শালুক ফুলের লাজ নাই পর্ব ৬

0
1485

#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই(০৬)

আজাদ সাহেব বাসায় এলেন রাত ১১ টার দিকে।বাজারে তাদের তিন ভাইয়ের ১২ টা দোকান আছে,একজনের ৪ টা করে। এগুলো নিজেদের বাবার থেকে পাওয়া।তবে এরমধ্যে শালুকের বাবা ব্যবসায়ে লাভবান হয়ে আরো তিনখানা দোকান কিনেছেন।
শালুকের ফুফু লিলির নামে ও আছে ৩ টি দোকান। শালুকের দাদা নুরুল ইসলাম যেমন বুদ্ধিমান তেমনি দূরদর্শী মানুষ হওয়ায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রচুর পরিমাণ জায়গাজমি কিনে রেখেছেন। বাজারের দোকান ছাড়া ও তার নিজের নামে এখনো দুইখানা ইটের ভাটা,
স’মিল,জেলা শহরে চারটি গুদামঘর,তিনটি চালের আড়ত আছে।চরে নিজের প্রচুর জমি আছে যা বর্গা দেওয়া আছে।বছরে বছরে প্রচুর টাকা আসে সেখান থেকে। সব টাকা তিনি ব্যাংকে রেখেছেন। এসব টাকা কখনো সংসারে খরচ করেন না।ছেলেরা সবাই বিয়ে করার পর থেকেই ছেলেদের নামে বাজারের দোকান লিখে দিয়েছেন। ছেলেরা যাতে সংসারী হতে পারে,বাবার উপর নির্ভরশীল না হয়।

আজাদ সাহেব বাসায় এসে জহিরকে দেখে খুশি হলেন। অনেক দিন পর ভাগ্নেকে দেখেছেন।লাজুক,মুখচোরা এই ছেলেটা সবসময় আড়ালে থাকে।

৩ ভাই,৩ জা,১ ননদ,শ্বশুর শাশুড়ীকে নিয়ে একটা মিটিং বসলো। মিটিং এর মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আফিফার বিয়ের কথাবার্তা। চেয়ারম্যান সাহেবের ভাইয়ের ছেলে সজীব,জেলা সদরে তার নিজের দোকান আছে দুটো। একটা কাপড়ের দোকান অন্যটা কনফেকশনারি।ছেলের বায়োডাটা বের করে আজাদ সাহেব দেখালেন।ছেলে একটু খাটো শুধু।আফিফার উচ্চতা ৫.৫” সেখানে ছেলের উচ্চতা ৫.৪”
এছাড়া ছেলের আর কোনো দিক দিয়ে কমতি নেই।

লিলি বেগম বললেন, “ছেলের লেখাপড়া আছে তো ভাইজান?ছেলের টাকাপয়সা যাই থাক,লেখাপড়া হচ্ছে গিয়া সবচেয়ে বড় সম্পদ মানুষের। ”

আজাদ সাহেব বললেন,”ছেলে বিএ পাস করছে লিলি।সবকিছু খবর নিছি আমি এক সপ্তাহ ধইরা।মা নাই সংসারে।বোন দুইটা বিয়ে দিয়ে দিছে।ছেলে ভাই একটাই।নির্ভেজাল সংসার। এখন কি করমু,ওদেরকে আসতে কমু?ওরা তো চিনাজোঁকের মতো লাইগা রইছে।ওদের কোনো দাবিদাওয়া নাই।ওরা শুধু মেয়েটারে চায়।”

সেলিম সাহেব বললেন,”চেয়ারম্যান সাহেবরে তো চিনেন ভাইজান।যেই লোভী উনি তা এলাকার সবাই জানে।”

আদিবা বেগম বললেন, “আহা মেজোমিয়া,এই দুনিয়ায় সব মানুষই চায় একটু বড় হইতে।সেইটারে লোভ বলা ঠিক না।”

নুরুল ইসলাম সাহেব বুঝলেন তার ছেলে এবং ছেলের বউ মোটামুটি রাজি,সবার সাথে আলোচনা না করলে খারাপ দেখা যাবে বিধায় সবাইকে জানাচ্ছেন।

গলা খাঁকারি দিয়ে তিনি বললেন,”সবার আগে আমার নাতনিরে ডাকো,ওর কোনো পছন্দ আছে কি-না জানন দরকার আগে।”

আদিবা বেগম ধমকের সুরে বললেন,”কি বলেন আব্বা আপনি এসব।আফিফার আবার কিসের পছন্দ। আমরা যাই কমু তাই হইবো।এরকম মেয়ে আমি জন্ম দিই নাই যে অন্য ছেলের সাথে প্রেম ভালোবাসা করবে।আমার মেয়েরে আমি ভালো করেই চিনি।”

লিলি বেগম মাথা নিচু করে ফেললেন।তিনি জানেন এই কথাটা নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। নয়না যে আদনানের জন্য বিয়ের আগে ভীষণ পাগলামি করেছে তার জন্য বড় ভাবী এই কথাটা বলেছে।

আজাদ সাহেব বললেন, “আমি তাইলে ওদেরকে বলি আগামীকাল দুপুরে আসার জন্য? ”

নুরুল ইসলাম সাহেব কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,”আরো একবার ভেবে দেখে সিদ্ধান্ত নাও।আরেকটু খোঁজ নাও।এখনকার যুগ এটা আর কিছু বলমু না।এরপরে ও যদি তোমরা মনে করো তোমাগো কোনো সমস্যা নাই তাইলে আল্লাহর উপর ভরসা করে ওদের আসতে বলো।”

আদিবা বেগমের মুখ হাসি-হাসি হয়ে গেলো। এই প্রস্তাবটা তার ভীষণ মনে ধরেছে।সেই শুরু থেকেই তিনি চেয়েছেন এখানে মেয়ের বিয়ে দিতে।চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয় হবে এটা কি চাট্টিখানি কথা!

সবাই ঘুমাতে চলে গেলো।

বিছানায় শুয়ে লিলি বেগম মেয়ের হাত ধরে বললেন, “এরকম কাজ করলি রে মা,এখনো খোঁটা শুনতে হয়।”

নয়না জেগেই ছিলো, মেয়েকে খাওয়াচ্ছে।মায়ের কথা শুনে মুখটা মলিন হয়ে গেলো তার।বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, নয়নার মনে হলো তার চোখের জল বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে বাহিরে।
নিজের চোখ মুছে নয়না বললো, “দোষ কি আমার একার ছিলো মা?”

লিলি জবাব দিলেন না।নাতনির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,”পুরুষ মানুষের দোষ কেউ-ই দেখে না মা।এই সমাজ এরকমই। পুরুষের বেলায় যেটা পাগলের মতো ভালোবাসা নারী করলে সেটা হয়ে যায় অসভ্যতা। ”

নয়না মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বললো,”আমি ওসব ভুলে গেছি মা।নিধির বাবা ভীষণ ভালো মানুষ। আমার সব অনুভূতিকে সে সম্মান দেয়।আমার সব পাগলামি জেনেও সে আজ পর্যন্ত কখনো একটা প্রশ্ন ও করে নি। আমি খুব ভালো আছি মা।পুরনো ঘা তো,শুকাতে একটু সময় লাগছে আমার। বিশ্বাস করো মা,আদনান ভাইয়ের জন্য আমার মনে ভালোবাসার এক ফোঁটা অনুভূতি ও নেই।যা আছে তা শুধু ঘৃণা।”

লিলি বেগমের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শালুক দেখে বাড়িতে কেমন সাজ সাজ রব।শালুকের মন আনন্দে নেচে উঠলো। মন বলছে আজকে বাড়িতে একটা কিছু হতে চলেছে।তাহলে আজকে আর স্কুলে যেতে হবে না।

স্কুলে না যাওয়ার আনন্দে শালুক কিছুক্ষণ দোতলার এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে বেড়ালো।স্কুল মিস গেলেই শালুকের ইচ্ছে হয় পাখির মতো উড়তে।বারান্দায় দৌড়াতে অসুবিধা হচ্ছে দেখে শালুক ছুটে গেলো নিচের বাগানে।

লাফাতে লাফাতে খেয়ালই করলো না ছাদের উপর থেকে এক জোড়া চোখ তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
নাশতার টেবিলে বসে সবাই জানতে পারলো আজকে আফিফাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।আফিফার মুখ শুকিয়ে গেলো এই কথা শুনে।

মতির মা এক স্তুপ রুটি রাখতে রাখতে বললো, “আইজকে আমি বড় ভাইয়ের আনা নয়া শাড়িটা পিন্দুম।এরকম একটা খুশির খবর অনেক দিন পাই নাই।”
আফিফা খাবার রেখে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে।

শালুক লাফিয়ে উঠলো শুনে।আপার বিয়ে হবে মানে বাড়িতে একটা উৎসব হবে।তারমানে অনেক দিন স্কুল মিস দেওয়া যাবে।সামনে যে প্রিটেস্ট এক্সাম আপাতত তাহলে সেসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।এমনিতে ও এসব নিয়ে শালুক তেমন চিন্তা করে না।জীবনে বহুত পরীক্ষা আসবে যাবে, ফেইল হবে তাতে কি হয়েছে। সে যে পরীক্ষায় এটেন্ড করছে এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা।

শালুকের এই উড়ুউড়ু ভাব দেখে ধ্রুব গম্ভীরমুখে বললো, “ছোট চাচা,শাপলা,শালুকের তো সামনে প্রিটেস্ট মনে হয়। ওদের লেখাপড়ার কি অবস্থা? স্কুল কলেজে তো যায় বলে মনে হয় না একজন ও।”

ফয়েজ আহমেদ চিন্তিত হয়ে বললেন,”আর বলিস না বাবা।শাপলার তো লেখাপড়া ভালোই চলে,এসএসসি তে ও তো ভালো করেছে,এবার ইন্টারেও ভালো করবে আশা করি। বিপাকে আছি আমার শালুককে নিয়ে। কোনোমতেই ওরে লেখাপড়ায় মনোযোগী করা যায় না।নিজে পড়ে না,কারো কাছে ও পড়ে না।টিউটর ও রাখতে পারি না।১ সপ্তাহ টিকে ওর সব টিচার।তারপর নিজ দায়িত্বে বিদায় নেয় ওনারা।আমার পরিবারের সবাই এতো ট্যালেন্ট অথচ এই মেয়েটা যে কেনো এমন হলো।আচ্ছা তুই তো অনেক দিন বাড়িতে আছিস,তুই একটু দেখ না ওর পড়াটা।”

বাবার কথা শেষ হতেই শালুক যেনো ভিরমি খেলো।

শাপলা বললো, “বাবা,আমার ও তো টিচার দরকার। ধ্রুব ভাই তাহলে আমাদের দুজনকে পড়াক।”

ধ্রুব গম্ভীর হয়ে বললো, “আমার পক্ষে সম্ভব হবে না চাচা।তবে আপনি বললে আমি ওদের জন্য ভালো একজন টিচার ঠিক করে দিতে পারি। আমার এক ফ্রেন্ড আছে,আমরা ইন্টার পর্যন্ত একইসাথে পড়েছি।পলক ওর নাম।আপনি চিনবেন হয়তো, চেয়ারম্যান চাচার ছেলে ও।যদিও কাউকে পড়ায় না তবে আমি রিকুয়েস্ট করলে পড়াবে হয়তো। ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এখন,এলাকাতেই থাকে।”

শালুকের মুখ বেদনায় নীল হয়ে গেলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এই পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় সে বুঝি।

আদনান হাসতে হাসতে বললো, “এই গোবরের বস্তাকে পড়াবে পলক?পাগল হয়ে যাবে ও একে পড়াতে গেলে।চেয়ারম্যান চাচা নির্ঘাত মামলা করবে আমাদের সবার নামে তখন।”

একটা হাসির রোল পড়ে গেলো আদনানের কথায়।লজ্জায়,অপমানে শালুকের চোখে পানি চলে এলো। কোনো কথা না বলে শালুক টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।

ধ্রুব মাথানিচু করে খাচ্ছিলো, শালুককে উঠে যেতে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো শালুককে যতোক্ষণ পর্যন্ত দেখা গেলো।তারপর আদনান কে উদ্দেশ্য করে বললো, “শালুককে নিয়ে এই ধরনের কথা সবসময় বলবে না ভাইয়া।ও ছোট মানুষ, একটু বেশি চঞ্চল হয়তো। সবাই তো একরকম হয় না।যখন তখন ওকে এসব বললে ওর মন আরো খারাপ হয়ে যাবে।আমাদের উচিত ওকে উৎসাহ দেওয়া।এভাবে লজ্জা দেওয়া না।”

আশা কফিতে চুমুক দিয়ে বললো, “ধ্রুব সঠিক কথা বলেছে।এভাবে ওকে নিয়ে মজা করা ঠিক না।”

আদনানের কিছুটা গায়ে লাগলো আশা ধ্রুবকে সমর্থন করায়।কিছুটা অপমানিত ও বোধ করলো আদনান। ধ্রুবকে উদ্দেশ্য করে আদনান বললো,”ভূতের মুখে রাম নাম।তুই নিজেই বুঝি সাধুপুরুষ? তুই নিজেই তো শালুককে এসব বলতি আগে।এখন এতো ন্যাকামি করছিস যে হঠাৎ? ”

ধ্রুব আগের মতো গম্ভীর গলায় বললো, “শালুক তখন ছোট ছিলো ভাইয়া,এখন ও ছোট নেই।আশা করছি তোমাকে আমার এক্সপ্লেইন করে বলতে হবে না টিনএজ ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদের কিরকম বিহেভিয়ার করা উচিৎ। এই বয়সে যেটা শাসন দিয়ে হয় না সেটা ভালোবাসা দিয়ে করাতে হয়।”

বাবা চাচা উঠে যেতেই আদনান কটাক্ষ করে বললো, “তো না করছে কে তোকে ধ্রুব,যা না।তুই গিয়ে শালুককে ভালোবাসা দিয়ে পড়ানো শুরু কর।দেখ গোবরে পদ্মফুল ফোটাতে পারিস কি-না! ”

ধ্রুবর ভীষণ রাগ হলো আদনানের এরকম বেয়াদবের মতো কথা শুনে।সরাসরি আদনানের দিকে তাকিয়ে ধ্রুব বললো, “মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ ভাইয়া।স্থান, কাল,পাত্র বুঝে কথা বলার ম্যানার যদি ভুলে গিয়ে থাকো,তবে আমার কাছে এসো।আমি শিখিয়ে দিবো।মুখ থেকে যখন যা বের হয় তা বলেই নিজেকে খুব স্মার্ট ভেবো না।মনে রেখো,যেটাকে তুমি তোমার নিজের চোখে স্মার্টনেস হিসেবে দেখছো সেটাতে হয়তো সবার কাছে তোমাকে অভারস্মার্ট লাগতে পারে। নিজেকে এতোটাও হাসির পাত্র করো না।”

রাগে আদনান কথাই বলতে পারলো না যেনো। ধ্রুব কি ঠান্ডা মাথায় তাকে অপমান করেছে?
সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই মিটিমিটি হাসছে।

ধ্রুব উঠে যেতেই আশা আদনানের দিকে তাকিয়ে বললো, “ধ্রুব ভুল কিছু বলে নি আদনান। মাঝেমাঝে তুমি ভীষণ অভারস্মার্ট হয়ে যাও,আমার নিজের কাছেই তা হাস্যকর লাগে তখন।ধ্রুব ভীষণ ম্যাচিউর পার্সন,ওর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে তোমার। ”

আদনানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো এসব কথা শুনে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো, “আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না আশা।”

কিছুক্ষণ পর সবাই ডাইনিং থেকে উঠে গেলে আফিফা দাদীর ঘরে যায়।সিতারা বেগম পান খাচ্ছেন জর্দা দিয়ে। জর্দার মাতাল করা ঘ্রাণে রুম ভরে গেছে।এই শোভা জর্দা সিতারা বেগমের প্রিয় জর্দা।সবাই ভুলে গেলেও ধ্রুব দাদীর এই প্রিয় বস্তুর কথা ভুলে না।যদিও তিন বেলা রুটিন করে জর্দা খাবার অপকারিতা ব্যাখ্যা করে দাদীকে।সিতারা বেগম অতি আগ্রহ নিয়ে নাতির সব কথা শুনে।যেখানে হ্যাঁ বলা দরকার সেখানে হ্যাঁ বলে, যেখানে না বলা দরকার সেখানে না বলে। নাতির সব কথায় সায় দিয়ে শেষে হেসে বলে, “দে ভাই আইজকা একটু খাই,বাঁচমু আর কতো দিন। মনের খায়েশ না মিটাইয়া মরতে চাই না।”

আফিফাকে দেখে সিতারা বেগম হেসে বললেন,”বিয়ার কইন্যা আমার ঘরে যে হঠাৎ? কিলো বোইন,কি খবর? ডর লাগতাছে বুঝি?ডরের কিছু নাই বোইন।”

আফিফা চেয়ারে বসে দাদীর দিকে তাকিয়ে বললো, “এই বিয়ে আমি করতে চাই না দাদী।আমি অন্য একজন কে পছন্দ করি।”

সিতারা বেগম আঁতকে উঠলেন নাতনির কথা শুনে। ভয়ার্ত সুরে বললেন, “কারে?”

আফিফা মাথানিচু করে বললো, “জহির ভাইকে। যদিও উনি জানেন না সেটা আমি কখনো ওনাকে বলতে পারি নি।তবে আমি ওনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাই না দাদী।”

সিতারা বেগমের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো। নয়নার বিয়ের সময় এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে,চোখের সামনে সেসব ভেসে উঠলো। আদনানের জন্য নয়না ব্যাকুল হয়ে কাঁদছিলো,সেই সময় আদনানের মা লিলিকে চূড়ান্ত অপমান করলো।
অথচ দোষ শুধু নয়নার ছিলো না সেটা সবাই জানতো।

আজ আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে!

কি করবেন সিতারা বেগম?

মতির মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা শুনলো।তারপর মুহুর্তের মধ্যে বাড়ির সবাই জেনে গেলো আফিফা জহিরকে পছন্দ করে।
সবার হাসিখুশি মুখটি কালো হয়ে গেলো। তলে তলে এই মেয়ে এসব ভেবে রেখেছে জানতে পেরে আদিবা বেগমের প্রেশার হাই হয়ে গেলো। তিনি কিনা রাতেই এই মেয়েকে নিয়ে আরো বড় বড় কথা বলেছেন!

আদনান তেড়ে গেলো আফিফার দিকে।ধ্রুব তাকে থামাতেই আদনানের রাগ আরো বেড়ে গেলো। ধ্রুবর কলার চেপে ধরে বললো, “আফিফা আমার বোন,তুই মধ্যখানে বাঁধা দেয়ার কে ধ্রুব?”

আদনানের হাত থেকে নিজের শার্টের কলার সরিয়ে ধ্রুব বললো, “আফিফা তোমার যেমন বোন,তেমন আমার ও।ওর ভালো মন্দ তোমাকে যেমন স্পর্শ করে, তেমনি আমাদের ও করে। এভাবে রেগে গেলে সব সমাধান হবে না।সবকিছুতে রাগ হয়ে গেলে এক সময় দেখবে তোমার পাশে আর কেউ-ই নেই।”

আজাদ সাহেব জহিরকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই জহির মাথা নিচু করে বললো, “আফিফার সাথে আমার এরকম কোনো সম্পর্ক নেই মামা।আমি এসব নিয়ে কখনো কিছু ভাবি নি।ও যদি এসব ভেবে থাকে তবে সেটা ওর একপাক্ষিক ব্যাপার। তবে আমি এরকম কোনো ব্যাপার ঘটুক তা চাই না।দরকার হলে আমি আজকের ট্রেনেই চলে যাবো।আপনারা আফিফাকে বুঝানোর চেষ্টা করেন।”

সব শুনে নয়নার বেশ ভালো লাগলো। বড় মামীর পাশে বসে নয়না ফিসফিস করে বললো, “মামী,এবার বুঝেছ তো কেমন লাগে?মেয়ের কষ্ট একদিকে দেখবে আর জ্বলবে।আমার মায়ের কষ্ট এবার বুঝবে।আমাকে নিয়ে সবসময় খোঁচা দিয়ে কথা বলো যে আমার মা’কে, এবার নিশ্চয় টের পাচ্ছো মায়েদের কেমন লাগে?”

চলবে………

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here