সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৩+৩৪

0
1702

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৩৩

শ্রেয়া মাথা উঁচিয়ে সদর্পে দাড়ানো পেয়ারা গাছ টার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। বাগানের নিভু নিভু দীপ্তি ও চাঁদের রূপে বড় বড় পেয়ারা ভাসছে অক্ষিপটে। ভালোবাসা বোধ হয় এমনই হয়!প্রিয় মানুষ টা নেই অথচ তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস বিমোচন করছে খোলা প্রকৃতিতে কেউ আড়ালে, আবডালে। কি অতিদারুণ যন্ত্রণা! তাকে চাইলেও ছোঁয়া যাবে না, আঁকা যাবে না চক্ষু ক্যানভাসে শুধুই অনুভব করা সম্ভব। ছুঁয়ে দেখা যাবে তার পছন্দের জিনিসগুলো। শ্রেয়া এক্ষুণি ঠাহর করে হৃদয় মিলে গেলে স্পর্শের প্রয়োজন পড়ে না। দূর হতে দূরে, দু প্রান্তে থেকেও অনুভব করা যায় প্রিয় ব্যক্তিকে। হৃদয়ের মিলন ব্যতীত স্বামী, শশুর, শাশুড়ি, কারো সাথেই সুখে শান্তিতে থাকা পসিবল হয়ে ওঠে না। মনে মন মিললেই তো সুখ। আনতস্বরে,রয়ে সয়ে বললো,

‘ আমি আপনার গাছ থেকে পেয়ারা খেয়েছি বাবা। মিষ্টি ছিল খুব।’

নুরুল চৌধুরী ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করলেন। বললেন,’ জানি মা। আগে কাউকে অনুমতি দিতাম না। পরে একসময় না দিয়ে থাকতে পারলাম না। যার জন্য লাগালাম সে তো কখনও খেতে পারবে না তার চেয়ে অন্যদেরই খাওয়ার সুযোগ করে দিলাম। ‘

শ্রেয়ার ভারী ভালো লাগছে শশুড় মশাইয়ের কথাগুলো। মনের বিষাদ কমেছে এসেছে অনেকটা। আষাঢ়ে প্রকৃতিতে শ্রাবণ হাওয়া বইছে যেন। আবছা আবছা অন্ধকারের নির্মল পরিবেশে মিশে যাচ্ছে ওদের তপ্ত নিঃশ্বাস। বহুদিন কথা বলার মানুষ পায় না ও। কখনো তো কেউ আদুরে ভঙ্গিতে কাছে ডাকে নি। যখন জানলো আজ কেউ ওকে নিজের কন্যার স্থান দিয়েছে মনটা কেমন আহ্লাদী হয়ে ওঠেছে। নুরুল চৌধুরীর বিষাদ মাখা বাক্যগুলোও মধুর লাগছে। ছোট্ট থেকে নিশ্চুপ স্বভাবের মেয়েটা হুট করে বাবার সান্নিধ্য পেয়ে কৌতূহলের সঙ্গে অধিকার খাটায়। নরম গলায় প্রশ্ন করলো শ্রেয়া,

‘ মায়া আম্মা ও তোহাশ ভাইয়ার ব্যাপারে আর বলবেন না বাবা?’
‘ কেন বলবো না মা?আজ আমার মেয়ের কাছে মনের সব জমানো কথা বলবো। বহুদিন হলো কথা শেয়ার করার মানুষ পাই না। ‘

মনের গভীর হতে অনুভূত হলো শ্রেয়ার এ পৃথিবীতে কথা শেয়ার করার মানুষের কত অভাব। দিনের পর দিন কথার ভারে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে কতশত মানব। মুখে না হোক মনে মনে একটা বিশস্ত মানুষ খোঁজে বেড়ায় তারা কিন্তু মিলে না। কেউ বুঝে না। বুঝতে বুঝতে বড্ড বিলম্ব করে ফেলে।

‘ যেদিন থেকে বুঝার বয়স হলো সকাল,সন্ধ্যা অভ্যাস হয়ে উঠলো নিয়ম করে হাঁটার। প্রায় একাই হাঁটতাম। তারপর আমার পথের সঙ্গী হয় মায়া। মেয়েটা কিছু বলত না। চুপি চুপি পা ফেলত আমার সাথে। এ শহরে যখন নতুন আসে প্রায় কাঁদত। বলত,আমার ভয় লাগে নুরুল ভাই। কিছু চিনি না। খারাপ লাগে। আমার স্বভাব পুরোটাই বাজেয়াপ্ত করেছে তূর্য। বলতে পারিস আমি একদম ওর মতোন ছিলাম। মেয়েদের অতিরিক্ত ফ্যাসফ্যাস,অহেতুক কান্না,সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে দুর্বল দেখানো অপছন্দ ছিল আমার। আর স্বার্থপর মেয়েদের ঘৃ*ণার দৃষ্টিতে দেখতাম। প্রথম প্রথম মায়ার এসব আমার বিরক্ত লাগত। কত বার যে মে*রেছি মেয়েটাকে!বার বার বলতাম দুর্বল মেয়েদের আমার পছন্দ না। কিন্তু ও ছিল নাছোড়বান্দা। চলে গেল কিন্তু আফসোস ওকে শেষমেশ স্ট্রং হতে দেখলাম না। এতই দুর্বল ছিল অল্পতেই ছেড়ে চলে যায় আমাদের। তোহাশকে জন্ম দিতে গিয়ে মৃ*ত্যু হয় ওর। তবে একদিক থেকে ও জিতে গেছে জানিস?নিজের নিরব স্বভাবে হারিয়ে গেছে আমাকে। তুই কখনও দু বিনুনি করেছিস?মায়া করত। ভীষণ ভালো লাগত ওকে।

তোহাশকে রেখে চলে যায় মায়া। কত হাত জোর করে ওর বাবা মাকে মানিয়ে আমার বউ করে ঘরে তুলেছিলাম। মন শুধু বলত,মায়া থাকবে না,কিন্তু ওর মায়া শেষ নিঃশ্বাস অবধিও কাটবে না। হলো ও তাই। এখনও কাটে নি। তোহাশের মা মা বুলিতে এবং মায়ের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে চৌধুরী বাড়িতে আনি মেহরিমাকে। মেহরিমা মনের দিক থেকে খারাপ না। খারাপ হলে সৎ মা হয়েও বুকে আগলে নিত না তোহাশকে। নিজের সকল সুখ ত্যাগ করে সারাক্ষণ আমাকে জিজ্ঞেস করত,তোহাশ কিসে খুশি হবে,কি করলে হাসবে। নিজের সন্তান গর্ভে নিয়েও জীবন বাজি রেখে তোহাশের প্রাণ রক্ষা করেছে। তূর্য তখন ওর গর্ভে। নয় মাসের গর্ভবতী হয়ে বাড়িতে কেউ না থাকায় তোহাশকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি তে মুখ থুবড়ে পড়ে মেহরিমা। ছেলেটার পেট ব্যাথা করছিল। কোনো ক্রমেই কমছিল না। আমাকে ফোন দেয় অনেকবার। আমার প্রতীক্ষায় না থেকে মেহরিমা নিজেই ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুট লাগায়। কিন্তু যেতে আর পারে না। উল্টো নিজে প্রাণ খোয়াতে বসে। তুই বল মা যেই মেয়ে সতীনের ছেলেকে নিজের গর্ভের সন্তানের চেয়ে অতি আদর যত্নে বড় করেছে সে কখনও ওই সন্তানের খারাপ চাইতে পারে?কখনও সতীনের ছেলে ভেবে অন্যায়,অবিচার করতে পারে?

নুরুল চৌধুরীর কাতর কন্ঠস্বরে রোদনের ছাপ বিশদ। শ্রেয়া নির্বাক,স্থবির। ও কি ভেবেছিল মেহরিমাকে,প্রকৃতপক্ষে সেই নারী কেমন বের হলো?ওনার মনটা হয়ত একদিনে কঠোর হয় নি,নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে।

‘ তোর মতোই এতিম একটা মেয়েকে ভালোবেসে গোপনে বিয়ে করে তোহাশ। মেয়েটার নাম আরিয়ানা। ওর গোপনে বিয়ে করার বিষয়টা আমাদের সবাইকে কষ্ট দেয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে জানায় এতিম বলে যদি পরিবার না মেনে নেয় তাই। যাক মেয়েটাকে সম্মান দিয়ে ওর চাচার বাড়ি থেকে নিয়ে আসি। প্রথম ক’দিন সবকিছু ভালো কাটলেও হঠাৎ খেয়াল করলাম মেহরিমা প্রায় মনমরা হয়ে বসে থাকে। জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয় না। আমি তো সারাদিন বাড়িতে থাকি না। তোহাশও আমার সাথে অফিসে থাকে। তূর্য ও আয়ুশও সারাদিন বন্ধুদের সাথে ঘুরেফিরে আড্ডা দেয়,ইচ্ছে হলে বিজনেসে একটু আধটু মনোযোগ এই আরকি!দিনে দিনে বুঝতে পারছিলাম সংসারে কিছু একটা নিয়ে অশান্তি হচ্ছে। তোহাশও মেহরিমার সঙ্গে ঠিকঠাক কথা বলে না। এড়িয়ে চলে। যেই ছেলে মায়ের হাতে খাওয়ার পাগল ছিল তাকেই দেখি একবার সকালে নাস্তার টেবিলে মেহরিমার বানানো খাবার স্পর্শ পর্যন্ত করলো না। মা ও ছেলে একে অপরকে না দেখে থাকতে পারত না অথচ বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় এমন মনোমালিন্য সন্দেহ লাগে আমার। পরে মায়ের কাছ থেকে জানি,আরিয়ানা নাকি সারাক্ষণ বলে ওর আপন শাশুড়ি নেই বলে মেহরিমা ওকে ভালো চোখে দেখে না,এতিম বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। খাবার খেলে নাকি খোটা দেয়। ওকে ঠিকমতোন ভার্সিটিতে যেতে দেয় না এগুলো বলে তোহাশের কাছে। এ নিয়ে আমার ও তূর্যর অনুপস্থিতিতে তোহাশ মেহরিমার সঙ্গে ঝামেলা করে। মায়ের চেয়ে অতিরিক্ত বিশ্বাস করে বসে বউ কে।

একটা ছেলের নিজের মা এবং স্ত্রী দু’জনের প্রতিই সম্মান, দায়িত্ব পালন করা উচিত। তাই বলে বিনা সত্য জেনে কারো পক্ষপাতিত্ব বা কষ্ট দেওয়া ঠিক না। আরিয়ানা এসেছে মাত্র কয়েকদিন কিন্তু মেহরিমাকে আমি বছরখানেক ধরে দেখেছি। যাকে এতিম, সহজ সরল ভেবে একটা সংসারের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলাম সেই মেয়েই তছনছ করে দিল সবকিছু। মা ও ছেলের মাঝে রক্ত,আপন পরের পার্থক্য টেনে আনে। মেয়েটা রূপে সুন্দর ঠিকি কিন্তু তোর মতো সুন্দর মনের হয় নি। ভাবত ছোট ছেলেকে সব দিয়ে দিব,বড় ছেলেকে সম্পত্তি কম দিব। প্রত্যেক ঘরে যা হয় আরকি!আমাকে একবার বললেই হতো কিন্তু না বলে আমার পরিবারের ভাঙন ধরায়। মা, ছেলের বিচ্ছেদ ঘটায়। এভাবে চলতে চলতে ওদের বিয়ের তিন মাসের মাথায় একটা বড়সড় কান্ড ঘটে যায়। আরিয়ানার মিসক্যারেজ হয়। দো’ষ পড়ে মেহরিমার উপর। আরিয়ানা নাকি তোহাশ কে জানায় মেহরিমা খাবারে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। খাওয়ার পরেই এমন হয়েছে। সেদিন বাড়িতে তূর্য সহ সকলে থাকায় একটা হুলস্থূল কান্ড বেঁধে যায়। আরিয়ানা কে হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তোহাশ। মেহরিমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে ঘৃ*ণার চোখে তাকিয়ে বলে,

সতীনের ছেলে বলে এমন করলেন?নিজের ছেলের বউ হলে পারতেন?তূর্যর বউয়ের সাথে এমন করবেন আপনি?বাচ্চা মে’রে ফেললেই নিজের অংশ ছেড়ে দিব ভাববেন না। কেন মা’রলেন আপনি আমাদের বাচ্চা টা কে নিকৃষ্ট মহিলা? বাচ্চাও সম্পত্তির ভাগ পেয়ে যাবে তাই?সহ্য হতো না আপনার?

আমি পেপার পড়া বন্ধ করে রুম থেকে এসে গম্ভীর স্বরে ডাকি কেবল তোহাশকে। ও সাথে সাথে আমাকে এমন একটা কথা বলে তক্ষুনি আমার হৃদপিণ্ড টা দু ভাগ হয়ে যায় মা। ভুলে যায় আমি সকল সুখ। ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে পড়ে আমার শরীর টা। কানে বাজে ওর কথাগুলো, ‘ আপনিও যোগ আছেন এই মহিলার সাথে। নয়ত এত শাসন করেন কিভাবে তিনি এ বাড়িতে। বুঝিয়ে দিলেন,বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে দ্বিতীয় বউয়ের গোলাম হয়ে যায়। প্রথম বউয়ের সন্তানের কথা মাথায় থাকে না,দ্বিতীয় নারীর মোহে পড়ে। ‘

ওর সেই বিষাক্ত বাক্যগুলো শুনে আমি কিছু না বললেও তূর্য সহ্য করতে পারে না। যেই ভাইকে সম্মান করে এসেছে সব সময়, রাগে কষ্টে তার কলার চেপে ধরে। গর্জে ওঠে ছেলেটা। কিন্তু তোহাশ ওকেও দুমড়ে মুচড়ে দেয়। বলে,’ তুইও মিসেস মেহরিমার মতোই। আমাকে আরিয়ানা জানিয়েছে বাসায় একা পেলে ওকে কিভাবে রাগ দেখাতি,এতিম বলে অবজ্ঞা করতি। নিজের বউয়ের প্রাণ রক্ষা করতে হলে তোদের সাথে আর থাকা যাবে না। তাই বলে ভাবিস না আমার ভাগের সবটা একা ভোগ করবি। ‘

ব্যাস চলে গেল তোহাশ। আমি ওকে আটকায় নি। মেহরিমা চেষ্টা করেছে। তূর্যর একটাই ক্ষোভ আমার প্রতি কেন আমি ওকে আটকালাম না। ওর মতে,সন্তান ভুল করলেও বাবা মা কেন দূরে ঠেলে দিবে?নুরুল চৌধুরী কি তাহলে পারফেক্ট বাবা হতে পারে নি?এতো ইগো?কিন্তু আমি ওকে বুঝাতে পারি নি কিভাবে ভেঙেছে তোহাশ আমাকে। কখনও আর ওদের অশান্তির কারণ হতে চাই নি। আড়ালে খোঁজ রেখেছি। তূর্য প্রকাশ্যেই রাখে। আমি বুঝি ওকে। সে চাইছে তোহাশের মন থেকে মেহরিমার প্রতি ঘৃ*ণা দূর করতে,বুঝাতে এই পরিবার কখনও ওর খারাপ চায় নি। সৎ হলেই যে সবাই খারাপ তা না। আমার গম্ভীর, বদমেজাজি,রগচটা ছেলের ধৈর্য্য ধরে এই নিরব প্রচেষ্টা বরাবরই মুগ্ধ করে আমাকে। এক কালে কত মা’রপিট করতো। কারো কটু কথা তূর্য নিতে পারে না। দিন দুয়েক না কাটতেই বিচার আসত আমার কাছে। অথচ বড় ভাই কষ্ট দিলেও মুখ ফেরাতে পারে নি।
সংসার সুখে পরিপূর্ণ হতে পারে না?সব মানুষ এক মনের হতে পারে না?কারো কারো ভেতরকার রূপে এত হিংসার মিশ্রণ! মেহরিমা তোর প্রতি প্রথমবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রুদ্ধ। ওর ভয় তুইও আরিয়ানার ন্যায়। তবে বিশ্বাস সেও বুঝে যাবে তোর মন টা। কষ্ট পাস না।

শ্রেয়ার দৃষ্টি পায়ের তলায় সারি সারি বেঁধে উঁচিয়ে থাকা দুর্বাঘাসগুলোর দিকে নিবদ্ধ। আমাদের সমাজে পার্থক্য মানুষ নিজেই গড়ে তুলে। বিষ ছড়ায় একটা ভালো সম্পর্ক দেখলে। সবাই এমন না আবার কেউ কেউ এমন। শ্রেয়া এখানে তোহাশের দো’ষ খুঁজে পেল। অন্ধবিশ্বাসে সে যে কত মূল্যবান মানুষদের হারিয়েছে তা হয়ত আজ হারে হারে টের পাচ্ছে। সকল নারী সংসার গড়ে না,কোনো কোনো নারী ভাঙে। তার বাস্তবচিত্তের উদাহরণ আরিয়ানা। নুরুল চৌধুরী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,

‘ চল। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমাবি। ‘
ধরা কন্ঠে জবাব দেয় শ্রেয়া,’ জি বাবা। চলুন। ‘

নুরুল চৌধুরীর বুক টা ভার মুক্ত হলো যেন। নিঃশ্বাস ফেলতে আর কষ্ট হচ্ছে না ওনার। এখন মনটা শেষ বেলায় হলেও বড় ছেলের সান্নিধ্য চায়। সকল ভুল ঝোঁক ভুলে আবারও শক্তপোক্ত একটা পরিবার চান তিনি। দরকার পড়লে আরিয়ানার দু হাত জোর করে একটু মিলেমিশে থাকার দাবি করবেন। হয়ত মেয়েটা কিঞ্চিৎ হলেও পরিবর্তন হয়েছে। ওনার একটাই চাওয়া খাটিয়া টা দুই ছেলের কাঁধে উঠুক।
_________________

সমুখে একটা দুয়ার। সেই দরজা টপকিয়ে দেখা পাবে ও কাঙ্ক্ষিত মানুষ টার। মন টা ভীরু ভীরু। হাত একবার উঁচিয়ে তুলছে তো আবার নামিয়ে নিচ্ছে। শঙ্কায় বুকটা কেমন ফুলে ফুলে উঠছে। হাসফাস লাগছে সবকিছু। অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করলো না শ্রেয়া। চেপে ধরলো কলিংবেল। সঙ্গে সঙ্গে দরজা টা খুলে যায়। সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটা ভ্রুঁ যুগল কুঁচকে তাকায় ওর দিকে। চাহনি তীক্ষ্ণ। ভীষণ ধারালো। এখনও কি রেগে আছেন তিনি?শ্রেয়া রিনঝিনে কন্ঠে বলে উঠলো কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে,

‘ একটা ডিম হবে?’
গম্ভীর কন্ঠের প্রতুত্তর আসে–‘ আদর হবে। চলবে?’

শ্রেয়া ভড়কে গেল। ওড়না মুচড়ে ধরতেই তূর্য ওকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে। ধপাস করে লাগিয়ে দেয় দরজাটা। পরক্ষণেই সেটার সাথেই মিশিয়ে দিল শ্রেয়ার দেহ খানি। আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ ও। চোখ জোড়া উপরে তোলার পূর্বেই তূর্য বাঁকা হেসে বলে উঠলো,

‘ আমার বউ নিজের ঘরেই পাশের বাসার ভাবীদের মতো ডিম খোঁজছে। এখন কি আপনার ডিমই লাগবে?আদর কিন্তু ডিমের চেয়েও পুষ্টিকর। সো এটাই দিব নাকি আজও বাঁধা দিবেন?’

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৩৪

নেত্রযুগল উঁচানো হলো না আর শ্রেয়ার। সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে যায়। তূর্য তাহলে সত্যিই সত্যিই সেই মুহুর্তের রেশ ধরেই রেগেমেগে চলে এসেছে। ভাবনা কি নিছক নয়?ওর বাঁধা দেওয়াতে হয়ত একটু বেশিই আহত হয়েছে মানুষ টা। নয়ত এমন করে খোঁচা মা’রত আজ?

আলোকশূণ্য আঁধারিতে সেদিন তূর্য ওর এতই সন্নিকটে আসে যে অবলীলায় উভয়েই একে অপরের হৃদস্পন্দন মেপে নিতে পারে। ধীরে ধীরে শ্রেয়ার অনুভূত হয় পেটে রাখা হাত টা মৃদু মৃদু চাপ সৃষ্ট করছে। বাড়িয়ে তুলছে ভিতরের অস্থিরতা,গতিহীন অনুভূতিদের। কাঁধ হতে আঁচল টা কিঞ্চিৎ সরতেই মনে মনে জন্ম নেওয়া বাক্য টা বাস্তবায়ন করে শ্রেয়া,’ এটা কি মোহ স্যার?’

নিস্তব্ধ কক্ষে আরো কঠিন নির্জীব ভাব চলে আসে প্রশ্নটা শ্রেয়ার নিচু স্বর হতে বেরিয়ে আসতেই। তূর্য বিনা বার্তায় সরে যায়। মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে হাত মুঠো করে জিজ্ঞেস করে,

‘ তোমার এটা মোহ লাগলো?

কন্ঠে প্রবল ক্ষোভ, জেদ,রাগের সংমিশ্রণ। তার সঙ্গে আরও একটা জিনিস রয়েছে এবং তা হলো তাচ্ছিল্য ভাব। একে অভিমান নামক শব্দে রূপান্তরিত করলেও খুব একটা ভুল বলে বিবেচিত হবে না। শ্রেয়া এমন করে প্রশ্নটা করতে চায় নি। কিভাবে যে মুখ ফোটে বেরিয়ে এলো তাতে ও নিজেই বিমূঢ়, হতবাক। অল্পস্বল্প, আবছা আলো তে কেঁপে কেঁপে ওঠে ওর কন্ঠনালি,

‘ আপনি ফুলশয্যার রাতে যেসব বলেছিলেন সেগুলো সত্য নাকি এখন যা হচ্ছিল সেগুলো ভুলবশত, আমি বুঝতে পারছিলাম না। ‘

‘ তোমার মতো গাধা বিয়ে করে আজ, এক্ষুণি আরো একবার পস্তালাম। আগে পাগল ছিলাম,সামনেও আবার হতে হবে মনে হচ্ছে। আমি কি নে’শা-খোর যে মাতাল হয়ে কিংবা ভুল করে তোমার কাছে যাবো?অন্য কোনো মেয়ে হলে হাবভাবে, কথার ধরনে এতদিনে সব বুঝে যেত। ঘুমাও। এখন যদি না ঘুমিয়েছ তাহলে পঁচা পানিতে ডুবিয়ে বুদ্ধি বাড়াবো। বেক্কল,গাধী। এই মেয়ে কটা প্রেম করেছো জীবনে? ‘

‘ একটাও না। ‘– বিরস মুখে উচ্চারণ করে শ্রেয়া।

‘ প্রেম করো নি ভালো কথা। মানলাম আমার সাথে প্রেম করার দৃঢ় ইচ্ছে তোমার। তাও বেশ সুন্দর বিষয়। কিন্তু রসায়নে এত কাঁচা হলে চলে?ভিতরে ভিতরে ভালোবেসে ম’রছো, উল্টো স্বামীকে দূরে সরিয়ে দিলে। আমার এতদিনকার কান্ডকলাপে আমাকে অনুভব না করে সবটা মোহ বলে চালালে। ইচ্ছে করছে কষিয়ে থাপ্পড় মা’রি। কিন্তু বউকে মা’রা যাবে না। কষ্ট হলেও সহ্য করতে হবে। ‘

কথাগুলো বলে বেলকনিতে চলে যায় তূর্য। শ্রেয়া সেদিকে চেয়ে থাকে এক দৃষ্টে। কখন দু চক্ষে ঘুম নামে টের পায় না। তবে সকালে ওঠে তূর্যর চলে যাওয়ার বিষয়টা ভাবায় ওকে। দূরত্বে ও বুঝে তূর্যর গাঢ় অভিমানে বলা প্রত্যেক টা বাক্য। পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনও কখনও ছোট্ট একটা প্রশ্নও তীক্ষ্ণ আ-ঘাত হানে কারো কারো অন্তঃস্থলে। শ্রেয়া তো অনুভব করেছিল হৃদয়ের মিলন তবুও কেন থেকে গেল এত সংশয়। তাহলে অনুভূতি কি পরিপূর্ণ ছিল না?

লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ও। ক্ষুদ্র স্মৃতিচারণের অন্ত করে। তূর্য ততক্ষণে দূরত্ব ঘুচিয়ে আরও নিকটস্থে এসে দাঁড়িয়েছে। শ্রেয়া আজ জানে মানুষ টা শুরু থেকেই ওকে চায়। অতিরিক্ত চায়। শুধু তার প্রকাশের ধরন টা ত্যাড়া বাঁকা। তন্মধ্যে তূর্য কড়া কন্ঠে বলে ওঠে,
‘ কি ভেবেছিলে বাঁধা দিয়েছো বলে রেগে চলে এসেছি? তাই মনমরা হয়ে থাকতে সারাক্ষণ?ঠিক মতো না খেয়ে শুকিয়ে হাড্ডি। আমি একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেই তো তোমার সকল হাড্ডি মটমট করে ভেঙে যাবে। ‘

অতীব বিস্ময়াবিষ্ট শ্রেয়া। এ লোক কেমন করে জানলো ও মনমরা থাকত সর্বক্ষণ? এসব রহিমা খালা বলত নাতো?তাহলে ওনার যোগাযোগ থাকত রহিমা খালার সাথে?কিন্তু একটা থেকে যায়। বাড়ির বাদ বাকি কারোর সঙ্গে কেন কথা বলত না?এমনকি আয়ুশের সঙ্গেও না। নাকি স্রেফ ওর সাথেই যোগাযোগ করে নি?প্রচুর পরিমাণে প্রশ্নের জোয়ার শ্রেয়ার অন্দরমহলের ছোট্ট সমুদ্রে। তবে সাহসের অত্যধিক অভাব বোধ করছে ও। কারো সান্নিধ্যে এমনতর ঘটে না। শুধুই এই এক পুরুষের সামনে ভয় ভয় হয়ে ওঠে সবকিছু। স্বাভাবিক গলায় বললো,

‘ আপনি আমার উপর রেগে আসেন নি?’
‘ না। ‘
তূর্য গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিয়ে সোফায় গিয়ে বসে। শ্রেয়া এতক্ষণে শ্বাস ফেলতে মোক্ষম সুযোগ পায়। গুটি গুটি, টালমাটাল পা ফেলে সোফার কাছে এসে দাঁড়ায়। তূর্য মাথা এলিয়ে চক্ষুদ্বয় বুঁজে আদেশ স্বরুপ গলায় বললো,’ বসো। ‘

শ্রেয়া সামনের সোফায় বসে। ওর মনের বিষন্নতা কেটে গিয়েছে তূর্যর তার প্রতি কোনো রাগ নেই শুনে। তবে চলে কেন এলে?কিছু একটা তো হয়েছে। এ নিয়ে ওর মনের পাতায় খচখচ আওয়াজের সৃষ্ট হচ্ছে বারংবার।

‘ এলে সেই দুপুরে,আর আমার কাছে আসলে বিকেলে?পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন?’

শ্রেয়ার বলতে মন চায়,’ আর প্রস্তুতি?কবে আপনার চেহারা টা দেখবো,গায়ের গন্ধ নাকে মাখবো,গম্ভীর স্বরের আওয়াজ শুনবো সেই চিন্তায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল প্রতিনিয়ত। ভালোবাসা খুব খারাপ স্যার। তার চেয়েও খারাপ আপনি। আঠারো বছর বয়স থেকে প্রেমে ফেলে দিনের পর দিন হেঁয়ালিপনা। ‘

একটা কথাও শ্রেয়ার মন ভেদ করে কন্ঠনালি পর্যন্ত আসলো না। সংকোচ জড়তা লজ্জা কাটিয়ে এবার আঁখি যুগল মেলে ধরে তূর্যর পানে। সঙ্গে সঙ্গে ভেতর টা আঁতকে উঠলো। মোচড় দিয়ে উঠলো অন্তর। চোখের সম্মুখে ভাসছে তূর্যর হাতের সাদা ব্যান্ডেজ টা। বসা থেকে ওঠে ব্যগ্র কন্ঠে প্রশ্ন করতে লাগল,
‘ আপনার হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেন?কি হয়েছে? স্যার?’

তূর্যর কপালে ভাঁজ পড়লো। নড়চড় হলো না বিন্দু মাত্র। শুধু হাত বাড়িয়ে ডাকলো,’ এদিকে এসো। ‘

শ্রেয়ার কষ্টে বুক ফেটে জলবিন্দু বেরিয়ে আসবার উপক্রম। চক্ষু কোলও ভিজে ভিজে ওঠেছে। একটু কাছে আসতেই তূর্য হাত টেনে পুরো দেহ টা নিজের বক্ষে চেপে ধরলো। পুতুলের ন্যায় পড়ে আছে শ্রেয়া। ওকে ঠিকঠাক নিজের সাথে জড়িয়ে একপাশে বসালো তূর্য। ঘাড় হেলিয়ে কন্ঠে কাঠিন্য ভাব এনে বললো,

‘ তোমার চোখে পানি জমেছে কেন?কান্না ভীষণ প্রিয় নাকি আমি?যদি আমি হই তবে তুমি কাঁদতে পারবে না। কারণ তোমার ওই চোখ দু’টি আমার প্রিয়। প্রথমবার তোমার প্রতি সন্দেহ জাগিয়েছিল এ কাজলমাখা আঁখি দু’টো। মনে আছে?বাড়িওয়ালার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান? সেদিনই তোমার চোখে গভীরভাবে তাকিয়ে ফেলি অনিচ্ছা সত্ত্বেও। হয়ত আল্লাহ এটাই চেয়েছিলেন। তা নাহলে বউকে খুঁজে বের করতাম কিভাবে?তোমার ছোট বেলার ছবিতে চোখ গুলো বেশ আকর্ষণ করে আমাকে। সেদিন ছাঁদে তোমার দুই চোখ ভালো করে না দেখলে এখনও বউ খুঁজতেই থাকতাম। অথচ বউ আমার পাশেই থাকত,কাছাকাছি এসে নিঃশ্বাস ফেলত নিঃশব্দে। ‘

শ্রেয়ার বুক চিরে তীব্র আর্তনাদ আসতে চাইছে। ঘুরেফিরে দৃষ্টি তূর্যর ব্যান্ডেজ মোড়ানো হাতের দিকে গিয়ে থামছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ছুঁয়ে দেয় সেই স্থান। তূর্য বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো,

‘ সামান্য তে ভেঙে পড়ো কেন? এটা ছোট্ট একটা এক্সিডেন্টে হয়েছে। লুক এট মি। আ’ম ফাইন। ডিমের বাহানায় ছুটে আসলে আমাকে দেখতে,তা না করে ফ্যাচফ্যাচ করছো। আদর পাওয়ার জন্য ইশারা?’

চট করে হাত সরিয়ে নিয়ে আসে শ্রেয়া। লজ্জায় তবলা বাজছে শ্রবণগ্রন্থিতে। এই মানুষ টা ওর সব ভাবনা বুঝে যায়। মিহি স্বরে বললো,

‘ সত্যি ঠিক আছেন?’
তূর্য এটার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,
‘ প্রিয়ু কোথায়?’
‘ আছে,বাসায়ই। ‘
‘ তুমি কি ওর সাথে থাকবে?’
‘ ও তো একা স্যার। ওখানেই থাকি?’
‘ বউ থাকতে একা থাকবো?ইম্পসিবল। প্রিয়ুসহ এই ফ্ল্যাটেই থাকবে। ওটা ছেড়ে দিতে বলবো। রাতে রেডি থেকো দু’জন। বাহিরে যাবো। ‘
শ্রেয়ার এতক্ষণে একটা কথা মনে পড়ে গেল। তড়িঘড়ি করে বললো,
‘ বাবাকে ফোন দেন না কেন?উনি কথা বলতে চায় আপনার সাথে। ‘
তূর্যর ক্ষিপ্র চাউনিতে মিইয়ে যায় ও তৎক্ষনাৎ। ধ্বক করে ওঠে বুক টা। পাশে বসা মানুষ টার নির্বিকার, নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি,
‘ আমি চাই না। ‘
কিঞ্চিৎ সাহস জোগালো শ্রেয়া। সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
‘ উনি আপনার বাবা। আপনার ক্ষোভ টা ওনার প্রতি কতটুকু যুক্তি সঙ্গত একদিন বাবা হলে ঠিক বুঝতে পারবেন। ‘

তূর্য ফিচেল হাসলো। অসম্ভব সুন্দর সেই হাসি৷ নিমেষে কোমরে দৃঢ় বাঁধন অনুভব করে শ্রেয়া। নিজেকে আবিষ্কার করে তূর্যর মুখের কাছাকাছি। তূর্যর নেত্রের চাহনি প্রগাঢ়, নির্নিমেষ। আরেকটু নিজের সঙ্গে চেপে নিয়ে লহু স্বরে বলে উঠলো,

‘ তাহলে বাবা বানিয়ে দাও। ‘

ঝক্কি দিয়ে ওঠে শ্রেয়ার সমগ্র কায়া। সেকি ভুল শুনলো?কম্পনের তাড়নায় তূর্যর গলার পিছনে গলিয়ে রাখা হাতের বাঁধন শক্ত করে। তূর্য ওর ওষ্ঠের সন্নিকটে ঠোঁট দুটো নাড়ালো। কন্ঠটা মাদকতায় ভরপুর,

‘ এখান থেকেই তাহলে বাবা হওয়ার প্রসেস টা শুরু হোক। ‘

যতক্ষণে কথাটা কর্ণে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে ধারণ করেছে অত্যন্ত বিলম্ব হয়ে যায়। শিরায় শিরায় বইতে থাকে দমকা হাওয়া। না চাইতেও নখ বিঁধিয়ে দেয় তূর্যর ঘাড়ে। প্রথম ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়া আজ ওর দুই অধরে। সেই স্পর্শর প্রখরত্ব ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নিয়ন্ত্রণহারা স্পন্দনেরা।

তূর্য ঠোঁটের দীর্ঘ আলিঙ্গন শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। রক্তিম মুখ খানা লুকালো শ্রেয়া সোফার উপর। এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে এসে তূর্য ফের পাশে বসলো। নরম গলায় বললো,

‘ মুখ তুলো। পানি খেয়ে ভালো করে শ্বাস নাও। ‘

#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here