স্বর্ণলতা part 4

0
752

#স্বর্ণলতা
পর্বঃ০৪
______________________________
পুরো রাস্তা কোন প্রকার কথা বললো না রূপক।স্বর্ণলতা কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হু,না তে উত্তর দেয়।স্বর্ণলতার বিষয় টা আরও অদ্ভুত লাগলো।কি এমন হলো তার!
বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে স্বর্ণলতা কে রূপক ডাকলো-
—“স্বর্ণ,আমি শুনেছি যতটুকু তোমার সৎ মা ছিলেন।উনি তোমাকে আদর করতো?”

—“হঠাৎ এ কথা?”

—“না,তোমার সাথে আমি৷ এক মাস ধরে আছি।আর আমার যাওয়ার ডেট টাও পিছালাম তোমার সাথে আরেকটু টাইম স্পেন্ড করার জন্য।আমি চাই আমার বউ আমার সাথে র্নিদ্বিধায় সব কিছু বলুক।তার ভালোলাগা,মন্দলাগা,তার যদি কোন দুঃখের স্মৃতি থাকে অথবা কোন লুকায়িত কষ্ট।
আমার বউ আমাকে বলবে।
তোমার ভালোথাকার ভাগ যদি আমি নিতে পারি দুঃখের ভাগ নেওয়া আমার জন্য জরুরী।”

মুখ ঘুরিয়ে স্বর্ণলতার প্রতিউত্তর-
—“না। আমি চাইনা আপনি আমার দুঃখের ভাগ নিন।আপনাকে আমি সুখী দেখতে চাই।আমার কষ্টে আপনি কেনো কষ্ট পাবেন?আপনার কষ্টমাখা মুখ আমার কাছে দুঃস্বপ্ন।আমি যেটা কখনো দেখতে চাইনা।”
রূপক দু গাল স্পর্শ করে বললো-
—“আমার প্রাণপ্রিয় স্বর্ণ।
তোমার কষ্টমাখা মুখ আমার কাছে বিষাক্ত মূহুর্তের মতো।যেটা আমাকে শুধু তিক্ত অভিজ্ঞতা দিবে।তোমার সাথে একটা মূহুর্তও আমি তিক্ততায় কাটাতে চাইনা।তোমার সাথে প্রতিটা মূহুর্ত আমার প্রেমময় হবে।”
স্বর্ণলতার আঁখি, জলে ভিজে গেলো।কিন্তু এ কান্না আনন্দের।
এ কান্না নোনা জল মেশানো এক আনন্দঅশ্রু।
স্বর্ণলতার চোখ দুটি ঘোলা হয়ে গেলো।এতো সুখ সে ধরে রাখতে পারবে!
রূপক স্বর্ণলতাকে তার বাহুডোরে শক্ত করে জড়িয়ে রাখলো।
—“সারাজীবন তোমাকে এইভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবো আমার প্রাণভোমরা।তুমি আমার প্রানপ্রিয় স্বর্ণ।”

—“আপনিও আমার প্রাণভোমরা।সারাজীবন আপনাকে জড়িয়ে রাখতে চাই।”

এতোকিছুর মাঝে স্বর্ণলতা মেসেজ দেখার কথা ভুলে গিয়েছিলো।তারা রাতের খাবার শেষ করলো।সবার সাথে গল্প করতে বসলো।রূপকের মা রূপকের শৈশবের নানারকম কথাবার্তা বলছিলো আর স্বর্ণলতা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিলো।
এমন সময় রূপকের মা বলে উঠলো —
—“রূপকতো সামনের সপ্তাহে চলে যাবে আমি জাফর কে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি”।(জাফর রূপকের মামা)

—“মা আসলে ব্যস্ততায় তোমাকে কিছু বলা হয়নি আমি দুইমাস পরে যাচ্ছি।”

—“মানে?তোর যাওয়ার তারিখ ১ সপ্তাহ পর আর তুই দুই মাস পর যাবি মানে?কি হচ্ছে এসব!!”
—”মা তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?আমি কিছুদিন বেশী থাকলে তুমি কি অখুশি?”

—“না আমি কেনো অখুশি হবো!আমি জাফরকে আসতে বলেছি ওকে না করতে পারবো না।”

—“মামা কে না করতে হবেনা।উনি আসুক।আমাদের গেস্ট রুম তো খালি পড়ে আছে।থাকুক না দুই-তিন মাস এক্সট্রা।আর আমি গেলে উনি তো এমনি ই আসতোই।আমি থাকতে থাকতে না হয় আসুক।”

—“না কোনমতেই না।প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম মেনে হয়।তোকে এক সপ্তাহ পরই যেতে হবে।”

—“মা কি বলছো এসব?আর এখন সম্ভব না।সব কনর্ফাম হয়ে গেছে দুই মাস পরই টিকিট।এর আগে গেলেও আমি অফিসে জয়েন করতে পারবো না।”

—“কিহ! আমাকে না জানিয়ে তুই এতো বড় কাজ করলি কিভাবে?তুই খবরদার আমার সাথে কথা বলবিনা।”

গজগজ করে চলে গেলো রূপকের মা।রূপক অনেক থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই ওর মা কে থামানো গেলোনা।সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এতো রিয়্যাক্ট!
আর রূপক থাকলে তার মায়ের তো খুশি হওয়ার কথা! রহস্য দানা বাঁধছে স্বর্ণলতার মনে।
তার মা রুম থেকে চিৎকার করছে।বিলাপ করছিলো নিজে নিজে।
স্বর্ণলতা রূপককে জিজ্ঞেস করলো…
—“মা এমন করছে কেনো?এতো সাধারণ বিষয় নিয়ে”।

—“দাড়াও আমি গিয়ে দেখছি।তুমি রুমে যাও।”

স্বর্ণলতা রুমে চলে গেলো।বেলকুনিতে দাড়িয়ে রাতের তারা ঝলমল আকাশ দেখছিলো।এখন তার পাশে রূপক থাকবে। কিছুদিন পর একাকিত্ব তাকে গ্রাস করবে!
বৃষ্টির সন্ধ্যা,চাঁদনি রাতে রূপককে খুব মিস করবে স্বর্ণলতা।
হঠাৎ তার ফোনের মেসেজ টার কথা মনে পড়লো।
কি এমন মেসেজ এসেছিলো যার জন্য রূপক এর মনে এতো দুশ্চিন্তা।
রূপকের ফোনটা টেবিলে আছে।দ্রুত হাতে নিলো স্বর্ণলতা।ফোন হাতে নিয়ে দরজার কাছে চলে গেলো কেউ আসছে কিনা দেখার জন্য।
তারপর ফোনের মেসেজ চেক করতে লাগলো।
সে তার হৃদপিন্ডের স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে।তার এতোটা ভয় লাগছে।রূপক যদি দেখতে পায় সে তার ফোন চেক করছে কি ভাববে!
ছিঃ।
কিন্তু তার তো এই কাজ করতেই হবে।তার স্বামীর ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত।

ফোনের মেসেজ অপশনে ঢুকে দেখতে পেলো একটা মেসেজ।যেটা দেখে সে থমকে গিয়েছিলো-
দুটো মেসেজ সেইম নাম্বার থেকে।
প্রথম টা এসেছিলো তাদের বিয়ের পরদিন।সেটাতে লেখা ছিলো-
“**শুনুন মিঃ ব্যাংকার।বউ বিয়ে করেছেন চমৎকার!
তার চরিত্রের বিষয়ে কিছু বললে দিবেন কি হুংকার!
ইতি-YZ”**
মেসেজে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে স্বর্ণলতার চরিত্র নিয়ে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে।তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে তার বউয়ের চরিত্র নিয়ে।তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী।এ পরিস্থিতি তে তার স্বামীর কি করা উচিত!কি বা ভাবা উচিত।কি বা রিপ্লাই করা উচিত!

দ্বিতীয় মেসেজে লেখা ছিলো –
“**আগের মতো আর হেয়ালি করে কবিতা লিখবো না ব্রো!তবে আপনার পৌরষত্ব নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।বউকে চোখে চোখে রাখবেন।আর আমার বানী গুলো মনে রাখবেন।
ইতি-YZ”**

এবার স্বর্ণলতার নিজের ই রাগ উঠে গেলো।একজনের পৌরষত্ব নিয়ে কথা বললে যে কারো রাগ উঠবে। ইচ্ছে করছে ফোন করে গালিগালাজ করতে।সে দ্রুত নাম্বার টা লিখে নেওয়ার চেষ্টা করতেই কারো হেঁটে আসার আওয়াজ পেলো।সে দ্রুত ফোনটা টেবিলে রেখে বেলকুনিতে চলে গেলো।

রূপক স্বর্নলতাকে ঘরে দেখতে না পেয়ে ডাকতে লাগলো-
—“স্বর্ণ,কোথায় তুমি?”
স্বর্ণলতা বেলকুনি থেকে বের হয়ে এলো।
—“এইতো এখানেই ছিলাম।মা ঠান্ডা হয়েছে?”
—“মোটামুটি ঠান্ডা হয়েছে।হঠাৎ করে কেনো এমন করলো বুঝতেই পারছিনা।আমি তার কি অসুবিধা টা করলাম!
আচ্ছা যাইহোক ঘুমাই চলো।অনেক রাত হয়ে গেছে।”
—“জ্বী চলুন।”
স্বর্ণলতার লজ্বা লাগছে খু্ব।এই মেসেজগুলো দেখার পরও তার স্বামী তাকে বিন্দুমাত্র খোঁটা দেয়নি খোঁটা তো দূরে থাক,সে অস্বস্তি তে পড়বে বলে তাকে বলেনি পর্যন্ত।
এই মানুষটা মূল্যবান রত্ন পাথর।তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।আর এই রত্ন পাথর সে সৃষ্টিকর্তার থেকে উপহার পেয়েছে।তবে যাইহোক সে এ বিষয়ে রূপকের সাথে আলোচনা করবে।
—“সে রূপকে জড়িয়ে ধরে বললো,
আচ্ছা একটা কথা বলি?”
—”হুম বলো আমার মিষ্টিমুখের রাজকন্যা।আমার স্বর্ণ।
বলছিলাম যে আজকে যখন………”

কলিংবেলের টুং টুং আওয়াজ।
রূপক বলে উঠলো-
এতো রাতে কে আসলো!

চলবে
?️Sharmin Sumi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here