তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ২৭

0
665

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি?
#পর্বঃ27
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

‘কিহ, এভাবে কিরণমালা সিরিয়ালের সেনাপতি বিটকেলের মত বত্রিশ দাঁত বের করে দাঁত কেলাচ্ছেন কেন!’
রেগে কথাটি বলল নিশি।
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,

নিশি কে হেল্প করতে এসে নিহান দেখে নিশি শাড়ি পরার বদলে শাড়িটাকে কোন মত গায়ে জড়িয়ে বেডে বসে দুই হাত গেলে দিয়ে দুঃখী দুঃখী ভাব করে বলছে__

‘ এই শাড়ি টাড়ি আবিষ্কার টা করেছে কে?শালার মনে হয় ঐদিন বউয়ের সাথে ঝগড়া ছিল শাড়ি পড়তে গিয়ে যেন বউয়ের কষ্ট হয় তার জন্য এই শাড়ি আবিষ্কার করছে!!’

নিশির শাড়ি পরার স্টাইল, ওর ভাব ভঙ্গি আর ওর আজগুবি কথা শুনে নিহান হো হো করে এসে ওঠে। নিহানের হাসির শব্দ পেয়ে নিশি দরজার দিকে চেয়ে দেখে যে নিহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে।নিহানকে এইভাবে হাসতে দেখে নিশি বলল__

‘ কি, এভাবে কিরণমালা সিরিয়ালের সেনাপতি বিটকেলের মত দাঁত কেলাচ্ছেন কেন?’

নিশির কথা শুনে নিহানের হাসি থামার বদলে আরো বেড়ে গেলে নিহান হাসতে হাসতে বলল__

‘ এই তুমি কি শাড়ি পরেছো নাকি অন্য কিছু তোমাকে দেখেই আমার হাসি পেয়ে গেল! তার উপরে এই সব কি বলছো?মাথা ঠিক আছে তো!!’

নিহানের কথা শুনে নিশি রেগে বলল__

‘ প্রথমত আপনি জানেন আমি এইসব শাড়ি টারি পড়তে পারি না তাও কেন শাড়ি দিতে গেলেন?’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘আরে গায়ে হলুদের তো বেশিরভাগ মেয়েরাই শাড়ি পড়ে তাই তো তোমাকে শাড়ি দিলাম।’

‘ অনেক ভালো কাজ করেছেন এখন আমাকে কে শাড়ি পরিয়ে দেবে?’

নিশির কথা শুনে নিহান যেই কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে তখনই নিশি কিছুটা অবাক আর ভান করে বলল __

‘এই আপনি কি আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবেন নাকি ও মাইয়া আল্লাহ! এ আপনি কি বলছেন আমার তো এখনই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে ইস সিনেমার হিরোদের মত আপনি আমাকে!!’

এতটুকু বলেই নিশি তার মুখে হাত দিয়ে মুখটাকে ঢেকে লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলল__

‘ হাই আমার তো লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল___

‘ হয়েছে তোমার লজ্জা পাওয়া! সবসময় পুরো কথা না শুনেই শুধু পটর পটর করো।আমি কি তোমাকে একবারও বলেছি আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দেবো?’

নিহনের কথা শুনে নিশি বলল__

‘ আরে আপনিই তো বললেন আমি আসতেজি তাইতো আমি ভাবলাম আপনি আমাকে হিরোদের মতো করে শাড়ি পরিয়ে দিবেন!’

নিশির কথা শুনে নিহান ভাব নিয়ে বলল__

‘ হিরো তো আমি অবশ্যই তবে নিজের স্টাইলে! তোমাকে আমি না পার্লারের মেয়েরা শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিয়ে যাবে ওকে। আর একটা কথা আমাকে কি দেখে মনে হয় আমি এর আগেও দুই তিনটা বিয়ে করেছি?’

বিনিময় না বোধক মাথা নারায় নিশি। নিশি কে না বোধক মাথা নাড়াতে দেখে নিহান বলল__

‘ তাহলে তুমিই বলো আমি কোথা থেকে শাড়ি পড়ানোর ট্রেনিং পাবো!’

নিহানের কথা শুনে নিশি মুখ ভেংচি কেটে বলল__

‘ হ্যাঁ আপনি আর কিইবা পারেন শুধু তো ঝগড়া করতে আর রাগ দেখাতে।কই নিজের বউকে একটু আদর যত্ন করে হিরো হিরো স্টাইলে শাড়ি পরিয়ে দিবেন তা না!আনরোমান্টিক এর বস্তা একটা!!’

মুখ ফসকে হঠাৎ করে এই কথা বলে ফেলায় নিশি নিজের জিভে কামড় দিয়ে নিহান কে উদ্দেশ্য করে বললো ___

‘সরি,,,সরি স্যার,,, মুখ দিয়ে হঠাৎ করে এই কথাটা বের হয়ে আর বলবো না ‘

নিশির কথা শুনে নিহান বলল___

‘ কি বলবে না?আর আমি কি?? আমি আনরোমান্টিক এর বস্তা!!’

কথাগুলো বলতে বলতে নিশির দিকে এগিয়ে এগোচ্ছে নিহান। হঠাৎ করে নিহানকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে নিশি ভয়ে ভয়ে শুকনো দু-তিন টা গিলে বলল ___

‘আপনি,,, আপনি আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন?’

‘ আমি রোমান্টিক কিনা তার প্রমাণ দিতে!’

‘ দেখুন আমার কিন্তু এখন রেডি হতে হবে আর আমি কি এমন বলেছি?যা সত্যি তাইতো বলেছি!’

‘ও তাই নাকি তাহলে পেছনে যাচ্ছ কেন?এসো সামনে এসো!’

এই বলে যেই নিহান নিশি কে ধরতে যাবে তখনই হঠাৎ করে দরজায় কেউ নক করে।দরজায় নক পড়ায় নিশি নিহান দরজা দিকে তাকিয়ে দেখে নিশিকে রেডি করতে পার্লারের মেয়ে চলে এসেছে।পার্লারের মেয়েটাকে দেখে নিহান নিশির দিকে তাকিয়ে বলল__

‘ তোমাকে তো আমি পড়ে দেখে নিব’

এই বলে নিহান পার্লারের মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল__

‘ যত তাড়াতাড়ি পারেন ওকে রেডি করুন আর হ্যাঁ সাজগোজ যেন একদম লাইট হয়।ওকে?’

নিহানের কথা শুনে পার্লারের মেয়েটা বলল__

‘ ওকে স্যার!’

পার্লারের মেয়েটার কথা শুনে নিহান নিশির রুম ত্যাগ করল।নিহান রুম থেকে যেতেই পার্লারে মেয়েটা নিশিকে সাজাতে শুরু করল। নিহানের দেওয়া শাড়ি, চোখে টান টান করে কাজল, কানে নিহানের দেওয়া দুল, মাথায় গাজরা ফুল আর নিহানের কথামতো হালকা সাজে সেজেছে নিশি।

সাজ কমপ্লিট হতেই নিশি, শাড়ির কুচি ধরে এক দৌড় বাগানে গায়ে হলুদের প্যান্ডেলের দিকে।গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে নিশি নিচে এসে দেখে মেঘলা কে অনেকেই হলুদ ছুঁয়ে দিচ্ছে। হঠাৎই কোথা থেকে নিহান নিশির সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিশির হাত ধরে বলল__

‘ চলো আমার সাথে ‘

‘আরে কোথায় যাব আমরা? আমি আপুকে হলুদ দিব না?ছাড়ুন আমাকে!’

‘না তুমি এখন আমার সাথে যাবে!’

এই বলে নিহান নিশি কে নিয়ে চলে গেল ওই জায়গাটায় যেখানে ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল। মানে নিশিদের বাড়ির পেছনের নীরব জায়গায়।
____________________
ওইদিকে নিশির কাজিনরা মেঘলা কে হলুদ দিয়ে তো ভূত করেছেই। সাথে নিজেরাও একে অপরকে হলুদ দিয়ে ভূত বানাচ্ছে একটু পরেই শুরু হবে হলুদ অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ কাপল ডান্স এই নিয়ে সবাই বেশ এক্সাইটেড।আর এইদিকে নিশি এখনো মেঘলাকে হলুদ ছোঁয়াতে পারল না।উল্টো ওকে অনুষ্ঠানের ভরা মজলিস এর মাঝ থেকে এখানে নিরব জায়গায় টেনে আনলো নিহান।

নিহান নিশি কে বাড়ির পেছনের বাগানে নিয়ে আসতেই নিশি নিজের হাত নিহানের হাত থেকে টেনে ছাড়িয়ে বললো __

‘কি সমস্যা আপনি আমাকে এইভাবে এখানে কেন নিয়ে এলেন?’

নিশির কথা শুনে নিহান নিজের পকেটে থেকে একটা কৌটা হাতে নিয়ে নিশির দিকে আগাতে আগাতে বলল__

‘তেমন কিছুই না তোমাকে বোঝাতে যে আমি কতটা আন রোমান্টিক!’

নিহানের কথা শুনে নিশি শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলে পিছনে পিছাতে আমতা আমতা করে বলল__

‘আর আমি জানি তো আপনি অনেক রোমান্টিক!অনেক ভালো!’

নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বলল__

‘ হ্যাঁ তাহলে তো তুমি জানোই আমি রোমান্টিক! আর তুমি আমার একমাত্র বউ তার উপর আজ এত সুন্দর করে সেজে আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছো তো রোমান্স একটু করাই যায় তাই না!’

এই বলেই নিহান নিশিকে খপ করে ধরে ফেলে। নিশিকে ধরে নিহান এক হাতে নিশির কোমর জরিয়ে ধরে।এই প্রথম নিহানের এমন স্পর্শে কিছুটা কেঁপে ওঠে নিশি। সারা শরীর যেন তার হিম শীতল হয়ে যাচ্ছে! নিশি নিজেকে কোন মত সামলে কাপা কাপা গলায় নিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল__

‘ দেখুন স্যার আমাকে ছেড়ে দিন। আমার আর রোমান্টিক হাসবেন্ড এর প্রয়োজন নেই!প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আমার এখনো মেঘলা আপুকে হলুদ ছোঁয়ানো হয়নি।’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘এখনো তো ঠিক করে ধরলামই না সোনা আর তুমি এখনই ছাড়ো ছাড়ো করছো। আর এখন তুমি আমার কাছে থাকবে তোমাকে সবার আগে আজ আমি হলুদ দেব।আমি জানি ওখানে গেলেই কেউ না কেউ তোমাকে আগে হলুদ দিয়ে দিবে তাই আমি এখানে তোমাকে সবার আগে হলুদ দেব।’

এই বলে নিহান তার হাতে থাকা কৌট থেকে একটু হলুদ নিয়ে নিশির দুই গালে লাগিয়ে দিল।নিহান নিশিকে হলুদ মাখাতেই নিহান বলল __

‘এই নাও হলুদের কৌটোটা এবার তুমি আমাকে হলুদ লাগিয়ে দাও!’

‘ না আমি পারবো না,আপনাকে হলুদ লাগিয়ে দিতে!’

‘ ওকে তোমাকে লাগিয়ে দিতে হবে না। আমি নিজেই লাগিয়ে নিচ্ছি!’

এই বলেই নিহান নিশির গালের সাথে নিজের গাল ঘষে নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে নিয়ে যেই অন‍্য গালে হলুদ লাগাতে যাবে তার আগেই নিশি নিহানকে জোরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে শাড়ির কুচি ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে পেছন ফিরে বলল__

‘ আপনার লজ্জা লাগে না আমার মত একটা নিরীহ বাচ্চা মেয়েকে এভাবে টর্চার করেন! মানছি একটা ভুল করে বলে ফেলেছি তাই বলে এমন করবেন! তাই এটাই হলো আপনার শাস্তি নিচে পড়ে থাকেন!’

এই বলেই নিশি দৌড় আর এইদিকে নিহান বেচারা বোকার মত মাটিতে বসে বসে নিশির যাওয়া দিকে চেয়ে আছে। শাড়ি পরে ঠিকঠাকমতো হাঁটতেও পারে না নিশি সেই জায়গায় আজ শাড়ি পড়ে দৌড় দিয়েছে তাই নিশির শাড়ির অবস্থা যাচ্ছে তাই হয়ে গেছে।

হঠাৎই নিশি কে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে নিশির সব কাজিন ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ এই বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে বেশি এক্সাইডেট ছিল নিশি আর সেখানে সবার লাস্টে অনুষ্ঠানে নিশি এল।

নিশিকে দেখে মেঘলা অভিমান ভরা কন্ঠে বলল__

‘কিরে নিশি যেখানে তোর আমাকে সবার আগে হলুদ লাগানোর কথা। সেখানে তুই মাত্র এলি!’

মেঘলার কথা শুনে নিশি বলল __

‘আরে আপু আর বলো না কাজ করতে করতে কখন যে সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরই পেলাম না। তারপরে আজকে তো শাড়ি পড়েছি তুমি তো জানোই আমি শাড়ি পড়তে পারি না তারপর নিহান স্যার একজন পার্লারে মেয়েকে ডেকে এনে শাড়ি পরিয়ে দিলেন।’

নিশির কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো __

‘ও,,হো,, ভালোই তো’

সকলের কথা শুনে নিশি কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল__

‘ দেখি তোরা সর তো আমি আগে আপুকে হলুদ মাখিয়ে আসি।’

এই বলে নিশি স্টেজে গিয়ে মেঘলা কে হলুদ মাখিয়ে এক মুঠো হলুদ নিয়ে নিলো এসব কাজিনদের গায়ে লাগাবে বলে। শুরু হয়ে গেল হৈ হুল্লোড় , নাচ, গান আড্ডা আর হলুদ খেলা নিয়েই কেটে গেল মেঘলার হলুদ সন্ধ্যা।

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here