স্বর্ণলতা part 33

0
339

#স্বর্ণলতা
পর্বঃ৩৩
__________
ভোর হয়ে গেছে।পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে ভেসে আসছে।কালকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করে স্বর্ণলতার গলা বসে গেছে।বোধহয় ঠান্ডা লাগবে।চোখের পানি নাকের পানিতে একাকার হয়ে যাবে।এই ঠান্ডা জিনিসটাই স্বর্ণলতার শত্রু।
ঠান্ডা লাগলে টানা মাথা ব্যাথা শুরু হয়।আর প্রচন্ড অস্বস্তিতে ভোগে।আজকেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছেনা।
মেহুল হয়তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।ও বড্ড ঘুম কাতুরে।মেহুল আর মন্টুকেও এখন স্বর্ণলতা বিশ্বাস করতে পারছে না।সে নিজের কানে যখন শুনেছে বাচ্চার কান্না সেখানে তারা কিভাবে বলে বাচ্চা মৃত!
আবার,যেদিন প্রথমবার নীরব আর তার মায়ের পেছন পেছন জঙ্গলে গিয়েছিলো সেদিনও মেহুল মিথ্যা বলেছিলো।

মেহুল নীরবের ঘরের ঘটনাও বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো।আসলেই কি ভুলে গিয়েছিলো?কতটুকু সত্য মিথ্যার চাদরে জড়িয়ে স্বর্ণলতা?আশেপাশের মানুষ গুলো সত্যি কি বিশ্বাসী?শক্ত করে কম্বল টা পুরো শরীরে পেঁচিয়ে নিলো।
তার বারেবার তার বাচ্চার কথা মনে পড়ছে।না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে।দুধের শিশু!তার মাকে ছাড়া সে কিভাবে আছে!
মানুষ গুলো কতটা নির্দয়!আর যাই হোক তাদের ই তো বংশ।তাদের কি কষ্ট হচ্ছেনা বাচ্চাটার জন্য!
কেনো তারা লুকিয়ে রাখছে?তাদের কি শত্রুতা?

দেয়ালের পাশ থেকে বাজখাঁই কন্ঠ ভেসে আসলো।এ কণ্ঠ দেখে বুঝতে বাকী রইলো না যে এটা মামার কন্ঠ।
কিন্তু সে কি বলছে?বাজখাঁই কন্ঠটা আস্তে আস্তে ফিসফিসে পরিনিত হলো।
কম্বল বিছানায় ছুড়ে ফেলে গুটি গুটি পায়ে নেমে পড়লো।দেয়ালের সাথে এক প্রকার মিশে গিয়ে কথা শুনতে চেষ্টা করলো।
খুব বেশি একটা শুনতে পেলো না।তবে এতটুকু শুনতে পেলো।
‘দশ প্রহরের মধ্যেই কাজ ডা সম্পন্ন করতে হইবো।এমনেও অনেকগুলা প্রহর পার হইয়া গেছে এই ঝামেলায় সেই ঝামেলায়।দেরি করা যাইবো না।
দশ টা প্রহর পার হইলে আর করলেও কাজ হইবোনা।’
অপরদিক থেকে আরেকজন বললো-‘তাহলে আজকে রাতেই সবকিছুর জোগাড় করি।দশ প্রহরের আগেই করে ফেলি।আপনার এইদিক সব কিছু ঠিকঠাক তো?
মামা গম্ভীর কন্ঠে বললো-
‘হ সব ঠিকঠাক।তুমি তোমার কাম করো।’

আর কোন কথার শব্দ পাওয়া গেলো না।অপরজনের কণ্ঠ টা ঠিক বুঝতে পারলো না স্বর্ণলতা।
দরজা খুলে বের হলো।ততক্ষণে অপরিচিত সেই লোকটি গেইটের বাইরে চলে গেছে।মামা খুব দ্রুত গতিতে স্থান ত্যাগ করলো।অন্যসময় হলে স্বর্ণলতা কে দেখে সে বিচ্ছরি একটা হাসি দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতো কিন্তু আজকে তার ব্যতিক্রম হলে।
সে বাড়ির বাইরে চলে গেলো।গিয়ে দেখে সাইবুরি।সাইবুরি মন্টুকে কোন একটা বিষয়ে অনুরোধ করছে।হাত জোড় করে কিছু বলছে আর তার অশ্রুসিক্ত আখিঁদ্বয়।
স্বর্ণলতাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো আর চুপ চাপ হয়ে গেলো দুজন।স্বর্ণলতা তাদের সামনে গিয়ে মন্টুর মা কে সালাম দিলো-
—”আসসালামুআলাইকুম।ভালো আছেন?”
স্বর্ণলতার মাথায় হাত দিয়ে সাইবুরি বললো-
—”হ আম্মা ভালা আছি।আপনে ভালা আছেন নি?”

—”না ভালো নেই।আমার স্বামী মারা গেছে।আর আমার বাচ্চাটাকে মামা হয়তো মেরে ফেলেছে।”

এ কথা শোনামাত্রই সাইবুরির চোখ কপালে উঠে গেলো।
কপাল কুঁচলে মন্টুর দিকে তাকিয়ে বললো-
—”হে মন্টু! তারা যেইডা দিয়া কাইজ করবো হেইডা আগেই হেরা মাইরা………..
মন্টুর ধমকের সুরে সাইবুরি কেঁপে উঠলো।
এবার স্বর্ণলতা উৎসুক দৃষ্টিতে সাইবুরির দিকে তাকালো আর বললো-
—”কি বলুন?”
সাইবুরি নিশ্চুপ…….

চারদিকে পিনপিন নিরাবতা।এবার মন্টুকে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো স্বর্ণলতা।
হঠাৎ আসন্ন থাপ্পড়ে মন্টু এবং তার মা দুজনেই হতবম্ব হয়ে গেলো।
মন্টু গালে হাত দিয়ে বললো-
—”বুবুজান!আমারে মারলেন ক্যান?আমি কি দোষ করছি?

—”খবরদার!আমাকে তুমি বুবুজান ডাকবা না।আমি বেশ বুঝতে পারছি তুমি আর মেহুল আমাকে ঠকিয়েছো! এতোদিন ভালো সাজার নাটক করেছো?জানো না তুমি যে আমি ছোট থেকে বাবা মার আদর পাইনি।সৎ মায়ের কাছে মানুষ।সৎ মা আর ভাই আমাকে অনেক অত্যাচার করেছে।আমার শৈশব কৈশোর কোন আনন্দের স্মৃতি নেই।তোমার তো মা আছে তাইনা?
কষ্ট হলে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে পারো।কিন্তু আমি!আমার তো কেউ নেই।বিয়ের পর রূপকের থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।আমার ভালোবাসার শেষ সম্বল টুকুও আজ মৃত।কেউ মুখ খুলছেনা সে কিভাবে মারা গেছে।হয়তো তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।আর শেষ মেশ আমার বাচ্চা টাকে আমার বুক থেকে কেড়ে নিলো।বাচ্চার জন্য আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি আর তোমরা ওদের মতোই আমার সাথে অভিনয় করছো?

আরেহ্ তোমাদের থেকে তো ওরা ভালো।ওরা তো আমাকে সরাসরি বুঝিয়ে দেয় যে ওরা আমার শত্রু।আর তোমরা?তোমাদের বুকে টেনে নিয়েছিলাম আর তোমরা আমাকে জড়িয়ে ধরে এভাবে পিঠে ছুরি মারলে?
তুমি না বলতে আমি তোমার কুসুম বুবুর মতো?সে যদি আজকে থাকতো তাহলে তুমি কি এই অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করতে?তার সাথে এমন করতে পারতে?আসলে ভুল ছিলাম আমি।কেউ কারো না।আমি ভুল ভেবেছি তোমাদের।আফসোস,যার যার গা
তার তার ব্যাথা! তাই তো?”
স্বর্ণলতা কাঁদতে কাঁদতে প্রত্যেকটা কথা বলছিলো।এরপর সে দুই হাতে চোখ মুছে সেখান থেকে চলে গেলো।

স্বর্ণলতার শেষ কথাটুকু মন্টুকে নাড়িয়ে দিলো।কথা গুলো তার বুকে হাতুড়ি পেটাতে লাগলো।কথা দিয়েও যে মানুষ কে ঘায়েল করা যায় সে তা জানতো না।স্বর্ণলতার জীবনের প্রত্যেকটা তারকাটা তার বুকে এসে বিধঁছিলো।সে আর সহ্য করতে পারলো না।এবং সে তার মা কে জিজ্ঞেস করলো-
—”আম্মা!আপনে কি কইতাছিলেন?বাচ্চা হে গো লাগবো মানে!আমারে পুরা কাহিনি খুইলা কন দেহি।”
সাইবুরি কিছু বলতে যাবে এর মধ্যেই মামার প্রবেশ।খুবই কর্কশ কন্ঠে বললো-
—”কি সাইবুরি! ভালা তো সবকিছু? আইজকা আমার বড়ই আনন্দের দিন।কাইলকা ভোজ হইবো।আর মন্টু আমার লগে এদিক আয় তো মায়ের লগে পড়ে কথা কইস।আইজকা মেলা কাম।আয় জলদি আয়।আর সাইবুরি!তুমি বাড়িত যাও।আইজ কাম ভালা ভালা হইয়া যাক।”
এক প্রকার জোর করে মন্টুকে টেনে নিয়ে গেলো মামা।
মন্টু আর কোন প্রকার কথা বলারই সুযোগ পেলো না।

সারাদিন মন্টু মামার সাথে কাজ করেছে।আর মেহুল ছিলো বাড়িতে।স্বর্ণলতার এটা ওটা কাজ করতে চেয়েছে কিন্তু স্বর্ণলতা কোন কাজ করতে দেয়নি।
মন্টু সারাদিন পর রাতে একটু ফ্রি হয়েছিলো।এবং সে দৌড়ে তার মায়ের কাছে গিয়েছিলো।
________________________
রাত তখন১১.৪৫।প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।কাসার থালার মতো ঝকঝকে রূপালী চাঁদ আজকে আর উঁকি দিচ্ছেনা।বরং প্রকৃতি ভয়ংকর অন্ধকার দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে ফেলেছে।প্রকৃতির ও বুঝি আজ মন খারাপ।সাথে মন খারাপ স্বর্ণলতার ও।

স্বর্ণলতা মুখ ভার করে বিছানায় বসে আছে।সারাদিন খুব অস্থিরতায় কেটেছে স্বর্ণলতার।অনেক চেষ্টা করেও কোন কিছু বের করতে পারেনি।অভিমানে মেহুলকে দু-এক কথা শুনিয়ে দিয়েছে স্বর্ণলতা।স্বর্ণলতা কে খাবারের জন্য ডাকতে এসেছিলো। এতেই ঘটেছে বিপত্তি।
মনের সব রাগ,অভিমান কে উগড়ে দিয়েছে।ফলশ্রুতিতে মেহুল এখন গাল ফুলিয়ে বসে আছে।সন্ধ্যা থেকে বাড়িতে কেউ নেই।সবাই বলে গেছে তারা জরুরি কাছে ঢাকা যাচ্ছে।কেনো এতো হুট করে ঢাকা যাচ্ছে কারন পরিষ্কার করে বলে নি।তবে স্বর্ণলতা ঠিক,-ই বুঝেছিলো তারা কোন গন্ডগোল পাকাবে।কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সে বাঁধা হয়ে দাড়াবে এই সময় বা সুযোগ হয়তো এখনো আসেনি।তাছাড়া পুরো বাড়িটা।ফাঁকা পেলে স্বর্ণলতা ও কিছু না কিছু বের করে ফেলতে পারবে।এই আশায় সে চুপ ছিলো।কিন্তু হাজার খুঁজে কোন প্রকার কিছু সে খুঁজে পায়নি।
যে ঘর গুলো তে যাওয়া নিষেধ সেগুলোতে বড় বড় তালা ঝুলছে।
মামা কি এতো কাঁচা খেলোয়াড়?পাকা মাথায় সব কাজ সে করে।
পুরো বাড়িতে স্বর্ণলতা আর মেহুল।এতো রাতে মন্টু ও বাইরে।

হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে কেউ একজন দ্রুত গেইটে প্রবেশ করলো।অন্যদিনের চেয়ে আজকে অস্বাভাবিক অন্ধকার বিরাজ করছে।অন্ধকার আর কুয়াশার জন্য কে ঢুকলো তা স্পষ্ট নয়।
স্বর্ণলতা জোরে জোরে হাকডাক শুরু করে দিলো-
—”কে?কে ওখানে?”
হাঁপাতে হাঁপাতে মন্টু উত্তর দিলো-
—”বু-বু-বুবুজান আমি গো বুবুজান”।
বোঝাই যাচ্ছিলো মন্টু প্রচুর দৌড়ে এসেছে।আর হাঁটুতে হাত দিয়ে এক প্রকার কোমড় ভেঙ্গে হাঁটু ভাঁজ হয়ে হাঁপাচ্ছে।আর অস্ফুট স্বরে বলছে-
—”বুবুজান! আমারে আপনে ভুল বুইঝেন না।আমি কিছু জানতাম না।বিশ্বাস করেন!”

—”এসব বলার জন্য তুমি এভাবে দৌড়ে এসেছো?”

—”না বুবুজান।আপনেরে আমি একটা গল্প বলমু শোনেন।আমি আমার মায়ের থিকা সব শুনছি।”

—”বানোয়াট গল্প তাইতো?মামা শিখিয়ে দিয়েছে?”

—”না বুবুজান বিশ্বাস করেন।আমারে একটু কইতে দেন!”

—”বলো কি বলতে চাও।”

মন্টু উঠে দাড়ালো।মুখে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিলো এরপর বলা শুরু করলো-
—”মেহুল আর আমারে শুধুই আনা হইছিলো আপনার ওপর নজরদারীর জন্য।আর আমরা এর বেশি কিছু জানতাম ও না।মামা কি করতো বুঝতাম না।আপনার বাচ্চা বাইচা আছে।আর আপনার কিন্তু একটা পোলা হইছে।চাঁদের মতো চেহারা।আপনি যেমন সুন্দর ঠিক তেমন সুন্দর হইছে।”

বাচ্চার বেঁচে থাকার কথা শুনে পূর্নিমার চাঁদের মতো তার চেহারা ঝিলিক দিয়ে উঠলো।চোখ চকচক করতে লাগলো।চোখ মুখ উজ্বল করে মন্টু কে জিজ্ঞেস করলো-
—”আমার ছেলে হয়েছে!কোথায় আছে আমার ছেলে?ঠিক আছে তো? ”

—”হ জানি কই আছে।আর অহন পর্যন্ত ঠিক আছে।কিন্তু একটু পর আর থাকবো না।”

—”মানে!!”

—”জাফর চাচা মানুষ না।হে একটা পিচাশ।আপনার শ্বাশুড়ি ও একটা পিচাশ।এরা মানুষ রূপে শয়তান।আমি যতটুক জানবার পারছি তাই কইতাছি।আমার কুসুম বুবু ও আপনার মতো সুন্দর ছিলো।হের ও বাচ্চা হইছিলো।কিন্তু ঐ বাচ্চাডা চাচা লইয়া গেছে।পরে বাচ্চার শোকে আমার কুসুম বুবু বিষ খাইয়া মইরা গেছিলো”।

—”নিয়ে গেছে মানে?কোথায় নিয়ে গেছে?”

—”আমি আগে জানতাম আমার বুবুর বাচ্চারে বিক্রি কইরা দিছে।আর আমিও ভাবছিলাম আপনার বাচ্চারেও মনে হয় বিক্রি কইরা দিবো।কিন্তু………

—”কিন্তু কি মন্টু?”

—-”হেরা তো বাচ্চা জবাই করে।জ্যান্ত বাচ্চা জবাই করে।”
স্বর্ণলতা চোখ কপালে তুলে মন্টুকে জিজ্ঞেস করলো-
—”মানেহ!জবাই করে মানে?”

—”হে সাধন করে।তার কোন সাধনগুরু আছে হেরে তুষ্ট করে।”

—”মামা কি কালোজাদু করে?”

—”হ বুবু।কঠিন কালাজাদু।আমার কুসুম বুবুর বাচ্চারে মারছে।আর আপনার বাচ্চারে জ্যান্ত জবাই করলেই হে শক্তিশালী সাধু হইয়া যাইবো।বহু বছর ধইরা শ্যাষ শিকার হে খুঁজতাছিলো।আমার মায়ে সব জানতো।আমারে কোনদিন কয়নাই।আর আমি মামারে ডরাইতাম।আমারে হে প্রচুর মারতো।আমার হাত পা বাইন্দা আমার পায়ের পাতায় ব্যাত দিয়া পিটাইয়া রক্ত বাইর কইরা ফেলতো।হেই ভয়ে মায়রে কইতাম হে যা জানে তা নিজের মধ্যে রাহুক।নাইলে হেরেও মা মারবো।”
—”আমার বাচ্চা এখন কোথায়?”

—”এই হান থিকা মিনিট ৩০ এর হাঁটাপথ।বড় একটা জঙ্গল আছে।হেই জঙ্গলরে কয় আন্ধার জঙ্গল।হেনে আইজকা হের বলি।আইজ অমাবস্যা। আইজ বলি দিতে পারলে হে নাকি অমর হইবো।হেরা আইজকা ওইহানে গেছে।কোন ঢাকায় যায়নাই।আর আপনার শ্বাশুড়ি ও অমরত্ব পাওয়ার লোভে হের লগে যোগ দিছে।আমি চাইনা আর কেউ যাতে আমার কুসুম বুবুর মতো হয়।চলেন বুবুজান আমার লগে আপনি চলেন।”

স্বর্ণলতা বসা থেকে উঠে দাড়ালো।আর মন্টুকে বললো মন্টু দ্রুত চলো।আমার বাচ্চাকে আমার বাঁচাতে হবে।এতো ভয়ংকর এই বাড়ির রহস্য!আমি কোনদিনও স্বপ্নেও ভাবিনি।আমাকে দ্রুত সেখানে যেতে হবে।আমার ছেলেই আমার শেষ সম্বল।ওকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো আমি।তড়িঘড়ি করে গেইট থেকে বের হতেই স্নেহা এবং সৈকত তাদের সামনে এসে দাড়ালো।
স্বর্ণলতা উৎকন্ঠা হয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলো-
—”ভাইয়া!!আপু!!তোমরা এখানে?আমি এখানে আছি কিভাবে জানো?”

স্নেহা কোন উত্তর না দিয়েই স্বর্ণলতার পায়ে বসে পড়লো।আর পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
স্বর্ণলতা স্নেহাকে শান্ত করার জন্য উঠতে বললো এবং বললো-
—”আপু প্লিজ! আমার পা দ্রুত ছাড়ো।আমার হাতে সময় নেই।আমার বাচ্চার………

—”না স্বর্ণলতা তোমার পা আমি ছাড়বো না।আমাকে মাফ করে দাও।”

—”আপু প্লিজ! তোমার দোহাই লাগে আমাকে এখন ছাড়ো,আমি এসে তোমার সব কথা শুনবো!পায়ে পড়ি ছাড়ো। বুঝতে পারছো না আমার সন্তানের জীবন……….”

—”হ্যাঁ সন্তান! আমার সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে।বিনাকারনে পরপর দুইবার।তোমরা যখন এখানে আসলে তার কিছুদিন পর।এরপর আবার কনসিভ করি।ওটাও বিনাকারনে নষ্ট হয়ে গেছে।এক বৃদ্ধা আমাকে দেখে বলেছিলো আমার এসব অভিশাপের ফল।তুমি আমাকে অভিশাপ দিয়েছো আমি জানি।”

—”আমি তোমাকে কোন অভিশাপ দেইনি,ছাড়ো আমাকে।ভাইয়া প্লিজ!!!! উঠান না আপুকে।”

—”না,তুমি আমাকে মাফ না করা পর্যন্ত আমি পা ছাড়বো না।”

স্বর্ণলতা চিৎকার দিয়ে উঠলো।আর উচ্চস্বরে বলে উঠলো-
—”এই মূহুর্তে আমার পা ছেড়ে দূরে সর।না হলে এক লাথি দিয়ে তোকে অন্যত্র ফেলে দিবো।আমার বাচ্চার জীবন সংকটে আর তুই নাটক করছিস?তোর বাচ্চা যখন মারা গেলো তোর খুব কষ্ট হলো আর সব জেনেশুনে তুই আমাকে এই বিপদে ফেলেছিস।এখন নাটক করছিস?তোদের নাটক দেখার সময় আমার নেই।পা ছাড় বলছি।

স্বর্ণলতার এহেন ব্যবহারে স্নেহা পা ছেড়ে ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।আর স্বর্ণলতা তাদের পাত্তা না দিয়েই মন্টুকে নিয়ে চলে গেলো।……….আর উচ্চস্বরে স্নেহা বলে উঠলো…আমাকে মাফ করো স্বর্ণলতা।আমার আরও কিছু বলার আছে।সব বলে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।”

চলবে……….
✍️Sharmin Sumi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here