#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১১
(৩১)
তাশদীদের এমন কাজে চোখ বেয়ে পানিও পড়তে চাইলেও দিলো না সাগরিকা।ডাটিয়াল তাশদীদ বসে আছে সাগরিকার বিছানায়। তার কোলে স্নেহা।দুজনেই ফোনে ব্যস্ত ডোরেমন দেখতে। আড় চোখে ওদিকে তাকিয়ে রইল সাগরিকা। নিজের কৃতকর্মের ফল মানুষ কিছুটা ইহকালেই পায়। কিন্তু সাগরিকা পায় হাতে নাতে। দুপুরে খাওয়ার সময় তাশদীদের কড়া নির্দেশ ছিল যেন এই বাড়ির কোনো মেয়েই হালকা শাড়ি গায়ে না জড়ায়।
পারত পক্ষে এই আদেশ ছিল তুলি এবং সাগরিকার জন্য। কিন্তু সে ভুলে বসেছিল সবকিছু। হলুদ রঙের এই শাড়িতে শুধু পেটের অংশ নয় দেখাচ্ছিল নাভীর খাঁজ অবধি।
এটুক অবধি থাকলেও ঠিক ছিল কিন্তু বের হবার পূর্ব সে নিজের শাড়ির আঁচল টেনে নাভী বরাবর রেখেছিল।তাতেই কাল হলো সবকিছুর।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লোজেট থেকে বাসন্তী রঙের জামা বের করে নিলো সে।
এখন আর যাই হোক শাড়ি পরতে পারবে না।তার নাভীতে প্রায় ফোস্কা পড়েছে। কিন্তু কাপড় পরতে গিয়েও ঝামেলা। একটুতেই জ্বলছিল। হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজায় শব্দ হতেই সাগরিকা খুলে দিলো। তাশদীদ ওর দিকে এগিয়ে দিলো শপিং ব্যাগ।
হালকা সাদা রঙের শাড়ির মাঝে হলুদ ফুল।কিন্তু এবার শাড়ি পরার ক্ষেত্র ভুল করলো না।খুব সুন্দর করে পরে বেরিয়ে এলো।নাকের পানি, চোখের পানিতে সাজ ধুয়ে গেছে তবুও হালকা কাজল এবং গোলাপি লিপস্টিকে সাজিয়ে নিয়েছে নিজেকে।তাশদীদের পিছু পিছু গাড়িতে এসে বসতেই স্নেহা বলল,
“আপু কোলে নাও।”
তাশদীদ স্নেহাকে কোলে নিয়ে বলল,
“চল বনু তোকে আজ ড্রাইভ শেখাবো।
(৩২)
বিয়ে বাড়িতে যখন পৌঁছেছে তখন সন্ধ্যে বাতি জ্বলছে। এত দেরি হচ্ছিলো দেখে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে মৌসুমীর। তাশদীদের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছে তার।
এদিকে তাশদীদ ফিরেই প্রথমে স্নেহাকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ছেলেদের দলে চলে গিয়েছে। মৌসুমি বার দুয়েক তাকে ডাকতে গিয়েছিল কিন্তু তাশদীদ ব্যস্ত সবার সাথেই।
সাগরিকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বাবার হাত ধরে। বাবার হাত ছাড়ছে তো মায়ের হাত ধরছে। আজকের হলুদের অনুষ্ঠান বাড়িতেই হচ্ছিলো। রান্নাঘরে ফুপুর সামনে দাঁড়িয়েই তাশদীদ বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। কারণ নীলুফার বেগম ঘোমটার আড়ালে নিজের মুখ ঢেকে রেখেছেন।হাত দুটো তার ভীষণ ঠাণ্ডা হয়ে আছে। সেই হাত দুটো ধরে তাশদীদ জিজ্ঞেস করলো,
” কেমন আছো?”
“ভালো।আসিস না কেন তুই?এত শুকিয়েছিস কেন?”
“তুমিও তো যাও না। কী হয় এদের ছেড়ে চলে গেলে?”
“এরাই তো আমার সংসার রে বাবা।এদের জন্যই তো বাঁচি।”
“আমরা বুঝি কেউ না?”
“৩৫ বছর আগেই তুলে এনেছিল।এদের হাত থেকে আমার রেহাই নেই৷ বাদ দে এসব কথা। খেয়েছিস কিছু?”
“না। তুমি খেয়েছো?মুখ এতো শুকনো কেন?”
“ও কিছু না।যা সবার সাথে আনন্দ করগে। আমার এদিকে অনেক কাজ।”
“কাজের লোক কিসের জন্য রেখেছি মা?এই নাও এটা পরে জলদি এসো। আমরা সবাই ছবি তুলবো এক সাথে।”
তাশদীদ এবং নীলুফার বেগম তাকিয়ে দেখলেন তার বড় ছেলে মুনির দাঁড়িয়ে আছে শপিং ব্যাগ হাতে। এই মানুষটার জোরেই এই বাড়িতে টিকে আছে নীলুফার বেগম। না হলে হয়তো এতদিনে আত্মহত্যা করতে দ্বিধা করতো না।
নীলুফার বেগম তৈরী হয়ে এসে ছেলেকে হলুদ দিলেন।একে একে সবাই হলুদ দিলো মুনিরকে। শুধু হলুদ দিতে দেয়নি সামিনাকে।
মুনিরদের বাড়ির নিয়ম বিধবা কখনো কোনো শুভ কাজে থাকতে পারবে না। তারা বিয়েতে কাউকে হলুদ দিতে।মুনিরের দাদি তাকে নিষেধ করে ওদিকে যেতে। সামিনাও যায়নি। সে বসেছিল ঘরেই। সামিনা না যাওয়াতে সাগরিকার মা নিজেও যায়নি। কারণ তার কাছে ইখুম সাগরিকা দুজনেই সমান।ইখুমকে মন খারাপের সময় একা না ছাড়লে সামিনাকে ছাড়ে কি করে?
ছবি তোলার সময় মৌসুমি এসে ফটোগ্রাফার কে বলল তার এবং পুরো পরিবারের ছবি তুলতে। তার বাবা ভাই সবাই দাঁড়ালে তার মা কে সরে যেতে বললো।মুনির ছাড়া কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি।বিয়ে বাড়ির আমেজ, মায়ের ইশারায় কথা বাড়ায়নি মুনির। এদিকে তাজবীদ যেন আজ সোনার ডিম ওয়ালা মোরগ।
গলায় ডি এস এল আর ঝুলিয়ে হাঁটছে এবং মেয়েদের ছবি তুলছে। যে মেয়েকে পছন্দ হচ্ছে সে মেয়ের সামনে তুলিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে দাঁড় করিয়ে নিচ্ছে তো ঠিকই কিন্তু ফোকাস দিচ্ছে অন্য মেয়েদের। তুলি এই কাজে ওর ৫০/৫০ ভাগীদার। মানে এই কাজের জন্য তাজবীদ ওকে ছবি তুলে দিবে।
এসব বুঝে সাগরিকা, কিন্তু ছবি তোলার জন্য সে যেতে পারছে না।সবার থেকে দূরে বসে আছে সে। কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনছে,
“ধীরে ধীরে ছে মেরি জিন্দেগী ম্যে আনা”
কিন্তু হুট করেই ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠলে তার ভ্রু-কুঁচকে গেল।মৌসুমির ছোটো ভাই মেঘ এসে তার ছবি তুলছে।
“কি করছেন?”
“সুন্দরী মামাতো বোনের ছবি তুলি।”
“ধন্যবাদ প্রয়োজন নেই।”
“বিয়ে বাড়ি নাঁচবা না?আসো হলুদ তো লাগাও নাই।”
বলেই সে সাগরিকার হাত ধরে টান দেয়। সাগরিকা হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার পূর্বেই তাজবীদ এসে বলল,
“আমার বোনের ছবি আমি তুলতে পারি।তুই যা নিজের বোন সামলা।নইলে ফটোগ্রাফার আজ পালাবে।”
মেঘ চলে গেলে তাজবীদ, তুলি সাগরিকা আড্ডা দিচ্ছিলো। তাশদীদ এসে সাগরিকার পাশের চেয়ারে বসে।
আধো অন্ধকারে তখন সাগরিকার কোমরে তাশদীদের হাত। কিছুটা নিজের দিকে টানতেই তার দিকে তাকায় সাগরিকা। ব্যস সুন্দর একটা ছবি জমা হয় স্মৃতির পাতায়।
তাশদীদের কিছুটা কাছাকাছি এসে সাগরিকা বলল,
“আমি কী আপনার সরকারি খামার?যখন ইচ্ছা স্পর্শ করেন?বড় বাবার কাছে বিচার দিবো।”
“চল।এক্ষুণি নিয়ে যাচ্ছি।দে দেখি বিচার।”
(৩৩)
ইখুমের জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়ে রাশেদ সবে মাত্র ফোন হাতে নিয়েছে। সামিনার ৭২ টা কল দেখে বেশ বিরক্ত হলো সে। বড় ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতেই সামিনা আবার কল দিয়েছে। রিসিভ করতেই বলল বাড়ির পেছনের দিকে আসতে। সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল সামিনা।রাশেদ পৌঁছানোর পর তার বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছে সে।
আজকের এই অসম্মান সে নিতে পারছে না।কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলল
“আমার স্নেহার মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিও না রাশেদ। তোমার ভাইয়ের শেষ স্মৃতি।আমার স্নেহার দায়িত্ব নাও। বিয়ে করো আমাকে। ওকে বাবার পরিচয় দাও। ইখুমকে আমি মেনে নিবো।কিন্তু তবুও আমাকে এই যন্ত্রণার থেকে মুক্তি দাও।”
দূর থেকে দাঁড়িয়ে ইখুম সবটা দেখলো।নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইখুম অপেক্ষায় রইল রাশেদের জবাবের। আজ রাশেদের জবাব হারিয়ে দিতে পারে ইখুমকে কিংবা জিতিয়ে দিবে সারা জীবনের জন্য।
চলবে,,
#এক_কাপ_চা
#পর্ব-১২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৩৪)
“ভাবী, আপনি সম্পর্কে আমার ভাইয়ের স্ত্রী। এসব কথা কী বলছেন?আমি আপনাকে বিয়ে করবো কেন?”
“তবে আমার স্নেহা?”
“আমাদের কিন্তু কথা তেমন হয়েছিল না।”
“তুমি তোমার দায়িত্ব থেকে সরে আসতে চাইছো?তোমার জন্য তোমার ভাই কী না করেছে?”
“আমি দায়িত্ব থেকে সরে আসছি না।কিন্তু আপনার প্রতি অনুরোধ। এমন কোনো প্রস্তাব আমাকে দিবেন না যা রাখা সম্ভব নয়। আমি আপনাকে সম্মান করি।”
“তবে স্নেহাকে মেনে নিবে না?”
“কেন নিবো না?স্নেহা আমার ভাইয়ের মেয়ে।ও আমাদের কাছেই থাকবে।”
“আমি আমার মেয়েকে কাউকে দিবো না।”
“যদি আপনি এটাই ভেবে থাকেন তবে আমি পারবো না স্নেহাকে বাবার নাম দিতে।কারণ আপনি জানেন ইখুম ব্যতীত কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর স্নেহাকে কাগজে কলমে আমার নাম দিতে হলে তার মায়ের নামে ইখুমের নামটাই থাকবে।”
“থাকবে না। তুমি কেন?”
রাশেদ দাঁড়ায়নি।প্রতিটি মানুষের সহ্যের কিছুটা সীমানা প্রাচীর থাকে। রাশেদের সেই প্রাচীরে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে।
তার প্রতি তার মা,ভাবীর এসব অন্যায় আবদার আজ তার গলায় কাটার মতোন বিঁধে আছে।
রাশেদ কিছু দূর আগাতেই ইখুমকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো।ইখুমের দুই চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। মুখে খেলা করছে কোনো এক আবেগের দ্যুতি। যাকে বাস্তবতা বদলে দিতে চাইছে। প্রাণপণে ইখুমের করা প্রার্থনা যেন অদৃষ্ট শুনতে পেয়েছিল।বিধাতা মুচকি হেসে আশীর্বাদের হাত বুলিয়ে দিয়েছেন ইখুমের ভাগ্যে। সে বুঝতে পারলো রাশেদকে তবে এতোদিন মানসিক ভাবে ভেঙে চলেছিল তার শাশুড়ি এবং সামিনা।বিয়ের কনে হিসেবে কিংবা বাড়ির বৌ হিসেবে কখনো তাকে মেনে নিতে চায়নি ভদ্রমহিলা। তিনি বলেছিলেন তাকে এতটা মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে যেন ইখুম নিজেই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করে।
তবে কী শুধু তাকে মানসিক কষ্ট দিতেই তার শাশুড়ি এতদিন ধরে রাশেদের সাথে এমন সাপলুডু খেলে চলেছেন?
ইখুম ভাবতে পারছে না। তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। পাশের পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সে। সামিনার সামনে
রাশেদ দাঁড়ায়নি, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“যাবে আমার সাথে?এমন কোনো এক জায়গায়?যেখানে সকল কিছু থেকেই মুক্তি পাওয়া যায়?বিলাসিতা এনে দিতে পারবো না তবে হ্যাঁ না খাইয়েও রাখবো না। যাবে ইখুম?আমার সাথে?”
(৩৫)
“বিয়ে বাড়িতে এসে যদি মেয়েদের দিকে না তাকাও তবে কী করলে?”
মৌসুমির এমন কথায় তার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে রইল তাশদীদ। স্নেহার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলো তাশদীদ। স্নেহার মুখ টিস্যু দিয়ে মুছিয়ে সে বলল,
“মেয়েরা প্রদর্শনীর বস্ত নয়। যে মেয়েরা নিজেদের প্রদর্শন করতে ভালোবাসে তারা আমার নজরে একটা স্লাট ব্যতীত কিছুই নয়।”
“স্লাট?সরাসরি বেশ্যা বানিয়ে দিলে?”
“তুই নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ৷ বুঝে যাবি।আর হ্যাঁ মনে রাখিস পঁচা জিনিসে মাছি বসেই।”
মৌসুমি অপমান গায়ে মাখলো বলে মনে হলো না। সে চলে গেল স্টেজের দিকে।সাগরিকা তখন মুনিরের পাশে বসেছে। সবার আবদার হলো একটা গানের। মুনিরের ইশারায় একজন ছেলে গিটার দিয়ে গেল।
স্টেজের সামনে চেয়ারে বসে সাগরিকা গাইতে শুরু করলো,
sab se pehele hain pyaar, main or tum dono to ek hain.
uski bad aaye ashaye ki tum kon ho? or main kon hu?
পুরো ছাদ নির্জনতায় ছেয়েছে। গান শেষে স্নেহা হাত তালি দিয়ে বললো,
“পি পি পো পো। পিপ্পো?”
সাগরিকা গানটা গাওয়ার ধরণে মুগ্ধতা ছিল। তাজবীদ হেসে বলল,
“গানটা ডোরেমন সিরিজে ছিল।এবার তবে আরেকটা বিয়ে উপলক্ষে হয়ে যাক?”
সাগরিকা মাথা দুলিয়ে না করছিল কিন্তু তাশদীদ সামনে এসে বসে তার হাত থেকে গিটার নিয়ে গাইতে শুরু করেছিল,
“ম্যে রঙ শরবতো ক্যা, তু মিঠে গাট কা পানি।”
পুরো গানটায় সে তাকিয়ে ছিল সাগরিকার দিকে।সাগরিকার অনুভূতি গুলো ধীরেধীরে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলো তার পেটে। সে ঠোঁট কামড়ে ধরেছে অনুভূতিকে লুকিয়ে রাখতে৷
গানটা শেষ হতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো সে।তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল তাশদীদ৷
মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় শরবতের মতোন ঢকঢক করে গিলে ফেলতে এই মেয়েকে।কিন্তু হায় কপাল এমন তো হয় না।
এরপর রাত-ভর চলবে মদ্যপান এবং নাঁচ গান।
তাই তাজবীদ তার বাবাকে বলল সবাইকে নিয়ে ফিরে যেতে। তারা দুই ভাই থাকবে। তাশদীদ ব্যস্ত তাই তাকে এসে বলতে বলল।আর রাশেদ ও থাকছেই তাই বাকী কারোর থাকার প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে মেয়েদের।
গাড়ি অবধি তাদের এগিয়ে দিতে যাচ্ছে তাশদীদ৷ রাত প্রায় দশটা। বিয়ে বাড়ির বাতি নিভছে জ্বলছে। সাগরিকার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সে এক হাতে জড়িয়ে নিয়েছে তাকে। নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে সাগরিকার হাতে দিয়ে বলল,
“জানালা খোলা রাখবি না।আর বাড়ি গিয়ে সোজা ঘুম।অনলাইনে দেখলে! ”
“থাকবো না।প্রমিস।”
তাশদীদ কিছু না বলেই আলতো স্পর্শে নিজের বুকের সাথে তাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“মনে হচ্ছে এই তোদের সাথে আমার শেষ দেখা।যাইহোক না কেন নিজের খেয়াল রাখিস। মনে রাখিস। শোক যাই হোক না কেন, ব্যক্তিগত শোকের থেকে পরিবারের খুশির প্রাধান্য বেশি।”
(৩৬)
ইখুমের সামনাসামনি বসে আছে রাশেদ৷ সে বিয়ে বাড়িতে থাকেনি। ইখুমের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে সে। ইখুমের কি হলো সে নিজেও বুঝলো না।সে তেড়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি মার দিতে লাগলো রাশেদের শরীরে।
তার পরণের শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে। আচঁল গলিয়ে পড়েছে কাঁধ থেকে।
বাড়ির সবার কথা ভেবে জোড়ে কাঁদতেও পারছে না সে। রাশেদ তাকে বাধা দিচ্ছে না।পুরুষ মানুষ এক আজব প্রানীর নাম।
তারা চাইলে মেয়েদের মতোন কাঁদতে পারে না।
ইখুম শান্ত হয়ে এলে রাশেদ তার গায়ে আঁচল উঠিয়ে দিয়ে তাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
ইখুমের কোলে মাথা রেখে নিচে ফ্লোরে বসেছে রাশেদ। ইখুম তার চুলের মুঠি ধরে তার মুখ উঠিয়ে বলল,
“কেন করলে এমনটা?তুমি যত কথাই বলো না কেন আমাকে এত মানসিক কষ্ট দেওয়ার কিংবা আমার সন্তানকে মেরে ফেলার কথা বলার অধিকার তোমার নেই।আমি তোমাকে মাফ করবো না। কোনো দিন না।আমার গায়ে হাত তুলেছো, কী করোনি আমার সাথে? কেন? সামিনাকেই বিয়ে করে নাও এখন।ওর দায়িত্ব নিতে চাইছো না কেন এখন?তবে কেন কথা দিয়েছিলে?”
রাশেদ তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমার মা আমাকে শর্ত দিয়েছিল।স্নেহার দায়িত্ব নিতে হবে। যদি এমন দায়িত্ব না নিতে পারি তবে তোমাকে আনতে পারবো না।তোমাকে বিয়ে করার পূর্ব শর্ত
অনুযায়ী আমি বাধ্য ছিলাম।”
চলবে,,