#এক_কাপ_চা
#পর্ব-২৩+২৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৬৭)
সকাল বেলায় কুয়াশার চাদরে ঘেরা চারিপাশ।পুকুরের চারিপাশে ছেলেদের ভীর। নিজ ঘরের বারান্দার দিকে এগিয়ে এলো সাগরিকা।পুকুরের পানিতে জাল ফেলা হচ্ছে। উঠে আসছে বড় বড় মাছ।
চায়ের কাপে চিনি দিয়ে তাজবীদের দিকে এগিয়ে দিলো সে।
কাঁদোকাঁদো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়া আমার কী হবে?”
“কী হবে?”
“রঙ্গ তামাশা করে লাভ নেই।কিছুক্ষণ পরেই দিবে ডাক।আমায় মাছ কাটতে দিবে।”
“দিবে না।”
“দিবে না?কেন?তুমি এতটা শিউর কী করে?”
“যে মানুষটা অসুস্থতায় পুরো রাত জেগে তোর ঘুম পাহারা দেয়, যে একটু আঁচড় লাগলে তোকে খাইয়ে দেয় সেই মানুষ কখনো তোকে এই শীতে পানিতে হাত দিতে দিবে এমন টা অন্তত আমি মানতে পারি না।”
“যূপকাষ্ঠে উঠানোর আগে বলির পাঠাকে একটু যত্ন করে মাথায় হাত বুলিয়েই দেওয়া হয়।”
“তুই বুঝবি না। কিছু মানুষের ভালোবাসার ধরন আলাদা। সবাই যদি সব বুঝতে পারতো তবে নিউটনের মতোন আমরাও সূত্র আবিষ্কার করতে পারতাম।”
সাগরিকা ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে রাশেদের গা ঘেঁষে।
তাশদীদ ব্যস্ত কারো সাথে কথা বলতে।সাগরিকাকে দেখে এগিয়ে এলো।রাশেদকে বলল,
“নতুন মাছের পোনা এরাই না কী দিয়ে যাবে। আর পানি আসার আগেই এবার নতুন করে পাড় ঠিক করতে হবে।”
রাশেদের সাথে কথা বলছিল তাশদীদ কিন্তু মূলত সে এসেছিল সাগরিকার গায়ের চাদর ঠিক করে দিতে। তার কপালে হাত রেখে বলল,
“ঘরে যা। জ্বর আপাতত নেই।কাল রাতের থেকে অনেক কম।আর খেয়েছিস কিছু?”
সাগরিকা সামনে পিছনে মাথা নেড়ে না বলল।তাশদীদ তাকে ঘরে ফিরে যেতে বলেই ফিরলো পুকুরের দিকে।
ঘরে আসতেই সাগরিকা দেখলো শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে ধোঁয়া উঠা গরম গরম খিচুড়ি,বেগুন ভাজা আর ডিম ভাজা।
তুলি, মৌসুমি,মুনির ওরা সবাই খেতে বসেছে।
সাগরিকা এগিয়ে যেতেই শুভ্র বলল,
“আয় খেয়ে নিবি।খাইয়ে দিতে হবে?”
“না।আমি খাবো না।”
“কেন?”
“এমনি।”
“চল আমি খাইয়ে দেই?”
“না, না। আমি খাবো না।আমি মায়েদের হাতে ছাড়া কারোর হাতে খাইনা।”
“আর তাশদীদ এর?”
“হ্যাঁ, তারটা খাই।”
“তো আমার হাতে খাবি না কেন?”
“আরে রাগ করো না।কাল রাতে জ্বর ছিল মুখ তেঁতো।তাই আর কি।”
“আচ্ছা বেশ।”
দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাশদীদ পুরোটা বিষয় দেখছিল।শুভ্র যখন সাগরিকার মুখের সামনে খাবার তুলেছে তখন তাশদীদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।হাতের মুঠি শক্ত করে, তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিল সে কিন্তু সাগরিকার অঙ্গভঙ্গি এবং না খাওয়ায় শিথিল হলো তাশদীদের মন,মস্তিষ্ক এবং পেশী।
পুকুরের মাছ যথা নিয়মেই বিক্রি করে দেওয়া হলো।হিসেব করে টাকা নিয়ে ফিরে এলো তাশদীদ।
সাগরিকা ততক্ষণে বুঝতে পেরেছে তাজবীদ সত্যি বলেছিল।তার মাছ কাটতে হবে না।
ফোনের স্ক্রীণ স্ক্রল করে নিচে নামছিল আর ডান পা দুলাচ্ছে সে। হঠাৎ পায়ে কিছু একটার অনুভূতি হলো।তার পায়ে নুপুর। অথচ তার স্পষ্ট মনে আছে কোনো নুপুর ছিল না তার পায়ে। বিশেষ করে গতকাল ছিলোই না।উবু হয়ে বসে পায়ের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল
নতুন এক জোড়া নুপুর স্থান পেয়েছে তার পায়ে।
মনে মনে হিসেব করে সাগরিকা বলল,
“ওয়েলকাম ৪৮ তম নুপুরের জোড়া।আমি অপেক্ষায় আছি কবে তোমরা সেঞ্চুরি মারবে।”
(৬৮)
তাশদীদ কিছু জিনিসপত্রের জন্য শহরে এসেছে। আসার পূর্বে মাছ বিক্রির টাকাটা সাগরিকার কাছে দিয়েছিল।
সাগরিকা অবাক হয়ে বলল,
“কী করবো?”
“রাখ নিজের কাছে।”
“বড় মা কে দিন।এতগুলো টাকা।”
“তো?”
“যদি হারিয়ে ফেলি?”
“হারালে হারাবে। তবুও তুই রাখবি।”
“ভয় লাগছে। প্লিজ।”
“সারা জীবন সবাই বেঁচে থাকবে না। এখন থেকে কিছু দায়িত্ব নিতে হবে।”
“এই বাড়ির দায়িত্ব নিয়ে কী হবে?বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির দায়িত্ব নিবো।”
যতটা ধীরে বলা যায় সাগরিকা ততটা ধীরে বলল কথাটা। তাশদীদ তাকে জিজ্ঞেস করলো
“কী বলছিস?”
“কিছুই না।যদি আমি টাকা দিয়ে কটকটি খাই? আপনি আবার হিসেব নিবেন?একটা পাঁচশো টাকার নোট যদি চুরি করি আপনি বুঝবেন?”
তাশদীদ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল।সাদা হুডি পড়েছে আজ সে। সাথে নীল জিন্স।ঠোঁট গুলো দেখে মনে হচ্ছে যেন পাকা ডালিমের অংশ।সাগরিকার চোখ বারবার ওদিকেই যাচ্ছে আজ।তাশদীদের কথা বলার সময় অধরের অভিব্যক্তি খুব ভালো লাগে তার। কিন্তু নিষিদ্ধ জিনিসের মতোই তাশদীদ ভয়ংকর। তাকে এগিয়ে আসতে দেখেই সাগরিকা পিছিয়ে গেল।তাশদীদ স্নেহের সমেত হাত সাগরিকার মাথায় রেখে বলল,
“আমাদের যা আছে সব’টা তোর আর স্নেহার৷আমরা শুধু দেখাশোনা করছি মাত্র। তোদের যা খুশী করিস। আর হ্যাঁ,
অনুনয় নয় অধিকার ফলাতে হয়। সাবধানে থাকিস।”
তাশদীদ যাওয়ার পর সাগরিকা সেই যে ঘরে দরজা দিয়েছে আর খুলেনি। তার কাছে এখন লাখ তিনেক টাকা।
দুই ঘন্টায় সতেরো বার টাকা গুনেছে সে। কাউকে ঘরের ভিতর আসতে দিচ্ছে না, সে কারোর ডাকে বাহিরে যাচ্ছে না।
তার এখন একটাই কাজ,
তাশদীদের আমানত পাহারা দেওয়া।যা সে দিচ্ছে খুব ভালো করেই।
প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে মুনির এবং তাশদীদ ফিরছিলো গ্রামে।
মুনিরের স্ত্রী রুপা তাকে কল দিয়ে কিছু জিনিস নিয়ে আসতে বলেছে। তাশদীদ ফোনের ক্যালেন্ডার দেখে নিলো একবার।মুনির যখন তার স্ত্রীর জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত তাশদীদ বেরিয়ে পড়লো ফার্মেসীর উদ্দ্যেশ্যে।
ফিরে এসে তাশদীদের পাশে মুনির বসে বলল,
“তোর এই সুযোগটা নেওয়া উচিৎ। এটা তোর ড্রিম প্রজেক্ট।হাত ছাড়া করিস না।এই সুযোগটা।”
“কিন্তু সম্ভব নয়। এখন সাগরিকাকে একা ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
“স্বপ্ন ছেড়ে দিবি?”
“আমি আমার পুরো জীবনটা ওকে সামলানোর জন্য, ওকে স্পয়েল করার জন্য এবং ওকে খুশী রাখার জন্যই দিতে চাই।ও হুটহাট বিপদে পড়বে। আমি না থাকলে কে সামলাবে?”
“ভালোবাসিস বলিস না কেন?”
“ভালোবাসি বলে লাভ কী?ওকে অনুভব করতে হবে আমি ওকে ভালোবাসি।”
“যদি না পারে?”
“চলছে তো জীবন চলতে থাকুক।”
কথা বলার সময় ওরা এতটা অন্য মনস্ক ছিল যে সামনের দিক থেকে আসা ট্রাক একদম নজর এড়িয়ে গেলো।যখন হুশ হলো তখন তাদের সামনে এগিয়ে আসছিল দানব আকৃতির ট্রাক।
(৬৯)
ইখুমের ঘরের থেকে জুলি বেরিয়ে এলো খুব ধীরে ধীরে।
কেউ যেন বুঝতে না পারে সে এখানে এসেছিল।সে এসেছিল ইখুমের গরম পানির ফ্লাক্সে বাচ্চার নষ্ট হওয়ার মেডিসিন মেশাতে।
রাশেদের মা আজ হুকুম দিয়েছেন। সেজন্যই আজ গ্রামের মোড়ের দোকান থেকে তিন পাতা মায়া বড়ি কিনে এনেছে সে।গর্ভোনিরোধক বললে গ্রামের মানুষ বুঝে কম। এদিকে সবাই মায়া বড়ি বলে।
কিন্তু জুলি এই কাজ করতে চায়নি।
রাশেদের মা তাকে বলল,
“ওই মা** রেই রাখুম না তো ওর বাচ্চারে দিয়া কী করুম?”
“খালাম্মা বাচ্চার দোষ নাই।বাচ্চারে….”
“আর চিনহা?ওই ছেরির জন্যে যে ও বাপ ছাড়া।”
“স্নেহার বাপ রাশেদ না।”
“ভুলিস না জুলেখা আমরা কী চাই।তোর উচিৎ আমারে সাহায্য করা।”
এই এক কথায় জুলির মনের সেই সুপ্ত আগুন আবার তেঁতে উঠেছে। সে মেডিসিন মিশিয়ে এসে দাঁড়িয়ে রইল আড়ালে। ঠান্ডার কারণে ইখুম গরম পানি খায়, এখন সে চা খাবে। চিনি ছাড়া তাই তেঁতো হলেও খুব বুঝবে না।
জুলি জানালা দিয়ে দেখলো ইখুম ঘরে ঢুকে ফ্লাক্স থেকে পানি ঢেলে চা বানাচ্ছে। মুখের সামনে চা ধরতেই জুলির মুখে ফুটে উঠেছে বিষাক্ত হাসির দ্যুতি।
চলবে,,
#এক_কাপ_চা
#পর্ব-২৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৭০)
ইখুম মুখের সামনে চায়ের মগ ধরতেই রাশেদ জোড় করে তার সামনে থেকে নিয়ে নিলো রাশেদ।
ইখুমকে জ্বালানোর অভিনব কায়দা মাত্র রাশেদের।
বিছানায় বসে বেশ আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো রাশেদ।পর মুহুর্তেই মুখ থেকে ফেলে দিলো সব।
“কী খাচ্ছিলে এটা?”
“বিষ।”
“ইখুম হাসি তামাশা করছি না।বলো কী এটা?”
“চা আর কী?”
“এত তেঁতো কেনো?”
“চিনি দেইনি।”
রাশেদ এবার উঠে এলো।গরম পানির ফ্লাক্স হাতে নিয়ে ঢাকনা খোলার সময় গভীর কন্ঠে ইখুম কে বলল,
“এটা চায়ের স্বাদ নয় ইখুম।তোমাকে গরম পানি কে করে দিয়েছে?”
কথা বলতে বলতে পুরো পানি কাচের গ্লাসে ঢালতেই রাশেদ খেয়াল করলো
সাদা রঙের গুড়ো জাতীয় কিছু একটা জমেছে ফ্লাক্সের নিচে।
রাশেদের অস্থিরতা প্রকাশ করলো না ইখুমের সামনে। হাসি মুখে বলল,
“আর বলো না, হয়তো পানির কিছু একটা।আর শোনো আমি তোমাকে গরম পানি করে এনে দিবো।কারণ ফ্লাক্সের পানিতে আমার বিশ্বাস নেই।”
“কেন?যে সন্তানকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে তার জন্য এত দরদ?”
ইখুমের কথার খোঁচাটা বেশ বুঝেও রাশেদ চুপ রইল।চোখ বন্ধ করে কথাটা হজম করে নিয়ে বলল,
“চা খাবে?”
“না মাথায় ঢালবো।”
“তাহলে তো এক কাপে হচ্ছে না।বালতি লাগবে।”
“আশ্চর্য মানুষ তো আপনি।”
“চলো একটু বাহিরে হেঁটে আসি। সামনের বাজারের কাছে চা’য়ের দোকান থেকে চা খাওয়া যাবে।”
“এক শর্তে।”
“কী?”
“সাথে গরম গরম জিলাপি, সমুচা চাই।”
রাশেদ ইখুমের মাথায় হাত রেখে মৃদু হেসে বলল,
“আচ্ছা বেশ তবে।”
রাশেদ, ইখুম যখন বেরিয়ে এলো তখন জুলি বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার ধারণা ইখুম চা খেয়েছে। সে হাসিমুখে চলে গেল রাশেদের মায়ের কাছে। কথাটা তাকে বলতেই সে জুলিকে একশ টাকার নোট বের করে দিয়ে বলল,
“যা তুই কিছু খেয়ে নিস।”
জুলি টাকাটা খুশি মুখেই হাতে নিলো।কোমরের দিকটায় টাকা গুজে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।রাশেদের মা ওযু করে নামাজ পড়তে বসলেন।দুনিয়াবি কাজ আর কত দিন?আর যাই করি না কেন নামাজ পড়া বাদ দেওয়া যাবে না।
মোনাজাতে সে তার সন্তানদের সুস্থতা কামনা করলেন।
(৭১)
তাশদীদ, মুনির যখন ফিরেছে তখন মুনিরের থেকে তাশদীদের অবস্থা বেশি খারাপ।মারাত্মক ব্যথা না পেলেও কেটেছে দুজনের অনেকটাই। তাশদীদের কপালে সেলাই পড়েছে, হাতেও বেশ লেগেছে। ডান হাত নাড়াতে নিষেধ করে দিয়েছে ডক্টর। এদিকে মুনিরের গালে, বুকে বেশ কেটেছে। ট্রাক চালক সময় মতো কিছুটা সাইড দিতে পেরেছিলেন বলেই ওরা এ যাত্রায় বেঁচে গেছে।ট্রাক চালক তাদের সাইড দেওয়ায় তাশদীদ গাড়িটা সামনের দিকে এগুতেই গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। শুধু তাই নয় বয়স্ক ড্রাইভার নিজে গাড়ি সাইড করে নেমে এসেছে। তাদের গাড়ি থেকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।
তার ব্যবহারে মুগ্ধ মুনির এবং তাশদীদ। শুধু তাই নয় যে অবধি তাশদীদের বাবা এবং সাগরিকার বাবা না পৌঁছেছে সে অবধি লোকটা ওখান থেকে যায়নি।নিজের টাকা খরচ করে যা যা প্রয়োজন করেছে।
তাশদীদের বাবা ফিরে আসার সময় তার হাত ধরে বলেছেন,
“ভাই আজ আপনি আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন।যদি কোনো উপকারে আসতে পারি তবে আমাকে অবশ্যই বলবেন।”
তাশদীদকে দেখে তার মা কান্নাকাটি করে অস্থির। তার ব্লাড প্রেশার বেড়েছে অনেক।ছেলেকে ধরে সে অনবরত কেঁদে চলেছে।সাগরিকা চুপচাপ লুকিয়ে তাজবীদের পিছনে।তাশদীদকে এভাবে দেখতে তার ভালো লাগছে না।কপালে ব্যান্ডেজ,শার্টে রক্ত লেগে আছে। ঘুমিয়ে আছে সে।
তাশদীদের মা ছেলের পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।রাতে সে ছেলের কাছে থাকতে চাইলে কেউ রাজি হলো না।তখন মৌসুমি বলল,
“নান্নান,আমি থাকি।তোমরা যাও ঘুমাও। আমি এমনিতেও রাত জাগি তাই সমস্যা হবে না।”
না চাইতেও মৌসুমিই রইল কারণ বাড়ির কারোর মানসিক অবস্থা তর্ক করার মতোন নেই।সাগরিকা মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।নিজের ঘরে ফিরেও তার যেন শান্তি হচ্ছে না এদিকে তুলি বসে বসে ফোনে টিকটক ভিডিও দেখতে ব্যস্ত। এতটাই ব্যস্ত যে সাগরিকার অস্থিরতা তার চোখে লাগছে না।
সাগরিকা বার কয়েক তাশদীদের ঘরের সামনে থেকে ফিরে এলো। ঘরের বাইরে থেকে মৌসুমির হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।সাগরিকা কী ভেবে ঘরে ঢুকলো সে নিজেও জানে না।ঘরে ঢুকেই দেখতে পেলো এক চেয়ারে বসে অন্য চেয়ারে পা তুলে ফোনে ব্যস্ত মৌসুমি।তাশদীদের গা থেকে কম্বল সরে গিয়েছে। তার পা পুরোটা বেরিয়ে আছে। অথচ মৌসুমি ব্যস্ত নিজের মধ্যেই।
“আপু বেরিয়ে যাও ঘর থেকে।”
“মানে?”
“মানে তোমার ঘরে চলে যাও।”
“তো এখানে কে থাকবে?”
“আমি আছি।”
“তুই কি ভুলে যাচ্ছিস? তাশদীদ তোর ভাই,প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। তার ওয়াশরুমের প্রয়োজন হলে?তাছাড়া তুই চিন্তা করলি কী করে?”
“আমার ভাই হলে তোমার কী? নানা? তোমারো ভাই। আর শোনো চিৎকার করলে এখনি তোমার খবর করে ফেলবো। যে দায়িত্ব পালন করতে পারো না নাও কেন?বের হও এখনি।”
মৌসুমি কোনো জবাব দিলো না।সে রাগে গটগট করতে করতে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
সাগরিকা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এগিয়ে এলো তাশদীদের দিকে। তার গায়ে ভালো ভাবে কম্বল টেনে দিয়ে বসে রইল মাথার দিকটায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে দিকে। কানের দিকটায় রক্ত লেগে আছে। ওয়াশরুম থেকে গামছা ভিজিয়ে এনে মুছিয়ে দিচ্ছিলো।
হঠাৎ মৌসুমি ফিরে এসে তাকে দেখে বলল,
“কী করছো?”
“তান্ডব নাঁচছি। নাঁঁচবা?তুমি এখানে কেন?”
“ইয়ারফোন নিতে এসেছি।”
মৌসুমি বেরিয়ে যেতেই সাগরিকা দরজা আটকে দিয়ে চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসে রইল।একটু পর পর সে উঁকি দিয়ে তাশদীদের মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার বইয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
তাশদীদের যখন ঘুমটা হালকা হয়েছে তখন সে অনুভব করলো তার হাতের কাছে তুলতুলে কিছু রয়েছে। লোম স্পষ্ট। প্রথমে সে মনে করেছিল বিড়াল শুয়ে আছে তার পাশে কিন্তু ভালোভাবে হাত দিতেই নাক মুখ বুঝতে পারলো।বেড সাইডের ল্যাম্প জ্বালিয়ে দেখলো সাগরিকা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে তার পাশে।হাতে ভর দিয়ে সে কিছুটা উঠে বসলো।অন্য হাতে আস্তেধীরে সাগরিকাকে ব্ল্যান্কেট এর নিচে এনে তার পুরো গা ঢেকে দিলো।সাগরিকাকে পাশে দেখে যেন তার অসুস্থতা আশি শতাংশ ভালো হয়ে গেছে।তার চুলে হাত ভুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“পুরো দুনিয়া রেখে আমার অনুভূতি কেনো তোর উপরেই আছড়ে পড়লো?”
(৭২)
সাগরিকা সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখতে পেলো সে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে আর তাশদীদ কাউচে বসে।
ঘুম ঘুম চোখেই সে বলল,
“গুড মর্ণিং সন্দেশ মশাই।আপনাকে দেখলেই কেন মনে হয় কামড়ে কামড়ে খেয়ে ফেলি?”
সাগরিকার কথা শুনে তাশদীদ তার চোখের চশমা খুলে পাশে রাখলো।ল্যাপটপ বন্ধ করে সাগরিকার দিকে তাকিয়ে রইল।
সাগরিকার ঘুম এখনো ছাড়েনি কিন্তু যখন সে তাশদীদকে এগিয়ে আসতে দেখলো তখন সে হুড়মুড়িয়ে উঠে বলল,
“আপনি জেগেছেন কখন?আর জেগেছেন তো উঠেছেন ক্যান?”
“বিছানায় জায়গা দিয়েছিস?পুরো বিছানা দেখি একাই তোর লাগে।”
“কী করলাম?আমি কিছু করিনি।আপনি এখানে বসুন।আমি এক্ষুণি আপনার জন্য খাবার কিছু নিয়ে আসবো।আর হ্যাঁ উঠবেন না।নইলে না ভেঙে দিবো।”
“কাকে হুমকি দিচ্ছিস?আমাকে?”
“হুমকি দুই একদিন খেয়ে দেখুন কেমন লাগে।”
সাগরিকা ফ্রেশ হয়ে যখন তার দাদীর ঘরের পাশ দিয়ে আসছিল তখন শুনতে পেল তাশদীদ এবং মৌসুমির বিয়ের কথা।সবাই চাইছে এখন চিনি পানিটা হয়ে যাক পরে অনুষ্ঠান হবে। তাশদীদ -মৌসুমি দুজনেই যখন সম্মতি দিয়েছে আজ সকালে তখন আর দেরি কীসের?
চলবে,,,