#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ6
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
প্রচন্ড উল্লাসিত মনে তৈরি হচ্ছি! আমি কারণ রুহি আর নদী রাতেই কল করে বলেছে আমাদের সাথে ওরাও যাবে।ওরা বাড়ি থেকে পারমিশন পেয়ে গেছে।আমার সব প্যাকিং রাতেই করা শেষ।এখন শুধু আপুর সাথে গিয়ে কলেজ থেকে ছুটি আনা বাকি।আমি রেডি হয়ে যেই নিচে যেতে নিব তখনই আমার রুমে ঢুকলো নিলয় ভাইয়া।
‘নিশি তুই রেডি তো?’
‘হুম!ভাইয়া ‘
‘তাহলে চল’
‘ চল!মানে?আমার সাথে তো মেঘলা আপুর যাবার কথা ছিল।’
‘হ্যাঁ,কিন্তু এখন আমি যাব তোর সাথে।আমি গিয়ে তোর আর নিহানের ছুটির ব্যাপারে কথা বলব প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে।’
ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে বললাম __
‘কেন!ওনার কেন ছুটি লাগবে?’
‘ কারণ আমাদের সাথে গ্রামে নিহান ও যাবে।’
‘ কিহ!! তোমার ওই পাজি বন্ধুও আমাদের সাথে যাবে? ভাইয়া তাহলে তোমরাই যাও আমি যাব না।’
এই বলে আমি মুখ গোমরা করে কাদের ব্যাগটা বেডে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, বেডের এক কোণে বসে পড়লাম। ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল__
‘ কেন,বোন সমস্যা কি?যদি নিহান আমাদের সাথে যায়।’
‘ আমার তো কোনো সমস্যা নেই!কারণ তোমার ওই বন্ধুই তো আস্ত একটা সমস্যা! দেখা হলেই আমাকে রাগ দেখায়,বকাঝকা করে তাই উনি গেলে আমি যাব না।দেখা গেল আমি যাব মজা করতে উল্টো ওনার বকা খেয়েই আমাকে সারাদিন কাটাতে হবে।আর,,’
নিলয় ভাইয়া আমার কথার মাঝে আমাকে থামিয়ে বলল__
‘ আসলে নিশি ও এমনিই একটু রাগী টাইপের,কিন্তু যদি একবার তোর বন্ধু হয় তখন বুঝবি ওর মতো ভালো মনের মানুষ আর হয় না। আর আমি তো বলছি এবার আর কোন সমস্যা হবে না। আর তাছাড়া তুই দাদু আর দাদির কথাও ভাব আমরা সবাই যাব অথচ তুই যাবি না এতে ওনারা কষ্ট পাবে না বল।
‘আচ্ছা ঠিক আছে,আমি যাব।আমি কিন্তু দাদু আর দাদীর কথা ভেবেই যাচ্ছি।তবে তুমি কিন্তু তোমার ওই ফ্রেন্ড কে বলে দিবা আমাকে যেন কোন কথা না শোনায়।’
‘শোনাবে না,এখন চল।’
‘হুম চলো ‘
এ বলে আমি আর ভাইয়া চললাম কলেজে।
_____
আমি আর ভাইয়া কলেজে পৌঁছে দেখি নদী আর রুহি কলেজ গেটের সামনে আছে।হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।আমাদের দেখতে পেয়ে নদী আর রুহি এগিয়ে এলো।
‘তোরা এসে গেছিস?’
‘হ্যাঁ,তোরা কি আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলি?’
‘হুম,ভাবলাম সবাই এক সাথেই যাব।’
‘ভালো করেছিস ‘
‘তাহলে যাওয়া যাক? ‘
ভাইয়া প্রশ্নে আমরা তিন জন এক সাথে বললাম __
‘হ্যাঁ,চলো’
তারপর আমরা সবাই মিলে চললাম প্রিন্সিপাল স্যারের ক্যাবিনের দিকে। আমরা প্রিন্সিপাল স্যারের কেবিনে গিয়ে দেখলাম নিহান স্যার আগে থেকেই প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে বসে উনার সাথে কি বিষয় নিয়ে যেন কথা বলছে।ভাইয়া আমাদের উদ্দেশ্য করে বলল___
‘ তোদের অ্যাপ্লিকেশনগুলো আমার কাছে দিয়ে তোরা কেবিনের বাহিরে গিয়ে দাঁড়া। আমি আর নিহান একটু পরে আসছি।’
আমরাও বাধ্য মেয়ের মত অ্যাপ্লিকেশন গুলো নিলয় ভাইয়ার কাছে দিয়ে বাহিরে চলে আসলাম।বাহিরে আসতেই নদী প্রচন্ড উৎসাহ নিয়ে আমাকে বলল__
‘ এই নিশি! নিহান স্যারকে দেখলাম ভিতর প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে! উনি কি আমাদের ছুটির অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্যারকে বলে মঞ্জুর করাবেন নাকি?দেখলি তো আমি বলেছিলাম না উনি অনেক ভা,,,,’
নদীর কথায় আমি বেশ বিরক্ত হয়ে ওর কথার মাঝে বলে উঠলাম ___
‘এই তুই থামবি!উনি আমাদের না নিজের ছুটি মঞ্জুর করাতে গেছেন।’
আমার কথা শুনে ওরা দুজনে বেশ অবাক হয়ে বলল__
‘ কিহ!’
‘ তোরা যেমন আমার বন্ধু হিসেবে আমাদের সাথে যাচ্ছিস।তেমনি উনিও নিলয় ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে আমাদের সাথে গ্রামে যাচ্ছে।’
আমার কথা শুনে নদী বলল __
‘তাই নাকি?তাহলে তো ভালই হবে!’
“কচু হবে!আর তুই যা ভেবে নিহান স্যার!নিহান স্যার! করছিস তা কখনই হবে না।ওনার মত বদরাগী মানুষ কখনোই তোকে ভালবাসবে না।তাই এসব চিন্তা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলে দে।’
‘ধুর!দিলি তো মনটা ভেঙে,দেখিস আমার জন্য কোন না কোন রাজকুমার আসবে!’
নদীর কথায় আমি আর রুহি দুজনই হো হো করে হেসে দেই।
‘এই তোরা কি নিয়ে এমন হাসাহাসি করছি আমাদের কেও বল আমার ও একটু হাসি।’
হঠাৎ ভাইয়ার কন্ঠ শুনে আমরা পেছন ফিরে দেখি নিহান স্যার আর নিলয় ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
‘ আসলে ভাইয়া,আ,,আ,, আ ‘
আমি যেই ভাইয়াকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাব তখনই নদী আমার সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে আমার পেটে চিমটি কাটে।আর তার জন্যই আমি মৃদু চিৎকার করে উঠি। আর আমার চিৎকার শুনে নিলয় ভাইয়া ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠল__
‘কি হলো নিশি! চিৎকার করলি কেন?’
‘ কিছু না ভাইয়া,পিঁপড়ে! হয়তো পিঁপড়ে কামড়েছে!’
‘ওহ তাই বল!যেভাবে চিৎকার করে ছিলি,এখন চল তোদের ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে।’
এই কথা শুনেই আমরা তিনজনে বলে উঠলাম__
‘ ইয়াহু ‘
নিশিদের কান্ড কারখানায় নিলয় বেশ বিরক্ত তাই ওর মুখ থেকে আপনা আপনিই বেরিয়ে আসলো__
‘ ডিসকাস্টিং!’
তারপর নিহান নিলয় কে উদ্দেশ্য করে বলল__
‘নিলয় তাহলে আমি গেলাম।’
‘বিকেলে কিন্তু ঠিক সময়ে চলে আসিস ‘
‘আচ্ছা ঠিক আছে’
বলে নিহান আর এক মুহূর্ত না অপেক্ষা করে ওখান থেকে চলে যায়।নিহান যেতেই নিশিরা ও যে যার বাসায় চলে যায়।
_______
বিকেল পাঁচটা,,,
এরই মধ্যে খান বাড়িতে নদী,রুহি আর নিহান সবাই চলে এসেছে।এখন শুধু অপেক্ষা শুভর (মেঘলার হবু হাসবেন্ড )আসার আর নিশির নিচে নামার।
‘ এই নিশি! হলো তোর? আর কতক্ষণ?’
‘ আরে আর পাঁচ মিনিট!’
‘ এই তুই সেই কখন থেকে পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট করেই যাচ্ছিস।এখনো হলো না!আর আমরা সেই কখন থেকে এসে বসে আছি। আর তুই পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট করতে করতে চারটা থেকে পাঁচটা বাজিয়ে দিলি। এখনো তোর হলো না আসবি তো নিচে নাকি।’
‘ হ্যাঁ আসছি তো!দেখ তো দোস্ত আমাকে কেমন দেখতে লাগছে।’
একথা বলতে বলতে আর হাতের ঘড়িটা ঠিক করতে করতে নিচে নাম ছিল নিশি। হোয়াইট টপস পিঙ্ক জিন্স আর গলায় পিঙ্ক আর হোয়াইট মিশ্রণে একটি স্কার্ফ ঝুলানো। চুলগুলো খোলা চোখে কাজল আর হোয়াইট সু বেস নিশি তৈরি।
নিশিকে নদী বলল__
‘ওরে দোস্ত তোরে তো সেই লাগছে দেখতে!’
রহিও নদীর সাথে তাল মিলিয়ে বলল__
‘ হ্যাঁরে নিশি তোকে আজ দেখতে কিন্তু অনেক দারুন লাগছে।’
‘ধন্যবাদ দোস্ত রা তোদের ও কিন্তু খুব ভালো লাগছে।’
এই বলে নিশিও নদী আর রুহির সাথে হল রুমের সোফায় বসে পরলো তারপর এটা ওটা নিয়ে তিন বান্ধবী আড্ডা জুড়ে দিল। ওইদিকে হলরুমের সোফার এক কোনে বসে আছে নিহান। নিহানকে দেখে নিশি মনে মনে বলল___
‘ এসেছি থেকে দেখছি ফোন নিয়ে কি যেন একটা করেই যাচ্ছে কি যে করছে আল্লাহই ভালো জানে। ব্ল্যাক জিন্স,হোয়াইট টি শার্ট, হাতে ব্ল্যাক ব্র্যান্ডেড ওয়াচ,সিল্কি চুলগুলো সুন্দর করে সেট করা আর ব্ল্যাক সু সবমিলিয়ে বেশ ভালোই লাগছে স্যারকে।তাইতো এত অ্যাটিটিউ!’
‘এই নিশি, কি ভাবছিস?’
‘হুম,কি!কি!বলছিস?’
‘ কই? কি কিছু না তো!’
রুহির ধাক্কায় নিশি তার ভাবনা থেকে বের হয়। তারপর মনে মনে বলে __
‘আমি এতক্ষণ ওই বদ রাগী স্যারকে নিয়ে ভাবছিলাম।’
‘এই আবার ও কি হল তোর?’
‘ হ্যাঁ কই কিছু নাতো ‘
‘এই শুভ চলে এসেছে,চল এইবার আমাদের বের হতে হবে। নিরব (আমার আরেক চাচাতো ভাই নিলয় ভাই সবার বড়,তারপর মেঘলা আপু, তারপর নীরব ভাইয়া) ভাইয়ার কথায় আমরা সবাই যে যে যার যার ব্যাগ পত্র নিয়ে বের হই।আমাদের এখান থেকে মোট দুটো গাড়ি বের হবে। প্রথমটায় শুভ ভাইয়া,মেঘলা আপু,নীরব ভাইয়া আর অপু(আমার ছোট ভাই)যাবে।আর দিত্বীয়টায় আমি নিলয় ভাইয়া,নিহান স্যার,নদী আর রুহি যাব।তাই আমরা আম্মু বড়মা সবাইকে বিদায় জানিয়ে সেই অনুযায়ী আমরা সবাই গাড়িতে বসে পড়লাম।আমরা সবাই গাড়ি তে উঠতেই গাড়ি চলতে শুরু করল।
#চলবে,
(আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?গল্পে রিয়েক্ট এতো কমে যাচ্ছে কেন?প্লিজ যারা #তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি গল্প টা পড়েন তারা সবাই আজকে একটু সারা দিবেন,রিচেক দেওয়া হয়নি ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ?)