শ্রেয়সী পর্ব ১২+১৩

0
386

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ১২

হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেল শিশিরের। দরফর করে উঠে বিছানায় বসলো। পুরো ঘেমে-ঘুমে একাকার হয়ে গেছে। গায়ের টিশার্টটা বোধহয় একটুও শুকনো নেই৷ শিশির হাতরে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখলো ঘড়িতে আড়াইটা বাজে। এই সময়তেই এমন একটা বাজে স্বপ্ন দেখতে হলো তাকে। এখনো বুকের মধ্যে অস্থির অস্থির লাগছে। মাথার ওপর ফ্যানটা শো শো শব্দ করে ঘুরছে তবুও এতটা ঘেমে গেছে৷ খাটের পাশে রাখা টি-টেবিলটা থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক গ্লাস পানি পুরোটা খেয়ে ফেললো। এখন বোধহয় কিছুতেই ঘুম আসবে না। কেনই বা বিন্দুকে নিয়েই এই খারাপ স্বপ্নটা দেখতে হলো তাকে। আর এই মধ্যরাতের স্বপ্ন নাকি কখনো কখনো ফলে যায়। তবে কী বিন্দুরও…! নিজের মনকেই নিজে প্রবোধ দিতে লাগলো শিশির। বিন্দুর কিচ্ছু হবে না ও একদম ভালো থাকবে।

আজ একমাসের মতো শিহাব বিদেশ চলে গেছে। সেই থেকেই বিন্দু কেমন যেন মন মরা হয়ে থাকে। শিহাব চলে যাওয়ার দশ-পনেরো দিন পর থেকেই শুরু হয়েছো জ্বর,সর্দি। কমারও কোনো নাম নিচ্ছে না। ডাক্তারের কাছে নিচ্ছে আনছে তবুও কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। জ্বরটা আবারও শরীর কাঁপিয়ে উঠতে লাগলো। বিন্দু আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো বিধুকে।
–বিধু,এই বিধু।”
বিধু বিধু ঘুম ঘুম চোখে জবাব দিলো,
–হু।”
–আমাকে একটু জড়িয়ে ধর খুব শীত লাগছে।”
একে তো প্রচণ্ড গরম পরছে তার উপর বিন্দুর শরীর মারাত্মক গরম। এতে করে আরও বেশি তাপ লাগছে। কাথার ওপর দিয়েই বিধু চেপে ধরলো বিন্দুকে।

কোনোরকম ছটফট করে পুরো রাতটা পার করলো শিশির। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিন্দুর মায়ের ফোনে কল করলো। সাজেদা বেগম ব্যস্ত থাকার কারণে বিধুই ফেনটা রিসিভ করলো। আজ বিধু ফোন রিসিভ করতেই শিশির জিজ্ঞেস করলো,
–বিন্দু কেমন আছে?”
–বাব্বাহ আগেই আপুর কথা জিজ্ঞেস করছেন। আমি কেমন আছি তা তো জানতে চাইলেন না।”
–আসলে বিধু আমি রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। বিধুকে নিয়ে একটা বাজে দুঃস্বপ্ন দেখেছি। রাতেই চেয়েছিলাম কল করতে কিন্তু ফোন তো আন্টির কাছে থাকে তাই আর করিনি। এখন বলো ওর কী অবস্থা? ”
–একদম ভালো নেই৷ রাতেও জ্বরে কী অবস্থা যে করেছিল৷ আজ আবার অন্য ডাক্তারের কাছে নেবে। ”
–হ্যাঁ নিয়ে যাওয়াই ভালো। নয়তো আবার কী থেকে কী হয়ে যায়।”
–তা কী স্বপ্ন দেখেছিলেন?”
–আমি এটা বলতে পারবো না। তবে দোয়া করি স্বপ্নটা যেন না ফলে যায়।”
কথা শেষ করেই ফোন রেখে দিলো শিশির বিধুকেও আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না।

বিন্দুকে ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার ইউরিন টেষ্ট, আর ব্লাড টেষ্ট দিলেন। বিন্দুর বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে দেখে সাহেদ আলী (বাবা) বিন্দুকে আর সাজেদা বেগমকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। টেষ্ট বের হলে ডক্টরকে দেখিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবেন সাহেদ আলী। বাড়িতে এসে একদম ক্লান্ত হয়ে পরেছে বিন্দু। পরশু থেকে শিহাবের কোনো কল আসছে না৷ অসুস্থ থাকার কারণে বিন্দুও কল করলো না শিহাবকে। ফোনটা হাতে নিয়ে শিহাবের নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু ওপাশ থেকে কেউই ফোনটা রিসিভ করছে না। কিছুক্ষণ পর একটা ম্যাসেজ আসলো,
“বিন্দু স্যরি ডিয়ার। আমি খুব বিজি। কাজের প্রচণ্ড চাপ এখানে। তাই ফোনটা রিসিভ করতে পারিনি। ”
মনে মনে একগাদা অভিমান জমেছে বিন্দুর। এত অসুস্থ বিন্দু এটা জানার পরেও কী করে একটাবার ফোন করার প্রয়োজন মনে করলো না শিহাব! আর মানুষ চব্বিশঘণ্টার মধ্যে কী একটা মিনিটও সময় পায় না কারো খোঁজ নেওয়ার? নাকি ইচ্ছে করেই এমন করছে শিহাব? তবে কী বিন্দুর পক্ষ থেকে কোনো ভুল হয়েছে যার জন্য শিহাব এমন অবহেলা করছে? কিন্তু না বিন্দুর মনে এমন কিছুই আসছে না। সে তো সত্যিই কোনো এমন ভুল করেনি৷ তাহলে কেন হচ্ছে এমন! মনকে সান্ত্বনা দিয়ে দিলো বিন্দু। সেও রাগ করে থাকবে শিহাবের ওপর। আর ওর ফোন রিসিভ করবে না। এত ব্যস্ততার অজুহাত দেখানোর মজা তখন বুঝবে।

রিপোর্ট নিয়ে বসে আছেন সাহেদ আলী। ওইদিকে দোকানে কর্মচারী বসানো। মালিক না থাকলে তো তারা আবার সুযোগ পেয়ে বসে। নিজেদের মতো হাতিয়ে নেয় টাকা-পয়সা। আজকাল বিস্বস্ত মানুষ পাওয়া মেলা ভার।
এত এত রোগী দেখে হতবাক তিনি। দেশে মনে হয় সুস্থ মানুষ নেই বললেই চলে। অনেকক্ষণ সিরিয়ালে থাকার পর অবশেষে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকতে পারলেন। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে সাহেদ আলী যেন আকাশ থেকে পড়লেন। এমনটা শুনতে হবে ওনাকে জীবনেও ধারণা করেননি তিনি। বুক ভরা হাহাকার নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সাহেদ আলী। সাহেদ আলীকে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখে সাজেদা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
–কী হয়েছে? রিপোর্টে কী এসেছে?”
–সাজেদা বিন্দু আমাদের মান-সম্মান রাখলো না।”
কথাটা বলতে গিয়ে ভিষণভাবে গলা কাঁপছিল সাহেদ আলীর। সাজেদা বেগম স্পষ্ট খেয়াল করলেন সাহেদ আলীর চোখে পানি টলমল করছে। গড়িয়ে পরার আগেই হাত দিয়ে মুছে ফেললেন তিনি। সাজেদা বেগমও স্তব্ধ হয়ে সাহেদ আলীর ভারাক্রান্ত মুখের পানে তাকিয়ে আছেন। অস্পষ্ট স্বরে বললেন,
–কী বলছো তুমি?”
–তোমার মেয়ে দুই মাসের প্রেগন্যান্ট। এই খবর শোনার আগে আমার মৃত্যু হওয়াও ভালো ছিল। ” কথাটা বলতে বলতেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সাহেদ আলী। সাজেদা বেগমের বিস্ময় যেন কাটছেই না। তিনি এক দৃষ্টিতে সাহেদ আলীর চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন। কত সৎ ব্যক্তি তার স্বামী। এত চোখে চোখে রাখে সাজেদা বেগম তাদের মেয়েকে। এত কেয়ার করার পরেও আজ এই দিন দেখতে হবে ভাবতে পারছেন না তিনি। বুক ফেঁটে কান্না আসছে। কোন কুলক্ষণে এমন মেয়েকে জন্ম দিয়েছেন তিনি সেজন্য নিজেকেই নিজে দুষছেন। পর্দার আড়াল থেকে সবটাই দেখলো বিন্দু। বাবা-মায়ের মুখের দিকে একদম তাকানো যাচ্ছে না। কতটা কষ্ট পেয়েছে তারা যার বিন্দুমাত্র হলেও হয়তো বিধু বুঝতে পারছে। সাজেদা বেগম চোখের জল ফেলে হনহনিয়ে আসলেন বিন্দুর ঘরে। বিন্দু শুয়েই ছিল। একটানে খাট থেকে বিন্দুকে নিচে ফেলে দিলেন। বিন্দু প্রথমে ওর মায়ের এমন আচরণ না বুঝতে পারলেও একটু পর ঠিকই বুঝতে পারলো। সাজেদা বেগম মনের খায়েস মিটিয়ে খুন্তি দিয়ে মারলেন বিন্দুকে। বিধু এসেও ওর মায়ের সাথে পেরে উঠেনি। এত চেষ্টা করেও সাজেদা বেগমকে আটকাতে পারেনি।
–বিধু ওরে বল আমার ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে। ওর মতো পাপ আমি আমার ঘরে রাখবো না। কত নাম-ডাক ওর বাবার। ওই মানুষটার মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। মানুষটা কাঁদতে কাঁদতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। এত ভালোবাসে তোদের তার এই প্রতিদান দিলি তুই। এতই যদি পরপুরুষের সাথে তোর শোয়ার শখ হয়েছিল আমাকে বলতি আরও আগেই বিয়ে পরিয়ে দিতাম। তবুও তো আর পাপ হতো না। এভাবে মান-ইজ্জত খোয়াতে হতো না। আর এক মুহূর্তও তুই এই বাড়িতে থাকবি না। যার সাথে শুয়ে এই পাপ জন্মাইছোস তার সাথে চলে যা। আমার কোনো মেয়ে নাই। এমন মেয়ে লাগবো না আমার। যে মেয়ে বাপ-মায়ের কষ্ট বুঝে না সেই মেয়ে জাহান্নামে যাক।”
রেগে রেগে কথাগুলো বললেও শেষ মুহূর্তে কেঁদে ফেললেন সাজেদা বেগম। কষ্ট ওনার বুকটা ওফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে। যে মেয়েদের নিয়ে তাদের এত গর্ব সেই মেয়েই আজ এভাবে বুকে ছুড়ি মারলো!

বিন্দু মায়ের হাতে মার খেয়ে ওভাবেই ফ্লোরে বসে কাঁদছে। সাজেদা বেগম চলে যেতেই বিধু এসে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো বিন্দুকে। আবারও গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠেছে বিন্দুর।
–আপু তুই এই ভুল কিভাবে করলি। বর্তমানে কতো প্রোটেকশন আছে এসব ইউজ করতে পারিসনি তুই?”
বিধুর কথায় হু হু করে কেঁদে ফেললো বিন্দু।
–বিধু আমি মহাপাপ করে ফেলেছি। যেই পাপের ক্ষমা নেই। আমি কী করে পারলাম বাবা-মাকে এত কষ্ট দিতে। আমি সত্যিই খুব খারাপ মেয়ে। আমার মরে যাওয়া উচিত।”
–চুপ এসব কথা বাদ দে। তুই বোস আমি আসছি।”
বিধু রুম থেকে বের হয়ে কয়টা ভাত নিয়ে লবন-পানি দিয়ে কচলিয়ে নিয়ে আসলো বিন্দুর জন্য। জোড় করে খাইয়ে দিয়ে পেসক্রিপশন দেখে ঔষধগুলোও খাইয়ে দিলো।
সারাদিন সাজেদা বেগম কান্না করে কাটিয়েছেন। বারবার নামাজের পাটিতে বসে মোনাজাতে হাত তুলে চিৎকার করে কেঁদেছেন। বিধুই সব রান্না করেছে। কিন্তু কিছুই মুখে দেননি সাজেদা বেগম। ইফতার করেছেন শুধু পানি দিয়ে। বিধু এত জোর করেও কিছু মুখে লওয়াতে পারলো না।

সন্ধ্যার পরপরই শিশির কল করলো। বিধুই ফোন রিসিভ করলো। সাজেদা বেগম ক্লান্ত হয়ে মরার মতো বিছানায় পরে আছেন। মেয়ের এই কুকর্ম কিছুতেই তিনি হজম করতে পারছেন না।
–হ্যাঁ ভাইয়া।”
–কী অবস্থা বিন্দুর? ডাক্তার দেখাইছে?”
–হু। কী বললো ডাক্তার?”
–আপু দুই মাসের প্রেগন্যান্ট।”
কথাটা শুনেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেল শিশির। পুরো পৃথিবী মাথার ওপর ঘুরতে লাগলো। শিশিরকে চুপ থাকতে দেখে বিধু বললো,
–চুপ করে আছেন যে?”
–কিছু না। এখন বিন্দু কই? আংকেল-আন্টি কী এসব জানে?”
–হু। আপু শুয়ে আছে। মা মনের মতো খুন্তি দিয়ে আপুকে মেরেছে। হাতের কয়েক জায়গায় ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়েছে।”
–রাখছি আমি।”
শিশিরের শরীরটা কেমন যেন কাঁপছে। মনে হয় এক্ষুণি পরে যাবে। তার দেখা ভয়ংকর স্বপ্নটা এভাবে সত্যি হয়ে যাবে জীবনেও কল্পনা করেনি শিশির। কিন্তু সেটাই যে বাস্তব হয়ে গেল!

চলবে,,,,,,,,

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ১৩

এত সুন্দর হাসি-খুশি পরিবারটায় যেন এক গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। কারো মুখে হাসির ছোঁয়া নেই। সাজেদা বেগম সারাক্ষণই কান্না করেন। কখনো রাঁধতে বসে, কখনো কোরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে কখনো বা মোনাজাতে। সব মিলিয়ে বাড়ির পরিবেশ একটা দম বন্ধকর পরিবেশে রুপ নিয়েছে। সাহেদ আলীও একদম চুপচাপ৷ যেন নিজের বাড়িতে নিজে চোরের মতো থাকেন। সেই সকালে ঘুম থেকে উঠে দোকানে চলে যান আবার রাতে বাসায় পা রাখেন। বিধুর সাথেও তেমন কথা বলেন না। আর বিন্দুও সারাদিন কান্নাই করতে থাকে। এসবের মধ্যে সব থেকে বেশি অসহ্য লাগছে বিধুর। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও চলে যেতে। এই অসহ্য পরিবেশ থেকে একটু মুক্তি পেতে। কারোই মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। বিন্দুর বাবা-মা দু’জনেই নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছেন প্রায়। সাজেদা বেগম মনের কষ্টটা কান্না করে হলেও কিছুটা দূর করতে পারেন। কিন্তু সাহেদ আলী তো কাঁদতেও পারেন না। ভেতরটা ওনার পুরো জর্জরিত হয়ে আছে।

বিন্দু এই কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার পণ করেছে নিজেকে আর বাঁচিয়ে রাখবে না। এই মুখ নিয়ে কী করে ওর বাবার সামনে দাঁড়াবে। কিন্তু কিছুতেই সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এমনিতেই একটা বড়সড় পাপ করে বসে আছে। নিজের ভেতর একটা ছোট্ট প্রাণ ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। কী করে এত পাপের বোঝা বইবে বিন্দু। ইহকালেও শান্তি নেই পরকালেও এই পাপ থেকে নিস্তার পাবে না। কারণ আত্মহত্যা করা যে মহাপাপ। তাও আবার একসাথে দুইটা প্রাণ কী করে সে হত্যা করবে? নিজের তো ক্ষমতা নেই কাউকে জীবন দেওয়ার তাহলে কোন অধিকারে অন্যের জীবন নিবে সে৷ সব ভেবে একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা হওয়ার হবে অন্তত কিছুতেই বিন্দু আত্নহত্যা করবে না। এমন খারাপ পরিস্থিতিও এটা ভেবে স্বস্তি লাগছে বিন্দুর,বিধু এখনো পুরো দমে বোনকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে। সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও বিধু সম্পূর্ণ কেয়ার করছে। ভাত খাইয়ে দেওয়া,ঔষধ খাইয়ে দেওয়া, চুল বেঁধে দেওয়া বিন্দুকে সঙ্গ দেওয়া সব মিলিয়ে বিধুর কাছে চির ঋণী হয়ে গেল বিন্দু। সাজেদা বেগম প্রতিদিনই বকতে থাকলেও। রাতে একবার হলেও মেয়েকে চোখের দেখা দেখে যান। কপালে হাত দিয়ে দেখেন জ্বর আছে কি না। যেটা বিন্দুর চোখ এড়ায় না। এই ব্যাপারগুলো আরোও বেশি কষ্ট দেয় বিন্দুকে। কী করে সে এত ভালো মানুষগুলোকে কষ্ট দিতে পারলো!

রান্নার যোগাড়যন্তর করছিলেন সাজেদা বেগম। হঠাৎই বিধুকে ডাকলেন।
–বিধু, এই বিধু।”
–হ্যাঁ মা,আসছি।”
–ওরে জিজ্ঞেস কর কার সাথে এই কুকর্ম করছে। সেই ছেলেকে আসতে বল। তার সাথেই বিয়ে দিয়ে মুক্তি হই। আমার আর এসব ভাল্লাগেনা৷ আর সেই ছেলে যদি বিয়ে করতে অস্বীকার করে তাহলে তো বাচ্চা নষ্ট করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। অহন জিজ্ঞেস কর কী করতে চায়। আর জ্বালইতে না কইস আমারে। তোর বাবার কাছে আমি ঘেঁষতেও পারি না। এই ব্যাপারে কথা তুললেই কেমন রাগ দেহায়। মনে হয় সব দোষ আমার। আল্লাহ আমারে নেয় না কেন বুঝি না। বড় মাইয়্যা নিয়া আমার কত শখ ছিল। বড় কইরা বিয়ার অনুষ্ঠান করুম। কিছুই হইলো না। তার আগেই মাইয়্যা কুকর্ম কইরা বইসা আছে।

বিধু এসে কথগুলো বলতেই আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়লো বিন্দু। একটা পাপ করে বসে আছে এখন আবার বাচ্চাটা নষ্ট করে আরও পাপের বোঝা কিছুতেই বাড়াতে চায় না। ওদিকে শিহাবকে এতগুলো টেক্সট করলো অথচ একটা রিপ্লাইও দিলো না। এত কী কাজ নিয়ে বিজি ভেবে পাচ্ছে না বিন্দু৷ মারাত্মক খারাপ সময় পাড় করতাছে। কবে যে আল্লাহ এসব থেকে মুক্তি দিবে সেই দিন গুনছে। বিন্দু সব শুনেও চুপ করেই রইলো। কিছুই বলার মতো মুখ নেই তার।

শিশির সবে স্কুল থেকে ফিরে এসে টিউবওয়েলের পানিতে গোসল করে ঘরে পা রাখলো। রমজানের কয়েকদিন আগে থেকেই ঘরের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আরও পরে ঘর করার ইচ্ছে থাকলেও এখন তাড়াতাড়িই করতে হচ্ছে। কারণ রিদির জন্য একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ব্যাংকার। রিদিকে পছন্দ হয়েছে। সবই পছন্দ হয়েছে কিন্তু ঘরের অবস্থা ভালো নেই দেখে পাত্রপক্ষ মনমন করছে। যার কারণেই তাড়াহুড়ো করে এই ঘর করা। ঈদের পরপরই তাহলে বিয়েটা হয়ে যাবে। শিশির ঘরে ঢুকতেই রিদি ফোন নিয়ে এগিয়ে আসলো।
–ভাইয়া কে যেন অনেকক্ষণ পর্যন্ত কল দিতাছে।”
শিশির ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা একটা নম্বর থেকে কল এসেছে। ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই কারো জড়ানো কণ্ঠ কানে ভেস আসলো।
–বিন্দু?”
–হ্যাঁ।”
–কেমন আছো?”
–আল্লাহ ভালো রাখছে। আপনি কেমন আছেন?”
–আমিও ভালো আছি৷ এখন শরীরের কী অবস্থা? জ্বর কমছে?”
–অনেকটাই। ভাইয়া একটা কথা ছিল।”
–বলো?”
–আপনার সাথে শিহাবের কথা হয়?”
–গত সপ্তাহে হয়েছিল৷ আর হয়নি।”
–দেখুন না আমি অনেকগুলো টেক্সট করলাম, কল করলাম কিন্তু ওর কোনো রেসপন্স পাচ্ছি না। ও কী কোনো কারণে আমার ওপর রেগে আছে কি না তাও বুঝতে পারছি না।”
–আচ্ছা মন খারাপ করো না। আমি ওর কাছে কল দিয়ে তোমাকে জানাচ্ছি।”

শিশির কল কেটে দিয়েই কল করলো শিহাবকে। দুইবার রিং হতেই কেউ একজন ফোন রিসিভ করলো। কিন্তু যা শুনলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না শিশির। হাত থেকে ফোনটা ছুটে গিয়ে নিচে পড়ে গেল। চোখ দু’টো উপচে জল গড়াতে লাগলো। পুরো শরীর যেন কাঁপতে কাগলো। রিদি শিশিরের এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে এসে ধরলো শিশিরকে।
–ভাইয়া কী হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?”
শিশির কিছু বলতে পারলো না। শুধু নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।

ওদিনে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ এখনো বিন্দুর ফোনে শিশিরের কল এলো না। অপেক্ষা সত্যিই অনেক কষ্টের। কখন যে শিশির কল করবে সেই আশায় ফোন নিয়ে বসে আছে মেয়েটা।

ভালো না লাগলে আর দেব না।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here