আপনিময় বিরহ পর্ব ৮

0
448

#আপনিময়_বিরহ (০৮)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________

প্রিয়তার সব গুলা এক্সাম ভালো ভাবে শেষ হয়ছে। প্রথম দিন বিয়ের কথাটা নিয়ে অনেক কথা হলেও এখন সবই ঠান্ডা৷ ঝড়ের আগের পূর্বাভাস যাকে বলে। প্রিয়তা ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেছে। তার মধ্যে আর চঞ্চলতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। এ নিয়ে তনিমা জিজ্ঞেস করাতে উদাস কন্ঠে একটাই কথা বলেছিলো,

‘যে চঞ্চলতা আমার ভালোবাসাটাই কেড়ে নিলো সে চঞ্চলতা না-ই বা থাকলো।’

তনিমা এ কথার পৃষ্ঠে কি বলবে খুঁজে পায় না। এ কয়দিন থাকাকালীন প্রিয়তা আর শিশিরকে দেখেনি। দেখতেও চাইনি। যে মানুষ তাকে সুখের সংসার পাওয়ার জন্য ছেড়ে গেছে তাকে দেখাটাও কষ্টের। প্রিয়তা পুরো বাড়ি ভুতের মতো কয়েকবার চক্কর দিলো। তারপর অনেক ভেবে অনিমার রুমে গেলো৷ এই রুমে তাদের অনেক স্মৃতি। চোখের কোণে জলকণা চিকচিক করে উঠে। ঠিক সে সময়েই তার মাথায় কেউ গাট্টা মারে। প্রিয়তা পেছনে ফিরতেই দেখে প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়তা চোখ মুখ কুঁচকে তার দিকে তাকাতেই বললো,

‘কি সমস্যা আপনার? সব সময় আমাকে জ্বালান কেন? আজব!’

প্রিয়ম পাত্তাই দিলো না প্রিয়তার কথা। হাতে থাকা আপেল কামড়াতে কামড়াতে বললো, ‘আমার একটাই টুনটুনি তাকে জ্বালাবো না তো কাকে জ্বালাবো? তোর সমস্যা হলে তুই আউট হ।’

এই ঘাড়ত্যাড়া লোককে কিছু বলে যে লাভ নেই তা ভালোই জানা হয়ে গেছে প্রিয়তার। তাই কথা না বাড়িয়ে নিজের মতো রুমে বার বার ঘুরতে লাগলো। প্রিয়ম ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘ভুতের মতো ঘুরছিস কেন?’

প্রিয়তা কিছু না বলে চুপ করে থাকে৷ পড়ার টেবিলের কাছে এসে ধুলো পড়া একটা ডায়েরী দেখতে পেয়ে আগ্রহে সেটা তুলে নিলো। প্রিয়ম নিজেও এগিয়ে আসে। প্রিয়তা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই দেখে সেখানে বড় বড় অক্ষরে অনু, প্রিয়ু, তনু লিখা। প্রিয়তা কয়েকবার সে লিখায় হাত বুলায়। চোখ ভরে আসে। প্রিয়ম প্রিয়তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়। তার মা আর মামনির পর এই একটা নারীর চোখের পানি বড্ড পীড়া দেয় তাকে। চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস নেয়৷ প্রিয়তা ততক্ষণে ডায়েরীটা পড়া শুরু করেছে। প্রথমেই তাদের দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা৷ তারপরের একটা পৃষ্ঠাতে সুন্দর করে লিখা শিশিরকে নিয়ে তার অনুভূতি। প্রিয়তা আটকে যায় সেখানেই। অনু আপু সত্যি শিশির ভাইকে ভালোবাসতো! পরের পৃষ্ঠা গুলো পড়ার মতো সাহস সে পায় না। ডায়েরীটা ফেলেই ছুটে আসে নিজের রুমে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব প্রিয়ম। কি এমন হলো যার কারণে প্রিয়তা ছুটে চলে গেলো! ডায়েরী হাতে নিয়ে নিজে ঘাটতে থাকে কয়েক পৃষ্ঠা। বুঝতে পারে প্রিয়তার ছুটে যাওয়ার কারণ। নিজেও ডায়েরী ফেলে দ্রুত প্রিয়তার রুমের দিকে আসে। পুরো রুম ফাঁকা দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। পুরো রুম ভালো করে দেখে প্রিয়ম ছাঁদের দিকে হাঁটা লাগাায়। ছাঁদে এসে দেখে এক কোণে বসে আছে প্রিয়তা। প্রিয়ম ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মাথায় হাত রাখে। প্রিয়তা চোখ তুলে তাকায়। প্রিয়মকে দেখেই তার কান্না পায়। ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকায়। প্রিয়মও প্রিয়তার পাশে বসে পড়ে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

‘এতটুকু বিষয়ে ভেঙে পড়লে চলবে টুনটুনি?’

প্রিয়তা জবাব দেয় না। প্রিয়ম আবার বলে, ‘একজন মানুষকে দুইটা ব্যক্তি ভালোবাসতেই পারে এটা স্বাভাবিক তবে দুবোন যদি একজনকে ভালোবাসে সেটা অনেক কষ্টের। তবুও কিন্তু অনিমা তোকে সাহায্য করেছিলো শিশিরের সাথে সম্পর্কের জন্য। পরে কি হয়ে কি হয়েছে তা আমার থেকে তুই ভালো জানিস। তুই অন্যের জন্য নিজের সত্তাকে বিলীন করে দিচ্ছিস এটা কি বুঝিস? তোর মতো মেয়েকে গম্ভীরতায় মানায় না চঞ্চলতাতেই মানায়। আর যারা মনে করে চঞ্চল স্বভাবের মেয়েরা সংসার করতে পারে না নিজের মধ্যে চঞ্চলতা রেখেই তাদের দেখিয়ে দে চঞ্চল মেয়েদেরও সংসার হয়। আর একটা কথা মনে রাখবি প্রকৃতি ছাড় দেয় ছেড়ে দেয় না।’

প্রিয়তা তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বলে, ‘কিন্তু দিনশেষে বেইমানরাই ভালো থাকে।’

প্রিয়মের বুকটা ছলাৎ করে উঠে। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না। প্রিয়তা একরাশ বিষাাদ কন্ঠে নামিয়ে ধীরে বলে, ‘সৌন্দর্যই নাকি সব। কিছু ছেলেরা নাকি সৌন্দর্যের টানেই আটকে থাকে অথচ আমার দেখা সব থেকে সুন্দরী মেয়েটাও একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করেছে। আমার দেখা এমন অনেক সুন্দরী আপু আছে যারা দিনশেষে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছে। হাজার আকুতি মিনুতিও পারেনি প্রিয় মানুষটাকে ফিরাতে। আচ্ছা প্রিয়ম ভাই সবাই বলে আমি দেখতে ততোটাও খারাপ নয় যে কোনো ছেলে নাকি আমার সৌন্দর্যে ফিদা হবে তাহলে কেন শিশির ভাই থাকলো না আমার হয়ে! নাকি আমার সৌন্দর্যও তার কাছে ফিকে পড়ে গেছে ঠিক আমার ভালোবাসার মতো!’

প্রিয়ম যেন মুহুর্তেই নিজের বুকের ব্যাথাটা অনুভব করলো। নিজের ভালোবাসার মানুষের পাশে বসে তার ভালোবাসার মানুষের কথা শুনছে সে। ইসস এই মুহুর্তটা কি কেউ বুঝবে! প্রিয়ম আর বসে না। উঠে চলে যায়। প্রিয়তা শূণ্যদৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়।

প্রিয়তারা আজ ফিরে যাবে আবার। প্রিয়তার মনে একটাই প্রার্থনা এ শহরে আর যেনো পা রাখতে না হয়। কিছু স্বার্থপর, বেইমানদের মুখ না দেখায় ভালো। প্রিয়তার মাঝে আজ আর একটুও গম্ভীরতা নেই। উল্টো আগের সেই চটপটে প্রিয়তা যেনো ফিরে এসেছে। সে কেনো কিছু স্বার্থপরের জন্য নিজের সত্তা হারাবে সে যেমন সে তেমনই থাকবে। এভাবেই দেখিয়ে দেবে তার সংসার হয় কি না। সব গোছগাছ শেষ করে প্রিয়তা তনিমার রুমে যায়। তানিমাকে এবার আর তার বাবা মা যেতে দেবে না। পলক সাহেব বলেছেন ৩ মাস পর যখন ভার্সিটির ভর্তি চলবে তখন তনিমাকে নিয়ে যাবে। ওখানকার ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেবে৷ তবুও ভীষণ মন খারাপ তনিমার। প্রিয়তা হাই তুলতে তুলতে তনিমার পাশে এসে বসে বললো,

‘কিরে খাটা’শনি তোর মুখ এমন খাটা’শের মতো করে রাখছিস কেন? জামাই ম’রছে নাকি?’

তনিমা হা করে প্রিয়তার দিকে তাকায়। গালে কপালে হাত দিয়ে বলে, ‘কি রে কি হয়ছে ভাই তোর? মানে তুই ঠিক আছিস? জ্বর টর তো নাই তাইলে কি মাথার তার ছিড়ে গেলো!’

প্রিয়তা তনিমার মাথায় গাট্টা মেরে বলে, ‘আমার ভাইকে ছেড়ে থাকতে হবে ভেবে তোর মাথার তার ছিড়ে গেছে।’

তনিমা মাথায় হাত দিয়ে কনফিউজড গলায় বলে, ‘হ্যাঁ হতেও পারে। আরে না না ধুর। তুই তো এভাবে কথা বলিস না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই হু হা করিস। আজ হঠাৎ আগের মতো বিহেভ করছিস ব্যাপার কি?’

প্রিয়তা হাসে। তারপর বলে, ‘তুই সেসব ছাড়। মন খারাপ কেন করছিস? ৩ মাসই তো। আর ভাইয়ার থেকে তোর একটু দুরে থাকা উচিত। তোর প্রতি ওর অনুভূতিগুলো ওরও বোঝা দরকার।’

তনিমা মন খারাপ করে বলে, ‘বলছিস ও বুঝবে? কিন্তু তোর ভাই যা ঢেড়স৷ তাতে মন হয় না সে বুঝবে।’

প্রিয়তা ঠাস করে তনিমার পিঠে থা’প্পড় দিয়ে বের হতে হতে বলে, ‘কম বুঝ। বুঝবে বুঝবে ঠিক বুঝবে। তুই চিল মুডে থাক।’

তনিমা পেছন থেকে প্রিয়তাকে বকা দিয়ে উদ্ধার করে ফেলেছে। প্রিয়তা হাসতে হাসতে বাড়ি থেকে বের হয়। শিশিরদের বাড়িতে বেল বাজাতেই শিলা বেগম দরজা খুলে দেয়। প্রিয়তা হাসি মুখে সালাম দেয়। শিলা বেগম অবাক হয়। প্রিয়তা হাত নাড়িয়ে বলে,

‘আন্টি ভেতরে আসতে বলবেন না? এটা কিন্তু আমার আপুর শ্বশুরবাড়ি।’

শিলা বেগম যেনো আকাশ থেকে পড়লো। এ মেয়ে এতো সহজে মেনে নিলো! অনিমা কে এসেছে তা দেখতে রুম থেকে বের হয়ে আসে। প্রিয়তাকে এ বাড়িতে দেখে ভীষণ অবাক হয়৷ প্রিয়তা হাাসি মুখেই বলে,

‘আরে মিসেস শিশির আহমেদ যে! আসুন আসুন। আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’

অনিমা অবাক হয়ে এগিয়ে আসে। আজ বুঝি সবার অবাক হওয়ার পালা। প্রিয়তা আরাম করে বসে বলে, ‘আজকে আমি পুরোপুরি আপনাদের শান্তির সংসার দিয়ে এ শহর ছেড়ে বিদায় নিচ্ছি। আপনার স্বামী সংসারের মাঝে আমি আর কাটা নাই। আপনার ওই সাধু জামাইকে বলে দিয়েন তার মতো মা ভক্ত স্বার্থপর ছেলের আমার জিবনে কোনো জায়গা নাই। আর আন্টি আপনি যেনো কি বলছেন? আমার মতো উড়নচণ্ডী মেয়ের সংসার হবে না? উমমম কিছু বলবো না। সময় হোক নিজেই দেখতে পাবেন। আসি ভালো থাকেবন। আল্লাহ হাফেজ।’

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় প্রিয়তা। শিলা বেগম রাগে ফোসফাস করতে থাকে। অনিমা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠে। শিলা বেগম রেগে তাকালেন তার দিকে৷ অনিমা হাই তুলতে তুলতে বলে, ‘বাহ দারুণ উত্তর দিয়ে গেছে বোনটা।’

শিলা বেগম রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।

___________________

প্রিয়তারা এসেছে সন্ধ্যার দিকে। এসেই প্রিয়তা ক্লান্তিতে শুয়ে পড়েছে। সে সময় হুড়মুড় করে রুমে ঢোকে প্রিয়ম। প্রিয়মকে দেখে প্রিয়তা উঠে দাঁড়ায়। সে মুহুর্তেই প্রিয়ম জাপ্টে ধরে প্রিয়তাকে। হতভম্ব হয়ে যায় প্রিয়তা। প্রিয়ম নিভু নিভু কন্ঠে বলে,

‘আই লাভ ইউ প্রিয়তা।’

চলবে…

(আসসালামু আলাইকুম। দুঃখিত এতো ছোট করে দেওয়ার জন্য। প্রচন্ড জ্বর আর মাথা ব্যাথায় লিখতে পাারতেছি না তবুও এটুকু লিখেছি। কালকে বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here