আপনিময় বিরহ পর্ব ১৭

0
454

#আপনিময়_বিরহ (১৭)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________

আজ উদয় আর তনিমার মেহেন্দি অনুষ্ঠান। চারিদিকে মরিচ বাতির লাল, নীল আলো ছড়িয়ে আছে। মেহেন্দি অনুষ্ঠানে তেমন কেউ নেই শুধু উদয় আর প্রিয়মদের আত্মীয়রা ছাড়া। তনিমার বাবা মাও আসছে। বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন তো আর কিছু করার নেই।। তাঁরা বেগম, তাহেরা বেগম সকলের দিকে খেয়াল রাখছে। উনারা ছাড়াও তাহেরা বেগমের আত্মীয়রাও অনেক হেল্প করছে। তনিমা খয়েরী কালার লেহেঙ্গা, উদয় খয়েরী কালার পাঞ্জাবি পড়ছে। প্রিয়তা সাদা কালার লেহেঙ্গা, আর প্রিয়ম সাদা পাঞ্জাবি। সিমি, শায়ন পার্পল কালার লেহেঙ্গা আর পাঞ্জাবি। সাইমাও সাদাফের সাথে মিলিয়ে কালো লেহেঙ্গা পড়েছে। তনিমার হাতে প্রথম মেহেন্দি লাগায় উদয়। তারপর পার্লারের মেয়েরা মেহেন্দি লাগাতে শুরু করে। সেসময় বক্সে বেজে উঠে গান,

Ye kudiyaan nashe di pudiyaan
Ye munde gali de gunde

গান শুরু হতেই সাইমা আর সিমি প্রিয়তা, রিতু, নিতু, রিনি সবাইকে নিয়ে ডান্স ফ্লোরে আসে। মেহেন্দিতে নাচ গান হবে না এটা কখনো হয়! সবগুলো ছেলে মেয়ে হৈ হুল্লোর শুরু করে নাচতে লাগে।

oohh…..ohhhh…..
Mehndi laga ke rakhna
Doli saja ke rakhna
Mehndi laga ke rakhna
Doli saja ke raakhna
Lene tujhe o gori
Aayenge tere sajna
Mehndi laga ke rakhna
Doli saja ke rakhna
Ohoooo…ohhoooo…

aaaahhhhhh….
Sehra saja ke rakhna
Chehra chupake rakhna
Sehra saja ke rakhna
Chehra chupa ke rakhna
Ye dil ki baat apne
Dil mein dabake rakhna
Sehra saja ke rakhna
Chehra chupake rakhna…
Mehndi laga ke rakhna
Doli saja ke rakhna…..

২ পক্ষের তুমুল নাচ শেষে প্রিয়ম আসে প্রিয়তার কাছে। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘কি চাই?’

‘তোর হাত।’

প্রিয়তা প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও পরমুহূর্তে হেঁসে নিজের হাত এগিয়ে দেয়। প্রিয়ম সুন্দর করে মেহেন্দি দিয়ে দেয় হাতে। মাঝখানে বড় বড় করে লিখে দেয়, ‘প্রিয়ম❤️প্রিয়তা’। প্রিয়তা হাসে সে লিখা দেখে। উদয় দুর থেকে প্রিয়ম প্রিয়তার কান্ড দেখে হাসে। প্রশান্তির হাসি। বোনটা তার সুখের নীড় খুঁজে পাইছে এটাই অনেক। উদয় এগিয়ে যায় তনিমার দিকে। তনিমা হাসফাস করছে দেখে পাশে বসে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘এমন সাপের মতো মোচড়াচ্ছিস কেন?’

তনিমা ৩২ টা দাঁত বের করে বলে, ‘সবাই কি সুন্দর আমার মেহেন্দি অনুষ্ঠানে নাচলো আর আমি! আমারও তো নাচতে মন চাচ্ছে।’

বলেই মুখটা কাঁদো কাঁদো করে। উদয় ঠোঁট কামড়ে হাসে। মেয়েটা যা পাজি তাতে ওর কাছ থেকে এসবই আশা করা যায়।

মেহেন্দি শেষ হয়েছে অনেক রাতে। সব জুনিয়র পোলাপান মিলে আড্ডায় মেতেছে ছাঁদে। মেয়েদের টপিক কার হাতের মেহেন্দি বেশি গাঢ় হয়ছে। তনিমা মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলে,

‘প্রিয়ু রে তোর ভাই আমারে একটুও ভালোবাসে না। দেখ কেমন ফ্যাকাশে রঙ হয়ছে!’

উদয় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘এখন এই মেহেন্দি প্রুফ করবে আমি তোরে ভালোবাসি কি না!’

‘আলবৎ প্রুফ করবে। দেখো তো প্রিয়ু, সিমি, রিতু আপু, নিতু আপু, রিনি আপু সবার মেহেন্দির কি সুন্দর রঙ শুধু আমারটাই এমন ফ্যাকাশে!’

পাশ থেকে সাইমা বললো, ‘এরে ছেড়ি আমারে বাদ দেস কেন? আমার মেহেন্দির রঙও কিন্তু ফ্যাকাশে।’

উদয় বলে, ‘সাইমার তো জামাই নাই। এখন বল ওরে ওর জামাই ভালোবাসে না!’

তনিমা কেশে গলা পরিষ্কার করে। বাকি সবাই শব্দ করে হেঁসে দেয়। প্রিয়তা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মাঝের ‘প্রিয়ম প্রিয়তা’ লিখাটা দেখে। লিখাটা সব থেকে বেশি গাঢ় হয়ছে। প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রিয়মও তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নেয় প্রিয়তা।

হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে মাত্র। সব গুলো মেয়ে হলুদ লেহেঙ্গা আর হলুদ শাড়ি। ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা। তনিমাকে সবাই একটু একটু করে হলুদ লাগালেও সাইমা আর প্রিয়তা সব হলুদ তনিমার গায়ে ঢালছে। তনিমা বার বার মানা করা সত্বেও কেউ মানেনি। হলুদ এক প্রকার ছোড়াছুড়ি অবস্থা করে ফেলছে। প্রিয়তা এক মুঠ হলুদ নিয়ে উদয়ের দিকে আসতেই উদয় এক লাফে প্রিয়মের পিছে। বার বার বলছে,

‘আমার লক্ষী বোন দুরে থাক। তোকে আমি চকলেট, আইসক্রিম সব দিবো। শুধু এই হলুদ গুলো আমার গায়ে ঢালিস না। আমার বউরে তো হলুদ ভুতনি করছিস আমারে করিস না বইন।’

কে শোনে কার কথা। প্রিয়তা প্রিয়মের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতেই উদয়কে হলুদ লাগালো। প্রিয়ম শুধু মুগ্ধ নয়নে দেখে গেলো প্রিয়তাকে। মেয়েটাকে চঞ্চলতাতে ভীষণ মানায়। উদয়কে হলুদ মাখানো হয়ে গেলে প্রিয়তা হাসতে হাসতে ছাঁদেই বসে পড়ে। সাইমা আর সিমি মিলে প্রিয়তাকে ভুত সাজিয়ে ফেলে। এরপর শুরু হয় তিনজনের দৌড়াদৌড়ি। একে অপরকে ভুত করে ছাড়ছে। হাপিয়ে গিয়ে এক পাশে এসে দাঁড়াতেই কেউ হাতে টান দেয়। সিড়ির এক কোণে নিয়ে দুইহাত দেয়ালে রেখে গালে গাল ছোঁয়ায়। প্রিয়তা কেঁপে উঠে। প্রিয়মকে চিনতে তার একটুও বেগ পেতে হয়নি। প্রিয়তার সব হলুদ প্রিয়ম নিজের গায়ের লাাগায়। এমন সময় শব্দ হয় সিড়িতে কেউ আসার। প্রিয়ম আর প্রিয়তা তাকাতেই দেখে শিশির দাড়িয়ে আছে। প্রিয়তা কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে যায়। শিশির নিজেও মলিন দৃষ্টিতে তাকায় প্রিয়তার দিকে। মেয়েটার মুখটা আগের থেকে উজ্জল হয়ছে। প্রিয়মকে প্রিয়তার এতো কাছে দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। শিশির ঘুরে যেতে নিলে প্রিয়ম হেঁসে বলে,

‘মি. শিশির ছাঁদে সবাই আনন্দ করছে। আপনিও যান। নিচে একা একা কি করবেন?’

শিশির ঘুরে মলিন হাসে। প্রিয়তা তখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। কিশোরী জীবনের প্রথম প্রেম এই মানুষ। এতোদিন পর হঠাৎ করেই কি কোনো দরকার ছিলো অতীতটা সামনে আসার! শিশিরের চোখ মুখের অবস্থা দেখে প্রিয়তা আরো থমকায়। চোখের কোণে জল চিকচিক করে। প্রিয়ম প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে নিজে সরে আসে প্রিয়তার কাছে থেকে। অদ্ভুত ভাবে হেঁসে সিড়ি ডিঙিয়ে নিচে নামে। প্রিয়তার যখন হুশ হয় প্রিয়ম সরে গেছে। তার চোখে পানি তখন সে আরো একবার থমকায়। এটা সে কি করে ফেললো! প্রিয়মের সামনে শিশিরের জন্য তার চোখে জল আসলো! প্রিয়তা একছুটে প্রথমে ছাঁদে এসে সাইমা আর সিমিকে জিজ্ঞেস করে,

‘প্রিয়ম ভাইকে দেখেছিস?’

‘তখন তো তোর সাথে দেখলাম। তারপর তো দেখিনি।’

প্রিয়তা আর কিছু না বলে ছুট লাগায় নিচে। দুর থেকে শিশির সবটাই দেখে। প্রিয়তা নিচে এসে প্রথমে যে রুমে প্রিয়মরা থাকে সে রুম চেইক করে। এক এক করে সব রুম চেইক করে। কোথাও নেই প্রিয়ম। ভয়ে গলা কাঠ হয়ে যায় প্রিয়তার। লোকটার যা রাগ তাতে না জানি কিছু করে বসে! ছুটে আসে প্রিয়মদের বাড়িতে। সরাসরি প্রিয়মের রুমে ঢুকে দেখে কোথাও নেই। ছুট লাগায় আবার ছাঁদে। সেখানে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ম। সিগারেট ফুঁকছে তা বোঝায় যাচ্ছে। প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে প্রিয়মের কাছে। প্রিয়ম প্রিয়তার উপস্থিতি টের পেয়েও চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ প্রিয়তা ভীত গলায় ডাকে, ‘প্রিয়ম ভাই!’

প্রিয়ম শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা কেঁপে উঠে সে চাহনীতে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘আপনি কি রেগে আছেন?’

প্রিয়ম কেমন করে যেনো হাসে। তারপর ধীর কন্ঠে বলে, ‘ভালোবাসার মানুষের চোখে অন্য কারো জন্য ভালোবাসা বা জল দেখলে কি কারো রাগ হয় প্রিয়তা?’

প্রিয়তা মাথা নামিয়ে নেয়। প্রিয়ম প্রিয়তাকে রেগে না গেলে প্রিয়তা বলে না। টুনটুনি নয়তো প্রিয় ডাকে। কিন্তু আজ প্রিয়তা ডাকটা শুনে কেমন লাগলো। প্রিয়ম হেঁসে বলে, ‘বাড়ি যা। আর নাহয় আমার রুমে যা গিয়ে ফ্রেশ হ। হলুদে পুরো শরীর মাখামাখি অবস্থা।’

প্রিয়তা মাথা নাড়ায়। কিন্তু ছাঁদ থেকে না নেমে এগিয়ে আসে প্রিয়মের কাছে। একদম কাছে এসে পা উঁচু করে প্রিয়মের পায়ের ওপর রেখে গলা জড়িয়ে ধরে। প্রিয়ম চমকায়। প্রিয়তা মুচকি হেঁসে মুখ নিয়ে যায় প্রিয়মের কানের কাছে। ফিসফিস করে বলে,

‘ফ্রেশ হয়ে আসবো যদি আমাকে নিয়ে এখন ঘুরতে যান তাহলে!’

বলেই ঠোঁট ছোঁয়ায় প্রিয়মের কপালে। মুহুর্তেই রাগ, অভিমান উধাও হয়ে যায় প্রিয়মের। প্রিয়তার কোমড় জড়িয়ে বলে, ‘অনেক দুর যাবি আমার সাথে?’

প্রিয়তা মুচকি হেঁসে মাথা নাড়ায়। তারপর প্রিয়মকে সাথে নিয়েই ছাঁদ থেকে নিচে নামে। প্রিয়তা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়। অনুষ্ঠানের বাড়ি তাদের যে কেউ খুজবে নাা ভালো করেই জানা। আর যারা খুঁজতে পারে তারা ভালো করেই জানে এ দুই জন উধাও মানে প্রেম করতে গেছে। প্রিয়তা সুন্দর করে একটা কফি কালার শাড়ি পড়ে চুল বেঁধে নেয়। তারপর ছুটে আসে প্রিয়মের কাছে। প্রিয়ম নেভি ব্লু কালার পাঞ্জাবি পড়েছে। ম্যাচিং না হলেও দুজনকেই মানিয়েছে। উদয়কে একটা টেক্সট করে প্রিয়ম আর প্রিয়তা বাইকে করে ঘুরতে বের হয়। প্রিয়তা জাপ্টে ধরে বসে প্রিয়মকে। দুজনে রাতের শহর উপভোগ করতে থাকে। রাস্তার পাশে আইসক্রিম বিক্রি করছে দেখেই প্রিয়তার লাফালাফি শুরু। প্রিয়ম বাইক থামিয়ে প্রিয়তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,

‘এখন তুই আইসক্রিম খাবি? ঠান্ডা লাগার জন্য!’

প্রিয়তা কোনো কথা শুনবে নাা। খাবে তো খাবেই। প্রিয়ম বাধ্য হয়ে আইসক্রিম বিক্রেতার কাছে নিয়ে যায়। আইসক্রিম নিয়ে খেতে থাকে প্রিয়তা। আইসক্রিম বিক্রেতা হেঁসে প্রিয়মকে বলে, ‘মামি নাকি মামা?’

প্রিয়ম হাসে। লোকটা বলে, ‘আপনাগো দুজনকে কিন্তু একসাথে দারুণ মানায়ছে।’

প্রিয়তা লজ্জা পায়। প্রিয়ম হেঁসে টাকা দিতে দিতে বলে, ‘এখনো হয়নি মামা বুঝছেন। তাই আমার হাড়মাংস এক করে দেয়। হলে নাা জানি কি করে!’

প্রিয়তা রাগী চোখে তাকায়। প্রিয়ম শব্দ করে হেঁসে প্রিয়তাকে নিয়ে বাইকের কাছে আসে। প্রিয়তা গাল ফুলিয়ে হাত বগল দাবা করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ম প্রিয়তার গালে এক আঙুল দিয়ে গুতো দিয়ে বলে, ‘এমন গাল ফুলাইছিস কেন?’

প্রিয়তা কিছু বলে না। প্রিয়ম বলে, ‘বলবি তো!’

‘আপনি কেন বললেন আমি আপনার হাড়মাংস এক করে দেয়!’

প্রিয়ম হু হা করে হেঁসে বলে, ‘এজন্য গাল ফুলায়ছিস। আমি তো মজা করছি।’

প্রিয়তা মুগ্ধ হয়ে প্রিয়মকে হাসতে দেখে। লোকটা হাসলেও কত সুন্দর লাগে! ইসসস। এরপর দুজনে আবার শুরু করে রাতের শহর ঘুরা। ঘুরতে ঘুরতে শহর ছেড়ে অনেকটা দুর চলে আসে। গ্রামের কাঁচা রাস্তায় এসেই বাইক থেমে যায়। প্রিয়ম বার বার স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করলেও ফলাফল শূণ্য। প্রিয়তা বলে, ‘কি হলো? থেমে গেলো কেন আপনার বাইক?’

‘ড্যাম! তেল শেষ মনে হয়। বল’দের মতো ঘুরতে আসছি তাইলে আসার সময় তেল তুলবো না! আমি ভাবছি ফুল আছে। কে জানে এমন হবে!’

‘এখন কি করবো?’

‘নাম।’

‘প্রিয়তা।’

‘গা’ধী তোর নাম জিগায় নাই। বাইক থেকে নামতে বলছি।’

প্রিয়তা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে, ‘ওহ আচ্ছা। কিন্তু নামবো কেন?’

‘তো এখানে বসে থাকবি নাকি? নাম।’

প্রিয়তা ঝাড়ি খেয়ে নেমে পড়ে। শিশিরকে দেখার পর থেকেই তার সময় খারাপ। মনে মনে কয়েকটা বিশ্রী গা’লি দিলো শিশিরকে। প্রিয়ম বাইক থেকে নেমে ফোন বের করে কল দিতে গিয়ে দেখে নেট নাই। রাগে দুঃখে তার নিজের চুলই ছিড়তে মন চায়। বিপদ যখন আসে সব দিকে থেকে আসে। প্রিয়তা আনমনে দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ করেই কুকুর আর শিয়ালের ডাক শুনে ভয়ে জাপটে ধরে প্রিয়মকে। প্রিয়ম হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘পাগল হলি নাকি! এমন চিপকাচ্ছিস কেন?’

‘আরেহ আপনি কি বয়’রা নাকি? শুনতে পান না কুকুর আর শিয়াল ডাকতেছে। আমার অনেক ভয় লাগে এসবে।’

প্রিয়ম কিছু বলতে যাবে তার আগেই কয়েকজন মুরুব্বির কন্ঠ আর আলো আসে প্রিয়ম প্রিয়তার দিকে। প্রিয়ম চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘আরেহ লাইট অফ করেন।’

ততক্ষণে প্রিয়তা ছেড়ে দিয়েছে প্রিয়মকে। লোকগুলো এগিয়ে এসে বলে, ‘তোমরা দুইটা পোলা মাইয়া একা একা অন্ধকারে কি করো?’

‘চাচা আমরা ঘুরতে আসছিলাম। বাইকের তেল শেষ। এখন ফিরবো কিভাবে বুঝতেছি না।’

লোকটা প্রিয়তাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে, ‘কি লাগো তোমরা?’

প্রিয়ম বুঝে উঠে না কি বলবে! একটা যে ঝামেলায় ফেঁসে গেছে তা ভালো মতো টের পাচ্ছে। নিজেকে সামলে বলে, ‘আমরা হাজবেন্ড-ওয়াইফ।’

চাচার বয়সী লোকটা চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘বিয়াইত্তা মাইয়া তা বিয়ার চিহ্ন কই? নাকফুল, চুড়ি কিছুই তো দেখি না।’

প্রিয়মের সোজাসাপটা উত্তর, ‘শহরের মেয়েরা এসব পড়ে না চাচা।’

‘এসব পড়ে না নাকি তোমরা স্বামী-বউ না? ফূর্তি করার লাইগা ঘুইরা বেড়াও?’

প্রিয়ম মুহুর্তেই রেগে যায়। তবুও নিজেকে সামলে বলে, ‘আমরা ভদ্র বাড়ির ছেলে মেয়ে। তাছাড়া আমরা বলতেছি তো আমরা বিবাহিত। তাহলে আপনাদের এতো সমস্যা কেন হচ্ছে?’

‘সমস্যা হইবো না! তোমরা দুইডা পোলা মাইয়া আমাদের গ্রামে আইসা আ’কাম কু’কাম করলে তো আমাগো এলাকার দুর্নাম হইবো। এই দুইটারে নিয়া চল। বিয়া পড়ায় দিমু।’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here