তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ৭

0
847

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ7
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

রাত এগারোটা বেজে একচল্লিশ মিনিট আমাদের গাড়ি এখন শহরের ব্যস্ত নগরের পথ পেরিয়ে,এগিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার মেঠো পথের দিকে। কোলাহল মুক্ত আকাশে থালার মত চাঁদ,রাস্তার দুই দিকে সারি সারি গাছ, চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে রাস্তার পাশে থাকা লেকের পানি আর মন মাতানো ফুরফুরে বাতাস তো আছেই! সব মিলিয়ে মুগ্ধকর একটি পরিবেশ উপভোগ করছি আমরা সবাই।আমরা সবাই বললে ভুল হবে কারণ নদী আর রুহি প্রায় দশটার দিকে গাড়িতেই বকবক করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। বিকেল পাঁচটায় গাড়ি ছাড়ায় প্রায় দুই ঘন্টারও অধিক সময় আমরা জ‍্যামে আটকে পড়েছিলাম।তাই হয়তো অনেক ক্লান্ত থাকায় গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। নিলয় ভাইয়াও এখন রেস্ট করছে এতক্ষণ গাড়ি নিলয় ভাইয়াই চালাচ্ছিল অনেকটা রাস্তা একটানা ড্রাইভ করায় কিছুক্ষণ আগে নিহান স‍্যার জোর করে নিলয় ভাইয়া কে বসিয়ে নিজে গাড়ির ড্রাইভ করছেন। তাই এখন গাড়িতে শুধু আমরা দুজনই সজাগ আছি।উনি চুপচাপ লোকেশন অনুযায়ী ড্রাইভ করছেন আর আমি এই অপূর্ব পরিবেশ উপভোগ করছি।

_______

রাত প্রায় একটায় আমাদের গাড়ি খান বাড়িতে ঢুকে। বাড়িতে গাড়ি ঢোকার আওয়াজ পেয়ে দাদু আর দাদি ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। হয়তো আমাদের জন্যই জেগে বসে ছিল।আমি দাদু আর দাদী কে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে ছুটে গিয়ে দাদিকে জড়িয়ে বলি __

‘কেমন আছো দাদি? কেমন আছো দাদু? আর তোমার না শরীর খারাপ তাহলে তুমি কেন এত রাত জেগে আছো।তার উপর আবার রুম থেকে বেরিয়ে এতদূর কেন এসেছ?’

দাদু মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল__

‘ পাকা বুড়ি একটা!তুই যদি একসঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করিস তাহলে আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দেই বলতো?’

‘সবগুলোরই উত্তর দাও।’

‘ এই যে তোরা এত লেট করে এলি! এতে আমাদের বুঝি চিন্তা হয় না? আর দুশ্চিন্তা নিয়ে কি আর ঘুম হয়! এই যে তোরা এসে গেছিস এখন আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো।’

‘আর বলো না দাদু কি জ্যামে যে পড়েছিলাম না!কি বলবো তোমায়!’

____

‘সব আদর বুঝি একা ছোট নাতনিই পাবে দাদু?’

হঠাৎই আপু দাদিকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে দাদুর দিকে মুখ গোমড়া করে এই কথা বলে।তাই দাদু ও মজা করে বলল___

‘ আরে বড় বউ যে! এই বুড়ো কে তো তুমি ছেড়ে দুদিন পর অন্যের ঘরে চলেই যাবে।তাই তোমার আদর এখন কম।’

‘ দাদু ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিলাম!দাদি দেখো দাদু কি বলছে!’

‘আরে বড় বউ! তুমি রাগ করছো কেন? আমি তো মজা করছিলাম!’

এই বলে দাদু হেসে দিল। আমাদের কথার মাঝে আমাদের সামনে নিলয় ভাইয়া,নীরব ভাইয়া, অপু, নদী, রুহী,নিহান স্যার, শুভ ভাইয়ারা সবাই এসে হাজির হয়। তারপর একে একে সবাই দাদু আর দাদীর সাথে কুশল বিনিময় করে।নদী আর রুহি তো দাদুর সাথে মিশে গেছে।নিহান স‍্যারও কম না উনিও বেশ মিশে গেছে দাদু আর দাদীর সাথে। বাবাহ! সবার সাথে কি ভালো ব্যবহার আর আমাকে দেখলেই বকা।

সবাই এতটা জার্নি করে বেশ ক্লান্ত।ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ কম তো না( ১৫০.২ কিমি) রাস্তা জার্নি তার ওপর দুই আড়াই ঘন্টা জ্যামে বসে থাকা তো আছেই। সব মিলিয়ে আমরা সবাই বেশ ক্লান্ত তাই সবাই দাদু দাদুর সাথে কুসুল বিনিময় করে চললাম বাড়ির ভিতরে।

____

নিশিদের শহরের বাড়িতে যেমন আধুনিকতার ছোঁয়া রইছে।তেমনি গ্রামের খান বাড়িতে আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে।দোতলা বিশিষ্ট বিশাল বাড়ি, প্রথমেই বাড়ির সামনে রয়েছে বিশাল বাগান আর এক পাশে রয়েছে বাধাই করা ছোট্ট পুকুর। বাড়িতে ঢুকতেই রয়েছে বিশাল কাঠের সদর দরজা খুবই চমৎকার কারু কাজ করা যা চোখে পড়ার মতো। বাড়িটা প্রায় প্রাচীন যুগের স্টাইলেই তৈরি। নদী রুহি নিহান ওরা বাড়িতে ঢুকে চোখ বুলিয়ে দিয়ে দেখছে।নদী বাড়িটা দেখে নিশি কে বললো__

‘ ওরে দোস্ত! তোদের বাড়িটা তো অনেক সুন্দর!’

‘হুম,পরে ঘুরে ঘুরে সব দেখাবো।ছাদ দেখলে তো অবাক হয়ে যাবি দাদি নিজে শখ করে ছাদটাকে সাজিয়েছে। এখন আপাতত রেস্ট নি পরে সব দেখাবো।’

‘ আচ্ছা!’

______

‘ এই,তোরা হাতমুখ ধুয়ে আয় আমি টেবিলের খাবার দিচ্ছি।’

‘দাদি পরে খাবো এখন খাবার খাওয়ার শক্তিটাও আমার নেই।’

‘ আমার কথা শুনে নদী রুহি মেঘলা আপু ও বলল___

‘হুম দাদি’

‘ এক দিব কানের নিচে এক চড়! যাও, সবাই ফ্রেশ হয়ে এসো রহিম( আমাদের এই বাড়ির সার্ভেন্ট অবশ্য আমরা উনাকে কাজের লোক না এই পরিবারেরই এক অংশ মনে করি) যাও নতুন মেহমানদের জন্য যে রুমগুলো রাখা হয়েছে ওদের ওখানে নিয়ে যাও। আর তোরা যে যে যার যার রুমে গিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আয়।’

এই বাড়িতে আমাদের সব ভাই বোদেরই আলাদা আলাদা রুম রয়েছে। দাদীর কথা মতো যে যে যার যার রুমে চলে গেল। আমার সাথে নদী আর রুহি থাকবে আর শুভ ভাইয়া আর নিহান জন্য ও আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।তারাও চলে গেলেন তাদের জন্য নির্ধারিত রুমে।

‘এই নিশি, এই নদী, ওঠ দাদি কি বলল শুনলি না? দশ মিনিটের মধ্যে যেতে বলেছে, ওঠ।’

আমি আর নদীর রুমে এসেই ব্যাগগুলো কোন মত এলোমেলো করে রেখে ধপাস করে বেডে শুয়ে পড়ি। তাই রুহি আমাদের ওঠানোর জন্য চেঁচাচ্ছে।

‘আরে বোইন!তুই তোর এই মুখটা বন্ধ করবি? একটু লেট হলে কিছুই হবে না।’

আমার কথায় সায় দিয়ে নদী বলল__

‘ ঠিক বলেছিস, আগে তুই চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর আমাদেরকে বলিস।’

নদীর কথামতো রোহি আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে আমাদেরকে ডাকে তারপর একে একে আমরাও ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যাই।নিচে গিয়ে দেখি সবাই অলরেডি চলে এসেছ শুধু নিহান স‍্যারই বাকি। সবাইকে টেবিলে বসে থাকতে দেখে আমরাও গিয়ে বসে পড়লাম।আমি টেবিলে বসে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই দেখে নিহান স‍্যার হাত দিয়ে চুল ঝারতে ঝারতে নিচে নামছে। হয়তো শাওয়ার নিয়েছে, উনিও এসে টেবিলে বসে পড়লো। তারপর আমরা সবাই কোন মতো ডিনার করেই যে যে যার যার রুমে চলে গেলাম। এখন সবারই লম্বা একটা ঘুমের প্রয়োজন।অনেকটা জার্নি তে সবাই বেশ ক্লান্ত।

______

সকলে,,,

‘এই নিশি, ওঠ সকাল এগারো টা সরি এখন তো আর সকাল নেই বেলা এগারো টা বেজে গেছে আর কত ঘুমাবি তুই। আমরা সবাই জেগে গেছি শুধুমাত্র তুই একা পড়ে পড়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিস।’

‘হ‍্যাঁ,উঠ তুই উঠলে আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যেতে পারবো।’

‘কি কখন থেকে তোরা কানের কাছে বকবক করে আমার সাধের ঘুমের বাজচ্ছিস। আর এই ভর দুপুরে আমরা কোথায় যাব।দেখ পাহাড়ি এলাকায় এমনিতেই রোদ বেশি থাকে। এই রোদের মধ্যে গেলে তো সারা শরীর পুড়েই যাবে। সর এখন আমাকে ঘুমাতে দে।’

‘ কি তুই এখনো ঘুমাবি?এইতো বললি দুপুর হয়ে গেছে এখনো ঘুমাবি।এখনো নাস্তা ক করলিনা, উঠ বলছি।’

‘ ধুর ভালো লাগেনা’

এই বলে আরমোড়া ভেঙ্গে বেড থেকে নেমে চললাম আমি ওয়াশরুমের দিকে ফ্রেশ হতে।

#চলবে,

( আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন সবাই?রিচেক করা হয়নি,ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here