প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প পর্ব ৪

0
851

প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

|৪|

রৌদ্রোজ্জ্বল সকালটা মধ্যাহ্নে গড়াল। বুকের ভেতর দুরুদুরু অশনি বার্তায় মুহূর্ত পেরোল। কোথা থেকে উড়ে এলো এক মুঠো শেফালি ফুলের গন্ধ। অসময়ে কোকিল ডাকল। অস্বস্তিতে স্তব্ধ প্রায় আমি প্রচন্ড দুশ্চিন্তা নিয়ে গোটা দুই লেকচার শুনলাম। প্রফেসর বেরিয়ে যেতেই পাশের এক মেয়েকে ডেকে বললাম,

‘ এই জুথি? কী ব্যাপার বলো তো? কিছু কী ঘটেছে?’

প্রশ্নটা করেই বুকে পাথর চেপে বসে রইলাম আমি। ভেতরটা কাঁপতে লাগল দুরুদুরু। হাত পায়ের কম্পনটাও স্পষ্ট। ভয়াবহ কোনো দুঃসংবাদ শোনার আশায় বিকলপ্রায় হয়ে গেল মস্তিষ্ক। বারবার মনে হতে লাগল, যদি খারাপ কিছু ঘটে থাকে? ভয়াবহ খারাপ কিছু? বাবার মানসম্মান ধুলোয় মিশে যাওয়ার মতো খারাপ কিছু? তবে কী হবে? কী করব আমি? বাবার মুখের দিকে চেয়ে কীভাবে তার ব্যাখ্যা টানব? আমার ভেতরটা হুহু করে উঠল। অচেনা ভয়ে ডুকরে কেঁদে উঠতে চাইল মন। অসহায়, অস্থির চোখদুটো মেলে প্রিয়তার দিকে চাইলাম। জুথি অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

‘ কী ঘটবে?’

আমি যথাসম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করে বললাম,

‘ আমাকে নিয়ে কী কিছু ঘটেছে?’

জুথি মায়া ভরা চোখে চাইল। প্রিয়তা অস্থির হয়ে বলল,

‘ সবাই এমন নিশুর খোঁজ করছে কেন বল তো? ব্যাপারটা কী?’

জুথি কিছুটা অপ্রস্তুত হলো বোধহয়। ঠোঁট টেনে হেসে বলল,

‘ আমি ঠিক জানি না।’

আমার ভয়টা বেড়ে গেল এবার। বুকের ভেতরটা ধরাস করে উঠল। কী এমন ঘটতে পারে যা জুথি মুখে বলতে পারছে না? নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ আর এই নতুন পরিস্থিতিতে আমরা দু’জনেই কিছুটা কুঁকড়ে গেলাম। অজানা এক ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেল দু’জনের মুখ। এই ভয় আর অস্থিরতা নিয়েই জুথিকে কিছুটা চেপে ধরলাম আমরা। জুথি আমতা আমতা করে বলল,

‘ সত্যিই কিছু জানি না নিশু। জানলে অবশ্যই বলতাম। তবে তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কিছু একটা হয়েছে বোধহয়।’

আমি আর প্রিয়তা স্তম্ভিত হয়ে একে অপরের দিকে চাইলাম। দু’জনে প্রায় একই সাথে আওড়ালাম,

‘ বয়ফ্রেন্ড!’

জুথি মাথা নাড়ল। এদিকে আমার মাথা আউলে যাওয়ার জোগার। জীবন নামক রেলগাড়ীটা বিংশ বৎসর পাড়ি দিতে চললেও যেখানে প্রেমিক পুরুষ নামক যাত্রী খুঁজে পেলাম না। সেখানে হঠাৎ ‘বয়ফ্রেন্ড’ নামক পদার্থের উদয় হলো কী করে? আশ্চর্য! ক্লাস থেকে বেরিয়ে মুক্ত মঞ্চের সামনে গিয়েই বুঝলাম অবস্থা ভয়াবহ। কৌতূহলী ছেলে মেয়েরা ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে কোনো পথচারী ফিরে চাইলেও মনে হচ্ছে যেন আমাকেই দেখছে। কৌতুক করছে। হাসছে। আমি হতাশ হয়ে প্রিয়তার দিকে চাইলাম। ক্লান্ত কন্ঠে বললাম,

‘ এই বয়ফ্রেন্ড নামক প্যারাটার মানে কী? আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সবাই কেমন বিশ্রীভাবে তাকাচ্ছে।’

প্রিয়তা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বুদ্ধিদীপ্ত কন্ঠে বলল,

‘ আমি ভাবছি ভিন্ন কথা। আজকালকার যুগে বয়ফ্রেন্ড থাকা খুবই সাধারণ বিষয়। আমারও আছে। কিন্তু সে নিয়ে তো কারো মাথাব্যথা হচ্ছে না। তাহলে চিনা নেই, জানা নেই সবাই হঠাৎ তোর বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পড়ল কেন বল তো?’

আমি নিরুত্তর চোখে চাইলাম। চোখে-মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললাম,

‘ বুঝতে পারছি না। কিন্তু এই হাবিজাবি কান্ড যদি ছোট মামার কানে যায় তাহলেই আমি শেষ। বাবা একদম মেরে ফেলবে।’

প্রিয়তা কিছু বলল না। শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে থেকে বলল,

‘ জীবনটা তো খালার হাতের রান্নার থেকেও রহস্যময় হয়ে যাচ্ছে রে নিশু। কী দিচ্ছে, কী খাচ্ছি কিছুই তো বুঝতে পারছি না!’

আমি উত্তর দিলাম না। ক্যাম্পাসের হাওয়া অসহ্য হয়ে উঠতেই বাসায় ফিরলাম। প্রিয়তা আর আমি বিশাল ভাবনা চিন্তা করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম আবিরকে চেপে ধরব। এই ফাজিল ছেলেটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছে। একমাত্র এই ছেলেটাই সমস্যার সমাধান। আমি আর প্রিয়তা বিকেল-সন্ধ্যা ব্যালকণিতে বসে রইলাম। কিন্তু আবিরের দেখা পাওয়া গেলো না। অদ্ভুত একটা অস্থিরতা নিয়ে সন্ধ্যা পেরুলো। রাত গড়াল। পূর্বাকাশে লালচে রঙ ধরতেই চোখ মেলে চাইলাম। প্রিয়তা তখনও ঘুমোচ্ছে। তার ছোট্ট, সুন্দর মুখটিতে ল্যাপ্টে আছে একরাশ ক্লান্তি। আমি সেকেন্ড কয়েক প্রিয়তার দিকে চেয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বিষণ্ণ মন নিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে চুপচাপ চেয়ে রইলাম দূর থেকে বহুদূরে। কলেজে এমন একটা কান্ড ঘটে যাওয়ার পর ক্লাস করার মানসিকতা আর রইলো না। দু’দুটো দিন লেখালেখি আর বই পড়ায় ডুবে রইলাম। কিন্তু মন বসাতে পারলাম না। বুকের ভেতর চাপা ভয় নিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে লাগলাম। ছোট মামা হলেন বাবার ডানকান। আমাদের কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র। সারাদিন দার্শনিকের মতো ঘুরে বেড়ায়। কাজ কারবার কিছু নেই। কলেজের ব্যাপারটা যদি আরও ছড়ায় আর ছোট মামার কান অব্দি পৌঁছায় তাহলেই সর্বনাশ। আমার আর প্রিয়তার ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে মরা ছাড়া উপায় নেই। দিন দুয়েক চিন্তা ভাবনা করে একরকম ক্লান্ত হয়ে আমি আর প্রিয়তা সিদ্ধান্ত নিলাম, আর কোনো চিন্তা ভাবনা নয়। জীবনে বহু পাপ করেছি। আল্লাহ যখন শাস্তি দিতে চাইছেন তখন মাথা পেতে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সুতরাং, সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে জীবনে শেষবারের মতো ফুসকার স্বাদ নেওয়া যাক। আমি আর প্রিয়তা অত্যন্ত দুঃখী দুঃখী মন নিয়ে তৈরি হলাম। দরজায় তালা দিয়ে দু’তলার সিঁড়ি পর্যন্ত আসতেই একটা চমৎকার ঘটে গেল। দোতলার সিঁড়ির গোড়া থেকে আবিরকে উঠে আসতে দেখা গেল। তার হাতে ফোন। গায়ে হালকা বাদামী পলো শার্ট। গোছানো, পরিপাটি চুল। ছিমছাম চেহারা। প্রিয়তা চাপা কন্ঠে চেঁচাল,

‘ এই নিশু? আবির! আবির!’

আবির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বেখেয়ালি চোখে একবার আমাদের দিকে চেয়েই চোখ ঘুরিয়ে নিজের ফোনের দিকে মনোযোগ দিল। চোখে-মুখে গাম্ভীর্য। বিস্ময় ভরা চাহনিতে তীক্ষ্ণ সতর্কবার্তা। তার এক পলক চাহনিতেই আমি আর প্রিয়তা থমকে গেলাম। বিভ্রান্ত হয়ে একে অপরের দিকে চাইলাম। প্রিয়তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম,

‘ তুই শিওর এটা আবির?’

প্রিয়তা অসহায় চোখে চাইল। ধ্রুবর দিকে আড়চোখে চেয়ে বলল,

‘ বুঝতে পারছি না। ব্যাটা মুখ চোখের এমন ভাব ধরে রেখেছে কেন, বল তো?ভড়ং ধরেছে মনে হয়।’

আমি প্রিয়তার কথায় পাত্তা না দিয়ে আড়চোখে আবিরকে দেখলাম। আবির দ্রুত পায়ে উপরে উঠছে। দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে স্থির। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কোনো ভাবান্তর হচ্ছে না। মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। আমি প্রিয়তার হাত খামচে ধরে ফিসফিসিয়ে বললাম,

‘ চিবুকটা দেখ। চিবুকটা দেখ। চিবুকে তিল কার ছিল? ধ্রুব না আবিরের? উফ! মনে পড়ছে না তো।’

প্রিয়তা বিভ্রান্ত হয়ে বলল,

‘ আবিরের ছিল বোধহয়। আবিরের থুতনির কাছে তিল দেখলাম না? ধ্রুবরও থাকতে পারে। না, না আবিরেরই ছিল।’

প্রিয়তার বিভ্রান্তিতে আরও বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম আমি। রাগে-দুঃখে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো মুখে চাইল। আমাদের দুজনকে ভয়াবহ বিভ্রান্তির মাঝে রেখেই আবির নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে উপরে উঠে গেল। যেতে যেতে দেখিয়ে গেল চিবুকের কাছে ঝলঝলে এক কালো তিল। আমি রাগ নিয়ে বললাম,

‘ বলদের বলদ। সিম্পল একটা বিষয় মনে রাখতে পারিস না? ছোট মার উচিত ছিল তোকে দিনে দশবার করে হরলিক্সের পানিতে চুবানো। বেয়াদব! দুনিয়ার সব মনে থাকতে পারে। কোন ছেলে কখন হাঁচি দেয় সেটাও তোর মুখস্থ অথচ ধ্রুবর চিবুকে তিল আছে কি না সেটা মনে থাকে না? আশ্চর্য!’

প্রিয়তা মুখ ফুলিয়ে তাকাল। কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে বলল,

‘ তোর জামাইয়ের চিবুকে তিল আছে নাকি বাহুতে তিল আছে সেটা মনে রাখার দায়িত্ব তোর। আমাকে বলছিস কেন? তোর জামাইয়ের সাথে আমার কিছু হওয়ার সম্ভবনা আছে? নাই। তোর ধ্রুব ট্রুবকে আমি কখনো চুমু খেতে পারব? পারব না। তাহলে মনে রেখে লাভ?’

আমি হতভম্ব চোখে চাইলাম। অবাক হয়ে বললাম,

‘ চুমু খেতে না পারলেই খেয়াল করা যাবে না? তুই কী ছেলেদের চুমু খাওয়ার জন্য খেয়াল করিস নাকি? আশ্চর্য!’

প্রিয়তা উত্তর না দিয়ে হেলেদুলে নিচে নামল। তারপর দাঁত কেলিয়া বলল,

‘ অনেকটা তাই। যেখানে সম্ভবনা, সেখানেই আকর্ষণ। অন্যের জামাইয়ের উপর অযথা সময় নষ্ট করব কেন?’

আমি হতাশ চোখে চাইলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,

‘ জামাই জামাই করছিস কেন?ধ্রুব কখনোই আমার বর নয়। হওয়ার সম্ভবনাও নেই। হি ওয়াজ জাস্ট আ ইনফেচুয়েশন। তুই চাইলে তাকেও চুমু খেতে পারিস। শুধু শুধু একজন অবিবাহিত পুরুষকে তোর চুমু থেকে বঞ্চিত করবি কেন? তোর চুমু না পেলে তার পুরুষ হয়ে জন্মানো স্বার্থক না-ও হতে পারে।’

প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে তাকাল। আমার বাকি কথাগুলো ছেড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

‘ ইনফেচুয়েশন! জাস্ট ইনফেচুয়েশন! আমি তো ভালোবাসা ভেবেছিলাম। ওহ্ শিট! তোর এই ইনফেচুয়েশের চক্করে আজ আমাদের এই সিচুয়েশন!’

আমি উত্তর দিলাম না। প্রিয়তা সারা পথ হা-হুতাশ করে চলল। অনেকদিন বাদে রিকশা নিয়ে শহর ঘুরলাম। রিক্সাটা জয়নুল আবেদীন পেরিয়ে সার্কিট হাউজের রাস্তা ধরতেই অদূর থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠল,

‘ আরে, ভাবি! এই ভাবি দাঁড়াও।’

প্রিয়তা আর আমি একে অপরের দিকে চাইলাম। চলন্ত রিক্সা থেকেই ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকালাম। একটা লম্বা মতোন ছেলে হাত উঁচিয়ে থামতে বলে দৌঁড়ে আসছে। প্রিয়তা রিক্সা থামাতে বলতেই হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে এসে দাঁড়াল আবির অথবা ধ্রুবর একজন। আমি আর প্রিয়তা কুটিল চোখে চাইলাম। গোয়েন্দার মতো নিরক্ষণ করতে লাগলাম তার সারা শরীর৷ আবির মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে বলল,

‘ বাসায় যাচ্ছো ভাবী?’

আমি মাথা নাড়তেই আবির প্রিয়তাকে হেঁচকা টানে নিচে নামিয়ে নিজে আরাম করে বসল। আমি আর প্রিয়তা একইসাথে হতবাক ও স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আবির ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

‘ আমাকে লিফ্ট দাও। আমিও বাসায় যাব। এই মহিলা এখানে থাকুক। এই মহিলা বেশি কথা বলে। বেশি কথা বলা মেয়ে আমার পছন্দ না।’

আমি ভাষাহারা, নির্বাক হয়ে গেলাম। প্রচন্ড বিস্ময়ে আবিরের মুখের দিকে ‘হা’ করে চেয়ে রইলাম। প্রিয়তার মতো চটপটে মেয়েও মিনিট খানেক স্তব্ধ থেকে তেড়ে এসে বলল,

‘ এই নামুন! এটা কোন ধরনের ব্যবহার? ফাজলামো নাকি? রিক্সাটা ভাড়া করেছি আমি। আর আপনি আমাকেই নামিয়ে দিয়ে লিফ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছেন? আশ্চর্য!’

আবির আকাশ থেকে পড়ার মতো অবাক হয়ে বলল,

‘ আমি লিফ্ট নিচ্ছি কে বলল? আমি তো এই রিক্সাতেই ছিলাম। ভাবী বিচারক। ভাবীই সাক্ষী। ভাবী? আমি তোমার সাথে ছিলাম কিনা বলো? তুমি বোনের জন্য বরের ভাইয়ের সাথে বৈষম্য করতে পারো না!’

আবির বড় বড় বিস্মিত চোখ জোড়া মেলে আমার দিকে চেয়ে রইলো। আমি আমার ফ্রীতে পাওয়া দেবরের দিকে অসহায় চোখে চাইলাম। ধ্রুবর মতো দেখতে একটা ছেলে, যাকে আমি মনে মনে চাইতাম, সে আমায় লাইনে লাইনে ভাবী ডাকছে ভাবতেই কান্না পেয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

‘ খবরদার ভাবী ডাকবে না! অন্যের বিবাহিত বউকে ভাবী ডাকা কোন ধরনের স্বভাব?’

আবির জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,

‘ ও হ্যাঁ। তোমাকে তো নিশু আপু ডাকার কথা। এখন থেকে তোমায় নিশু আপুই ডাকব ভাবী। তুমি মন খারাপ করো না।’

আমি হতাশ চোখে চাইলাম। প্রিয়তা ফুঁসে উঠে বলল,

‘ আমি এখানে মাঝ রাস্তার দাঁড়িয়ে আছি। আর তোরা বসে বসে প্রেমালাপ করছিস? নিশু তুই এতো খারাপ! দেবর পেয়ে বোনকে ভুলে গেলি? দু’দিনের দেবরেই এতো প্রেম? জামাই পেলে তো দুনিয়া ভুলে যাবি।’

আবির বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘ তুমি এতো কথা বলো কেন ভাবীর বোন? আমি এই মুহূর্তে তোমাদের মেহমান। রিক্সা মেহমান। মেহমানদের সমাদর করতে শিখোনি?’

এদের দু’জনের চাপাচাপিতে মাথাব্যথা হয়ে গেল আমার। ইচ্ছে হলো দু’জনের গালে দুটো চড় বসিয়ে নিস্তব্ধ করে দিই পরিবেশ। কিন্তু তার প্রয়োজন হলো না। আবির হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। তার গমগমে কন্ঠস্বর হঠাৎই পাতালে নেমে এলো। মিনমিন করে বলল,

‘ ভাবী! ভাইয়া…. ‘

আবিরের কথায় বেখেয়ালে সামনের দিকে চেয়েই চমকে উঠলাম আমি। আমাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব। তার চোখজুড়ে বিস্ময়। ভ্রু জোড়া খানিক কুঁচকে তাকিয়ে আছে আবিরের মুখে। প্রিয়তা ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে চাইল। আমি অবাক হয়ে একবার ধ্রুব তো একবার আবিরের দিকে চাইলাম। দুটো একই রকম মানুষ একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। একজনের চোখে বিস্ময়, অপরজনের চোখে ভয়। আমি এই মুহূর্তে এসে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম, তারা সত্যিই দুটো আলাদা মানুষ। ব্যাপারটা কোনো মাইন্ড গেইম নয়। ধ্রুব এক নজর আমার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে চেয়ে রইল। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। মুখ দিয়ে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করল না। তবুও ফ্যাকাশে হয়ে গেল আবিরের মুখ। সে সুড়সুড় করে রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়াল। ধ্রুব সেকেন্ড কয়েক বিস্মিত চোখে চেয়ে থেকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে মানুষটাকে দেখলাম। এই প্রথম উপলব্ধি করলাম, তার চাহনি, হাঁটা-চলা আবিরের থেকে ভিন্ন। গম্ভীর, শান্ত। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তাকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করল,

‘ আপনার ভাই যে আমায় ভাবী ডাকতে ডাকতে অস্থির করে ফেলছে জানেন?’

বুকের ভেতর কোথাও একটা খুব কৌতূহল হলো। জানতে ইচ্ছে করল, সে কী আদৌ আমায় চিনে? খেয়াল করে?

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here