স্বর্ণলতা part 5

0
665

স্বর্ণলতা
পর্বঃ০৫
_________________________________
টুং করে কলিংবেলের আওয়াজে বিরক্তি মুখ নিয়ে রূপক গেলো দরজা খুলতে।এতো রাতে কে আসলো এটা তাকে সবচেয়ে ভাবাচ্ছে।বিরক্ত ভাব বাইরে প্রকাশ করা যাবেনা।
দরজার খুলতেই একটা মোটা কালো মহিলা ফিক করে হেঁসে দিলো।বয়স ৫০ ছুঁইছুই।

—”আসসালামুআলাইকুম আন্টি।কিছু বলবেন?
না মানে তোমাদের ফ্ল্যাট থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ এসেছিলো কোন কি সমস্যা হয়েছে?

—“না আন্টি তেমন কিছু না।”

—“বলতে না চাইলে বোলোনা।তোমরা বাড়িওয়ালা মানুষ।না বললে তো জোর করতে পারবো না তবে হ্যাঁ একটু হলেও তো বুঝি নাকি।মাথার চুল তো আর বাতাসে পাকেনি।তবে সাবধানে থেকো এবং ওকে চোখে চোখে রেখো।”

—”মানে আন্টি বুঝলামনা।কাকে চোখে চোখে রাখবো?”

—“আরেহ্ এ ছেলে দেখি কিছু বোঝেনা।তা বাপু বিয়ে করতে গেছিলে কেনো শুনি?যার সাথে ঝামেলার আওয়াজ ফ্ল্যাট উপচে বাইরে আসছে।আমি তো চিলাফাল্লা শুনেই আসলাম।না জানি কি হলো!এতো সুন্দর মেয়েদের চরিত্র খুব একটা ভালো হয়না।এদের অনেক প্রেমিক ও থাকে।বিয়ের পর এসব প্রেমিকেরা খুব ঝামেলা করে।বউকে নজরবন্দী করে রাখবে।আর তোমার মাকেও বলি, দেখে দেখে এতো সুন্দরী মেয়ে ঘরে আনার কি দরকার?”

—“আন্টি,আপনি খুব ভালো একটা পরামর্শ দিলেন।আমার খুব উপকার হলো।
তা আমি যতটুকু দেখেছি আপনার মেয়ে কিন্তু খুব একটা সুন্দর না।কুৎসিত ই বলতাম, কিন্তু আপনার সামনে আপনার মেয়েকে কিছু বললে আপনার তো খারাপ লাগবে।তাই আর কি! তা সে তো কিছুদিন আগে পালিয়ে গিয়েছিলো।শুনেছি কয়েকরাত বাইরে কাটিয়ে এসেছে।তাকে একটু নজরবন্দী করবেন।দিন কাল যা খারাপ।”

এরমাঝখানে স্বর্ণলতা এসে পড়লো-
—“কি হয়েছে?কে এসেছেন?”
স্বর্ণলতাকে উদ্দেশ্য করে রূপক বললো-
—“সালাম দাও।ইনি আমাদের প্রতিবেশী।আমাদের পাশের বাসার আন্টি।ওহ্ ভালো কথা,আন্টি স্বর্ণলতাকে বলি এই খবর টা?ও তো আমার বউ তাইনা?না বলে কি থাকা যায়?”

—“কি খবর?”

—“এইতো ওনার মেয়ে তো কিছুদিন আগে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো।”

রূপকের এহেন উক্তিতে ভদ্রমহিলা ইতস্ততবোধ করলো।এরপর কিছুটা গম্ভীর হয়ে বললো-

—“আচ্ছা আমি যাই।আরেকদিন আসবো।”

—”আন্টি একটু ভেতরে বসে যান।চা নাস্তা করাই।”

কোন কথার উত্তর না দিয়ে মহিলা থপ থপ আওয়াজ করে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো।
রূপক উপহাস করে বললো-
—”আন্টি চললেন কোথায়?নাস্তা কিন্তু রেডি ছিলো!”
স্বর্ণলতা মলিন মুখে রূপককে জিজ্ঞেস করলো-
—“আপনি এটা কি করলেন?আমার সামনে ওনাকে এভাবে না বললেও পারতেন।”
রূপক চোখ কপালে তুলে উত্তর দিলো-
—“আচ্ছা!!!!!!……..”
কয়েকসেকেন্ড চুপ থেকে আবারও বললো-
—“তাহলে আমার চরিত্র নিয়ে কেউ কথা বললে তুমি কি চুপ করে থাকবে?”
এবার স্বর্ণলতা জোরালো গলায় বললো-
—“কখনোই না।আমি তাকে ঠিকি শাস্তি দিবো।”

—“তাহলে বোঝো সে কি করেছিলো!”

—“সে কি আমার সম্পর্কে কিছু বলেছে?”

—“জ্বী স্বর্ণ তাই।আমার আপন জন,আমার অর্ধাঙ্গীনি কে নিয়ে বাজে কথা সহ্য করবো?
জীবনের প্রথম ভরসার স্থান আমার মা।এবং দ্বিতীয়ত তুমি।
আমার সন্তানের প্রথম ভরসার স্থান হবে-
শুধুই তুমি।আমার স্বর্ণ,আমার আস্থা এবং ভালোবাসা তোমাকে সমর্পন করেছি।”

স্বর্ণলতা মনে মনে ভাবলো-
—“সে আমাকে এতোটাই বেশি বিশ্বাস করে যে মেসেজ গুলো তার কাছে গুরত্বহীন,মূল্যহীন।সে একবারও যাচাই করছে না।থাক সে যদি আমাকে না বলতে চায় আমি বলে তাকে আপত্তিকর অবস্থায় ফেলেবোনা।”

____________________________
সুখের সময় গুলো দ্রুত চলে যায়।তাদের বিয়ের আরও ১ মাস কেটে যায়।এর মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা উল্লেখ্য –
রূপকের মায়ের ফোনের এরকম উড়ো তিন-চার টা মেসেজ আসে।যেখানে স্বর্ণলতা দুশ্চরিত্রা স্পষ্ট।
এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয় স্বর্ণলতা।সে তার শ্বাশুড়ির বিশ্বাস ক্রমশ হারিয়ে ফেলছিলো।আদরের কোন কমতি না থাকলেও আড়চোখের চাহনি স্বর্ণলতাকে ঠিকি বুঝিয়ে দেয়
সে তার চোখে ঘোর অপরাধী।এ নিয়ে রূপকের সাথে একবার তার মায়ের কথাও হয়।কিন্তু রূপক তার মাকে সাফ জানিয়ে দেয়-
—“মা,যে কথার কোন প্রমান নেই সেটা আমি বিশ্বাস করিনা।মেসেজ আমাকেও পাঠিয়েছে কিন্তু সে উপযুক্ত প্রমান দিতে পারেনি।তার সৎসাহস থাকলে প্রমান নিয়ে আমার সামনে দাড়াক।আর স্বর্ণলতাকে এই কয়েকদিনে আমি বেশ ভালো চিনেছি।ও খারাপ মেয়েনা।”
রূপকের কথাতেও দ্বিধা কাটেনা রূপকের মায়ের।তার ভাষ্যমতে রূপক কোন এক ঘোরে আছে।সেটা কিসের ঘোর?
ঘোর না মোহ?
এত বিশ্বাস ভালো?
ভালোবাসা ভালো কিন্তু
অন্ধভালোবাসা ধ্বংসের সিড়ি।যে সিড়ি বেয়ে উঠলে মানুষ আর ফিরে আসতে পারেনা।

কিন্তু রূপক তার মা কে চুপ করিয়ে দেয়।
সে মনে মনে বেশ চিন্তিত থাকে।আস্তে আস্তে তার যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে আর তার মায়ের সাথে স্বর্ণলতার দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
সৃষ্টিকর্তা আসলে কি চাচ্ছে!ছোটবেলা থেকে তার চাঁদের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করতো।জোসনারাতে সে ছাঁদে গিয়ে বহুবার চাঁদ দেখেছে।সবাই বলতো চাঁদের কলঙ্ক আছে।তার শুনতে ভালো লাগতো না।
জোসনাপ্রিয় রূপককে সৃষ্টিকর্তা জোসনার আলো মাখা সুন্দর একটা চাঁদ উপহার দিয়েছেন।এতেও কি কলঙ্ক লাগানোর খুব দরকার ছিলো!
কলঙ্ক ছাড়া চাঁদ হওয়া যায়না?
তার চাঁদ লাগবেনা,সৃষ্টিকর্তা শুধু কলঙ্ক ধুয়ে মুছে নিয়ে যাক।

আকাশ সমান ভাবনা নিয়ে বালিশে মাথা রাখতেই ওপাশ থেকে চাপাস্বরে কান্নার আওয়াজ।কেউ হয়তো কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় মগ্ন।এ তো আর কেউ না
তারই প্রিয়তমা।কিন্তু সে কাঁদবে কেনো?তার কি কোন বিষয়ে মন খারাপ?নাকি মায়ের কোন কথা শুনে ফেললো!
সে এপাশ ঘুরে কোন কথা না বলে তার প্রিয়তম সুন্দর চাঁদ কে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।এ চাঁদ কে সে ইচ্ছে হলেই ছুঁতে পারবে।তার সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চাঁদ ধরার যুদ্ধে যেতে হবেনা।

স্বর্ণলতাকে বুকের সাথে মিশিয়ে রূপক বললো-
—“এইযে মিসেস রূপক,আমার মিষ্টিমুখের রাজকন্যা। আমার চাঁদ মুখের রাজকন্যা,আমার স্বর্ণ।কি হয়েছে আপনার?এভাবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে আমার ঘুম টা কেনো ভাঙালেন শুনি?”
ভাঙা গলায় স্বর্ণলতা বললো-
—”আমি দুঃখ প্রকাশ করছি আপনার ঘুম ভাঙানোর জন্য।আমাকে ছেড়ে ওপাশ ঘুরে ঘুমিয়ে পড়ুন।”

—“দেখি দেখি মুখ তোলেন দেখি!বাবা!!
আমার স্বর্ণ অভিমান ও জানে?অভিমান করে নিজেকে ছেড়ে দিতে বলে সে নিজেই আরও শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।”
স্বর্ণলতা ভীষণ লজ্বা পেলো।রূপককে ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশে ঘুরে গেলো।
রূপক আবারও স্বর্ণলতার কোমড় জড়িয়ে ঘাড়ে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেললো।এরপর পিঠে চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

—“বলোতো কি হয়েছে?কেনো আমার স্বর্ণের মন খারাপ?”

—“শুনবেন কেনো?”

—“অবশ্যই।”
স্বর্নলতা উল্টোপাশ ঘুরেই জবাব দিলো-
—“আমি প্রেগনেন্ট।আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন।”

এক ঝটকায় শোয়া থেকে বসে পড়লো রূপক-
রূপকের সাথে সাথে স্বর্ণলতাও উঠে বসলো।
জানালা দিয়ে আসা বাতাসে স্বর্ণলতার খোলা চুল উড়ছিলো।
হালকা চাঁদের স্নিগ্ধ আলো স্বর্ণলতার মুখশ্রী ছুঁয়ে দিলো।মায়াবী মুখের পানে একদৃষ্টিতে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রূপক।
রূপক হতভম্ব হয়ে আছে।এই পরিস্থিতিতে চোখের পানি জানান দিলো রূপকের উপচে পড়া খুশি।স্বর্ণলতাকে বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো রূপক।
আজ রাতে আর কোন কথা হবেনা তাদের।ভাষা হারিয়ে বোবা প্রানীর মতো নাকি কোন এক চাতক পাখির মতো! যে হয়তো এই দিনটার ই অপেক্ষা করছিলো।

স্বর্ণলতার মনের আশংকা-
কিভাবে বলবে তার শ্বাশুড়ি কে।পূর্ব অভিজ্ঞতা বিষাক্ত ছিলো।
সে এখন বাচ্চা হওয়ার খবর কিভাবে দেখবে?
প্রশ্ন তুলবেনা তো ছোট্ট শিশুর ওপর?
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই কি সে সন্দেহর তালিকায় পড়ে যাবে?দাদীর আদর থেকে বন্ঞ্চিত হওয়ার সম্ভবনা কতটুকু!
এমন হলে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারবেনা।তার পবিত্র সন্তানের ওপর অপবাদ দেওয়ার অধিকার কারোর নেই।

যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।ঠিক এই প্রবাদটির মতোই মিলে গেলো স্বর্ণলতার জীবনের নতুন আরেকটা অধ্যায়-
বেঁকে বসলো তার শ্বাশুড়ি। এ সন্তান তার ছেলের না সাফ জানিয়ে দিলো।সে তার নিজের পুত্রবধুর অনাগত সন্তান নিয়ে সন্দিহান।এর চেয়ে লজ্বার আর দ্বিতীয় টি নেই।
প্রথম বারের মতো স্বর্নলতা রূপক মুখোমুখি।
মেসেজ টার কার ছিলো! কেনোই বা মেসেজ এসেছিলো?
এতোদিন দুজনে জানতো কিন্তু তা লুকিয়ে রেখেছিলো।রূপক স্বর্নলতাকে বিশ্বাস করেছে তাই কিছু বলেনি।স্বর্ণলতা রূপক এর বিশ্বাস এর মর্যাদা রেখেছে।সে উল্টো জিজ্ঞেস করে তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায়নি।দুজন ই এক পথের পথিক।কিন্তু ভিন্ন পথে হাটছে তার মা—-
কিন্তু আজ তাদের এ নিয়ে কথা বলতে হবে।তার মা তাদের দুজনের সামনেই উন্মোচন করেছে এতোদিনের পালিয়ে বেড়ানো ভয়ংকর সত্য!
এটা আসলেই সত্য নাকি এটা গুজব?

(যারা গল্প পড়বেন অবশ্যই রেসপন্স করবেন?)
চলবে……..
Sharmin Sumi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here