প্রেমের ঐশ্বর্য শেষ পর্ব (শেষাংশ দুই)

0
316

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
শেষ পর্ব (শেষাংশ ২)

অমাবস্যার রাত। আজ চারিদিকটা অন্ধকার। চাঁদের আলো নেই। আকাশে তাঁরাও নেই। মেঘলা আকাশ মাঝেমধ্যে চমকাচ্ছে। আকাশের এক প্রান্তে যখন ছলকে উঠছে তখনও নিরব ঐশ্বর্য। প্রাসাদের ছাঁদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থমকে রয়েছে সে। জীবনটা কেমন যেন থমকে গেছে। এই পনেরো দিনে পনেরোটা লা’শ পাওয়া গিয়েছে। প্রজারা রয়েছে আতঙ্কে। সেই সাথে নিরব ঐশ্বর্যের মনটাও হাহাকার দিয়ে উঠছে সেটা কারোর বোঝার ক্ষমতা নেই। সে এখনো শক্ত, অটুট। যেন পাথর দিয়ে তৈরি এক জীবন। জীবন বললে ভুল হবে। তারা তো অর্ধমৃত! মেঘলা আকাশটা যখন চমকে উঠে ডেকে উঠল আকাশের দিকে তাকালো ঐশ্বর্য। নীলাভ চোখ দুটো রাখলো সেই চমকে ওঠা গগনে। বাতাসের বেগ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো। ঐশ্বর্যের খোঁপা করা চুলটা তার অজান্তেই বাতাসের তীব্রতায় খুলে গেল। তার মনে ঘুরছে একটাই ভাবনা! তা হচ্ছে অগ্নি তলো’য়ার। সেটা কি সেই আগুনে ধ্বংস হয়নি?

“যদি সেই অ’স্ত্র এতোটা কঠিন না-ই হয় তবে সেটার ধ্বংসের উপায় কি? আর সেটা এখন কার অধীনে? কে করছে আমার রাজ্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা?”

বিশ্বাসঘাতকতা বড্ড খারাপ জিনিস। ঐশ্বর্যের জানা মতে সকলে নিজের নিজের রাজ্যকে ভীষণ ভালোবাসে। শ্রদ্ধা করে! কিন্তু এই দ্রো’হী কে? মাথা ভনভন করছে ঐশ্বর্যের। পিছু ফিরে ঝুলিয়ে রাখা ফুলের দোলনা খানির দিকে তাকায় সে। এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গিয়ে দোলনায় বসে। সেখানে রাখা ভায়োলেন হাতে তুলে নেয় সে। খারাপ সময়ে এই সুর মনটাকে কেমন যেন মাতিয়ে দেয়। হাতে সেটা তুলে সুর তুলতে আরম্ভ করে ধীরে ধীরে। মুখে আসে গান। গাইতে ক্ষতি কি?
“Kisi roj barish jo ayee
Samajh lena boondon mein main hoon
Subah dhoop tumko sataaye
Samajh lena kirno mein main hoon…”

ঐশ্বর্য থামতেই জবাব আসে পেছন থেকে। গলার সুর মোটা এবং গম্ভীর। ভায়োলেনে সুর তোলা থামায় না ঐশ্বর্য। হক না একটু গম্ভীর সুর। এই সুরটাই যে তার সর্বাঙ্গ মাতিয়ে তোলে।
“Kuch kahun ya na kahu
Tum mujhko sadaa sunte rehna…”

গানটার সুর যখন কাছে বাজতে থাকে তখন ঐশ্বর্য বুঝে যায় লোকটা তার নিকটে আসছে। প্রেম তার সামনে এসে হাঁটু ভাঁজ করে বসে ঐশ্বর্যের একটা হাত সযত্নে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“আজকে হঠাৎ এমন গান আর সুর তুলছো যে?”

ঐশ্বর্য জবাব দিল না। ঘাড় ঘুড়িয়ে অন্যদিক ফিরিয়ে চেয়ে রইল। মুখটা মলিন। ফ্যাকাশে। চোখে নেই সেই তীব্রতা! প্রেম ঐশ্বর্যের গালে হাত রাখে। থেমে থেমে বলে,
“তোমায় কেমন যেন প্রাণহীন লাগছে ঐশ্বর্য। তোমার চোখের সেই তেজ, তোমার সেই মুখশ্রীটা অন্যরকম হয়ে গেছে।”

“আমি তো সত্যিই প্রাণহীন মি. আনস্মাইলিং! আমার মধ্যে তো আদেও আপনাদের মতো কোনো প্রাণ নেই। যতটুকু রয়েছে তাও শুষে আমায় প্রাণহীন করে দিয়ে চলেছে আমার রাজ্যের কেউ। আমিও যে আমার এতো প্রজাদের মৃ’ত্যু দেখে ভেতরে ম’রে যাচ্ছি।”

কথাটুকু বলতে বলতে দুর্বল হয়ে আসে ঐশ্বর্যের কণ্ঠস্বর। খানিকক্ষণের মধ্যে মেয়েটার চোখে অশ্রু বর্ষণ করবে। ইতিমধ্যে করেও ফেলেছে। চোখে টলটল করছে পানি। কথাগুলো বলতে বলতে নিচু হয়ে ঝুঁকে প্রেমের কাছে নিজের মাথা রাখল ঐশ্বর্য। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠল,
“আমি কাউকে সঠিক বিচার পাইয়ে দিতে পারছি না। সকলে রাজসভায় ছুটে আসছে সঠিক বিচার পাবার আশায়। প্রকৃত হ’ত্যাকারীকে ধরতে পারছি না। শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমি পারছি না। এজন্যই মাকে বলেছিলাম আমি কুইন হতে চাই না।”

ঐশ্বর্যের মাথা তুলে প্রেম এবার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কান্না থামাও ঐশ্বর্য।”

“আমি পারব না এই দায়িত্ব পালন করতে। আমি চাই না ওই সিংহাসন।”

পাগলের মতো প্রলাপ বকে যাচ্ছে ঐশ্বর্য। থামার নাম নেই। প্রেম আবারও শান্ত সুরে বলে,
“স্টপ ঐশ্বর্য।”

“আমি আবার সেখানে ফিরে যাব। মানুষদের জগতে। এই জগতে এতো মৃ’ত্যু দেখতে পারব না।”

“চুপ করো ঐশ্বর্য। স্টপ ইট।”

এবার কিছুটা জোরেসোরেই ধমক দিয়ে ঐশ্বর্যকে থামালো প্রেম। ঐশ্বর্য থেমে গেল। হেঁচকি তুলে কান্না মূহুর্তেই বন্ধ হলো। প্রেম আবারও বড় নিশ্বাস ছাড়ল। নিজের ধূসর বর্ণের অধর এগিয়ে এনে ঐশ্বর্যের গড়িয়ে পড়তে থাকা অশ্রু শুষে নিল। তারপর তার কপাল ও মুখের কাছ থেকে এলোমেলো চুল সরিয়ে কানে গুঁজে দিয়ে বলল,
“ইউ আর অ্যা ভ্যাম্পায়ার কুইন। তোমার চোখে কান্না নয় আ’গুন মানায়। সেই চোখ দিয়ে আ’গুন ঝরবে। সেই দৃষ্টি দ্বারা সেই বিশ্বাসঘাতককে ধ্বংস করবে। মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে। তোমার এই কান্না তোমায় দুর্বল করছে। তোমার দৃষ্টি জাগিয়ে তোলো রাণী সাহেবা। আর মাঝে মাঝে যখন ভেঙ্গে পড়বে। যখন চোখ দুটোতে শক্তি থাকবে না। অশ্রু ঝরবে। ঠিক এভাবেই আমি সেই অশ্রু শুষে নেব।”

ঐশ্বর্য যেন অদৃশ্য শক্তি পায়। প্রেমের বলা প্রতিটা কথা তাকে জাগিয়ে তোলে। সে মাথা নাড়ায়। তারপর প্রেমের দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে বলে,
“আপনি তো সেই মানুষ প্রেম! যার সামনে আমি নিজেকে ভেঙ্গে উপস্থাপন করতে পারি। আপনি সেই ব্যক্তি যার সামনে নিজের এই দুর্বল রূপটা তুলে ধরে শক্তি পাই নতুন করে। আপনি আমার সেই শক্তি। সকলে জানে রাণী সাহেবা এখনো কঠিনভাবে সবটা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে। একমাত্র শেখ আনন প্রেম জানে ভ্যাম্পায়ার কুইন ঐশ্বর্য কতটা ভেঙ্গে পড়েছে।”

বৃষ্টির বিন্দু যখন ঐশ্বর্যের গালে এসে পড়ে বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে তা মুছে দেয় প্রেম। তখনি আস্তে আস্তে হুট করেই বাড়ে বৃষ্টির বেগ। আধভেজা হতেই ঐশ্বর্য প্রেমের হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“বৃষ্টি হচ্ছে। ভেতরে চলুন। আপনার ঠান্ডা লাগবে।”

ঐশ্বর্য প্রেমের হাত টেনে ভেতরে যেতে চায়। তবে প্রেম ঠাঁই দাঁড়িয়ে। ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরে লোকটার দিকে তাকায় ঐশ্বর্য। প্রেম উল্টে তার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে,
“উঁহু লাগুক ঠান্ডা। আজ বড্ড ইচ্ছে করছে তোমার সেই লাস্যময়ী রূপ দেখতে। যেখানে তোমার গাল বেয়ে পানি পড়বে। চুলগুলো লেপ্টে যাবে গালের সাথে। নাকে জমা হবে বিন্দু বিন্দু পানির কণা। আর এই চিকন গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ওষ্ঠদ্বয় যখন ভিজে যাবে তখন আমি…”

বলে থামে প্রেম। ঐশ্বর্যের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। প্রেম হেঁসে ওঠে। এইতো মেয়েটা আগের রূপে ফিরেছে। প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে মুখশ্রী। ফিসফিস করে বলে,
“থাক বাকিটা কথায় না বলে কাজে করে দেখাই? বাকিটা বললে এবার তোমায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখন আবার আরেক বিপদ।”

ঐশ্বর্য হাসি আটকাতে পারে না। তার ভিজে চুল পেছনদিকে সরিয়ে প্রেম আদুরে সুরে বলে ওঠে,
“আমার মিষ্টি ভ্যাম্পায়ার বউ!”

আরো দুই দিন কাটে। এই দুইদিনে আরো দুটো লা’শ পাওয়া গেছে। পুরো রাজ্য বিধ্বস্ত। সকলে আতঙ্কে বসবাস করছে। কেউ কেউ রাজ্য ছেড়ে মানুষদের জগতে থাকা শুরু করে দিয়েছে। নিজেদের প্রা’ণ হারাতে আর কেউই রাজি নয়।

অন্ধকার রাতে। টিমটিমে আলোয় ঘুমন্ত প্রেমের মুখশ্রী অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। হালকা বাতাস তার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো এপার ওপার করছে। সেই চুলে হাত রাখলো কেউ। চুলগুলো সুন্দর মতো ঠিক করে দিয়ে কপালে নিজের অধরের ছোঁয়া দিল। ঘাড় ফিরিয়ে পাশে তাকালো। তৎক্ষনাৎ চোখের পাতা বুঁজে রাখা ছোট্ট পুনম পাশ ফিরল তার। প্রেমের মতোই উপরে একহাত আর আরেকহাত বুকের উপর রেখে আবারও ঘুমে মগ্ন হলো। তাতে হাসি পেল সেই আগন্তুকের। খুব নিচু সুরে বলল,
“বাবা আর মেয়ে একই। শুয়েও আছে একইভাবে। একেই হয়ত বলে বাবার মেয়ে।”

এবার দাঁড়িয়ে যায় সে। খানিকটা নিচু হয়ে মেয়ের দুটো গালে চুমু খেয়ে নেয় ইচ্ছে মতো। চোখ থেকে গড়িয়ে টুপ করে পুনমের গালে যখন পড়ে পুনম কেঁপে উঠতেই সরে যায় সেই আগন্তুক। প্রেমের দিকে তাকায়। আগের মতোই নিচু গলায় বলে,
“আপনি আমার সেই তৃষ্ণা যেই তৃষ্ণা কখনোই মিটবে না। আজও মিটছে না। তাই যেতেও মন চাইছে না।”

একটু থামলো সে। ভেঙ্গে আসছে গলার সুর। ভাঙ্গা সুরে বলে উঠল,
“ভালোবাসি আপনাকে।”

কারো পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট যখন সেই আগন্তুকের কান অবধি পৌঁছায় তখনি তড়িঘড়ি করে নিজের চোখের কোণে থাকা অশ্রু একহাতে মুছে নিজের মুখটা ঢেকে নেয় ভালো করে। চোখ ছাড়া তাকে চেনা সম্ভব নয়। দৃশ্যমান সেই চেনা নেত্র দুটো। গায়ে যুদ্ধের পোশাক। দ্রুত বেগে তলো’য়ার ঝুলিয়ে রাখার স্থানে গিয়ে হাত একটা তলো’য়ার নিয়ে নিমিষেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল সে।

আজ রাত জাগছে ইলহান। চোখে ঘুম নেই। পুরো রাজ্য পাহারা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত হয়েছে আজ সে। ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাশ দিয়েই সে যাচ্ছিল। হঠাৎ কানে এলো অন্য কারো পায়ের শব্দ। চকিতে তাকায় সে পিছু ঘুরে। আশপাশটা পরিষ্কার। কেউ তো নেই। তবুও ধীর গলায় বলল,
“কে এখানে?”

জবাব এলো না। পায়ের শব্দ যখন আরো দৃঢ় হতে থাকল তখন সতর্ক হলো ইলহান। হাতের তলো’য়ার সাথে নিজের আসল রূপে এলো সে। আশেপাশে ভালো করে দেখতে থাকলো। যখনই সে আবারও কিছু বলতে যাবে তখনি তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হলো। টাল সামলাতে না পেরে তলো’য়ার হাত থেকে ছুটলো এবং উপুড় হয়ে পড়ল। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাতেই চেনা কাউকে দেখে চোখ দুটো চড়কগাছ হলো তার। তড়তড় করে বলে উঠল,
“তু…তুমি এখানে? কি করছো এটা?”

“যেটা করার দরকার সেটাই করছি।”

ইলহানের চেনা সে এগিয়ে এলো তার দিকে। তার হাতের ধারালো তীক্ষ্ণ তলো’য়ার দেখে পিছিয়ে গেল সে। সেই অন্য আগন্তুক তলো’য়ার ঘুরিয়ে নিল। আ’ঘাত করতে প্রস্তুত হলো। সেই মূহুর্তেই চোখের সামনে ঘটল অন্য ঘটনা। পেছন থেকে তার মাথা আঘাত করা হলো। ছিটকে নদীর ধারের কাছে পড়লেও সেই তলো’য়ার হাতছাড়া করল না সে। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখ দুটো কপালে উঠল তার। হাতে তলো’য়ার নিয়ে সমানে ফুঁসছে ঐশ্বর্য। মুখ থেকে কাপড় খুলে পড়েছে দ্রুত আসতে। তাকে দেখে আগন্তুক কিছুটা চমকালো।
“কু…কুইন আপনি?”

“হ্যাঁ শার্লি। আমি। ভ্যাম্পায়ার কুইন ঐশ্বর্য। আর তুমি? সেই বিশ্বাসঘাতক যে কিনা নিজের জন্মভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে দিনের পর দিন।”

শার্লি কোনোমতে উঠে দাঁড়ায়। হাতের তলো’য়ার শক্ত করে ধরে। সেই অ’স্ত্রের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয় ঐশ্বর্য শার্লির দিকে। শার্লি কঠিনভাবে হাসে। হাসিতে স্পষ্ট হিংস্রতা। হাসি থামিয়ে বলে,
“শেষমেশ আমাকে ধরেই ফেললে রাণী? তোমার বুদ্ধি আছে বলতে হবে। তবে ধরে আহামরি নিজের খুব একটা সুবিধা করতে পারো নি তুমি। কি লাভ হলো? চিনতে পারছো এই অ’স্ত্র?”

ঐশ্বর্য যান্ত্রিক সুরে বলে,
“অ’গ্নি তলো’য়ার। যেটার একেকটা আ’ঘাত শুধু কারোর বাহিরেই নয় ভেতরটাও শেষ করে দেবে। যেই তলো’য়ারের আঘা’তে মৃ’ত্যু হতে পারে যে কারোর।”

“ঠিক ধরেছো। এখন তোমারও হবে মৃ’ত্যু।”

শার্লি দ্রুত এগিয়ে আসে। ঐশ্বর্য থেমে থাকে না। এই মূহুর্তে সে যেন জলন্ত আগু’নের লাভা। সেও তেড়ে আসে নিজের আসল রূপ বের করে। তার হাতে শুধু সাধারণ তলো’য়ার। এই যুদ্ধে কে জয়ী হবে তা বলা যায় না। মাঝখানে বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইলহান। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভেবে পাচ্ছে না যে এতোদিন সবাইকে খু’ন করে এসেছে সে অন্য কেউ নয় তারই এক বিশ্বস্ত বন্ধু শার্লি। আজ তাকেও মা’রতে হাত কাঁপছিল না ওর। তার ধ্যান ভাঙ্গে ঐশ্বর্য ও শার্লিকে লাগতে দেখে। কেউ কারোর থেকে কম যাচ্ছে না। এবার অন্যকিছু ভাবা বাদ দিয়ে সেও এগিয়ে যায়। তলো’য়ার বের করে আ’ঘাত হানে শার্লির উপর। কিন্তু লাভ হয় না। শার্লি তার সেই প্রধান অ’স্ত্র দ্বারা সরাসরি দুজনকেই ফেলে দেয়। অগ্নি তলো’য়ারের আঘা’তে মূহুর্তেই ভেঙ্গে যায় ঐশ্বর্যের তলো’য়ার। তার বড় নখ তখন বেরিয়ে আসে। সে এগোতেই ইলহান তার হাতে নিজের তলো’য়ার ধরিয়ে বলে,
“কুইন এই নিন। এটা আপনার প্রয়োজন।”

হাতে তলো’য়ার নেয় ঐশ্বর্য। দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে যায়। কিন্তু অ’গ্নি তলো’য়ারের সাথে সেই তলো’য়ারের সংঘর্ষ হতেই সেই তলো’য়ার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়। সেই সুযোগে শার্লি এগিয়ে আসে ঐশ্বর্যের চোখেমুখে আঘা’ত হানতে।
“তোমার এই চাঁদের মতো রূপ! ঐশ্বর্যের পরিপূর্ণ এই মুখশ্রী আমার সহ্য হয় না। এখান থেকেই তোমার মৃ’ত্যু…”

কথাটুকু মাঝপথে থেমে যায়। চিৎকার দিয়ে উঠে নিচে পড়ে যায় ধপ করে শার্লি। হাত থেকে তলো’‌য়ার ছিটকে যায়। মাথার পেছনে হাত দিতেই অনুভব করে গরম এবং তরল পদার্থ মতো কিছু একটা। র’ক্ত! কোনোমতে ফিরে তাকায় সে। চোখে পড়ে হাতে ভারি পাথর নিয়ে থাকা ইলহানকে। তার থেকে কিছুটা দূরত্বে তার অ’স্ত্র। হাত দিয়ে ধরার আগেই ছোঁ মেরে তা বাতাসের গতিতে হাতে নেয় ঐশ্বর্য। শার্লি তখন পিছিয়ে যায়। তার শরীরের র’ক্ত হিম হয়ে আসে। এই বুঝি প্রা’ণ গেল। ঐশ্বর্য কি তাকে ক্ষমা করবে না? উঁহু, সেই সম্ভাবনাই নেই একদম। সে তার প্রজাদের কিভাবে মে’রেছে। এখন তার কি হবে?

“এখন কেন এই তলো’য়ার দেখে চোখমুখের রঙ ফ্যাকাশে হচ্ছে তোমার? তুমি ঠিক করো নি শার্লি। বিশ্বাসঘাতকতা আমার সবচেয়ে ঘৃণার বস্তু। তুমি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো। তোমার নিজের জন্মভূমির সাথেও করেছো। তুমি বেঁচে থাকার অধিকারই হারিয়েছো।”

“আ…আমায় ক্ষমা করুন কুইন। আমার ভুল…”

ঐশ্বর্য হুংকার দিয়ে ওঠে শার্লির কথায়। তার হুংকারে কেঁপে ওঠে নদীর পানি এবং পাশের জঙ্গল। একপাশ থেকে বাদুড় উড়ে যায়। সে শ্বাসিয়ে বলে,
“আমি ডেভিল কুইন নই ঠিকই। তবে নিষ্ঠুরতা বিন্দুমাত্র কমেনি আমার অন্তর থেকে। আর যে আমার রাজ্য এবং আমার প্রজাকে ধোঁকা দেবে তার একটাই পরিণাম হবে। মৃ’ত্যু।”

কথা বাড়ায় না ঐশ্বর্য। শার্লির মুখ বরাবর তলো’য়ার চালাতেই চোখেমুখে র’ক্ত ছিটকে আসে। শার্লি পড়ে থেকে ছটফট করতে থাকে। গলগল করে পড়তে থাকে র’ক্ত। এবার আরো দুটো আ’ঘাত করে ঐশ্বর্য। আর বলে ওঠে,
“আমি জানি এর থেকে কঠিন শাস্তি আর নেই। তুমি তড়পে তড়পে মর’বে। ভেতরের মাংস সেদ্ধ হয়ে যাবে। বিষটা তোমার শরীর গ্রাস করবে।”

শার্লি কিছু বলতে চায়। তবে পারে না। কোনোমতে এগিয়ে এসে ঐশ্বর্যের পা ধরে। ভাঙ্গা সুরে বলে,
“আমাকে বাঁচান কুইন। নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইছি আপনার কাছে।”

ঐশ্বর্য নিজের পা ছাড়িয়ে তার পা শার্লির উপর তুলে দেয়। তারপর বলে,
“তোমার মৃ’ত্যু আমার শান্তি।”

ইলহানের দিকে তাকায় ঐশ্বর্য। আর শান্ত সুরে বলে ওঠে,
“যাও। প্রাসাদের সকলকে খবর দাও।”

চলবে…

[বি.দ্র. পুরো পর্ব কিছুতেই ধরছে না। তাই এক পর্বে শেষও করা যাচ্ছে না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here