তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ২৬

0
672

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ26
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

‘শুধু কবি না তোমার প্রেমে পড়ে আমি দিওয়ানা হয়ে গেছি!’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__

‘ হ্যাঁ হয়েছে নিচে চলুন এবার, না হলে আমাকে রেখেই সবাই মেহেদী পড়া শুরু করে দেবে।’

‘ হ্যাঁ চলো!’

নিহানের কথা শুনে নিশি যেই ড্রয়িংরুমে যেতে যাবে তখনই নিহান নিশির হাত ধরে টান দিয়ে নিশি কে নিজের কাছে এনে নিশির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল। ঘটনাটা এত দ্রুত হল যে নিশি কি থেকে কি হল কিছুই বুঝতে পারল না। শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে। নিশি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিহান মুচকি হেসে বলল__

‘ কিহ,এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আরেকটা চাই নাকি?’

নিহানের কথা শুনে নিশি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে বলল __

‘আপনি কিন্তু ইদানিং খুব অসভ্য হয়ে গেছেন!যা ইচ্ছে বলছেন যা ইচ্ছে করছেন!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘ ও তাই বুঝি আমি অসভ্য হয়ে গেছি?ঠিক আছে তাহলে অসভ্য যখন বলেইছ আর একটু অসভ‍্যতামি করি তাহলে?কি বলো!’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__

‘ সেই সুযোগ আপনি পেলে তো কিছু করবেন!’

এই বলেই নিশি এক দৌড়ে একেবারে নিচে ড্রয়িংরুমে। ড্রয়িংরুমে এসে নিশি দেখে যে মেঘলা কে নিচে এনে বসানো হয়েছে। মেঘলাকে দেখে নিশি গিয়ে ওর পাশে বসে বলল ___

‘আরে আপু তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে!’

‘ হ্যাঁ হয়েছে আর পাম দিতে হবে না! তোকে ও কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে!’

মেঘলার কথা শুনে নিশি বলল__

‘ যাহ, বাবা সুন্দর লাগছে দেখে সুন্দর বললাম এখানে পাম কোথায় মারলাম!আর,,,’

নিশি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওখানে মিসেস আয়েশা আর মিসেস মিলি (নিশির জেঠি) এসে হাজির ওনারা এসে নিশি আর মেঘলা কে উদ্দেশ্য করে বললেন ___

‘একি তোরা এখনো মেহেদি পড়া শুরু করিস নি কেন? রাত কতটা হয়েছে খবর আছে?কাল আবার গায়ে হলুদ আছে এখন যদি তাড়াতাড়ি না ঘুমাস তাহলে কাল আবার বেলা বারোটার আগ পর্যন্ত তোরা উঠতে পারবি না।এই আপনারা মেয়েদের কে মেহেদী পড়ানো শুরু করেন (পার্লারের মেয়েদেরকে উদ্দেশ্য করে)’

মিসেস মিলির কথা শুনে সব মেয়েরা বসে পড়ল মেহেদি দেওয়ার জন্য। মেয়েরা বসতেই পার্লারের মেয়েরা ওদেরকে মেহেদি পড়াতে শুরু করলো। সব মেয়েদের সাথে যখন নিশিও বসলো মেহেদী পড়তে তখন এক পার্লারের মেয়ে এসে বসলো ওর হাতে মেহেদী পড়াতে।পার্লারের মেয়েটা যখন নিশির হাতে মেহেদি দিতে যাবে তখনই কোথা থেকে যেন নিহান এসে বলল___

‘ ওয়েট নিশির হাতে আজ মেহেদী সবার আগে আমি দিব।’

নিহানের কথা শুনে নিশি অবাক হয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে বলল__

‘ আপনি মেহেদী পড়াতে জানেন?’

নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বলল__

‘মেহেদী পড়াতে না জানলেও তোমার হাতে নিজের নামটা তো লিখে দিতেই পারব তাই না?’

এই বলে নিহান একটা মেহেদী নিয়ে নিশির হাতে নিজের নাম লিখে দিয়ে পার্লারের মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলল__

‘ নিন এইবার আপনি সুন্দর করে ওকে মেহেদি পরিয়ে দিন।’

এই বলে নিহান ওখান থেকে চলে গেল নিলয়দের কাছে।নিহান যেতেই পার্লারে মেয়েটা নিশি কে বলল__

‘ আপু উনি,,,’

‘উনি আমার হাজব্যান্ড!’

‘ওহ,, মনে হয় খুব ভালোবাসে আপনাকে তাই না?’

বিনিময়ে শুধু মুচকি হাসলো নিশি।
_________________

‘নিশি এই নিশি এবার তো ওঠ।বেলা প্রায় দশটা হতে চলল আর তোর এখনো ঘুম থেকে ওঠার নাম নেই।বলি আজ যে তোর বোনের গায়ে হলুদ তুই কি তা ভুলে গেছিস?কত কাজ পড়ে আছে বাড়ি ভর্তি মেহমান আমি আর তোর বড়মা আর কত দিক সামলাবো বলতো।তুই তো পারিস আমাদেরকে একটু সাহায্য করতে। কিরে ওঠ নিশি এই নিশি!’

মিসেস আয়েশার ডাকে নিশি ঘুম থেকে উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে বলল ___

‘কি মা ডাকছো কেন?দেখছো না ঘুমাচ্ছিলাম জানো কাল রাতে কত রাত করে ঘুমিয়ে ছিলাম!’

নিশির কথা শুনে মিসেস আয়েশা বললেন__

‘ হ্যাঁ মা তুমি একাই তো কাল লেট করে ঘুমিয়েছো! আমরা তো সন্ধ্যা নামতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তাই না?’

‘ না আমি কখন বললাম আমি একা লেট করে ঘুমিয়েছি!আমি তো বলেছি কাল কত রাত করে ঘুমিয়েছি তাই উঠতে লেট হলো এই আর কি বলেছি। এখন বল কেন আমার এত আরামের ঘুমের বারোটা বাজিয়েছ!’

নিশির কথা শুনে মিসেস আয়েশা বললেন__

‘ কিহ, দশটা বাজে ডেকেছি তাও বলছিস তোর আরামের ঘুমের বারোটা বাজিয়েছি! যদি আমি যখন ভোরে উঠেছি তখন ডাক দিতাম তাহলে তো তোকে খুজেই পাওয়া যেত না!’

‘ আহ, ছাড়ো না মা!এবার বলো কেন ডেকেছ?’

‘এটাও তোকে বলে দিতে হবে?অনুষ্ঠান বাড়ি কত কাজ জানিস? ঘর ভর্তি মেহমান তাদেরকেও তো ঠিকঠাকভাবে সকালের খাবার দিতে হবে তাই না? তার উপরে,,,মেলা কাজ এখন বললে তুই কিছুই বুঝতে পারবি না। এখন উঠ ফ্রেশ হয়ে এসে আমাদের সাথে আমাদেরকে হেল্প করবি চল।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি!’

‘ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি আসিস!’

এই বলে যেই মিসেস আয়েশি চলে যেতে নেবে তখনই নিশি মিসেস আয়েশা কে পেছন থেকে ডেকে বলল__

‘ মা শুনো!’

‘হ্যাঁ বল মা!’

‘ আফরিন কোথায়? রুমে তো নেই কোথাও।’

‘ তোর ননদ কি তোর মত অলস নাকি?মেয়েটা সেই সকালে উঠে নিচে গিয়ে আমাদেরকে জোর করে রান্নাঘরের কাজে যতটুকু পারে হেল্প করছে আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলি’

‘হ্যাঁ হয়েছে তুমি যাও আমি আসছি!’

নিশির কথা শুনে মিসেস আয়েশা চলে গেলেন।আর নিশি চলে গেল ওয়াশরুমে।
________________

‘আল্লাহ গো! কাজ করতে করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেল এই বিয়ে বাড়ির কাজ তো শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না! কখন এই কাজ শেষ হবে আর কখন আমি রেডি হতে যাবো? আজকেও দেখা যাবে সবার শেষে আমি রেডি হবো ধুর ভালো লাগছে না!’

হাতে ফুলের ডালা নিয়ে আপন মনে বকবক করতে করতে নিশি যাচ্ছিল তার রুমে। হঠাৎই হাতে টান পড়ায় নিশি হাতে থাকা ডালা থেকে ফুল গুলো ছিটকে পড়ে যায় চারপাশে। ফুলগুলো নিচে পড়ে যাওয়ায় নিশি কে হাত ধরে টান দিল তা না দেখেই মেঝেতে বসে ফুল তুলতে তুলতে সামনের জনকে বলল___

‘ এই কে;রে? এভাবে হাত ধরে টান দিলি কেন? মাথায় কি আল্লাহ জ্ঞানের ছিটা ফোটাও দেয়নি?দেখিস না আমার হাতে ফুল গুলো ছিল?দূর ফুলগুলো যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে তাই ঘরে নিয়ে যাচ্ছিলাম আর এখানে এনে তো সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেল। সব ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এখন ছেলের বাড়ির লোকজন আসার আগে যদি ফুলের পাপড়ি গুলো এভাবে মুঠো মুঠো করে ওঠানোর জন্য নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তোর খবর আছে বলে দিলাম!!’

এই বলে নিশি সামনে চেয়ে দেখে নিহান এক হাতে শপিং ব‍্যাগ নিয়ে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। নিহানকে দেখে নিশি বলল___

‘ ও আপনি আমি মনে করেছি আমার কোন কাজিন হবে হয়তো! তো এতক্ষণ কথা বলছিলেন না কেন শুধু শুধু এত গুলো কথা শোনালাম!’

এই কথা বলে নিশি আবারও বলল___

‘ এই না না ঠিকই আছে আপনার জন্যই তো ফুল গুলো পড়েছিল তাই যা বলেছি একদম ঠিকই বলেছি।’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘ হয়েছে বলা শেষ হয়েছে,তোমার এখন আর এই ফুল উঠাতে হবে না চলো আমার সাথে।’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল __

‘এ ফুল যদি না ওঠাই তাহলে ছেলের বাড়ির লোকজন আসলো মাথায় কি ছিটিয়ে দেবো? আমার মাথা!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘ তুমি যদি চাও এর চেয়ে দ্বিগুণ ফুলের ব্যবস্থা করে দেব।এখন এসব ছাড়ো উঠো।’

এই বলে নিহান গিয়ে নিশিকে ধরে মেঝে থেকে তুলে দাড় করায়। মেঝের থেকে উঠে নিশি বলল__

‘ আপনি যতই ফুল এনে দেন না কেন আমার তো কাজ বেড়েই গেল ফুল এনে দিলে তো হবে না ওইগুলোকে তো আবার পাপড়িতেও পরিণত করতে হবে। আবার এই জায়গাটাও তো আমাকে এখন পরিষ্কার করতে হবে।জানেন সেই সকাল থেকে কাজ করছি ধুর এখন আবার কত কাজ বেড়ে গেল!’

নিশির কথা শুনে নিহান নিশির হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলল__

‘ তোমাকে এতো কাজ করতে হবে না,সব আমি লোক দিয়ে করিয়ে নেব এখন এখানে চুপ করে দাঁড়াও তো তোমাকে একটু মন ভরে দেখি।সেই ব্রেকফাস্ট টাইমে তোমাকে দেখেছিলাম এরপর তো তোমাকে আমি খুঁজেও পেলাম না।’

‘ পাবেন কি করে? এই একজন বলে এখন এটা কর! তারপর আরেকজন এসে বলে ওই কর।কাজ করতে করতে আমি আজ শেষ।’

‘ ইশ কি হাল করেছে আমার বউটার, তা তুমি রেডি হবে না?’

‘হ্যাঁ হবো তো এইতো এই ফুলগুলো রেখে ফ্রেশ হয়ে তারপরে রেডি হবো। আমার আজকের ড্রেসটা দিন।’

এই বলে নিশি হাত বাড়াতেই নিহান তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা নিশিকে দিয়ে বলল__

‘এই নাও, আর শোন এখন আর তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না।যতটুকু করছো তাই অনেক এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও ওকে।’

নিহানের কথা শুনে নিশি এক হাতে ফুলের ডালা আর এক হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রেডি হতে আর নিশি কে যেতে দেখে নিহানও চলে যায় রেডি হতে।
_____________
ঘরে এসে নিশি ফুলের ডালাটা বেড সাইট টেবিলে উপরে রেখে শপিং ব্যাগ খুলে দেখলো ভিতরে সুন্দর হলুদের মধ্যে লাল কাজ করা একটা সুন্দর জামদানি শাড়ি সাথে টানা দেওয়া একজোড়া ঝুমকো কানের দুল আর আজও একটা ফুলের গাজড়া দেওয়া। শাড়ি দেখে নিশি বললো __

‘শাড়িটা তো খুব সুন্দর কিন্তু এই শাড়ি পরে তো আমি হাটতেই পারি না। অনুষ্ঠান অ্যাটেন্ড করব কিভাবে আর সবচেয়ে বড় কথা হল এখন আমাকে শাড়িটা পরিয়ে দিবে কে মা বড়মা সবাই তো এখন বিয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। এখন গেলে তো উল্টো আরো কথা শুনিয়ে দেবে এখন আমি শাড়িটা কার কাছ থেকে পড়বো।’

নিশি যখন এসব ভাবছিল হঠাৎই তখন তার ফোনটা বেজে উঠলো ফোন বাজতেই নিশি ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনে নিহানের নম্বর ভাসছে। ফোনে নিহানের নম্বর দেখে নিশি ফোন রিসিভ করতেই ফোনের অপর পাশ থেকে নিহান বলল __

‘আজকের শাড়িটা কেমন হয়েছে?’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল___

‘ শাড়িটা তো এমনি খুব সুন্দর কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমি আজ এটা পড়তে পারবো না!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল___

‘ কেন আজকে তুমি শাড়ি পরতে পারবে না কেন?’

‘ কারণ আমি শাড়ি পড়তে পারি না আমাকে মা এবং বড় মা শাড়ি পরিয়া দেয় কিন্তু আজ তো ওনারা বিয়ের কাজে ব্যস্ত এখন গেল উল্টো আরো কথা শুনিয়ে দেবে। তাই আমি এখন শাড়ি পড়তে পারব না!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল __

‘আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি?

এই বলে নিহান ফোন কেটে দিল আর নিশি ভাবছে নিহান করতে চাইছেটা কি?ও কিভাবে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে?!’

#চলবে,,,

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here