#স্বর্ণলতা
পর্বঃ৫০(শেষ ভাগ)
প্রথম অংশ
______________
পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশে স্বর্ণলতা খুব নিখুঁত একটা পরিকল্পনা করে।জাফর যখন বাসায় প্রবেশ করবে ঠিক তখনই পাতাল ঘরে স্বর্ণলতাকে ফাঁসানো এবং রনকের ঘাড়ে মন্টুর খু*নের দোষ নেওয়া সবকিছু সাজিয়ে জাফরকে বলা হবে।এতে জাফর পরিকল্পনাটা কিছুক্ষণের জন্য মাথায় নিবে।তবে সে পুরোপুরি বিষয়টাতে রাজী নাও হতে পারে সেটা তারা জানতো।কারন জাফর কোন কাজ একবার ভেবে করেনা।সে ভাবে।১০০ বার ভেবে তারপর কোন কাজ করে।আর অন্যের বুদ্ধি ১০০% সে গ্রহন করেনা।নিজের মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন শয়তানি বুদ্ধি যোগ করে শক্ত পক্ত বদ বুদ্ধি তৈরী করে।তারপর সেটা প্রয়োগ করে।
এরপর রূপক আসবে রণক সেজে।তারপর-ই খেলা শুরু!রূপক বানোয়াট টাকার রিসিট দেখিয়ে জাফরকে ব্রিভান্ত করবে।স্নেহার বিরুদ্ধে কথা বলবে।এতে জাফর দিশেহারা হয়ে যাবে।কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্কে কথা গুলো সাজাতে পারবে না।সে কাকে বিশ্বাস করবে বুঝতে পারবে না।দ্বিধা দন্দে পড়ে ঘুমে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিবে তখন-ই আশু সর্দার কে ডেকে আনা হবে।
আশু সর্দারকে বলা হয়েছিলো মামা তার প্রস্তাবে রাজি।আজ রাতে সে স্বর্ণলতার সাথে রাত্রিযাপন করতে পারবে।নাচতে নাচতে চলে এসেছিলো।তাই আজ বিষপিঁপড়া তাকে নাচিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
স্বর্ণলতা চেয়েছিলো জাফর নিজে তার মৃত্যুদূত কে ডেকে আনুক।তার সারাজীবনের আফসোস থাকুক সে নিজেই তার ধ্বংস লীলার শুভসূচনা কারী।তাই স্নেহাকে দিয়ে পুলিশের কথা বারবার বলিয়েছিলো।ইচ্ছে করে সব নাম্বার ডিলিট করে দেওয়া হয় যাতে প্রান বাঁচানোর শেষ উপায় একমাত্র পুলিশ ই থাকে।জাফর কে পুলিশ পুলিশ করে তার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিলো পুলিশের কাছে সে হয়তো বাঁচতে পারতো।
জাফরের ঘুম ভাঙার পরও স্নেহার কথাগুলো সে পুরোপুরি মানতে পারছিলো না।দীর্ঘ বছর ধরে শয়তানি বুদ্ধির কারখানা তে নানারকম বুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।তাকে কি বোকা বানানো অত সোজা! এই পরিস্থিতি তে এসেও জাফর স্নেহার কথা পুরোপুরি শুনছিলো না।সে নিজের বুদ্ধি তে কাজ করতে চাচ্ছিলো।শেষমেশ বাইরে এসে সবাইকে ঘটনা বলার পর রূপক আর স্বর্ণলতা শেষ চালটি চাললো।যেটা হলো,রূপকের রণকের মতো চিৎকার করে বলা।
তাকে আর মামাকে মেরে ফেলা হবে।তারা সবাই জড়িত।রণকের এই একটা কথাতেই জাফর সিদ্ধান্ত নিলো সে পুলিশেই ফোন করবে।রণকের চিৎকার করে লাশের কথা বলার কারন-এতে মামা আস্বস্ত হবে যে যদিও পুলিশ আসে তাহলে সে ফাঁসবে না।লাশের জন্য আশু ও বাকীরা ফাসবে।কিন্তু সেখানে আদৌ কোন লাশ-ই ছিলোনা।
অবশেষে তাদের শেষ পরিকল্পনা সফল হলো।জাফর নিজে ফোন করলো পুলিশদের।এবং সবশেষে তাদের এই পাপের ফল ভোগ করতে হলো।স্বর্ণলতা এবং রূপকের কথা পুলিশ বিশ্বাস করবে না তাই দোষীদের নিজের মুখে দোষ স্বীকার করানোর জন্য রেকর্ডের নাটক।যেটার মাস্টারমাইন্ড ছিলো রূপক নিজেই।বাকীটা তো সবার সামনেই ঘটে গেলো।
পুরো পরিকল্পনা শুনে রাহাত সবাইকে ধন্যবাদ দিলো।
আর স্বর্ণলতাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
—”আপনি যেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন এভাবে একমাত্র ট্রেনিং প্রাপ্ত গোয়েন্দা বিভাগের লোকই পারবে।আপনি আসলেই যেমন সুন্দরী তেমন বুদ্ধিমতি।আপনার সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগলো।আসলে পৃথিবীতে ভালো থাকা কঠিন।খারাপ হওয়া সহজ।আমাদের চারপাশে শয়তানের বাস।কখন যে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি জেঁকে বসে বোঝা মুশকিল।পুরো পরিবার এতো বছর ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে কালোজাদুর মতো ভয়ংকর জিনিসের চর্চা করে যাচ্ছিলো।পাশাপাশি কতশত লাশ চুরি খু*ন কতকিছুর সাথে জড়িয়ে গিয়েছে এরা! যুবকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে।”
স্নেহা বলে উঠলো-
—”ইন্সপেক্টর,শাস্তি আমার ও প্রাপ্য।শুরুতে আমি ওদের সাথেই ছিলাম।পরপর হয়ে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত দূঘর্টনা আমার মনের ময়লা ধুয়ে নিয়ে গিয়েছে।কোনটা ঠিক আর কোনটা অন্যায় সেটার তফাৎ বুঝতে পেরেছিলাম।
I strongly believe that-
আজকে আমি আপনার একাংশ ক্ষতি করবো তো কালকে ঐ একাংশ ক্ষতি বিষাক্ত সাপ হয়ে আমার সর্বাংশ নষ্ট করবে।আমরা নিজে জেতার জন্য নিজে ভালো থাকার জন্য অন্যকে পেছন থেকে টান দিয়ে ফেলে দেই।অন্যের ক্ষতি করি।কিন্তু আমরা মিলেমিশে ও ভালো থাকতে পারি!আমি শুরুতে অমর হতে চাইনি।কিন্তু দিনশেষে আমি এগুলোতে জড়িয়ে পড়ি।জানেন ইনস্পেকটর,আমাদের পুরো পৃথিবীর মাঝে ভরসার,বিশ্বাসের আশ্রয়স্থলের অপর নাম মা।আমার মা আমাকে যদি শেখায় ‘পৃথিবীর রং বেগুনি।আমি অন্ধের মতো সেটাই বিশ্বাস করবো।আমার মা যদি আমাকে শেখায় ‘তোমাকে বড় হয়ে অমরত্বের লড়াই করতে হবে।রক্তসন্ধানী হতে হবে আমি সেটাই হবো।প্রথম প্রথম বিষয় গুলো ভালোলাগতো না।কিন্তু মা এগুলো করতো।তখন থেকে আমিও জড়িয়ে পড়ি।একটা কথাই ভাবতাম।মা কি সন্তানের খারাপ চায়!”
ইনস্পেকটর দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে জাফর কে প্রশ্ন করলো-
–”আচ্ছা মি.জাফর।আপনি আমাকে সত্যি করে বলুন তো।আপনি কি সত্যি বিশ্বাস করতেন মানুষ অমর হতে পারে?”
জাফর মাথা নিচু করেই উত্তর দিলো-
—”দারোগা সাব।পৃথিবীর বুকে এমন অনেক কিছু আছে যা বিজ্ঞান ও আবিষ্কার করবার পারে নাই।আমি কি বিশ্বাস করতাম আর না করতাম তা আমার ভেতরেই থাক।”
রূপক বিস্মিত হয়ে বললো-
—”তুমি আসলে মানুষ না।অবাক হচ্ছি তোমায় দেখে।এতো টা নিকষ কালো জগৎ এর বাসিন্দা তুমি!তোমাকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে এই অনেক!আর তোমার সাথে সাথে কত সুন্দর সুন্দর তিনটে ভবিষ্যৎ তুমি নষ্ট করেছো।নিজের ছেলের ভবিষ্যৎ এর কথাটাও ভাবলে না?তুমি কি আদৌ বাবা?নাকি বাবা নামের কলঙ্ক!!অবশ্য তোমাকে বাবা নামক কলঙ্কের তকমা দিয়েই বা কি হবে!নিজের মা ও তো সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেনি।”
যারা পাপী তারা মাথা নিচু করেই থাকবে।কারও মুখে কোন প্রকার কথা নেই।এতোদিন যা যা করেছে সেসবের শাস্তি যতটা ভয়ানক হবে।পৃথিবীর বুকে পাপী মানুষের আত্মা পাপ করবার সময় ঠিকি কেঁপে উঠবে।
স্নেহা বলে উঠলো-
—”রণক কে দিয়ে বহুচেষ্টা করেছি ওকে ভালো পথে আনবার জন্য।ও আসেনি।ওর এক কথায় অটল ছিলো।মামাকে বাচ্চা দিয়ে স্বর্ণলতাকে নিয়ে চলে যাবে।”
এদিকে রণক লজ্বায়,নিজের প্রতি নিজের ঘৃনায় চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা।কিছুক্ষণ আগেও স্বর্ণলতার জন্য ছটফট করছিলো।এখন তার দুচোখ ভরা অনুশোচনা।
নিজের লজ্বা কাটিয়ে রূপকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো-
—”আমি সত্যি পাপ করেছি।এতোদিন মামার সাথে থেকে পাপ করেছি।আমি সুন্দর ভবিষ্যৎ থেকে বন্ঞ্চিত।আমি হাতজোরে তোমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইছি।”
আবার স্বর্ণলতার সম্মুখে দাড়িয়ে বললো-
—”আমি তোমাকে ভালোবাসি শিউলি ফুল।আমি তোমাকে ঠিক ততটা ভালোবাসি যতটা ভালোবাসলে দ্বিতীয় কারও দিকে দৃষ্টি যাবেনা।দ্বিতীয় কারও জন্য মনের দরজায় বসন্তের আগমন হবেনা।মনগৃহে প্রেম কড়া নাড়বে না।তুমি আমার জীবনে অন্য কারও বউ হয়ে আসোনি।এসেছো স্নিগ্ধ ভোরের এক অবাধ্য শিউলি ফুল হয়ে।
আমাকে আজকে কোন শক্তি বাঁধা দিতে পারবে না।তিল তিল করে তোমার জন্যে মনের ভেতর যে ভালোবাসা জন্মেছিলো তারা বুক চিরে বেড়িয়ে আসছে।আমি আজকে আমার মনের জমানো সকল কথা বলতে চাই।আমি তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম।আমার গভীর রাতে ঘুম না হওয়ার কারন ছিলে তুমি।আমার চোখে তুমি ছিলে এক নারী।কারও বউ না।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।এক পৃথিবী সমান ভালোবাসি।তবুও আমি তোমাকে পাবো না।হ্যাঁ আমি খারাপ।খুব খারাপ।স্বার্থপরের মতো শুধু তোমাকে চেয়েছি।একবারও ভাবিনি তোমার বাচ্চার কথা।তোমাকে ভালোবেসে একটা প্রাণ-ই যদি আমি বাঁচাতে না পারি তাহলে আমি কি ভালোবাসলাম!
খাদ তো ছিলোই।আমার এ ভালোবাসা খাটি সোনা ছিলোনা।আমি তোমাকে শুধু ভালোবেসেছি।তোমার অনুভূতি গুলোকে ভালোবাসতে পারিনি।তোমার সুখগুলো কে ভালোবাসতে পারিনি।যদি পারতাম তাহলে তোমার কোলে তোমার সন্তান থাকতো।যদি পারতাম তাহলে অনেক আগেই তুমি ভাইজানের কাছে থাকতে।বুঝিনি আমি।ভোগ করলেই সবসময় শান্তি মেলেনা।কিছু সময় ত্যাগেও মনের ভেতর প্রশান্তির রেখা টেনে দেয়।আমি খুব খারাপ ছিলাম।হ্যাঁ খুব খারাপ ছিলাম।তবে আমার অনুভূতি গুলো মিথ্যা ছিলো না।”
খানিকক্ষণ দম নিলো রণক।চোখ ভিজে উঠেছে তার।পাশাপাশি উপস্থিত সবার ও।স্বর্ণলতা পর্যন্ত কান্না আটকাতে না পেরে উল্টোপাশে ঘুরে গেলো।
ঢোক গিলে রণক আবারও বলতে শুরু করলো-
—”শিউলি ফুল কান্না করোনা আমার জন্য।আমি আসলে তোমার করুণা।তোমার মায়া না।আমি তোমার আফসোস এর সূর।না তোমার ভালোবাসার সমুদ্দুর।আমাকে তুমি মনে রাখবে।কিন্তু ভাইজানকে বুকে রাখবে।তোমার মন অবধি পৌঁছানোর সাধ্য আমার নেই।তোমার মস্তিষ্কের এক পাশে কিছু প্রহরের স্মৃতি আমি।
আর তুমি আমার কাছে গানের মতোন।
‘তুমি আমার নওতো সুখ।তুমি সুখের বেদনা।’
যার কাছে যার শান্তি মিলবে।তার কাছে তার ঠাঁই হবে।আজকে আমার বুকটা ফাঁকা নেই।আমি রূপক আর স্বর্ণলতার ভালোবাসা নিয়ে বিদায় হচ্ছি।যদি মৃত্যু আসে তবে সেটাই হবে আমার ভালোবাসা।”
চলবে……..
#স্বর্ণলতা
পর্বঃ৫০(শেষ ভাগ)
সমাপ্তি অংশ
________________
রণকের বলা প্রতিটা কথা স্বর্ণলতার জন্য বিষের কাটা হয়ে ফুটছিলো।তবুও তার কিছু বলার নেই।আমাদের ভালোবাসার জন্য হয়তো হাজার মানুষ থাকবে।কিন্তু আমাদের ভালোবাসতে হবে ঐ নির্দিষ্ট একজন কেই।এক মনে যার ঠাঁই হয়।সে মনে দ্বিতীয় কারও আনাগোনাও চলেনা।সে যতই তাকে ভালোবাসুক সে যতই সুন্দর হোক।আপনি যাকে ভালোবাসবেন,পৃথিবীর বুকে তার চেয়ে সুন্দর দ্বিতীয় টি খুঁজে পাবেন না।
কেউ আপনার মাঝে পুরো দুনিয়া খুঁজছে।আবার কারও চোখে আপনি-ই তার দুনিয়া।তফাৎ তো আছেই।কিসের তফাৎ বলুন?একেকজনের ভালোবাসার তফাৎ। ভালোবাসার গভীরতার তফাৎ। সূদুর কানাডা থেকে প্রেয়সির মুখে হাসি ফেরাবার জন্য একদিনের ব্যবধানে রূপক চলে এসেছিলো।আর পাশাপাশি পথ চলেও এক দেওয়াল সমান দূরত্বের ব্যবধানেও প্রেয়সিকে হাসাতে পারেনি রণক।
রণকের ভালোবাসার দূরত্ব ছিলো ঘরের চার দেয়াল।দেয়াল টপকানো তার কাছে ছিলো দুঃসাধ্য ব্যাপার।অন্যদিকে হাজার মাইল দূরত্ব,রূপক এর কাছে অযুহাত মাত্র।ঠিকি চলে এসেছে তার ভালোবাসা,তার অর্ধাঙ্গীনি,তার স্বর্ণলতার কাছে।
স্বর্ণলতা হাতের উল্টোপাশ দিয়ে চোখ মুছে বললো-
—”হ্যাঁ আজকে আপনার জন্য আমার করুনা হচ্ছে।শুধুমাত্র করুনাই।আপনি আমাকে গান শুনিয়েছেন,আমাকে আগলে রেখেছেন,আমার জন্য কবিতা লিখেছেন।আমার যাতে কেউ ক্ষতি না করে সেই বিষয়েও কঠোর হয়েছেন।কিন্তু আমার মনের ক্ষত সারাতে পারেন নি।আপনার কাছে আমি সত্যি শিউলি ফুলের মতোই।যে ফুল প্রয়োজন শেষে গাছ থেকে ঝরে যায়।আবার কিছুদিনের মধ্যেই শুকিয়ে ও যায়।পানি ছিটিয়ে ফুলকে আর কতদিন সতেজ রাখবেন!!যে ভেতর থেকে মরে যাচ্ছে,যার ক্ষত ভেতরে-
তাকে বাইরে থেকে কিসের ঔষধ লাগাবেন?আর রূপকের কাছে আমি স্বর্ণ।ধাতুর তৈরী লৌহমানবীর মতো শক্ত একজন মানুষ।আমাকে সে ভাঙতে শেখায়নি।নতুন করে গড়তে শিখিয়েছে।তবুও আপনার জন্য খারাপ লাগবে।সত্যি আপনারও একটা ভালো ভবিষ্যৎ হতে পারতো।”
রূপক রণকের কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখলো।আর বললো-
—”প্রথমত তুমি আমার ছোট ভাই।দ্বিতীয়ত তুমি আমার স্ত্রীর খেয়াল রেখেছিলে।সেটা তুমি যেটাই মনে করে রাখো না কেনো।তুমি ভুল ছিলে।তা তুমি বুঝতে পেরেছো।এখন তোমার চোখে মুখে অনুশোচনার ছাপ স্পষ্ট।এখন তোমার জন্য আমি এতোটুকুই করতে পারি,তোমাকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারি।আমি তোমার সাজা কমানোর ব্যবস্থা করবো।”
—”না ভাইজান।আমার সাজা কমাবে না।আমি যে পাপে পুড়ে কয়লা হয়েছি সে কয়লার ময়লা হয়ে আপনাদের জীবনে থাকতে চাইনা।আদালত আমাকে যে সাজা দিবে সে সাজাই আমি মাথা পেতে নিবো।”
—”রণক এটা তোমার প্রতি আমার করুণা না।এটা ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের দায়িত্ব।আমি বড় ভাই হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করবো।”
স্নেহার দিকে একবার তাকালো রূপক।এরপর তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো-
—”আপুকে কোন শাস্তি পেতে দিবো না আমি।সে কোন খু*ন করেনি।সে সহযোগীতা করেছে ঠিকি কিন্তু সে সঠিক আর ভুলের পার্থক্য করতে পারেনি।কিন্তু তুমি তো সব জেনে শুনে করেছো মা।তোমার শাস্তি কমানোর জন্য কোন প্রকার সুপারিশ করবো না আমি।তোমার নিজের ছেলের ফুটফুটে সন্তান তুমি মেরে ফেলেছো।তুমি মা নামের কলঙ্ক। তুমি শ্বাশুড়ি নামের কলঙ্ক।তুমি দাদী নামের কলঙ্ক।”
কথাটা শোনা মাত্রই রূপকের মা মুখ চেঁপে হু হু করে কেঁদে উঠলো।এক জনমের পাপ এর ভারী বোঝাটা হালকা হলো রূপকের মুখে এই কথা গুলো শুনে। এই কড়া কথাগুলোই হয়তো তার প্রাপ্য ছিলো।
এরপর পুলিশ একে একে সবাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো।মন্টু কাছে এসে স্বর্ণলতাকে জড়িয়ে ধরলো।মন্টুর মা কান্না করতে করতে প্রায় স্বর্ণলতার পায়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।ভদ্রমহিলার অন্ধের যষ্টি মন্টুকে নতুন ভাবে বাঁচার সুযোগ এর জন্য।
তার নিষ্পাপ মেয়ে হত্যার প্রতিবাদের জন্য।সে ভেজা কন্ঠে স্বর্ণলতাকে বললো-
—”মারে,বহুবছর পর আমি শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু।তুই আমার প্রানভোমরা আমার হাতে আইনা দিলি।”
স্বর্ণলতা মন্টুর মাকে জড়িয়ে ধরলো।আর মন্টুকে উদ্দেশ্য করে বললো-
—”মায়ের খেয়াল রাখবে।মায়ের চোখে কখনো পানি আসতে দেবেনা।যতদিন ভাগ্যে মা কে পাও ততদিন মায়ের সেবা করে যাও।মায়ের মুখে এক চিলতে প্রশান্তির হাসি তোমার জন্য স্বর্গসুখের আর্শিবাদ হয়ে ঝড়ে পড়বে।আর নতুন করে পড়াশোনা শুরু করবে।এবার থেকে নিশ্চিন্তে জীবন শুরু করো।আমি তোমাকে কিছুদিন পরপর এসে দেখে যাবো।ভালো হয়ে চলবে কেমন?এটা কিন্তু তোমার বুবুজানের আদেশ।”
মন্টুর চোখ মুহুর্তের মধ্যেই ভিজে উঠলো।তার মতে,বুবুজান কথাটা এক মায়ার নাম।এই ডাকটা শুনলে এক বুক কষ্ট দলা পাকিয়ে দু চোখ দিয়ে অশ্রু হয়ে বেড়িয়ে আসে।
স্বর্ণলতাকে জাপটে ধরে রাখলো।আর শপথ করলো-
—”আপনে যেমনে কইছেন আমি ঠিক অমনেই চলমু বুবুজান।”
খানিকটা দূরে মেহুল দাড়িয়ে ছিলো।এবার মেহুল কে কাছে টেনে স্বর্ণলতা বললো-
—”তুমি আমার আরেক বোন।রাগের বশবর্তী হয়ে তোমাকে অনেক কিছু বলেছি।আমার কথায় কষ্ট পেওনা।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তাই তোমাকে এভাবে বলেছি।ভালো না বাসলে বলতাম বলো?”
এবার মেহুল ও হাউমাউ করে বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দিলো।এই দৃশ্য দেখে মন্টু হতাশ হলো না মজা পেলো ঠিক বোঝা গেলো না।শুধু রূপককে উদ্দেশ্য করে বললো-
—-”ভাইজান! এই হলো মাইয়া আর পোলাগো স্বভাব।এর চেয়ে কত কষ্টের কথা বুবু আমারে হুনাইলো।কই আমি তো ছাগলের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করলাম না।ওরে তো কইছে খালি তোমারে আমি ভালোবাসি আর এতে কি করতাছে!!!!মনে হইতাছে ওর পানির বান কেউ ছাইড়া দিছে।তাই হু হু কইরা খালি বাইর-ই হইতাছে।”
রূপক স্মিত হাসলো।স্বর্ণলতাও মুখ ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ হেসে পরক্ষনে কঠিন করে বলার চেষ্টা করলো-
—”মন্টু! এসব বলেনা।ও এখনো বেশ ছোট।আবেগে ভরা কিশোরি মেয়ে একটা”।
মেহুল আহ্লাদি কন্ঠে বললো-
—”চুপ করো মন্টু ভাই।তুমি বুঝবানা।এগুলা আমগো জনম জনমের না কওয়া কথা।এ কথাগুলা শোনার জন্য কতরাত জাইগা কাটাইছি।জীবনে যার কাছ থিকা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা পাইছি হের দূরে যাওয়া খুব কষ্টের।”
—”হ,কষ্ট তোমগো মাইয়া মানুষেরই ঢাইলা দিছে।আল্লাহ বড়ই না এনসাফি কাম করছে।সব কষ্ট মাইয়াগো ঢাইলা দিয়া আমগো লিগা দুই ফোঁটা কান্দন ও রাখলো না।আহ্ কপাল!পোলাগো বলে কানতে হয়না!!
স্বর্ণলতা স্মিত হাসলো।আর রূপকের দিকে একবার তাকিয়ে এরপর আবার মন্টুর দিকে তাকিয়ে বললো-
—”কে বলেছে আল্লাহ তোমাদের জন্য কষ্ট বরাদ্দ করেন নি?তোমাদের ভালোবাসার মানুষের কষ্ট তোমাদের জন্য অশ্রুকণা না,অশ্রুর বিশাল সমুদ্র।তোমার ভালোবাসার মানুষের প্রতি আল্লাহ এতোটাই ভালোবাসা দিয়েছেন যে তাদের সামান্যতম কষ্টে তোমাদের ভেতর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।তোমরা তোমাদের কাছের মানুষদের কষ্টে কষ্ট পাও।ভেতরটা কষ্টে নীল হয়ে যায়।হয়তো ততটা কষ্ট নিজের শোকেও পেতে না।”
মন্টু প্রতিউত্তরে শুধু মৃদু হাসলো।সে বুঝে গিয়েছিলো স্বর্ণলতার বলা একটা কথা ও মিথ্যা না।
সে অনুভব করতে পারলো-
—”মেহুল কোন কারনে কষ্ট পেলে তারও ভীষণ কষ্ট হয়।তবে কি মেহুল তার প্রিয় মানুষ!”
সামান্য এই কথাটুকু চিন্তা করতেই খানিকের মধ্যেই মন্টু লজ্বায় লাল হয়ে গেলো।তার মনে অজানা আশঙ্কা। তার মনের কথা গুলো মুখে ফুঁটে উঠবে না তো!কেউ কি উচ্চস্বরে তার ভেতরে থাকা প্রত্যেকটি গুপ্তবাক্য ফাসঁ করে দিবে!অন্য জগৎ এ হারিয়ে গেলো মন্টু।
____________________
জাফরদের সাথে সাথে স্নেহা সৈকত ও পুলিশের সাথে গিয়েছিলো।রূপক এবং স্বর্ণলতার কারও-ই স্নেহা সৈকতের প্রতি কোন অভিযোগ ছিলো না।তারা অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছে স্নেহা,সৈকতের মুক্তি এবং রণক এর শাস্তি কমানোর জন্য।
অবশেষে স্নেহা সৈকত কে দুইমাসের কারাবাসের পর মুক্তি প্রদান,রণককে ৮ বছরের কারাবাস।নীরব,শোভা রূপকের মা কে ১০ বছরের কারাবাস এবং জাফর ও আশু সর্দার কে যাবৎজীবন কারাবাসের আদেশ দিয়েছেন সরকার।
রণকের শাস্তি কমানোর জন্য আপিল করা হলেও রণক নিজেই তা নাকোজ করে দেয়।
স্নেহা সৈকত ফিরে আসবে এই আশায় রূপক আর স্বর্ণলতা আবার নতুন করে সংসার সাজায়।
____________________
এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায়,রূপক স্বর্ণলতা বসে চা খাচ্ছিলো।মেহুল বেলকুনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলো।এরপর হুট করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো।মেহুল দুইহাত দূরে ছিটকে সরে গেলো।স্বর্ণলতা দেখতে পেয়ে দৌড়ে মেহুলের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো-
—”ভয় পেয়েছো?”
মেহুল কোন উত্তর দিলোনা।হঠাৎ করেই তার কোন এক বৃষ্টির রাতে বিদুৎচমকানোর শব্দে তার ভীত হওয়া আর মন্টুর কাছে এসে অভয় দেওয়ার কথা মনে পড়লো।তার প্রথম অনুভূতি তখন না বুঝতে পারলেও এখন সেগুলো মাথা চারা দিয়ে উঠলো।
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বলে উঠলো-
—”স্বর্ণআপামনি,ভালোবাসা কত সুন্দর তাই না?আপনার মনে আছে যেদিন রূপক ভাইজান কানাডা থিকা গ্রামে গেলো হেদিন আপনার ঠিক কেমন লাগছিলো মনে আছে আপামনি?আপনে কি করছিলেন?”
সেদিনের সেই স্মৃতি স্বর্ণলতার সামনে ছবির মতো ভেসে উঠলো-
স্বর্ণলতা অধীর আগ্রহে সারারাত কাটিয়েছে।নতুন এক ভোরের অপেক্ষায় প্রহর গুনেছে।যে ভোরের আলোতে তার প্রিয় মানুষের মুখ দেখবে,সে ভোর আসতে এতো দেরী করছে কেনো?সারাঘর পায়চারী করেছে।স্নেহা সৈকত ভীষন ভাবে তাকে ভরসা দিয়েছে। ঘুমিয়ে পড়তে বলেছে।কিন্তু তার দু চোখ ভরা আকাঙ্খা।রূপক কে দেখার আকাঙ্খা।এই আকাঙ্খা ভরা দু চোখে ঘুমপরীরা সেদিন ঠাঁই পায়নি।
অন্যদিকে রূপক ও সারা রাস্তা ছটফট করেছে।প্লেনে ওঠার আগ পর্যন্ত ও স্বর্ণলতার সাথে কথা হয়েছে ওর।প্লেনে কল করতে পারবে না সে।
মনে হচ্ছে পিঠে দুটো পাখা থাকলে মন্দ হতো না।পাখায় ভর করে যত দ্রুত পারতো উড়ে চলে যেতো।
তার পাশে বসেছিলো শতবর্ষী এক বৃদ্ধ।বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে। কথাগুলো অস্পষ্ট।তবুও সে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠেছিলো-
—”প্রিয় মানুষের কাছে যাচ্ছো বাবা?মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি।তোমার কাছে আজকের রাতটা সবচেয়ে দীর্ঘতম রাত হতে যাচ্ছে।”
রূপক মৃদু হাসলো।আর সে মনে মনে ভাবলো,তার সফরসঙ্গী ও একজন ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ ছিলেন।
রূপক যখন বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো স্বর্ণলতা ছিলো দিঘির পাড়ে।ভোরে হতে না হতেই সে অস্হির হয়ে গিয়েছিলো।কি করবে ভেবে না পেয়ে পদ্মদিঘির পাড়ে বসে ছিলো।আজকে চোখ ভরা মায়াকাজল দিয়েছে সে।এক সমুদ্র সমান আকাঙ্খা নিয়ে পথের পানে দৃষ্টি তার।
হঠাৎ কুয়াশা ঠেলে এক টগবগে যুবকের আগমন।তার পায়ের শব্দ স্বর্ণলতার সর্বাঙ্গে কম্পন সৃষ্টি করছে।তার শরীরের ঘ্রান তীব্র ভাবে স্বর্ণলতার নাকে এসে লাগছে।
স্বর্ণলতার বিশ্বাস-
‘যে যাকে ভালোবাসে তার শরীর ঘ্রান সে সবার আগে পায়।হোক না সে কয়েকহাত দূরে।তবুও তার চিরচেনা ঘ্রান সে ঠিকিই পাবে।’
রূপক কে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়ায় স্বর্ণলতা।এক দৌড়ে স্বর্ণলতা রূপকের বুকে গিয়ে পড়ে।রূপক ব্যাগ রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।জড়িয়ে ধরে স্বর্ণলতার কোমড়ে হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে নেয় রূপক।পরম সুখে স্বর্ণলতাকে নিয়ে দুইবার গোল করে চক্কর কাটে রূপক।এরপর স্বর্ণলতাকে নিচে নামিয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। রূপকের বুকে স্বর্ণলতার গাঢ় নিঃশ্বাস আরও গাঢ় হয়।রূপকের হৃদস্পন্দের উঠানামার শব্দ শুনতে পাচ্ছে স্বর্ণলতা।তার নিজের হৃৎস্পন্দন ও খুশিতে লাফাচ্ছে।চোখ ভিজে উঠছে তার।রূপকের বুকেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে জুড়ে দিলো।
রূপক যেনো তার অভিমানের বিশাল জায়গা।এতো কিছু হয়ে গেছে সে শক্ত থেকেছে।কিন্তু আজকে প্রিয় মানুষের চিরচেনা স্পর্শে মোমের মতো গলে গেলো সে।একটা সময় ভেবেছিলো রূপকও বুঝি ষড়যন্ত্রের একটা অংশ জুড়ে আছে।কিন্তু সেটা মিথ্যা প্রমানিত হয়।আর স্বর্ণলতার রূপকের কাছে যাওয়ার আকাঙ্খা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
এক হাত দিয়ে স্বর্ণলতার চিবুক স্পর্শ করে রূপক বললো-
—-”বাচ্চাদের মতো কাঁদছে আমার পাগলি টা।আমি এসে গেছি তো।আর ভয় নেই।আমার চাঁদকে দ্বিতীয় বারের মতো আমি পেলাম।আমার চাঁদের গায়ে আর আঁচ লাগতে দিবো না।”
স্বর্ণলতা আদুরে স্বরে বললো-
—“কেনো এভাবে চলে গিয়েছিলেন?ভেবেছিলাম আপনাকে বোধহয় আর কোনদিনও ছুঁতে পারবো না।”
আবারও স্বর্ণলতাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো রূপক।এবং বললো-
—-”স্বর্ণ! আমার সুন্দর বউ।আমার পূর্ণিমার চাঁদ।যদি দুই মন এক হওয়ার জন্য জন্মায় তাহলে এক পৃথিবী বাঁধা ঠেলেও তারা এক হয়।তোমার টানে হাজার মাইল দূর থেকে আমি চলে এসেছি।কতটা মুগ্ধ হলে,কতটা মায়ায় জড়ালে কতটা ভালোবাসলে তোমার টানে এতটা দূর আসতে পারি।আমরা এক হতাম।আমার প্রার্থনার জোর ছিলো।আমি তোমাকে আবার ফিরে পেয়েছি।প্রথমে সৃষ্টিকর্তা আমাদের বিচ্ছেদ দিয়েছেন।কষ্ট দিয়েছেন।এর জন্যই একে অপরের প্রতি ভালোবাসার এক মহাসমুদ্র সৃষ্টি হয়েছিলো।সেই সমুদ্রের ঢেউ হয়েই আমরা মিলিত হলাম।আমাদের এক হওয়া স্বয়ং বিধাতার আঁকা ভাগ্যরেখা”
আরও শক্তকরে মুখ লুকালো স্বর্ণলতা।মনে হচ্ছে কোন এক নরম তুলতুলে খরগোসের বাচ্চা তার আপন আশ্রয়ে পরম শান্তিতে মুখ লুকিয়ে বসে আছে।
রূপকের শরীরের গন্ধ স্বর্ণলতার ভালো লাগছে।স্বর্ণলতার জড়িয়ে ধরা রূপকের বুকে প্রশান্তির ঢেউ বইয়ে দিচ্ছে।
মরুভূমির মতো উতপ্ত হৃদয় ক্ষনিকের ব্যবধানে হিমসাগরের মতো শীতল হয়ে গিয়েছে।
স্বর্ণলতাকে বুক থেকে উঠিয়ে দু হাতে তার দু গাল স্পর্শ করলো রূপক।কপালে চুমু এঁকে দিলো।এরপর বললো-
—”আমার পূর্ণিমার চাঁদ।আমার আধাঁর ঘরের আলো।তোমার জন্য একটা উপহার আছে।ভেবেছিলাম যেদিন আমাদের জীবনে একসাথে থাকার প্রথম রাত হবে,সেদিন তোমাকে এই উপহার টা দিবো।বিয়ের আগে অনেক খুঁজে কিনে রেখেছিলাম।খোঁজার পর আবার কাস্টমাইজড ও করতে হয়েছে।তোমাকে দিবো দিবো করে আর দেওয়া হয়নি।লজ্বা,শঙ্কা,ভয় তিনটাই কাজ করছিলো।এরপর তো কানাডা চলে যাওয়া আর এতো সব কাহিনী হয়ে গেলো।যখন শুনেছিলাম তুমি আর পৃথিবীতে নেই তখন এক বুক ভরা আফসোস নিয়ে এটা ড্রয়ারের এক কোনে ফেলে রেখেছিলাম।আজ তোমার জন্য এটা আবার আমি নিয়ে এসেছি।আসলে এটা তোমার গলাতেই শোভা পাবে।তাই এতো সময় পরেও আমি তোমাকে এটা দিতে পারছি।
দু চোখ ভরা আগ্রহ নিয়ে স্বর্ণলতা রূপকের দিকে তাকালো।
রূপক পকেট থেকে একটা লকেট বের করলো।লকেটা টা একটু অন্যরকম ছিলো।হার্টসেইপ লকেট তবে কাঁচের ছিলো।ডায়মন্ডের মতো চিকচিক করছিলো।তবে এটা ডায়মন্ড ছিলো না।জিনিস টা দেখতে বেশ আর্কষনীয় ছিলো।
এরপর রূপক স্বর্ণলতাকে বললো
—”এটার বাঁ পাশে ছোট্ট একটা হোলের মতো আছে দেখো।এই হোলে এক চোঁখ দিয়ে তাকাও।দেখো কিছু দেখতে পাও কিনা।”
স্বর্ণলতা হোল দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো।আর তাকাতেই সে চমকে উঠলো।স্বর্ণের মতো জ্বলজ্বল করছে সুন্দর দুই লাইন কাব্য-
‘তুমি কাঠগোলাপের মত সুন্দর’
তুমি আমার-ই রবে জীবন ভর’
______________________________________
(শুভসমাপ্তি।)
এরপর রূপক আর স্বর্ণলতার জীবনে আর কোন কালোছায়া আসবে না।আধাঁরি মেঘ কেটে গিয়ে প্রেমের বর্ষন হবে সারাজীবন।একে অপরকে আঁকড়ে ধরে ভীষণ ভালো থাকবে তারা।
❤️পুরো গল্পটা কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন❤️