মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে প্রাক্তনের বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে ভাবতেই লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে দ্বিধার। ব্যাপারটা জানাজানি হলে সংসার শুরু করার আগেই সবটা শেষ হয়ে যাবে। তাই দ্বিধা আগে থেকে জেনেশুনে বিয়েটাতে না করে দিয়েছিল। কিন্তু এটা কি হলো? ভাবতেই ভয়ে লজ্জায় বুক ঢিপঢিপ করছে দ্বিধার। দ্বিধা যত দূর জানে স্বচ্ছের বড় ভাই স্বাধীন একজন চুপচাপ গম্ভীর মানুষ। তাছাড়া স্বচ্চ আর তার ভাইয়ের মধ্যে কখনো বনে না। এখন সে তার স্বামী ভাবতেই দ্বিধার শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো।
দ্বিধার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটল দরজা লকের শব্দে। দ্বিধা মূহুর্তেই বুঝে ফেললো স্বাধীন এসেছে। দ্বিধা আরো নুয়ে বসলো। ভারী শাড়ি আর ওড়নার কোণা দুহাতে মুঠ করে ধরলো। এটা তাদের বাসররাত নয়। কাল রাতের বিয়ে হালকা সাজ্জ এখনো খোলা হয় নি। সবটা যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছিল সকালের বিদায়ের পর থেকে সবটা কেমন এলোমেলো অগোছালো হয়ে ঝটপাকিয়ে যাচ্ছে কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে না। দ্বিধার চোখের সামনে ফ্লোরে কটমট শব্দ তুলে কালো সু এসে থামলো। ভরাট কন্ঠের ভেসে এলো
“এখনো ভাবে বসে আছেন কেনো? যান ফ্রেশ হয়ে নিন। কাবাডের ওপাশটায় আপনার সব প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র রাখা আছে”
দ্বিধা শুকনো ঢোক গিলে। একবার স্বাধীনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
“জী”
স্বাধীনের চোখের চোখ পড়তেই দ্বিধার হঠাৎ কেমন অনুভূতি হলো। দ্রুততার সাথে চোখের দৃষ্টি এলোমেলো করে মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। স্বাধীনের দেখিয়ে দেওয়া কাবাডের দিকে এগিয়ে গেলো। কাবাড লক করা না থাকায় সহজে খুলে ফেলো দ্বিধা। দেখলো শাড়ি, থ্রি পিচ রাখা দ্বিধা অবাক হলো মনে মনে বলল “এগুলো এখানে কেনো? ওনার কি আগে বিয়ে ছিলো? আর এগুলো কি আমার সতীনের জিনিস পত্র? ”
দ্বিধা কথাটা ভাবতেই রুহু কেঁপে উঠল। চট করে পিছনে ফিরে তাকাতেই কারোর বুকের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে স্মেল আর কারোর বুকের ধুকপুকানি দ্বিধা বেশ করে উপল্পদ্ধি করতে পারছো। দ্বিধা মাথা উঁচু করে স্বাধীনের মুখ দেখলো। দ্বিধা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ালো। স্বাধীন শক্ত মুখে দু-হাত প্যান্টের পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দ্বিধা তার শুষ্ক ঠোঁট জোড়া জ্বীব দিয়ে ভিজিয়ে বলল
“আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো”
“জানি কি বলবেন। তাই ওসব ফালতু কথা শুনে আমার ইনপ্টেন টাইম ওয়েস্ট করতে চাইছি না”
কথাটা বলে স্বাধীন কয়েকটা ফাইল নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।দ্বিধার ভ্রু কুঁচকে গেলো আস্তে করে বলল
“পালাতে চাইছেন?”
আস্তে বললেও স্বাধীন শুনতে পেলো। স্বাধীনের চলন্ত পা থেমে গেলো। ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল
“স্বাধীন কোনো কিছুতে ভয় পায় না। আর যেখানে টপিকটা যখন আপনি! আর আপনার মাথার সব বাজে পোকা গুলো ঝেড়ে ফেলেন। নাহলে খুব খারাপ হবে”
দ্বিধা স্বাধীনের কথার মানে বুঝলো না সবটা মাথার ওপর দিয়ে গেলো। ভাবতে ভাবতে শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
দ্বিধার সাওয়ার নিতে নিতে একটা ভাব এসে মাথায় জুটলো। “যেখানে তার না বলাতে তার বাবা আর আগলো না সেখানে বিয়ে সম্পন্ন হলো কিভাবে?”
আনমনে ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে গিয়ে ভেজা চুলগুলো আলত হাতে মুছতে লাগল। হঠাৎই কানের কাছে ফিসফিস গলায় বলে উঠল
“লাল রাঙা শাড়িতে আপনাকে পরি বউ লাগছে মিসেস. স্বাধীন আহামেদ”
স্বাধীনের গোলাপি রাঙা উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ছুয়ে গেলো কান। দ্বিধা কেঁপে উঠল হাত থেকে তোয়ালেটা পড়ে গেলো। চোখ মুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠলো। দ্বিধা পিছনে ফিরে কাউকে দেখতে পেলো না। দ্বিধা বেলকোনিতেও গেলো স্বাধীন নেই। দরজা বন্ধ, ওয়াসরুম থেকে পানির শব্দ ভেসে আসছে। দ্বিধা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো
“এই লোকটা যদি এখন এখানে থাকত তাহলে এখনি মরে যেতাম। আচ্ছা ওনি কি আমাকে সত্যি সত্যি ঔ সব কথা গুলো বলল নাকি আমি হ্যালুসিলেশন করলাম? ঔ গম্ভীর মানুষটা এসব কথা বলবে? ইম্পসিবল! আমি হ্যালুসিলেশন করছি ওটা”
এরইমধ্যে দরজায় ঠকঠক করে নক করলো। দ্বিধা পরিপাটি হয়ে দরজা খুলে দেখলো। স্বাধীনের মা সাদিয়া বেগম হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
“আম্মু ভিতরে আসুন”
“না তুমি আমার সাথে আসো তাড়াহুড়ায় নিশ্চয়ই সকাল থেকে কিছু পড়েনি পেটে”
“না আসলে”
“শুনো যা প্রয়োজন আমাকে নাহলে স্বাধীনকে বলবে লজ্জা পাবে না”
দ্বিধা অস্তিত্বে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো। সাদিয়া তাড়া দিলেন নিচে যাওয়ার জন্য দ্বিধা একবার পিছনে ফিরে দেখলো। স্বাধীন এখনো ওয়াসরুম থেকে বের হয় নি। দ্বিধা সাদিয়ার পিছনে পিছনে গেলো।
নিচে খাওয়ার টেবিলে চেয়ার টেনে বাসলো। বাড়িতে কেউ নাই যেনো কেমন সুশাসন। দ্বিধা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো মনে মনে বলল “এটা বিয়ে বাড়ি নাকি স্বশান বাড়ি। ইশ কত ইচ্ছে ছিলো বিয়েরা ধুমধাম করে, মেহেনদী সাংগীত হবে তা-না ঘোড়ার ডিমের বিয়ে ভাবতেই কান্না পাচ্ছে”
“নাও মা খাও কোনো লজ্জা করে খাবে না এটা এখন থেকে তোমারও বাড়ি তাই নিজের বাড়িতে কিসের লজ্জা”
দ্বিধা মুচকি হেসে বলল
“আপনি খেয়েছেন?”
“না তুমি খেয়ে নাও আমি পরে খাবো”
“এটা হয় না-কি আপনি বসেন আমরা একসাথে খায়”
দ্বিধা সাদিয়াকে চেয়ারে বসিয়ে প্লেটে নিজেই খাবার সার্ভ করে দিয়ে নিজেও সাদিয়ার পাশে বসলো। সাদিয়া বেগমের চোখে পানি চিকচিক করছে আলত হাতে দ্বিধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। দ্বিধা হাসলো। খেতে শুরু করলো। দ্বিধা একলোকমা মুখে দিতেই পাশ থেকে চেয়ার টানার শব্দ আসলো। দ্বিধা সতর্ক চোখে পাশ ফিরে তাকিয়ে স্বাধীনকে দেখলো। স্বাধীন নিজেই খাবার সার্ভ করে নিলো। সাদিয়া বেগম বলল
“স্বাধীন আজ কি বাইরে কাজ আছে তোর?”
“না কেনো?”
“তাহলে দ্বিধাকে নিয়ে মার্কেট যা ওর যা যা পছন্দ কিনে আন যেভাবে বিয়ে করলি। আমার এতো আশা সব ভেংগে দিলি। আর রিসিভশন কবে করবি তোর সময় হবে কবে বলিস। গেস্টদের ইনভাইট করতে হবেন”
স্বাধীন প্রতিত্তোর না করে খেতে লাগলো।এদিকে দ্বিধা অস্তিত্বে খেতেই পারছে না।
“দ্বিধা খাচ্ছো না কেনো মা? এটা খাও না?”
“না খাই কিন্তু এখন খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না”
“ওমা সেকি খাবে না কেনো? না খেলে শরীর খারাপ করবে। তোমাকে আমি ভালোভেবে ছিলাম দ্বিধা এখন দেখছি তুমি ব্যাড গার্ল”
সাদিয়ার কথায় দ্বিধার বড্ড হাসি পেলো কিন্তু দ্বিধা হাসলো না সিরিয়াস মুখে বসে রইলো।
“দাড়াও আমি তোমার জন্য কিছু রান্না করে আনি। কি খাবে বলো”
“না কিছু লাগবে না এতেই হয়ে যাবে”
“তাহলে খাচ্ছো না কেনো?”
“এই তো খাচ্ছি”
দ্বিধা আস্তে আস্তে খেতে লাগল। সাদিয়া খেয়ে উঠে গেলো। পরপরই স্বাধীন উঠে গেলো। দ্বিধা ও উঠে গেলো। হাত ধোয়ার জন্য বেসিংয়ের দিকে গেলো। আবার ফিরে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই। চিরচেনা পরিচিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো
“তুমি এখানে?”
দ্বিধা চমকালো। স্বচ্ছের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো স্বচ্ছের চোখ মুখে অবাক বিষ্ময়ের খেলা। দ্বিধা চুপ রইলো এই বাজে ঘৃণিত লোকটার সাথে কোনো প্রকার কথা বলতে চাই না। স্বচ্ছের চোখ মুখ দেখে দ্বিধা বুঝে গেলো স্বাধীন আর দ্বিধা বিয়ের ব্যাপারটায় স্বচ্ছ অবলোকন হয় নি এখনো।
দ্বিধার ভাবনার মাঝে স্বচ্ছ দ্বিধা কাছে চলে আসতে দেখে দ্বিধা পিছিয়ে যায়। স্বচ্ছ বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বলল
“আমাকে মিস করছিলে বুঝি? তাই বাসায় আসছ”
দ্বিধা পিছাতে পিছাতে ধাক্কা খেলো ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো স্বাধীন গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
দ্বিধা ভয়ার্ত মুখে তাকিয়ে রইলো। স্বাধীন গম্ভীর হয়ে বলল
“সি ইজ মাই ওয়াইফ। ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্বচ্ছ ঘর কাঁপিয়ে হু হা করে হেসে উঠলো। দ্বিধা ভয়ে মরি মরি অবস্থা এই বুঝি স্বচ্ছ সব বলে দিবে?
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রেমানন্দোল-১
#তাসনিম_তামান্না