#কৃষ্ণপক্ষের_চাঁদ
#পর্ব :০৮
#JannatTaslima (writer)
ভার্সিটির ক্লাসরুমে সিঙ্গেল সিটে বসে আছি। সামনে স্যার ‘কনস্টিটিউশন অফ ল’ এর ওপর ইংরেজিতে লেকচার দিচ্ছেন।পেছনে দুইটা মেয়ের উশখুশ শোনা যাচ্ছে। তাদের নিকট হয়তো ক্লাসটা খুব বিরক্তিকর। কিন্তু আমার জন্য এ ক্লাসটাই সুখকর।কারণ,যতক্ষণ ক্লাস চলবে ততক্ষণ কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।ক্লাস শেষ হয়ে গেলে শুরু হয়ে যাবে আবার সেই জাত বিভেদ কে বড়লোক, কে ছোটোলোক, কে কালো,কে ফর্সা।সব মিলিয়ে স্কুল জীবনটাই বেস্ট।সেখানে যে এরকম ভেদাভেদ নেই তা না।কিন্তু বাধ্যতামূলক স্কুল ইউনিফর্মে কয়জন কেই বা আলাদা করা যায়।শুনেছিলাম ভার্সিটি লাইফ নাকি অনেক মজার।অথচ এখন তা শুধু শুনা কথাই রয়ে গেল।এখান কার সবাই অনেক হাইস্ট্যান্ডার।কথা-বার্তা, চাল-চলন,আচার-আচরণ সব।ক্লাসগুলো যেমন ইংরেজিতে, এখানে সবাই একে অপরের সাথে কথাও বলে ইংরেজিতে।বাংলা বলাটা যেনো এখানে মূর্খতার লক্ষ্মণ।আমার মনে হয় নিশ্বাসটাও যদি তারা ইংরেজিতে নিতে পারে,তাহলেই তাদের তৃপ্তি।এই উঁচু জাতের প্রাণী গুলোর মধ্যে আমি নিতান্তই একটা এলিয়েন।যাকে তথাকথিত বাংলা ভাষায় ‘ক্ষ্যাত’ বলা হয়।আমার দার্শনিক চিন্তা ভাবনার মধ্যে ভিসি স্যার আমাদের ক্লাসে ঢুকলেন।আমরা সবাই তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে পড়লাম।ভিসি স্যার একা নয়, সাথে আরেকজন কালো কোর্ট প্যান্ট পড়া ব্যাক্তি।বয়স আনুমানিক চল্লিশ হবে।মুখে কোনো দাড়ি না থাকলেও গাল ভর্তি হাঁসি বিদ্যমান।ক্লাসের সবাই উৎসুক আগন্তুকের পরিচয় জানতে। ভিসি স্যারের বোধহয় আমাদের উৎসুক দৃষ্টি আর সহ্য হলো না,
আমাদের হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন,
— Dear students! Please sit down.I know that you all curious about him.He is Barrister Mainuddin. He is one of the member of varsity authority. And he also play a vital role to established our varsity.
ভদ্রলোকের হয়তোবা এতো প্রশংসা মনে ধরছে না।তাই স্যারকে থামিয়ে নিজেই বললেন,
–Can I talk with them?
স্যার ভদ্রতার সহিত বললেন,
–Why not?as your wish.
অনুমতি পেয়ে ভদ্রলোক ঠোঁটে হাঁসি জুলিয়ে বললেন,
— LLB first year right? Can I talk with you Bangla? (হায়রে বাঙালী বাংলাদেশে থেকেও বাংলায় কথা বলতে অনুমতি নিতে হয়)
সব ছাত্র ছাত্রীরা সমস্বরে বলল,
–Yes sir;
ওনার কাছে জাদু আছে হয়তো মুহূর্তেই সব ছাত্র ছাত্রীদের মনযোগ নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন।
পেছনের মেয়েগুলোর উশখুশ আর শুনা যাচ্ছে না।
–আমি ব্যারিস্টার মঈনুদ্দিন। তোমরা সবাই কেমন আছো জানতে চাইবো না।কারণ ভার্সিটি লাইফটাই অনেক ইন্টারেস্টিং।আমি জানি ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই, সবাই ক্যান্টিনে বা ক্যাম্পাসে গিয়ে নিজেদের মতো আড্ডা দিবে এনজয় করবে।(শুধু আমি বাদে)আমি নিজেও এমন একটা রঙিন সময় পার করে আসছি।তবে ভার্সিটিতে সবাই কিন্তু আড্ডা দিতে আসে না।অনেকের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের ভরনপোষণ করতে হয়।নিজের পড়ালেখারও খরচ চালাতে হয়।ছাত্রজীবন থেকেই স্টাগল শুরু করে দিতে হয়।আমি জানি এখানেও এরকম কিছু স্টুডেন্ট আছে (যেমন আমি) আচ্ছা তোমাদের একটা প্রশ্ন করি, What’s your aim in life ?
কেউ কিছু বলছে না।সবাই চুপচাপ ভদ্রলোকের কথা শুনে অবাক হচ্ছে।
–আমি জানি তোমরা সবাই এটাই ভাবছো, আমরা সবাই আইনের স্টুডেন্ট জেনেও স্যার একি বলছেন!জানো আমি যখন প্রথম আইন ডিপার্টমেন্টে অ্যাডমিশন নেই।তখন সবাই বলতো, “ল পড়ে কী করবা লাইয়ার হবা”।আসলে সবার ধারণা থাকে যে,আইন নিয়ে পড়লে আইনজীবী হওয়া যায়, ঊর্ধ্বে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট আর কোনো চাকরি করা যায় না।ইভেন আমিও এটা ভাবতাম। তোমরা হয়তো সেরকম ভাবো না।তোমরাতো সবাই অনেক স্মার্ট। কিন্তু রিয়ালিটি হলো আইন পড়লে সব ধরনের কাজ করা যায়।শিক্ষকতা করা যায়, সামরিক বাহিনীতেও যুক্ত হওয়া যায়,এছাড়া ব্যাংক,বীমা,কোম্পানি, শিল্প, আর্থিক প্রতিষ্ঠান , ন্যাশনাল ও মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি, রিয়েল এটেস্ট কোম্পানি, সরকারি বেসরকারি এনজিও,উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান,মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী দূতাবাস, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কমিশন ও প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস অডিট ও কমপ্লায়েন্স সবখানেই কিন্তু আইনের স্টুডেন্টরা দাপিয়ে বেড়ায়।আর সব থেকে বড় কথা শুধুমাত্র আইনের স্টুডেন্টরাই কিন্তু বিজেএস,বিসিএস দুই পরীক্ষাই দিতে পারে।একটা কথা আরও মাথায় রাখবে,বিজিএস ক্যাডাররা কিন্তু বিসিএস ক্যাডারদের তুলনায় বেতন,ক্ষমতা ও অন্যান্য সুবিধা ৩০% বেশি পায়।তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় আইন পড়ে ক্যারিয়ারে অভাব হবে না।
এসব শুনে ক্লাসের স্মার্ট স্মার্ট স্টুডেন্টদেরও চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। তখন রাজিব (ছেলেটা বেশ মজার)মজা করেই বলে উঠলো,
–স্যার আইন পড়ে কী আমি ডাক্তার হতে পারবো?
মইনুদ্দিন স্যারসহ ক্লাসে উপস্থিত সবাই হেঁসে দিলো।শুধু হাসলেন না দুজন। চোখ গরম করে রাজিবের দিকে তাকিয়ে আছেন। ভার্সিটির মান-সম্মান ডোবাচ্ছে বলে কথা।মঈনুদ্দিন সাহেব মৃদু হেসে বললেন,
–কেনো হতে পারবে না।ডাক্তাররা ট্রিটমেন্ট দিয়ে মানুষকে সুস্থ করে।আমাদের এই পৃথিবীতো অসুস্থ প্রায়।সবারই জমি-জমা,মামলা-মোকদ্দমা এসব নিয়ে রেষারেষির শেষ নেই।চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুন এগুলোতো আর আছেই।পৃথিবী যতদিন থাকবে,মানুষে মানুষে সম্পর্কগুলো আরো জটিল হবে,গ্যাঞ্জাম বাড়বে।যেখানে গ্যাঞ্জাম
সেখানে আইন আর যেখানে আইন সেখানে আইনের ডিগ্রিধারী।আর তুমি যদি একজন আইনের ডিগ্রিধারী হও।অবশ্যই আইনের সঠিক প্রয়োগ গঠিয়ে সমাজকে সুস্থ করে তুলতে পারবে।হ্যা এক্ষেত্রে তোমরা বলতে পারবে,একজন লয়ার মানেই লাইয়ার।সে সত্যকে মিথ্যা বানাতেই আইনের প্রয়োগ ঘটায়।এক্ষেত্রে আমি বলবো,
Situation is a great cause for change. Decision is your. What kind of change you want in your life. Right ya Wrong.
আইনজীবীদের কোনো বস থাকে না।তারা নিজেরা নিজেদের মতো কাজ পরিচালনা করতে পারে।কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। এখন সিদ্ধান্ত তোমার, তুমি হারাম না হালাল পথে চলবে।
তার কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগছিলো, আইন সম্পর্কে এমন মজাদার বর্ণনা আমি আর শুনি নাই।ভিসি ও আমাদের লেকচারারের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে তারা বেশ তৃপ্ত।রাজিবের প্রশ্নে মঈনুদ্দিন সাহেব তাদের লজ্জা না দিয়ে এতো সুন্দর করে বুঝিয়েছেন।করো মুখে কোনো খই ফুটছে না।সবার নিরবতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আবারও তিনি বলে উঠলেন,
–তা এখন তোমাদের কার কী ইচ্ছা? তোমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী?
সামনের সাড়ির অদ্বিতীকে উদ্দেশ্য করে,এইযে চশমা আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কী?
সামনের সাড়িতেই বসে ছিল,কাঠের চশমা পরিহিতা অদ্বিতি।মেয়েটি বেশ ভীতু ধাঁচের। স্যারেরা নরমাল প্রশ্ন করলে ঘাবড়ে যায়।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
–ইয়ে মানে আমি,
–হ্যা বলো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই।
অদ্বিতী ভীতু চোখে আঁটোসাঁটো হয়ে ভিসি স্যারের দিকে তাকাচ্ছে।ফলপ্রসূত তার অবশিষ্ট জবান এখন বন্ধ। ভিসিরতো রাগে গা জলসে যাচ্ছে মনে হয়। আমার মনে হয়, ভিসি হয়তো কোনো কালে মাধ্যমিকের ম্যাথ টিচার ছিলেন।মঈনুদ্দিন সাহেব বেশ চালাক।ওযে ভীতু সেটা তার বোধগম্য হয়ে গেছে,
–Ok you may sit now. আমি বুঝতে পারছি তুমি নিজে নিজে রেজিস্ট্রি ম্যারিজ করার জন্য আইন পড়ছো।
তার রসিকতায় ক্লাস হাঁসির কল্লোলে মুখরিত হলো।আর অদ্বিতী তো লজ্জায় লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।
–আচ্ছা তোমাদের মধ্যে কেউ কী পলিটিসিয়ান হতে চাও।
কথাটায় শুনে অনতিবিলম্বে পেছনের চার পাঁচটা নেতা নেতা ভাব ধারী ছাত্ররা হাত তুললো।
–গ্রেট!আইনের স্টুডেন্টরা রাজনীতিতেও কিন্তু অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।এক সময় আমাদের সংসদের ৮০ ভাগের বেশী সিট আইনজীবিদের দখলে ছিলো।এখনও আছে, তবে সেকালের মতো না।তোমরা হতে চাও জেনে খুব ভালো লাগছে।আশা রাখি তোমরাও সৎ রাজনীতি বিদ হবে।
এভাবে একে একে অনেককে জিজ্ঞেস করলেন। অনেক মজার কথাও বললেন।
এবার আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন,
–What do you want in your life?
সবাই ফিসফিস করা শুরু করে দিয়েছে। একজন বোরখাওয়ালী ক্ষ্যাত কী-ই বা চাইতে পারে তার জীবনে।আমি দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত ভাবে বললাম,
— I want to learn low.
বাক্যটা যেনো সকলের নিকট একটা মিমি হয়ে গেলো।চাপা হাসির স্বর ভেসে আসছে কানে।মঈনুদ্দিন সাহেব সবাইকে থামিয়ে বললেন,
–কেনো তুমিতো অলরেডি আইন পড়ছো। তারপরও,
–আপনি আমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইছেন। আর আমার জীবনের উদ্দেশ্যই আইন শিখা।(স্থির হয়ে কাট কাট গলায় কথাগুলো বলছি)
–ল ডিপার্টমেন্টে পড়লেতো তুমি আইন শিখতেই পারবে।তুমি কী ভালো রেসাল্ট,ভালো ক্যারিয়ার চাও না।
–না চাই না!আমি যদি ভালো ভাবে পড়ি,ভালো রেসাল্ট ভালো ক্যারিয়ার এমনিই পাবো।তাই আমার উদ্দেশ্য শিখা।শিখতে গিয়ে যা পাবো এগুলোতো এক্সটা বেনিফিট।
–Very well said,I’m impressed. What’s yuor name?
— আধারিকা রহমান।
–Adharika,you may shine in your life.
এভাবেই সকলের সাথে আর অনেক্ক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন। সবাই আমার দিকে কেমন করে জানো তাকাচ্ছিলো।কেউ কেউ আবার তাচ্ছিল্য করে বলছিল, আমাকে জিজ্ঞেস করলে তো আমি এর থেকে আরো ভালো বলতাম।
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে। আমি আর চাঁদনি একসাথে ফিরছি।সবাই মঈনুদ্দিন স্যারের প্রশংসা করছে চাঁদনিও বাদ নেই।স্যার নাকি ওকে মুন নাম দিয়েছেন।আর মুনের জন্য একটা সান খোজার দ্বায়িত্বও তিনি নিয়েছেন।লজ্জামাখা কন্ঠে সে এগুলো বলছিলো আর মিটিমিটি হাসছিল। আমি সেই চাঁদের মতো রুপসীর দিকে বার বার তাকাচ্ছি আর হাঁটছি।হঠাৎ কেউ চাঁদনি বলে ডেকে ওঠলো।দুজনেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখি চাঁদনির ফ্রেন্ড শ্রেয়া ও সিনিয়র এক ভাই।
–Chandni,please come here?
–যা বলতে চাস এখানেই বল?(চাঁদনি বিরক্তি নিয়ে বললো)
–কিছু পার্সোনাল কথা আছে, যা সবার সামনে বলা যায় না।(আমার দিকে তাকিয়ে)
বলেই অহংকারী নারী চাঁদনিকে নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটতে শুরু করলাম।
আজ যদি সংবিধানের মূলনীতি অনুসারে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো।তাহলে হয়তো পরস্পর এ ভেদাভেদ তাকতো না।আবার সেই দার্শনিকদের মতো চিন্তা, ধ্যাত!
–তোমার কী কোনো ফ্রেন্ড নেই?
মঈনুদ্দিন সাহেব আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন।আমিতো ওনার উপস্থিতিতে বেশ অবাক।তবুও স্বাভাবিক ভাবে বললাম,
–থাকবে না কেনো।ভার্সিটির সবাই আমার ফ্রেন্ড।
ওনি আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে বললেন,
–কিছু মনে করো না,আমি সবার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করার জন্য তুমি বলি।তুমি আমার মেয়ের বয়সী তাই তোমাকেও তুমি করে বললাম।
বলে কী এলোক!দেখেতো মনে হয় এখনো দু চারটা বিয়ে করতে পারবে।আমি এবার অবাক কন্ঠে বললাম,
–আপনার মেয়ে আছে?
তিন এক গাল হেঁসে বললেন,
–তোমার থেকে বড় একটা ছেলেও আছে। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। মেয়ে বেঁচে থাকলে তোমার বয়সী হতো।আফসোস জন্মের সময় মারা গেছে। আমি ও চাইতাম তোমার মতো বুদ্ধিমতি সাহসী একটা মেয়ে আমার হোক।কপালে নেই তাই আর হলো না।
–ওহ,
— আমি যখন গ্রাম থেকে এসে ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন হলাম,প্রথম প্রথম সবাই আমাকে গেয়ে, মদন কতো কিছুই না বলতো।কথাও বলতে চাইতো না।আমার কোনো ফ্রেন্ডও ছিলো না।কিন্তু দেখো এখন আমার ফ্রেন্ডের অভাব নেই।তোমারও দেখবে একদিন অনেক ফ্রেন্ড হবে।
–কিছু মনে না করলে একটা কথা জানতে পারি।(সংকোচ নিয়ে বললাম)
–হুম বলো,
–আপনার রিয়াল এইজ কতো?
ওনি আমার কথায় উচ্চস্বরে হেসে দিলেন,আশে পাশে অনেকেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।ওনি হেঁসে হেঁসেই বললেন,
–ফিফটি টু।
…×××××××××××××××××××…
–কিছু বলবেন আধারিকা?কখন থেকে নিজেও দাঁড়িয়ে আছেন আমাকেও দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। কিছু বলার থাকলে বলেন,নইলে আমি যাই।
–ইয়ে মানে যাবেন না,এই নিন?(হাতটা সামনে বাড়িয়ে)
–এটা কী?
–বেশ দামী না দশ টাকার একটা কলম।আপনার জন্য গিফট।
ওনি কলম হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,
–গিফট কী উপলক্ষে?
আমি কাচুমাচু করে বললাম,
–আসলে আমার একটা মেসে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে শিফট হবো।আজ কিন্ডারগার্টেনে প্রথম ভেতন পেয়েছি।তাই সবার জন্য আমার সামর্থের ভিতর অল্প উপহার কিনলাম। আন্কেল, চাঁদনি আর আমার ছাত্র ছাত্রীদের ও একটা করে কলম গিফট করেছি। শুধু আপনিই বাকি রয়ে ছিলেন।
ওনি এবার আমার হাতে প্যাকেট করা কলমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–গিফট তো গিফট।তার আবার কম দাম বেশ দাম হয় নাকি। আর আপনার দেওয়া ছোট্ট উপহারতো আমার জন্য অনেক স্পেশাল। (আমি চমকিত নয়নে চন্দ্রের দিকে তাকলাম) না মানে প্রথম আয় থেকে দেয়া গিফট বলে কথা।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
–ওহ,
এই প্রথম চন্দ্র আমার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।তাই অস্বস্তিতে চলে এলাম। তবে একটা কথা ওনার চাহনি আজ পর্যন্ত কখনো আমার খারাপ লাগে নি।কারণ তার চাহনিতে কখনো কোনো লিপ্সা ছিলো না।বরংচ আমায় রাগানোর প্রচেষ্টা ছিলো। রুমে এসে দুইটা কলম আর একটা তাসবীহ স্বযত্নে মা আর আদনান আরিয়ানের জন্য রেখে দিলাম। না জানি ওদের সাথে আবার কবে দেখা হবে।
#চলবে,,,,,,
{ভুল ত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।}