শ্রেয়সী পর্ব ১৭

0
384

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ১৭

শিরিনা বেগম যখনই চলে আসতে চাইলেন কিছুতেই সাজেদা বেগম আসতে দিলেন না। এত জোরজবরদস্তির কাছে হেরে গিয়ে অবশেষে থাকতে হলো শিরিনা বেগমকে। ইফতার শেষে নামজ সেরেই রওনা দিলেন। ভাত খাওয়ার জন্য এত জোড়াজুড়ি করলো কিন্তু এবারে কিছুতেই খেতে রাজি হলেন না তিনি। এমনিতেই এত আইটেমের ইফতারি খেয়ে পুরো নাজেহাল অবস্থা আর এখন ভাত খেলে তো পুরো পেট ফুলে যাবে। সাজেদা বেগমও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আর বেশি জোর করলেন না। যতক্ষণ শিরিনা বেগম বিন্দুদের বাড়িতে ছিল ততক্ষণই একটা প্লাস্টিক হাসি ঠোঁটের আগায় ঝুলিয়ে রেখেছে বিন্দু। কিন্তু হৃদয়ে যে তুফান উঠেছিল সেটা কেউই দেখতে পেল না। শিরিনা বেগম আর রিদি চলে যেতেই বিন্দু এসে নিজের রুমের দরজা আটকে ফ্লোরে বসে পরলো। চোখ ফেটে কান্না আসছে। আর কত কাঁদতে হবে তাকে? তবে কী বিধাতা ওকে কান্নার জন্যই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে! কেনই বা শিশির ওকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। নিজের অজান্তেই বিন্দুর হাতটা ওর পেটের কাছে চলে গেল। বিড়বিড় করে বললো,
–দেখেছিস পুঁচকে সবাই আমাকে নিয়ে কী রং-তামাশাই না করছে। সব তোর জন্য। তোর এই অদিনে আগমন কেউই মেনে নিতে পারছে না। তুই কিন্তু একদম কষ্ট পাস না। তোর মা সবসময় তোর পাশে থাকবে ছাঁয়া হয়ে। একদম মন খারাপ করবি না। তোকে আমি পৃথিবীর আলো দেখাবোই একদম চিন্তা করিস না কেমন?”
কথাগুলো বলতে গিয়ে হু হু করে কেঁদে ফেললো বিন্দু। শিহাব যদি আজ বেঁচে থাকতো এই দিনগুলো আজ ওকে দেখতে হতো না। শিহাব কখনোই ওকে এতটা কষ্ট পেতে দিতো না। শিহাবের কথা মনে পরতেই ভেতরটা খুব খালি খালি লাগতে শুরু করলো। শিহাবকে নিজের জীবনের যে সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েছে বিন্দু সেই আসনে আর কখনো কাউকে বসাতে পারবে না সে যেই হোক। চোখ জোড়া মুছে নিয়ে দ্রুত শিশিরের নাম্বারে ডায়াল করলো। কিন্তু শিশিরের নাম্বার ওয়েটিং আসছে। বিন্দু থামছেই না একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে। শেষে শিশিরই কল ব্যাক করলো।
–স্যরি আসলে প্রিন্সিপাল স্যার ফোন করেছিলেন তাই কলটা হোল্ড করতে পারিনি।”
বিন্দু সে কথায় পাত্তা না দিয়ে গলার স্বর রুক্ষ্ম করে বললো,
–আপনি চাইছেনটা কী?”
–আমি আবার কী চাইলাম?”
–দেখুন আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করবেন না। সমস্যা কী আপনার? আমার মতো বাজে একটা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছেন কেন? দেশে কী মেয়ের অভাব পরেছে না কি? ”
–উঁহু মেয়ের অভাব পরবে কেন? অভাব আছে বিন্দুর মতো কারো।”
–দেখুন আমি কোনো মহা মানবী নই যে আমাকে এসব বলবেন। সব জেনেশুনে আমাকে কেন বিয়ে করতে চাইছেন?”
শিশির খানিকটা সময় নিয়ে বললো,
–এমনি।”
–এটা কোনো কথা নয়। না কি অন্য ধান্দায় আছেন।”
–অন্য ধান্দা মানে?”
–আমার বাবার এত সম্পত্তি দেখে লোভে পরে…
শিশির আর কোনো কথাই বলতে দিলো না বিন্দুকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো,
–ব্যাস অনেক হয়েছে আর বলো না তাহলে আমি সহ্য করতে পারবো না।”
–না সহ্য করতে পেরে কী করবেন? বিয়েটা ভেঙে দেবেন। আর আমি তো এাটই চাই।”
শিশির বিন্দুর কথাশুনে হালকা হেসে বললো,
–বিয়ে ভাঙবো কেন?”
–তাহলে কী করবেন?”
–বউ করে একদম সোজা বাড়ি চলে আসবো।”
–দেখুন আপনার কাছে আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি প্লিজ এই বিয়েটা বন্ধ করুন।”
–এসব বলে লাভ নেই। যা হওয়ার তাই হবে। এখন রাখছি মা মনে হয় এসে গেছে কলিংবেল বাজছে।”
কথা শেষ করেই ফোনটা কেটে দিলো শিশির। রাগে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে বিন্দুর৷ আঘাত পাওয়ার জন্য ওভাবে কথাটা বললো কিন্তু তাতেও কোনো ফয়দা হলো না। কেন সে কারো দয়ার দান নিয়ে বাঁচবে? শিশিরের সাথে বিয়ে হলে সারাজীবন ওকে শিশিরের অনুগ্রহ নিয়ে বাঁচতে হবে। এটা কিছুতেই মানতে পারবে না বিন্দু। এভাবে কখনোই শিশিরকে ঠকাতে পারবে না সে৷ শিশিরকে দেওয়ার মতো এমন কিছুই অবশিষ্ট নেই বিন্দুর কাছে। সবটাই তো শিহাবকে উজাড় করে দিয়ে বিন্দু এখন নিঃস্ব। এখনও এই মনের সবটা জুড়ে শিহাবেরই বসবাস চলছে তাহলে অন্যকাউকে বিয়ে করে তাকে ঠাকনোর কোনো মানে হয় কী? চোখ জোড়া বুঝে খাটের ওপর পা ঝুলিয়ে শরীরটা মেলে দিলো বিছানার ওপর। যে করেই হোক এই বিয়েটা হতে দেওয়া যাবে না। যেকোন একটা উপায় বের করতেই হবে৷ কিন্তু কী করবে বিন্দু?

সবাই খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে৷ রাতে আর কিছুই খেল না বিন্দু। ইফতারি খেয়েই অবস্থা খারাপ। বিধু বন্দুর ওপর পা উঠিয়ে শুয়ে আছে। আর নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু বিন্দুর চোখে এক ফোঁটাও ঘুম নেই। কীভাবে যে বিয়েটা ভাঙবে সেই হিসেবটাই মেলাতে পারছে না। হঠাৎই বিন্দুর ফোনে একটা ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো শিশিরের ম্যাসেজ৷ বুক চিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো বিন্দুর। এভাবেই প্রতিরাতে ম্যাসেজ করতো শিহাব। আজ মানুষটা তর থেকে অনেক অনেক দূরে আর কখনো আসবে না। বিন্দু ম্যাসেজে চোখ বুলাতে লাগলো,
“এত চিন্তা না করে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাও কেমন। গুড নাইট!”

ফোনটা বন্ধ করে দিলো বিন্দু। শিশিরকে অনেকটা বেহায়া টাইপের মনে হচ্ছে বিন্দুর কাছে। কেমন যেন গায়ে পরা স্বভাবের লাগছে কিন্তু এমনটা আগে কখনো বিন্দুর মনে হয়নি।

সবাই সেহরী খেয়ে শুয়ে পরেছে। যেদিন থেকে সাহেদ আলী সত্যিটা জেনে গেছেন সেদিন থেকেই বলে দিয়েছেন বিন্দু যেন ওনার সামনে না যায়। এই মেয়ের মুখ তিনি দেখতে চান না। যেটা আড়াল থেকে বিন্দুর কানে এসে পৌঁছেছে। তারপর থেকে বিধু সেহরীর খাবার বিন্দুকে রুমে এনে দিয়ে যায়। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। সবেমাত্র চারদিকে হালকা আলো ফুটেছে। যা করার এক্ষুণি করতে হবে। আর বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না। শুধু মাত্র পরনের দুইটা জামা গুছিয়ে নিয়ে আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে নিলো। আর একটু বাদেই পৃথিবীতে সূর্যের আলো ফুটবে তখন বাড়ি থেকে বেড়ুনোটা ভেজাল হয়ে দাঁড়াবে। বিধু এলোমেলো ভাবে ঘুমাচ্ছে। বিন্দু এগিয়ে গিয়ে আলতো করে টকটা চুমু খেলো বিধুর কপালে ওমনি বিধু নড়েচড়ে উঠলো বিন্দু তাড়াতাড়ি আড়ালে লুকিয়ে পরলো৷ এই নোনটার কাছে সে চির ঋণী হয়ে থাকবে। ছোট বোন হয়েও মায়ের মতো আগলে রেখেছে বিন্দুকে কত সাপোর্ট করেছে সত্যিই কখনো যে বিধু এতটা কাছের হয়ে যাবে জানা ছিল না বিন্দুর। বিন্দুর শখের ব্রেসলেটটা আজ বোনের হাতে পরিয়ে দিলো। বিধুরও এই ব্রেসলেটটা খুব পছন্দের। চুপিচুপি পা ফেলে বিন্দু এগিয়ে গেল মা-বাবার রুমের দিকে পর্দাটা একটু ফাঁকা করতেই দেখতে পেল দু’জন কাছের মানুষকে। চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে উঠলো। দূর থেকেই বিড়বিড় করে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে দরজার কাছে আসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। ভয়ে বিন্দু একদম লাফিয়ে উঠলো। নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে দরজাটা খুলতেই দেখলো ওদের কাজের মহিলা(ময়না) এসে গেছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো বিন্দু।
–কী গো বিন্দু মণি কেমন আছো?”
–আন্টি ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন? আর এত তাড়াতাড়ি আসলেন যে?”
–আর কইয়ো না দুইমাস ছুটি নিয়া পুরা হাপাইয়া গেছি। কাইল মেয়ের বাড়ি থেকে আসছি তোমগোরে দেহার লাইগ্যা পরাণখান বেতালে ছটফডাইতাছে দেহি তাই তাড়াতাড়ি চলি আইলাম। তা কোথায় যাইতাছে এত্ত সকালবেলা?”
বিন্দু কী বলবে বুঝতে পারছে না। আমতা আমতা করে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বললো,
–তা আপনার মেয়ে আর নাতনী কেমন আছে?”
ওমনি ময়না বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
–আলহামদুলিল্লাহ ভালাই আছে। নাতনী আমার সেই সুন্দরী হইছে। খালি চায়াই থাকতে মন চায়। তা আফায় কী আর কোনো কামের মানুষ রাহে নাই?”
–নাহ্ ওইরকম কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। একজন রাখছে তাও শুধু ঘরটা মুছে দিয়ে যায় আর কোনো কাজ করে না।”
ময়না মন খারাপ করে বললো,
–ইশ এমনি আফায় কত অসুস্থ মানুষ৷ আমার জইন্য কত কষ্ট হইছে আফার। এইবার চলি আইছি আর কষ্ট হইবো না।”

বিন্দু এবারে তাড়াহুড়ো দেখিয়ে বললো,
–ময়না আন্টি আমি আসি গো। আমার খুব দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
–তা আম্মা কই যাইতাছো?”
–এসে তারপর বলবো। আর মা-বাবাকে এখন জাগাবেন না।”
–আরেহ না আমি অহন বাসি থালা-বাসন গুলি ধুইমু। আচ্ছা তুমি ভালাভাবে যাইও।”

বিন্দু একটা ম্লান হাসি দিয়ে শুধু মাথা নাড়ালো। তারপর দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল নিজের উদ্দেশ্যে।

আমার পঁচিশ তারিখেই পরীক্ষা শেষ এতদিন পরীক্ষা থাকার কারণে গল্পটা প্রতিদিন দিতে পারিনি। পঁচিশ তারিখের পর প্রতিদিন দেব। জানি আজও ছোট হয়ে গেছে?।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here