স্বর্ণলতা part 8

0
508

#স্বর্ণলতা
পর্বঃ০৮
_________________________________
অনেক ডাকাডাকির পর মামা দরজা খুললো—
—-“স্বর্ণলতা কি হইছে?এতো চিল্লা চিল্লি করো ক্যান?”

—“মামা কি হয়েছে ধোঁয়া বের হচ্ছে কেনো?আগুন লেগেছে কোথাও? ”

—“হ আগুন লাগছে তো।তোমার শ্বাশুড়ি তো এনে সেনে কয়েল জ্বালাইয়া রাখে। ঐ কয়েল ই কাপড়ের লগে পড়ছে।
তেমন কিছুনা যাও বৌমা।
আর হ শোনো,ভাত রান্দন হইছে?ভাত দাও।
খুব ক্ষিধা লাগছে।”

—”আম্মা ঠিক আছে তো?”

—”হ ঠিক আছে যাও ভাত বাড়ো।”

দরজা এক প্রকার মুখের ওপর বন্ধ করে মামা ভেতরে চলে গেলো।
একটু পর জাফর এবং রূপকের মা দুই জন ই বের হলো।
খাবার টেবিলে খাবার সাজানো।
রূপকের মা এবং মামা আয়েশ করে খাবার খেলো।
জাফর বললো-
—”স্বর্ণলতা! দাড়াইয়া আছো ক্যান?
বসো আমগো লগে খাইয়া উইঠা ঘুম দাও একটা।ভাতঘুম যারে কয়।অহন তো তুমি একলা মানুষ।খালি রানবা,খাইবা আর ঘুমাইবা।”(হো হো করে হেসে উঠে)

স্বর্ণলতা খুব বেশি কিছু খেলোনা।একাকিত্ব তাকে গ্রাস করে ফেলছে।রূপককে ফোন দিতে খুব ইচ্ছে করছে।কিন্তু সে এখন প্লেনে।একটু আগেই তার সাথে কথা হয়েছে।এখন নাম্বার বন্ধ ই পাবে।
একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
চোখ বুজতেই দু চোখে ঘুমের পাহাড় নেমে এলো।

রাতঃ০৮ টা
আড়মোড়ে বিছানা থেকে উঠে বাইরে তাকিয়ে দেখে অন্ধকার!
—”কয়টা বাজে?রাত ৮ টা বেজে গেছে!আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি!”
—“আশ্চর্য! কেউ আমাকে ডাকলো না পর্যন্ত।”
তড়িঘড়ি করে উঠে গেলো।রুম থেকে বের হয়ে স্নেহা দেখে চমকে উঠলো-
—“আপু?তুমি কখন এসেছো?”

—“এইতো বিকেলের দিক।তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে বিরক্ত করিনি।”

—“আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো।তোমার সাথে তোমার ঘরে।তোমার অসুবিধার জন্য এলাম।একে প্রথম বাচ্চা দ্বিতীয়ত স্বামী নেই।একটা মেয়ে মানুষ তো লাগেই।আর মা এর তো বয়স হয়েছে একা একা তো পারেনা।”

—“তা ঠিক বলেছো আপু।ভালো হলো তুমি এসে।আমি গল্প করার একজন কে পেলাম।দুলাভাই কে নিয়ে আসতে।”

—-“না ওর কি এতোদিন থাকা সম্ভব?
কাজের প্রেসার।
আমরা দুজনই সারারাত মুভি দেখবো গল্প করবো।চলো এখন ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।তুমি ঘুমাচ্ছো দেখে রান্না টা আমি সেরে ফেলেছি।”

স্বর্ণলতা ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসলো।রূপকের কথা মনে পড়ছে।ও কি ঠিকমতো পৌঁছাতে পেরেছে কিনা।
স্বর্ণলতা ফোন টা হাতে নিলো-
—“কাকে ফোন করছো?ভাই কে,?”

—“হুম ঠিক মতো পৌঁছালো কিনা শুনবো।
আমার কথা হয়ে গেছে।ও ঠিকমতো ল্যান্ড করেছে।তুমি খেয়ে কল করে নিও।”

—“আচ্ছা ঠিক আছে আপু।”

দুজনে খেয়ে নিলো।স্বর্ণলতার অপেক্ষা করতে ভালো লাগছিলো না।কখন কল দিবে রূপককে।আর তাছাড়া মামা কিংবা মায়ের কোন চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছেনা।তারা কি বাসায় নেই নাকি!আপুকে জিজ্ঞেস করবে ভাবছে।জিজ্ঞেস করা কতটুকু ঠিক হবে!
আবার নিজ মনেই চিন্তা করলো আরেহ কিছুই হবেনা।জিজ্ঞেস করাই যাক।

—-“আপু-
মা, মামা কোথায়? বাড়িতে নেই?দুপুরে ঘরে আগুন লেগেছিলো।”
—“হুম আমি জানি।আর মামা তো মা কে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছে।আম্মুর একটু সমস্যা হয়েছিলো আগুন লাগাতে।
কি হয়েছে আম্মার!!(চোখে মুখে আতংক নিয়ে)
তেমন কিছুনা।ভয় পেয়ে প্রেসার টা একটু বেড়ে গেছে।তুমি যাও যাও শুতে যাও।”

স্বর্ণলতা মনে মনে বলল-
—“প্রেসার বাড়লে ডক্টরের কাছে যেতে হবে!আর আম্মার তো প্রেসার ডক্টর নিজে বাসায় এসেই চেকআপ করতো।
কি হচ্ছে এসব! কিছুতেই বুঝতে পারছিনা।আচ্ছা ওনাকে একটা ফোন দেওয়া যাক।”
রূপককে স্বর্নলতা কল দিলো-

ফোনের ওপাশ থেকে চিরচেনা কন্ঠ ভেসে আসলো-
—”কেমন আছো স্বর্ণ?খুব মন খারাপ তোমার?
আমাকে মিস করছো?”
স্বর্ণলতা ফোনটা বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিলো।তার হৃৎস্পন্দন সমানে ওঠানামা করছে।দু চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।কন্ঠনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।তবুও কান্না চেপে রেখেছে।এখন তার কান্নার শব্দ ওপর মানুষটার বুকে কাটার মতো বিঁধবে।
নিজেকে সামলে নিয়ে স্বর্ণলতা বললো-
—”খুব মিস করছি আপনাকে।”
একরাশ অভিমান নিয়ে রূপক বললো-
—“তা এতো মিস করলে একটা বার ও কল কেনো করলেনা?আপুকে বলে রেখেছিলাম বাংলাদেশ টাইম ৮.৩০ পর্যন্ত আমি ফ্রি আছি।পরে তো আমি ব্যস্ত থাকবো।
আপু বলেছিলো তোমাকে বলে দিয়েছে আর তুমি এখন কল করছো!”

—”কিহ! আপুকে এ কথা বলেছেন!!”

হঠাৎ করেই স্নেহার প্রবেশ……
—“স্বর্ণলতা কি করছো?ভাইয়ের সাথে কথা বলছো?আচ্ছা আমাকে দাও।”
ফোন নিয়ে স্নেহা বাইরে চলে গেলো।
স্বর্ণলতার মনে হতে লাগলো তার সদ্য পাওয়া জীবন কেউ কেড়ে নিয়ে গেলো।অসহায় এর মতো ঠাঁয় দাড়িয়ে রইলো।

স্নেহা ১০ মিনিট পর ফিরে আসলো।
—”স্বর্নলতা ধরো ফোন।ভাই এখন ব্যস্ত।তুমি কালকে কল করো।আর ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি একটু পরেই।”
স্বর্নলতা স্নেহার হাত ধরে বললো-
—”আপু শোনো।তোমাকে উনি আমাকে কল করার কথা বলেছিলো?
উনি বলেছিলো যে উনি ৮.৩০ পর্যন্ত ফ্রি থাকবে?”
স্নেহা আমতা আমতা করে বললো,-
—“ওহ্ হ্যা ও তো আমাকে বলেছিলো-
কি কান্ড ভুলে গেছি সব দেখছো।
আচ্ছা যাও শুয়ে পড়ো। ”

কথার মারপ্যাচে কোন রকম পাশ কাটিয়ে স্নেহা চলে গেলো এতো স্বর্ণলতা ঠিকি বুঝেছিলো।সব কিছু কেমন বদলে যাচ্ছে।আগের ভয় গুলো জ্যান্ত হয়ে উঠছে।সবকিছু ধোঁয়াশা কোন কিছুই পরিষ্কার না।
তার অতটা সাহস নেই এতোজনের বিরুদ্ধে যাবে।কিন্তু কি হচ্ছে রূপক যাওয়ার পর থেকে।কঠিন রহস্য দানা বাঁধছে স্বর্ণলতার মনে।
কিন্তু রহস্যের উন্মোচন করবে কিভাবে সে!

পা টিপে টিপে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখলো।এতোদিনে বাড়িটা ঘোরা হয়নি।আগে দেখা দরকার রূপকের মা কোথায় আছে।মামা কি এসেছে কিনা।
নাহ্ রূপকের মা কে দেখলো ঘরে শুয়ে আছে।আর স্নেহা তার মায়ের পা টিপে দিচ্ছে।মামা কে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।সে হয়তো বাইরে।এই সুযোগ। মামার বাজপাখির মতো চাহনি কে স্বর্নলতা খুব ভয় পায়।
বিপদের আশংকা বেশি তার চাহনি তে।

এই বাড়িতে ৪ টা রুম আছে।৬ তলা বাসা।একটা ফ্ল্যাটে তারা থাকে।বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া।পুরো বাড়ি টার আশপাশ ঘুরে দেখা যাক।আস্তে আস্তে দরজা খুললো।রাতের অন্ধকারে ঝি ঝি পোকার ডাক।গা ছমছমে কন্ঠস্বর নিয়ে দূরে পেঁচা ডাকছে।
পেঁচার ডাক আসাটা অস্বাভাবিক না।বাড়িটা পুরোপুরি শহরের মধ্যে পড়েনি।পাশে একটা দীঘি আছে।আর পেছনের সাইড টা ঝোপঝাড়ে ভরা।
স্বর্ণলতা ছাঁদে যেতে চাইলো।ছাঁদ থেকে পুরো জায়গা খুব ভালোমতো দেখা যায়।যদিও রাত।তবে ফোনের টর্চে যতটুকু দেখা যায় ততটুকু দেখে নেওয়া যাবে।

আস্তে আস্তে ছাদে উঠলো স্বর্নলতা।৫ তলা থেকে সিড়ি গুলোতে শ্যাওলা পড়ে গেছে।ছাদের দরজা খুললো
ক্যারত ক্যারত শব্দ করে।
জোনাকির মৃদু আলোতে আর স্বর্ণলতার ফোনের টর্চে খুব একটা কিছু দেখা যাচ্ছেনা।
সে বাড়ির নিচের সাইডে খচখচ আওয়াজ পেলো।ছাদের কিনাড়াতে গিয়ে দেখতে চেষ্টা করলো কি আছে ওখানে?
একটু উঁকি দিয়ে টর্চ টা নিচে নামিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো।
ওমনি একটা কঠিন কন্ঠস্বর ভেসে আসলো-
ধমকের সূরে
—“স্বর্ণলতা…..”
স্বর্নলতা চমকে উঠলো আর চমকে ওঠার কারনে তার হাতের ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।
কারন সে ছাদের একদম কিনাড়া তে ছিলো।

একটা ছায়ামূর্তির মতোন কিছু এগিয়ে আসছে।ভয়ে স্বর্নলতার দম বেড়িয়ে যাবার উপক্রম হচ্ছে।সে পিছাতেও পারবেনা।এক পা পেছালেই সে ৬ তলা থেকে নিচে পড়ে যাবে।
ভয়ে রড গুলো খামচে ধরলো।যত দ্রুত ছায়ামূতি টি সামনে আসছে ততই জোরে স্বর্নলতা তার হৃৎস্পন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

চলবে?
?️Sharmin Sumi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here