শ্রেয়সী পর্ব ২৯+৩০

0
357

শ্রেয়সী
লেখাঃKhayrun Nessa Ripa
পর্বঃ২৯

খানিকটা সময় হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো শিশির। নিজেকে ধাতস্থ করেই গ্যাসের আঁচ কমিয়ে দিয়ে হাত বাড়ালো পেছন দিকে। বিন্দুকে এনে বুকের মাঝে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো। আলতো করে চুমু আঁকলো বিন্দুর সিঁথিতে। বিন্দু তখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। শিশির নরম সুরে বললো,
–কী হয়েছে পাগলী? এভাবে কাঁদছো কেন?”
বিন্দু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো,
–তাহলে তখন কেন বললেন? আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন। তখন আর আপনাকে খুঁজে পাবো না। এত পঁচা কেন আপনি? যখন মুখে যা আসে তাই বলে দেন। একবারও মনে হয় না? কেউ কথাগুলো আধেও সহ্য করতে পারবে কিনা!”
শিশির শরীর দুলিয়ে হেসে বললো,
–তাই বলে এভাবে আমার বুক-পিট চোখের পানিতে ভিজাবে?”
–হুঁ। একদম ঠিক করেছি। বেশি কথা বললে এখনি নাক ঝেড়ে দেব। তখন বুঝবেন মজা। খালি ফাজলামি করা না?”
–একদম এটা করবে না। আমি চুপ হয়ে গেলাম।”
কথাটা বলেই আবারও হেসে ফেললো শিশির। বিন্দু রেগে গিয়ে কয়েকটা কিল-ঘুসি দিলো শিশিরের বুকের মাঝে। শিশির আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বিন্দুকে। পুরো মুখে অনেকগুলো চুমু এঁকে দিলো। বিন্দু কোনো বারণ করলো না। বরং চোখ বন্ধ করে শিশিরের প্রতিটা স্পর্শ অনুভব করলো। পরক্ষণেই লজ্জা পেয়ে শিশিরের বুকে মুখ গুঁজলো।
–হইছে এখন লজ্জা পেতে হবে না। এখন রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। আমি রান্নাটা সেরে নেই।”
–কিন্তু এখন কেন রান্না করছেন? রাতে করলেই তো হয়ে যেত। আমি নিজেই রান্না করতে পারতাম।”
–তুমি যা বাজে রান্না করো মুখেই তো তোলা যায় নাহ্!”
কথাটা বলেই শিশির মুখ টিপে হাসলো। বিন্দু নাক-মুখ ফুলিয়ে বললো,
–সবাই এক লাফে গাছে উঠতে পারে না বুঝলেন। এখন সড়ুন আমি রান্না করছি।”
–একদম না আমার খিচুড়ি হয়ে এসেছে। আজ খিচুড়ি, আর ইলিশ ভাজা খাবো। সিম্পল আইটেম।”
–তা এখনই কেন রান্না করতে লাগলেন?”
–দেখেছো কেমন মেঘ করেছে আকাশে? রাতে যদি লোডশেডিং হয় তখন রান্না করতে পারবো না তাই এখনি রান্না বসিয়ে দিছি। মাছও কেটে রেখেছি খিচুড়ি হয়ে গেলে মাছটা ভেজে নেব। তুমি যাও।”
–আচ্ছা আপনাদের বাসায় শুকনো মরিচ আছে?”
–আপনাদের বাসা মানে?”
–স্যরি মানে আমাদের বাসায়। ”
–এই তো গুড গার্ল। হুম আছে, মিটসেফে। কী করবে?”
–মরিচের ভর্তা বানাবো। খিচুড়ি দিয়ে মরিচ ভর্তা খুব মজা হয়।”
–ওকে আমি বানিয়ে দেব।”
–আপনি এত কিছু কী করে পারেন।”
–শেখার ইচ্ছা থাকলেই সম্ভব। আমি তো আর তোমার মতো ফাঁকিবাজ না।”
–দেখুন একদম ভালো হবে না।”
–খারাপটা কী হবে শুনি?”
–অনেক কিছু।”
শিশির চোখ মেরে বললো,
–তা আজ হোক না খারাপ কিছু।”
বিন্দু ভেংচি কেটে চলে আসলো। ছাদের ওপর থেকে জামা-কাপড় গুলো এনে যার যার রুমে গুছিয়ে রাখলো।

সন্ধ্যাবেলা দু’জনে মিলে চা খেলো। চা খেতে খেতে অনেক গল্প করলো। শিশির স্কুলের প্রশ্ন তৈরি করছে আর বিন্দু অনেকদিন পর নিজের আইডিতে ঢুকলো। টুং টাং করে কয়েকটা ম্যাসেজ আসলো। প্রতিটা ম্যাসেজ সিন করে রেখে দিলো। কাউকেই কোনো রিপ্লাই করলো না। হঠাৎই শিহাবের একটা পিক বিন্দুর চোখের সামনে পরলো। বিন্দু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিণে। কখন যে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো টেরই পেলো না। তাড়াতাড়ি ওড়নায় চোখ জোড়া মুছে নিলো। খুব অসহায় লাগছে বিন্দুর। যতই চায় শিহাবকে ভুলে থাকতে ততই যেন শিহাব আরও সামনে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা অব্দি মনটা ভালো থাকলেও এখন আর একটুও ভালো লাগছে না। শিহাবকে খুব মনে পরছে। মনে পরছে শিহাবের সাথে যে ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন বুনেছিলো সেই স্বপ্নগুলোর কথা। খাটের সাথে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তবুও শিহাবকে মন থেকে সরাতে পারছে না। শিশির কিছু একটা আঁচ করতে পেরে এসে বিন্দুর পাশে বসলো। সুক্ষ্ম গলায় ডাকলো,
–বিন্দু!”
বিন্দু চোখের পাতা না মেলেই বললো,
–হুঁ।”
–খুব খারাপ লাগছে?”
বিন্দু ডানে-বামে মাথা দুলিয়ে না বললো।
–মাথা ব্যথা করলে বলো। চুলে হাত বুলিয়ে দেব।”
–উঁহু, লাগবে না। আপনি আপনার কাজ করুন।”
আজ যে শিশিরেরও কাজে মন বসছে না। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজই যা করার করতে হবে। হঠাৎই আকাশ ভয়ংকর গর্জন করে কাঁদতে শুরু করলো। বিন্দু দৌড়ে চলে গেল ব্যালকনিতে। বিন্দু হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা স্পর্শ করছে। শিশির এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তখনই বিন্দুর শিহাবের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পরে গেল। সেদিনও এইরকমই বৃষ্টি হচ্ছিলো। শিহাবও এভাবে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলো। শুধু তফাৎ রয়ে গেল সেদিনকার মানুষটা ছিলো অন্য একজন আর আজকেও অন্যএকজন। সেদিন ছিলো দিন আর আজ রাত। কয়েক ফোঁটা জল চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো৷ বিন্দু শিশিরকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। শোকার্ত কণ্ঠে বললো,
–প্লিজ এভাবে যখন-তখন জড়িয়ে ধরবেন না। আমার এসব ভালো লাগে না।”
শিশির কোনো কিছু না বলেই চুপচাপ ওপর পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। রাতেও খেতে বসে কেউ কারো সাথে কথা বললো না। শিশিরের ইচ্ছে থাকলেও বিন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বললো না। শিশিরের মনটাও খচখচ করছে আজ কী সেই কাজটা করা ঠিক হবে! এমনিতেই অনেকগুলো দিন পার হয়ে গেছে। তারওপর আজ আবার বিন্দুর মন খারাপ। সে যাই হোক যা করার আজই করতে হবে। আর টাইম ওয়েস্ট করা যাবে না। বিন্দু খেয়ে এসে শুয়ে পরলো। শিশির কিছুক্ষণ পর এসে বিন্দুকে ডাকলো।
বিন্দু ঘুম ঘুম চোখে বললো,
–কী হয়েছে?”
–দুধটুকু খেয়ে নাও।”
–আপনাকে বলেছি না প্রতিদিন এসব ঝামেলা না করতে৷ আমার দুধ খেতে ভালো লাগে না।”
–ভালো না লাগলেও খেতে হবে।”
বিন্দু রাগ দেখিয়ে উঠে বসলো। শিশিরের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে দুধটুকু খেয়ে আবারও শুয়ে পারলো। শিশির কাজে মন দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে। কিছুতেই মনযোগ দিতে পারছে না৷ বারবার ঘুমন্ত বিন্দুর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে তবুও যে শিশিরের কিছু করার নেই। আজ তেমন গরমও নেই বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে তবুও শিশির ঘেমে উঠছে বারবার। অনেকক্ষণ রুমের মধ্যে পায়চারী করলো এরপর এসে বিন্দুর পাশে বসলো। অনেকবার বিন্দুকে ডাকলো কিন্তু বিন্দু কোনো সাড়া দিচ্ছে না। সে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। শিশির রুমের লাইট অফ করে এসে বিছানায় বসলো। বিন্দুকে অনেকবার নাড়লো তবুও কোনো রেসপন্স পাচ্ছে না কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে গেল। পরক্ষণেই একজনের কাছে ফোন করে সবটা জেনে নিয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলো। বিন্দুকে তুলে অনেকক্ষণ বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলো। আলতো করে চুমু খেলো বিন্দুর পুরো মুখে। বিড়বিড় করে বললো,
–বিন্দু আমি কোনো সুযোগ নিচ্ছি না। খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমাকে সুখী রাখতে আমি নিজের ক্ষতি করতেও পিছুপা হবো না৷ বিলিভ মী! কখনো সত্যিটা জানতে পারলে ভুল বুঝো না আমায়। অনেক ভালোবাসি তোমায়। অনেক!
ধীরে ধীরে শিশির এগিয়ে যেতে থাকলো বিন্দু নামক আকর্ষণ করা শক্তির দিকে। নিজের ঠোঁটের মাঝে বিন্দুর ঠোঁট জোড়া চেপে ধরলো। প্রথম কোনো মেয়ের ঠোঁটে স্পর্শ করা! সত্যিই কোনো ধারণা ছিলো না শিশিরের। যেন এক মাতাল করা নেশার মতো৷ শিশির ক্রমেই বিন্দুর মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলো। বিন্দুও যেন নড়েচড়ে উঠছে। হাত দিয়ে সেও আঁকড়ে ধরলো শিশিরকে। ঘুমের ঘোরে আবার সেই হাত বারবার ফঁসকে যাচ্ছে।
বৃষ্টির যেন থামার নামই নিচ্ছে না। ঝর ঝর করে আকাশ থেকে বর্ষণ হতেই লাগলো। তার সাথে কারো স্বপ্ন পূরনের প্রচেষ্টা! আধেও কী সেই স্বপ্ন পূরণ হবে? নাকি নতুন কোনো ঘুর্ণিঝড়ের আগমন ঘটবে? সবকিছু তছনছ করতে?

আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথা তাই গল্পটা দিতে লেট হচ্ছে ?। মনে হচ্ছে মরে যাব। এত এত খারাপ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। তবুও গল্পটা লিখি?

চলবে,,,,,,,

শ্রেয়সী
লেখাঃKhayrun Nessa Ripa
পর্বঃ৩০

শিশির সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি নাস্তা তৈরী করলো। সকাল আটটায় ক্লাস। বিন্দু তখনও বিছানায় পরে পরে ঘুমাচ্ছে। সারাটা রাতই মরার মতো ঘুমিয়েছিলো। কখন যে ঘুম ভাঙবে! শিশির কোনোরকম একটা পরটা আর ডিমভাজা খেয়েই রুমে এসে পরলো। বিন্দু তখনও খাটের মাঝখানে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। শিশির বিন্দুর কপলাে হাত দিয়ে কয়েকবার ডাকলো। প্রত্যুত্তরে বিন্দু শুধু, হুঁ, হুঁ করলো। শিশির একটা ছোট্ট কাগজে কয়েকটা লাইন লিখে দিয়ে দরজাটা বাহির থেকে লক করে স্কুলে চলে গেল। ঘড়িতে যখন এগারোটার ঘণ্টা বাজলো। বিন্দু আড়মোড়া ভেঙে এক পলক দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো। একরকম লাফিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। মাথাটা ভিষণভাবে ঘুরছে। শরীরটাতেও কেমন যেন মৃদু ব্যথা অনুভব করছে। হয়তো বেশি ঘুমিয়েছে সেই জন্যই এরকম লাগছে। হঠাৎই একবার নিজের দিকে রহস্যময় ভঙিতে তাকলো বিন্দু। নাহ্ সবই তো ঠিক আছে। ওয়াশরুমে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো বিন্দু। খাটের পাশে বালিশটার কাছে কলম দিয়ে চাপা দেওয়া একটা কাগজ দেখা যাচ্ছে। কৌতুহল আটকে রাখতে পারলো না বিন্দু। এগিয়ে এসে কাগজটা খুললো।
“ঘুম ভাঙলে আগে শাওয়ারটা সেরে নিও। ডাইনিংয়ে পরটা,ভাজি আর ডিমের অমলেট রাখা আছে খেয়ে নিও। আর দুপুরে কিছু রান্না করতে হবে না। আমি হোটেল থেকে নিয়ে আসবো।”
বিন্দু কিছুটা অবাক হলো ছোট কাগজটায় লেখা দু’টো লাইন পড়ে। পরক্ষণেই ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নিয়ে আলমারী থেকে একটা শাড়ি বের করলো। আজ কেন যেন শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে। গোসল সেরে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে চুলগুলো আঁচড়াচ্ছে বিন্দু। তখনই ফোনে শিশিরের কল আসলো।
–হ্যাঁ বলুন?”
–কী করছো?”
–চুল আঁচড়াচ্ছি।”
–কখন উঠেছো?”
–এইতো কিছুক্ষণ আগে।”
–শাওয়ার নিয়েছো?”
বিন্দু কিছুটা বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
–হুঁ।”
–ওহ্। তাহলে এবার খেয়ে নাও। কোনো কাজ করা লাগবে না। বিশ্রাম নাও।”
–একটা কথা ছিলো।”
–বলো?”
–আজ হঠাৎ সকালে শাওয়ার নেওয়ার জন্য উঠে পরলেন কেন?”
শিশির কোনোরকম ঢোক গিলে বললো,
–কাল রাতে গরমে দেখেছিলাম ঠিক মতো ঘুমাতে পারোনি৷ তাই বলছি সকাল সকাল শাওয়ার নিতে যাতে শরীরটা ভালো লাগে।”
বিন্দু যেন এরকম একটা উত্তর আশা করেনি৷ কিছুটা নিরাশ হয়েছে। কারণ গতকাল রাতে সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো এতটুকু ঠিক মনে পরছে। এর বাহিরে কিছু করেছে কি না সেটা মনে করতে পারছে না। যদিও ঘুমরে ঘোরে বাজে বকার অভ্যেস তার নেই৷ তবুও এখন কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। দু’চোখের পাতা বুঝে আসছে। ঢুলুঢুলু হয়ে চেয়ারে বসে আছে। হাত-পায়ে যেন একটুও শক্তি পাচ্ছে নাহ্। ফোনটা বোধহয় এখনি হাত থেকে ফসকে যাবে। বিন্দু নিরাশ ভঙ্গিতে বললো,
–ওহ্।”
–হুম৷ এখন রাখছি আমি ক্লাসে আছি।”
–হুঁ।”
কেউ যেন এতক্ষণ শিশিরের গলা চেপে ধরেছিলো৷ প্রাণটা বোধহয় আর একটু হলেই আকাশে উড়াল দিতো। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্কুলের বারান্দা ছেড়ে ক্লাসে ঢুকলো। বিন্দু একরকম মাতাল করা মানুষের মতো ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো। কোনোরকম একটা পরটা খেয়ে এসেই আবার শুয়ে পড়লো। সত্যিই ঘুমের মতো শান্তি বোধহয় পৃথিবীতে আর কিছু নেই। ঘুম হচ্ছে একমাত্র শান্তির ঔষধ। কোনো চিন্তা নেই, শোক নেই সারাক্ষণ শুধু আরাম আর আরাম!

স্যরি ছোট হয়ে গেছে?।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here