সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ২৩+২৪

0
1807

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___২৩

শ্রেয়ার নিশ্চল চাহনি আয়নার দিক। কথার স্বাধীনতা কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গেল। বিশদ বর্ণনা দিচ্ছে কামড়ের দাগ টা। কারো কাছে আসার, তীক্ষ্ণ দাঁতে ওর কোমল ত্বক ছুঁয়ে যাওয়ার বিবৃতি। দৃষ্টির নড়চড় হলো। আরেকটু গাঢ় দৃষ্টে আঁখিপাত করতেই চক্ষুগোচর হয় রঙ লেপন। রক্ত জমাট বেঁধে লালের প্রলেপ পড়েছে কামড়ের অংশে। এতক্ষণে মনে পড়ে যায় এই কারণবশত গোসলের সময়টাতে পানির সংস্পর্শে গলার নিচের অংশে জ্বালা করছিল অত্যধিক। কিন্তু মাথায় সহস্র চিন্তার বিচরণ ছিল বলে খেয়ালই করে নি।

তাছাড়া আরেকটা কথা মন পিঞ্জিরায় বন্দি হতেই অন্তস্থল কেঁপে উঠে শ্রেয়ার। ভোর হবে নাকি গহন রাত্রি ওর সঠিক জানা নেই তবে হঠাৎ করে তীব্র ব্যাথা অনুভব করেছিল ঘুম ঘুম অবস্থায়। কিন্তু চোখের পাতায় যে আঁধার ছেয়েছিল তা সরিয়ে দেখা হয় নি আর কিছুই। তারপর কি হলো,কে কামড় দিল তাতে এখন বেশ সন্দিহান সে। ছোটকাল থেকেই গাঢ় ঘুমের অভ্যেস। কক্ষে হাজারো শব্দ খেলা করলেও সহজে ঘুম টা ভাঙ্গে না। অভ্যাসবশত পূর্ণ হলেই আপনাআপনি জেগে ওঠে ও, নয়ত অন্য কারো সাহায্যে। পরিণামে জ্বলন,বেদনা ভুলে ঘুমে মাতাল হয়ে পড়ে।

হুট করে মাথায় চেপে বসে তূর্যর নাম খানা। শত শত অনুভূতিতে থমকে যায় শ্রেয়ার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া প্রক্রিয়া। চোখের দৃষ্টি নিম্নে মেলে ধরে জোরালো নিঃশ্বাস ছাড়ে। না কখনোই তূর্য এমন করবে না। সে তো তাকে প্রেমের চক্ষে আঁকে না,কেবল মর্যাদা দেয় স্ত্রী রূপে। নিজ থেকেই কথার তালে বুঝিয়ে দিয়েছে স্পষ্টত প্রেম মিশিয়ে না ছুঁইয়ে কাছে টানবে না কখনও। যা হবে,যা করবে তা শুধু, শুধুই স্বামীর দায়িত্ব পালনে। কোনোকালেই স্বামী রূপে প্রেমিক হয়ে উঠবে না। কিন্তু! এই দাগের উৎপত্তি কোথা থেকে তা-ই ঠাহর করতে পারছে না ও।

প্রিয়ু পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ভ্রুঁ নাচিয়ে, উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,’ আমার খুব ভালো লাগছে। উল্টো বাসর রাতে চিন্তা করছিলাম স্যার তোকে সম্পূর্ণভাবে মেনে নিবে কি-না!এখন অনেক অনেক শান্তি লাগছে। আমরা ভাগ্যবতী শ্রেয়া। দু’জনেই দু’টো সুদর্শন,প্রেমিক পুরুষ পেয়ে গেলাম। দুই বান্ধবী এখন জা। ‘

প্রতি উত্তরে শ্রেয়া ম্লান হাসে। সতর্কতার সহিত ঢেকে নিল ক্ষত স্থানটি। পাছে যদি কারো চোখে পড়ে যায় সেই জন্য। ভেজা চুলগুলোর উপর ঘোমটা জড়িয়ে নেয়। কন্ঠ নরম,তেজহীন,

‘ একটু শরম কর প্রিয়ু। রাতারাতি কেমন নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছিস।’
‘ জামাই করে দিয়েছে। ‘– প্রিয়ুর নির্বিকার অভিব্যক্তি।

শ্রেয়ার চোখ ছানাবড়া। প্রিয়ুর কথাতে নয়,দরজায় দাঁড়ানো আয়ুশীকে দেখে। মেয়েটা শুনে ফেলেছে বোধহয়!কেমন মিটমিট করে ঠোঁট যুগল চেপে হাসছে। গলা ঝাড়ল ও। আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে উঁচানো স্বরে ডাকে,’ ওইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?আসো।’
আয়ুশীর আনন্দিত গলা ও নির্লিপ্ত জবাব,’ ভাবী দের গোপন কথা শুনছিলাম। ‘

প্রিয়ু ও শ্রেয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়। আয়ুশী ওদের দু’জনের এক হাত করে দু হাত টেনে ধরে বললো,’ মা নিচে নিয়ে যেতে বলেছে তোমাদের। নাস্তার টেবিলে উপস্থিত হতে হবে তিন মিনিটে। চলো, চলো। ‘

অবনত মস্তকে প্রিয়ু,শ্রেয়া নিচে আসে আয়ুশীর সঙ্গে। মাথা উঠিয়ে দেখার সাহস পাচ্ছে না। শ্রেয়ার ভয় করছে,সবাই কিরূপ ব্যবহার করবে ভাবছে। বিশেষ করে তূর্যর বাবার কথা চিন্তা করছে। সবার সঙ্গে পূর্বে একটু আধটু কথা হলেও ওনার মুখোমুখি কখনও হয় নি সে। দেখে গম্ভীর ধাঁচের লোক তা আঁচ করে ফেলে। ত্রিহার কন্ঠস্বরের আওয়াজে হেঁটে ডাইনিং টেবিলের কাছাকাছি আসল। সালাম দিল সবাইকে উদ্দেশ্য করে। কে আছে,কারা আছে দেখে নি শ্রেয়া। তবে আন্দাজ করে নিল সকালের খাবার টাইমে অবশ্যই পরিবারের প্রত্যেক সদস্য থাকবে। গমগমে স্বরে কেউ একজন ওর সালামের জবাবে দেয়। বলে,’ বসো। ‘

কন্ঠটার সাথে আগে কখনও পরিচিত হয়েছে বলে মনে হয় নি শ্রেয়ার। জড়তা সংকোচ নিয়েই দৃষ্টি তুলে তাকায়। প্রথমে অবলোকন করে নুরুল চৌধুরীর চেহারা। তৎপরে দেখে,ওনার পাশের চেয়ারেই ওনার অর্ধাঙ্গিনী মেহরিমা চৌধুরী। সালামের জবাব টা নুরুল চৌধুরীই দিয়েছেন বুঝতে বেগ পোহাতে হলো না ওর। ত্রিহার তাড়াতে চেয়ারে বসতেই,ওর পাশের চেয়ার টেনে বসল তূর্য।
‘ আজকালকার মেয়েরা স্বামী ছাড়াই খেতে বসে যায়। বাহ!এটাও শিখাতে হবে আমার। ‘

আচমকা গাম্ভীর্য মিশ্রিত স্বরে চাপা কথায় ঘাড় আলতো বাঁকিয়ে চাইল শ্রেয়া। তূর্য প্লেটে পরোটা নিয়ে একটু একটু ছিঁড়ে খাচ্ছে। চোখে মুখে গম্ভীরতা। একবারও ফিরে তাকাচ্ছে না। এখন যেন খাওয়াটাই অতীব জরুরী৷ অথচ সেকেন্ড সময় আগেই একটা বাক্য শুনিয়ে দিল। এই ছেলের মতিগতি বুঝতে যদি কোনো ক্লাস করানো হয় তাও নির্দ্বিধায় মনোযোগ সমেত করবে ও।
_______

শ্রেয়া নিজের প্লেটে শশুড় কে পরোটা তুলে দিতে দেখে থমকে যায়। স্তব্ধ হয়ে পড়ে চোখ জোড়া। নুরল চৌধুরী আরো একটা পরোটা দিয়ে বললেন,’ খাবার টেবিলে মনোযোগ সহকারে খাবার খাওয়া উচিত। খাও। ‘ কখনও ভাবে নি ও যেচে কথা বলবেন তিনি। সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবার উৎসুক দৃষ্টি ওর দিকেই নিবদ্ধ, কেবল দুটো মানুষ বাদে। প্রথমজন তার স্বামী ও দ্বিতীয়জন শাশুড়ী। মেহরিমা তাকিয়েছিল এক পলক তবে সেটা ছিল তীক্ষ্ণ,রোষপূর্ণ চাউনি।
অল্পস্বল্প খেল ও। পেট টা গুড়গুড় শব্দ সৃষ্ট করছিল বারংবার। কারো কর্ণকুহর হবার আগে দমানোর জন্য পেটে পরোটা চালান করে। সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ও। রহিমা পান খাওয়া লালচে দাঁতগুলো প্রদর্শন করে বললো,’ বসার ঘরে চলো নতুন বধূ। বড় সাহেব তোমারে কি যেন কইব। ‘

শ্রেয়া ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বুকটা কেঁপে উঠে। দ্রিমদ্রিম শব্দ তুলে। না জানি কি বলেন নুরুল চৌধুরী!ছোট ছোট পা ফেলে রহিমার সাথে আসে। সোফায় সারিবদ্ধভাবে বসে আছে সকলে। ভাবে মনে হচ্ছে সালিশ বসেছে,বিচারক নুরুল ও অপরাধী শ্রেয়া। অসহায় দৃষ্টিতে চাইতেই দেখে তূর্যও বসে আছে। একটা নিউজ পেপার প্রশস্ত করে ধরে রেখেছে মুখের সামনে। যার দরুন চেহারার আকৃতি, দৃষ্টি বুঝা মুশকিল।

শ্রেয়ার পা শক্তিহীন হয়ে দেহ টলে টলে পড়বে অবস্থা। ভরসা যোগ্য কোনো মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না যে ইশারায় বলবে ‘ দুর্বল হয়ে পড়ছো কেন?আমি আছি না?’ অভাব বোধ করে অনতিবিলম্বে দীর্ঘ নিঃশ্বাস মুক্ত করতে চায় সে কিন্তু ভয় ও মানুষের সমাগমে পারে না।
নুরুল চৌধুরীর কন্ঠস্বর কর্ণধার হওয়া মাত্র সোফায় বসলো ওনার আদেশ মোতাবেক ঠিক প্রিয়ুর সান্নিধ্যে। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আবারও মুখ খুললেন,
‘ শুনেছি তুমি আমাদের এতিমখানায় বড় হয়েছো। আমার মা তোমাকে সেখানে দেখে পছন্দ করে বউ করে আনে। তার পরের দিন তুমি স্বামী পাগল বলে পালিয়েছিলে। ভয়ে পালিয়েছিলে নাকি ইচ্ছে করে?’

শ্রেয়া নির্বাক। জানত, এমন প্রশ্ন ওর পিছু ছাড়বে না। চোখ বুঁজে চুপ রইল খানিকক্ষণ। এই কথাগুলো শুনলে ওর ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। নিজেকে সংবরণ করে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে। কন্ঠস্বর নিষ্প্রভ, ‘ ভয়ে। ‘

নুরুল চৌধুরী মুখের কাঠিন্যতা বজায় রেখে বললেন,’ এটাই স্বাভাবিক। তোমাকে আমার পরিবার ঠকিয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত। তবুও একটা কথা বলবো বাড়ির বউ যখন হয়েছো সংসার ভাঙার নয় বরং গড়ার চেষ্টা করবে। তোমার মতই কেউ একজন সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার সংসার অর্ধেক ভেঙে দিয়ে আমার কলিজা ছিন্নভিন্ন করেছে। ‘

তূর্যর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। পেপার টা ছুঁড়ে মারে সমুখে রাখা ছোট্ট টেবিল টার দিক। কন্ঠনালি রাগে শক্ত হয়ে উঠে তার,

‘ আপনি আমার বউয়ের সাথে নরম গলায় কথা বলুন বাবা। ‘
নুরুল চৌধুরী তেতে উঠলেন, ‘ আমি কি খারাপ কথা বলেছি?’

‘ হ্যাঁ। সবাইকে এক পাল্লায় কেন মাপবেন আপনি?সহজ সরল চেহারার মেয়ে মানেই খারাপ? ধারণা পাল্টান। ‘

‘ আমি বলি নি তোমার বউও তেমন। শশুড় হিসেবে উপদেশ দিতে পারব না?’

‘ পারবেন তবে মায়া দেখিয়ে। আমার বউ যদি কখনও আপনার সংসার ভাঙ্গার চেষ্টা করে তাহলে ভাইয়ের মতোন আমি সহ্য করবো না,একদম মে’রে পুঁতে দিব। কিন্তু আমি জানি ও কখনও এমনটা করবে না। ওকে আদর করে কথা বললেই আমি খুশি হবো। বাবা-মায়ের স্নেহ পায় নি ও। আপনারা ওকে সেটা দিলে আপনাদের জন্য জীবন দিতে ও দু’বার ভাববে না তা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ‘

সবাই চুপচাপ ভঙ্গিতে বাবা ছেলের তর্ক দেখছে। তাছাড়া উপায় নেই। শ্রেয়ার অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে এসব দেখে। প্রিয়ুর হাতে হাত রেখে মলিন মুখে বসে রইল। শশুড়ও ওকে দেখতে পারে না। দোষী বলে সাব্যস্ত করে নি তবে অন্য কোনো কারণে হয়ত। নুরল চৌধুরী গলা ঝেড়ে বললেন,
‘ আমার কাউকে কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে নেই। আমি শুধু চাই আমার পরিবার যেন না ভাঙ্গে তাই দু একটা কথা বলা। আসি। ‘

কথাগুলো বলে তিনি বেরিয়ে আসলেন। মেহরিমা আসলেন পিছু পিছু কিন্তু তাকে অগ্রাহ্য করে গাড়িতে বসলেন। গত রাত থেকেই কথা বন্ধ করে দিয়েছেন স্ত্রীর সাথে। জীবনে হারিয়ে হারিয়েই তিনি আজ পাষণ্ড হয়ে উঠেছেন। শ্রেয়াকে অভদ্র, খারাপ মেয়ে মনে হয় নি কিন্তু বিশ্বাসও করতে পারছেন না। তাই আগে থেকে ওয়ার্নিং দিয়ে দিলেন যেন পরবর্তীতে পরিবারের কোনো দুঃখের কারণ সে না হয়।
_______________

বিছানার এক কোণে বসে বসে শ্রেয়া শশুড়ের কথাগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছে বার বার। মানুষ টাকে কঠোর লাগে নি,কঠিন হবার অভিনয় করছিল যেন। কিন্তু কি কারণে?আর তূর্য ও তার বাবার মধ্যে অন্য কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে কথা কাটকাটির সূচনা ঘটেছিল। কোনো প্রকার শক্তি খরচ না করেই শ্রেয়া ধরে ফেলে সবটা তূর্যর বড় ভাই কি যে নাম তোহাশ ও তার বউয়ের সাথে জড়িত। কি এমন হয়েছিল যার ফলে পরিস্থিতি এরকম হয়েছে? হিমেল হাওয়ায় কক্ষের সাদা পাতলা পর্দাগুলো উড়ছে। সুড়সুড় করে এসে ছুঁয়ে দেয় শ্রেয়ার আধা ভেজা উন্মুক্ত কেশ। সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই সৌষ্ঠবপূর্ণ দেহের মানুষটাকে দেখে পেট মোচড় দিয়ে উঠে। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তূর্য চেয়ে আছে। কপাল কুঁচকে ধারালো কন্ঠে প্রশ্ন করে,
‘ কি ভাবছো?’
তৎক্ষনাৎ শ্রেয়া কম্পনরত কন্ঠে এলোমেলো বাক্যে উত্তর সাজায়,’ ভাবছি,,কিছু না। ‘
তূর্যর কপালে বলিরেখার ভাঁজ পড়ল। দ্রুত বেগে এসে সুঠাম দেহ খানি এলিয়ে দিল শ্রেয়ার পাশে। ঘাড় হালকা কাত করে গম্ভীর স্বরে বললো, ‘ আমার পা টিপে দাও তো। ‘

শ্রেয়া হতভম্ব! ভুলভাল শুনেছে কি?কিন্তু না তূর্য গর্জে উঠলো পুনশ্চঃ, ‘ ঠিক কত বার বলতে হবে?বউ বানিয়ে এমনি এমনি আনি নি। পতিসেবা করো। ধরে নাও তুমি আগেরকার যুগের অবলা নারী। নাও স্টার্ট। ‘

হনহন করে বিছানা ছাড়ল শ্রেয়া। তূর্যর পায়ের কাছে আসতেই মেয়েটার হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার অভিপ্রায়। তেষ্টা পেয়ে বসে। ধবধবে ফর্সা পায়ে কালো কালো লোমশ। দুর্বল হাত দু’টো বাড়িয়ে গুটিয়ে নেয়। আঁড়চোখে তূর্যর দিক চাইতেই অক্ষিপটে ভেসে ওঠে তূর্যর কঠিন মুখো ভঙ্গি। নিরুপায় হয়ে ভয়ে ভয়ে হাত দেয়। চাপ দিতে থাকে আস্তেধীরে। তখনই শোনা গেল রাগান্বিত কন্ঠস্বর,

‘ শরীরে শক্তি নেই? মনে হয় তুলো উড়ে এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার পা। তোমার শক্তির পরখ করে যা বুঝলাম আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ‘

অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তূর্য রুম ত্যাগ করে। বুকে হাত দিয়ে থম মেরে বসে থাকে শ্রেয়া। শ্বাস ফেলতে ফেলতে বিছানায় মাথা এলিয়ে বসে। তখনই হাতে প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকে তূর্য। শ্রেয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো, ‘ তাড়াতাড়ি খেয়ে শেষ করবে। ‘

প্লেট ভর্তি গরম ভাত ও তরকারি। শ্রেয়া ঢোক গিলে। মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে মনের ভাবনা বাহিরে উন্মুক্ত হয়,’ এত ভাত খেতে পারবো না স্যার। ‘
‘ তাহলে আমাকে গিলে খাও। পারবে?হয় ভাত নয় আমি?কোনটা?তূর্য নাকি ভাত?অবশ্য আমি বেশি টেস্টি। ‘– দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো তূর্য।

শ্রেয়ার কর্ণে আগুন জ্বলছে। হাত চলছে ভাতের প্লেটে। লজ্জা শরীরের ভাঁজে ভাঁজে স্পর্শ করে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাওয়া চালিয়ে শেষ করার আপ্রাণ চেষ্টা। কোনোমতে ভাত গুলো গিলে আঙ্গুল চেটেপুটে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্লেট রেখে হাত ধুয়ে আসে। তূর্য বালিশে মাথা ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে। একটু একটু করে এগিয়ে গিয়ে আনতস্বরে জিজ্ঞেস করলো, ‘ পা টিপে দিব স্যার? ‘

চট করে উঠে দাঁড়ায় তূর্য। চলে আসে শ্রেয়ার সন্নিকটে। অন্তঃকরণের বেসামাল ধুকপুকানি তে শ্রেয়া পিছিয়ে যেতে চায়,কিন্তু পারে না৷ তূর্য ক্রমশ ঝুঁকে আসলো ওর গলার কাছে। তূর্যর তপ্ত নিঃশ্বাসে ঢেউ সৃষ্ট করে সমগ্র সত্তায়। উতালপাতাল ঝড় বইছে ভিতরে।

‘ কামড় দিল কে?এত গভীর প্রেমের বিষ কে ছড়ালো?’

শ্রেয়া লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। জড়োসড়ো হতে চায় জীর্ণ শীর্ণ দেহটা।বাকহারা হয়ে মাথা নাড়ে। অর্থ্যাৎ জানে না ও। তৎপরে দেখতে পায় তূর্যর ওষ্ঠে ফিচেল হাসি। ঝুঁকে থাকা অবস্থায় আফসোস করে,’ এজন্যই রহিমা খালাকে বলেছিলাম আমি আসার আগে রুম ভালো করে পরিষ্কার করতে। কিভাবে করেছে কে জানে ইঁদুর গুলো সুন্দরের মোহে পড়ে আমার সম্পদে হস্তক্ষেপ করলো। সর্বনাশ করলো তোমার। ‘

শ্রেয়া যেন আকাশ পথ ভুলে ধরণীতে ধপ করে ছিটকে পড়ল। অবাক কন্ঠে বলে উঠলো,’ ইঁদুর? ‘

তূর্য সরে এসে ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করতে করতে জবাব দেয় গাঢ় স্বরে, ‘ ভেবো না বড়লোকের বাসায় ইঁদুর কোত্থেকে আসবে!কত দিক থেকে চলে আসে টেরও পাবে না। ইঁদুরকে এভাবে আকৃষ্ট করলে নিজের প্রতি উদাম অঙ্গ দেখিয়ে ,দেখো প্রতি রাতে না আবার কামড়ে দেয়। ‘

#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___২৪

তূর্য ফাস্ট এইড বক্স টা এনে বিছানায় রাখল। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘ নাও মেডিসিন লাগাও,নয়ত ইনফেকশন হতে পারে। ‘

শ্রেয়া স্থির। নড়ছে না। মাথায় তূর্যর উচ্চারিত একেকটা শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে অনবরত। সত্যিই ইঁদুর অমন করে কামড়াতে পারে?নাকি গম্ভীরমুখো এই লেকচারার হেঁয়ালি করছে ওর সাথে?বোকা বানাতে চাইছে হয়ত। এমনিতেই শৈশব কাল থেকেই ভীষণ বোকা ধাঁচের ও। এটাকে ঠিক বোকা বলে না বিষয়টা হলো এমন,যা-ই হয়ে যাক চুপচাপ থেকে সহ্য করা এবং অতিরিক্ত না ঘাঁটানো। এটাই ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তূর্য কি করে জানল ওর খালি গা পেয়ে কামড়ে দিয়েছে, সে দেয় নি তো?মনে মনে আবোলতাবোল ভাবছে শ্রেয়া। হিসেব মিলাতে পারছে না ঠিক। তূর্য কামড় দিলে কিংবা স্পর্শ করলে সরাসরি প্রকাশ্যে করতে পারে,এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে করার প্রয়োজন নেই। তাহলে ধরে নিবে ইঁদুর কামড়ে দিল?ভয়ে কলিজা ছোট্ট হয়ে যায় শ্রেয়ার। ইঁদুরের দাঁত নিশ্চয়ই ধারালো,তীক্ষ্ণ। কেমন রক্তাক্ত করে দিল!

তূর্য শ্রেয়ার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রোষপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মেয়েটা শাড়ির আঁচল হাতের মুঠোয় পুড়ে চিন্তায় মগ্ন তা ফর্সা চেহারায় স্পষ্ট। ধ্যান ভঙ্গ করতে চাপা গর্জন করে, ‘ মিসেস শ্রেয়সী! ‘

শ্রেয়া হকচকালো। তড়িঘড়ি করে চাইল সামনে দাঁড়ানো তূর্যর দিক। নম্র গলায় বললো, ‘ জ্বি?’

রাগে চোখ দুটো লাল রূপ ধারণ করলো তূর্যর। এই মেয়েকে সেই কখন থেকে ডাকছে আর এতক্ষণে সাড়া দিল!দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’ কোন দুনিয়ায় আছেন?কাইন্ডলি আপনি এদিকে আসবেন নাকি আমি কাছে যাবো?’

শ্রেয়া থতমত খেয়ে গেল। তূর্যর কন্ঠে রাগের আভাস। গুটি গুটি পায়ে কয়েক কদম অগ্রসর হলো ও। থামল তূর্যর থেকে দূরত্ব রেখে। মুহুর্তেই শ্রবণেন্দ্রিয় হলো লহু স্বরের হৃদয় নিংড়ানো বাক্য, ‘ আঁচল টা সরাও। ‘
অপ্রতিভ হয়ে পড়ে নিমেষে। বিব্রত দৃষ্টি মেলে ধরে। প্রশ্ন করার ভাষার প্রায় দুস্থিতি। কোনো রূপ দ্বিরুক্তি করতে পারছে না। শুধু বললো,’ স্যার!’

‘ আঁচল সরাতে বলেছি,ফেলে দিতে বলি নি। না সরালে চিকিৎসা হবে কেমন করে?তাছাড়া ভোর রাতে তো পুরো খোলামেলা হয়ে ঘুমাচ্ছিলে তখন লজ্জা লাগে নি?তোমার আঁচল তখন আমার পিঠের নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। ট্রাস্ট মি,বহু কষ্টে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন করার চিন্তাভাবনা সংবরণ করে ঢেকে দিয়েছি তোমাকে। ‘

দূরত্ব রেখেই কথাগুলো বললো তূর্য। কন্ঠে পরিহাস। শ্রেয়া একের পর এক ঝটকা সইতে পারল না। পরাজিত হয়ে দেহের ভার সামলাতে বসে পড়ল বিছানায়। ছি!ঘুমের ঘোরে আঁচল সরে শেষ পর্যন্ত যার কাছ থেকে মান সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করছিল তার কাছেই গেল?আবার সেই ব্যক্তিই ওকে ঠিকঠাক করে দিল?কেন আঁচলের কাহিনী পিছু ছাড়ে না?একবার বাতাসে নিচে পড়ে,আরেকবার ঘুমের ঘোরে তূর্যর পিঠের নিচে চলে যায় আবার এখন ভাত খাওয়ার সময় কিঞ্চিৎ সরে যায়। ফলস্বরূপ তূর্যর ঈগল চোখের পাতায় বিঁধে দগদগে কামড়ের চিহ্ন টা। এই লজ্জিত কান্ডগুলো তার সামনেই কেন হচ্ছে যে কিনা ওর প্রতি ভালোবাসার চোখে তাকায় না!তূর্য বিছানায় বসল শ্রেয়ার পাশাপাশি। ফাস্ট এইড বক্স খুলে হাতে তুলো নিয়ে তাতে স্যাভলন লাগিয়ে নেয়। কাঠ কাঠ কন্ঠে আদেশ করে, ‘ চোখ বুঁজো।’

‘ কেন স্যার?’– চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করলো শ্রেয়া। কন্ঠনালি কাঁপছে তরতর করে, সেই সঙ্গে চিকনচাকন দুই অধর যুগল।

তূর্যর ভ্রুঁ কুঁচকে চেয়ে রইল কয়েক পলক। ললাটে ভাঁজ দু’ তিনটে। কন্ঠ নরম করে বলে,’ একটু পরেই তো লজ্জায় লাল, নীল,বেগুনি হয়ে আপনাআপনি চোখ বুঁজে ফেলবে তাহলে এখন বুঁজতে সমস্যা কোথায়?আমি তোমাকে কথা দিয়েছি স্বামীর দায়িত্ব একদম একশতে একশ পালন করবো। পরে যদি ক্ষতটার অবস্থা আরও খারাপ হয় তাহলে আমার বিরাট লস হবে। তোমার স্কিন এত মোলায়েম, একটুতেই এমন,না জানি পুরোতে আমার জে’ল খাটতে হয়। ‘

অতর্কিতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শ্রেয়া। ঠোঁট জোড়া নড়ে উঠলো অল্পস্বল্প, ক্ষীণ –‘ মানে?’
তূর্যর নির্বিকার,নিরলস জবাব–‘ ইঁদুর তোমাকে প্রতি রাতে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করলে তুমি সহ্য করতে পারবে বলে মনে হয় না,পরে দোষ পড়বে আমার উপর। মানুষ বলবে আমি এ হাল করেছি কিন্তু মোটেও তো তোমার ধারে কাছে আসি না আমি। একটুতেই এমন অবস্থা, আমি ভাবছি কোনো একদিন তোমাকে ভালোবেসে ফেললে বাচ্চা ডাউনলোড প্রক্রিয়া কতটা ভয়ং*কর হবে। ‘

শ্রেয়া স্তব্ধ। কথার প্যাঁচে যদি কাউকে কপোকাত করতে হয় তাহলে নিঃসন্দেহে ওর সামনে,নিকটস্থ বসা সুঠাম দেহের সুদর্শন পুরুষ টা জিতে যাবে। বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে আখিঁপল্লব মিশিয়ে নিল ও। বুঁজে ফেলল চক্ষুদ্বয়। ঠোঁট দুটো লজ্জার,নার্ভাসনেসের দাপটে কম্পমান। শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে তীব্র গতিতে ক্ষণে ক্ষণে। কিছুক্ষণের নিরবতার প্রহর কাটে। নিমিষেই শিরা উপশিরার তড়িৎ বেগে কিছু একটা ছুটে যায়। অনুভব করে দেহের তাপমাত্রা বেড়েছে, ক্ষত স্থানে নরম কিছুর গভীর স্পর্শ। অতীব গাঢ় তা। তুলার? জ্বলে নি কেন তাহলে?মনেই হয় নি তুলার। অন্য কিছুর ছিল। ভাবতেই মুখ দিয়ে আহ শব্দ টা বেরিয়ে আসে। জ্বলে উঠে। হাত বাড়িয়ে অস্থির হয়ে খামচে ধরলো তূর্যর বলিষ্ঠ হাত।
‘ জ্বলছে স্যার। ‘
তূর্য হাত টা সরিয়ে নিজের অপর হাতে মুষ্টিমেয় করে নিল। ফুঁ দিল কাছে এসে। শ্রেয়ার নিজেকে শক্ত রাখতে পারছে না। বললো,
‘ তাড়াতাড়ি শেষ করুন। ‘
বলার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে উঠে দাঁড়াল তূর্য। শ্রেয়া আঁচল টা উঠাতে গেলে কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বলে উঠলো,
‘ থাকুক। আমি এসি বন্ধ করে ফ্যান ছেড়ে দিচ্ছি। ‘
কথামতোন কাজ টা করে তূর্য দরজা ভিড়িয়ে চলে গেল। এতক্ষণে উপযুক্ত সময় পেল শ্রেয়া ভালো করে নিঃশ্বাস ফেলার। বক্ষস্পন্দনের গতি নিয়ন্ত্রণ হারা। এত মাদকতা মেশানো কেন তূর্যর চাহনি?চুম্বকের ন্যায় আকৃষ্ট করে বারংবার। মুখ ফোটে বেরিয়ে আসতে চায়–‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি স্যার। আমাকে একটা বার বুকে মিশিয়ে নেওয়া যায় না?’
____________

ফাতেমা চৌধুরী লাঠি ভর দিয়ে রান্নাঘরের কাছে এলেন। রহিমা গুণগুণ করছে আর সবজি কাটছে। মেহরিমা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে ওনার। আজ সন্ধ্যায় আবার বাড়িভর্তি হবে মেহমানে। কাল বউভাত। তাই ব্যস্ত হাতে রহিমা,ত্রিহা বাকি কাজের লোকরা রান্নার আয়োজনে নিমজ্জিত। মেহরিমা শাশুড়ির পাশে দাঁড়িয়ে মলিন স্বরে বললেন,’ আম্মা কিছু লাগবে?’
‘ হু। আমার গরম ভাত। তোমরা কি ভুইলা গেছো এমন সময়ে আমি ভাত খাই?কই ভাত কই আমার?’– চেঁচিয়ে বললেন ফাতেমা।
রহিমা ওনার মতোন উঁচানো স্বরে বলে, ‘ আম্মা আপনের লাইগ্গা যেই ভাত রানছিলাম ওইডি তো তূর্য বাবা লইয়া গেছে। এখন আবার বসাইছি,কুদ্দুর দাঁড়ান। ‘

মেহরিমা সন্দিহান দৃষ্টে চেয়ে বলে,’ এ সময়ে তো কেউ ভাত খায় না। শুধু আম্মা খাই বলে ওনার জন্য অল্প করে রান্না করা হয়। সবার জন্য দুপুরের দিকে করা হয়। আর তূর্য কখনই খায় না অসময়ে। তাহলে? ‘

রহিমা বলতে চাইছে না। ওনি ভালো বুঝেছেন মেহরিমা শ্রেয়াকে পছন্দ করে না। তাই কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বললো,’ আমি জানি না। তূর্য বাবা-ই কইতে পারব। আমি এত ঘাঁটি নাই। ‘

মেহরিমার সন্দেহ হচ্ছে। নাস্তার টেবিলে দেখেছে শ্রেয়া শুধু একটা পরোটার অর্ধেক খেয়েছে। যা বুঝার বুঝে নিলেন ওনি। শেষমেশ এই মেয়েটাও তার ছোট ছেলেকে সরিয়ে নিচ্ছে,নিজের আঁচলে বেঁধে ফেলছে। অহমিকা যথেষ্ট ভালো মেয়ে ছিল। কখনোই এমন করত না। বিষাদে ভরে উঠে মনটা। শ্রেয়াকে ধরে চ-ড় মারতে ইচ্ছে করছে ওনার। কিন্তু তূর্যর জন্য হাত দু’টো গুটিয়ে রাখতে হয়। স্বামী, ছেলে দুজন কার কেউই ওনার সঙ্গে কথা বলছে না ভালোমতন।

কাজের লোকের মাধ্যমে শ্রেয়াকে রুমে ডাকালেন। গোপন কথা চার দেয়ালের বন্দিত্বে থাকাই ভালো। মাথায় ঘোমটা টেনে কক্ষে পদার্পণ করলো শ্রেয়া। মেহরিমা ওকে বসতে পর্যন্ত বললেন না। সোজাসাপ্টা কঠোর কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
‘ এক রাতেই বশ করে ফেললে আমার ছেলেকে?’
শ্রেয়া ভড়কালো,তাকালো আগ্রহ নিয়ে। ভেবেছিল আগের সবকিছু ভুলে শাশুড়ির মন জয় করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। কিন্তু সময়,পরিস্থিতির অদল বদলে সে আরো বি’ষ হয়ে উঠেছে শাশুড়ির নিকট। কন্ঠে প্রখর নম্রতা বজায় রাখে,
‘ কি বলছেন আম্মা?’
‘ কি বলছি? কোন মুখে এলে আবার?লোভে পড়ে?এখন জামাই সুস্থ বলে?বলতে বলতে হাঁপিয়ে গেছি আমি। আজ বলতে বাধ্য হলাম ফকি’ন্নিকে প্রশ্রয় দিলে বুকে লাথি মারে। লোভী মেয়ে একটা।’

শ্রেয়া নরম অধরে মৃদু হাসি ভিড় জমায়। আলগা করে বলে,
‘ আমি কিন্তু এখনও আপনার ছেলেকে দ্বিতীয় বার ফিরে আসার কাহিনী টা বলি নি শাশুড়ি আম্মা। হাতিয়ার হিসেবে রেখে দিলাম। ‘
তৎপরে মিহি স্বরে বললো,’ লোভী বলবেন না। লোভ করলে প্রথমেই থাকতে পারতাম। শুধু একটু ভালো থাকার জন্য ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। যখন শুধরাতে চাই, আপনি আমার ভুলের মাত্রা টা বাড়িয়ে দিলেন। আপনার ছেলের সাথে সম্পর্ক কখনও নষ্ট হবে না। কারণ সম্পর্কের মর্ম আমি বুঝি। ‘

মেহরিমা গর্জে উঠলেন,’ বেরিয়ে যাও রুম থেকে। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
শ্রেয়ার ইচ্ছে করে নি ওইভাবে কথা বলতে, বাধ্য হয়ে বললো। দুর্বল ভেবে কতশত আঘা*ত করে কথা শোনাচ্ছে ওকে মেহরিমা। অতিরিক্ত ভদ্র হতে গিয়ে অত্যধিক কষ্ট লিখছে খাতায়।
_________

মধ্যাহ্নের তেজী রূপে বাগানের ফুলের চারার কিছু কিছু পাতা নুইয়ে পড়েছে। শ্রেয়া ব্যস্ত চোখে অবলোকন করছে সেগুলো। পাশে আয়ুশী বক বক করছে বিরতিহীন। ঘরে একা একা শান্তি লাগছিল না বিধায় ত্রিহা চাচী ওদের বাগানের দিকটায় হাঁটতে পাঠিয়ে দিল। খোলামেলা পরিবেশে মনের ঘর হতে কিছুটা হলেও মন খারাপেরা বিদায় নিবে। ত্রিহা তখন ওকে দেখেছিল মেহরিমার রুম থেকে বেরোতেই। কি করে যেন মানুষ টা শ্রেয়ার মন পড়ে ফেলে। প্রিয়ু খুবই কপাল গুণে এমন শাশুড়ি পেয়েছে বলে মনে হয় শ্রেয়ার। হাঁটতে হাঁটতে একটা মুহুর্তে সেই বড় পেয়ারা গাছটার নিচে এসে দাঁড়ায় দু’জনে। শ্রেয়া উপরের দিকে দৃষ্টি তাক করতেই আয়ুশী উৎফুল্ল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘ পেয়ারা খাবে ভাবী?জানো,এ গাছের পেয়ারার স্বাদ এত ভালো, না খেলে আফসোস থেকে যাবে। ‘

শ্রেয়ার উজ্জ্বল ফর্সা মুখশ্রী চকচক করে উঠলো। মুখ ফোটে বলতে পারছিল না এতসময় অবধি লজ্জায়,জড়তা-সংকোচে। এখন হেঁটে আসা সুযোগ কে পায়ে না ঠেলে আহ্লাদী কন্ঠে সায় জানায়। বলে,’ হুম। ‘

‘ দাঁড়াও বাঁশের ব্যবস্থা করি। ‘– কথাটা বলে ছুটে গেল আয়ুশী মালী কাকার কাছে। বাঁশ না পেলে ওনাকেই গাছে উঠাবেন চিন্তা করলো।

নিচের দিকে একটা ডালা ঝুঁকে আছে। তাতে দু’টো পেয়ারা। পায়ের আঙ্গুল মৃত্তিকায় ভর দিয়ে হাত উঁচিয়ে টেনে নিচে নামানো যাবে। ভাবনা অনুযায়ী হাত উপরে তুলে ডালা টা টেনে নামাতে লাগে শ্রেয়া। মুহুর্তেই ককিয়ে উঠে অকস্মাৎ ব্যাথায়। কন্ঠনালি গলিয়ে আসে ব্যাথাসূচক ধ্বনি। মনে হলো কেউ কোমরের মাংস ছিঁড়ে ফেলেছে।

#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here