#স্বর্ণলতা
পর্বঃ০৭
_____________________________________________°°°°
—“সাধের তেঁতুল বানাইলো মোরে বৈরাগী। ও তেঁতুল রে……!!!!”
—“মামা ওটা তেঁতুল না লাউ হবে।”
—“আরে ভাগনে!যে (বুকে জড়িয়ে ধরে)
তেঁতুল আনবার গেছিলা বুঝি?”
—“জ্বী।পুরো দুনিয়া ঘুরে তোমার সাধের তেঁতুল আনলাম।”
—” হ অহন আমার শান্তি।আমার ভাগনে আমার জন্য তেঁতুল আনছে।ঐ তেঁতুলের দিয়া আমার ভাগনে বউ শরবত বানাইয়া দিবো।
আহ্ কি মিঠা…”
—“মামা একটু টক ও হবে।”
—“কিন্তু বউয়ের হাতে সব ই মিঠা।”
পান চিবুতে চিবুতে এক গাল হেসে বললো-
—“তোর মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না।
ও স্বর্ণলতারে খুব ভালোবাসে।ওর জন্য এতো আয়োজন কইরা আনছে।একটু আধটু অভিমান কি তোগো নাই?
আর ও অমন ই।স্বর্ণলতা ওর কলিজার এক অংশ তা তো আমি জানি।
শুন কি হইছে-
আমি গেলাম বুবুর ঘরে।বুবু আমারে ধইরা কাইন্দা দিছে।কয় আমিতো স্বর্ণলতারে রাগের মাথায় কত কিছু কইছি।আল্লাহ আমারে মাফ করবো ক্যামনে!
আমার তো হৃদয় পোড়ায় ওর জন্য।
কথা কিন্তু সত্য।মা মাইয়ার অভিমানে আমরা কেডা?
ওগো অভিমান ফুরাইলো বইলা।”
রূপক কিছুটা স্বস্তি পেলো।সাথে স্বর্ণলতাও।স্বর্ণলতা আড়ালে দাড়িয়ে সব শুনলো।সে মনে মনে ভাবছে,
মেঘ কেটে যাবে অবশেষে।
সে রুমে চলে আসলো।বাইরে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি।
গরমের তাপে এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি স্বর্ণলতার গালে এসে পড়লো।নিমিষেই সারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুললো।
অমনি পেছন থেকে দুটো হাত কোমড়ে ধরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
স্বর্ণলতা বুঝে গেলো এ তার চিরচেনা হাত।
সে হাত দুটো নিয়ে শক্ত করে আরও কাছে টেনে নিয়ে এলো।
এরপর রূপক স্বর্ণলতার ঘাড়ে মাথা দিয়ে বললো-
—”প্রিয়তমা আমার।এক নিমিষেই পরিস্থিতি শীতল।আমি বলেছিলাম না সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আর দুশ্চিন্তা না। এখন ঠিক মতো সবকিছু করবা।আর আমাদের সন্তান কে নিজের মধ্যে বড় করে তুলবা।আমি ছায়া হয়ে তোমার পাশে থাকবো।
তোমাকে কি বলেছিলাম?পাশে কেউ থাকেনা।শুধু থাকে ছায়া।
”আমি তোমার সেই ছায়া।
আর তুমি আমার মায়া”
স্বর্নলতা বাইরে দিকেই দৃষ্টি দিয়ে বললো-
–”ইন শা আল্লাহ। সৃষ্টিকর্তার রহমতে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।আল্লাহ সহায় হোক।”
_____________
জানালা দিয়ে এক দলা থুথু ফেলে বাঁকা হাসি হেসে জাফর বললো-
—”কি বুবু! মহল বদলাইয়া গেলো না?
গেছিলাম ভাগনে গো রুমে।ওদের কথা হুনলাম।অহন রূপক চিন্তা মুক্ত।ও যাওয়ার চিন্তা করতাছে অহন।
শোনো বুবু,
সবসময় কড়া হবানা।কড়া হবা সুযোগ বুইঝা।ঝোপ বুইছা কোপ মারবা।
আর কিছু না পারো মিছরির ছুরি হবা।
সূচ হইয়া ঢুইকা ফাল হইয়া বাইর হইবা।”
?এক পাশ প্রেমময় লগ্ন।
আরেক পাশে ষড়যন্ত্রে মগ্ন।?
এভাবেই আরেকটা বসন্তের বিষাক্ত রজনী পাড় হলো।যেটার এক পাশে প্রেমের বসন্ত।অন্যপাশে ষড়যন্ত্রের বিষ।
পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভাঙলো স্বর্ণলতার।আগের দিনগুলোর মতোই বাড়ির সবকিছু করতে লাগলো।আজকে সবাই বেশ খুশি।স্বর্ণলতার রূপের ঝলকানির সাথে আনন্দ মাখা মুখ।পরীর থেকে কম সুন্দর লাগছিলো না তাকে।
রূপক মায়াবী মুখের সরল চাহনি তে আহত হলো আরও একবার।
আজ তার স্বর্ণলতাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা।
চা দিতে এসেছে স্বর্ণলতা।
খপ করে হাত ধরে ফেললো রূপক।
—“কি করছেন?মামা আছেন কিন্তু!”
—”মামা আছেন না বউ।মামা আইয়া পড়ছে”‘(অট্টহাসি হেসে)
হো হো করে হেসে উঠলো রূপক।
—“মামা তুমি তো অসময়ে আসলা।”
—“আচ্ছা তাইলে বরং যাই গা।”
—”না না দাড়াও না।কই যাও?”
—“ক্যান যামুনা?মশকরা করলা?দেখো স্বর্ণলতা তোমার ভদ্র জামাই মামারে বোকা বানায়!”
“স্বর্ণলতা লজ্বা পেলো-
—”আমি বরং রান্না ঘরে যাই।তরকারি পুড়ে যাচ্ছে হয়তো।”
—“বউমা লজ্বা পাইছে।হা হা হা।
রূপক কবে যাইবা আমগো ছাইড়া?মনডা মানতাছেনা তুমি যাইবা গা।”
—“মামা যাবো ১ মাস পরই। ”
—“আপনাকে একটা দায়িত্ব দিতে চাই।স্বর্ণলতাকে একটু দেখে রাখবেন।ও খুব সরল সহজ একটা মেয়ে।বাবা মা এর আদর পায়নি ছোট বেলা থেকে।ওকে একটু দেখে শুনে রাখবেন।”
—“আরেহ্ ভাগনে কি বলে! স্বর্ণলতা আমার মাইয়া সমতূল্য।ওরে দেইখা রাখমুনা?এতোদিনে বিয়া করলে ওর মতো মাইয়া থাকতো।আল্লাহ তোমগো ভালা করবো।কোন সমস্যা হইলে আমার ফোনে ফোন দিবা।
মনে রাখবা যত মুশকিল তত আসান।
আর এই আসানডার নাম ই হইলো জাফর মামা।”
হো হো করে হাসতে হাসতে জাফর স্থান ত্যাগ করলো।
এভাবে জাফরের কড়া তত্ত্বাবধানে পুরো ১ মাস শান্তিতে কাটলো।কেউ টু শব্দটি করতে পারেনি।জাফর নিজেই হতে দেয়নি।সে চেয়েছে ভাগনের বিশস্ততা অর্জন করতে।সে বিশ্বাস করলে তার কাজ হাসিল।
রূপকের যাওয়ার দিন চলে আসলো।
স্বর্ণলতার ভীষন মন খারাপ।যাওয়ার দিন আগে এক ফোঁটা ঘুম হয়নি স্বর্ণলতার।
শক্ত করে রূপককে জড়িয়ে ধরেছে।আর অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে রূপকের বুকের ওপর।
তার চোখের পানিতে রূপকের জামা ভিজে গেছে।
রূপক কি বুঝতে পেরেছিলো?
কালকে তার রাজকন্যার দু চোখে ঘুমপরী ঘুম নামাতে ভুলে গেছিলো।
কাল থেকে এক পাশ ফাঁকা থাকবে।স্বর্ণলতা চিন্তা করতে গেলেই তার আঁখি নোনা জলে ভিজে উঠে।
ঘোলা দুটো চোখ আরও ঘোলা হয়।
রূপকের যেতে হবে।সে মহামূল্যবান জিনিস তার মামার জিম্মায় রেখে যাচ্ছে।বের হওয়ার আগে ১ ঘন্টা স্বর্ণলতা কে জড়িয়ে ধরেছিলো।অনেক আদেশ,উপদেশ,ভালোবাসার অনেক কথা স্বর্ণলতাকে বলেছে রূপক।
তার মা কেও খুব অনুরোধ করেছে যাতে স্বর্ণলতা কে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে রাখে।স্বর্ণলতা তার প্রাণ ভোমরা।আর এখন সে একা না।তার ভিতরে বড় হচ্ছে আরেকটি প্রাণ।
দুটো প্রাণ কে যন্তে রাখতে হবে।
বিদায় বেলা রূপক দীর্ঘ না করে বেড়িয়ে পড়লো।
বুকটা ভীষণ ফাঁকা লাগছে।হাহাকার করছে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বর্ণলতাকে তার কাছে নিয়ে আসতে হবে।
রূপক বের হতে না হতেই স্বর্ণলতা খেয়াল করলো রূপকের মা এর ঘরে ঢুকে রূপকের মামা দরজা লাগিয়ে দিলো।
সকাল গেলো দুপুর গেলো তারা কেউ ই দরজা খুললো না।
স্বর্ণলতার খুব চিন্তা হচ্ছিলো।ডাক দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না।
কেউ খেতে পর্যন্ত আসছেনা!!ক্ষুধা লাগছে না তাদের?
একটু পর রুমের নিচ থেকে ধোঁয়া আসতে লাগলো।
স্বর্নলতা এবার ভীষণ ভয় পেলো।
রুমে কি আগুন লাগলো নাকি!
রুপকের মা কয়েল যেখানে সেখানে ফেলে রাখে।
কোন এক কাপড়ে লেগে আগুনের সৃষ্টি হলো না তো!
স্বর্ণলতা কোন উপায় না দেখে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো-
—“মা,….
মামা…..কি হয়েছে?দরজা খুলুন…….”
(যারা গল্প পড়বেন তারা রেসপন্স করবেন?)
রিয়্যাক্ট,কমেন্ট করবেন।এতে লেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।)
চলবে……
?️Sharmin Sumi