#এক_কাপ_চা
#পর্ব-৩৭+৩৮
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(১৯০)
“রাশেদ যখন স্নেহার দায়িত্ব নিতে চায় তাহলে দিতে সমস্যা কোথায়?”
তাশদীদের মায়ের প্রশ্নে তার দিকে মুখ তুলে তাকালো সামিনা। স্নেহার গায়ে কাথা টেনে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।তাশদীদের মায়ের প্রতি তার বিরক্তি এখন রাগে পরিণত হচ্ছে।কেন সে তার সন্তানকে অন্যের নামে পরিচিত করতে হবে?
তার চোখে এতদিন একটা কাপড় বাধা ছিল, ছিল অহমিকার পট্টি পড়ানো। আজ সে বাস্তবতা কে মেনে নিয়েছে। যে হারিয়ে যায় তার শূন্যস্থান সব সময় পূর্ণ করা যায় না।
ঠিক তেমনি দেরীতে হলেও সামিনা নিজের সব ভুল বুঝতে পেরেছে। সে লজ্জাসংকোচ নিয়ে এই পরিবারে এক কোণে থাকছে, ইখুমের চোখের দিকে তাকাতে পারে না। তবুও অপরাধ বোধ তাকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে।তার অনুতপ্ততা কারোর চোখে না এলেও এতে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে যে কেউ এসে তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইবে এটা সে মেনে নিতে পারবে না।
তার সন্তান শুধু তার স্বামীর নামেই পরিচিত হবে।এটা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে। তবুও কেন এতবার তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে?
সামিনাকে চুপ থাকতে দেখে তাশদীদের মা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
“কী রে?কথা বলিস না কেন?”
“আপা আমার যা বলার আমি বলেই দিয়েছি।”
“এখন কেন না করছিস?আগে তো এটাই চাইতি!এই নিয়ে কত অভিনয়, কত রঙ তামাশা দেখিয়েছিস। ভুলে গেছিস?”
সামিনার অপরাধ বোধ তাকে আরো একবার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল সে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সে বলল,
“আমি অনেক ভুল করেছি আপা। এর মানে এই না যে আমি আমার ভুল বুঝতে পারিনি কিংবা অনুতপ্ত নই। আমি ইখুমের কাছে,আপনাদের সবার কাছে এই নিয়ে অনেক বার মাফ চেয়েছি।আরো একবার চাইছি, প্রয়োজনে সারা জীবন চাইবো কিন্তু আমাকে আর এভাবে লজ্জা দিয়েন না।”
“লজ্জার কাজ করেছিস,দেবরের কাছে বিয়ে বসতে চেয়েছিস মেয়ের দোহাই দিয়ে, তার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিস। শুধু মাত্র নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ এর দোহাই দিয়ে তবে আজ যখন ওরা দুজনেই তোর মেয়ের দায়িত্ব নিতে চাইছে তখন উল্টো নাটক কেন করছিস? বিরক্ত লাগছে।”
“আমি জানি আপা আমি অনেক ভুল করেছি। আমাকে মাফ করে দেওয়ার মতো ভুল করিনি। কিন্তু আমি তখন ভুল ছিলাম।আজ আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পারছি তাই আমার মেয়ে আমার থাকুক।তার কোনো বাবার প্রয়োজন নেই।আমিই ওর মা-বাবা হতে পারবো।”
সামিনার কথায় তাশদীদের মা প্রচন্ডরকম বিরক্ত হলেন।চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতে যেতে বললেন,
“নয়শো নব্বইডা ইন্দুর মাইরা বিলাই এহন হজে বইছে।”
প্রতি উত্তর হিসেবে সামিনা মাথা নিচু করে বসে রইল। তার শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না।সে এখন পুরো সময় তার মেয়েকে দিতে চায়। অন্য কাউকে না।
(১৯১)
বরটা চলে গেল, মনটা ভেঙে গেল
প্রেস্টিজ যা ছিল পাংচার হয়ে গেল।
রেললাইনে গলা দেবো
তখন আমি ভেবেছিলাম,
তারপর হঠাৎ করেই
লাইফে আমার ঘন্টু এলো।
ও ঘন্টু সোনা দুটো হাম্পি দেনা
আমি মাইরি বলছি আর খৈনি খাব না,
চাঁদনী রাতে আমি ঘন্টুর সাথে
যাবো ডিনার ডেটে পোচ মামলেট খেতে ..
ঘন্টু,
নাকে নাক ঘষে দেনা,ঘন্টু
তুই আমার পুঁচকি সোনা।
সকাল সকাল তাশদীদের ঘুম ভাংলো সাগরিকার গাওয়া গান শুনে। ওয়াশরুমে গোসল করছে সে। আর জোরে জোরে গান গাইছে। যে কোনো গানের বারোটা বাজানোর জন্য সাগরিকা একাই যথেষ্ট। তাশদীদ এখন এসব অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বেড টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে দেখতে পেল বেলা এগারোটা বাজে। এতক্ষণেও সাগরিকা তাকে ডাকেনি এটা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাশদীদ তাদের ঘরের লাগোয়া বারান্দার স্লাইডিং ডোর খুলে দিলো।বাইরে মেঘ করেছে। ফিরে এসে বিছানা গুছিয়ে নিলো সে। সাগরিকা সম্পূর্ণ ভাবে তাশদীদের রুমে শিফট হয়েছে। এর সাথে শিফট হয়েছে সাগরিকার অগোছালো স্বভাব।একটা মেয়ে এতটা অগোছালো হতে পারে এটা সাগরিকাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
তার ক্লোজেট, ড্রেসিং টেবিল সব সময় অগোছালো, সেই অগোছালো মেয়েটা এসে পড়েছে তাশদীদের গোছালো জীবনে।
প্রথম প্রথম তাশদীদের কিছুটা সমস্যা হলেও ইদানীং আর হচ্ছে না। সে জানে সাগরিকা এমনটাই কিন্তু এটাও ঠিক যদি তাশদীদ একবার সব কিছু গুছায় তবে সাগরিকা যথেষ্ট চেষ্টা করে সেগুলো নষ্ট না করার। তবে সেটা চেষ্টা অবধিই সীমাবদ্ধ।
সাগরিকার গান বন্ধ হয়নি এখনো। সে অনবরত গেয়েই চলেছে
“ঘন্টু! ,
নাকে নাক ঘষে দেনা,ঘন্টু
তুই আমার পুঁচকি সোনা।”
তাশদীদ ওয়াশরুমের দরজায় আঘাত করতেই সাগরিকার গান বন্ধ হয়ে গেল।কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়াতে তাশদীদ বলল,
“দুই মিনিটের মধ্যে বের না হলে তুই যে নাক তোর ঘন্টুর নাকে ঘষতে চাইছিস তা ফাটিয়ে দিবো।”
সাগরিকা বেরিয়ে দেখতে পেলো তাশদীদ রুমে নেই।দ্রুত বের হয়ে নিচে নেমে এলো সে।ড্রয়িং রুমে বসতেই স্নেহা ছুটে এসে বলল,
“আপু!চাচ্চুড় খাবে?”
“চাচ্চুর না স্নেহা চানাচুর হবে।হুম খাবো দাও।”
“তাহলে রান্না ঘরের উপর থেকে পারতে হবে। যাবা?”
“আচ্ছা চলো যাই। তোমার চাচ্চুড় আর আমার একমাত্র আলাভোলা জামাইয়ের জন্য চা বানায় নিয়ে আসি।”
স্নেহা কী বুঝলো তা সাগরিকাও বুঝতে পারলো না। তবে মাথা দুলিয়ে চলল তার সাথে।সাগরিকা স্নেহাকে রান্না ঘরের একটা টুলে বসিয়ে তাকে চানাচুর খেতে দিলো।আর চায়ের পানি চুলোয় দিয়ে স্নেহার জন্য চকলেট মিল্কশেক বানাতে লাগলো।চা হয়ে এলে তাশদীদের জন্য নিয়ে ফিরে এলো স্নেহার সাথে। ইতিমধ্যে ড্রয়িং রুমে সবার মধ্যেই চিন্তার ছাপ পড়েছে।
তাদের চিন্তার ধরন দেখে সাগরিকা প্রায় ভয় পেয়ে গিয়েছে। তবে কী বুড়ি সত্যি টপকে গেছে?এবার তো তাহলে তাকেও বুড়ির জন্য কাঁদতে হবে।কিন্তু তার তো কান্না আসবে না।এবার উপায়?
সাগরিকা অবশ্যই বুদ্ধিমতি মেয়ে।কয়েক সেকেন্ডে ভেবে বের করে ফেলল।যদি তার কান্না না সে তবে অর্ধেক পেয়াজ এনে চোখের সামনে ধরবে।ব্যস কান্না না এসে যাবে কই?
এবারো সাগরিকা অদৃশ্য হাত দিয়ে নিজের পিঠ নিজে চাপড়ে দিলো।এরপর নিজে নিজেই মনে মনে বলল,
“আমি এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাই কিভাবে?নিশ্চয়ই বালিশের নিচে মাথা দিয়ে।”
তাশদীদের হাতে চায়ের কাপ দিতেই তাশদীদ ইশারা করলো তার ডান পাশে বসতে। কিন্তু তার ডান পাশে একটু খানি জায়গা।এই জায়গায় সে বসবে কী করে?তবুও হুকুম যখন এসেছে পালন তো করতেই হবে। তাশদীদের পাশে বসতেই তাশদীদ কিছুটা সরে বসে তাকে জায়গা করে দিলো।সাগরিকার আজ নিজেকে বড় বড় মনে হচ্ছে। কারণ এর আগে ফ্যামিলি মিটিংয়ে দাঁড়িয়েও থাকতে দেয়নি আজ সরাসরি বসতে বলছে। তবে কী সত্যি বুড়ি নেই?তার তো এখন পেয়াঁজ দরকার।সবার মুখ থমথমে অথচ তার কান্না আসবে না।এবার কী হবে?
সাগরিকার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো যখন ডাক্তার আংকেল এসে জানালেন তাশদীদের মায়ের ব্লাড প্রেসার নেমে গেছে। এই কারণে বমি আর মাথা ঘুরাচ্ছে।বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তার কিছুই নেই।তবুও সবার মন খারাপ রইল।কারণ তাদের পরিবারে বিপদ লেগেই আছে। তাশদীদের মা কে বিশ্রাম করতে দিয়ে তারা যে যার ঘরে চলে এলো।নিজ রুমে ফিরে সাগরিকা বিছানায় বসে তাশদীদ কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমি কিন্তু চমচম খাই না। আমি কালোজাম খাবো।”
“ফ্রিজে থাকলে এনে খেয়ে নে।না থাকলে অর্ডার কর।”
“উহু এখনি না নয় মাস পর খাবো। কালোজাম খাবো মিষ্টি না।সু-সংবাদ আসতেছে যেহেতু।”
সুসংবাদ বলতেই তাশদীদের টনক নড়ে উঠলো।বুঝতে বাকী রইল না সাগরিকা কী বলছে। সে সাগরিকাকে মেকি ধমক দিয়ে বলল,
“ফাজলামো হচ্ছে?”
“বাহ্ রে। বড় মার মাথা ঘুরছে, বমি করছে তবে কী আমরা সু-সংবাদ পেতে যাচ্ছি না?”
তাশদীদ চোখ গরম করে তাকাতেই সাগরিকা দৌড়ে রুম ছেড়ে পালালো।তাকে চলে যেতে দেখে তাশদীদ মুচকি হেসে মনে মনে বলল,
“এই পানসে জীবনে নোনতা-মিষ্টি সাগরিকা আর তার পাগলামো না থাকলে হয়তো কবেই সে বয়সের আগে বুড়িয়ে যেত।”
চলবে,,,
#এক_কাপ_চা
পর্বঃ৩৮
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(১৯২)
“আজকে আমার স্ত্রীর বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে৷ বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসা ব্যক্তিটা আর কেউ নয় স্বয়ং আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
উপহাসের সুরে কথাটা বলল তাশদীদ। তার চেহারায় ফুটে উঠেছে বিরক্তি। শুধু তাই নয়, তাকে দেখে মুনিরের মনে হচ্ছে চারপাশে ব্যাপক ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়েছে।হাতে থাকা সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে সামনে থাকা এশট্রেতে রাখলো তাশদীদ।
তাকে স্বান্তনা দিতে মুনির বলল,
” আচ্ছা শান্ত হয়ে বোস। দেখ তোর আর সাগরিকার বিয়ের কথাটা কিন্তু এখনো কেউ জানে না।কোনো অনুষ্ঠান কিংবা এনাউন্সমেন্ট করিস নি।তো এই দিক থেকে তোর বন্ধুর দোষ খুঁজে লাভ নেই।”
“বিয়ে করলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানাতে হবে?”
“তবুও। স্বাভাবিক ব্যাপারটা তুই জটিল করছিস।সম্পর্কে তোর চাচাতো বোন সাগরিকা।বিয়ের পর কী সে অন্য বাড়িতে গিয়েছে?আগের মতোই এক বাড়িতেই আছে। মাত্র রুম বদল করেছে সে। বাইরের মানুষ অবশ্যই দেখতে যাচ্ছে না একটা সংসারে কি হচ্ছে না হচ্ছে। আমার পরামর্শ মানলে আমি বলবো একটা গেট টুগেদার প্ল্যান করতে পারিস। সেখানে অফিশিয়ালি এনাউন্সমেন্ট করে দিলে আর এমন পরিস্থিতি আসবে না।”
নিজের ফোন থেকে মাথা তুলে মুনিরের দিকে তাকালো তাশদীদ। কথাটা মন্দ নয় কিন্তু তবুও সে অশান্ত।অন্য একটা সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তার মনে। একটা সন্দেহ, সাগরিকাকে নিয়ে।
মুনিরের বিয়ের সময়টাতেই তার বন্ধু রাফির ফোনে সাগরিকার ছবি দেখেছিল সে। জিন্স ফতুয়া পরনে ছবি। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হওয়ার কারণে সাগরিকার এসব পরে বাইরে যাওয়া বরাবর নিষেধ। তবুও তার জিন্স পরা ছবি রাফির ফোনে গেল কী করে?এটা নিয়ে তখন কথা বলার সময় পায়নি তাশদীদ। রাফি দেশের বাইরে গিয়েছিল আর সাগরিকাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে ভয়ে জমে যেতো।কিন্তু এখন এসবের একটা বিহিত করা প্রয়োজন।
মুনিরকে কোনো জবাব না দিয়েই সেখান থেকে চলে এলো তাশদীদ। মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে তার। ড্রাইভিং সিটে বসতেই রাফির কল এলো।
“বাসায় জানিয়েছিস?”
“রাফি তোর এত তাড়া কেন?”
“আমি মাস খানেক পর আবার ইন্ডিয়া যাচ্ছি।তোর বোনকে সাথে নিয়ে যেতে চাই। তাছাড়া বিয়ে নিয়ে ওর কিছু ইচ্ছে আছে। কিছু অনুষ্ঠান এসবে সময় লাগবে।”
“কাকে তুই বোন বলছিস?একটু সামলে বল।কারন সম্পর্ক বদলাতে সময় লাগে না।”
“তুই কি সব বলছিস?”
“যাকে বিয়ে করতে চাইছিস সে কী তোকে পছন্দ করে?”
“গত দুই বছর ধরে আমরা কমিটেড।তাছাড়া আমার ধারণা তুই আমার ফোনে ওর ছবিও দেখেছিস। যে মেয়ে ওড়না ছাড়া তোদের সামনে আসে না সে মেয়ের জিন্স পরা ছবি আমার কাছে থাকাটা তুই বুঝিস।বুদ্ধিমান তুই। সম্পর্কে সিরিয়াস না হলে এমন হতো না।”
ছবির কথা মনে করাতে তাশদীদের মাথার যন্ত্রণা আরো বাড়তে লাগলো।দপ করে ফোন কেটে দিয়ে দ্রুত ছুটে চলল বাসার দিকে।
(১৯৩)
ড্রয়িং রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে তাজবিদ। তার পাশেই জুবুথুবু হয়ে বসে আছে সাগরিকার বেস্ট ফ্রেন্ড সীমা।এর আগে বহুবার সে এই বাসায় এসেছে কিন্তু আজকে আসার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। তাজবিদ সীমাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। এহেন ঘটনায় বাড়ির সবাই অবাক।সাগরিকা যেন বেশি ক্ষেপেছে।সে কিছুতেই তার বান্ধুবীকে এই বাড়িতে মেনে নিতে পারছে না।
এক দফা তাজবিদের সাথে রাগারাগি করে গিয়ে ডায়নিং টেবিলের দিকটায় দাঁড়িয়ে আছে সে।গলা ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।
কিছুক্ষণ পর দৌড়ে এসে তাজবিদ এবং তার বান্ধুবী কে বলল,
“আজ থেকে তোরা দুই জনেই আমার জন্য মরে গেলি।আমার সামনে আসবি না তোরা। কত স্বপ্ন ছিল তোদের বিয়ে নিয়ে। আর তুই আমার ঘরটাই দেখলি?আমি বার বার তোদের বারণ করেছিলাম। আমার ভাই থেকে দূরে থাকতে আর তুই এটা কেন করলি?”
সাগরিকার কথায় সীমা কোনো জবাব দিলো না।সে জানে সাগরিকা তাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু তাদের জীবনে একটা বাজে অভিজ্ঞতা আছে। বান্ধুবীকে ভাবী বানানোর কারণেই তাদের এক প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সাগরিকা ভয় পায়, তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার। আজ তাই হলো সাগরিকা সব সম্পর্ক শেষ করে দিলো তার সাথে।
সাগরিকাকে কাঁদতে দেখে তাশদীদের মা তাকে ধমক দিয়ে বলল,
“চুপ থাক।তুই নিজেও খুব ভালো ভাবে আমার ছেলের ঘাড়ে উঠিস নি। নাটক করে বিয়ে করেছিস। ওকে কেন বলছিস?”
তাশদীদের মায়ের কথায় সবাই যেন হতবিহ্বল হয়ে পড়লো।সে সাগরিকাকে এমন কথা বলতে পারে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না কারোর। তবুও তার কথার জবাব দিয়ে সামিনা বলল,
“তোমার ছেলে না চাইলে অবশ্যই বিয়ে হতো না।আর ঘাড়ে উঠেছে এটা কেমন কথা?তুমি বাড়ির বড়, বাড়ির বাচ্চাদের এমন ভাবে বলা কী উচিৎ?
“তুই অন্তত আমাকে উচিৎ, অনুচিত শিখাতে আসিস না।নিজের পাপ আগে দেখ।”
“আমি জানি আমি খারাপ,তাই বলে তোমাদের খারাপ হতে হবে?বিয়ে সংসার নিয়ে সব মেয়ের স্বপ্ন থাকে।সাগরিকার ও আছে তেমনি সীমার ও আছে।”
“ইখুমের ছিল না?তুই ওর সব নষ্ট করতে চাইনি?”
“আর যদি বলি এসবের জন্য তোমরাই দায়ী।আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য তোমরাই দায়ী এবং আমার এসব ভুলে তোমাদের কিছুটা হলেও সমর্থন ছিল।”
“কী বলতে চাইছিস?”
“তুমি ভালো করেই জানো।ইখুম এই বাড়িতে আসার আগে রাশেদের সাথে আমার বিয়ের কথা তুমিই আমার ভাইয়ের কানে দিয়েছিলা। শুধু তাই নয় স্নেহা অসুখে পড়লে রাশেদকে আমার ঘরে থাকার জন্য তুমিই বলতে ভাবী।”
সামিনার কথায় তাশদীদের মা আরো রেগে গেলো।তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল ইখুম।হ্যাঁ তার মনে পড়েছে, সামিনার অসুখ কিংবা স্নেহার জ্বর হলে ভাবীই রাশেদকে ডেকে নিয়ে যেত।ঘর থেকে এক গাল হেসে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলতো
“ওর কেউ নাই রাশেদ ভাই।তুমি ওরে ফেলে দিও না।কায়সার ভাইয়ের শেষ স্মৃতি স্নেহা।তোমার দায়িত্ব। আমরা আর কয় দিন বাঁচবো?”
(১৯৪)
বাসায় ফিরে ওসব দেখে তাশদীদের মনে হচ্ছিলো তার মাথাটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে সাগরিকাও কেঁদে যাচ্ছে। বাচ্চাদের মতোন বায়না ধরেছে সে এই বাসায় থাকবে না।
তাশদীদ আপাতত কোনো কিছু পাত্তা না দিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।সাগরিকাকে বলল,
“দ্রুত এক কাপ চা নিয়ে রুমে আয়।”
বাধ্য মেয়ের মতোন সাগরিকা তার জন্য চা বানাতে গেলে তাজবিদ ইশারায় তাশদীদকে বলল তার ফোন চেক করতে। ফোন হাতে নিতেই দেখতে পেলো তার ফোনে একটা ম্যাসেজ এসেছে,
” ভাই, সীমা মা হতে চলেছে ওর তিন মাস চলছে।বাধ্য হয়েই ওকে বাড়ি নিয়ে এসেছি।”
তাশদীদ পড়ে তাশদীদ সীমাকে বলল,
“রুমে যাও সীমা।বাবা কাকারা চট্টগ্রাম থেকে আগামীকাল আসবে। এরপর তোমার পরিবারের সাথে কথা হবে। আজ তুমি সাগরিকার রুমে থাকবে।”
তাশদীদের কথা শুনে সাগরিকা দৌড়ে এসে বলল,
“ও আমার ঘরে থাকলে আমি বাসা থেকে চলে যাবো।কোনো বিশ্বাস ঘাতকের জায়গা এই বাড়িতে নেই।”
সাগরিকার কথা শুনে তাশদীদ মনে মনে বলল,
“তবে তোর নিজেরো এই বাড়িতে জায়গা নেই।”
কিন্তু মুখে তুলিকে আদেশ দিলো সীমাকে উপরে নিয়ে যেতে। সাগরিকা রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার ভান করতেই তাশদীদ সকলের সামনে সাগরিকাকে তুলে নিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।রুমে এসে তাকে বিছানায় ধপাস করে ফেলে দিয়ে পাশে থাকা টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি শেষ করে ফেলল।ছাড়া পেয়ে সাগরিকা দরজা খুলতে যাচ্ছিলো তাকে টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে তাশদীদ বলল,
“তোর সাথে ভালো হলে আমার চলবে না।তুই কোথাও যেতে পারবি না।যদি মরিস তো আমার সামনেই মরবি, আমার সামনেই মরে পড়ে থাকবি। তাও কোথাও যেতে পারবি না।তোর অনুষ্ঠান করে বিয়ের স্বাদ আমি মেটাচ্ছি।”
চলবে