স্বর্ণলতা part 47

0
386

#স্বর্ণলতা
পর্বঃ৪৭
__________________
বাইরে বিশাল বড় সেই গাছের বাগানে মামাকে জোরজবরদস্তি করে নিয়ে যাওয়া হলো।মামা ভীষণ অবাক হচ্ছে!এতো সাহস তাদের এলো কিভাবে!এতো দুইদিনের সাহস না।মনে হচ্ছে বছরের পর বছর এ সাহস বুকে সন্ঞ্চয় করেছে।
সৈকত খানিকটা তাচ্ছিল্যস্বরে বললো-
—”কি মামা! অবাক হচ্ছেন?আপনাকে আমরা ধরে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছি।আপনার মতো একজন কে আমরা ধরে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছি।এ কি আদৌ কল্পনা করেছিলেন?”
স্নেহা হো হো করে হেসে উঠলো-
—”কি বলছো সৈকত! তার তো এখনও আরও অবাক হওয়া বাকী।এতোটুকু জিনিসে অবাক হয়ে বসে থাকলে কি হবে বলো!”

জাফর কোন শব্দ করছে না।সে জানে সে পুলিশে খবর দিয়েছে।হয়তো খুব দ্রুত এসে পড়বে।সে যতই অসহায় থাকবে পুলিশের কাছে নির্দোষ প্রমান করার ততই সহজ হবে।
জাফর কে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাগানে।
যেই বাগানের প্রত্যেকটা গাছ জাফরের নিজের হাতে লাগানো।এই বাড়িটা জাফর অনেক আগে কিনেছিলো।লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় এই বাড়ির জমির দরাদরি নিয়ে তার তেমন বেগ পেতে হয়নি।তার নিজস্ব গোপনীয় কাজের জন্যই এমন একটা বাড়ি সে খুঁজছিলো।আর কম দামে পেয়ে কিনে নিয়েছিলো।কম দাম হওয়ার অবশ্য আরেকটা কারন ও আছে।

বিশাল বড় বাড়িটি ছিলো কোন এক হিন্দু মহাজনের।মুক্তিযুদ্ধের আগের ঘটনা।সে চড়া সুদে গ্রামের অসহায় কৃষক দের ঋণ দিতো।আর শোধ করতে না পারলেই জমিজমা দখল করতো।সেসব পাপের টাকায় তার এই বিশাল স্রামাজ্য করেছে।তার গ্রামে দুটো বাড়ি ছিলো।একটা তার বসতবাড়ি অন্যটা ছিলো এটা।যেটা লোকালয় থেকে বেশ দূরে।বিশাল জায়গা নিয়ে বাড়িটা মাঝখানে তৈরী করা।শোনা যেতো গ্রামের জমিদার দের মতো সেও এখানে নিশিরাত্রিতে রঙ্গলীলায় মেতে উঠতো।সে লীলাতে অংশগ্রহন করতে আসতো বহু দূরদূরান্তর থেকে অনেক গায়ক,বাইজিগণ।যাদের সাথে প্রতি সোমবার রাত্রিযাপন করতো।

সেই পাপের বিশাল স্রামাজ্যের ফাটল ধরে যখন রাজাকার পাক বাহিনী একে একে সব হিন্দুদের নির্মম ভাবে হত্যা করে।যুদ্ধের সেই রাতে রাজাকাররা ৩ জন বাইজি ও হিন্দু মহাজন ও আরও লোকজন সহ মোট ১৩ জন কে এখানে নির্মম অত্যাচার করে মেরে ফেলে।এরপর দীর্ঘ বছর এ বাড়ির ছায়াও কেউ মাড়েনি।ভূত বাড়ি নামে এলাকায় রটে যায়।
তারপর বাড়িটি চলে যায় স্থানীয় চেয়ারম্যানের দখলে।সেও বাড়িটি ব্যবহার করতে পারছিলো না।যে এই বাড়িতে থাকতো তারই নাকি নানান সমস্যা শুরু হতো।চেয়ারম্যান নিজেও এই বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলো।এরপর বাড়িটি বিক্রির জন্য উঠে পড়ে লাগে।

তার কিছুবছর পর একবার এক পরিবার বাড়িটি কিনে বাড়ি ঘর পরিষ্কার করে থাকা শুরু করে।সাত দিনের মাথায় তল্পিতল্পা নিয়ে চলে যায়।এরপর থেকে এ বাড়ি হানা বাড়ি নামে পরিচিত।বহুকাল এ বাড়ি আর কেউ কিনতে আসেনি।

মামা এ বাড়ির সন্ধান পাওয়ার সাথে সাথেই এক বাক্যে কিনে ফেলে।দাম তুলনামূলক অনেক কম পায়।এ বাড়ি কেউ দাম দিয়ে কিনছে এই তো ঢের!কিন্তু মামা এ বাড়িতে কাউকে দেখেছিলো কিনা সেটা অজানা।দেখে থাকলেও তার মন্ত্রবলে হয়তো তাদের বশে এনেছে।সে এমন অনেক কাজ করতো।যেগুলো দুষ্ট জিনের সাহায্য নিতো।সে নিজেই একজন তান্ত্রিক।তার কাছে এই ছোট্ট খাটো জিন নস্যি। তার এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হয়নি।

এরপর বাড়িটা পুনঃনির্মাণের কাজ করে মামা।আশেপাশে বহু গাছপালা লাগান।দিঘি তৈরী করেন।এরপর তৈরী করেন পাতাল ঘর।এই পুরো বাড়িতে তার রাজত্ব।আর তার রাজ্যেই কি না আজ তাকে বধ করার আয়োজন হচ্ছে! ভাবতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে।এমন দিন আসতে পারে তা তো জাফর দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি।

জাফরকে বাগানের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।সেখানে বাঁধা অবস্থায় শুধু রণক না, আশু সর্দার,নীরব,শোভা,স্নেহার মা সবাই বাঁধা।জাফর এবার বিস্মিত হলো।এতোক্ষণ কি ভাবলো আর কি হচ্ছে তার সাথে!
স্নেহা এবার বলে উঠলো-
—”অবাক হচ্ছো মামা! বলেছিলাম না আরও অবাক হওয়া বাকী।”

প্রত্যেকে গাছের সাথে বাঁধা।আর প্রত্যেকের হাত পা মুখ বাঁধা।এতোক্ষণ ভাবছিলো স্নেহা আর পরিবারের সবাই রণক আর তাকে নিয়ে বড় ষড়যন্ত্র করছে।আশু সর্দার ও জড়িত।কিন্তু এখন তো উল্টো দেখছে!!সে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
সবাই কে এভাবে বেঁধে রেখেছে।আর শুধু দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলে মিলে কি এতো বড় পরিকল্পনা সম্ভব! এর বাইরে কি আর কারও হাত নেই!!সৈকত কে সে বহুবছর থেকে চেনে।তার মাথায় এমন বুদ্ধি বের হবার কথা না।তাহলে এদের পাশাপাশি চতুর্থ কোন ব্যক্তি আছে!এখানে রণক ও তো ভুক্তভোগী। তাহলে যদি চতুর্থ ব্যক্তি থেকেই থাকে তবে সেই ব্যক্তিটা টা কে?

জাফরকে তাদের থেকে একটু দূরে আরেকটা গাছের সাথে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হলো।জাফর এখনো চোখে হালকা ঝাপসা দেখছে।আর মাথাটাও ব্যাথা করছে।কড়া ঘুমের ঔষধের ডোজের ফলে তার এই অবস্থা হয়েছে।

এরপর স্বর্ণলতা সেখানে উপস্থিত হলো।কালো শাড়ি।চোখে হালকা কাজল।মনে হচ্ছে স্বর্গের রূপসী নেমে এসেছে।হাতে চাবুক নিয়ে।মনে হচ্ছে কোন এক শুভ শক্তি অশুভ শক্তির বিনাশ করতে মর্তে নেমে এসেছে।
নূরানী চেহারার রক্তিম রাঙা আখিদ্বয় নিয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসছে।এবার তার চোখের আগুনে সবাইকে কি পুড়িয়ে মারা হবে! কি ভয়ানক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য!
তবে এতোদিন যা করেছে সব পাপের শাস্তি কি আজই পেয়ে যাবে।

স্বর্ণলতার চোখ দেখে জাফর ভয় পেতে শুরু করলো।এতো ভয়ানক কোনো নারীর চোখ হতে পারে!নারীদের চোখে এতোদিন সে শীতল এক অনুভূতি দেখেছে।আর আজ সে টকটকে লাল চোখে প্রতিশোধের আগুন দেখছে।জাফর মনে মনে প্রার্থনা করছে পুলিশ যাতে দ্রুত আসে।দ্রুত এসে যাতে তাকে রক্ষা করে।

স্বর্ণলতা এবার বলে উঠলো-
—”জাফর, তোকে মামা বলতেও ঘৃনা হচ্ছে।আজ তোর পাপের স্রামাজ্য ধ্বংস হতে যাচ্ছে।ধ্বংস হবি তুই ও।তোর সাথে থাকা প্রত্যেকটা মানুষকে আজ আমি নিজের হাতে শাস্তি দিবো।অপেক্ষা কর।আমার হাতের চাবুকে আজ তোদের সব কয়েকটার চামড়া ছিড়ে নিবো।
স্নেহা কে উদ্দেশ্য করে স্বর্ণলতা বললো-
—”আপু, লবণ আর শুকনো মরিচের গুড়ো তৈরী তো?”
জাফর আমতা আমতা করে বলতে লাগলো-
—”লবণ!!মরিচ দিয়া তুমি কি করবা!!!”

—“তোদের পিটিয়ে ক্ষতস্থানে লবণ আর মরিচের গুড়ো লাগাবো।তোরা যন্ত্রণায় ছটফট করবি।মৃত্যু ভিক্ষা চাবি।আমি তোদের মৃত্যু সহজে দিবো না।
যখন আমার ফুটফুটে নিষ্পাপ বাচ্চাকে তোরা খু*ন করেছিলি তখন ও মা হিসেবে আমি এই যন্ত্রণা ভোগ করেছি।”

স্বর্ণলতা চাবুক দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকলো।আর জাফর গোঙ্গানির মতো শব্দ করতে লাগলো।
স্বর্ণলতা চাবুক দিয়ে জাফর কে পিটাচ্ছে আর বলছে-
—”অমর হতে চাস?অমর হওয়ার খুব শখ! আফসোস আল্লাহ কে না চিনে তার সাথে শিরকে লিপ্ত হলি।শোন,জন্মিলে মরিতে হবে।অমর কে কোথা কবে!আর তুই অমর হওয়ার জন্য খু*ন করেছিস!শিশু বাচ্চা মেরেছিস?ধর্ষন করেছিস?অবৈধ সন্তানের জন্ম দিয়েছিস?নীরব! তোর অবৈধ সন্তান।”

স্বর্ণলতার মুখে এমন কথা শুনে আৎকে উঠলো জাফর।একি বললো সে! নীরব যে তারই সন্তান এতো কেউ জানেনা।
এর মধ্যে নীরব কথা বলার জন্য ছটফট করতে লাগলো।স্নেহা তার মুখের বাঁধন খুলে দিলো।
—-”স্বর্ণলতা! কি বলছিস তুই?সে কিভাবে আমার বাবা হবে?আমার মামা সে।তুই জানিস না তোর শ্বাশুড়ি আর আমার মা দুইবোন।আর সে তো আমার মায়ের ভাই”।

—”আমি সব জানি।তুই কিছুই জানিস না।এই শয়তান জাফর আর তোর মা এরা আপন ভাই বোন না।তোর মা নিজে আমার বাবাকে খুন করেছে।আমার মাকেও তারা মেরে ফেলেছে।আর তাদের অবৈধ সম্পর্কের ফল তুই।তুই তো জারজ সন্তান।তাই তুই মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকিস।ভালো বাবার বৈধ সন্তান হলে এসব করতে পারতি! তুই জারজ তুই অবৈধ তোর মায়ের পাপের ফসল তুই”।

স্বর্ণলতার মুখে এসব কথা শোনার পর নীরব হাতের বাঁধন ছাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো।রাগে ফোস ফোস করে বলতে লাগলো-
—”খবরদার! আর একটাও বাজে কথা বলবিনা।হাত টা খুলে দে দেখ তোর কি অবস্থা করি।”
স্বর্ণলতা নীরবের সামনে এগিয়ে গিয়ে তার অন্ডকোষ এ পা দিয়ে চেপে ধরলো।ব্যাথায় কোকরাতে লাগলো নীরব।
—”তোর এটা নিয়ে বড়াই! আজকে তোর কি হাল করি আমি দেখ। কোনদিন ও তুই কোন মেয়েকে আর ছুঁতে পারবি না তুই।সৈকত কে বললো বিষ পিঁপড়া নিয়ে আসতে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সৈকত বিষ পিঁপড়া নিয়ে আসলো।আজকে বিষ পিঁপড়া তোর গোপনঅঙ্গ খুবলে খাবে!
স্বর্ণলতা প্যান্টের ভেতর বিষপিঁপড়া ঢুকিয়ে দিলো।নীরবের হাজার চিৎকার আহাজারি তে কারও মন গললো না।
নীরবের মা চিৎকার করতে লাগলো –
‘আমার ছেলেকে ছাড় মা।তুই আমার মা।আমার স্বর্ণলতা মা ছাড় মা।ওরে মাফ কর মা।ও তোর ভাই মা।ওরে ছাড় মা।”

—”ও….তাই!এখন ও আমার ভাই?”
স্বর্ণলতা কাছে গিয়ে তার সৎ মায়ের চুল ধরে মাথা ওপরে টেনে নিয়ে বললো-
‘যখন আমাকে রেপ করতে এসেছিলো তখন তোর মনে পড়েনি আমি তার বোন।তখন তোর মনে পড়েনি আমি তোর মেয়ে।নিজের বোন কে কিভাবে নিজের ভাই রেপ করে!আর আজকে বিপদে পড়ে মা..মা বলছিস?তোর মা..মা আজ তোর কাছেই রাখ।আমি যেমন গলাকাটা মুরগীর মতো ছটফট করেছি আজ সেই ছটফট তুই কর।”

এদিকে রূপকের মা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে।সে ভয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে।এরপর রণক বাঁধন খুলে উঠে এসে বলতে লাগলো-
—”কি মা! কি করছো?আল্লাহর নাম জপ করছো?হাহাহাহা এতোদিন স্বর্ণকে যখন কষ্ট দিয়েছো ওর বাচ্চাকে কেড়ে নিয়েছো তখন আল্লাহকে মনে পড়েনি?যখন এতো অন্যায় করেছে তখন এসব চিন্তা করোনি?”

রূপকের মা রণকের কথাতে হতবম্ব হয়ে গেলো।
চিৎকার করে বললো-
–”রণক! তোর এত অধঃপতন! ছিঃ তুই নিজের পরিবার কে দূরে রেখে ওদের সাথে হাত মিলিয়েছিস?আর স্নেহা তুই ও? ছিঃ আমি তো তোর মা।”

—”না,তুমি আমার মা না।তুমি মা নামের কলঙ্ক।”

—”রণক স্বর্ণ কি জানে তুই কে?স্বর্ণলতা শোনো ও কিন্তু রূপক না।ও রণক।ও তোমার স্বামী না।ও তোমার সাথে প্রতারনা করেছে।”

এবার স্বর্ণলতা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।তার হাসির মানে সে এ সবকিছু জানে।
এবার চাবুক নিয়ে আবার জাফরের দিকে পা বাড়ালো।

চলবে………
Sharmin Sumi-শারমিন সুমি।

(প্রিয় পাঠক/পাঠিকা গণ।এন্ডিং খুব দ্রুত হয়ে যাবে।নেক্সট পর্বে আরেকটা ধামাকা হবে।আশা করি কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন”)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here