#বিশ্বাস_অবিশ্বাস (সাজু ভাই সিরিজ)
#পর্ব:- ০৭ (সমাপ্ত)
শাকিল মনে মনে এতটা খারাপ পরিকল্পনা করে রেখেছে আফরিন যদি জানতো। তাহলে আফরিন কোনদিনই সেখানে যেত না।
আফরিন ও সাথী সেই বাসায় যাবার পরে শাকিল যখন সামনে আসে তখন সাথী অবাক হয়ে যায়। আফরিন তাকে অভয় দিয়ে শান্ত থাকতে বলে। এরপর নাস্তার ব্যবস্থা করে শাকিল। শুরুতেই সে এতটা ভালো ব্যবহার করে যা দেখে আফরিন ভেবেছিল সত্যি সত্যি শাকিল সবকিছু সাথীকে খুশি করার জন্য করছে।
জন্মদিনের সকল আয়োজন ছিল বেশ চমৎকার। কিন্তু কোন খাবারের মধ্যে যে অচেতন করার ওষুধ ছিল দুজনের কেউ জানে না। আফরিন বলেছিল, সে যখন চোখ মেলে তাকায় তখন সে সোফায় শুয়ে আছে। এরপর পাশের রুমে গিয়ে সাথীকে বিছানায় বিবস্ত্র অবস্থায় চাদর দিয়ে জড়ানো দেখতে পায়। আফরিন চাদে সরিয়ে সাথীর সঙ্গে কি কি হতে পারে সব বুঝে যায়। সে মোবাইল বের করে শাকিলের কাছে কল করে।
শাকিল বলে যে, সে নাকি ফ্ল্যাটে নেই। আফরিন যেন সাথীকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। আর এসব কথা কাউকে জানালে সাথীর অচেতন অবস্থায় উলঙ্গ ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেবে।
ঘটনার পরে সাথী মাত্র একদিন ঢাকায় ছিল। তারপর সে চলে যায় গ্রামের বাড়িতে। গ্রামের বাড়িতে যাবার চারদিন পরে আমরা জানতে পারি যে সাথী আ!ত্মহ!ত্যা করেছে। সাথীর এক কাজিন এসে ঢাকা থেকে ওর যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেল৷
আফরিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে খুব। সাথীর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করে সবসময়। কিন্তু আফসোস করে তো লাভ নেই। পৃথিবী থেকে একবার যে চলে চায় সে তো আর কোনদিন পৃথিবীতে ফিরে আসে না। সেজন্যই মানুষের সঙ্গে মান অভিমান হলে বিদায় নেবার আগেই সবকিছু ঠিকঠাক করা উচিৎ। কে পৃথিবীকে বিদায় বলে সবকিছু স্মৃতি করে চলে যাবে, কে জানে?
সাজু বললো ‘ দুই বছর আগের ঘটনা নিয়ে নতুন করে কবে থেকে ঝামেলা হয়েছে? আর আপনার বন্ধু সেই শাকিল কোথায়? ‘
‘ শাকিল এক্সি!ডেন্ট করে মারা গেছে তিনমাস আগে। তবে আমার আর আফরিনের ধারণা যে শাকিলকেও পরিকল্পনা করে খু!ন করা হয়েছে। শুধু নাম দেওয়া হয়েছে এক্সি!ডেন্ট। ‘
‘ সাথীর গ্রামের বাড়ি কোথায়? ‘
‘ কুষ্টিয়ার মিরপুরে। ‘
‘ ওর পরিবারে কে কে আছে? ‘
‘ আমি জানি না। মাস তিনেক আগে একদিন আফরিনের কাছে একটা কল আসে। কলকারী জানান যে সাথী নাকি তার বাড়িতে একটা ডায়েরিতে সেদিনের সেই ঘটনা লিখে গেছে। আর সেখানেই বিশ্বাসঘা!তক হিসেবে আফরিনের নাম লিখে গেছে সাথী। আফরিন বারবার বোঝাতে চেষ্টা করে যে সে কিছু ইচ্ছে করে করেনি। কারণ সে জানতো না এরকম একটা ঘটনা হবে। ‘
‘ কিন্তু সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি সেসব বিশ্বাস করে না। সপ্তাহে দু তিনবার কল দিয়ে শুধু মৃত্যুর কথা স্মরণ করে দিত। আফরিন বিরক্ত হতো। তারপর পুরাতন নাম্বার পরিবর্তন করে কিন্তু নতুন সিমে আবার কল আসে। ‘
‘ সাথীর ফেসবুক আইডি ছিল? আর সেটা কি এখনো আছে? ‘
‘ হ্যাঁ আছে। ‘
‘ একটু মোবাইল বের করে ফেসবুকে লগইন করুন তো। আর সাথী কি তার নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতো? ‘
‘ হ্যাঁ পোস্ট করতো। ‘
‘ ঠিক আছে বের করেন। ‘
★★
সাজু ভাই সিরিজের গল্প মোঃ সাইফুল ইসলাম ছাড়া আর কেউ লিখে না।
.
ওসি সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে সাজু ও ডিবি হাসান আলী সরকার বাড়িতে প্রবেশ করলো। তাজুল সাহেবের ফ্ল্যাটের পাশের ফ্ল্যাটের শাহানা আক্তার গতকাল রাতে সিলেট থেকে এসেছে। আজকে তার অফিসে যেতে হবে না কারণ সে কদিন ধরে সিলেটে অফিশিয়াল কাজ করেছে। যে ক’জন সিলেট থেকে এসেছে সবার আজকে ছুটি।
দারোয়ানের রুম থেকে তার সেই লুকিয়ে রাখা মোবাইল হাতে নিয়ে সাজু বসে আছে। ওসি সাহেব বসে আছে তাদের পাশেই। তাদের সামনে অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে শাহানা আক্তার। আফরিনের হ!ত্যাকাণ্ডের সময় সে ঢাকায় ছিল না। তবুও কেন পুলিশ তার সঙ্গে কথা বলতে এসেছে?
ওসি সাহেব বললেন ‘ কেমন আছেন? ‘
‘ জ্বি ভালো। ‘ শাহানার শুকনো উত্তর।
‘ আর দুদিন পরে তো আপনার ছোটবোন সাথীর জন্মদিন। তা মৃত বোনের জন্মদিনে কোনো আয়োজন করবেন না? ‘
‘ আমার বোনের কথা আপনি জানেন কীভাবে? ‘
‘ আমরা আরো অনেক কিছু জানি। আপনার বোনের মৃত্যুর জন্য দায়ী দুজনকেই তো পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেন। এবার নিশ্চয়ই মনের তৃপ্তি পেয়েছেন? ‘
শাহানা বিব্রত হয়ে গেল, কি জবার দেবে সেগুলো খুঁজে পাচ্ছে না। ওসি সাহেব মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বললেন,
‘ অনেক প্ল্যান করেছিলেন কিন্তু, চমৎকার। ‘
‘ কিসের প্ল্যান? ‘
সাজু বললো ‘ বোনের মৃত্যুর দুই বছর পরে লেখা ডায়েরি পড়ে বোনের মৃত্যুর জন্য দায়ী মানুষকে খু!ন করার পরিকল্পনা। ‘
‘ আশ্চর্য আমি কেন খুন করবো? ‘
‘ আপনি তো করেননি, করিয়াছেন। ‘
আফরিনের সেই বান্ধবীর কাছে সাথীর ফেসবুক আইডিতে সাথী ও তার বোন শাহানার কিছু ছবি পাওয়া যায়। যেহেতু সাজু শাহানাকে আগে দেখে নাই তাই নিশ্চিত হতে পারেনি। কিন্তু প্রতিটি ছবিতে Shahana Akhter নামের একটা আইডি ট্যাগ করা হয়েছে। তামান্না ও দারোয়ান বলেছিল সিলেটে যিনি গিয়েছে তার নাম শাহানা।
আরো নিশ্চিত হবার জন্য মিতুর কাছে কল দিয়ে শাহানার একটা ছবি পাঠানো হয়। মিতু তখন নিশ্চিত করে এটাই তাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকা শাহানা আক্তার।
তারপরেই সবাই মিলে চলে এসেছে সরকার বাড়িতে। বুদ্ধিমতী শাহানা ভেবেছিল রফিক মারা গেছে সুতরাং সে বিপদমুক্ত হয়ে গেছে। পুলিশের আগমন দেখে অবাক হলেও সে বুঝতে পারেনি এরা সবকিছু জেনে গেছে।
সাজু বললো ‘ রফিক গতকাল রাতে সবকিছু বলে গেছে আমাকে। আপনি যতবারই না না বলেন তাতে কিছু পরিবর্তন হবে না। শুধু সময় পরিবর্তন হয়ে যাবে কারণ সময় বসে থাকে না। ‘
ওসি সাহেব বললেন ‘ আমি জানি আপনার বোন এভাবে মারা গেছে বলে আপনার মনের অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু তাই বলে এভাবে নিজের হাতে প্রতিশোধ কেন নিতে হবে? আপনার বোনের সেই ডায়েরি পুলিশের কাছে দিতেন। তারা নাহয় সেগুলো দেখে অপরাধীর শাস্তি ব্যবস্থা করতো। ‘
শাহানা রেগে যায়। ‘ কিসের পুলিশ? আমার ভালো করে জানা আছে এদেশে কীভাবে বিচার সম্পন্ন হয়। আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে নিজেকে হাসির পাত্রী বানাতে চাইনি। ‘
ওসি সাহেব বললেন ‘ আপনার বাকি সহযোগীরা সবাই কোথায়? তাদের ঠিকানা দিন অথবা তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলেন। ‘
‘ আমি তাদের চিনি না। ‘
‘ কেন? তাদের সঙ্গে সবকিছু নিয়ে আলোচনা কে করতো? ‘
‘ আছে একজন, তিনি আমার কাজ ভালোভাবে করে দিয়েছেন। তাই আমি তার নাম বলতে পারবো না। ‘
ওসি সাহেব বললেন ‘ আদালত থেকে রিমান্ড মঞ্জুর করলে তখন ঠিকই বলবেন। ‘
শাহানা চুপ করে রইল। নিজের জীবনটা শেষ হয়ে গেল এখানেই। ভবিষ্যতে কি হবে তার আর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সাজু বললো ‘ আফরিনকে মারার জন্য আপনি এই বাসায় তিন মাস আগে ভাড়ায় উঠেছেন তাই না? তারপর গরীব দারোয়ানের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাকে লোভ দিয়েছেন। ‘
শাহানার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ওসি সাহেব আরো কিছু প্রশ্ন করেছেন কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শাহানা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। অবশেষে শাহানাকে নিয়ে ওসি সাহেব থানায় চলে গেল। সাজু ও হাসান আলী বাইক নিয়ে চলে এলেন মিরপুরে হাসান সাহেবের বাসায়।
গোসল করে খেয়ে সাজু লম্বা এক ঘুম দিল। ঘুম যখন ভাঙলো তখন মাগরিব হয়ে গেছে। ঘুমের আগে মোবাইল সাইলেন্ট করেছিল। একটা নাম্বার থেকে ৩৭ টা মিসকল এসেছে। একই নাম্বার দিয়ে একটা মেসেজ দিয়েছে সেই ব্যক্তি।
” আপনার হিসেবের খাতাটা তোলা রইল। সময় হলে সুদসমেত ফিরিয়ে দেবো। খুব তাড়াতাড়ি আপনার সঙ্গে আমার দেখা হবে।
T.T.I. ( তামান্না তারিন ইফরা ) ”
সাজু সঙ্গে সঙ্গে দু তিনজনের কাছে টিটিআই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তারা জানায়, তামান্না তারিন ইফরা সাম্প্রতিক কালের একটা লেডি কন্ট্রাক্ট কি!লার। তার বিষয় বেশ কিছু গুঞ্জন শোনা গেলেও সে এখনো পুলিশের কাছে ধরা পড়েনি।
সমাপ্ত।
দেখা হবে তামান্না কিংবা রবিউল ইসলাম রাব্বি/রাফসান মাহমুদের সঙ্গে সিরিজের পরবর্তী কোনো গল্পের মধ্যে।
সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সবসময়।
আমার দ্বিতীয় বই বের হবে ” চাদর জড়ানো চিরকুট দ্বিতীয় খন্ড। ” অনেকেই প্রথম খন্ড পড়েছিলেন রাফসান মাহমুদ ও লতা চৌধুরীর সঙ্গে সাইদুর রহমান বা দাদাজানের ঘটনা।
নতুন আঙ্গিকে তিন শহরের তিনটা ভিন্ন কাহিনি নিয়ে আসতে চলছে চাদর জড়ানো চিরকুট দ্বিতীয় খন্ড।
রহস্যময় গল্প যারা পছন্দ করে তারা অপেক্ষা করতেই পারেন।
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
গল্পটা সত্যি অনেক ভালো লাগলো।পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।আপনার নিজস্ব কোন পেজ নাই? পরবর্তি গল্প কিভাবে পাবো?