প্রেমানন্দোল-৮

0
678

#প্রেমানন্দোল-৮
#তাসনিম_তামান্না

সূর্য মেঘের লুকোচুরির খেলা কখনো কাঠ ফাটা রোদ তো কখনো নীল আকাশ কালো মেঘে ছেড়ে যাচ্ছে। আকাশের মতোই মৃধার মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে কখনো ভালো কখনো বা খারাপ। মৃধা নিজের ওপরেই বিরক্ত কিছু ভালো লাগছে না ওর দ্বিধার সাথেও কথা হয় নি। একবার মৃধা ফোন দেয় তো দ্বিধা ধরে না আবার দ্বিধা ফোন দিলে মৃধা ধরে না আজব কান্ড। ক্লাসে মন বসছে না দেখে মৃধা বাড়ি যাওয়ার জন্য উদাত্ত হলো। হালিমা, আঁখি, বিথি অন্য অন্য ডিপার্টমেন্টে। দ্বিধা আর মৃধায় এক ডিপার্টমেন্টে। দু’জন বেস্ট ফেন্ড ও। মৃধা তীব্র মন খারাপ নিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে লাগলো নিজ মনে। মৃধা ইউনিভার্সিটি ছাড়া তেমন বাইরে বের হওয়া হয় না। মৃধা জল্পনা কল্পনা করতে করতে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে আসলো। পায়ের ব্যথা অনুভব করলো। একটা রিকশা করে বাড়ির পথে রওনা দিলো। কিন্তু ঘটলো আরেক বিপত্তি একটা বাইক এসে সজোরে ধা’ক্কা দিলো রিকশাটাকে। মৃধা ছিঁটকে পড়লো পিচের রাস্তায়। হাত ছিলে মাথায় ফেটে রক্তাক্ত হলো ব্যথায় মৃধার নিউরনগুলো টনটন করে উঠলো চোখ মুখ কুচকে পড়ে রইলো। রিকশাওয়ালা মামা মাঠির ওপরে পড়েছে। তার তেমন কিছু হয় নি। লোকজন রাস্তায় জড়ো হয়ে গেলো। মৃধাকে কয়েকটা মেয়ে টেনে তুললো। রিকশাওয়ালা মামা কেউ কয়েকজন তুললো। মৃধা এবার সামনের দিকে তাকালো একটা হেলমেট পড়া ছেলেকে তুললো কয়েকটা লোক ছেলেটার কোনো ক্ষতি হয় নি। মৃধাকে পাশের দোকানের বেঞ্চে বসানো হলো। পানি খেলো। হাতে মাথার কা’টা জায়গায় জ্বালা করছে। মৃধা হাতে ফুঁ দিতে লাগলো।
” তুমি আমার সাথে হসপিটালে চলো তোমার মাথা হাত থেকে রক্ত পড়ছে ”
হঠাৎ চেনা না জানা না অপরিচিত মুখ থেকে ‘তুমি’ ডাক শুনে মৃধা মাথা তুলে তাকিয়ে কালকের ছেলেটাকে দেখে মৃধার ভ্রু কুঁচকে গেলো। এই লোকটার সাথে এক্সিডেন্ট টা হলো। মৃধা চোখ মুখ কুচকে বলল
” নো নিড আমি একাই যেতে পারবো ”
কিছু লোকজন বলতে লাগলো ” যান ওনার সাথে আপনার যা অবস্থা আপনি একা যেতে পারবেন না ”
মৃধা বিরক্ত হলো। ঝামোলা না বাড়িয়ে বলল ” চলুন ”
স্বচ্ছ আর দেরি না করে একটা সিএনজি ডেকে মৃধাকে উঠিয়ে নিজেও উঠলো। সিএনজিতে উঠে একজনকে ফোন দিয়ে বলল ” বাইকটা নিয়ে যা *** এখান টায় আছে ”
মৃধা স্বচ্ছের থেকে দূরত্ব নিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। যেনো স্বচ্ছের গায়ে এক বিন্দু স্পর্শ না লাগে। স্পর্শ লাগলেই যে বিপদ… সর্বনাশ। স্বচ্ছ মৃধার দিকে আড়চোখে তাকাছে মৃধার অবস্থা দেখে কষ্ট হচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে।
” তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে? ”
মৃধা এবার তেতে উঠে বলল ” এই আপনি আগে তুমি তুমি করা বন্ধ করেন কত আল্লাদ না চেনা নেই জানা নেই তুমি তুমি করে কথা বলছেন? আমি আপনার বউ লাগি না-কি ইচ্ছা মতো ডেকে যাচ্ছেন? আপনি বলে সমদ্ধন করলে করেন না হলে দরকার নাই এক দম তুমি তুমি বলবেন না ”
একটা মেয়ের মুখে ধমকানো কথা শুনে স্বচ্ছ মজিয়ে গেলো যেনো শান্ত কন্ঠে বলল
” ওকে ওকে ঝাঁজেররাণী ”
” এই কি বললেন আপনি? ”
” ক কই কখন কি বললাম? ”
” কল মি ‘মৃধা’ ওকে একদম উল্টো পাল্টা নামে ডাকলে গাড়ি থেকে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিবো ”
স্বচ্ছ মৃধার কথার প্রতিত্তর করলো না। স্বচ্ছ মনে মনে ‘মৃধা’ নামটা আওড়ালো। কোথাও শুনেছে মনে হলো।
হসপিটালের এসে মৃধাকে ব্যন্ডেজ করানো হলো মাথায় তেমন গুরুতর কিছু হয় নি। ডক্টর কয়েকটা মেডিসিন লিখে দিলো। স্বচ্ছ মেডিসিন গুলো কিনে দিয়ে বলল ” চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি ”
মৃধা ঔষধ আর প্রেশকিপশনটা নিয়ে বলল
” নো নিট যথেষ্ট করেছেন। আপনার সাথে এখানেও আসতাম না কিন্তু অনিচ্ছা থাকার সত্বেও আসতে হলো কি আর করার… ”
আরো কিছু বলার আগে মৃধার ফোন আসলো। ফোন হাতে নিয়ে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো ফোন ধরে কানে দিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বলল ” ঔ ছেমরি ঔ কই তুই আমাকে ছাড়া একা একা বিয়ে করে নিলি এমন মীরজাফর গিরি করতে তোর কোথাও বাদলো না আবার ফোন দি ফোন ধরোস না একবার সামনে পাই চুল ছিড়ে হাতে ধড়িয়ে দিবো বিয়াদপ আর আমার কাছে ফোন দিসিস কেনো যা তোর বরের কোলে উঠে বসে থাক… ”
মৃধার ঝাড়ি শুনে স্বচ্ছের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। মৃধা কথা বলতে বলতে সিএনজিতে উঠে গেলো স্বচ্ছ হাফ ছেড়ে বাচলো। বিরবির করে বলল ” কি মেয়ে রে বাবা ঝাঁজেররাণী ”
বলে হেসে মাথা চুলকে চলে গেলো নিজের কাজে।

দ্বিধা মৃধাকে থামিয়ে বলল ” জানি খেপে আছিস জানি না কিভাবে কি করে জানি বিয়েটা হয়ে গেলো ”
” এই থাক একদম ইমোশনাল হলে আমাকে ইমোশনাল করতে আসবি না আমাকে চিনিস -ই তো ”
” হ্যা চিনি আপনার নাম মৃধা না? ”
” একদম ফাজলামো করিস না জানিস আমি কতটা আপসেট একা একা ক্লাস করতে ভালো লাগে না ”
” আমি ক্লাস করতে আসবো তো ”
” সত্যি কবে থেকে? ”

__________________________________

রাতের খাবার খাওয়া শেষ করে দ্বিধা আগেই ওপরে চলে এসেছে। স্বাধীন ওপরে এসে দ্বিধাকে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
” দ্বিধা কি হয়েছে আপনার? মন খারাপ? ”
দ্বিধা তাচ্ছিল্য করে উত্তর দিলো
” মন থাকলে তো খারাপ হবে? ”
স্বাধীন ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” এভাবে কথা বলছেন কেনো আপনি? ”
দ্বিধা এবার স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে বলল
” কি ভাবে কথা বললাম আমি? আর আমার কাছ থেকে কি রকম ভাবে কথা বলা ডিজাভ করেন? ”
স্বাধীন চুপ থেকে কিছুক্ষণ ভেবে বলল
” আপনি কি আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছেন? ”
” আমার কষ্ট পাওয়ায় আপনার কি যায় আসে? ”
” দ্বিধা আপনি এমন আজীব বিহেভিয়ার কেনো করছেন? ”
” আমার ইচ্ছে ”
স্বাধীন এবার নরম শান্ত কন্ঠে বলল
” বলুন আমাকে না বললে বুঝবো কিভাবে? ”
” আপনার বোঝা লাগবে না আপনি তো শুধু পারেন আপনার ইচ্ছেগুলো আমার ওপরে চাপিয়ে দিতে কখনো আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছে? এই বিয়েটা আমি করতে চাই কি না? আবার রিসিভশন করছেন আমার কাছ থেকে আমার মতামত টুকু নিয়েছে? কি মনে হয় আমাকে আমি মানুষ না? আমার কোনো ইচ্ছে নেই আপনি যা বলবেন যা করবেন আমার সবটা মেনে নিতে হবে? কেনো? আপনি আমার হাসবেন্ড বলে? সবটা মেনে নিতে হবে ”
স্বাধীন দ্বিধার পুরো কথা মন দিয়ে শুনলো টুঁশব্দ করলো না। স্বাধীন কিছুক্ষভ নিরব থেকে বলল
” মানছি আমার ভুল হয়েছে আমার দোষ। বলুন আপনি কি চান ”
” আমি কিছু চাই না। নিজেই তো সব ডিসিশন নিয়ে নিয়েছেন আবার আমার কি দরকার ”
আবারও নিরবতা গ্রাস করলো কিছুক্ষণ স্বাধীন অনুতপ্ত গলায় বলল
” দ্বিধা আ’ম সরি। মানছি ভুল হয়েছে। কিন্তু জানি আপনি বিয়েটা করতে চান নি তাই এভাবে বিয়েটা করতে হলো আর রিসিভশনের বিষয়টা আপনার সাথে আমার ডিসকাস করা উচিত ছিল আমি মানছি ”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here