তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ১৮

0
623

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ18
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রাগে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিশি ফ্লোরে পড়ে থাকা মিলি আর নিহানের দিকে!

কিছুক্ষণ আগে,,,,,,,

ক্লাস শেষ করে কেবিনে যাওয়ার সময় হঠাৎই নিহানের একটা জরুরী কল আসায় নিশিদের ক্লাশ এর একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল নিহান। আর নিহানকে দেখে মিলি রিনি(মিলির ফ্রেন্ড) কে বলে__

‘ দোস্ত স্যারটাকে না আমার বেশ ভালো লেগেছে! কিভাবে পটানো যায় বলতো?’

মিলির কথা শুনে রিনি কিছু একটা ভেবে বলে__

‘ এক কাজ কর তুই গিয়ে স্যারের পিছনে দাঁড়িয়ে থাক স্যার কথা বলে যখন এই পাশ ফিরবে তখন তুই কায়দা করে স্যারের সাথে ধাক্কা খেয়ে সারকে ধরে ফেলবি! দেখিস না ফিল্মে কেমন ধাক্কা লাগতেই প্রেম হয়ে যায়!’

রিনির কথা শুনে মিলি বলল__

‘ যেমন তুই,তেমন তোর আইডিয়া বাস্তবে কি আর এমন হয়!’

‘আরে ট্রাই করতে সমস্যা কোথায়,এমনিতে না হলে পরে না হয় অন্য কোন আইডিয়া ভাবা যাবে এটলিস্ট দুজন কাছাকাছি তো আসতে পারবি! এখন আপাতত এই বুদ্ধিটুকুই কাজে লাগা পরে না হয় অন্য কিছু ভাবা যাবে!’

‘বলছিস,এমন টা করতে?’

‘হ্যা বলছি যা!’

রিনির কথা শুনে মিলিও নিহানের পেছন গিয়ে দাঁড়ায়। নিহানের কথা শেষ হতেই যখন নিহান পেছন ফিরে তখনই মিলে ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়ে নিহানের পাশ দিয়ে পড়ে যেতে নেয়।কিন্তু নিহান রিনির ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে মিলিকে না ধরে পাস কেটে চলে যেতে চায়। মিলি যখন দেখল নিহান ওকে না ধরে উল্টো পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে তখন মিলি পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য নিহানকে ধরে ফেলে।কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো কই হঠাৎ করে টান পড়ায় নিহান তার ব্যালেন্স হারিয়ে মিলির উপর পড়ে যায়।আর তখনই নিশিরা ক্যান্টিনে যাওয়ার জন্য ক্লাস রুম থেকে বের হয় আর বের হয়েই এমন দৃশ্য দেখে।যা দেখে নিশির রাগ সপ্ত আসমান ছুই ছুই!!

বর্তমানে,,,,

‘আর ইউ মেড? নিজে পড়ে যাচ্ছিলে ভালো কথা আমাকে ও ফেললে কেন?’

নিহানকে ফেলে দেওয়ায় নিহান রেগে ফ্লোর থেকে উঠতে উঠতে এই কথা বলে মিলিকে। নিহানের কথা শুনে মিলি বলে___

‘ আই অ্যাম সরি স্যার,আসলে আমি ইচ্ছে করে করিনি! কিভাবে যে,,,,’

‘ কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে তুই ইচ্ছে করেই এমনটা করেছিস!’

মিলি আর কিছু বলার আগেই নিশি পেছন থেকে হঠাৎ এ কথা বলে ওঠে।পরিচিত কোনো কণ্ঠস্বর পেয়ে মিলি পিছন ফিরে দেখে নিশি বুকে দুই হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।নিশি কে দেখে মিলি বলে ___

‘তোর কেন এমনটা মনে হল যে আমি ইচ্ছে করে স‍্যার এর উপর পড়ে গেছি। ‘

‘ কারণ এটা নতুন কি?কোন হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই তো তোর তাকে ভালো লেগে যায়।আর তুই ও তাকে পটানোর জন্য পেছনে পড়ে থাকিস!’

নিশির কথা শুনে মিলি রেগে বলল___

‘ দেখ নিশি তোর এই ফাও কথা বন্ধ কর,আর আমি যদি ইচ্ছে করেই করে থাকি তাতে তোর কি?’

‘ কি! আমার কি মানে? আমারই তো সব যেখানে আমি আমার সামান্য একটা লিপস্টিকও কাউকে ধরতে দেই না! সেখানে তুই আমার জামাইকে নিয়ে টানাটানি করবি আর আমি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো?’

নিহান এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশির কাণ্ডকারখানা দেখছিল।কিন্তু এবারের কথা শুনে নিহানের কাশি উঠে যায়,কাশতে কাশতে নিহান,,,
‘ এক্সকিউজ মি ‘বলে ওখান থেকে চলে যায়। নিহান যেতেই মিলি বলে ___

‘মানে?আমি কখন তোর বরকে নিয়ে টানাটানি করলাম?’

মিলির কথা শুনে নিশি তেতে উঠে বলল___

‘ কেন তুই কি ছোট বাচ্চা নাকি যে কিছুই বুঝিস না! নিহান স্যারের পুরো নাম কি?’

নিশির কথা শুনে মিলি বলল__

‘নিহান চৌধুরী,কেন তুই জানিস না?’

‘ হ্যাঁ জানি,তোকে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে তুই এত কথা বলিস কেন?’

‘ স্যার আমাকে ক্লাসে কি নামে যেন সম্বোধন করেছিল মনে আছে তোর?’

নিশির কথা শুনে মিলি বলে __

‘হ্যাঁ মনে আছে, মিসেস চৌধুরী!’

‘রাইট, ভালোই তো মনে আছে! তো এখন কি বুঝায় দিতে হবে তুই কার জামাই নিয়ে টানাটানি করছিস?’

নিশির কথা শুনে মিলি বললো__

‘ মানে!’

‘মানে হলো আমি হোলাম নিহন চৌধুরীর ওয়াইফ মিসেস নিশি চৌধুরী! এবার ক্লিয়ার? এই প্রথম আর এই শেষ বারের মতো তোকে বলে দিলাম উনার দিকে আর ভুলেও তাকাবি না! আজকে নিহানের বাচ্চার খবর আছে আমি আসছি’

এ বলে নিশি রেগে মেগে ওখান চলে যায় নিহানের কেবিনের দিকে। নিশি যেতেই মিলি বললো__

‘ কি হলো জাস্ট পড়ে গিয়েছিলাম এতেই এত কথা শুনিয়ে গেল!’

মিলের কথা শুনে নদী বলল__

‘ তো কি করবে তুই ওর হাসবেন্ডকে নিয়ে টানাটানি করবি এতটুকু তো শুনতেই হবে।’

এই বলে নদী হেসে দেয় আর নদীর সাথে তাল মিলিয়ে রুহি ও হেসে দেয়।রুহি হাসতে হাসতে নদীকে উদ্দেশ্য করে বলে__

‘ তাহলে বুঝি বান্ধবী আমাদের প্রেমে পড়ল ‘

এই বলে আবার এসে উঠলো রুহি।
_____________

‘আসতে পারি?’

কেবিনের বসে ছিল নিহান হঠাৎই কারো কথার শব্দ পেয়ে নিহান কেবিনের দরজার দিকে চেয়ে দেখে নিশি এসেছে।নিশি কে দেখে নিহান বলল ___

‘হ্যাঁ এসো’

‘আপনি তখন মিলির সাথে কি করছিলেন!’

‘আগে তুমি বলো তুমি ওই মেয়েকে কি বললে?’

‘ কি বলেছি?’

‘কি যেন বলছিলে লিপস্টিক নিয়ে?’

‘ কি আর বলেছি, বলেছি যেখানে আমি আমার সামান্য লিপস্টিকও কাউকে ধরতে দেই না সেখানে তুই আমার জা,,,,,’

এতোটুকু বলেই নিশি থেমে যায়। নিশি থেমে যেতেই নিহান বলল __

‘কি হলো বলো!’

নিহানের কথা শুনে নিশি মনে মনে বলল__

‘ ইস,কেন যে তখন রাগের মাথায় ওকে এসব বলতে গিয়েছিলাম এখন তো এই বজ্জাতটা আমাকে জেরা করবে!’

‘ কি হলো বলো কি বলেছিলে?’

‘আমার তো কিছু মনে নেই!’

এই বলে যেই নিশি পালিয়ে যেতে যাবে তখনই পেছন থেকে নিহান বলে__

‘ ভালোবাসা আমায়?’

নিহানের কথা শুনে নিশি থেমে গিয়ে পিছন ফিরে উত্তর না দিয়ে নিহান কে পাল্টা প্রশ্ন করে বলল__

‘ আপনার মনে আমার জন্য জায়গা কতটুকু?আদেও কি আপনার মনে আমার জন্য কিছু আছে?’

হঠাৎই নিশির এমন প্রশ্নে নিহান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না নিজের ভালোবাসাটাকে কি প্রকাশ করা উচিত নাকি আরো কিছুদিন নিশিকে জালানো উচিত এসব ভাবছিল নিহান।এই দিকে নিহানকে চুপ থাকতে দেখে নিশি মনে মনে বলে__

‘ওনি এখনো চুপ তার মানে উনার মানে আমার জন্য কিছুই নেই!’

এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিশি নিহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কেবিন থেকে বাহিরে চলে যায়।নিশি যেতেই নিহান মুচকি হেসে বলল __

‘জবাবটা না হয় তোমায় রাতে একটু স্পেশাল করেই দিব!’
_______________

‘ কিরে নিশি কেবিনের ভিতরে গেলি বাঘিনী হয়ে বের হলি এমন উদাস হয়ে, কি হয়েছে?’

নিহানের কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে নিশির জন্য অপেক্ষা করছিল নদী আর রুহি হঠাৎই নিশিকে মন মরা হয়ে কেবিন থেকে বের হতে দেখে এই কথা বলে নদী।নদীর কথা শুনে নিশি বলল___

‘ না তেমন কিছুই না, চল ক্লাসে যাই এখন আর ভালো লাগছে না বাহিরে থাকতে।’

এই বলে নিশি আবার ক্লাসে চলে যায় নিশির মন খারাপ বলে নদী আর রুহিও তেমন জোর করেনি কি হয়েছে ওরা ও চলে গেল ক্লাসে।
________

‘নিশি তুমি আজ একা একা বাড়ি চলে যাও আমার একটু কাজ আছে তাই আমার আসতে একটু লেট হবে।’

একে একে সব ক্লাস শেষ করে নিহানের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিহানের জন্য অপেক্ষা করছিল নিশি। কিন্তু নিহান এসে একা একা বাড়ি যাওয়ার কথা বলায় নিশি মনে মনে বলে___

‘আমাকে উনি এতটাই অপছন্দ করেন যে আমাকে সাথে করে নিতে চাইছেন না!’

‘কি হলো নিশি কি ভাবছো তুমি? একা যেতে পারবে তো?’

নিহানের কথায় নিশিতার ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলে__

‘ হ্যাঁ,,পারবো’

‘ তাহলে চলে যাও,নাও একটা ক্যাব বুক করে চলে যাও।’

এই বলে নিহান নিশির হাতে কিছু টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। নিশিও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলল বাড়ির দিকে।
__________

‘কি ব্যাপার নিশি তুই একি এলি যে, নিহান কোথায়?’

বাড়িতে নিশি কে একা ফিরতে দেখে বলে উঠলেন মিসেস চৌধুরী।উনার কথা শুনে নিশি বলল___

‘ আসলে মামনি উনি বললেন কি যেন জরুরী কাজ আছে তাই আজ যেন আমি একাই এসে পড়ি!’

‘ ওহ,আচ্ছা যা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার বাড়ছি।’

‘ না মামনি,আমি একটু আগে ক্যান্টিন থেকে খাবার খেয়ে এসেছি। তাই এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না, একটানা সব ক্লাস করে আমি বেশ ক্লান্ত।ফ্রেশ হয়ে এখন একটু রেস্ট এর প্রয়োজন।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে যা, উপরে গিয়ে রেস্ট নে!’

মিসেস চৌধুরীর কথা মত নিশিও উপরে চলে যায় রুমে এসে কাদ থেকে ব্যাগটা টেবিলে রেখে কাবাড থেকে একটা ড্রেস নিয়ে নিশি ওয়াশরুমে চলে যায়। টিপটিপ ঝর্ণার পানি নিশিকে ভিজিয়ে একাকার করে দিচ্ছে আর নিশি সে তো অন্যমনস্ক হয়ে সেই কখন থেকে ভিজেই যাচ্ছে। হঠাৎই নিশি দাঁড়ানো থেকে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে মনে মনে বলে ___

‘আমার এতটা কষ্ট হচ্ছে কেন? কেন আমি মেনে নিতে পারছি না যে নিহান স্যার আমাকে ভালোবাসেন না! কেন আমার এত কান্না পাচ্ছে? আমি তো নিহান স্যারকে সহ্যও করতে পারতাম না!তাহলে কেন ওনার পাশে অন্য মেয়েদেরকে আমি সহ্য করতে পারছি না? তাহলে কি আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেললাম! কিন্তু কখন কিভাবে ওনার প্রতি আমার এত দুর্বলতা সৃষ্টি হলো? তাহলে কি একেই বলে বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। যে বন্ধনের ভিত্তিতে একে অপরের হাত ধরে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়!তাহলে নিহান স্যার কেন আমাকে ভালবাসতে পারছেন না? তাহলে কি উনি এই বিয়েটাই মেনে নিতে পারেননি? উফ আমি আর ভাবতে পারছি না!এবার আমার ওঠা উচিত বেশি ভিজলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারি!’

এইভেবে নিশির ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে যায় ওয়াশরুম থেকে।
_______

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত দশটা বেজে ২১ মিনিট কিন্তু নিহানের এখনো বাড়ি ফেরার নাম নেই। নিশি তো একটু পরপরই ঘড়ির দিকে আর বাড়ির সদর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। নিশিকে এত ছটফট করতে দেখে আফরিন বলে ___

‘আরে ভাবি ভাইয়া ঠিক এসে যাবে তুমি এত ছটফট করছ কেন?একটু শান্ত হয়ে বসতো!’

আফরিনের কথা শুনে নিশি বলল ___

‘এই তুমি এগুলো কি বলছো? আমি কেন ওনার জন্য ছটফট করতে যাব!আমি তো চুপ করেই বসে আছি!’

নিশির কথা শুনে আফরিন বলে ___

‘হুম,তা তো দেখতেই পাচ্ছি একটু পরপর ঘড়ি আর সদর দরজার দিকে তাকাচ্ছ।আমি কি বাচ্চা নাকি যে কিছুই বুঝতে পারি না।’

নিশি আর আফরিন কথা বলছিল তখন হঠাৎই কলিংবেল বেজে ওঠে। কলিংবেলের শব্দ পেতেই আফরিন বলে__

‘ যাও দেখো ভাইয়া মনে হয় এসে গেছে!’

#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here