, ‘ সে আমার..! ‘
–‘ কে কার? ‘
–‘ আপনি আমার..!’
উনি এবার তার ব্লেজার আমার মাথার উপর দিয়ে হেসে উঠলেন৷ বললেন,
–‘ এই জন্যই তো বলি লাজুকলতা হুট করে আমায় জড়িয়ে ধরলো কেন..!’
উনার এতোটুকু কথা শুনে নিজে ছেড়ে চলে আসতে চাইলে উনি এবার আটকে ফেলেন৷ জার্মানি ছেলেটা ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসতেই উনি ছাতা ছু’ড়ে মারতে আর তাকে গাড়িতে অপেক্ষা করতে বললেন৷ ছাতা ফুটিয়ে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন৷ তারপর আমার হাতে ছাতা দিতেই আমি থমথমে গলায় বললাম,
–‘ আপনার মাথায় ধরুন.. আমার দরকার নেই৷ ‘
উনি রাগী চোখে তাকাতেই আমি ফি’চে’ল হেসে ছাতা হাতে নিয়ে বললাম,
–‘ ওহহ..!আপনার হাতে তো ব্যাথা, বুঝেছি আমি ধরে রাখবো তাই তো?’
–‘ কঁ”চু বুঝেছিস তুই..! বকবক না করে ছাতা ধর..!’
উনার ধ’মক শুনে আমি ভড়কে গেলাম৷ ছাতা ধরতেই উনি আমার পিছনে এসে দাঁড়ালেন৷ আমি ঘাড় ঘুরাতেই উনি কোলে উঠিয়ে নিলেন৷ আমি আবার ভয় পেয়ে তার কলার খাঁ’চমে ধরি৷ উনি ভ্রুকুচকে বললেন,
–‘ এক ছাতা উঠিয়ে আরেক ছাতাও আমাকে ধরতে বলিস? ‘
আমি উনার কথা মানে বুঝতে পেরে তার বাহুতে থা”প্পড় দিতে নিলেই নিজেকে সামলে নিলাম৷ বিরবির করে বললাম,
–‘ ঢং নিজে কোলে নিবে আবার নিজেই ভাব দেখাবে৷ যত্তসব..! আমার কি পাঁ নেই? ‘
উনি হাসলেন৷ হেসে বললেন,
–‘ তাহলে নামিয়ে দেই? প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ওদের একজনকে উঠিয়ে নিয়ে আসি৷ ‘
এইবার আর হাত ফিরিয়ে নিলাম না৷ উনার বাহুতে থা’প্পড় মেরে বললাম,
–‘ আপনার চোখ একদম এয়ারপোর্টের চোরাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে দিবো উল্টাপাল্টা কথা বললে..! এখানে আসার সাথে সাথেই দি ডিসেন্ট কাব্য ভাই গ্রেট লু’চু তে পরিণত হয়ে গেছে..!’
উনি হা হা করে হাসলেন৷ আস্তে আস্তে হেঁটে যেতে যেতে বললেন,
–‘ লু”চু গিরির কি দেখেছিস তুই?’
আমি হাওয়ায় দুলছি মনে হচ্ছে৷ ছাতা একহাতে শক্ত করে ধরে থেমে থেমে বললাম,
–‘ ক.. কই আমি তো কিছু দেখি নি..! ‘
–‘ কিন্তু আমি তো শুনেছি কেও একজন বলেছে..! ‘
আমি চুপ করে গেলাম৷ চোখ পিটপিট করে তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ হুট করে একটা জায়গায় এসে উনি দাঁড়ালেন৷ আমায় নামিয়ে দিলেন৷ আমি এখনো উনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছি৷ সে আমার দিকে তাকিয়ে হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিলেন৷ আমার কোমরে হাত পেঁচিয়ে ধরে বললেন,
–‘ এতো শ”ক পাচ্ছিস কেন? এখন থেকে অভ্যাস করে নে..!উঠতে বসেতে এইগুলা সহ্য করতে হবে তোকে৷ আর হ্যা”বলার মতো অবাক না হয়ে সামনে তাকা৷ ‘
আমিও তার কথা বাধ্য মেয়ের মতো শুনে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যাই৷ লেক..বৃষ্টির ফোঁটায় উন্মাদনা সৃষ্টি করছে৷ রোদের আলো প্রতিফলিত হওয়ার ফলে ছোট রঙধনু সৃষ্টি হয়েছে সেই পানির উপর৷ সুন্দর বললেও কম হবে…. আমি অবাক চোখে তাকিয়ে সেই রঙধনু ছুঁতে নিলেই আমার হাতের সাথে মিলিয়ে যায়৷ আমি খিলখিল করে হেসে উঠছি৷ উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন,
–‘ চোখের গভীরতার মা”প জানিস কি? ‘
আমি ঘা”ড় ঘুরাতেই উনি গলা বাড়িয়ে চুমু দেন৷ তাড়াহুড়ো করে সামনে ঘুরে বললাম,
–‘ মা’প টা’প জানি না..! হুট হাট কাঁ”কের মতো ঠোঁট বাড়িয়ে চুমু টুমু দেওয়া কিন্তু লু”চু গি”রি..! ‘
উনার কি হলো জানি না আমার গালে আবার চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ লুচু তো একজনের সামনেই হওয়া যায়..! আর সেই লু”চু গি”রি তে লু”চ্চা”মি থাকে না থাকে ভালোবাসা..! ‘
আমি কিছু বললাম না৷ হাঁসলাম! এতো যুক্তি কোথায় পায় উনি? উনি গুণগুণ করে বললেন,
~” তুমি চোখের আড়াল হও,
কাছে কি’বা দূরে রও,,,,,
মনে রেখো আমিও ছিলাম,,,,
~” এই মন তোমাকে দিলাম,,,
এই প্রেম তোমাকে দিলাম,,,,
চলবে,,
( ..ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন..!)
রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পর্বঃ২৬
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
বার্লিনের সৌন্দর্য অপূর্ব.. জনবহুল এই রাজ্যে সব কিছুই মনোমুগ্ধকর৷ জার্মানের রাজধানী বার্লিন৷ এতোটা আকৃ ষ্ট হবে জানলে আমি আরো আগেই চলে আসতাম৷ গাড়ি ছুটে চলেছে হাই স্পি’ডে৷ আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সুন্দর সুন্দর ঘর আর নাম না জানা গাছের ছুটোছুটি দেখে চলেছি৷ আর উনি আমার খোলা চুলের ছুটোছুটি সামলাতে ব্যস্ত৷ আমার চুল ভিজে গিয়েছিলো বলেই সে খুলে দিয়েছে৷ আমার সেদিকে পাত্তা নেই৷ আমি বাইরে তাকিয়ে থাকতে ব্যাস্ত আর সে আমার দিকে ব্যস্ত৷ আমার চুল গুলো তার হাতে প্যা’চিয়ে নিচ্ছেন৷ সেদিকে আমার কোনো দ্রু’ক্ষে’প নেই৷ অন্য সময় হলে চুলের টান স’হ্য না করতে পেরে কেঁদে উঠতাম৷ কোমর ছাড়ানো চুল৷ উনি হঠাৎ চুল ধরে টান দিতেই আমি তার বুকের উপর ঝুঁকে পড়ি৷ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠতেই সে তাড়াহুড়ো করে ছেড়ে দেন৷ উনি ব্যস্ত হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ ব্যা’থা পেয়েছিস? আমি তো আলতো হাতে টান দিতে চেয়েছিলাম৷ ইশ..! এখনো আগের মতোই চুলের টান স’হ্য করতে পারিস না..! ‘
আমি উনার বুকে থেকে মাথা উঠিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
–‘ আপনি কি করে জানলেন? ‘
উনি বোধহয় আমার কথা শুনে কিছুটা লুকোনোর চেষ্টা করলেন৷ কথা ঘুরানোর জন্য বললেন,
–‘ চুল গুলো বেঁধে ফেল..! আমায় বড্ড জ্বা’লা’তন করছে৷ ‘
আমি ইচ্ছা করেই তার কথা না শুনে চুল গুলো আরো উড়িয়ে দিলাম৷ যাতে উনার চোখে মুখে আ’ছড়ে পরে৷ আমি তার থেকে খানিকটা সরে বসলাম যাতে আরো ভালো ভাবে তাকে জ্বা’লা’তন করতে পারে৷ আমার কাজ দেখে উনি কিছুই বললেন না৷ উল্টো হাওয়ার তালে চুলের ঝাপটা না সামলে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলেন৷ আমার কাছে নিজে এগিয়ে এলেন তারপর জোরে জোরেই বললেন,
–‘ গাড়ির মধ্যে তোর প্রেম পাচ্ছে? ওকে নো প্রব্লেম আ’ম রেডি৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে ড্রাইভারের দিকে তাকাই তারপর উনার দিকে৷ ড্রাইভার ছেলেটা কি ভাবছে? উনার আসলেই লজ্জা নেই৷ একদম নেই৷ আমি চুল গোছাতে নিলে উনি একদম গোছাতে দিলেন না৷ আমি যতবার চুল খোঁপা করছি৷ উনি বি’গড়ে দিচ্ছেন৷ লুকিং গ্লাসে উনার আর আমার স্তব্ধ ঝ’গড়া দেখে জার্মানি ড্রাইভার ছেলেটা হাসছে৷ উনিও তার হাসির সাথে তাল মিলালেন৷ আমি আবার চুল বাঁধতে গেলে উনি আমার হাত টেনে ধরে তার সাথে হেসেই চলেছে৷ এইবার বির’ক্ত সাথে প্রচুর রাগ লাগছে৷ আমি রেগে বললাম,
–‘ ছাড়ুন..! ও কি ভাবছে বলুন তো৷ ‘
উনি হাসতে হাসতেই জবাব দিলেন,
–‘ ওদের অভ্যাস এর চেয়েও বেশি আছে..! ‘
–‘ মানে কিসের অ’ভ্যা’স..? ‘ আমি অবাক সুরে জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,
–‘ PK অ’ভ্যা’স..! ‘ আমি ঘুরে তাকাতেই উনি আবার হাসলেন৷ ব্যাপারটা বুঝতে কিছুক্ষণ লাগতেই আমি উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম,
–‘ ইয়া’ক ছিঃ! আপনি এতো অস’ভ্য কেন? সারাদিন কি কি বলেন৷ আমার কাছে একদম আসবেন না৷ ‘
উনি আমার দিকে ভ্রু’কু’টি করে তাকিয়ে জার্মানি ছেলেটাকে বললেন,
–‘ ক্রু’জ.. ডু ইউ নো এনিথিং এবাউট রোম্যান্স? ‘
জার্মানি ছেলেটা কি বলল তা বুঝলাম না৷ কারণ সে জার্মানি ভাষায় কি সব বলে দিলো৷ তার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হু হা করে হেসে উঠলেন৷ আমি গাড়ির দরজার সাথে একদম মিশে বসে আছি৷ না জানি কি উল্টাপাল্টা বলেছেন৷ আমাকে টেনে তার কাছে নিয়ে এসে বললেন,
–‘ ডু ইউ নো ? ‘
আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে থেমে থেমে বললাম,
–‘ না.. না এ একদম জানি না.! ‘
উনি মুচকি হেসে আমার বাঁধা চুল গুলো খুলে দিয়ে বললেন,
–‘ আচ্ছা শিখিয়ে দিবো..! ‘
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি৷ উনি চোখের পাতায় ফুঁ দিয়ে বললেন,
–‘ খাঁটি বাংলা ভাষায় বলছি তাই উনার বোঝার উপায় নেই..! অন্য সময় না হয় প্রাক্টিক্যালি শিখিয়ে দিবো৷ ‘
আমি উনার মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেললাম৷ হাত দিয়ে ঢেকেও শান্তি নেই৷ উনি হাতের তালুতে চুমু দিচ্ছেন৷ উফফ! কি অস’হ্য ব্যাক্তি..! হাত দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থাই উনি বললেন,
–‘ অস’হ্য হই আর অস’ভ্য সহ্য কিন্তু তোকেই করতে হবে..! ‘
_____________________________
রাস্তায় পড়ে আছে হলুদ রাঙা ফুল৷ সম্পূর্ণ রাস্তা যেন আগমণ জানাচ্ছে আমাদের৷ মৃদু হাওয়ার তালে দুলে চলেছে নাম না জানা হলুদ ফুলের গাছটা৷ আমি বিছানো ফুলের উপর পা রাখতেই একদফা ভালোলাগার ছোঁয়া মনে প্রাণে গেঁথে যায়৷ অচেনা শহরে এই উন্মাদ কাব্য ভাইয়াকে নিয়ে থাকতে খুব একটা খারাপ লাগবে না বোধহয়৷ লাগেজ গুলো ক্রুজ আর উনি সাদা ডুপ্লেক্স বাড়ির আউটডোরে রেখে আসলেন৷ আমি ঘুরে ঘুরে বিশাল বাগানের সারি সারি গাছ আর ফুল দেখে চলেছি৷ বাগানের এককোণায় টিউলিপ দেখতেই মন টা জুঁড়িয়ে যায়৷ হয়তো তাকে চিনি বলেই এতোটা আনন্দ লাগছে৷ আমি টিউলিপ ছুঁতে এসে ভুলেই গিয়েছিলাম কাব্য নামক মানুষটা আমার সাথে আছে৷ এতোটা বিভোর হয়ে গিয়েছে সে কখন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন টের পাই নি৷ লাল রাঙা টিউলিপটা ছিড়তেই উনি ঝট করে আমায় কোলে তুলে নেন৷ আমি আবারো ভয় পেয়ে তার শার্ট খাঁমচে ধরি৷ এইভাবে কেউ কোলে উ’ঠায়৷ আর একটু হলেই আমার আত্মা মনে হউ উঁ’ড়ে যেত৷ আমাকে ভয় পেতে দেখে উনি কঁপাল কুচকে ফেলেন৷ বললেন,
–‘ এমন ভাব করিস যেন আমি তোকে জো’র করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছি..!’
উনার কথাতে কিছুটা অ”ভিযোগের আভা’স৷ আমি কি সত্যিই বেশি করছি? আমি উনার শার্ট ছেড়ে দিয়ে লাল টিউলিপ উনার মুখের সামনে ধরে বললাম ,
–‘ লাল টিউলিপ, লাল গোলাপ, ভালোবাসার প্রতীক..! ‘
উনার মুখে হাসির রেখা ফুঁটে উঠেছে৷ সামনে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
–‘ আর বরকে হুটহাট চুমু দেওয়া পবিত্রতার প্রতীক৷ ‘
আমি মূহুর্তেই উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ ওইটা ভুল,, বরের জায়গায় বউ হবে..!’
ওহহহ শীট..কি বললাম এইটা৷ আমি মুখ কাঁচুমাচু করতেই উনি মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন৷
বাসার সামনে এসে নামিয়ে দিলেন আমায়৷ ঘরে যাওয়ার আগে আমার হাত আঁকড়ে ধরে বললেন,
–‘ নতুন শুরু, নতুন পথ চলা
একেটা দিন তোকে যত্ন করে আমার মঝে রাখতে চাই..! সব কিছুতে তোকে চাই৷ ‘
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না৷ শুধু উনার হাতটা শক্ত করে ধরলাম৷ অনেক সময় নীরবতার চেয়ে সুখের উত্তর আর কিছুই নেই…!
দুটো বেড রুম৷ প্রত্যেকটা রুম সাদা রঙের ছড়াছড়ি৷ গ্লাস দিয়ে মোড়ানো রুম গুলো৷ ভেতর থেকে বাইরে দেখা গেলেও বাইরে থেকে ভেতরে দেখা যায় না৷ সব কিছুরে আভিজাত্যের আধুনিক ছাঁপ৷ ফার্ণিচারগুলো কাঁচের৷ কাঁচ বলেই হয়তো এতোটা শোভা পেয়েছে সব কিঁছু৷ আমি ফ্রেশ হয়ে এসেই চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি৷ বেড রুমের সাথেই পাশে সুইমিং পুল৷ আর সেখানে দাঁড়ালেই স”মুদ্রের গ”র্জন৷ এতোসুন্দর হয়তো না হলেই পারতো৷ আমি পুলের পানিতে হাত ছোঁয়াতেই কোথা থেকে এসে আমার হাত সরিয়ে নিলেন উনি৷ কিছু না বলেই টেনে রুমের ভেতর নিয়ে এলেন৷ এতো জলদি সব কিছু হওয়াতে আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না৷ উনি আবার আমাকে বেডের মধ্যে বসিয়ে মাথায় হাত দিলেন৷ আমি ব্যা’থা পেতেই শব্দ করে উঠি৷ উনি ব্যস্ত হয়ে ফুঁ দিতে লাগলেন৷ আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে সেদিনের মতো উনার কথা কপি করে বলালাম,
–‘ আমার চেয়ে আপনি ব্যা’থা পেয়েছেন বেশি সেটা কি জানেন.?’
উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে ম’লন লাগিয়ে দিলেন৷ আমি উনাকে জ্বালানোর জন্য বললাম,
–‘ আহ..! লাগছে তো৷ ‘
উনি আবার ব্যস্ত হয়ে উঠে বললেন,
–‘ আর লাগবে না আর একটু..!’
আমি মুখ টিপে হেসে উঠলাম৷ সে অনেকটা প’সে’সিভ৷ এতোটা সুখ আমার কাছে না আসলে আমার জীবন বোধহয় অন্য হতো৷ আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ এতো সুন্দর বাড়ি কার? ‘
–‘ আমাদের..! ‘
আমাদের ছোট একটা শব্দ হলেও মনের ভেতরের সমস্ত ভালোলাগা গুলো ডানা মেলে উড়তে শুরু করলো৷ আমি অনেক বার আমাদের শব্দটা আওড়ালাম৷ আর বার বার আমার মনে জোয়ার বইছে৷ এতোটা ভালো কেন সে?
___________
ডিনার করেই সিম পাল্টিয়ে সবার সাথে কথা বলে এইবার শান্তি লাগছে৷ আমি পা’নসে মুখ নিয়ে সারা ঘর সাজাচ্ছি৷ উনি কোথাও একটা গিয়েছেন আমাকে একা রেখে৷ যাওয়ার আগে শুধু বলে গিয়েছেন অফিসের কিছু একটা কাজে যেতে হবে ইমিডিয়েটলি৷ আমিও প্রশ্ন করি নি৷ এখন বির’ক্ত লাগছে৷ সারা ঘরে আমি ছাড়া কেও নেই৷ একরাশ মন খারাপ নিয়ে আমার আর তার বিয়ের একটা ছবি দেখছি৷ নিঁখুত সাজ..নিজেকে দেখলে হিং”সে লাগে৷ সারাদিনের জার্নিতে ক্লা’ন্ত লাগছে সাথে ঘুম৷ বাইরে সোডিয়ামের আলোয় বোঝার উপায় নেই দিন না রাত৷ হলুদ ফুল গুলোর উপর সাদা আলো পড়ছে৷ মোহময় লাগছে..! একগুচ্ছো রাতের আঁধারে হাত ধরে হাটার মতো সুন্দর পরিবেশ৷ গাড়ির আওয়াজ পেতেই আমি দৌড়ে গেটের কাছে যাই৷ আজ হাতে হাত রেখে হাটবো সব ক্লা’ন্তিকে ছুড়ে ফেলে৷ দরজা খুলে দিতেই তার মুখ দেখে আমার মুখে হাসি ফুঁটে উঠে৷ আমি আদুরে ভাবে বললাম,
–‘ শুনেন,, আমি রাস্তায় হাঁটবো হলুদ ফুলের উপর৷’
উনি কিছু না বলে ঘরে ঢুকতেই পাশে একজন মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি৷ আমি অবাক চোখে তাকাতেই উনি বললেন,
–‘ রাই আসো..!’
আমি থমকে দাঁড়ালাম নামটা শুনে৷ আমাকে সরতে না দেখে উনি আবার বললেন,
–‘ রাই কে বাসায় ঢুকতে দে নীতু..! ‘
চলবে….
( কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না..ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন..!)