#স্বর্ণলতা
পর্বঃ০৩
_________
অদ্ভুত একটা মেসেজ দেখেই রূপকের মুখ অন্ধকার হয়ে গেলো।
স্বর্ণলতা জিজ্ঞেস করলে
—“কি হয়েছে কোন সমস্যা?মুখটা এমন গোমরা করলেন যে?”
—“না কিছুনা(মুচকি হেসে)
আমাকে এক কাপ চা দিতে পারবে?”
—“‘জ্বী দিচ্ছি।”
স্বর্ণলতা চা আনতে কিচেনে চলে গেলো।
—“আম্মা উনি বলছেন এক কাপ চা নিয়ে যেতে।”
—“হুম নিয়ে যাও বানানো আছে।আজকে তো তোমার বাবার বাড়ির লোকজন আসবে তাইনা?”
—“জানিনা আম্মা।হয়তো আসবে।এটাই তো নিয়ম।”
রূপকের মা পরোটা বানাচ্ছিলো।স্বর্ণলতার এহেন কথায় সে কাজ থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
—এভাবে বলছো যে!তারা কি আসতে চাননা?নাকি আমাদের কোন ত্রুটি?”
—“না মা আপনাদের কোন সমস্যা নেই।আমি কল দিচ্ছি এখুনি।দেখি তারা কতদূর আসলো।”
স্বর্ণলতার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছে না তাদের বাড়িতে ফোন দিতে।ফোন দিলে তো শুধু তার মা ই ধরবে।তার মা এর সাথে কথা বলতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করেনা।সে শুধু তার দোষ ধরতে ব্যস্ত থাকতো।একটা মানুষ এতটা নির্মম কি করে হতে পারে?
তার সৎমা পুরো শৈশব নষ্টের মূলহোতা।মা মারা যাবার পর সৎমা ঘরে আসে।বুঝ হওয়ার পর থেকে একটি দিনও স্বর্ণলতার শান্তিতে কাটেনি।আর যখন বাবা মারা গেলো সেদিন থেকে এমন কোন দিন নেই সে কাঁদেনি।তার চোখের পানি দেখে তার সৎমা শোভা বোধহয় পৈশাচিক আনন্দ পেতো।যখন তার বিয়ের কথা উঠলো তখন স্বর্ণলতা বিনাবাক্যে রাজী হয়ে গেলো।এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলছে এইতো ঢের।
স্বর্ণলতার যোগাযোগ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।তবুও কষ্টে ফোন দিলো।সৌজন্যতা বোধ থেকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বাড়িতে আসার নিমন্ত্রণ জানালো।
দুপুর ১.০০
__________
স্বর্ণলতার বাবার বাড়ির সবাই উপস্থিত। তার সৎ ভাই নীরবও এসেছে।মারাত্মক বেয়াদব সে।একটুও শ্রদ্ধাবোধ স্বর্ণলতার প্রতি তার ছিলো না।
স্বর্ণলতা তার বাবার বাড়ি যেতে চায়না।তবুও নিয়ম রক্ষার্থে যেতেই হবে।
সবাইকে খাবার বেড়ে দেওয়ায় ব্যস্ত স্বর্ণলতা।সবার আপ্যায়ন বেশ হওয়া চাই।
রূপককে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।স্বর্ণলতা কে বলা হলো রূপক কে খুঁজে আনতে।স্বর্ণলতা রূপককে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে গেলো।
দেখলো রূপক ছাদে একা দাড়িয়ে আছে।
রূপককের কাছে গিয়ে স্বর্ণলতা জিজ্ঞেস করলো
—“এই যে শুনছেন?”
রূপক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।এবং মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো-
—“তুমি!! এখানে কেনো?”
—“না মানে আপনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। মা ডাকছিলো।”
—“আচ্ছা চলো।”
—”শুনুন,একটা কথা জিজ্ঞেস করি?তখন থেকে দেখছি আপনি বিষন্ন হয়ে আছেন।ফোনে কি এমন মেসেজ এসেছিলো?”
—“তুমি কি কিছু আন্দাজ করছো কেমন মেসেজ আসতে পারে?”
—“মানে,ঠিক বুঝলাম না।”
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুঁটিয়ে তুলে রূপক বললো-
—“আরেহ কিছুনা।
তুমি আমার মিষ্টি স্বর্ণ।আমার পবিত্র আত্মা।অনেক ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে।জানো,যারা কখনো প্রেমে পড়েনি তারা নাকি বউয়ের প্রেমে চট করে পড়ে যায়।
তুমি তো আমার বউ।তোমাকে তো হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসবো।তাই না বলো?”
—“আমি জানিনা” -কথাটি স্বর্ণলতা অবনমিত হয়ে স্মিত হেসে বলেছিলো।
স্বর্ণলতার মাথা তুলে রূপক স্বর্ণলতার কপালে চুমু একে দিলো।স্বর্ণলতা লজ্বায় পড়ে গেলো।আর বললো-
—“কি করছেন!মানুষ দেখবে তো!!”
—“না এখানে কেউ নেই।তুমি,আমি,আর বিশাল আকাশ।খোলা আকাশের নিচে আমাকে মুগ্ধ করা এক রমনি দাড়িয়ে।
চলো রাজকন্যা, আমার স্বর্ণলতা।দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
স্বর্ণলতার নিজ বাসায় সন্ধ্যা ৬.০০
___=_=___
জামাই আদরের কোন কমতি রাখা হচ্ছেনা।স্বর্ণলতা নিজেই দেখে অবাক।এত আদর তারা করছে!বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।এ বাড়ির প্রতিটি স্মৃতি তার কাছে বিষাক্ত ছিলো।কিন্তু এতো তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকা স্বত্বেও এ বাড়ি আজ তার শীতল লাগছে।কি পরিবর্তন হলো এমন!আজ তার মা এতো নিশ্চুপ।
স্বর্ণলতাকেও অনেক আদর করা হলো।
তার যা যা প্রিয় খাবার ছিলো সব আজ রান্না করা হয়েছে।সত্যি বিয়ের পর তার ভাগ্য খুলে গেলো!যে মায়ের আদরের কাঙাল ছিলো সে মা আজ তাকে আদর করছে।কিন্তু এতোদিন কতই না আদরের জন্য হাতড়ে মরেছে।দিনের পর দিন কেঁদেছে।প্রার্থনা করেছে।সব প্রার্থনা আজ সফল হলো।কিন্তু সে তো থাকবেনা আর এ বাড়িতে।
বাসার সব কাজ সম্পন্ন করে দুইদিন পর তারা রূপকদের বাসায় চলে আসলো।তাদের নতুন সংসার।সংসারের সব কিছু নিজ হাতে সাজানো।তাদের দিন খুব ভালো কাটছিলো।শ্বশুরবাড়ির সবাই খুব আদর করতো স্বর্ণলতা কে।
চাঁদনি রাতে রূপক স্বর্ণলতাকে বাইরে নিয়ে যেতো।বেলি ফুল খোপায় পড়িয়ে দিতো।
আজও সে স্বর্ণলতা কে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বেড়িয়েছে।আর প্রতিদিনকার মতো খুঁজে খুঁজে একজোড়া বেলি এনে তার খোঁপায় পড়িয়ে দিচ্ছে।
খোঁপায় পড়িয়ে দিতে দিতে রূপক বললো-
—“স্বর্ণ তোমার চুলের ঘ্রানের কাছে বেলি ফুলের ঘ্রান ফিকে মনে হয়।
আমার এ হাত বারবার তোমাকে ছোঁয়ার বাহানা খুঁজে বেড়ায়।”
—“এ কবিতা আপনি এখন আমার জন্য বানালেন?”
—“হুম তোমার জন্য বানালাম এটা এখন।আমি কোন কবি ছিলাম না।তোমাতে মুগ্ধ হয়ে আমি যাই বলি তাই কবিতা হয়ে যায়।”
এ কথাটাতে স্বর্নলতা বোধহয় মজা পেয়েছিলো।সে পুরো ১০ মিনিট ধরে হাসলো।আর রূপক তার চমৎকার হাসি মাখা মুখ দেখতে লাগলো।
—“জানো স্বর্ণ আমার বউয়ের হাসি এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাসির মধ্যে একটি হাসি।”
টুং করে আওয়াজে রূপকের ধ্যান ভাঙলো।সে স্বর্ণলতার রূপের প্রশংসায় ধ্যান মগ্ন ছিলো।
ফোন খুলতেই দেখে আরেকটা মেসেজ।এবার তার চোখে মুখে ক্রোধ।
রূপকের এহেন পরিবর্তনে স্বর্ণলতার আনন্দে ভাটা পড়লো।কিছুটা ভীত হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
—“আপনার কি হলো?কিছু হয়েছে?”
—“না স্বর্ণলতা কিছুনা।চলো বাড়ি ফেরা যাক।”
স্বর্ণলতা মনে মনে ভাবলো-
—“সে তো আমাকে সবসময় স্বর্ণ বলে ডাকে।কি এমন হলো সে আমাকে স্বর্ণলতা বলে ডাকলো।স্বর্ণলতা বলে ডাকা কোন বড় বিষয় না কিন্তু আমাকে ভাবাচ্ছে এই জন্যই যে সে তো আমাকে বলেছিলো যদি কোনদিনও তোমাকে ভুলে স্বর্ণলতা ডাকি তাহলে ভাববে আমি কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি।
স্বজ্ঞানে আমি তোমাকে স্বর্ণ বলেই ডাকবো।
তখন আমার সব প্রকার গ্লানি কাটাতে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরবে।
স্বর্ণলতার কি করা উচিত এখন?তাকে কি জড়িয়ে ধরবে?
নাহ্ রাতে যেভাবেই হোক তার ফোন টা একটু চেক করতে হবে।কি এমন মেসেজ আসলো যার জন্য সে এতো চিন্তিত।”
চলবে……..
?️Sharmin Sumi