##প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
শেষ পর্ব (প্রথমাংশ)
সকলে যখন খুশি মনে জঙ্গলের সেই স্থানটি ত্যাগ করল তখন আড়ালে থাকা কেউ একজন বেরিয়ে এলো। বড় এবং প্রশস্ত গাছের শিকড়ের সাথে পায়ে আঘাত লাগলে উল্টে পড়তে নিলেও নিজেকে সামলে নিল সে। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া সেই ডেভিল রাজ্যের সামনে। সেই প্রবেশদ্বারের সামনে। প্রবেশদ্বার ভেঙে তিন টুকরো হয়েছে। সেই ভাঙা প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রায় ধ্বংস হওয়া রাজ্যে প্রবেশ করল সে। চারিপাশে শুধু আগুন জ্বলছে। সেই তাপ তাকে স্পর্শ করতেই চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। তাপ সহ্য করতে পারছে না সে। তবুও কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেল সে। প্রাসাদ থেকে আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যে এসেছে। সবটা পু’ড়ছে। সে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠল,
“হাহ! এরা নাকি আবার ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেসকে ডেভিল কুইন বানাবে। সামান্য মানুষের সাথে পেরে উঠল না। নিজেরাই পু’ড়ে ছারখার হয়ে গেল! পরিকল্পনা সব ভেস্তে গেল। যত্তসব মূর্খের দল।”
জঙ্গলের গাছগাছালি পেরিয়ে এগিয়ে যেতেই তার চোখে তীব্র রশ্মি লাগল। হাত দিয়ে আগলে নিল তার দুটো চোখ। হাতের আঙ্গুল একটু ফাঁক করে দেখতে চাইলো এই রশ্মির উৎস। আগুনে জ্বল’ছে সেই স্থান। কিন্তু সবখানে আগুন লেগে গেলেও বাদ রয়েছে একটি জায়গা। সেখান থেকেই বের হচ্ছে রশ্মি। কোনোমতে পানি জোগাড় করে দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করল সে। দৃশ্যমান হলো অগ্নি তলো’য়ার। কি সুন্দর দেখতে! চকচক করছে। সুচালো তার মাথা। সেটা হাত দিয়ে তুলে নিল সেই আগন্তুক। এই তলো’য়ার একবার ঘুরিয়ে নিল সে। চোখজোড়া সবুজ হয়ে উঠল তার। আপনমনে বলে উঠল,
“কাজের জিনিস পেয়েছি! এটা দিয়েই তো এবার শুরু হবে আসল খেলা।”
সময় বহমান। কারো চোখের নিমিষে কেটে যায়। আবার কারো কাটতেই চায় না। যাদের জীবন তিক্ত হয়, যারা দ্রুত সময় পেরিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাদের সময় এগোয় না। আর সুখময় জীবনের সময় যেন তাড়াতাড়ি এগোয়। এটাই হয়ত নিয়ম!
ঠিক দশ দিন এবং দশটা রাত পেরিয়ে গিয়েছে। প্রেম ও ঐশ্বর্যের কাছে নিমিষে কেটেছে। ভালোবাসাময় হয়ে উঠেছিল প্রতিটা মূহুর্ত! সেই মূহুর্ত হৃদয়ের কুটিরে বন্দি করা। যত্ম করে তুলে রাখা।
পূর্ণিমার রাত। এই রাতে ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি বাড়ে। পূর্ণ চাঁদের আলোয় শক্তি দ্বিগুন হয়। রূপালী চাঁদ যেন আকাশ থেকে নেমে ধরা দিয়েছে ভ্যাম্পায়ার কিংডমে। তখন প্রাসাদে হুলস্থুল কান্ড! রাজসভায় জমজমাট আয়োজন। সকলে মিলে হাত লাগিয়ে সভা সাজাচ্ছে। বড় বড় জানালার পর্দা তুলে দিতেই সভায় চাঁদের আলোয় যেমন আলোকিত কচ্ছে ঠিক তেমনই স্বর্ণের মতো প্রাসাদে প্রবেশ করছে জোনাকির দল। রাজসভার পরিবেশ আরো শান্তিপ্রিয় করে তুলে চলেছে। মাধুর্য গুনে গুনে সকলের কাছে গিয়ে দেখছে সকলে ভালো করে পর্দা উঠিয়ে জানালা খুলে দিচ্ছে কিনা। তার শরীর আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। আগের মতোই হয়ে উঠেছে ছটফটে। চনমনে স্বভাবের। দ্রুত চোখের পলকেই হেঁটে যাচ্ছে। পেছন পেছন ছুটছে অনুভব। তার শান্তি নেই। এই চঞ্চলিনীকে থামানো যাচ্ছে না। পরণে ইয়া বড় একটা লম্বা বেগুনি পোশাক পড়েও কিভাবে ছুটছে সে। অবশেষে মাধুর্য গিয়ে থামলো একজায়গায়। তবুও ফুলের ডালা নিয়ে পানির মধ্যে ফুলগুলো আর প্রদীপ মতো আলোর মাটির জিনিসটিকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। অনুভব ধীর পায়ে গিয়ে মাধুর্যের ঠিক সামনে দাঁড়াল। মাধুর্য তখনও ব্যস্ত! অনুভব এবার হালকা কেশে অসহায় গলায় বলে উঠল,
“এইযে রাজ্যের রাণী, মনের রাণী! আমার দিকে একটু তো তাকাও। এইযে তোমার সামনে থাকা এই ব্যক্তিটি জন্য কত মনোযোগ দিয়ে তৈরি হয়ে এসেছে। রাণীর চোখ যে তবুও পড়ছে না! এই প্রজার দিকে তাকিয়ে একটু ধন্য করো।”
পানির প্রদীপে আগুন জ্বালিয়ে কড়া দৃষ্টিপাত করল মাধুর্য। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলল,
“ওই মেয়ের সাথে এতো কথা বলার কি আছে? ওকে বুঝি এই রাণীর থেকে বেশি সুন্দর লাগছিল?”
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল অনুভব। ভ্যাবাচেকা খেয়ে উল্টো প্রশ্ন করল,
“কোন মেয়ে?”
“ভুলে গেছেন নাকি নাটক করছেন? ওইতো রাজসভা থেকে বেরিয়ে ছোট বারান্দার দিকে।”
অনুভব মনে করার চেষ্টা করে। মনে পড়তেই মাথা নাড়িয়ে হতবাক হয়ে বলে,
“ওহ ওই মেয়ে? আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল। অন্য কিছু না।”।
“শুধু সাহায্য? কি যেন বলছিল! ও হ্যাঁ এতো বছর হয়ে গেল আপনি এখনো দেখতে সেই যুবক প্রিন্স চার্মিং ই আছেন। এখনো আপনার ওই নীল চোখের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সেই কালে ফিরে গিয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি! এগুলো সাহায্য চাওয়ার নমুনা?”
এবার কপালে হাত চলে যায় অনুভবের। মাধুর্য রাগে কটমট করে সেখান থেকে গটগট করে হেঁটে সরে আসে। অনুভব কিছুটা চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
“এতে আমার কি দোষ? আমি তো ওকে কোনো কমপ্লিমেন্ট দিই নি। মাধু! ও মাধু!”
মাধুর্যের পেছন ছুটতে থাকে অনুভব। কি একটা বিপদ!
সুন্দর কারুকার্যে সাজানো কক্ষ। বড় একটা পালঙ্কের পাশে জ্বলছে আগুনের আলো। সাদা পর্দার আস্তরণ দিয়ে ঢাকা বড় জানালাটি। বাম পাশে ঝুলিয়ে রাখা দুটো তলো’য়ার। কক্ষে থাকা সুদর্শনীর হাতে দাসীরা পড়িয়ে দিল সাদা রঙের বড় পাথরের আংটি। তৈরি হওয়া তার শেষ। দাসীদের হাত দিয়ে ইশারা করতেই মাথা ঝুঁকে বেরিয়ে পড়ল তারা। রূপবতী সেই কন্যা ধাবিত হলো জানালার দিকে। দুহাতে সাদা ধবধবে পোশাকটা ধরে এগিয়ে এসে পোশাক ছেড়ে দুদিকে জড়িয়ে দিল সাদা পর্দা। বেরিয়ে পড়ল আকাশ। চকচক করছে কতগুলো তাঁরা। চাঁদ এখনো ঢাকা। সঠিক সময়ে দেখা দেবার পরিকল্পনা করছে হয়ত। আকাশের পানে চাইতেই তার নেত্র যুগল হয়ে এলো সবুজ। চোখ বুঁজে স্বাভাবিক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বড় আয়নার দিকে তাকালো সে। আয়নার কাছে এসে দাঁড়াল। স্বচ্ছ এক রাজকন্যার ন্যায় দেখাচ্ছে। যার প্রতিটা অঙ্গে শুভ্রতার ছোঁয়া। তার হাতটা আয়নায় দিতেই হঠাৎ সে পাল্টাতে লাগল। ভ্রু কুঁচকালো সে। প্রতিচ্ছবিতে যখন তার পরনে পোশাক কালো এবং মাথা থেকে পা অবধি কালোর ছোঁয়া দেখতে পেলো তখন বুঝে নিল সে। স্মিত হাসলো। তবে তার প্রতিচ্ছবিতে হাসি নেই। এই ঘটনা আজ নতুন নয়। এর আগেও ঘটেছে। আজ সে নিজে মুখ খুলে বলল,
“আমি বেছে নিয়েছি আমার অস্তিত্ব। আমি বেছেছি আমার ভালোবাসা। আর ধ্বংস করেছি চির জীবনের মতো তোমায় ডেভিল কুইন ঐশ্বর্য!”
কথাটা বলা মাত্র প্রতিচ্ছবি আবারও বদলাতে শুরু করে। তার সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে এবার। ঐশ্বর্যের হাসি প্রগাঢ় হতেই সেই প্রতিচ্ছবি আবারও তাকে হতভম্ব করে দিয়ে বলে ওঠে,
“হ্যাঁ ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য তুমি ঠিকই বলেছো। অবশেষে তুমি নিজের আসল অস্তিত্ব বেছেই নিয়েছো। সবশেষে তুমি এই রাজ্যের রাণী হতে চলেছো। ভ্যাম্পায়ার ক্রাউন তুমি এবং তোমার স্বামীর মাথায় উঠতে চলেছে। অভিনন্দন তোমায়। জিতে গিয়েছো! তবে এটা মনে রেখো। এটা তোমার শেষ জিত নয়। আরো জিততে হবে। আরো লড়াই করতে হবে। এই রাজ্যের জন্য। আর আমি জানি তুমি তোমার অর্ধাঙ্গের হাত ধরে সফলভাবে জিতবে।”
প্রতিচ্ছবি কথা বলা সমাপ্ত করতেই তার ওপর হাত রাখলো ঐশ্বর্য। মুখটা মলিন হলো। সেও তার প্রতিচ্ছবিকে কিছু কথা বলতে চাইলো তবে হলো না। এই প্রতিচ্ছবি এখন জড়ো তে পরিণত হয়েছে। তখনি দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে পিছু ফিরে তাকালো ঐশ্বর্য। মাধুর্য এসেছে। মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে তার চিবুক ধরে মুগ্ধ হয়ে বলল,
“কারো নজর না লাগুক।”
বলে তার চোখের নিচ থেকে কাজল নিয়ে ঐশ্বর্যের কানের পিঠে লাগিয়ে ঐশ্বর্যের চিবুক ছুঁয়ে নিজের হাতে চুমু খেয়ে নিল। তারপর ঝটপট করে বলল,
“তাড়াতাড়ি রাজসভায় এসো। সময় নেই আর হাতে। চাঁদ দেখা দিল বলে! এলিনা সহ মৌবনি আর শার্লিও তোমায় নিতে আসবে। আমার নিচে কাজ আছে। তুমি এসো।”
মাধুর্য তাড়াহুড়ো করে যেতে নেয়। তবে তার হাত ধরে আটকায় ঐশ্বর্য। পিছু ফিরে দেখে ঐশ্বর্যের বড় বড় অক্ষিকোটরের নিষ্পলক দৃষ্টি। কথায় বলে মায়েরা নাকি সন্তানের মন ও চোখের ভাষা খুব সহজে পড়তে পারে! মাধুর্য থমথমে সুরে জানতে চাইল,
“কিছু বলবে তুমি?”
কথাটা বলতেই ঐশ্বর্য বসে পড়ে বিছানায়। কিছু না ভেবে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে,
“মা আমি এই রাজ্যের দায়িত্ব নিতে চাই না।”
চকিতে তাকায় মাধুর্য। কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকে পরিবেশ মাধুর্য নিস্তব্ধতা কাটিয়ে প্রশ্ন করে,
“হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন ঐশ্বর্য? আজ তোমার আর প্রেমের অভিষেক। প্রেম তোমার জন্য নিজের স্বাভাবিক জীবন ত্যাগ করে এই রাজ্যের দায়িত্ব নিতে চাইছে। তুমি কেন চাইছো না?”
“আমি ওই মুকুটের যোগ্য নই মা। ওই মুকুটের যোগ্য তুমি। যে সারাজীবন এই রাজ্য আর প্রজাকে এতো সুন্দর ভাবে রক্ষা করে এসেছে। অন্যদিকে আমি কি করেছি? নিজের রাজ্যকে সহ্য করতে পারিনি। নিজের এই অস্তিত্ব প্রাণপণে বিনাশ করতে চেয়েছি। এমনকি নিজের রাজ্য আর এইসব প্রজাদের ধ্বংস করতেও চেয়েছি একটা সময়। কি করে তবে আমি এসবের যোগ্য হতে পারব? এই দায়িত্ব দিও না আমায়।”
মাধুর্য বুঝতে পারে ঐশ্বর্য কি বোঝাতে চাইছে। বড় একটা শ্বাস নিয়ে ঐশ্বর্যের চিন্তিত মুখের দিকে তাকায় সে। তার মাথায় হাত রাখে। আর শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
“তুমি সেসব করেছো কারণ তুমি নিজের মাঝে ছিলেই না। তোমার মধ্যে তখন অন্য এক শক্তি বেড়ে উঠছিল। তুমি তখন নিজের ঘোরে ছিলে না। আচ্ছা একটা রাজা বা রাণীর সবথেকে বড় সার্থকতা কি জানো?”
“কি?”
কৌতুহল ভরা নয়নে মাধুর্যকে জিজ্ঞেস করে ঐশ্বর্য। মাধুর্য আনমনে বলে,
“নিজের রাজ্যকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমস্ত সীমা অতিক্রম করে রক্ষা করা। আর তুমি সেটা করেছো। নিজেকে সেই সীমানায় নিয়ে গেছো। আর কি চাই? একজন যোগ্য রাণী হয়ে উঠেছো তুমি নিজের অজান্তে। সাথে প্রেমও।”
ঐশ্বর্যের মাঝে কেমন যেন আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে। নিজের প্রতি স্বস্তি আসে। অপ্রস্তুত হাসি আসে। মাধুর্যও এমন কান্ডে হেঁসে বলে,
“রাজ্যের সকলে নতুন ভ্যাম্পায়ার কিং আর কুইনের অপেক্ষায়। দ্রুত এসো।”
রাজসভায় একদিকে আগমন ঘটে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্যের। অন্য প্রান্তে পদার্পণ ঘটে প্রেমের। প্রজারা ভীড় করেছে। তারা আসা মাত্র দুইদল ভাগ হয়ে তাদের যাবার জায়গা করে দিচ্ছে। ঐশ্বর্যের সঙ্গে আসছে মাধুর্য, শার্লি, এলিনা সহ কিছু মেয়েরা। অপরদিকে প্রেমের সঙ্গে আসছে অনুভব, ইলহান সহ কিছু ছেলেরা। দুজন সামনাসামনি হয়। মাথা উঠিয়ে তাকায় ঐশ্বর্য। চোখটা ভরে যায় সামনের মানুষটিকে দেখে। পরনে রাজ পোশাক! নতুন রূপে যেন নতুন প্রেমে পড়ল ঐশ্বর্য। অপলক তার ডাগরডাগর চোখের চাহনি। বিরবির করে বলে উঠল,
“আমার আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মি. আনস্মাইলিং!”
ঐশ্বর্যকেও আগে কখনো এই রূপে দেখে প্রেম। এ যেন সত্যিই এক ভিনদেশের রাজকন্যা! যার প্রতি আসক্তি বাড়তেই থাকে কমে না। তারা দুজনেই উঠে দাঁড়ায় সিঁড়ি বেয়ে। খুশিতে সকলের হেঁসে ওঠে তাদের দেখে। মাধুর্য ও অনুভবও উঠে আসে। তখনি জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠে সকলে।
“জয় হোক আমাদের কিং এর! জয় হোক কুইনের।”
তাদেরকে ইশারায় থামতে বলে অনুভব। স্মিত হেঁসে বলে,
“সকলকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এতোটা ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। আমি জানি না আমি কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি এই রাজ মুকুটের। আর আমার রাণীই বা কতটুকু পেরেছে। তবে আজ থেকে দায়িত্ব থেকে বিরতি নিলাম। আজ আমার আনন্দের দিন। আমার মেয়ে এবং আমার মেয়ের স্বামী আমার জামাই প্রেম! যে মানুষ সকলেই জানে তবুও সে এই ভয়ানক দায়িত্ব পিছায় নি। এরা দুজন এখন থেকে আপনাদের সুখদুঃখে পাশে থাকবে। আর আমি এটাও জানি তারা তাদের দায়িত্ব শেষ র’ক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পালন করবে।”
সকলে আবারও জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল। তাদের ওপর ফুলের বর্ষণ ঘটলো। প্রেম কৌশলে ঐশ্বর্যের কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। ঘাড় একটু কাঁত করে ফিসফিস করে বলল,
“আবারও এই শুভ্র নারীর প্রেমের নতুন করে পড়লাম। তুমি যেন সেই স্নিগ্ধ এবং সদ্য ফোঁটা সাদা গোলাপ যাকে নিজের বুকের সিন্দুকে লুকিয়ে রাখলে তবেই শান্তি হতো!”
ঐশ্বর্য মুখ নিচু করল। স্নিগ্ধ মুখে ফুটল সেই আভা। প্রেম আবারও বলল,
“আর কতটা পাগল বানাতে চাও আমায়?”
“যতটা আপনি আমাকে বানিয়েছেন!”
প্রেম প্রতিত্তোরে ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে উঠল।
এলো সেই মূহুর্ত! সেই ক্ষণ! অনুভব প্রেমের কাছে গিয়ে বলল,
“প্রেম। যাও তোমার সিংহাসন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
প্রেম মাথা নিচু করে ঝাঁকায়। আস্তে করে হেঁটে যায় সিংহাসনের দিকে। অনুভব তাকে ইশারা করে, আস্বস্ত করে। হাত-পা কাঁপছে প্রেমের। কত বড় দায়িত্ব! সেই সিংহাসনে তাকায় একবার। ঢক গিলে সবার দিকে চেয়ে বসে পড়ে সোজা হয়ে রাজ ভঙ্গিতে। জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠে প্রেমের নামে। খুশিতে হুল্লোড়ে ভরে যায়। অনুভবও এগিয়ে আসে। তার মাথায় থাকা রাজ মুকুট তুলে নিয়ে প্রেমের মাথায় বেঁধে দিতেই চাঁদের আলো স্পর্শ করে তাকে। যেন প্রেমের আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। তার হাসিতে আস্বস্ত হচ্ছে সকলে। প্রেম ঐশ্বর্যের দিকে উৎসুক নয়নে তাকায়। ঐশ্বর্যও হাসছে। বেশ খুশি এবং আনন্দিত সে। সেও খুশি হয়।
এবার মাধুর্য ঐশ্বর্যকে ইশারা করে। ঐশ্বর্য কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে আসে। সিংহাসনের দিকে তাকায়। স্বর্ণের সিংহাসন। এতোদিন তার মা বসেছে। আজ তার পালা! মাধুর্য তার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“যাও! আজ থেকে ওটা তোমার অধিকার।”
বড় বড় শ্বাস ফেলে এগিয়ে আসে ঐশ্বর্য। সিংহাসনে হাত রেখে ছুঁয়ে দেখতেই বসে পড়ে সে। সকলে উল্লাসে বিভোর হয়ে ওঠে। মাধুর্যের দুচোখ ভরে যায়। সে পেরেছে! তার মেয়েকে তার মতো গড়ে তুলতে পেরেছে। খুশিতে চোখে অশ্রু ভাসতে থাকে। এগিয়ে যায় তার মাথা থেকে হাতে মুকুট নিয়ে। মনোমুগ্ধকর সেই মুকুট নিয়ে ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে থামলো মাধুর্য। প্রেমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার একটা ইচ্ছে আছে। সেটা হলো ঐশ্বর্যকে মুকুট তার অর্ধাঙ্গ পড়াবে। #প্রেমের_ঐশ্বর্য হয়ে উঠুক সে।”
প্রেম কিছু বলতে চাইলো। তাকে বলতে দেওয়া হলো না। অনুভব তাকে যেতে বলল। প্রেম উঠে দাঁড়াল। তার হাতে ধরিয়ে দিল মুকুট। উত্তেজনা নিয়ে এগোল ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে। প্রেম কাছে আসতেই চোখ বুঁজে মাথা এগিয়ে দিল সে। তার মাথায় রাখা হলো সেই মুকুট। ঐশ্বর্যের কর্ণকুহরে ভেসে উঠল প্রেমের বলা কথা।
“জয় হোক আমার রাণী সাহেবার!”
আশ্চর্য রশ্মি ধারণ করল সেই মুকুটে। ছড়িয়ে পড়ল চাঁদের আলো। জোনাকিরাও যেন চারিদিকে নিজের আনন্দে আলো ছড়াতে লাগল। চারিদিকে শুধু আনন্দ আর উত্তেজনা!
শেখ মেনশন! অন্ধকার ঘর। পূর্ণিমার চাঁদের আলো অন্যরকম স্নিগ্ধতা সৃষ্টি করেছে ঘরে। এখানেও আজ পূর্ণিমা। কত সুন্দর চাঁদ। চাঁদকে একনাগাড়ে চেয়ে দেখছে ঐশ্বর্য। মাঝে মাঝে তার রূপটা ফুটে উঠছে। তবে সে আজ লুকাতে ব্যস্ত নয় নিজেকে। বরং তুলে ধরেছে প্রকৃতির সামনে। সকলের সামনে। সে যখন গভীর ভাবনায় মত্ত তখন তার মাথায় হাত রাখলো কেউ। ঐশ্বর্যের মন বুঝতে বিলম্ব করল না মানুষটি কে! তাই কোনো হেলদোল দেখা গেল না তার মধ্যে। মানুষটির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“চাঁদ কত সুন্দর না? অদ্ভুত সুন্দর! প্রতিদিন নতুন নতুন রূপ দেখায়।”
“কোন চাঁদের কথা বলছো? ওই প্রকৃতির আকাশের চাঁদ? নাকি আমার আকাশের চাঁদ?”
এবার ঘাড় ঘুরিয়ে কিছুটা উচ্ছ্বাসের সাথে তাকায় ঐশ্বর্য। প্রেমের ঠোঁটের কোণে তখন মুচকি হাসি। ঐশ্বর্যের সাথে ঘেঁষে কাউচে বসে পড়ে সে। একহাতে ঐশ্বর্যকে আগলে বলে,
“আমি তো সবসময় আমার আকাশের চাঁদ দেখতে ব্যস্ত থাকি। তাই প্রকৃতির চাঁদ দেখার সময় পাই না। তারই যত রূপ! সুযোগ পাব কোথায়?”
ঐশ্বর্য এবার কপাল কুঁচকে বলে,
“যত রূপ?”
“ইয়েস মাই এ্যাংরি বার্ড।”
“শ্বাশুড়ি আন্টিকে আমার কথা জানিয়েছেন? বা ভ্যাম্পায়ার কিংডমের কথা?”
এবার বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে জিজ্ঞেস করল ঐশ্বর্য। প্রেম তখন নীরব। কিছুটা চুপ থেকে উত্তর দিল,
“সেটাই বুঝতে পারছি না। এসব কথা বললে মা কেমন রিয়েক্ট করবে! বিশ্বাস করবেই কিনা। আর কিভাবেই বা বলব কিছুই মাথায় আসছে না।”
ঐশ্বর্যের মুখ তখন ভার হয়ে আসে। থমথমে সুরে বলে,
“তাদের তো ধারণাও নেই এই সম্পর্কে। আর ইফানের কথা…”
ঐশ্বর্য কথাটুকু শেষ করতেও পারল না। প্রেম মাঝপথে বলল,
“ইফানের ডে’ড বডি পাওয়া গেছে। আমার অনুপস্থিতিতে সকলে তার অন্তিম কাজ সেড়েও ফেলেছে। পুলিশ পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কিছু খুঁজেও পায়নি। পাওয়ার কথাও নয়। আর তুমি ইফানের হ’ত্যাকারীকে সেই শাস্তি দিয়েছো যেটা ওর যোগ্য। তবুও কেন তোমার মন থেকে এই বিষয়টা সরছে না? আমি জানি তোমার মনে অনুশোচনা হচ্ছে। বাট লেট মি ক্লিয়ার, আমার রাণী সাহেবা সবসময় সঠিক বিচার করে। সেও ইফানকে ন্যায় বিচার পাইয়েছে। এখন এসব কথা বাদ দাও।”
ঐশ্বর্য সেই বিষয়ে আর কোনো কথা বলে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রেমের কাঁধে মাথা রাখে। প্রেম আরো আগলে নেয় তাকে। অন্যহাতে পকেটে হাত দিয়ে হঠাৎ করে একটা গোলাপ ঐশ্বর্যের সামনে তুলে ধরে বলে,
“দ্যাটস্ ফর ইউ মাই কুইন!”
চমকে উঠে সোজা হয়ে বসে ঐশ্বর্য। ফ্যালফ্যান করে চেয়ে আনন্দিত হয়ে বলে,
“ব্লু রোজ! আমার সবথেকে প্রিয়।”
“অনেকদিন পর অফিসে গিয়েছিলাম। আসার পথে মনে পড়ল এই ফুলটার কথা। আরো একটা জিনিস আছে। ওয়েট!”
কাউচ থেকে উঠে যায় প্রেম। ড্রেসিংটেবিল থেকে কিছু একটা নিয়ে এসে ঐশ্বর্যের মাথায় পড়িয়ে দিতেই ঐশ্বর্য হাতটা নিজের মাথায় হাত রাখল। কোঁকড়ানো চুলের ওপর যে ফ্লাওয়ার ক্রাউন অনুভব করতেই প্রেম বলে উঠল,
“ইউ লুক লাইক ফেইরি কুইন। মাই ফেইরি কুইন।”
ঐশ্বর্য মিষ্টি করে হাসে। তার হাসিতে যেন ঝরছে মুক্ত। হাসতে বাঁধা পড়ে তার। পর্দা এসে পড়ে মুখের ওপর। মুখটা কুঁচকে আসে। বিরক্ত হয়ে বড় পর্দা সরাতে থাকে। তখনি প্রেম একটানে তার মুখের ওপর থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়ে মূহুর্তেই ওষ্ঠদ্বয় ঠেকায় ঐশ্বর্যের কোমল গালে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ লাগে ঐশ্বর্যের গালে। চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকে সে। থামেনা সেখানে প্রেম। আস্তে আস্তে অন্য গালেও অবিরাম ঠোঁট দ্বারা মৃদু স্পষ্ট দিতে থাকলো সে। প্রেমের গলার কলার খামচে ধরে ঐশ্বর্য। প্রেম সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মুচকি হেঁসে বলে,
“আজকাল লাল হয়ে যাও কেন?”
ঐশ্বর্য চোখ গরম করে তাকাতেই প্রেমের হাসি প্রসারিত হয়। তৎক্ষনাৎ নিজেই উত্তর দেয়,
“আগে তো আমার ভালোবাসা পেতে ছটফট করতে। নিজের মাথাও নিজেই পরিকল্পনা করে ফাটি’য়েছিলে যাতে আমি তোমার কাছে আসি। এখন যখন ভালোবাসতে শুরু করি তখন যেন পালাতে পারলে প্রা’ণটা বাঁচে তোমার!”
এবার হকচকিয়ে ওঠে ঐশ্বর্য। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকায়। আর প্রশ্ন করে ওঠে,
“আ…আপনি করে জানলেন এসব?”
প্রেম নিজের বুকে দুটো হাত জড়িয়ে রেখে সহজভাবে উত্তর দিয়ে বলল,
“ইনায়া আর সানিয়া বলেছে!”
রাগে কিড়মিড় করে উঠল ঐশ্বর্য। আসলে এদের পেটে আদেও কোনো কথা থাকে না। সবসময় কথা বলতেই হবে। আর প্রেমকে পেয়ে সব কথা উগড়ে দিয়েছে। প্রেম আবারও কিছুটা কড়া সুরে বলল,
“নিজে দোষ করে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করছো? মনে তো হচ্ছে এখনি নাগিনীর মতো ওদের গিয়ে ছোবল মারবে।”
এবার চোখ দুটো সরু হলো ঐশ্বর্যের। প্রেম শব্দ করে হেঁসে বলল,
“দারুণ একটা বউ পেয়েছি। অল ইন ওয়ান! কখনো রাগিনী, কখনো রাজকুমারী, আবার কখনো লজ্জাবতী। সবশেষে নাগিনীও!”
গাল দুটো ফুলে ওঠে ঐশ্বর্যের। ঐশ্বর্য অনেকদিন পর শাড়ি পড়েছে। লাল রঙের জরজেট শাড়ি। গোল্ডেন পাড়। কানের দুলটা চকচক করছে। হাতে সামান্য চুড়ি। কোঁকড়ানো চুলগুলো ঢেউ খেলাতে ব্যস্ত। কিছু একটা ভেবে ঐশ্বর্যের আঁচলটা ধরে তার মাথার ওপর আঁচলটা তুলে দিতেই উৎসুক নয়নে তাকালো ঐশ্বর্য। প্রেম বলল,
“ওহে সুন্দরী! তোমার এই ঐশ্বর্যের হারাতে আমি জীবন বাজি রাখতেও রাজি।”
ঐশ্বর্য হেঁসে ফেলে। নিচু সুরে বলে,
“জীবন বাজি রাখতে হবে না। কারণ সে আপনারই!”
প্রেমের গান গাইতে ইচ্ছে করল খুব। ঐশ্বর্যের চিবুক ধরে গেয়ে উঠল,
“Baadalon ki tarah hi toh
Tune mujhpe saaya kiya hai
Baarishon ki tarah hi toh
Tune khushiyon se bhigaya hai
Aandhiyon ki tarah hi toh
Tune hosh ko udaaya hai…”
লোকটার মোটা কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়েছে। কিছুটা মিষ্টি শোনাচ্ছে তার গান। ঐশ্বর্য জিজ্ঞেস করে ওঠে,
“আপনি তো গান গান না। হঠাৎ আজ?”
“নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার যে চাপা উত্তেজনা সেটা তুমি বুঝবে না রাণী সাহেবা। কারণ তুমি যেকোনো কথা হুট করেই প্রকাশ করতে জানো। আমি জানি না। আমার মনে তোমার প্রতি যে উন্মাদনা! সেই পাগলাটে অনুভূতিগুলো আমায় শান্তি দেয় না। শুধু চায় তোমায় টানতে!”
ঐশ্বর্য প্রেমের দুটো গালে আলতো করে হাত রাখে। লাজুক হেঁসে বলে,
“আপনি আমার ইন্ট্রোভার্ট প্রেমিক!”
প্রেম মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তাই?”
ঐশ্বর্য হ্যাঁ বোধক মাথা ঝাঁকাতেই তার মাথায় আঁচলটা দিয়ে ঘোমটা আরো লম্বা করে। সেই আঁচলের নিচে ঢুকে পড়ে। তার ঠোঁটের কোণে আলতো স্পর্শ করে বলে,
“লেটস সি দ্যাট তোমার ইন্ট্রোভার্ট প্রেমিক কতটা রোমান্টিক!”
ঐশ্বর্যের গলা শুঁকিয়ে আসে। ধকধক করে ওঠে বুকের ভেতরটা। প্রেম কাছে আসতে থাকে। তার স্পর্শগুলো গভীর হতে থাকে। সূচনা হয় এক অন্য প্রেমের অনুরক্তির! যেখানে দুজনের মাঝে কেউ নেই। তাদের সাজানো সেই সুন্দর জগতে একমাত্র তারাই!
অনেকটা সময় পেরিয়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছু বদলেছে। বদলেছে পৃথিবী! আকাশের রঙটা তবুও তেমনই রয়ে গেছে। অদ্ভুত প্রশান্তির রঙ নীল! তবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে তখনও শান্তি ছায়া। একঝাঁক পাখি উড়ে গেল নদীর পাড় থেকে। নদীর পানির রঙটাও রয়ে গেছে কাঁচের মতো স্বচ্ছ। নদী থেকে বেশ খানিকটা দূরে অ’স্ত্র চালনা শেখানো হয়। যুদ্ধের কৌশল শেখানো হয়। সেখানে জমেছে প্রচন্ড ভীড়। সকলে হা করে চেয়ে রয়েছে ময়দানে। নির্দিষ্ট পোশাক পড়ে মুখোমুখি হয়েছে দুজন। একজন নারী আরেকজন পুরুষ। ঠিক নারী বললে ভুল হবে। সে কিশোরী! টানা টানা তার চোখে তখন শুধু সামনের জনকে পরাজয় করার তৃষ্ণা। কি তীক্ষ দৃষ্টি তার সুন্দর চোখে! ফোলা গালে উড়ে এসে পড়ছে বেঁধে রাখা সত্ত্বেও ছোট চুল। ঘন্টা পড়তেই পুরুষটি তলো’য়ার হাতে এগিয়ে এলো কিশোরীর দিকে। তৎক্ষনাৎ সে দিল এক লাফ। তলো’য়ার চালনা ব্যর্থ হলো তার প্রতিপক্ষের। এরপর সেই কিশোরী তলো’য়ার ঘুরিয়ে নিজেও লাফ দিয়ে ঘুরে পুরুষটির গলার কাছে ধরতেই তলো’য়ার পড়ে যায় পুরুষটির হাত থেকে। অর্থাৎ সে ইতিমধ্যে পরাজিত! কিশোরীর মুখে ফুটে ওঠে হাসি। চিকন ঠোঁট যেন কারো অনুরূপ! তার হাসিতে যেন বাতাসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে প্রশান্তি। সকলে জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠে। জয়ধ্বনি শেষ হওয়া মাত্রই তার ডাক পড়ে। ভীড় থেকে রাস্তা তৈরি হয়। সেখানে পদার্পণ ঘটে কারোর। ডাক শুনে কিশোরী ঘুরে তাকায়। ডাগরডাগর নীলাভ চোখে দৃষ্টিপাত করে কাঙ্ক্ষিত জনের দিকে।
“পুনম!”
চলবে….
[বি.দ্র. বিশাল বড় একটা পর্ব। লিখতে বেশ সময় লাগিয়েছি। আরো আগে দিতে পারতাম। তবে চারিপাশে এতো খারাপ খবর দেখে হাত চলছিল না। আল্লাহ্ সহায় হোক! ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]
লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?
#আনিশা_সাবিহা
শেষ পর্ব (প্রথমাংশ)
সকলে যখন খুশি মনে জঙ্গলের সেই স্থানটি ত্যাগ করল তখন আড়ালে থাকা কেউ একজন বেরিয়ে এলো। বড় এবং প্রশস্ত গাছের শিকড়ের সাথে পায়ে আঘাত লাগলে উল্টে পড়তে নিলেও নিজেকে সামলে নিল সে। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া সেই ডেভিল রাজ্যের সামনে। সেই প্রবেশদ্বারের সামনে। প্রবেশদ্বার ভেঙে তিন টুকরো হয়েছে। সেই ভাঙা প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রায় ধ্বংস হওয়া রাজ্যে প্রবেশ করল সে। চারিপাশে শুধু আগুন জ্বলছে। সেই তাপ তাকে স্পর্শ করতেই চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। তাপ সহ্য করতে পারছে না সে। তবুও কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেল সে। প্রাসাদ থেকে আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যে এসেছে। সবটা পু’ড়ছে। সে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠল,
“হাহ! এরা নাকি আবার ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেসকে ডেভিল কুইন বানাবে। সামান্য মানুষের সাথে পেরে উঠল না। নিজেরাই পু’ড়ে ছারখার হয়ে গেল! পরিকল্পনা সব ভেস্তে গেল। যত্তসব মূর্খের দল।”
জঙ্গলের গাছগাছালি পেরিয়ে এগিয়ে যেতেই তার চোখে তীব্র রশ্মি লাগল। হাত দিয়ে আগলে নিল তার দুটো চোখ। হাতের আঙ্গুল একটু ফাঁক করে দেখতে চাইলো এই রশ্মির উৎস। আগুনে জ্বল’ছে সেই স্থান। কিন্তু সবখানে আগুন লেগে গেলেও বাদ রয়েছে একটি জায়গা। সেখান থেকেই বের হচ্ছে রশ্মি। কোনোমতে পানি জোগাড় করে দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করল সে। দৃশ্যমান হলো অগ্নি তলো’য়ার। কি সুন্দর দেখতে! চকচক করছে। সুচালো তার মাথা। সেটা হাত দিয়ে তুলে নিল সেই আগন্তুক। এই তলো’য়ার একবার ঘুরিয়ে নিল সে। চোখজোড়া সবুজ হয়ে উঠল তার। আপনমনে বলে উঠল,
“কাজের জিনিস পেয়েছি! এটা দিয়েই তো এবার শুরু হবে আসল খেলা।”
সময় বহমান। কারো চোখের নিমিষে কেটে যায়। আবার কারো কাটতেই চায় না। যাদের জীবন তিক্ত হয়, যারা দ্রুত সময় পেরিয়ে নিয়ে যেতে চায় তাদের সময় এগোয় না। আর সুখময় জীবনের সময় যেন তাড়াতাড়ি এগোয়। এটাই হয়ত নিয়ম!
ঠিক দশ দিন এবং দশটা রাত পেরিয়ে গিয়েছে। প্রেম ও ঐশ্বর্যের কাছে নিমিষে কেটেছে। ভালোবাসাময় হয়ে উঠেছিল প্রতিটা মূহুর্ত! সেই মূহুর্ত হৃদয়ের কুটিরে বন্দি করা। যত্ম করে তুলে রাখা।
পূর্ণিমার রাত। এই রাতে ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি বাড়ে। পূর্ণ চাঁদের আলোয় শক্তি দ্বিগুন হয়। রূপালী চাঁদ যেন আকাশ থেকে নেমে ধরা দিয়েছে ভ্যাম্পায়ার কিংডমে। তখন প্রাসাদে হুলস্থুল কান্ড! রাজসভায় জমজমাট আয়োজন। সকলে মিলে হাত লাগিয়ে সভা সাজাচ্ছে। বড় বড় জানালার পর্দা তুলে দিতেই সভায় চাঁদের আলোয় যেমন আলোকিত কচ্ছে ঠিক তেমনই স্বর্ণের মতো প্রাসাদে প্রবেশ করছে জোনাকির দল। রাজসভার পরিবেশ আরো শান্তিপ্রিয় করে তুলে চলেছে। মাধুর্য গুনে গুনে সকলের কাছে গিয়ে দেখছে সকলে ভালো করে পর্দা উঠিয়ে জানালা খুলে দিচ্ছে কিনা। তার শরীর আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। আগের মতোই হয়ে উঠেছে ছটফটে। চনমনে স্বভাবের। দ্রুত চোখের পলকেই হেঁটে যাচ্ছে। পেছন পেছন ছুটছে অনুভব। তার শান্তি নেই। এই চঞ্চলিনীকে থামানো যাচ্ছে না। পরণে ইয়া বড় একটা লম্বা বেগুনি পোশাক পড়েও কিভাবে ছুটছে সে। অবশেষে মাধুর্য গিয়ে থামলো একজায়গায়। তবুও ফুলের ডালা নিয়ে পানির মধ্যে ফুলগুলো আর প্রদীপ মতো আলোর মাটির জিনিসটিকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে উঠল। অনুভব ধীর পায়ে গিয়ে মাধুর্যের ঠিক সামনে দাঁড়াল। মাধুর্য তখনও ব্যস্ত! অনুভব এবার হালকা কেশে অসহায় গলায় বলে উঠল,
“এইযে রাজ্যের রাণী, মনের রাণী! আমার দিকে একটু তো তাকাও। এইযে তোমার সামনে থাকা এই ব্যক্তিটি জন্য কত মনোযোগ দিয়ে তৈরি হয়ে এসেছে। রাণীর চোখ যে তবুও পড়ছে না! এই প্রজার দিকে তাকিয়ে একটু ধন্য করো।”
পানির প্রদীপে আগুন জ্বালিয়ে কড়া দৃষ্টিপাত করল মাধুর্য। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলল,
“ওই মেয়ের সাথে এতো কথা বলার কি আছে? ওকে বুঝি এই রাণীর থেকে বেশি সুন্দর লাগছিল?”
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল অনুভব। ভ্যাবাচেকা খেয়ে উল্টো প্রশ্ন করল,
“কোন মেয়ে?”
“ভুলে গেছেন নাকি নাটক করছেন? ওইতো রাজসভা থেকে বেরিয়ে ছোট বারান্দার দিকে।”
অনুভব মনে করার চেষ্টা করে। মনে পড়তেই মাথা নাড়িয়ে হতবাক হয়ে বলে,
“ওহ ওই মেয়ে? আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল। অন্য কিছু না।”।
“শুধু সাহায্য? কি যেন বলছিল! ও হ্যাঁ এতো বছর হয়ে গেল আপনি এখনো দেখতে সেই যুবক প্রিন্স চার্মিং ই আছেন। এখনো আপনার ওই নীল চোখের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সেই কালে ফিরে গিয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি! এগুলো সাহায্য চাওয়ার নমুনা?”
এবার কপালে হাত চলে যায় অনুভবের। মাধুর্য রাগে কটমট করে সেখান থেকে গটগট করে হেঁটে সরে আসে। অনুভব কিছুটা চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
“এতে আমার কি দোষ? আমি তো ওকে কোনো কমপ্লিমেন্ট দিই নি। মাধু! ও মাধু!”
মাধুর্যের পেছন ছুটতে থাকে অনুভব। কি একটা বিপদ!
সুন্দর কারুকার্যে সাজানো কক্ষ। বড় একটা পালঙ্কের পাশে জ্বলছে আগুনের আলো। সাদা পর্দার আস্তরণ দিয়ে ঢাকা বড় জানালাটি। বাম পাশে ঝুলিয়ে রাখা দুটো তলো’য়ার। কক্ষে থাকা সুদর্শনীর হাতে দাসীরা পড়িয়ে দিল সাদা রঙের বড় পাথরের আংটি। তৈরি হওয়া তার শেষ। দাসীদের হাত দিয়ে ইশারা করতেই মাথা ঝুঁকে বেরিয়ে পড়ল তারা। রূপবতী সেই কন্যা ধাবিত হলো জানালার দিকে। দুহাতে সাদা ধবধবে পোশাকটা ধরে এগিয়ে এসে পোশাক ছেড়ে দুদিকে জড়িয়ে দিল সাদা পর্দা। বেরিয়ে পড়ল আকাশ। চকচক করছে কতগুলো তাঁরা। চাঁদ এখনো ঢাকা। সঠিক সময়ে দেখা দেবার পরিকল্পনা করছে হয়ত। আকাশের পানে চাইতেই তার নেত্র যুগল হয়ে এলো সবুজ। চোখ বুঁজে স্বাভাবিক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বড় আয়নার দিকে তাকালো সে। আয়নার কাছে এসে দাঁড়াল। স্বচ্ছ এক রাজকন্যার ন্যায় দেখাচ্ছে। যার প্রতিটা অঙ্গে শুভ্রতার ছোঁয়া। তার হাতটা আয়নায় দিতেই হঠাৎ সে পাল্টাতে লাগল। ভ্রু কুঁচকালো সে। প্রতিচ্ছবিতে যখন তার পরনে পোশাক কালো এবং মাথা থেকে পা অবধি কালোর ছোঁয়া দেখতে পেলো তখন বুঝে নিল সে। স্মিত হাসলো। তবে তার প্রতিচ্ছবিতে হাসি নেই। এই ঘটনা আজ নতুন নয়। এর আগেও ঘটেছে। আজ সে নিজে মুখ খুলে বলল,
“আমি বেছে নিয়েছি আমার অস্তিত্ব। আমি বেছেছি আমার ভালোবাসা। আর ধ্বংস করেছি চির জীবনের মতো তোমায় ডেভিল কুইন ঐশ্বর্য!”
কথাটা বলা মাত্র প্রতিচ্ছবি আবারও বদলাতে শুরু করে। তার সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে এবার। ঐশ্বর্যের হাসি প্রগাঢ় হতেই সেই প্রতিচ্ছবি আবারও তাকে হতভম্ব করে দিয়ে বলে ওঠে,
“হ্যাঁ ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য তুমি ঠিকই বলেছো। অবশেষে তুমি নিজের আসল অস্তিত্ব বেছেই নিয়েছো। সবশেষে তুমি এই রাজ্যের রাণী হতে চলেছো। ভ্যাম্পায়ার ক্রাউন তুমি এবং তোমার স্বামীর মাথায় উঠতে চলেছে। অভিনন্দন তোমায়। জিতে গিয়েছো! তবে এটা মনে রেখো। এটা তোমার শেষ জিত নয়। আরো জিততে হবে। আরো লড়াই করতে হবে। এই রাজ্যের জন্য। আর আমি জানি তুমি তোমার অর্ধাঙ্গের হাত ধরে সফলভাবে জিতবে।”
প্রতিচ্ছবি কথা বলা সমাপ্ত করতেই তার ওপর হাত রাখলো ঐশ্বর্য। মুখটা মলিন হলো। সেও তার প্রতিচ্ছবিকে কিছু কথা বলতে চাইলো তবে হলো না। এই প্রতিচ্ছবি এখন জড়ো তে পরিণত হয়েছে। তখনি দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে পিছু ফিরে তাকালো ঐশ্বর্য। মাধুর্য এসেছে। মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে তার চিবুক ধরে মুগ্ধ হয়ে বলল,
“কারো নজর না লাগুক।”
বলে তার চোখের নিচ থেকে কাজল নিয়ে ঐশ্বর্যের কানের পিঠে লাগিয়ে ঐশ্বর্যের চিবুক ছুঁয়ে নিজের হাতে চুমু খেয়ে নিল। তারপর ঝটপট করে বলল,
“তাড়াতাড়ি রাজসভায় এসো। সময় নেই আর হাতে। চাঁদ দেখা দিল বলে! এলিনা সহ মৌবনি আর শার্লিও তোমায় নিতে আসবে। আমার নিচে কাজ আছে। তুমি এসো।”
মাধুর্য তাড়াহুড়ো করে যেতে নেয়। তবে তার হাত ধরে আটকায় ঐশ্বর্য। পিছু ফিরে দেখে ঐশ্বর্যের বড় বড় অক্ষিকোটরের নিষ্পলক দৃষ্টি। কথায় বলে মায়েরা নাকি সন্তানের মন ও চোখের ভাষা খুব সহজে পড়তে পারে! মাধুর্য থমথমে সুরে জানতে চাইল,
“কিছু বলবে তুমি?”
কথাটা বলতেই ঐশ্বর্য বসে পড়ে বিছানায়। কিছু না ভেবে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে,
“মা আমি এই রাজ্যের দায়িত্ব নিতে চাই না।”
চকিতে তাকায় মাধুর্য। কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকে পরিবেশ মাধুর্য নিস্তব্ধতা কাটিয়ে প্রশ্ন করে,
“হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন ঐশ্বর্য? আজ তোমার আর প্রেমের অভিষেক। প্রেম তোমার জন্য নিজের স্বাভাবিক জীবন ত্যাগ করে এই রাজ্যের দায়িত্ব নিতে চাইছে। তুমি কেন চাইছো না?”
“আমি ওই মুকুটের যোগ্য নই মা। ওই মুকুটের যোগ্য তুমি। যে সারাজীবন এই রাজ্য আর প্রজাকে এতো সুন্দর ভাবে রক্ষা করে এসেছে। অন্যদিকে আমি কি করেছি? নিজের রাজ্যকে সহ্য করতে পারিনি। নিজের এই অস্তিত্ব প্রাণপণে বিনাশ করতে চেয়েছি। এমনকি নিজের রাজ্য আর এইসব প্রজাদের ধ্বংস করতেও চেয়েছি একটা সময়। কি করে তবে আমি এসবের যোগ্য হতে পারব? এই দায়িত্ব দিও না আমায়।”
মাধুর্য বুঝতে পারে ঐশ্বর্য কি বোঝাতে চাইছে। বড় একটা শ্বাস নিয়ে ঐশ্বর্যের চিন্তিত মুখের দিকে তাকায় সে। তার মাথায় হাত রাখে। আর শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
“তুমি সেসব করেছো কারণ তুমি নিজের মাঝে ছিলেই না। তোমার মধ্যে তখন অন্য এক শক্তি বেড়ে উঠছিল। তুমি তখন নিজের ঘোরে ছিলে না। আচ্ছা একটা রাজা বা রাণীর সবথেকে বড় সার্থকতা কি জানো?”
“কি?”
কৌতুহল ভরা নয়নে মাধুর্যকে জিজ্ঞেস করে ঐশ্বর্য। মাধুর্য আনমনে বলে,
“নিজের রাজ্যকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমস্ত সীমা অতিক্রম করে রক্ষা করা। আর তুমি সেটা করেছো। নিজেকে সেই সীমানায় নিয়ে গেছো। আর কি চাই? একজন যোগ্য রাণী হয়ে উঠেছো তুমি নিজের অজান্তে। সাথে প্রেমও।”
ঐশ্বর্যের মাঝে কেমন যেন আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে। নিজের প্রতি স্বস্তি আসে। অপ্রস্তুত হাসি আসে। মাধুর্যও এমন কান্ডে হেঁসে বলে,
“রাজ্যের সকলে নতুন ভ্যাম্পায়ার কিং আর কুইনের অপেক্ষায়। দ্রুত এসো।”
রাজসভায় একদিকে আগমন ঘটে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্যের। অন্য প্রান্তে পদার্পণ ঘটে প্রেমের। প্রজারা ভীড় করেছে। তারা আসা মাত্র দুইদল ভাগ হয়ে তাদের যাবার জায়গা করে দিচ্ছে। ঐশ্বর্যের সঙ্গে আসছে মাধুর্য, শার্লি, এলিনা সহ কিছু মেয়েরা। অপরদিকে প্রেমের সঙ্গে আসছে অনুভব, ইলহান সহ কিছু ছেলেরা। দুজন সামনাসামনি হয়। মাথা উঠিয়ে তাকায় ঐশ্বর্য। চোখটা ভরে যায় সামনের মানুষটিকে দেখে। পরনে রাজ পোশাক! নতুন রূপে যেন নতুন প্রেমে পড়ল ঐশ্বর্য। অপলক তার ডাগরডাগর চোখের চাহনি। বিরবির করে বলে উঠল,
“আমার আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মি. আনস্মাইলিং!”
ঐশ্বর্যকেও আগে কখনো এই রূপে দেখে প্রেম। এ যেন সত্যিই এক ভিনদেশের রাজকন্যা! যার প্রতি আসক্তি বাড়তেই থাকে কমে না। তারা দুজনেই উঠে দাঁড়ায় সিঁড়ি বেয়ে। খুশিতে সকলের হেঁসে ওঠে তাদের দেখে। মাধুর্য ও অনুভবও উঠে আসে। তখনি জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠে সকলে।
“জয় হোক আমাদের কিং এর! জয় হোক কুইনের।”
তাদেরকে ইশারায় থামতে বলে অনুভব। স্মিত হেঁসে বলে,
“সকলকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এতোটা ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। আমি জানি না আমি কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি এই রাজ মুকুটের। আর আমার রাণীই বা কতটুকু পেরেছে। তবে আজ থেকে দায়িত্ব থেকে বিরতি নিলাম। আজ আমার আনন্দের দিন। আমার মেয়ে এবং আমার মেয়ের স্বামী আমার জামাই প্রেম! যে মানুষ সকলেই জানে তবুও সে এই ভয়ানক দায়িত্ব পিছায় নি। এরা দুজন এখন থেকে আপনাদের সুখদুঃখে পাশে থাকবে। আর আমি এটাও জানি তারা তাদের দায়িত্ব শেষ র’ক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পালন করবে।”
সকলে আবারও জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল। তাদের ওপর ফুলের বর্ষণ ঘটলো। প্রেম কৌশলে ঐশ্বর্যের কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। ঘাড় একটু কাঁত করে ফিসফিস করে বলল,
“আবারও এই শুভ্র নারীর প্রেমের নতুন করে পড়লাম। তুমি যেন সেই স্নিগ্ধ এবং সদ্য ফোঁটা সাদা গোলাপ যাকে নিজের বুকের সিন্দুকে লুকিয়ে রাখলে তবেই শান্তি হতো!”
ঐশ্বর্য মুখ নিচু করল। স্নিগ্ধ মুখে ফুটল সেই আভা। প্রেম আবারও বলল,
“আর কতটা পাগল বানাতে চাও আমায়?”
“যতটা আপনি আমাকে বানিয়েছেন!”
প্রেম প্রতিত্তোরে ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে উঠল।
এলো সেই মূহুর্ত! সেই ক্ষণ! অনুভব প্রেমের কাছে গিয়ে বলল,
“প্রেম। যাও তোমার সিংহাসন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
প্রেম মাথা নিচু করে ঝাঁকায়। আস্তে করে হেঁটে যায় সিংহাসনের দিকে। অনুভব তাকে ইশারা করে, আস্বস্ত করে। হাত-পা কাঁপছে প্রেমের। কত বড় দায়িত্ব! সেই সিংহাসনে তাকায় একবার। ঢক গিলে সবার দিকে চেয়ে বসে পড়ে সোজা হয়ে রাজ ভঙ্গিতে। জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠে প্রেমের নামে। খুশিতে হুল্লোড়ে ভরে যায়। অনুভবও এগিয়ে আসে। তার মাথায় থাকা রাজ মুকুট তুলে নিয়ে প্রেমের মাথায় বেঁধে দিতেই চাঁদের আলো স্পর্শ করে তাকে। যেন প্রেমের আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। তার হাসিতে আস্বস্ত হচ্ছে সকলে। প্রেম ঐশ্বর্যের দিকে উৎসুক নয়নে তাকায়। ঐশ্বর্যও হাসছে। বেশ খুশি এবং আনন্দিত সে। সেও খুশি হয়।
এবার মাধুর্য ঐশ্বর্যকে ইশারা করে। ঐশ্বর্য কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে আসে। সিংহাসনের দিকে তাকায়। স্বর্ণের সিংহাসন। এতোদিন তার মা বসেছে। আজ তার পালা! মাধুর্য তার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“যাও! আজ থেকে ওটা তোমার অধিকার।”
বড় বড় শ্বাস ফেলে এগিয়ে আসে ঐশ্বর্য। সিংহাসনে হাত রেখে ছুঁয়ে দেখতেই বসে পড়ে সে। সকলে উল্লাসে বিভোর হয়ে ওঠে। মাধুর্যের দুচোখ ভরে যায়। সে পেরেছে! তার মেয়েকে তার মতো গড়ে তুলতে পেরেছে। খুশিতে চোখে অশ্রু ভাসতে থাকে। এগিয়ে যায় তার মাথা থেকে হাতে মুকুট নিয়ে। মনোমুগ্ধকর সেই মুকুট নিয়ে ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে থামলো মাধুর্য। প্রেমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার একটা ইচ্ছে আছে। সেটা হলো ঐশ্বর্যকে মুকুট তার অর্ধাঙ্গ পড়াবে। #প্রেমের_ঐশ্বর্য হয়ে উঠুক সে।”
প্রেম কিছু বলতে চাইলো। তাকে বলতে দেওয়া হলো না। অনুভব তাকে যেতে বলল। প্রেম উঠে দাঁড়াল। তার হাতে ধরিয়ে দিল মুকুট। উত্তেজনা নিয়ে এগোল ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে। প্রেম কাছে আসতেই চোখ বুঁজে মাথা এগিয়ে দিল সে। তার মাথায় রাখা হলো সেই মুকুট। ঐশ্বর্যের কর্ণকুহরে ভেসে উঠল প্রেমের বলা কথা।
“জয় হোক আমার রাণী সাহেবার!”
আশ্চর্য রশ্মি ধারণ করল সেই মুকুটে। ছড়িয়ে পড়ল চাঁদের আলো। জোনাকিরাও যেন চারিদিকে নিজের আনন্দে আলো ছড়াতে লাগল। চারিদিকে শুধু আনন্দ আর উত্তেজনা!
শেখ মেনশন! অন্ধকার ঘর। পূর্ণিমার চাঁদের আলো অন্যরকম স্নিগ্ধতা সৃষ্টি করেছে ঘরে। এখানেও আজ পূর্ণিমা। কত সুন্দর চাঁদ। চাঁদকে একনাগাড়ে চেয়ে দেখছে ঐশ্বর্য। মাঝে মাঝে তার রূপটা ফুটে উঠছে। তবে সে আজ লুকাতে ব্যস্ত নয় নিজেকে। বরং তুলে ধরেছে প্রকৃতির সামনে। সকলের সামনে। সে যখন গভীর ভাবনায় মত্ত তখন তার মাথায় হাত রাখলো কেউ। ঐশ্বর্যের মন বুঝতে বিলম্ব করল না মানুষটি কে! তাই কোনো হেলদোল দেখা গেল না তার মধ্যে। মানুষটির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“চাঁদ কত সুন্দর না? অদ্ভুত সুন্দর! প্রতিদিন নতুন নতুন রূপ দেখায়।”
“কোন চাঁদের কথা বলছো? ওই প্রকৃতির আকাশের চাঁদ? নাকি আমার আকাশের চাঁদ?”
এবার ঘাড় ঘুরিয়ে কিছুটা উচ্ছ্বাসের সাথে তাকায় ঐশ্বর্য। প্রেমের ঠোঁটের কোণে তখন মুচকি হাসি। ঐশ্বর্যের সাথে ঘেঁষে কাউচে বসে পড়ে সে। একহাতে ঐশ্বর্যকে আগলে বলে,
“আমি তো সবসময় আমার আকাশের চাঁদ দেখতে ব্যস্ত থাকি। তাই প্রকৃতির চাঁদ দেখার সময় পাই না। তারই যত রূপ! সুযোগ পাব কোথায়?”
ঐশ্বর্য এবার কপাল কুঁচকে বলে,
“যত রূপ?”
“ইয়েস মাই এ্যাংরি বার্ড।”
“শ্বাশুড়ি আন্টিকে আমার কথা জানিয়েছেন? বা ভ্যাম্পায়ার কিংডমের কথা?”
এবার বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে জিজ্ঞেস করল ঐশ্বর্য। প্রেম তখন নীরব। কিছুটা চুপ থেকে উত্তর দিল,
“সেটাই বুঝতে পারছি না। এসব কথা বললে মা কেমন রিয়েক্ট করবে! বিশ্বাস করবেই কিনা। আর কিভাবেই বা বলব কিছুই মাথায় আসছে না।”
ঐশ্বর্যের মুখ তখন ভার হয়ে আসে। থমথমে সুরে বলে,
“তাদের তো ধারণাও নেই এই সম্পর্কে। আর ইফানের কথা…”
ঐশ্বর্য কথাটুকু শেষ করতেও পারল না। প্রেম মাঝপথে বলল,
“ইফানের ডে’ড বডি পাওয়া গেছে। আমার অনুপস্থিতিতে সকলে তার অন্তিম কাজ সেড়েও ফেলেছে। পুলিশ পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কিছু খুঁজেও পায়নি। পাওয়ার কথাও নয়। আর তুমি ইফানের হ’ত্যাকারীকে সেই শাস্তি দিয়েছো যেটা ওর যোগ্য। তবুও কেন তোমার মন থেকে এই বিষয়টা সরছে না? আমি জানি তোমার মনে অনুশোচনা হচ্ছে। বাট লেট মি ক্লিয়ার, আমার রাণী সাহেবা সবসময় সঠিক বিচার করে। সেও ইফানকে ন্যায় বিচার পাইয়েছে। এখন এসব কথা বাদ দাও।”
ঐশ্বর্য সেই বিষয়ে আর কোনো কথা বলে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রেমের কাঁধে মাথা রাখে। প্রেম আরো আগলে নেয় তাকে। অন্যহাতে পকেটে হাত দিয়ে হঠাৎ করে একটা গোলাপ ঐশ্বর্যের সামনে তুলে ধরে বলে,
“দ্যাটস্ ফর ইউ মাই কুইন!”
চমকে উঠে সোজা হয়ে বসে ঐশ্বর্য। ফ্যালফ্যান করে চেয়ে আনন্দিত হয়ে বলে,
“ব্লু রোজ! আমার সবথেকে প্রিয়।”
“অনেকদিন পর অফিসে গিয়েছিলাম। আসার পথে মনে পড়ল এই ফুলটার কথা। আরো একটা জিনিস আছে। ওয়েট!”
কাউচ থেকে উঠে যায় প্রেম। ড্রেসিংটেবিল থেকে কিছু একটা নিয়ে এসে ঐশ্বর্যের মাথায় পড়িয়ে দিতেই ঐশ্বর্য হাতটা নিজের মাথায় হাত রাখল। কোঁকড়ানো চুলের ওপর যে ফ্লাওয়ার ক্রাউন অনুভব করতেই প্রেম বলে উঠল,
“ইউ লুক লাইক ফেইরি কুইন। মাই ফেইরি কুইন।”
ঐশ্বর্য মিষ্টি করে হাসে। তার হাসিতে যেন ঝরছে মুক্ত। হাসতে বাঁধা পড়ে তার। পর্দা এসে পড়ে মুখের ওপর। মুখটা কুঁচকে আসে। বিরক্ত হয়ে বড় পর্দা সরাতে থাকে। তখনি প্রেম একটানে তার মুখের ওপর থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়ে মূহুর্তেই ওষ্ঠদ্বয় ঠেকায় ঐশ্বর্যের কোমল গালে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ লাগে ঐশ্বর্যের গালে। চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকে সে। থামেনা সেখানে প্রেম। আস্তে আস্তে অন্য গালেও অবিরাম ঠোঁট দ্বারা মৃদু স্পষ্ট দিতে থাকলো সে। প্রেমের গলার কলার খামচে ধরে ঐশ্বর্য। প্রেম সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মুচকি হেঁসে বলে,
“আজকাল লাল হয়ে যাও কেন?”
ঐশ্বর্য চোখ গরম করে তাকাতেই প্রেমের হাসি প্রসারিত হয়। তৎক্ষনাৎ নিজেই উত্তর দেয়,
“আগে তো আমার ভালোবাসা পেতে ছটফট করতে। নিজের মাথাও নিজেই পরিকল্পনা করে ফাটি’য়েছিলে যাতে আমি তোমার কাছে আসি। এখন যখন ভালোবাসতে শুরু করি তখন যেন পালাতে পারলে প্রা’ণটা বাঁচে তোমার!”
এবার হকচকিয়ে ওঠে ঐশ্বর্য। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকায়। আর প্রশ্ন করে ওঠে,
“আ…আপনি করে জানলেন এসব?”
প্রেম নিজের বুকে দুটো হাত জড়িয়ে রেখে সহজভাবে উত্তর দিয়ে বলল,
“ইনায়া আর সানিয়া বলেছে!”
রাগে কিড়মিড় করে উঠল ঐশ্বর্য। আসলে এদের পেটে আদেও কোনো কথা থাকে না। সবসময় কথা বলতেই হবে। আর প্রেমকে পেয়ে সব কথা উগড়ে দিয়েছে। প্রেম আবারও কিছুটা কড়া সুরে বলল,
“নিজে দোষ করে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করছো? মনে তো হচ্ছে এখনি নাগিনীর মতো ওদের গিয়ে ছোবল মারবে।”
এবার চোখ দুটো সরু হলো ঐশ্বর্যের। প্রেম শব্দ করে হেঁসে বলল,
“দারুণ একটা বউ পেয়েছি। অল ইন ওয়ান! কখনো রাগিনী, কখনো রাজকুমারী, আবার কখনো লজ্জাবতী। সবশেষে নাগিনীও!”
গাল দুটো ফুলে ওঠে ঐশ্বর্যের। ঐশ্বর্য অনেকদিন পর শাড়ি পড়েছে। লাল রঙের জরজেট শাড়ি। গোল্ডেন পাড়। কানের দুলটা চকচক করছে। হাতে সামান্য চুড়ি। কোঁকড়ানো চুলগুলো ঢেউ খেলাতে ব্যস্ত। কিছু একটা ভেবে ঐশ্বর্যের আঁচলটা ধরে তার মাথার ওপর আঁচলটা তুলে দিতেই উৎসুক নয়নে তাকালো ঐশ্বর্য। প্রেম বলল,
“ওহে সুন্দরী! তোমার এই ঐশ্বর্যের হারাতে আমি জীবন বাজি রাখতেও রাজি।”
ঐশ্বর্য হেঁসে ফেলে। নিচু সুরে বলে,
“জীবন বাজি রাখতে হবে না। কারণ সে আপনারই!”
প্রেমের গান গাইতে ইচ্ছে করল খুব। ঐশ্বর্যের চিবুক ধরে গেয়ে উঠল,
“Baadalon ki tarah hi toh
Tune mujhpe saaya kiya hai
Baarishon ki tarah hi toh
Tune khushiyon se bhigaya hai
Aandhiyon ki tarah hi toh
Tune hosh ko udaaya hai…”
লোকটার মোটা কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়েছে। কিছুটা মিষ্টি শোনাচ্ছে তার গান। ঐশ্বর্য জিজ্ঞেস করে ওঠে,
“আপনি তো গান গান না। হঠাৎ আজ?”
“নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার যে চাপা উত্তেজনা সেটা তুমি বুঝবে না রাণী সাহেবা। কারণ তুমি যেকোনো কথা হুট করেই প্রকাশ করতে জানো। আমি জানি না। আমার মনে তোমার প্রতি যে উন্মাদনা! সেই পাগলাটে অনুভূতিগুলো আমায় শান্তি দেয় না। শুধু চায় তোমায় টানতে!”
ঐশ্বর্য প্রেমের দুটো গালে আলতো করে হাত রাখে। লাজুক হেঁসে বলে,
“আপনি আমার ইন্ট্রোভার্ট প্রেমিক!”
প্রেম মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তাই?”
ঐশ্বর্য হ্যাঁ বোধক মাথা ঝাঁকাতেই তার মাথায় আঁচলটা দিয়ে ঘোমটা আরো লম্বা করে। সেই আঁচলের নিচে ঢুকে পড়ে। তার ঠোঁটের কোণে আলতো স্পর্শ করে বলে,
“লেটস সি দ্যাট তোমার ইন্ট্রোভার্ট প্রেমিক কতটা রোমান্টিক!”
ঐশ্বর্যের গলা শুঁকিয়ে আসে। ধকধক করে ওঠে বুকের ভেতরটা। প্রেম কাছে আসতে থাকে। তার স্পর্শগুলো গভীর হতে থাকে। সূচনা হয় এক অন্য প্রেমের অনুরক্তির! যেখানে দুজনের মাঝে কেউ নেই। তাদের সাজানো সেই সুন্দর জগতে একমাত্র তারাই!
অনেকটা সময় পেরিয়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছু বদলেছে। বদলেছে পৃথিবী! আকাশের রঙটা তবুও তেমনই রয়ে গেছে। অদ্ভুত প্রশান্তির রঙ নীল! তবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে তখনও শান্তি ছায়া। একঝাঁক পাখি উড়ে গেল নদীর পাড় থেকে। নদীর পানির রঙটাও রয়ে গেছে কাঁচের মতো স্বচ্ছ। নদী থেকে বেশ খানিকটা দূরে অ’স্ত্র চালনা শেখানো হয়। যুদ্ধের কৌশল শেখানো হয়। সেখানে জমেছে প্রচন্ড ভীড়। সকলে হা করে চেয়ে রয়েছে ময়দানে। নির্দিষ্ট পোশাক পড়ে মুখোমুখি হয়েছে দুজন। একজন নারী আরেকজন পুরুষ। ঠিক নারী বললে ভুল হবে। সে কিশোরী! টানা টানা তার চোখে তখন শুধু সামনের জনকে পরাজয় করার তৃষ্ণা। কি তীক্ষ দৃষ্টি তার সুন্দর চোখে! ফোলা গালে উড়ে এসে পড়ছে বেঁধে রাখা সত্ত্বেও ছোট চুল। ঘন্টা পড়তেই পুরুষটি তলো’য়ার হাতে এগিয়ে এলো কিশোরীর দিকে। তৎক্ষনাৎ সে দিল এক লাফ। তলো’য়ার চালনা ব্যর্থ হলো তার প্রতিপক্ষের। এরপর সেই কিশোরী তলো’য়ার ঘুরিয়ে নিজেও লাফ দিয়ে ঘুরে পুরুষটির গলার কাছে ধরতেই তলো’য়ার পড়ে যায় পুরুষটির হাত থেকে। অর্থাৎ সে ইতিমধ্যে পরাজিত! কিশোরীর মুখে ফুটে ওঠে হাসি। চিকন ঠোঁট যেন কারো অনুরূপ! তার হাসিতে যেন বাতাসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে প্রশান্তি। সকলে জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠে। জয়ধ্বনি শেষ হওয়া মাত্রই তার ডাক পড়ে। ভীড় থেকে রাস্তা তৈরি হয়। সেখানে পদার্পণ ঘটে কারোর। ডাক শুনে কিশোরী ঘুরে তাকায়। ডাগরডাগর নীলাভ চোখে দৃষ্টিপাত করে কাঙ্ক্ষিত জনের দিকে।
“পুনম!”
চলবে….