#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ২৫
শিরিনা বেগম সেই থেকে ছেলেকে সমানে বকেই যাচ্ছে। এভাবে কেন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেল শিশির। শিশির ভয়ে মুখটা কাচুমাচু করে ওয়েটিং রুমে বসে আছে। সমানে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে চলেছে বেবীটার যেন কোনো ক্ষতি না হয়। তাহলে কী করে এই পাপী মুখ সে বিন্দুকে দেখাবে। বিন্দুর মা’কেও খবরটা দিতে সাহসে কুলাচ্ছে না শিশিরের। সব মিলিয়ে প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। শিশির ওয়েটিং রুমে হাতদু’টো মুঠো করে তার ওপর থুতনি ঠেকিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ জোড়া বারবারই জলে ভরে উঠছে। একটা অজনা ভয়-আশংকা! সব মিলিয়ে খুব খারাপ সময় পার করছে। হসপিটালে নিয়ে আসার একটু পরেই জ্ঞান ফিরে বিন্দুর। কিন্তু কারো সাথেই কোনো কথা বলে না৷ এরপর নিয়ে যাওয়া হয় আলট্রাসনোগ্রাফিতে। সেখান থেকে পাঁচ মিনিট হওয়ার আগেই বিন্দুকে বের করে আনা হয়। শিশির এসেই বিন্দুকে জিজ্ঞেস করলো,
–এত তাড়াতাড়ি আলট্রাসনোগ্রাফি শেষ?”
কিন্তু বিন্দু কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। চুপচাপ নার্সের সঙ্গে কেবিনের দিকে চলে গেল। শিরিনা বেগমও পিছুপিছু গেলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর রিপোর্ট বের হলো। শিশির ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললো,
–আপনি তো বলেছিলেন আপনার বউ প্রেগন্যান্ট। কিন্তু উনি তো প্রেগন্যান্ট না।”
কথাটা শুনেই একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো শিশির। অবাক হয়ে বললো,
–কিন্তু রমজানের মধ্যেই তো ওর ইউরিন টেস্ট করানো হয় আর সেখানে পজেটিভ আসলো।”
ডাক্তার বললো,
–হয়তো ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে।”
–আজকাল মেডিক্যাল সায়েন্সও কী ভুল তথ্য দেয়?”
–নাহ্। তবে যে যন্ত্রের মাধ্যমে টেস্ট করানো হয় সেটায় যদি প্রবলেম থাকে তাহলে তো ভুল তথ্য দেবেই। তবে হ্যাঁ, আপনার ওয়াইফের একটা প্রবলেম আছে।”
শিশির উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো,
–কী প্রবলেম?”
–ওনার পেটে একটা টিউমার হয়েছে। সম্ভবত এটার বেশ বয়স হয়েছে। আর আমার মনে হয় এটার জন্যই তখন প্রেগন্যান্সির রেজাল্ট পজিটিভ দেখায়।”
–কিন্তু ডক্টর এটা তো আলট্রাসনোগ্রাফিতে হলেও বিশ্বাস যোগ্য ছিল। কিন্তু ইউরিন টেস্টে এটা কী করে সম্ভব হয়?”
ডাক্তার বেশ গম্ভীর হয়ে গেলেন। আমতা আমতা করে বললেন,
–হুম সেটাও ঠিক বলেছেন। যাই হোক তবে আমাদের এখানকার মেশিনগুলোতে কোনো প্রবলেম নেই৷ আর আমি নিঃসন্দেহে বলছি, “আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট না।”
শিশির যেন ডাক্তারের কথাগুকোতে ভরসা হারিয়ে ফেলেছে। পরক্ষণেই কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললো,
–তাহলে ডক্টর ওর এত বমি কেন হতো? মাথা যন্ত্রণাও করতো খুব।”
ডাক্তার আর কিছু না বলেই আরও দুইটা টেস্ট লিখে দিলেন। একটা ব্লাড টেস্ট আর একটা ইউরিন টেস্ট। আবারও একটা ঘণ্টা অপেক্ষা! রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই শিশিরের। বিন্দু কিছুতেই এসব কথা বিশ্বাস করবে না। মেয়েটা কত লড়াই করেছে বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে৷ এখন যদি শুনে ওর কোনো বাচ্চাই হবে না তাহলে এটা কিছুতেই মানতে পারবে না। উল্টো সব দোষ এসে পরবে শিশিরের ঘাড়ে। শিশির ভয়ে ভয়ে আল্লাহকে ডাকলো৷ যেন রিপোর্টে পজেটিভ আসে। বারবার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। শিিশর হাতের উল্টো পিঠে বেখেয়ালি ভাবে জমে থাকা ঘাম মুয়ছে নিচ্ছে। ঘণ্টাখানেক পর ডাক্তারের কেবিনে আবারও রিপোর্ট নিয়ে ঢুকলো। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললেন,
–ওনার টাইফয়েড হয়েছে। জ্বরটা কমে গেলেও। ভেতরে ভেতরে ঠিক রয়ে গেছে। যেটা ওনাকে দুর্বল করে দিচ্ছিলো। আর প্রচন্ড গ্যাস্ট্রিক বাড়ছে যার কারণে মাথা যন্ত্রণা আর বমি হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই। কিছু ইনজেকশন লিখে দিচ্ছি। প্রতিদিন সকাল-বিকাল নিয়ম করে ইনজেকশন পুষ করলেই বমিটা কমে যাবে।”
শিশির আশাহত কণ্ঠে বললো,
–সত্যিই ডক্টর ওর বেবী হবে না?”
ডাক্তার খুব সাবলীল ভাবে উত্তর দিলেন,
–নাহ্।”
ডাক্তারের এই একটা কথা আরও বেশি ভয়ের মধ্যে ফেলে দিলো শিশিরকে। একটুখানি আশার আলো যেন ধপ করেই নিভে গেল।
শিশির চিন্তিত স্বরে বললো,
–ডক্টর ওর টিউমারের কী হবে?”
–আপাতত টাইফয়েড আর বমিটা কমুক। আমি পাঁচ দিনের ইনজেকশন দিচ্ছি। আশা করি কমে যাবে৷ আর পাঁচদিন পর ওনাকে নিয়ে আসবেন। ওনার অপারেশন করাতে হবে। নতুবা যদি টিউমার পেকে গিয়ে ব্লাস্ট করে তাহলে তা আপনার ওয়াইফের জন্য খুবই হুমকিস্বরুপ হবে৷ ইভেন মারাও যেতে পারে।”
শিশির ডাক্তারের কথায় বেশ খানিকটা ঘাবড়ে গেল৷ তারপর সেখান থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো।
বাড়িতে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছে ওদের। শিরিনা বেগম বিন্দুকে ধরে এনে শুইয়ে দিলেন। বিন্দু চোখ বন্ধ করে বিছানায় পরে আছে। মাথা যন্ত্রণাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। রিদি এসেও পাশে বসলো। শিরিনা বেগম মেয়েকে কোন কথা বলতে বারণ করলেন। শিশির বাসায় আসার সাথে সাথেই ঘটক ফোন করলো।
–কী ব্যাপার শিশির সাহেব। ঈদ তো শেষ। বিয়ের দিন-তারিখ কবে ঠিক করবেন? কথা তো ছিল ঈদের পরেই বিয়ে হবে।”
–আসলে চাচা একটা অঘটন ঘটে গেছে। আমার ওয়াইফ সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে এখন মারাত্মক অবস্থা। এছাড়াও আবার টেস্ট করাতে গিয়ে টিউমার ধরা পরছে। ইমার্জেন্সি অপারেশন করাতে হবে। যদি বিয়েটা একটু পিছানো যায় তাহলে আমার জন্য ভালো হতো। আপনি প্লিজ ওনাদের একটু বুঝিয়ে বলুন। এখন এই পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে কী করবো। আর তাছাড়া আমি মানুষ একা সবদিক আমাকেই সামলাতে হয়।”
–হুম বুঝছি। আমি ছেলে পক্ষের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি। ”
–আচ্ছা। ওনাদেরকে একটু বঝিয়ে বলবেন। ”
–হুঁ।”
শিশির স্পষ্ট বুঝতে পারছে ঘটক সাহেবের গলায় বিরক্তির ভাব। কিন্তু তাতে শিশিরের কিচ্ছু যায় আসে না। যেখানে তার প্রিয় মানুষটা অসুস্থ হয়ে পরে আছে সেখানে অন্য কিছুতেই মেতে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। আর বিয়ের মতো এমন একটা আনন্দের মুহূর্তে যদি বিন্দু না থাকতে পারে তাহলে এমন বিয়ে না হোক তাতে কিছুই হবে না। আগে তার প্রিয় মানুষটার সুস্থ হওয়া প্রয়োজন তারপর বাকি সব। ভাবনার মাঝেই দরজায় টোকা পরলো। শিশির ভারাক্রান্ত হয়ে দরজা খুলতেই সাজেদা বেগম আর বিধুকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে কুশল বিনিময় করলো। সাজেদা বেগম রুমে এসে মেয়ের পাশে বসলেন। আলতো করে মাথার ব্যান্ডেজে হাত ছোঁয়ালেন। কারো হাতের ছোঁয়া পেয়েই বিন্দু চোখ মেলে তাকালো। মাকে আর বোনকে দেখে উঠতে নিলেই সাজেদা বেগম বারণ করলেন।
–কীভাবে এসব হলো? ”
শিশির ভয়ে ভয়ে পুরো ঘটনা বললো।
সাজেদা বেগম এখনো ধোঁয়াশার মাঝে আছেন। কারণ উনি তো জানেন ওনার মেয়ে প্রেগন্যান্ট। তাহলে বাচ্চাটা আধেও ঠিক আছে কিনা, না জানা অব্দি শান্তি লাগছে না সাজেদা বেগমের। সব শুনে চুপ করেই থাকলেন। কারণ শিরিনা বেগম আর রিদির সামনেও তো কিছু জিজ্ঞেস করা যাবে না। শিরিনা বেগমের সাথে কথা শেষ হতেই উনি আর রিদি চলে গেলেন নাস্তার আয়োজন করতে। এই ফাঁকে সাজেদা বেগম ব্যালকনিতে ডেকে নিয়ে গেলেন শিশিরকে।
–শিশির বাচ্চাটা ঠিক আছে তো?”
শিশির মন খারাপ করে বললো,
–মা একটা বেড নিউজ আছে!”
–বাচ্চাটা নেই তাই তো?”
–মা বিন্দু প্রেগন্যান্টই ছিল না। ওর পেটে একটা টিউমার হয়েছে।”
সাজেদা বেগম অবিশ্বাস্য সুরে বললেন,
–কী বলো?”
–হ্যাঁ মা, আমিও এটা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। ওর আলট্রা করানো হয় সেখানে টিউমার ধরা পরে। এরপর ব্লাড টেস্ট আর ইউরিন টেস্ট করানো হয় সেখানে টাইফয়েড ধরা পরে আর প্রচন্ড গ্যাস্ট্রিক বাড়ছে। ”
–হুম। রমজানেও যখন টেস্টগুলো করানো হয় তখনও বলছে টাইফয়েড হয়েছে।’
”
–হুম। ডাক্তার বলছে জ্বরটা ভেতরে ভেতরে রয়ে গেছে যার কারণেই ও এতটা দুর্বল হয়ে পরেছে। আর প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। তখন ডাক্তার বলছে,” হয়তো যেই মেশিনে টেস্ট করানো হইছে সেটায় প্রবলেম ছিল তাই ভুল রেজাল্ট দেখাইছে। ” কিন্তু আমার মন মানছিল না। তারপরে যখন ওই দুইটা টেস্ট করাই তখনও দেখি নেগেটিভ আসছে। এখন আমি আর কী বলবো। ডাক্তারের মুখে মুখে তো তর্ক করতে পারি না। আমি সেই রিপোর্ট গুলি আপনাকে দেখাই?”
–না লাগবে না। যাক যা হয় ভালোর জন্যই হয়। না হলে একটা অবৈধ বাচ্চাকে সারাজীবন তোমার বয়ে বেড়াতে হতো। আল্লাহ যা করছেন ভালোর জন্যই করছেন।”
–কিন্তু মা আমার এটাতে কোনো আপত্তি ছিল না। আমি নিজেকে সুখী মানুষই ভেবেছি। বাচ্চাটা যারই হোক ওকে আমি নিজের বলেই জানতাম। ”
–এতটা উদার হয়ো না শিশির। বাস্তবতা এত সহজ না।”
কথাটা শেষ করেই যেন একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন সাজেদা বেগম। মনে হয় মাথা থেকে বড় কোনো বোঝা নেমে গেছে। যেটার ভার বহন করতে করতে উনি ক্লান্ত হয়ে পরেছেন।
গঠনমূলক মন্তব্য চাই সবার।
চলবে,,,,,,,
#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ২৬
কথা বলার এক পর্যায়ে শিশির বলে উঠলো,
–মা আরেকটা দুঃসংবাদ আছে।”
সাজেদা বেগম একটা হালকা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
–এই দুই মাসে অনেকগুলো দুঃসংবাদ শুনেছি এখন আর খারাপ লাগে না। বলে ফেলো নিশ্চিন্তে।”
–মা বিন্দুর টিউমারের অপারেশন খুব দ্রুতই করাতে হবে। টিউমারের বয়সটা নাকি বেড়ে গেছে। ডাক্তার পাঁচদিনের ইনজেকশন দিয়েছে বলেছে, “পাঁচদিন পরেই অপারেশন করাবে নয়তো টিউমার ব্লাস্ট করলে ওর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।”
সাজেদা বেগম শিশিরকে আশ্বস্ত করে বললেন,
–চিন্তা করো না। আল্লাহকে ভরসা করো। ”
কথা শেষ করেই রুমে এসে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে এক গোছা টাকা নিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
–এটা রাখো। আর ভয়ের কারণ নেই। ইনশাআল্লাহ দেখবে সব ভালোভাবে হয়ে গেছে।”
শিশির টাকাগুলো না নিয়েই বললো,
–প্লিজ মা। এটা আমি নিতে পারবো না। ওর সব দায়িত্ব এখন আমার। মেয়ের জন্য কিছু করতে চাইলে সেটা অন্যভাবেও করতে পারবেন কিন্তু এভাবে আমার পক্ষে সম্ভব না।”
–আরেহ পাগল কেউ জানবে না। তুমি আর আমি ছাড়া।”
–না মা এটা হয় না। আল্লাহ তো ঠিকই দেখবেন। সবার আড়াল করে আমার পক্ষে এই টাকা নেওয়া সম্ভব না। আপনি শুধু দোয়া করবেন আমি যেন জীবনে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে পারি। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।”
সাজেদা বেগম টাকাগুলো ব্যাগে নিতে নিতেই বললেন,
–দোয়া তো সবসময়ই করি। বাবা-মা তো সবসময়ই সন্তানের ভালো চায়।”
–মা আমার একটা ভয় হচ্ছে। বাচ্চা হবে না জানলে বিন্দু কীরকম রিঅ্যাক্ট করে! কারণ ও তো খুব করে চাইতো বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসুক।”
–দেখো শিশির যেটা হয়নি সেটা তো আর আমরা জোর করে আনতে পারবো না। আর এতই যদি বাচ্চার শখ হয় তাহলে তুমি আছো কী করতে!”
কথাটা শেষ করেই সাজেদা বেগম রুমে খাটের ওপর গিয়ে বসলেন। শিশির কথাটার মানে বুঝতে পেরে বেশ খানিকটা লজ্জা পেলো। আজকাল শাশুড়িরাও কত আধুনিক। খোলামেলা ভাবেই সব ডিসকাস করে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই শিশিরের খুব হাসি পেলো৷ হাসিটাকে কোনরকম আড়াল করে রুমে চলে আসলো।
রাতে খেয়ে- দেয়ে সাজেদা বেগম আর বিধু চলে গেল। আগামী কালকে আবার বিন্দুদের বাসায় ওদের দাওয়াত। সেই জন্য আর থাকলেন না। শাশুড়িকে একেবারে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরলো শিশির। রুমে এসে প্যান্ট চেঞ্জ করতে করতেই বিন্দুর দিকে তাকালো। একটা খটকা লাগছে শিশিরের৷ বিন্দু যদি সত্যি সত্যিই প্রেগন্যান্ট না হয় সবার আগে সেটা তো বিন্দুর জানার কথা। তাহলে বিন্দু কেন কিছু বলছে না। আর বিন্দু তো একজন এডাল্ট মেয়ে আর এখনকার এই যুগে এই সামান্য বিষয়গুলো এমনিতেই জানার কথা। কিন্তু বিন্দু কেন সব জেনেও বলছে না। তবে কী বিন্দু সত্যিই জানে না! নিশ্চয়ই কোনো একটা সমস্যা আছে। সেইজন্যেই হয়তো বিন্দুও বুঝতে পারছে না। যেভাবেই হোক শিশিরের এটা ভেবে ভালো লাগছে আর তাকে বিন্দুর থেকে দূরে থাকতে হবে না। যেহেতু বিন্দু প্রেগন্যান্ট না সেহেতু এই বিয়েটাও শরীয়ত সম্মত হয়েছে। ভাবতে ভাবতেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগুলো বিন্দুর দিকে। বিন্দু খাটের মাঝখানে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। শিশির এগিয়ে গিয়ে বিন্দুর পাশে বসলো। আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো বিন্দুর কপালের মাঝখানে। বিন্দু চোখ মেলে শিশিরকে দেখেই উঠে বসলো। শিশির মানা করলো তবুও শুনলো না। বেশ গম্ভীরমুখে বললো,
–আপনার সাথে আমার কথা আছে।”
শিশির নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
–কী কথা?”
–আমার বেবীটা ঠিক আছে তো? ওর কোনো ক্ষতি হয়নি তো?”
কী বলবে বুঝতে পারছে না শিশির। শান্ত চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো বিন্দুর দিকে। বিন্দুর চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বিন্দু তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। মনে হচ্ছে চোঝের ঈশারায় শিশিরকে পিঁষে মারবে। শিশির গলার স্বর সুক্ষ্ম করে বললো,
–বিন্দু এখন ঘুমিয়ে পড়ো প্লিজ। মাথার ব্যথা নয়তো বাড়বে।”
–একদম আহ্লাদ দেখাতে আসবেন না৷ ইচ্ছে করে ফেলে দিয়ে এখন আসছে নেকামো করতে। যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন।”
শিশির অপরাধীদের মতো মাথা নিচু করে রইলো। ধীর গলায় বললো,
–তুমি সত্যিই বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি?”
–তা নয়তো কী? এতদিন ভালো মানুষের মুখোশ পরে ছিলেন। কায়দা করে এখন বাচ্চাটাকেও নষ্ট করার প্ল্যান তৈরী করে ফেলেছেন আবার বলছেন আমি এটা বিশ্বাস করি কি না। আলবাত বিশ্বাস করি। কেন বিশ্বাস করবো না? এমন কোনো পুরুষই নেই যে অন্যের বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা বলবে। তাই এইভাবে ধাক্কাটা মেরেছেন যাতে সবাইভাবে এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। কিন্তু আমি তো জানি এটা পরিকল্পিত। কোনো এক্সিডেন্ট নাহ্!”
দম বন্ধ হয়ে আসছে শিশিরের। কেন যেন প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। কান্নাও পাচ্ছে খুব। ছেলেদের তো আবার মেয়েদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতেও বারণ। তাহলো সে আবার কেমন ছেলে। নাহ্, যেভাবেই হোক বিন্দুকে শান্ত করতে হবে উত্তেজিত হয়ে পড়লে পরে ওর জন্যই খারাপ হবে। শিশির কোনো কথা না বাড়িয়ে শুধু বললো,
–বাচ্চাটা একদম ঠিক আছে ওর কিছু হয়নি। আর হ্যাঁ, তোমার একটা অপারেশন হবে।”
–কিসের অপারেশন?”
–পেটে টিউমার হয়েছে।”
–পেটে টিউমার নাকি এবোরেশন করানোর ধান্দা। ধাক্কা দিয়েও যখন কাজ হলো না তখন দ্বিতীয় উপায় তাই না?”
শিশির ধরা ধরা গলায় বললো,
–নাহ্। তুমি চাইলে ডক্টরের রিপোর্টগুলো দেখতে পারো।”
বিন্দু আর কিছুই বললো না। চুপচাপ শুয়ে পরলো। শিশিরও লাইট অফ করে বিন্দুর পাশে শুয়ে করলো।
–কী ব্যাপার আজ আবার এখানে শুয়েছেন কেন?”
–বউকে ছাড়া একা ঘুমাতে ভালো লাগে না তাই।”
–বেশি বউ বউ করবেন না তো। অসহ্য লাগে আমার৷ কতবার বলবো, আপনি যাই করেন না কেন আমি শুধু শিহাবকেই ভালোবাসি।”
শিশির হাত বাড়িয়ে বিন্দুকে নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরলো। বিন্দুর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো,
–তা বাসোই না শিহাবকে ভালো। তাতে আমার কী? আমি কি একবারও বলেছি আমাকে ভালোবাসতে হবে?”
বিন্দু সম্পূর্ণ চুপ হয়ে গেল। এত কাছ থেকে শিশিরের স্পর্শ পেয়ে কেমন যেন শীতল অনুভূতি পুরো শরীরে অনুভব করছে বিন্দু। কেন যেন কথা বলতে ভালো লাগছে না। শিশিরের এই স্পর্শ যেন খুব করে তাকে কাছে টানছে অন্যদিকে শিহাবের ভালোবাসা যেন কোথাও তাকে খুব জোর বাঁধা দিচ্ছে৷ নিজেকে সামলে রাখা অনেকটা শাখের-করাতের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে বিন্দুর কাছে। শিশির আস্তে করে বিন্দুকে ডাকলো।
–বিন্দু! ”
বিন্দু চোখ বন্ধ করে শিশিরের স্পর্শ পেতে পেতে বললো,
–হুঁ।”
–আচ্ছা তোমার পিরিয়ড কী ঠিক কবে হয়েছিল?”
বিন্দু জড়ানো গলায় বললো,
–প্রায় দুই মাস আগে ।”
–আর হয়নি?”
–উঁহু।”
–তোমার কি পরিয়াডে সমস্যা আছে?”
–হুঁ। প্রতি মাসে ঠিক মতো হয় না। কখনো কখনো দুই -তিন মাস পরেও হয়।”
কথা শেষ করে বিন্দু আবারও চুপ করে রইলো। শিশিরের যা বোঝার তা বুঝে গেল। কারণ প্রেগন্যান্সির সময় মেয়েদের পিরিয়ড হয় না। আর বিন্দুর এই সমস্যার করণেই মূলত পিরিয়ড হয়নি। কিন্তু বিন্দু বুঝেছে ও প্রেগন্যান্ট তাই পিরিয়ড হচ্ছে না। যাক অবশেষে আরও একটু নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। কিন্তু চিন্তা একটা রয়েই গেছে আবার যখন বিন্দুর পিরিয়ড হবে তখন কিভাবে শিশির সবটা ম্যানেজ করবে!
গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই। আর ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন।
চলবে,,,,,