#কৃষ্ণপক্ষের_চাঁদ
#পর্ব :১৬
#JannatTaslima(writer)
.
.
.
রাত্রির প্রথম প্রহরে বইয়ে মুখ গোজে বসে আছি। কিন্তু কোনোভাবেই পড়ায় ধ্যান দিতে পারছি না। সানজুর শ্যামবর্ণের মায়াবী মিষ্টি হাঁসি মাখা মুখটা চোখে ভেসে উঠছে প্রতিবার।গতকাল যখন চাঁদনির মুখ থেকে ওদের আমেরিকা পারি জমানোর খবর পেলাম,তখন আমি একপ্রকার প্রতিক্রিয়া শূন্য হয়ে গিয়েছিলাম।সানজুর বাবা তার মরহুমা আদরের বোনকে রাতে স্বপ্নে দেখে, নিজের জেদ আর ধরে রাখতে পারেন নি।প্রবাসযাত্রার ঠিক আগমুহূর্তে তার বোনের রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতিগুলোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।আফসোসের বিষয় হলো,যাদের জন্য এই মান-অভিমানের দেয়াল সৃষ্টি হয়েছে,সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্ত অব্দি অপেক্ষা করেও তাদের সাথে সাক্ষাৎ হয় নি তার। আমি চন্দ্র দুজনেই তখন পর্যন্ত বাসায় ফিরি নি।আমার ফোন বন্ধ আর চন্দ্রের ফোন সাময়িক মিউট থাকায় চাঁদনির ফোন কলেও কোনো কাজ হয়নি।আর আমরা যেকালে খবরটা পেলাম,সেকালে তাঁরা মুক্ত আকাশে পাখির ন্যায় উড়াল দিয়ে দিয়েছে।আবেগের বশে সানজুর নাম্বারে শ খানেক কল দিয়েছিলাম আমি।কপাল দোষে আপাদমস্তক আপেক্ষিক একটা বিষয় নিয়ে আমেরিকায় পৌঁছালো সানজুদের পরিবার।সানজুদের উড়াল দেয়ার সাথে সাথে আমার ওর সাথে পুনরায় আকাঙ্ক্ষিত রঙিন মুহূর্তের কাটানোে ইচ্ছার ঘুড়ির সুতো ছিড়ে গেলো।তারমানে সত্যিই কী আমার আগের ভাবনা সত্য হলো!সানজুর সঙ্গের যাত্রা ইতি ঘটলো।পরীক্ষার শেষদিনই ওর সাথে শেষ সাক্ষাৎ ছিলো আর হবে না।আমার অন্যতম এই খুশির কারণটা দূরে চলে যাওয়ার জন্য,সব বারের মতো এবারও আমার পরিবার দায়ী।সেদিন গ্রামে নিজেদের গা ঢাকা দিতে সানজুর বাবাকে অপবাদ দেয়া উচিত হয় নি তাদের ।তাছাড়া সবকিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে সানজুকেও এ বিষয়ে ঠেনে আনা খুবই মারাত্মক কাজ ছিলো।যার কারণবাবদ দুটি পরিবারের পরিপাটি সম্পর্ক এভাবে এলোমেলো হয়ে গেলো।আমার আর সানজুর দীর্ঘ বন্ধুত্বও ঠুনকো হয়ে গেলো।বইয়ের লেখায় দৃষ্টি রেখে নিজের জীবনের লেখা পড়তে যখন ব্যস্ত ছিলাম।তখন এক পেয়ালা চা আমার টেবিলে উপর শব্দ করে বসলো।আমার প্রশ্নবাচক দৃষ্টি উদ্যত হলে,সে গলা জাড়ি দিয়ে বললো,
–আমি জানি তুমি এখন সানজুর কথা ভাবছো।
আমি হতবাক হয়ে এর উল্টো একটা প্রশ্ন করলাম,
–এই চা কার?
–কেন এখানে তুমি ছাড়া আর কেউ আছে নাকি?
–আছেন তো আপনি।
–আমিতো আছি,আমার হাতে যে এক কাপ চাও আছে তা দেখতে পাচ্ছো না।(এই ঘরে অবস্থানকৃত দ্বিতীয় চায়ের পেয়ালাটা হাত দিয়ে ইশারা করে,আমার ধ্যান ভাঙালেন চন্দ্র)
আমি স্মিত হেসে বললাম,
–আপনি বানিয়েছেন।
চন্দ্র ডান দিকে ঘাড় বাকিয়ে একটা শ্বাস ঠেনে বললেন,
–সে ছাড়া আর উপায় আছে।বউতো বান্ধবীর শোকে পাথর হয়ে বসে আছে।পাথর কী আর আমার জন্য চা বানিয়ে দিবে? তাই নিজেই বানিয়ে নিলাম।
তার কথা শেষ হওয়ার আগে আমি বাঁধ সাধলাম,
–আর আমার জন্যও বানালেন।
ওনি বললেন,
–সেদিনের মতো পূর্ণিমা না হলেও আজ আকাশে কিন্তু একটা আহত চাঁদ আছে।বিস্কিট যেহেতু সাথে আনি নি,বারান্দায় বসে ঐ বেশ অর্ধ চাঁদকে চন্দ্রের এটো পরোটা মনে করে ভিজিয়ে খেতে পারো।(বলে চোখ মারলেন)
~~~~~~~~~
বারান্দার বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিতেই।তিনি নিজ গুণ বর্ণনায় ব্যস্ত হয়ে পরলেন,
–চায়ে আর যাই হোক,তোমার মতো চিনি কম হবে না।
–অতি মিষ্টি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।তাই কষ্ট করে কম মিষ্টি হজম করে নিবেন।গিলতে কাঠ খড় পোড়াতে হলেও,পেটে চলে যাওয়ার পর নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।(আমিও কম যাই না)
–সেই ভরসায়তো গিলে যাই।(থেমে আবার বললেন) বড় মামা কল করেছিলেন,তাঁরা ঠিকমতো পৌঁছে গেছে।আপাতত কদিন ছোটো মামার বাসায় থাকবে,পরে নিজেদের ঠিকানা নিজেরাই করে নিবে।আর জানো,সানজু পাশ থেকে কী বলছিলো?
আমি উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম, কী?
–দুলাভাই, এখন অনেক টায়ার্ড কথা বলতে পারছি না।পরে বলে নিবো,আমার আধারিকা রহমানের খেয়াল রাখবেন। (সানজুর বুলিগুলো আউরিয়ে ওনি হেসে দিলেন,আমিও তাতে তাল দিলাম)
–দুলাভাই!!! আসলেই সানজুও না পারে বটে।এতো কিছু হওয়ার পর সবকিছু কীভাবে সহজে ভুলে গেল?ইশ,প্রতিবারের মতো যদি এবারও ওদের যাওয়াটা ক্যানসেল হয়ে যেতো।
আমার আক্ষেপ শুনে চন্দ্র তাচ্ছিল্য করে বললেন,
–এখন বুঝতে পারছি, আজ দশ বারো বছর ধরে ওরা আমেরিকা যেতে পারছিলো না কেন?
আমি অবুঝ স্বরে জানতে চাইলাম, কেন?
–তোমার বদ দোয়ায়। (বলে উচ্চস্বরে হেসে দিলেন, আমিও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু জানতে চেয়ে তার হাঁসি থামিয়ে দিলাম)
–চন্দ্র,কিছু মনে না করলে জানতে পারি,লিলি কে?
ওনি আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
–তুমি এ নাম পেলে কোথায়?
–দুই-তিনদিন আগে আলমারি গুছাতে গিয়ে, আপনার কাপড়ের ভাজে একটা সাদা রুমাল চোখে পড়লো।রুমালটায় সুতা দিয়ে ফুল পাতার নকশার পাশাপাশি এই নামটাও দেখতে পেলাম।আমি যতটুকু জানি আপনার আম্মুর নাম লিলি না।তাই কৌতুহুল দমিয়ে না রাখতে পেরে, আজকে আপনাকে প্রশ্নই করে ফেললাম।
চন্দ্রের চাঁদবর্ণ মুখ খানা,আমার কথা শ্রবণ মাত্র কৃষ্ণপক্ষে ছেয়ে গেলো।আমার নিজের ভেতর কেমন জানো সুক্ষ্ম ব্যাথা অনূভুত হতে লাগলো। তাই অপরাধবোধ থেকে বললাম,
–দুঃখিত, আমার ওভাবে আপনার ব্যাক্তিগত জিনিসে হাত দেয়া ঠিক হয় নি।আপনি বলতে না চাইলে সমস্যা,,,,,,,
–লিলি আমার ছোটোবেলার খেলার সাথী।ও আর আমি সমবয়সী ছিলাম।একসাথেই লেখা পড়া করতাম।খুব ভালো বন্ধুও ছিলাম।ওরা আমাদের আগের বাসার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকতো।পাশাপাশি বাসা হওয়ায় সবসময় যাওয়া আসা ছিলো।আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকেতো,ওর আম্মু আমাকে আর চাঁদনিকে আরো বেশি আদর করতে শুরু করলেন।তার কাছে আমরা দুজন ওনার সন্তানের চেয়ে কম ছিলাম না।আমাদের বন্ধুত্বের মতো দুই পরিবারের সম্পর্কটাও খুব মধুর ছিলো।আমরা দুজন দুজনের পচ্ছন্দ অপচ্ছন্দ খুব ভালো করেই জানতাম।ঝগড়াও করতাম প্রচুর।একজন আরেকজনকে কোনোকিছু না শেয়ার করে থাকতে পারতাম না।ও খুব ভালো হাতের কাজ জানতো।কোনো এক জন্মদিনে লিলি আমাকে তার হাতে নকশা করা এই রুমালটা উপহার দিয়ে বলেছিলো,”এটা খুব যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখবি,যাতে তোর বউ কোনোদিন এটা নিয়ে তোর সাথে ঝগড়া করে।”
(ওনি আমায় থামিয়ে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন।আমার খারাপ লাগার চেয়ে,আশ্চর্য লাগছে বেশি, ওনার মুখের অতীতকালীন শব্দগুলো শুনে।)
জানো আধারিকা ও না অল্পতেই কেঁদে দিতো।তাই আমি ওকে ওয়াটার লিলি বলে খেপাতাম।এই সামন্য কথায় যে ওর থেকে কতো মার আমি খেয়েছি তার কোনো ইয়াত্তা নেই।একটা মজার জিনিস জানো,যে মেয়েকে কান্না করার জন্য ওয়াটার লিলি ডাকতাম,সেই মেয়েটাই শেষ পর্যায়ে কাঁদতে ভুলে গিয়েছিলো।
–শেষ পর্যায়ে কাঁদতে ভুলে গিয়েছিলো মানে?
আমার প্রশ্নে ওনি আবার ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন,
–আমরা তখন ক্লাস ট্রেনে পড়ি।দুজনের মধ্যে ওই সময় জেন্ডার জনিত কারণে একটু দূরত্বও চলে আসে। দুজনে সমবয়সী হলেও, ওকে আমার থেকে বড় দেখাতো।এরকম কিছু কারণে,আগের চেয়ে সবকিছু শেয়ার করার পরিমাণটাও কমে যায়।তবে বন্ধুত্বটা ছিলো অটল।আমরা সবসময় স্কুলে একসঙ্গে যাওয়া আসা করতাম।লিলিকে পথে ছেলেরা নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতো।আমার খুব খারাপ লাগতো এগুলো।প্রতিবাদ করতে গেলে ছেলেগুলো আমাকে নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা শুরু করে দিতে।আমি যে তখন ছোটো ছিলাম,ওদের মতো এতো তাগড়া শক্তি আমার ছিলো না।আমি অনেক বার লিলির বাবা মার কাছে এসব বলতে চাইছিলাম,কিন্তু ওর কারণে পারি নি।ও শুধু বলতো,”চন্দ্র তুই ওদের মতো কখনো কোনো মেয়েকে বাজে কথা বলবি না।মনে রাখবি,সব মেয়েই চাঁদনির মতো কারো না কারো বোন।তুই যদি একজন ভাই হয়েও,অন্য কোনো মেয়েকে এরকম কথা বলিস।তাহলে তোর বোনকেও একদিন কোনো ছেলে এরকম খারাপ কথা বলবে।”সেদিন ওর কথায় শুধু বোকার মতো বলেছিলাম, “আমি আমার বোনকে অনেক ভালোবাসি।” ও বিনিময়ে মুচকি হেসেছিলো।কাকতালীয় ভাবে ওর হাসিটা তোমার হাসির অনুরূপ ছিলো।ওকে যেদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না,এর পরদিন ও বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরে।বাসায় ঢুকেই প্রথমে ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল।ওর ক্লান্ত, আতংকিত, বিধ্বস্ত মলিন চেহারাটা আমার চোখে আজও ভেসে ওঠে।প্রথম যেদিন তোমাকে আমি বাসে দেখি,আমার কাছে মনে হয়েছিল তুমি সেদিনের সেই লিলি।কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে রেখেছো।তারপর যখন তোমাকে বাসায় নিয়ে আসি, আমি ভেবেছিলাম তুমিও লিলির মতো ঘর কুণো হয়ে যাবে।কিন্তু তোমার স্বাভাবিক আচরণ, কথাবার্তা আমাকে ভাবিয়ে তুলে।তাই অন্য কিছু মনে করে তোমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।অথচ তোমাকে মাঝ রাস্তা থেকে ফিরিয়ে এনে যে, আমার ধারণাটা ঠিক হয়ে যাবে জেনে অনেক অবাক হয়েছিলাম
আমি হতবাক নয়নে থাকাতে বাধ্য,
–তারমানে আপনি আগে থেকেই জানতেন যে আমি,,
–হ্যা জানতাম। তুমি বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের অপরাধবোধ থেকে আর বাবা-চাঁদনির ঝাড়িতে ফিরিয়ে আনলেও।আমি তোমাকে বাড়িতে ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্যে ঐদিন রাতেই গ্রামে তোমার ব্যাপারে খোঁজ নেই।ঘটনাটা অন্যভাবে কানে আসলেও,আমার মনে হয়েছিল তুমিও লিলির মতো কোনো হায়নার স্বীকার।চাঁদনিও বিষয়টা মানতে নারাজ ছিলো। কারণ ও তোমাকে আগে থেকেই চিনতো।(আমি এসব শুনে শুধু আশ্চর্যই হচ্ছি,সবাই আমার ব্যপারে জানতো শুধু আমিই বুঝতে পারি নি।)তোমাকে যতই দেখতাম ততই অবাক হতাম আমরা সবাই।তোমার সাহসিকতা আমাদের সত্যিই বিস্মিত করেছিলো।তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে তোমার মতোই থাকতে দিবো।এজন্য তোমার ব্যপারে আমরা বড় মামাকেও জানাই নি।তবে একটা জিনিস খুবই অবাক করা ছিলো,
আমার কৌতূহল ওনি বারংবার বাড়িয়েই দিচ্ছেন,
–কী সেটা?
–চাঁদনি আর আমি সানজুকে তোমার কথা এজন্যই বলি নি,ও বাচাল প্রকৃতির কখন না কথার ফাঁকে কাউকে বলে দেয় তোমার কথা। কিন্তু দেখো,তোমরাতো এক গ্রামের ওতো তোমার বিষয়ে প্রথমেই সবকিছু শুনেছিলো।যদিও ভিন্নভাবে।তবুও চাঁদনির সাথে যেখানে ও সবকিছু শেয়ার করতো,সেখানে তোমার বিষয়টা ও কী দূর্ততার সঙ্গে চেপে গিয়েছিলো।(হ্যা সত্যিইতো আমিতো এই বিষয়ে কোনোদিন ভেবেই দেখি নি।সানজু আমার বিষয়ে এতোটাই সচেতন।একেই বলে হয়তো প্রকৃত বন্ধু।)তোমার সবকিছুর মাঝে অজানা কারণে আমার মনে হতো তুমি লিলি।কিন্তু তুমি লিলির মতো হাসতে না,আমার সাথে কথাও বলতে না।তাই ইচ্ছে করে তোমাকে রাগীয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাইতাম।সেদিন বাসায় ফিরার পর যখন জানতে পারি,তোমাকে ওরা নিয়ে গেছে। তখন কেন জানি না আমার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছিলো।বিল্ডিংয়ের সবাই তোমাকে আমাকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলছিলো।আমি সেগুলো তে কান দেই নি,আমার শুধু এটাই মনে হচ্ছিল তোমাকে ওই রাক্ষসপুরী থেকে উদ্বার করতে হবে।চাঁদনির বোকামির জন্য তাকে বকাও দিয়েছিলাম। আমি বাবাকে গ্রামে যাওয়ার আগেই বলে দেই, আমি তোমাকে বিয়ে করে হলেও এখানে নিয়ে আসবো।বাবা প্রথমে মান সম্মানের কথা ভেবে সম্মতি দেননি।পরে যখন তাকে লিলির কথা স্বরণ করিয়ে দেই,চাঁদনি নামের তারও একটা মেয়ে আছে স্বরণ করিয়ে দেই।তখন তিনি আর না করতে পারেন নি।তার পরের সব ঘটনা তো তোমার জানাই।
আমার অভ্যন্তরীণ অভিধানের সব শব্দগুচ্ছ কম পরে যাবে এই লোকটার কৃতজ্ঞতায়।বাস্তবিকই মানুষের বাহিরটা দেখে ভেতরটা আন্দাজ করা ঠিক না।কিছু মনে পরতেই কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলাম না,
–আর লিলি আপুর কী হলো?
ওনি এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–লিলিকে সেদিন ঐ ছেলেরা একা পেয়ে,রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে।যার প্রধান নেতৃত্বে ছিলো, এলাকার এক বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার ছেলে।বাবা পার্টির নেতৃত্ব দেয় আর ছেলে ধর্ষণের।লিলি বাসায় ফিরার পর,আন্কেল-আন্টি লোকলজ্জায় সব চেপে রাখতে চেয়েছিলেন।কিন্তু সত্যতো জলন্ত অগ্নি শিখা লুকিয়ে রাখা যায় না।একদিন জানা যায় লিলি প্রেগন্যান্ট।ডাক্তারের কাছে অ্যাবোশোন করাতে গেলে,ডাক্তার পেশেন্টের জীবনের ঝুঁকি দেখে প্রস্তাবটি নাকোচ করে দেয়।অবশেষে আন্কেল মেয়ের জীবনের কথা চিন্তা করে,লোকলজ্জা সবকিছু একপাশে রেখে ঐ ছেলের বাবা মানে সমাজ দরদী নেতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান।সবকিছু খোলাসা করে লিলিকে বাড়ির বউ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওনি সেটাকে অস্বীকার করে বড়ই অপমানের সাথে, আন্কেলকে ঘাড় ধ্বাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন।পরবর্তীতে আন্টি অনেকটা বেহায়ার মতো ওই ছেলের মা যে নারী অধিকার নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেন,তার কাছে লিলিকে নিয়ে যান,সবকিছু জানিয়ে তাকেও অনুরূপ প্রস্তাব দেন।[রাস্তায় যারা নারীর অধিকার নিয়ে চিল্লায়,তাদের বাসার নারীরাই কিন্তু বেশি নির্যাতিত হয়।]ওই মহিলা আন্টি আর লিলিকে তার অফিসে সকলের সামনে লিলি এবং আন্টি দুজনকেই বেশ্যা উপাধি দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। সেই অপবাদ সইতে না পেরে লিলি বাসায় এসে গলায় দড়ি দেয়।ওদের পুরো পরিবার প্রায় পাগল হয়ে যায়।আন্টিতো কিছুতে এই শোক সইতে পারছিলেন না।তাই আন্কেল এই নিশ্চুর শহর থেকে দুই ছেলেমেয়ে স্ত্রীসহ গ্রামে চলে যান।(এই সমাজসেবক নেতা,আর নারী আন্দোলন কারী নেত্রীতো শুধুই একটা ভালো মানুষী খোলস ধারণ করেছেন।তাদের কুকর্ম আড়াল রাখতে।এরা সত্যিই ভালো মানুষ হয়ে উঠে না।সুযোগ পেলেই তাঁরা তাদের আসল রুপ ধারণ করে।যেমন আমাদের গ্রামের সেই স্বঘোষিত আলেম।ধর্ম মানুষের একটি আবেগের বিষয়, সেই আবেগকে ব্যবহার করে তিনি নিজেকে আড়াল রাখতে দুই বছর যাবত এই বেশ ধরেছিলেন।কয়লা ধুইলে কী আর ময়লা যায়,তাইতো সেদিন শালিশে তার কথা বার্তায় সেটাই ফুটে উঠেছিলো।যখন বুঝতে পারলেন এখানে তার ডাল ভিজছে না।নিজের আসল রুপ সকলের সামনে পুনঃপ্রকাশিত হওয়ার ভয়ে,অসুস্থতার বাহানায় বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি।কারণ চোরের মনেইতো পুলিশের ভয় থাকে।)
ওনি আবার বললেন,
লিলি আর তোমার মধ্যে পার্থক্য ছিলো, তুমি সব ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছো আর লিলি সেই এক্সিডেন্টকে ওর জীবন মনে করে ওখানেই রয়ে গিয়েছিল।আমি লিলির জন্যতো চেয়েও কিছু করতে পারি নি।কিন্তু তোমার জন্য করতে চেয়েছিলাম।আর করতে গিয়ে যে এতো মূল্যবান কিছু পেয়ে যাবো তা ভাবি নি।
আমার আখিদ্বয় জলে টইটম্বুর।জীবনে যেমন বড় অনেক কিছু হারিয়েছি,তেমন অনেক বড় কিছু পেয়েছি।তাই সব আড়ষ্টতা একপাশে রেখে ঝাপিয়ে পড়লাম সেই শান্তিনিবাসে।ফুপিয়ে উঠলাম আমি।ওনি এক হাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
–তুমিও দেখছি ওয়াটার লিলি হয়ে গেছো।
আমি ঐ অবস্থায় তার দিকে মুখ তুলে থাকালাম।ওনি তার ভুবন ভুলানো হাঁসি দিয়ে আমার চোখ মুছতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন।আমি নাক টেনে জড়তা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–আচ্ছা চন্দ্র, আমি যদি লিলি আপুর মতো প্রেগন্যান্ট হতাম, তাহলে কী আপনি আমায় বিয়ে করতেন?
ওনি আমায় নিজের সাথে আরো চেপে ধরে বললেন,
–লিলির মৃত্যুর পর আমি ভেবেছিলাম, এরপর আমার চোখের সামনে এরকম কাউকে মরতে দিবো না।কিন্তু এটা ভাবি নি,যে আমি তাকে বিয়ে করে সংসার করবো।কিন্তু তোমাকে দেখার পর তোমাকে সাহায্য করতে গিয়ে যে,তোমার প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে যাবো এটা আমি জানতাম না।তোমার ব্যক্তিত্ব,ইচ্ছাশক্তি, সাহসীকতা,রাগী চোখ,রুঢ় ভাষা, মুচকি হাসি এগুলোর প্রেমে যে আমি পরে যাবো তা জানতাম না।একসময় এগুলোকে ভালো লাগা ভাবলেও।তোমাকে তোমার বাড়ির লোকেরা সেদিন নিয়ে যাওয়ার পর।
সেই স্বল্প সময়ে আমি ঠের পাই আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর ভালোবাসা মানেইতো প্রিয়জনের সবকিছু প্রিয় করে নেওয়া।যেখানে সমস্ত তুমিটাই আমার প্রিয়,সেখানে তোমার শরীরের এক অংশ আমার অপ্রিয় হতে পারে কী করে?
সুখ ক্ষনস্থায়ী এতো সুখ কী আমার কপালে সইবে,,,,,,,
#চলবে,,
{ভুল ত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন }