আধো_আলো_ছায়া?পর্ব_২ ও শেষ
#ফারজানা_আফরোজ❤️
পরের দিন সকালে…….
“দোস্ত কেমন আছিস তুই এখন শরীল কেমন আছে এখন?”
আশিকের কথা শুনে সাজিন হেঁসে বললো…..
“হুম ভালো আছি। তোদের মতো ফ্রেন্ড থাকতে কি আর আমি খারাপ থাকতে পারি”
তিসান সাজিনের কাছে গিয়ে বললো……
“তুই তো আগে কোনোদিন ড্রিঙ্কস করিছ নাই তাহলে গতকাল কি হলো তোর?”
“তেমন কিছু না রে মন চাইলো তাই আর কি”
“একদম মিথ্যা বলবি না। তোর মুখ দেখে বুঝতে পারছি বল কি হয়েছে?
সাজিন এইবার কান্না করে বলতে লাগলো……
“তোরা তো জানিস ফেসবুকে একটি মেয়ের সাথে আমার রিলেশন খুব ভালোবাসি মেয়েটাকে। গতকাল সকালে ওর সাথে আমার মিট করার কথা ছিলো”
আশিক তখন বললো……
“মিট করার কথা ছিলো ভালো কথা তার সাথে ড্রিঙ্কস করার কি সম্পর্ক?”
“গতকাল যেখানে দেখা করার কথা ছিল সেখানে ওকে একটা ছেলের সাথে দেখতে পাই। খুব হেসে হেসে কথা বলছিলো ওরা, একজন আরেকজনের হাত ধরে”
তিসান বললো…..
“গিয়ে কিছু বলতে পারলি না মেয়েটাকে?”
“কি বলবো বল সে তো আমায় কোনোদিন ভালোবাসি শব্দটা বলে নাই তাই আর কি ওর সামনে যাই নি।”
আশিক বললো…..
“ওইখান থেকে আসার পর কি কথা বলেছিস ওই মেয়ের সাথে?”
“উহু। ব্লক মেরে দিছি। তোরা তো জানিস ওকে কত ভালোবাসি আমি। ওর সাথে কথা বললে পরে আরো দুর্বল হয়ে পড়বো”
“মেয়েটার পিক আছে তোর কাছে?”
“হুম”
“দেখি তো পরে ওই মেয়ের বেবস্থা আমরা করবো”
“তোদের দেখাবো বাট তোরা কিছু করবি না। ও আমায় কোনোদিন ভালোবাসার কথা বলে নাই ওর কোনো দোষ নাই। তাই কিছু বলবি না”
আশিক ও তিসান দু জনেই বললো…..
“ওকে কিছু বলবো না এখন দেখা মেয়েটাকে”
সাজিন মেয়েটার পিক আশিক আর তিসানকে দেখালো, মেয়েটার পিক দেখে আশিক আর তিসান চমকে গেলো তখন আশিক বললো…..
“এত সেই মেয়ে যার গাড়ি করে তোকে নিয়ে হসপিটালে আসছি।”
“হোয়াট?”
“হুম। এই মেয়েই ছিল তাই না রে তিসান?”
“হুম। এই মেয়েই ছিল কিন্তু আচর্য মেয়েটা তোকে চিনতে পারলো না কেনো?”
আশিক তিসানের কথা শুনে বললো..….
“আমিও তাই ভাবছি”
সাজিন বললো…..
“বাদ দে এইসব। ও আমায় ভালোবাসে না তাই আমার চেহারা ওর মনে নাই। এখন বাসায় চল”
আশিক তিসানও সাজিনের কথায় সায় দিলো।
।।
।।
।।
।।
এইভাবে তিন মাস কেটে যায়। একদিন সাজিন, আশিক ও তিসান রাস্তায় হাঁটছে আর কথা বলছে। তখন পিছন থেকে একটি মেয়েলি কণ্ঠে সাজিনের নাম ধরে ডাকা হয়। আশিক ,তিসান ও সাজিন পিছন ফিরে দেখে সেই মেয়ে যাকে সাজিন ভালোবাসে……
“সাজিন তুমি এতটা কেয়ারলেস আমি তো ভাবতেই পারছি না। ওইদিন তোমার জন্য ওয়েট করতে করতে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তার উপর তুমি আমায় ব্লক মেরে রেখেছো। নিজেকে কি ভাবি হে তুমি বিশ্ব কিং।”
“তুমি কি বলছো বুঝতে পারছি না।”
সাজিন শান্ত গলায় বললো…..
“কি বুঝতে পারছো না তুমি হুম। ওইদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমার কি অবস্থা হয়েছে জানো তুমি?”
“অপেক্ষা কই করছিলে? আমি তো দেখলাম বিএফের সাথে খুব ভালোই প্রেম করছিলে”
“এই এইসব তুমি কি বাজে কথা বলছো? মাথা কি গেছে নাকি তোমার?”
“যা দেখলাম তাই বললাম”
“শুনো আমার কোনো বিএফ নাই। আমি তো তোমাকে”
“আমাকে কি?”
“আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। ভাবছি তুমিই আমায় প্রপোজ করবে কিন্তু না ব্লক মেরে বসে আছো। আর আমি বুঝছি তুমি আমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শোনার জন্য এমন করেছো”
কিছুটা লজ্জা পেয়ে……
“হাউ ফানি। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে পরে আবার আমাকে গাড়ি দিয়ে হসপিটালে পৌঁছে দিলে এখন বলছো আমার সাথে তোমার কোনো দেখা হয়নি হাহাহাহা তুমি তো দেখছি অভিনেত্রীদেরও হার মানাবে সাজি”
“তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না সাজিন”
আশিক তখন বললো…..
“আপনি তো খুব ভালো অ্যাক্টিং করতে পারেন। আমাদের সাথে আপনার দেখা হয়েছে আপনি আমাদের লিফ্ট দিলেন এখন বলছেন কিছুই জানেন না বাহ”
সাজিন, আশিক ও তিসান সাজিকে কথা বলতেই লাগলো। সাজি কিছুক্ষণ চুপ করে পরে বললো…..
“আপনারা সবাই মনে হয় সন্ধাকে দেখে আমার কথা ভাবছেন। আসলে ও আমার বোন। আমরা যমজ।”
সাজিন এইবার হো হো করে হাসতে লাগলো…..
“এখন তুমি কি টুইন মুভির গল্প বলবে। যে পার্কে যাকে দেখেছো সে তোমার বোন। যে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে সেও তোমার বোন। আর তোমার কথাগুলো আমরা বিশ্বাস করবো হাহাহা”
সাজিন জোরে জোরে হাসতে লাগলো ঠিক তখন ওর পিছন থেকে একটা কণ্ঠ আসলো…..
“মুভির মতো লাগলেও এইটাই বাস্তব”
আশিক, তিসান, সাজিন ও সাজি তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা আর সৌরভ দাড়িয়ে আছে। আশিক, তিসান, সাজিন ওরা দেখে তো অবাক। একবার সাজির দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা ওদের কাছে এসে বললো…..
“সাজি আমার যমজ বোন। ওইদিন আপনি(সাজিনকে) আমাকেই দেখেছেন সৌরভের সাথে। সৌরভ আমার ছোটকালের ফ্রেন্ড। আর সেই ফ্রেন্ড থেকে এখন জীবন সাথী হতে চাচ্ছি। ওইদিন ও আমায় প্রপোজ করেছিলো আপনি ওইটাই দেখেছেন। সেদিন রাতে আপনার দুই বন্ধু এবং আপনাকে আমিই হসপিটালে দিয়ে আসি। আপনি সাজি কে ব্লক মারেন। জানেন কত কান্না করেছে এতদিন আমার বোন। আপনি এত বোকা কিভাবে হলেন? আপনার তো জানার দরকার ছিলো সাজির কাছে যে পার্কে যে ছিলো কে ও”
সাজিন সন্ধ্যার কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে। তখন সৌরভ বললো…..
“আরেহ ভাইরা ভাই মাথা নিচু করতে হবে না।মানুষ মাত্রই ভুল। এখন কষ্ট লজ্জা না পেয়ে প্রপোজ করোতো আমার শালীকা কে”
সৌরভের কথা শুনে সাজিন সাজির দিকে তাকিয়ে বলে……
“আমার হাতে এখন ফুল নাই তাই স্বাভাবিক ভাবেই বলছি, তোমার সাথে প্রতিদিন কথা বলতে বলতে কিভাবে যে তোমায় ভালোবাসতে শুরু করেছি আমি নিজেও জানি না। তোমার সাথে কথা বললে নিজেকে খুব সুখী মনে হয়। তুমি তো হলে আমার মনের রাণী। এতদিন যা কিছু হয়েছে ভুলে যাও আর ক্ষমা করে দাও আমায়। আমি সত্যিই খুব লজ্জিত। এই #আধো_আলো_ছায়ার মাঝে তোমার ভালোবাসাটা আমি বুঝতে পারি নাই কিন্তু এখন যেহেতু বুঝতে পারছি তাই কোনোদিন তোমায় আমার কাছ থেকে দূরে সরাবো না। সব সময় আমার মনের গভীরে তোমায় রাখবো। ভালোবাসি সাজি। আই লাভ ইউ সাজি। লাভ ইউ সো মাচ।”
“আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি সাজিন”
সাজি সবার সামনে সাজিনকে জড়িয়ে ধরে তখন সৌরভ কেশে উঠলো আর বললো….
“এহেম এহেম। শালীকা এইটা পাবলিক প্লেস।”
সৌরভের কথা শুনে সাজি সাজিনকে ছেড়ে দেয় আর লজ্জা পায়। তখন সৌরভ বললো……
” সব তো ঠিকঠাক হলো কিন্তু এখন তো আমার অনেক বড় লস হয়ে যাচ্ছে”
সৌরভের কথা শুনে সবাই জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে…..
“কি”
“আরেহ আগে তো ভাবছিলাম বউয়ের সাথে শালী ফ্রী পাবো কিন্তু এখন তো আর পাচ্ছি না”
সৌরভের কথা শুনে সন্ধ্যা সৌরভ কে পা দিয়ে উষ্ঠা মেরে বললো…..
“তোকে পাওয়াচ্ছি আমি ফ্রী অফার। স্কুল জীবন থেকে এই ফ্রী ফ্রী ডায়লগ শুনতে শুনতে এখন তোকে আমার ফ্রী তে মারতে ইচ্ছা করে”
সৌরভ সন্ধ্যার কথা শুনে সাজি সাজিন আশিক তিসান হাসতে লাগলো…….
আশিক ও তিসান সাজির কাছ থেকে ক্ষমা চাইলে সাজি বলে ওদের দোষ নাই। এমন ভুল যে কেউ করতে পারে। তাই ও ওদের দোষারোপ করতে পারছে না তাছাড়া বড় কথা হলো আজ ওদের জন্যই সাজিন বেঁচে আছে।
সমাপ্ত…….
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এই গল্পটা নিয়ে অনেক কিছু ভাবছিলাম পরে দেখলাম আপনাদের এই গল্প বেশি ভালো লাগে নাই তাই ছোট করে লিখে শেষ করে দিলাম। ?