শ্রেয়সী পর্ব ৪৫

0
493

শ্রেয়সী
লেখাঃখাইরুন নেছা রিপা
পর্বঃ৪৫

সামনা-সামনি দু’জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই ছোট্ট মনটা এই মানুষটাকে এক নজর দেখার জন্য ঠিক কতটা যে অস্থির ছিলো। কত রাত যে না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে তারও ইয়ত্তা নেই৷ একটু কণ্ঠস্বর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে পুরো রাত দু’চোখের পাতা মেলে রেখেছিলো। হৃদয় নামক ছোট্ট বস্তুটা প্রতিনিয়ত শুধু ভেতরটায় ছটফট করেছিলো। প্রতিনিয়ত শুধু অপেক্ষা! আর অপেক্ষা! অথচ আজ সেই প্রিয় মুখটা চোখের সামনে তবুও কোনো ভাবান্তর নেই বিন্দুর। শীতল চাহনিতে তাকিয়ে আছে শিহাবের দিকে। কারও মুখেই কোনো কথা নেই। শুধু মাত্র কয়েক হাতের দূরুত্ব দু’জনের মাঝে। কারোই চোখের পলক পড়ছে না। শিহাব মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার প্রিয়োকে। ইশ কত সুন্দর হয়েছে বিন্দু! আগের থেকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আজ দু’চোখ ভরে দেখার স্বাধ মিটাবে শিহাব। যেন কতকাল অভুক্ত ছিলো। আজ সব তৃষ্ণা মেটাবে। কতই না ছটফট করেছিলো এই মুখটা দেখার জন্য আজ সব কিছুর অবসান ঘটলো। শিশিরের প্রচন্ড অস্তিত্ব লাগছে ওদেরকে একটু স্পেস দিলে মন্দ হয় না ব্যাপারটা। একটু দূরে গিয়েই দাঁড়িয়ে রইলো শিশির।

শিহাব ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো বিন্দুর দিকে। শরীরটা উত্তেজনায় প্রচন্ড কাঁপছে। সেই সঙ্গে গলাটাও খুব কাঁপছে।
–কেমন আছো বিন্দু? ”
বিন্দু সাবলীল ভাবেই উত্তর দিলো,
–ভালো। আপনি কেমন আছেন?”
–আপনি?”
–কিছু বললেন?”
–নাহ্!”
–কণা কোথায়? ওকে দেখছি না যে?”
–ও বাসায়। ওর ফুপির কাছে।”
–ওহ্!”
শিহাবের সব এলোমেলো লাগছে৷ গুছিয়ে রাখা কথাগুলোও সব এলোমেলো হয়ে গেছে। কণ্ঠে জড়তা মিশে গেছে। কিন্তু বিন্দু কী সুন্দর প্রতিটা কথার স্পষ্ট জবাব দিচ্ছে। কণ্ঠে একটুও জড়তা নেই।
–বিন্দু? ”
–হুঁ?”
–আমাকে দেখে তুমি কী খুশি হওনি?”
–অবশ্যই খুশি হয়েছি। খুশি না হওয়ার কী আছে বলুন তো? আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আপনার সাথে আমার আবার দেখা হয়েছে। ভেবেছিলাম তো মরেই গেছেন!”
বিন্দুর কথায় কিছুটা খারাপ লাগলো শিহাবের তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ধীর গলায় বললো,
–আমার অনেক কথা বলার আছে তোমাকে।”
–আমি তো শুনতেই চাই। তাই তো এলাম।”
–আসলে….। চলো ওইদিকটায় বসি।”
–হুম। চলেন।”

দু’জনে পার্কের একটা ব্যাঞ্চে বসলো। শিহাব একপ্রান্তে আর বিন্দু অন্য প্রান্তে৷ শিহাব বিন্দুর দিকে এক পলক তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস আড়াল করলো কিন্তু বিন্দুর ঠোঁটের কোণে তখনো মৃদু হাসি বিরাজমান ।

–বিন্দু আমি তোমাকে অনেকগুলো মিথ্যে বলেছি আজ আর কিছু আড়াল করবো না। সব বলবো।”
এইটুকু বলেই থামলো শিহাব। বিন্দু হালকা মাথা নেড়ে বললো,
–প্লিজ কন্টিনিউ…!”
–আমি তোমাকে বলেছি আমি ব্যাংকে জব করি আসলে তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম। আমি কোনো জবই করতাম না। বলতে গেলে বাবার টাকায় ফুটানি করা যাকো বলে, আমিও সেইরকম একজন ছিলাম। আসলে তোমাকে দেখার পর এত ভালো লেগেছিলো তাই তোমাকে পাওয়ার লোভে মিথ্যে বলেছিলাম। খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমাকে৷
কিন্তু হঠাৎই একদিন বাবা ফোন করে বললো, বাবার বন্ধু নাকি চায় আমাকে ওনার জামাই করবেন। আর বাবার বন্ধু কোটি কোটি টাকার মালিক। আর তার এই সব প্রোপার্টির একমাত্র উত্তরাধিকারী ওনার মেয়ে। বাবার থেকে এই কথাটা শোনার পর থেকেই আমার সব কিছু এলোমেলো লাগছিলো। তখন তোমার সাথেও অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। আর এত বড় একটা চান্স হাত ছাড়া করারও কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি৷ সবার জীবনে তো আর সবসময় ভালো কিছু আসে না৷ আর এমন একটা মোক্ষম সুযোগ হাত ছাড়া করাটাও আমার কাছে বোকামি মনে হয়েছিলো। সব ভেবে ঠিক করলাম বাবার বন্ধুর মেয়েকেই বিয়ে করবো। আর বাবা এই খবরটা দিয়েছিলো সেদিনই, যেদিন তোমাকে নিয়ে আমাদের ওই বাড়িটায় উঠি৷ কিন্তু ওই বাড়িটাও বাবার সেটা আমার বাড়ি না। আর তুমি তখন বলেছিলে তোমাকে বিয়ে করে রেখে যেতে সেটাও আমি মাকে জানাইনি। জানালে মা অনেক খুশি হতো। মা সবসময় চাইতো আমি যেন বিয়ে করি যদি তাতে আমার একটু গতি হয়। বরাবরই আমি একটু এলোমেলো চলাফেরা করতাম যেটা মায়ের অপছন্দ ছিলো। মায়ের ধারণা ছিলো বিয়ে করলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। আর অন্যদিকে সারাক্ষণ শিশিরের ঘ্যানর ঘ্যানর। কারণ এর আগেও আমি অনেক মেয়েদের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কারও সাথেই অতটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। বলতে গেলে আমিই কাউকে পাত্তা দেইনি। কয়েক মাস সম্পর্ক করার পরই আর ভালো লাগতো না। কিন্তু এই সম্পর্কটায় জড়ানোর পরপরই শিশির সবসময় আমাকে বুঝাতো আমি যেন তোমাকে কখনও কষ্ট না দেই। এই সেই বলে মেজাজ গরম করে দিতো। কয়েকবার তো আমাকে বলেইছিলো বিদেশ যাওয়ার আগে যেন তোমাকে বিয়ে করে যাই। একদিন ওকে রেগে গিয়ে বললাম,
“এতই যদি তোর আদর লাগে তাহলে তুই বিয়েটা করে নে না৷ ”
কিন্তু কে জানতো ও সত্যি সত্যিই এই কাজটা করবে। তবে শিশিরকে আমি বাবার বলা কথার একটা কথাও জানাইনি। ও জানলে আমাকে যেভাবেই হোক বিদেশ যাওয়া আটকে দিতো। সবই ঠিকঠাক চলছিলো। আমি বিদেশ চলে গেলাম। ব্যস্ততার অজুহাতে বাবার বন্ধুর মেয়েকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতাম। তখন যুথিকে( শিহাবের বাবার বন্ধুর মেয়ের নাম) নিয়েই সময় কাটাতাম। বলতে গেলে এক প্রকার তোমার নামটা ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে ভুলতে দিতে না। সারাক্ষণ ম্যাসেজ, ফোনকল করে বিরক্ত করতে। কিন্তু বিরক্তিটা তোমাকে বুঝতে দিতাম না এভাবেই সব চলছিলো হুট করেই একদিন তুমি ম্যাসেজ দিলে তুমি প্রেগন্যান্ট মুহূর্তেই আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। তোমাকে কষ্ট দেওয়াটা ঠিক হবে না। কিছুতেই তোমাকে কষ্ট দিতে মন চাইছিলো না। জীবনে প্রথম কারও সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম আমি। সেই কথাগুলো বারবার না চাইতোও মনে পড়তে লাগলো। অপরাধ বোধে ভেতরটা জর্জরিত হতে লাগলো। আমার বিবেক আমাকে নাড়া দিতে লাগলো যেন কিছুতেই তোমাকে না ঠকাই। যে তোমার গর্ভে সে তো আমারই রক্ত। নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম। বাবাকে সেদিনই জানালাম বাবা আমি বাড়ি ফিরবো। আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়। বাবাও নাছোড়বান্দা আমাকে জোর করে ধরলেন। কেন আমি এখানে থাকবো না। বাবাকে আমি এটাও জানালাম যুথিকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু বাবা কোনো কারণ ছাড়া এটা মানতে নারাজ ছিলেন। বাধ্য হয়ে তোমার কথা বাবাকে জানালাম। ব্যস বাবাও পাল্টি খেয়ে বসলেন। তিনি কিছুতেই এত ভালো সম্বন্ধ হাত ছাড়া করতে পারবেন না। সেদিন বাবার সাথে ঝগড়া করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু ফোনটা সাথে নিতে খেয়াল ছিলো না। বাড়ি থেকে বের হয়ে ভাবলাম তোমার সাথে একটু ভালো করে কথা বলবো। কতদিন হয়ে গেল তোমার সাথে ভালো করে কথা বলিনি। আর ভেবেছিলাম বাড়ি ফেরার সব কিছু কনফার্ম করেই তোমাকে জানাবো। কিন্তু ফোনের জন্য সেটা সম্ভবও হলো না। বেখায়লিভাবেই সেদিন বড় একটা মালবাহী গাড়ির সাথে আমার বাইকের সংঘর্ষ লাগে সেই একটা এক্সিডেন্ট আমার পা’টা কেড়ে নিলো।”
বলতে বলতেই শিহাবের গলাটা ধরে এলো। খানিকটা সময় নিয়ে চুপ করে থাকলো শিহাব। বিন্দু নির্বাকার তাকিয়ে আছে ঘাসের দিকে। শিহাব আবারও বলতে শুরু করলো,
–কেউ বলেনি আমি বেঁচে থাকবো। সেই থেকেই কোমায় রয়েছিলাম প্রায় অনেকগুলো মাস। এর ফাঁকে বাবা তোমার আর শিশিরের টেক্সটগুলো সব দেখে নেয়। কারণ ম্যাসেজগুলো ফোনের ম্যাসেজ বক্সে ছিলো। আর আমি ফোন কখনও লক রাখতাম না।
কিন্তু সেদিন বাবার এক্সিডেন্ট হয়নি। আর বাবা চেয়েছিলো তোমার থেকে আলাদা করতে আর শিশিরের টেক্সট গুলো দেখে বাবা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন আমাদের সম্পর্কে শিশির সব জানে তাই ইচ্ছে করেই আমার কাজিনকে দিয়ে বাবা মিথ্যে বলিয়েছেন। ইভেন এটাও বলেছেন বাবাও এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি। এসব অবশ্য আমি সুস্থ হওয়ার পর জানতে পেরেছি। আর বাবা আমার আগের সিমটা ইচ্ছে করে ভেঙে ফেলে দিয়েছিন। আমি ভালো হওয়ার পর বাবার বন্ধু আর যুথি কেউই চায়নি বিয়েটা হোক আর আমি তো এমনিতেই চাইনি যে ওকে বিয়ে করবো। তারপর জ্ঞান হওয়ার পরেও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারিনি আমি। বাবাকে খালি অনুরোধ করতাম আমাকে একটু শিশিরের সাথে কথা বলিয়ে দিতে কিন্তু বাবা দেয়নি। আর এমনিতে বাবাও শিশিরের ফোন নাম্বারটা জানতেন না।
যখন অনেকটা সুস্থ হোলাম তখন একটা ফোন নেই আমি। ফেসবুকে ঢুকে তোমার আইডিতে ঢুকেই দেখলাম তোমার আর কণার কতগুলো ছবি। বিশ্বাস করো তখন যে কতটা খুশি হয়েছি আমি। তোমার সাথে কথা বলার জন্য তখন আরও অস্থির হয়ে উঠি এরপরেই বাবাকে অনেক বুঝিয়ে দেশে ফিরতে রাজি করাই। বাবাও আমাকে আর আটকে রাখার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কারণ এখন তো ওনার বন্ধু আমাকে ওনার জামাই করবেন না। কিন্তু বাড়িতে এসেই শুনলাম শিশির তোমাকে বিয়ে করে নিয়েছে।”

সব কথা বলা শেষে শিহাব একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বিন্দু হালকা গলায় বললো,
–এখন তো ভালো আছেন তাই না?”
–হ্যাঁ, তোমাকে দেখার পর সত্যিই ভালো লাগছে। মেয়েটাকে দেখতে পারলে আরও ভালো লাগতো।”
বিন্দু সে কথার জবাব না দিয়ে বললো,
–আপনি এবারে একটা বিয়ে করে ফেলুন।”
শিহাব অবাক হয়ে বিন্দুর দিকে তাকালো। বিন্দু ঠাণ্ডা চাহনিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। শিহাব কিছুটা উৎকণ্ঠিত হয়ে বললো,
–এসব কী বলছো তুমি? আমি শুধু আমার বিন্দুকে চাই৷ আর এ জন্যই তো ফিরে আসা।”
–আমি ভুল কিছু বলছি না। আর ভুলে যাচ্ছেন কেন, আমি একটা বিবাহিত মেয়ে। আমার স্বামী আছে, মেয়ে আছে, একটা সুন্দর সংসার আছে আমি সব মায়ার শেকলে আটকা পড়ে গেছি। আমি চাইলেও,এই মায়াগুলো আমাকে ছাড়বে না।”
–এটা কোনো কথা না বিন্দু৷ তুমি চাইলেই আবার নতুন মায়ায় নিজেকে জড়াতে পারবে। আমি, তুমি আর আমাদের মেয়ে মিলে একটা ছোট্ট সংসার পাতবো। আর শিশির নিজে বলেছে তুমি আমার কাছে চলে আসতে চাইলে ও বাঁধা দেবে না।”
বিন্দু শিহাবের কথায় হাসলো বেশ মিষ্টি করে কিন্তু সেই হাসিতে মিশে আছে কত শত কথা।
–কী জানেন তো আমার স্বামী নামক এই মানুষটা বড্ড ইউনিক। কী সুন্দর ভালোবাসার জালে আমাকে বেঁধে রেখেছে আর মুখে বলছে আমি চলে গেলে আমাকে আটকাবে না। অথচ আমাকে কত শক্ত করে বেঁধে রেখেছে। আর দায়িত্বটা আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। মানুষটার মাঝে অনেক বিশেষত্ব আছে। আমি মানুষটাকে যত দেখি ততই প্রেমে পড়ি। এতটা ইউনিক কোনো মানুষ কী করে হয় ধারণা করতেও পারবেন না আপনি। উনি আমার বিরুদ্ধে আমার ওপর কিছু কখনোই চাপিয়ে দেন না। তবে তার আস্থা থাকে আমার ওপর। এবারে হয়তো উনি একটু বেশিই ভয়ে আছেন। আস্থা রাখতে পারছেন না। যেটা আমি ওনার চোখে-মুখের দিকে তাকালেই বুঝি।”
–এতটা বুঝতে পারো শিশিরকে অথচ আমাকে একটুও বুঝতে পারো না!”
–আপনাকে বুঝাটা কী আমার আদৌ দরকার?”
শিহাব ফ্যাকাসে ভঙ্গিতে হাসলো।
–আমার ভালোবাসার কী কোনো মূল্য নেই?”
–যদি মূল্যই খুঁজেন তাহলে বলবো আপনার ভালোবাসাটা আসলে ভালোবাসা ছিলো না সেটা ছিলো ভালোলাগা মাত্র! আর ওনার ভালোবাসার সাথে যদি তুলনা করতে চান তাহলে বলবো, আপনি হীরে আর কাচকে এক করতে চাইছেন। মানুষটা এতটা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে আপনিই বুঝতেই পারবেন না। কী পাইনি আমি ওনার কাছ থেকে? সব পেয়েছি, সম্মান বলুন, শ্রদ্ধা বলুন, ভালোবাসা বলুন সব সব সব পেয়েছি। বলতে পারেন একটা অতুলনীয় জীবনসঙ্গী পেয়েছি।”
–কত সহজ করে কথাগুলো বলছো। ভুলে যেও না তোমার শরীরে এখনো আমার স্পর্শ লেগে আছে।”
–তফাৎটা এখানেই আপনার আর ওনার মাঝে। আর বাকি রইলো স্পর্শ! ওনার পবিত্র স্পর্শে সব স্পর্শ মিলিয়ে গেছে।”
শিহাব হেসে বললো,
–তবে আমার মেয়েটা তো এখনো রয়ে গেছে।
–আপনার মেয়ে আসলো কোথা থেকে?”
একটা হালকা ধাক্কা খেল শিহাব। নিজেকে শক্ত করে জবাব দিলো,
–তুমি অন্তত শিশিরের মতো উদ্ভট কথা বলো না। আমি তো জানি কণা আমার মেয়ে।”
–না!”
–কেন মিথ্যে বলছো?”
–আমি মিথ্যে বলছি না। কণা আমার আর শিশির ভাইয়ের মেয়ে।”

বিন্দুর উত্তরে মেজাজ গরম হচ্ছে শিহাবের তবুও সুক্ষ্ম গলায় জবাব দিলো,
–বিন্দু প্লিজ! অহেতুক কথা বলো না। আমি জানি কণা আমার মেয়ে।”
বিন্দু ঝটপট কাঁধের ব্যাগটা খুলে রিপোর্ট গুলো শিহাবের দিকে এগিয়ে দিলো,
–এই প্রমাণ!”
শিহাব অবাক হয়ে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। বিন্দু হালকা গলায় বললো,
–দেখুন ভালো করে।”
–এসবের মানে কী বিন্দু? তুমি এখন কিছু ভুলভাল রিপোর্ট দেখিয়ে আমাকে বলবে কণা শিশিরের মেয়ে আর আমিও বিশ্বাস করে নেব?”
–আপনি চাইলে আমি কণার ডিএনএ টেস্ট করাতেও এগ্রি আছি।”
শিহাবের মাথা ঘুরছে অথচ বিন্দুকে কী স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। শিহাব নিজের কথার জালেই নিজে আটকে পড়ছে। থমথমে গলায় বললো,
–আজ আমার পা নাই বলে আমাকে অবজ্ঞা করছো?”
–না!”
–ভালোবাসো না আমকে একটুও?”
–ভালোবাসি শুধু আমার স্বামীকে!”
–প্রথম প্রেম কেউ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যায়?”
–প্রথম প্রেম বলতে কিচ্ছু হয় না। ভালোবাসা এমনই একটা অদ্ভুত অনুভূতি যেটা হয়ে যায়। আমারও হয়ে গেছে শিশির ভাইয়ের প্রতি।”
–বিন্দু ও তোমার ব্রেন ওয়াশ করেছে।”
–নাহ্। শুধু ভালোবেসেছে আমাকে। বিনিময়ে কিছুই চায়নি।”

শিহাব আর কোনো যুক্তিই দাঁড়া করাতে পারছে না প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে সবকিছু। বিন্দু হালকা কেসে বললো,
–তাহলে উঠি আমি।”
–তুমি কী আর কখনো আমার কাছে ফিরবে না?”
–সেটা সম্ভাবনা নেই। আমি আমার সুখের নীড়ে বেশ ভালো আছি! আপনিই এমন একটা সুখের নীড় তৈরী করুন৷ তবে হ্যাঁ, কখনও সেই মানুষটার হাত ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাববেন না তহলেই দেখবেন পাখি উড়ে যাবে। পড়ে চাইলেও আর ফিরাতে পারবেন না।”

বিন্দু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে লম্বা লম্বা পা ফেলে পেছন থেকে শিহাব অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here