#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ4
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা?
কলেজ মাঠে কোন দিক না তাকিয়েই দৌড়াচ্ছে আমি। আর আমার পেছনে রিনা খানের রূপ নিয়ে আমাকে দৌড়ানি দিচ্ছে নদী। আর নদী আর আমাকে থামানোর জন্য আমাদের পেছনে ছুটছে রুহি।
কিছুক্ষণ আগে,,,
ক্যান্টিনে রাগ নিয়ে মুখ ভার করে বসে আছে আমি। আর আমার রাগ ভাঙ্গাতে নদী এটা সেটা বলে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে। প্রাণপ্রিয় বান্ধবী বলে কথা তাই আর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারিনি তাই ওর কথায় হেসেই দিলাম।
‘ যাক তাহলে গোমড়ামুখি নিশিকে হাসাতে পারলাম!’
‘ তুই কিন্তু আর ওনার সাপোর্ট করবি না ‘
‘হুম করব না, কিন্তু সত্যি স্যারটা খুব ভালো না হলে চিঠিটা ফেরত দেয়!আর আ– আ –কি হলো! চুল ধরে টানলি কেন?’
‘ তো কি করব?তোরে বলছি আমি ওনার সাপোর্ট আর করবি না।আর তুই উল্টো ওনার প্রশংসা করছিস!’
‘ তাই বলে এত জোরে চুল ধরে টানবি? তোরে তো আমি!!’
‘ বজ্জাত মাইয়া! এটা কি করলি তুই?আমার চুল কেন টানলি?’
‘ তুমি দিতে পারবা আর আমি দিলেই দোষ’
‘ হারামি!তোরে তো আমি!!’
বলেই ওর পিঠে দিলাম এক কিল বসিয়ে! একে তো উনার ব্যাপারে কথা বলতে নিষেধ করেছি তাও, ও উল্টো ওনার গুনোগান করছে তার ওপর চুল ধরে টান দিচ্ছে রাগের মাথায় হয়তো অনেক জোরেই পড়েছে। তাই ও আমার দিকে তরে আসতেই দিলাম এক দৌড় কারন এখন ওর হাতে পড়া মানেই আমার পিঠ শেষ।
বর্তমানে,,,,
ভয়ংকর রেগে রিনা খানের রূপ নিয়ে আমাকে ধরার জন্য আমার পেছনে ধাওয়া দিচ্ছে নদী।তাই কোন দিক না তাকিয়ে দৌড়াচ্ছি।
‘ নিশির বাচ্চা! বদমাশ মাইয়া দাঁড়া তুই,আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।
‘হুম,আমারে তো তোর বোকা মনে হয়!আমি দাড়াই আর তুই এসে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে যা।আর এক মিনিট তুই আমার বাচ্চা কই পা,,, আ–উ—চ।কোন খাম্বারার সাথে বাড়ি খেলাম রে?এখন আমি বাড়িতে কেমনে যাব জামা কাপড় তো পুরোই নষ্ট হয়ে গেছে। আর এখানে কলেজের মাঝখানে খাম্বা আসলো কোথা থে,,,,’
‘আল্লাহ তুমি এবারের মত বাঁচায় দাও একশ টাকা মসজিদে দিব প্লিজ। আল্লাহ এর থেকে তো ভালো ছিল ডোরেমন কার্টুনের ডাইনোসরের মুখে সামনে ফালায় দিতা!কিন্তু এখন তো আমার সামনে বড় ডাইনোসর বসে আছে এখন আমার কি হবে?’
মনে মনে এই কথা বলে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে কারণ আমার সামনে চোখ লাল করে বসে আছে নিহান স্যার।হঠাৎ তিনি গর্জে উঠে বললেন__
‘ ইউ ইডিয়েট গার্ল!এটা তুমি কি করলে? তুমি কি অন্য কাউকে চোখে দেখো না তার উপর পড়ার জন্য? দেখো তোমার জন্য আমার ড্রেসটা কি অবস্থা হল!
আমি নিশ্চুপ কি বলব ভয়েই তো আমি শেষ।
‘কি হল?কথা বলছো না কেন? এমনিতে তো কাউকে এক চুলও ছেড়ে দাও না!’
ওনার চিৎকারে তো আমার ভয়ে প্রাণ যায় যায়
‘কি হল!কথা বলছো না কেন? ইডিয়েট!’
‘ আসলে,আসলে, মানে সা,,,’
‘কি কখন থেকে আসলে নকলে করছ ‘
আমি কয়েকটা শুকনো ঢুক গিলে বললাম __
‘বিশ্বাস করুন স্যার,আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ধাক্কা দেই নি আমি তো পেছন ফিরে দৌড়াচ্ছিলাম তাই দেখতে পাইনি!’
‘ হ্যাঁ!আমি জানি তো তুমি তোমার চোখ বাড়িতে রেখে আসো,আর,,’
এইবার আমার ভয় রাগে পরিণত হলো তাই আমি কিছুটা রেগে বললাম ___
‘দেখুন স্যার!বলছি তো ইচ্ছে করে করিনি ভুলে ধাক্কা লেগে গেছে।আর দোষ তো এইবার আপনারও আছে, আমি না হয় চোখ বাড়িতে রেখে আসি তো আপনিও কি চোখ বাড়িতে রেখে আসেন নাকি?আপনি দেখতে পাননি আমাকে যে আমি দৌড়ে এই দিকেই আসছি আর,,’
‘ ইউ ইডিয়েট!তোমার সাহস হলো কি করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার? একে তো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো,আমার ড্রেস নষ্ট করেছে,তার উপর আমাকে কথা শোনাচ্ছো? তোমাকে তো আমি!’
এই বলে যে উনি আমার দিকে তেড়ে আসতে যাবেন তখনই পেছন থেকে রুহি বলল __
‘স্যার,প্লিজ ওকে মাফ করে দিন ওর হয়ে আমি মাফ চাইছি প্লিজ।’
‘আজ শুধু তোমার বলায় ওকে মাফ করে দিলাম।ওকে বলে দিও ভবিষ্যতে যেন আমার উপর তো দূরের কথা আমার পাশে না পড়ে।’
এই বলে উনি রাগে গজ গজ করতে করতে চলে যান।উনি যেতেই আমি নদীকে বললাম __
‘আজ শুধুমাত্র তোর জন্য ওই বজ্জাত আমাকে এতগুলো কথা শোনালো।দেখলি তো তোর ভালো স্যার আমাকে কত কথা শুনালো? ধুর আজকে আর ক্লাসই করবো না।’
এই বলে আমিও রাগে গজগজ করতে করতে ক্লাসে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে চললাম বাড়ির দিকে।নদী আর রুহি অনেক আটকাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু কে শুনে কার কথা।
_______
‘এই কি হাল করে এসেছিস নিজের? তুই কি এখনো ছোট বাচ্চা! যে হাঁটতে গিয়ে পড়ে জামা কাপড়ের বারোটা বাজিয়ে এসেছিস?’
‘মা তুমি চুপ করবে? দেখেছো না এমনিতেই শরীরের এই অবস্থা তার ওপর একজনের উপর ভীষণ রেগে আছি আমি।দেখি সরো তুমি রুমে যেতে দাও।’
এই বললে আমি রুমের দিকে চললাম। আম্মু খানিকটা রেগে বললো__
‘ দেখেছেন ভাবি (আমার বড় মাকে উদ্দেশ্যে করে মানে আমার জেঠি আমি আমার জেঠিকে বড়মা বলে ডাকি) মেয়েটা কি পরিমাণ বেয়াদব হয়েছে? কিভাবে কথা শোনালো?’
‘ থাকনা ছোট ছেলে মানুষ তো কিছু বলিস না।
‘ এইতো! আপনারা আরো তুলেন মাথায়।’
______
রুমে এসে ব্যাগটা টেবিলে রেখে আপন মনে বকবক করছি আমি আর নিসান স্যারের গুষ্ঠি উদ্ধার করছি,,,,
‘ কি ভেবেছেটা কি উনি নিজেকে!কোন দেশের প্রেসিডেন্ট উনি যখন তখন কথা শুনাবে?আরে বাবা! আমার কি শখ জেগেছে! তোর মত নাইজেরিয়ার বান্দরের উপর পড়ার।’
এইসব নিজে নিজে বকবক করে কাবাড থেকে ড্রেস নিয়ে চললাম ফ্রেশ হতে।
_______
‘ভাইয়া!জানিস তোর ওই বাদর বন্ধু আজকেও আমাকে অপমান করেছে! সকলের সামনে ক্লাসে কান ধরিয়ে রেখেছে!আবার ভুলে একটু ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিল বলে অনেক কথা শুনিয়েছে।’
‘কি নিহান তোকে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছে মানে কি।’
‘কেন তুমি জানো না ওনি যে আমার কলেজে জয়েন করছে?’
‘কই না তো!আচ্ছা রাগ করিস না বোন ও একটু খানি রাগী টাইপেরই তাই কোন কথা বললে কষ্ট পাস না। আমি ওকে পরে বুঝিয়ে বলব।’
‘ এইতো, নিজের বন্ধুর তরফদারি তো করবিই আমি তো আর কিছু হই না! বন্ধুই তো তোর সব।সর আমার সামনে থেকে!!’
এই বলে আমি নিলয় ভাই এর রুম থেকে চলে আসলাম। কোথায় ভাবলাম ভাইয়ার কাছে ওই বজ্জাত টার নামে বিচার দিলে ভাইয়া ওকে কয়েকটা কথা শুনাবে।কিন্তু ভাইয়া তো উল্টো ওরই গান গুন গান গাইছে।লোকে ঠিকই বলে ভাই বোন থেকে বন্ধু ই বেশি!! বেশি ধুর ভাল লাগে না।’
এসব বললে চললাম আমি নিজের রুমের দিকে।
#চলবে,
( আসসালামু আলাইকুম,রিচেক দেওয়া হয়নি ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ?)