প্রেমানন্দোল–১২

0
611

#প্রেমানন্দোল-১২
#তাসনিম_তামান্না

স্বাধীন ড্রাইভ করতে করতে দ্বিধার হাস্যউজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
” সাবধানে থাকবেন আর আমি না আশা পর্যন্ত গেটের সামনে থেকে কোথাও যাবেন না ”
” আমি বাচ্চা না ”
” আমার থেকে বড় তার নন তাই আপনি আমার কাছে বাচ্চা ”
দ্বিধা রেগে মুখ ফুলিয়ে বলল
” তাহলে এই বাচ্চাকে বিয়ে করলেন কেনো? আপনার থেকে বড় কাউকে বিয়ে করতেন ”
স্বাধীন শব্দ করে হেসে বলল
” কথাটা মন্দ বলেন নি তো ”
” তাহলে কি এখন আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবেন? ”
স্বাধীন করে গাড়ি থামিয়ে দিলো। দ্বিধা ঝুঁকে গেলো। দ্বিধা ভ্রু কুঁচকে বলল
” কি হলো এভাবে হঠাৎ গাড়ি থামালেন কেনো? ”
” আপনার ইউনিভার্সিটি এসে গেছে ”
দ্বিধা খেয়াল হলো এতোক্ষণ কথার মাঝে তার খেয়াল ছিলো না। দ্বিধা গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল
” ওহ আসলে খেয়াল ছিল না আপনি যান আমি গেলাম ”
স্বাধীন দ্বিধাকে ডেকে উঠলো।
” দ্বিধা। ”
দ্বিধা পিছাতে ফিরে তাকালো। স্বাধীন বলে উঠলো
” আপনি ছাড়া আমার লাইফে কেউ ছিলো না আর আসবেও না তাই এটা নিয়ে এতো টেনশন করবেন না ”
কথাটা বলে গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে গেলো। দ্বিধার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো। হাসি মুখে কলেজে ডুকলো। চারিদিকে খেয়াল হতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো। কলেজ চত্বরে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। দ্বিধা মনে প্রশ্ন জাগলো। ” কিছু কি হলো কলেজে এমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ”
দ্বিধা আর কিছু না ভেবে সোজা ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট চলে গেলো। ক্লাস শুরু হতে এখনো ১০ মিনিট বাকি। ক্লাসে এসে দেখলো তেমন কেউ নেই ছেলেরা নেই বললেই চলে মাত্র ২ জন টপার আছে। মৃধা লাস্টের ব্রেঞ্চে একা বসে ফোনের মধ্যে ডুবে আছে। দ্বিধা দ্রুত পায়ে মৃধার পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় ঠুয়ো মেরে বলল
” কি রে সাতচুন্নি কেমন আছিস ”
মৃধা চমকে মাথা উঠিয়ে দ্বিধাকে দেখে বলল
” এসেই মারা শুরু করছিস। আসলে দিনটাই খারাপ ”
দ্বিধা বসতে বসতে বলল
” কেনো কি হলো আবার ”
” কি আবার হবে। তোর হাতের মার খেতে হলো ”
” ফাউল কথা বাদ দিয়ে বলল কলেজ কেমন জেনো মরা মরা ”
” সেটা তো কেউ ই বুঝতে পারছে না বইন কি যে হচ্ছে তলে তলে ”
” কি হচ্ছে ”
” সেটা তো জানি না শুধু জানি কিছু তো একটা হচ্ছে ”
ওদের কথার মাঝে স্যার চলে আসলো। ক্লাস চলাকালীল সময় ও দুজনে এতো দিনের রাখা কথাগুলো ফুসুরফুসুর করে বলতে লাগলো। স্যার কয়েকবার অর্নিং দিলে-ও ওদের ফুসুরফাসুর থামলো না। শেষে না পেরে স্যার দুজনকেই ক্লাস থেকে বের করে দিলো। ক্লাসের বাইরে এসে দু’জনে আনমনা হয়ে হেসে উঠলো। মৃধা বলল
” ক্লাসে না গিয়ে ক্যাম্পাসে বসে গল্প জুড়ে দিলেই হতো শুধু শুধু স্যারকে খেপালাম ”
দ্বিধা আবারও হেসে উঠলো। বলল
” হুম। বিথি, হালিমা, আঁখি ওরা কই ”
” ওদের তো মনে হয় এখন ক্লাস নেই চল কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে গল্প করছে মনে হয় ”
” চল ”
গিয়ে দেখলো সত্যি তাই। ৫ জনে গল্প জুড়ে দিলো। আর কোনো ক্লাস করলো না। বান্ধবীরা গল্প জুড়ে দিলে কখন যে কোন ফাঁক দিয়ে নিমিষেই সময় চলে যায় কারোর খেয়াল থাকে না। ১ ঘন্টা গল্প করে দ্বিধার ফোনে ফোন আসলো। রং নম্বর দেখে কেটে দিতে গিয়ে ও ফোন কানে দিয়ে বলল
” আসসালামু আলাইকুম। কে? ”
ওপাশ থেকে চুপ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল
” বরের নম্বর সেভ করে রাখনো কেমন বউ আপনি ”
দ্বিধা দাঁত দিয়ে জ্বীব কাটলো। দ্রুত বলল
” না মানে আমি জানতাম না আসলে… ”
দ্বিধার কথা শেষ করতে না দিয়ে স্বাধীন বলল
” বাইরে আসুন আমি ওয়েট করছি ”
” এতো তারাতাড়ি আপনার কাজ শেষ হয়ে গেলো? ”
” হুম ”
দ্বিধা ফোন কেটে মন খারাপ করে বলল
” থাক তোরা বাকি ক্লাস গুলো কর আমি চলে যাচ্ছি ওনি এসেছে ”
বিথি হেসে বলল
” সে-তো আমরা ও বুঝতে পেরেছি তোমার ওনি এসেছে ”
দ্বিধা বিথির বাহুতে চাপড় মেরে বলল
” তোরা না খুব ফাজিল ”
মৃধা দ্বিধার থুতনি ধরে নাড়িয়ে বলল
” ওলে বাবু টাও দেখি এখন লজ্জা পেতে শিখে গেছো ”
হালিমা বলল
” তা এতো কথা বললি বাসর রাতে কি হলো সেটা তো বললি না ”
দ্বিধা বোকার মতো প্রশ্ন করলো
” কি হবে? ”
আঁখি বলল
” কি হবে বা হয় বুঝো না বেবি ”
দ্বিধা বিরক্ত হয়ে বলল
” থাক তোরা গেলাম আমি কাল না হয় পৌশু আসবো ”
দ্বিধা আর দাড়ালো না দ্রুত পায়ে চলে গেলো। দ্বিধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সকলে উচ্চ সুরে হেসে উঠলো। দ্বিধা একবার পিছনে ফিরে তাকালো। কিন্তু কিছু না বলেই চলে গেলো। ওরাও আর বেশিক্ষণ না থেকে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে। যে যার ক্লাসে গেলো। গেটের বাইরে আসতেই দ্বিধা স্বাধীনের গাড়ি দেখতে পেলো। গাড়িতে উঠে বসতেই স্বপ্না পিছন থেকে ‘ভাও’ বলে উঠলো। দ্বিধা ভয় পেয়ে সিটের সাথে লেগে গেলো। স্বপ্না হেসে উঠলো। স্বাধীন স্বপ্না ধমক দিয়ে বলল
” এমন কেউ করে ”
স্বপ্না হাসি চাপিয়ে বলল
” সরি ভাবি এতো ভীতু আমি জানতাম না-কি ”
কথাটা বলে আবারও হাসতে লাগলো দ্বিধা মুখ গোমড়া করে রইলো।
ক্লাস শেষে কাঠ ফাটা রোদে ভ্যাপসা গরমে মৃধা হেঁটে যেতে লাগলো রিকশা সিএনজি যাকেই ডাকছে সে-ই যাবে না বলছে। বিরক্তিতে মৃধার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিছু দূর যেতেই ফাঁকা যায়গা দিয়ে হাটছিলো মৃধা কোথা থেকে মাইক্রো এসে মৃধার মুখ চেপে গাড়িতে উঠিয়ে নিলো। ঘটনাটা এতোই তারাতাড়ি ঘটলো মৃধা কিছু বুঝে উঠতে বা আত্মরক্ষা করার সুযোগ টুকু পেলো না।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here