এক কাপ চা পর্ব ২৭+২৮

0
686

#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-২৭+২৮
(৭৯)

গতকাল ওরা যখন বাড়ি ফিরেছিল তখন আসরের আজান হচ্ছে।
বাড়ি ফিরেই সাগরিকা,স্নেহাকে দেখা শোনা করার জন্য ডক্টর নিয়ে এসেছিল শুভ্র। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর স্নেহার পায়ের অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ডক্টর৷
রাশেদ, ইখুম তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে মৌসুমি এসে তাশদীদ কে বলল,

“ঘরের সবার মনের অবস্থা ভালো নয়। কিছু করা দরকার।”

“কী করবি?”

“কিছু খাবার বানিয়ে নিয়ে আসি?সবাই মিলে একটু গল্প করলেও অনেক ভালো লাগবে।”

“দেখ কী করতে পারিস।”

তাশদীদকে খুশী করার জন্য হলেও মৌসুমি পা বাড়ালো রান্না ঘরের দিকে। রান্না ঘরে ঢুকেই সে বলল,

“আলুর চপ বানাবো। সব রেডি করে দাও।”

কাজের মেয়ে হাতে হাতে সব করলে মৌসুমি চিন্তা করলো আজ নতুন কিছু করা যাক। তাই সে ডিম ফাটিয়ে না নিয়ে ডিম তেলে ভেজে মাখিয়ে নিলো। ভাজা মাখানো ডিমের মধ্যে চপ গুলো এপিঠ ওপিঠ করে বিস্কিটের গুড়ো দিয়ে ডুবো তেলে ছেড়ে দিলো।ডুবো তেলে ছেড়ে দিতেই চপগুলো ছড়িয়ে পুরো তেল নষ্ট হয়ে গেল।
কোনো মতে যখন সে দুটো চপ ভেজে তুলেছে তখন জুলি এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

“এইন্না কি করতাছেন?সরেন আমি কইরা দেই। আপনি তাশদীদ ভাইয়ের কাছে যান।আপনার লগে বিয়া ঠিক হইছে আর ঘুমাইতাছে সাগরিকার লগে?আগে ঘর ঠিক করেন। এসব করার দরকার নাই।”

“তাশদীদ সাগরিকার সাথে?”

“হু। দেখেন যাইয়া।আগে এই মাইয়ার ব্যবস্থা করেন।”

“কী করবো?আদৌও কী কিছু করার আছে? ”

“শুনেন মাইয়া মাইনষের জানের থেইকা মান বড়। আপনি কিছু করেন।”

“কী করবো?”

“আপনি দেখি কিছুই জানেন না।সাহস দিলে কিছু কইতে পারি।”

“কী?”

“সাগরিকার খাওনের মধ্যে মাল পানি মিশাই দেন।আপনারা তো বিদেশিডা আনেন। ওইডা এত গন্ধ না।বাংলাডার মতোন। ওইডা খাওয়াই দেন ওরে৷ আর খাওয়ানোর দায়িত্ব কিন্তু আফনের।ওইডা খাওয়াই দিয়া ওরে টিক কইরা শুভ্রর ঘরে ঢুকাই দিবেন।রাইত ভর থাকলে বাকী কাম আপনার নান্নান তো আছেই। আপনি বুঝছেন তো?”

মৌসুমি এক মুহুর্ত কিছু ভাবলো।এরপর জুলিকে বলল আপনি চপ ভাজেন আমি আসতেছি।
সন্ধ্যের পর সবাই যখন নাস্তা করছিল তখন সাগরিকা একবার মুখে দিয়ে খাবার নামিয়ে রেখে বলেছিল সে খাবে না।খাবার তার কাছে বিস্বাদ এবং গন্ধ লাগছে।
কিন্তু সবাই বলল ব্যথার কারণে হয়তো তার জ্বর এসেছে বলে এমন লাগছে।
মৌসুমি টমেটো সস দিয়ে হলেও সাগরিকাকে খাইয়ে দিলো।
প্রথমে এসব সাগরিকার বেশ খটকা লাগলেও শরীর ভালো না তাই সে খুব একটা কথা না বলে খেয়ে নিলো।
খাওয়ার পর যখন মৌসুমি তাকে কোল্ড ড্রিংক দিলো সেটা বেশ ঝাঁজালো ছিলো। কিন্তু ঘরে ফেরার তাড়ায় সাগরিকা কয়েক চুমুক খেয়ে ফিরে এলো ঘরে। ঘরে ফিরেই বিছানায় শুয়ে ছিল।
আর জুলি সাগরিকার প্লেট সহ সবটা বাইরে ফেলে দিয়ে এলো।
সবার থেকে সাগরিকাকে আলাদা বসাতে আজ তার বেশ কায়দা করতে হয়েছে।

(৮০)

রাত যখন গভীর হয়েছে তাশদীদ সাগরিকার ঘরেই ছিল।মৌসুমি তখন এসে তাশদীদকে বলল তার ঘরে ফিরে যেতে। সাগরিকা তখন গভীর ঘুমে।
মৌসুমির চাপাস্বরেও তার ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে চিৎকার করে বলল,

“তুমি আমার ঘরে কী করো?বেরিয়ে যাও।”

সাগরিকার এমন ব্যবহারে অবাক হয়ে তাশদীদ জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে? সাগরিকা অনবরত চিৎকার করেই যাচ্ছে। সে মৌসুমি কে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইছে। তাশদীদ তার দিকে এগিয়ে যেতেই প্রথম এবার সাগরিকার থেকে ওয়াইনের স্মেল পেলো।
তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“তুই কী খেয়েছিস?”

“তোমার মাথা খেয়েছি।”

“জেদ করে না। তুমি কী কিছু উদ্ভট খেয়েছো?বিস্বাদ কিছু?”

“রাতের সব খাবার বিস্বাদ ছিল।গন্ধ ছিল।”

“আমায় কেন ডাকোনি?”

“সব্বাই বলল আমার জ্বর। তাই এত বিস্বাদ।”

এই কাজটা কার বুঝতে বাকী রইল না তাশদীদের, সে মৌসুমিকে কিছু বলার আগেই তার দাদী এসে বলল,

“চিল্লাইতাসোস কেন?”

সাগরিকা আরো দ্বিগুণ জোড়ে বলল,

“একশ বার। ওই মেয়েকে বের করো না হলে আরো করবো?”

“ও থাকবে। তুই কী করবি?”

“এই কুটনি বুড়িটা, বদমাইশের নানী
সহ বের করে দিবো আমি,দাঁড়াও। এই ছাড়ো আমায়। এই বুড়ি তার ছেলের জীবন ত্যানা ত্যানা করে দিয়েছে।
ফাজিল বুড়ি।”

“এত সাহস। আমার ঘরে দাঁড়িয়ে? ”

“এই ঘর ও আমার, এই বর ও আমার।”

সাগরিকা তাশদীদের বুকে আংগুল ঠেকিয়ে বলল।ততক্ষণে সবাই এসে হাজির হয়েছে।
সাগরিকা তার বড় চাচার সামনে দাঁড়িয়ে হাত পেতে বলল,

“আমাকে বিয়ে দাও।”

এমন ভাবে সে তার চাচার সামনে হাত পেতেছে যেন বিয়ে হাতে দেওয়ার কোনো একটা বস্তু।চাচাকে চুপ থাকতে দেখে সে তার বাবাকে একই কথা বলল,

তার বাবা তাকে জবাব দিলো,

“এত রাতে বিয়ে?পাত্র লাগবে না বুঝি?”

তাশদীদ সাগরিকাকে টেনে তার দিকে ঘুরিয়ে নিতে নিতে বলল,

“ওর নেশা হয়েছে। বাদ দাও ওর কথা।কাল সকালে যে এমন করেছে তার বিচার আমি করবো।”

“আগে আমাকে বিয়ে দাও।”

“কাকে বিয়ে করবি?এই ছেরি রাত বিরাতে তামাশা পাইছোস?”

সাগরিকা পুনরায় তাশদীদের বুকে তর্জনী রেখে বলল,

“এই যে। বিয়ে করবো।”

এবার মৌসুমি রেগে বলল,

“তামাশা না কী? বিয়ের ধান্দা?তাশদীদের সাথে আমার বিয়ে তুই জানিস না?”

তাশদীদ ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলল

“রিয়েলি?কবে ঠিক হলো?”

সাগরিকা তাশদীদের হাত থেকে ছুটে টেবিলের উপর থেকে ফল কাটার ছুড়ি নিয়ে বলল,

“বিয়ে দিবে কী না?না দিলে তাশদীদ কে মেরে ফেলবো।”

সে সত্যি তাশদীদের গলায় ছুড়ি ধরে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে রইল।
এই অবস্থায় বাড়ির মানুষ হাসবে না কী করবে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।এদিকে কেউ হাসলেও সাগরিকা ক্ষেপে যাচ্ছে।

সাগরিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাশদীদ বলল,

“কাকা, আমি সাগরিকার সব দায়িত্ব নিতে চাই।যদি তুমি আমাকে তোমার মেয়ের যোগ্য মনে কপ্রে থাকো তবে বিয়ের অনুমতি দাও।বাবা,আমি সাগরিকাকে বিয়ে করার জন্য অনুমতি চাইছি।”

সাগরিকা এবার ছুটে এসে তার চাচাকে বলল,

“আমি তোমার এই কুটনি মায়ের থেকে ভালো মা তাই না?দাও না অনুমতি!”

সবার অনুমতি নিয়ে রাত বারোটার সময় তাশদীদ, সাগরিকার বিয়ে হলো।রাশেদ,মুনির কোথা থেকে কাজীও তুলে এনেছিল রাত করেই।
কবুল বলার আগ থেকেই সাগরিকা প্রায় অচেতন অবস্থায় ছিল।কবুল বলার পর সে পুরোপুরি ঘুমে।
তার ঘুমানো দেখে তাশদীদ নিশ্চিত হলো সন্ধ্যে থেকে সে ঘুমে নয়, নেশায় অবচেতন ছিল।

(৮১)

তুলির থেকে সব শুনে সাগরিকা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।সে সত্যি এসব করেছে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু অবশ্যই এসব কথা বানানো নয়। না হলে তাশদীদ ঘরে দরজা দিয়ে তার সাথে থাকতো না।হাতের নখ কামড়ে সে বলল,

“আমার মাথায় পানি দে তুলি।আমি শেষ। আমি এসব করেছি?”

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সাগরিকা ঘরে ফেরার সময় শুনতে পেল তাশদীদের বাবা কিছু একটা নিয়ে তর্ক করছে তার স্ত্রীর সাথে। এই প্রথম তাদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে দেখলো সাগরিকা।
জানালার কাছে যেতেই সে শুনতে পেল তার বড় চাচা বলছে,

“সাগরিকাকে তাশদীদের বৌ হিসেবে আমি কোনো দিন মেনে নিতে পারবো না।আমার ছেলে সব জানার পরেও ওই আমার বিশ্বাসের সাথে এমন করতে পারলো?আমি কোনো দিন ওদের মন থেকে মানতে পারবো না।তাই মায়ের মতোন আমিও চাই ওদের ছাড়াছাড়ি হোক।”

চলবে…..

#এক_কাপ_চা
#পর্ব-২৮
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(৮২)

তাশদীদের বাবার ইচ্ছে ছিল তাশদীদের বায়োলজিকাল মায়ের বোনের মেয়ের সাথে তাশদীদের বিয়ে দেওয়ার।
সে সরাসরি না বললেও মাঝেমধ্যে তাশদীদকে কথার ছলে বলেছিলো।একমাত্র এভাবেই তাদের সাথে পুনরায় একটা সম্পর্কে জড়ানো যাবে।
কিন্তু তাশদীদ এভাবে সাগরিকার পাগলামোতে মত চাইবে সে বুঝে উঠতে পারেনি।

সে চেয়েছিল তাশদীদের সাথে খুব দ্রুত এসবে কথা বলবে কিন্তু তার ছেলে তাকে নিরাশ ছাড়া কিছুই করেনি।

“আপনি এসব নিয়ে এখন আফসোস করছেন অথচ মৌসুমির সাথে বিয়েতে তো মত ঠিক দিয়েছিলেন।”

তাশদীদের মায়ের কথায় সে বলল,

“আমি তখনো কথাটা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু মায়ের উপর দিয়ে কথা বলার সাহস হয়নি।”

“এখন আপনার মায়ের কথার উপর দিয়েই কথা হয়েছে। তাছাড়া ওরা যদি সুখে থাকে আমাদের কী সমস্যা।”

“সাগরিকার বাবা তো সব জানতো।সে কেন অনুমতি দিলো? ভাই হয়েই ভাই আমার সাথে বেঈমানী করলো।শুধু নিজের মেয়েকে কাছে রাখতে পারবে বলে?”

“তাশদীদ যে সাগরিকাকে ভালোবাসে এটা আপনার চোখে না পড়লেও আমাদের সবার চোখেই পড়ে। তাছাড়া সন্তানের ক্ষেত্রে সব বাবা-মা সন্তানের সুখ,খুশীটাই দেখে। ”

“ভালোবাসা?জানালা দিয়ে পালাবে। মিলিয়ে নিও।”

“আপনার ছেলেকে আপনি তাহলে চিনেন না।আপনি আমি কিংবা পরিবারের সবাই ওর বিপক্ষে গেলেও সে সাগরিকাকে ছাড়বে না।স্বয়ং সাগরিকাও যদি ছাড়তে চায় তাও ছাড়বে না।”

“সময় কথা বলবে।আজকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আগামীকাল তাশদীদ সহ তোমরা সবাই পস্তাবে।
মনে রেখো

সাগরিকা শীতল বরফ আর তাশদীদ উষ্ণ হাওয়া।দুজন দুজনের বিপরীতে।এক জনের সংস্পর্শে যে কেউ তার স্বকীয়তা হারাবে।”

“আর যদি দুজনে মিলে মিশে জল হয়?”

পুরুষ মানুষ সব সময় চায় তার মনের সকল ভাবনার সাথে তার প্রেয়সী কিংবা স্ত্রী সহমত হোক।তারা যদি এ বিষয়ে কোনো তর্ক বির্তক করে তবে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রেয়সীকে চূড়ান্ত মানসিক আঘাত দিতেও দুইবার চিন্তা করে না। তাশদীদের বাবা তার স্ত্রীর কাছ থেকে সাগরিকার বিরুদ্ধে কিছু না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েই তাকে চূড়ান্ত আঘাত করে বসল।

“শান্তি মারা যাওয়ার পর আমি তোমাকে ঘরে তুলেছিলাম আকলিমা।আমার বিশ্বাস ছিল তুমি শান্তিকে মন থেকে মেনে নিয়ে তার সন্তানকে মানুষ করতেছো। কিন্তু তুমি কোনো দিন শান্তিকে মেনেই নিতে পারোনি।তাই শান্তির সব স্মৃতি তো মুছেই ফেলছো সাথে শেষ যে সুতোটা ছিল তাও কেটে যাওয়ায় উল্লাস করতেছো।
আমার এখন সত্যি আফসোস হচ্ছে কেন আমি শান্তির জায়গায় তোমারে আনলাম?”

দীর্ঘ সাতাশ বছর বিবাহিত সম্পর্কের পর তাশদীদের বাবার এমন কথায় ভিতর থেকে নিজের নারী সত্ত্বা ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল তাশদীদের মায়ের।

তার স্বামী ঘর থেকে বেরিয়েছে অনেক ক্ষণ হলো।বিছানার একপাশে বসে ছিল সে। হঠাৎ নিচ থেকে কেউ ডেকে উঠলো তাশদীদের মা বলে।

অন্য সময় হলে সে এক ডাকেই জবাব দিতো কিন্তু আজ সে দ্বিধায় ভুগছে। আসলেই কী সে তাশদীদের মা হয়ে উঠতে পেরেছে না কী তাশদীদের নজরেও সে কেবল মাত্র তার বাবার দ্বিতীয় পক্ষ!

(৮৩)

দরজার সামনে থেকে তিনবার ফিরে এসেছে সাগরিকা।তাশদীদ তার ঘরে বিছানায় মনে হচ্ছে।
যাবে কী যাবে না করতে করতেই তিনবার ফিরে এলো সে।
ফিরে আসার সময় এবার তার দেখা হলো তাজবীদের সাথে। তাজবীদ তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু-কুঁচকে বলল,

“আমার চা কই?বিয়ে হয়েছে বলে চা পাবো না?এটা কোথাকার আইন।”

সাগরিকা দ্রুত এসে তাজবীদের হাত ধরে বলল,

“ও ভাইয়া, সত্যি বলো না!আমার বিয়ে হয়ে গেলো?কী করে হলো?আমার কিছুই তো মনে নেই।”

“নেশার ঘোরে মানুষ সব সময় সত্যি কথা বলে। তার মনে যা থাকে মানে সে যা চিন্তা ভাবনা করে সব’টা তার মুখে চলে আসে। তাছাড়া গত দিন তুই বেশ বিরক্ত ছিলি ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে। তোর মনে যা ছিল তাই হয়েছে।”

“কিন্তু!”

“কী?”

“বড় বাবা মনে হয় রাজী ছিলেন না।”

“তোর মাথা। আব্বুই তো বেশি খুশি হয়েছে।”

“শোনো না!”

“চুপ যা। ঘরে বিয়ে করে তো একে আমার হক মেরেছিস। না তুই আমাকে জুতো চুরি করার কোনো স্কোপ দিলি না আছে তোর সুন্দরী ননদ। এর জরিমানা তোকে দিতে হবে।”

“কী জরিমানা হয়েছে? আমি কী করেছি আমি?তোমরা বিয়ে দিলে কেন?”

“আশ্চর্য তুই।কার কাছ থেকে ট্রিট নিবো?ভাইয়াকে দুলাভাই ডাকবো?নিজের ভাইয়ের জুতো চুরি করাবো?”

“সত্যি আমার বিয়েটা হয়ে গেলো?শাড়ি পরা হলো না।মেহেদী দিলাম না।ফটোসেশান হলো না।আমি কী করে নিজে নিজের ভাবী হয়ে গেলাম?”

“তাই বলে আমি তোকে ভাবী ডাকতে পারবো না।”

সাগরিকার মন খারাপেও মন ভালো হয়ে গেলো।সে তাজবীদের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,

“বেয়াদব ছেলে। আমি তোমার বড় না?আমাকে তুই করে বলছো?দেবো কান মলে।”

সাগরিকা তাজবীদের কান মনে দিতে যাচ্ছিলো সেই মুহুর্তে পিছন থেকে তাশদীদ বলল,

“কী করছিস তোরা দুজন?তাজ সাগরিকার শরীর ভালো না ওকে জ্বালাস না।আর এই তুই ঘরে আয়।”

তাশদীদ ঘরে চলে যেতেই সাগরিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে তাজবীদ বলল,

“ভাবী!ও ভাবী যাও না ঘরে তোমার বর যে অপেক্ষা করে।”

সাগরিকা কপট রাগ দেখাতেই তাজবীদ বলল,

“বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এই বার ঘুঘু তোমার বধিবে পরাণ।মু হা হা হা হা, শয়তানের খালা।”

ঘরে ঢুকেই সাগরিকা দেখলো তাশদীদ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। তার গা দিয়ে টুপ টুপ করে পানি ঝরছে। চিবুক গড়িয়ে পানি পড়ার দিকটায় তাকাতেই সাগরিকার হঠাৎ পানির তৃষ্ণা পেলো।হঠাৎ অনুভব হলো তৃষ্ণায় তার গলা ফেটে যাচ্ছে।
পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়াতেই তাশদীদ বলল,

“ফ্রেশ হয়ে আয়।”

সাগরিকা চুপচাপ চলে গেল।ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে সে দরজা লাগালো না।একটু ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করছে তাশদীদ কী করছে। চোরের মতোন চুরি করে দেখতে গিয়ে সে হঠাৎ শুনতে পেল তাশদীদ বলছে,

“দেখার ইচ্ছে হলে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে যা।ওয়াশরুমের ভিতর থেকে দেখার কোনো দরকার নেই।”

তাশদীদের কথায় সাগরিকা এতটা হচকচিয়ে উঠেছে যে সে ধুপ করে ওয়াশরুমের ফ্লোরে বসে পড়েছে।

(৮৪)

সামিনার শরীর কিছুটা ভালো হলে সে স্নেহাকে ধরে মরা কান্না শুরু করেছে। ইখুম তার পাশে বসে তাকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সামিনা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না তার মেয়ের সাথে এত কিছু হয়ে যাচ্ছিলো।কী হতো যদি তাশদীদ ওরা সঠিক সময়ে না পৌঁছাতে পারতো?

ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার। মেয়ের জন্য হলেও তাকে বাঁচতে হবে। মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে সে বলল,

“মাফ করে দিস মা।আমি জানতাম না।আমি তোর জন্য সব করতে পারি। কারণ মা কখনো খারাপ চায় না।আমাদের আর কাউকে লাগবে না। আমি তুই দুজনে মিলেই আমাদের সব হবে।”

স্নেহা কিছু না বলে অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল।গত দু দিনে সে কোনো কথা বলেনি। কারোর সাথেই নয়। ব্যথায় কাঁদেনি। চুপচাপ সব সহ্য করছে। পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে এতটা চুপচাপ দেখে সবার ভয় করছে। স্নেহার মধ্যে যেন প্রান নেই। যা আছে শুধু টিম টিম করে জ্বলতে থাকা এক চিলতে আলো।যে আলোর সাহায্যে সে সবাইকে দেখে যাচ্ছে কিন্তু কোনো রেসপন্স দিতে পারছে না।

তাশদীদ,রাশেদ থানার উদ্দেশ্যে বের হবে।বের হওয়ার পূর্বে সে সাগরিকাকে বলল,

“বিয়ে যখন করেই ফেলেছেন তখন দায়িত্ব নিতে শিখুন ম্যাম।স্বামী কোথাও যাওয়ার আগে তাকে উষ্ণতা দিতে হয়। তো দিন আমার উষ্ণতা।”

গতকাল সাগরিকা যেভাবে হাত পেতে বলেছিল বিয়ে দিতে ঠিক সেভাবে তাশদীদ হাত পেতে কথাটা বলল।

সাগরিকা অবাক চোখে বলল,

“উষ্ণতা হাতে দেওয়া যায়?”

“তবে কোথায় দেয়?”

“ওটা তো অনুভূতি ,বস্তু নয়।”

“বিয়েটাও অনুভূতি বস্তু নয়। কাল তো এভাবেই চেয়েছেন।”

সাগরিকা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।নিচ থেকে রাশেদের ডাক পড়তেই তাশদীদ দুই হাতে সাগরিকাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করলো নিজ বাহুতে। কপালে অধরের গভীর স্পর্শ দিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

থানায় গিয়ে যখন স্নেহার বিষয় নিয়ে তারা কর্তব্যরত পুলিশের সাথে কথা বলছিল তখন জানতে পারলো স্নেহার মামাতো ভাই স্বীকারোক্তিতে বলেছে,

কেউ একজন তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়েছে স্নেহার সাথে এই কাজ করার বিনিময়ে।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here