এক ফাগুনের গল্প part 22+23

0
463

এক_ফাগুনের_গল্প
পর্বঃ- ২৩/২৪

বিজন কুমার ঘুমে অচেতন কিংবা অজ্ঞান হয়ে আছে বুঝতে পারছি না, আমি এসেছিলাম তাকে দেখার জন্য কিন্তু এখন মাথার মধ্যে বারবার অর্পিতার কথা এসে যাচ্ছে। উপস্থিত সকলের মধ্যে থেকে একজন আমাকে বললেনঃ-

– বাবা তুমি কি বিজনের পরিচিত? মানে আমরা তো কেউ তোমাকে চিনতে পারছি না তাই জিজ্ঞেস করা, কিছু মনে করো না।

– না না আঙ্কেল কিছু মনে করিনি, অপরিচিত কেউ আসলে তার বিষয় কৌতূহল জাগ্রত হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। আমি আর বিজন একই অফিস চাকরি করি, আমি আজ সকালেই অফিসে গিয়ে জানতে পেরে ছুটে এসেছি।

– লোকটা এবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন, আমি এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পথ জানি না। মাথাটা ঘুরিয়ে পিছনে অর্পিতার দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখি সে মাথা নিচু করে কি যেন ভাবছে।

বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না, মনে মনে ভাবলাম যে ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করে পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়। যেহেতু বিজন ঘুমিয়ে আছে তাই কথা বলার সুযোগ নেই, তারচেয়ে বরং ডাক্তারের সাথে আলাপ করে আসি।

আমি উপস্থিত বয়স্কের দিকে তাকিয়ে বললাম যে আমি ডাক্তার এর সাথে কথা বলে আসি আপনারা একটু শান্ত হয়ে বসুন। চিন্তা করবে না শুধু আশীর্বাদ করেন সেটাই একমাত্র ভরসা।


ডাক্তারের সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পারছি যে অবস্থা বেশি গুরুতর নয়। ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারলে সবকিছু ঠিক হবার সম্ভবনা আছে। তবে মারাত্মক এক্সিডেন্ট এর জন্য অনেকদিন ধরে ভুগতে হতে পারে। আমি বললাম, যদি জীবন টা ফিরে পায় তাহলে তো আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই। অসুস্থ থাকুক সেটা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে, তাই আপনারা একটু আপনাদের নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করবেন।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে পরলাম, কেবিনে যেতে ইচ্ছে করছে না। অর্পিতার বিষয় কৌতূহল টা শেষ করলে ভালো হতো কিন্তু সেই উপায় কোথায়? অর্পিতা যদি আমার সাথে কথা বলতে না চায় তবে তো আরো বেশি কষ্ট পেতে হবে। সে যদি কথা বলতে চাইত তাহলে তো মোবাইলে এতদিন কথা বলতো। কিন্তু যে মানুষ নিজের ইচ্ছায় সবকিছু শেষ করেছে, নিজেকে আড়াল করার জন্য সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তার সাথে কাকতালীয় ভাবে দেখা হলে সেখানে কথা বলতে চাওয়া বোকামি।

আমি আস্তে আস্তে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে আসলাম, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর নামতে লাগলাম। মাঝামাঝি নামার পরে হঠাৎ করে পিছন থেকে ডাক দিল অর্পিতা।

– চলে যাচ্ছ?

– আমি পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি অর্পিতা সিঁড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দিয়ে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু আওয়াজ বের হতে চায় না তাই মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম ” হ্যাঁ চলে যাচ্ছি। ”

– অর্পিতা এবার সিঁড়ি দিয়ে নেমে আমার দিকে এসে বললোঃ- তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

– কি কথা?

– এখানে বলবো?

– তাহলে?

– কোন একটা সাইডে গিয়ে বসি?

– ঠিক আছে।

বারান্দায় রোগীর স্বজনরা বসার জন্য কিছু যায়গায় চেয়ার রাখা হয়েছে। আমরা সেখানে দুটো আসন দেখে বসলাম, আমার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। যদি ওদের পরিবারের কেউ দেখে ফেলে তাহলে হয়তো মনের মধ্যে কৌতূহল জাগ্রত হবে।

– বললাম, যা বলার একটু তাড়াতাড়ি বলো আমাকে অফিসে যেতে হবে।

– আছো কেমন?
– দেখছো যেমন।

– গেছো কি ভুলে?
– পারবো না কোন কালে।

– রাগ কি ভিষণ?
– লাভ কি জীবন?

– আমি ছিলাম নিরুপায়।
– অভিযোগ নেই তায়।

– কষ্ট তোমার অনেক বেশি।
– তবুও কিন্তু মুখে হাসি।

– হাসিটা হয়তো মিথ্যে সৃষ্টি।
– সেদিকেই সবার মূল দৃষ্টি।

– জানতে চাইবে না কেন হারালাম?
– আমি অযোগ্য সেটাই ভেবে নিলাম।

– কিন্তু সেটা সত্যি নয়।
– মানুষের ভাবনাও ভুল হয়।

– তুমিই আমার যোগ্য ছিলে।
– সেজন্যই তো ভুলে গেলে।

– বিশ্বাস করো ভালবাসি আজও।
– ঠকেছি একবার, ঠকবো কি আরও?

– আমাকে কি অনেক ঘৃণা করো?
– পারবো না সেটা জানোতো বড়।

– কিছুদিন আগেই হয়েছে বিয়ে।
– সংশয় নেই সেকথা নিয়ে।

– বিজন আমার বিয়ে করা স্বামী।
– এখানে এসে জানলাম আমি।

– তোমার জীবনটা কষ্টেই গেল।
– জানো তো সবই, কি লাভ হলো?

– দেবে কি আমায় ক্ষমা করে?
– অনেক আগেই দিয়েছি করে।

– দোয়া করিও বিজনের জন্য।
– বলতে হবে না, মন বিষন্ন।

– অনেক কথা বলার ছিল।
– কিন্তু সময় ফুরিয়ে গেল।

– এখনই কি চলে যাবে?
– বসে থেকে কি লাভ হবে?

– আবার কখন আসবে তুমি?
– জানে শুধু অন্তর্যামী।

– ভালো থেকো সবসময়।
– চললাম তাহলে, বিদায়…!

★★

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আর অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না তবুও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাব কি যাব না সেটা ভাবলাম। তারপর অফিসে কল দিয়ে কথা বলে জানালাম যে আমি আজকে অফিসে আর যাবো না। অফিসে কথা বলে রিক্সা নিয়ে আগ্রাবাদ চলে আসলাম তারপর বাসে উঠে বাসার দিকে।

বাসায় যখন আসলাম তখন সবাই মাত্র দুপুরের খাবার খেতে বসেছে। আমাকে দেখে মনে হয় সামান্য অবাক হয়ে গেল, আমি তেমন কিছু না বলে সবাইকে স্বাভাবিক করার জন্য বললামঃ-

– আমাদের অফিসের একটা ছেলে এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি তাই তাকে দেখে সরাসরি বাসায় ফিরে এলাম। তোমরা শুরু করো আমি হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।

” খাবার টেবিলে বসে জানতে পারলাম যে আজকে মোহনা রান্না করেছে। বেলা এগারোটার দিকে মা নাকি জরুরি কাজে বাহিরে গেছিল তখন মোহনা নিজের হাতে রান্না করেছে। মা বারংবার মোহনার রান্নার প্রশংসা করতে লাগলো, তবে আমি ঢাকাতে থাকার সময়ই খেয়েছি তার হাতের রান্না। বড়লোক বাবার কন্যা হলেও সে রান্না করে খুব ভালো করে।

খাবার খেয়ে রুমের মধ্যে বসে আছি তখন মোহনা হাতে করে চায়ের কাপ নিয়ে প্রবেশ করলো। এমন করে বাড়ির কাজ করছে মনে হয় যেন সে কতদিন ধরে এ বাড়িতে বসবাস করে? উচ্চবিত্ত পরিবার হতে এসে এভাবে মিলিয়ে চলতে পারবে সেটা কল্পনার বাইরে ছিল।

– আমার দিকে কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো, চুমুক দিয়ে দেখো তো চিনি ঠিক আছে কিনা?

– তুমি যখন এনেছো তখন ঠিকই আছে।

– অফিসে কিছু হয়েছে নাকি?

– কোই না তো, ও হ্যাঁ হ্যাঁ একটা ছেলে এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে আছে তার জন্য মনটা খারাপ।

– তোমার সাথে কিছু হয়েছে?

– নাহহ।

– বাবার সাথে কথা হয়েছে আমার।

– কি বলে সে?

– বাবা আমার সাথে এমন কঠিন ভাবে কথা বলে যেগুলো আগে কখনো বলে নাই। মনে হচ্ছে আমার বাবা পাগল হয়ে গেছে নাহলে কেন এমন করে?

– টেনশন নিও না সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

– আমার খুব ভয় করছে সজীব।

– কেন?

– তোমাকে যদি হারিয়ে ফেলি? এতটা কাছে এসেও যদি তোমাকে না পাই তাহলে তো বড্ড কষ্ট হবে।

– তা ঠিক।

– চলো না আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করি।

– তারপর?

– তারপর দু’জনেই রাঙামাটি খাগড়াছড়ির কোন একটা জঙ্গলে গিয়ে বাস করবো। নাহলে সন্দ্বীপ বা মনপুরার মতো কোন চরের মধ্যে চলে যাবো যেখানে বাবার হাত পৌঁছবে না।

– আচ্ছা ঠিক আছে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখ সময় হলে যেকোনো সময় চলে যাবো।

– সত্যি বলছো?

– হ্যাঁ।

– বিয়ে করবে কখন?

– খুব শীঘ্রই।

|

সচারাচর বিকেলে কখনো ঘুমাই না, কিন্তু গতকাল রাতে ভালো ঘুম না হবার জন্য ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন মাগরিবের আজান দিচ্ছে চারিদিকে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম, তারপর বাসা থেকে বের হতে চাইলাম

– মোহনা বললো, না গেলে হয় না? আন্টি বাসায় নেই আর তুমিও চলে যাবে?

– অবাক হয়ে বললাম, মা বাসায় নেই?

– না।

– কোথায় গেছে?

– বললো যে তার কোন এক বান্ধবীর বাসায় যাবে ফিরতে দেরি হতে পারে, আর আমি যদি পারি তবে যেন রাতের ভাতটা রান্না করি।

আমি আর বাহিরে না গিয়ে সোজা রুমের মধ্যে চলে গেলাম, ল্যাপটপ বের করে অফিসের কিছু কাজ করার চেষ্টা করা যাক। মোহনা অনেক খুশি হয়েছে, সে আমার পাশে বসে মোবাইল নিয়েই আছে।

মা ফিরে এসেছে সাড়ে আটটার দিকে। রাত পৌনে দশটার দিকে হঠাৎ করে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো। রিসিভ করে জানতে পারি যে, সে আমার ছাত্রী মারিয়া, যার বাবার সুপারিশে আজ মোহনার বাবার সাথে পরিচয়।

– কেমন আছো মারিয়া?

– জ্বি স্যার ভালো, আপনি কেমন আছেন?

– চলছে আলহামদুলিল্লাহ।

– পড়ানো বন্ধ করার পরে আমাকে ভুলেই গেছেন স্যার, চট্টগ্রামে আসলেন কতদিন হয়ে গেল তবুও একদিন আসলেন না।

– মানসিক সমস্যার মধ্যে যাচ্ছি তাই সঠিক ভাবে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই। সরি।

– স্যার একটা কথা বলতে কল দিছি আমি।

– কি কথা?

– আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না স্যার…!

– কি হইছে? পড়াশোনা নিয়ে সমস্যা? কেন তুমি কি নতুন শিক্ষকের কাছে পড়ো না?

– উহু মাথা মোটা স্যার আপনি, আমি বলতে চাচ্ছি যে, যেদিন আপনার মেসেঞ্জার চেক করেছি সেদিন তো লেখা ছিল সানজিদা। কিন্তু স্যার মোহনা কে? তার সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?

– তুমি মোহনার কথা জানলে কীভাবে?

– আজকে আপনার মা আমাদের বাসায় এসেছিল।

– কখন? আর আমার মা’কে তো তোমার চেনার কথা নয়।

– একবার এসেছেন সকালে এগারোটার পরে, আর দ্বিতীয়বার এসেছেন বিকেলে আসরের পরে। সকাল বেলা যখন এসেছে তখন শুধু বাবা আর আপনার মা কথা বলছিলেন। কিন্তু বিকেলে আরেকজন এসেছে তিনি বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

– আমি অবাক হয়ে গেলাম, মারিয়ার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তার মানে মোহনার বাবা নাকি? যদি সত্যি সত্যি মোহনার বাবা এসে থাকে তাহলে সেখানে আমার মা গিয়ে কি করবেন? তাহলে কি মোহনার বাবা আমার মাকে হাতে নিয়ে ফেলেছে? নাকি হাতে নেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে?

চলবে….?

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

এক_ফাগুনের_গল্প
পর্বঃ- ২৪

– বললাম, তোমার বাবার এক বন্ধুর অফিসে আমি চাকরি করতাম, ইনি কি সেই ব্যক্তি?

– তা তো জানি না তবে মনে হয় তিনিই হবেন কারণ তাদের আলোচনা শুনে সেরকমই মনে হচ্ছে।

– সেই লোকটা কি এখনো আছে তোমাদের বাসায়?

– না তিনি চলে গেছেন।

– আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি একটা কাজ করতে পারবে মারিয়া?

– জ্বি বলেন।

– ওই লোকটা পরেরবার যখন আসবে তখন একটু কষ্ট করে আমাকে কল দিতে পারবে?

– ঠিক আছে স্যার, আচ্ছা স্যার একটা কথা বলবো?

– হ্যাঁ বলো।

– মোহনা কে?

– তোমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।

– আপনি তাকে ভালবাসেন?

– এমন প্রশ্ন করা কি ঠিক হচ্ছে?

– আপনার তো আরেকটা গার্লফ্রেন্ড ছিল তাই একটু কৌতূহল হচ্ছে স্যার। বিরক্ত হলে সরি স্যার, মাফ করবেন প্লিজ।

– সময় করে তোমাকে সবকিছু বলবো, তুমি ঠিকমত পড়াশোনা করিও।

– ঠিক আছে স্যার, আসসালামু আলাইকুম।

★★

রাত দশটার মতো বাজে, মোহনার সাথে এখনই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা দরকার। মোহনার বাবার সাথে কথা কাটাকাটি না করে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে সবকিছু করতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন এই বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়া, কারণ মা যদি মোহনার বাবার সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষতি করতে চায় তাহলে তো সব শেষ। মোহনার নাম্বারে কল দিয়ে তাকে এই রুমে আসতে বললাম, মোহনা পলকের মধ্যে এসে উপস্থিত।

– কি হইছে? এত জরুরি তলব? রাতে ঘুমানোর আগে মুখ না দেখে শান্তি লাগে না বুঝি?

– সেটা তো আছেই, তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে তাই ডেকেছি।

– কি কথা?

– আগে বসো তারপর বলছি, মা-বাবা কি করে?

– সবাই টিভি দেখে, আমিও তাদের সাথে বসে গল্প করছিলাম আর তুমি ডাক দিলে।

– আচ্ছা যা বলি মনোযোগ দিয়ে শোনো।

– হুম।

– তোমার বাবা আজকেই চট্টগ্রামে এসেছে, আমার মনে হয় তিনি সকালে বিমানে এসেছে কারণ বাসে করে এত তাড়াতাড়ি আসা সম্ভব না।

– হ্যাঁ বাবা তো বেশিরভাগ সময় চট্টগ্রামে বিমানে করে আসে, আগে এমন হয়েছে। কিন্তু এখন কি সে আমাকে নিতে এসেছে?

– হ্যাঁ, আর তার সাথে সাথে আমাকে শিক্ষা দেবে।

– মানে?

– তোমার বাবার বন্ধু আছে একজন যার মেয়েকে আমি পড়াতাম, সেই বন্ধুর বাসায় এসেছিল। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে তাদের সাথে আমার মা হাত মিলেয়েছে।

– কিন্তু কেন? আন্টির তাতে লাভ কি?

– তুমি জানো না মোহনা, আমার সৎমায়ের টাকার প্রতি অনেক লোভ আছে। তোমার বাবার অফিসে চাকরি পাওয়ার আগে আমি যে কত গালাগালি তার কাছে শুনেছি সেটা বোঝাতে পারবো না। সবসময় শুধু বেকারের জন্য তিরস্কার করতো যেগুলো মনটা খারাপ করে দিতো। আর যেই চাকরি পেলাম তার পর থেকে আমি তার কাছে কত ভালো। আমার মনে হয় তোমার বাবা তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করবেন।

– এখন কি হবে? আমরা তাহলে কি শত্রুর মাঝে বাস করবো নাকি?

– সেজন্য তোমাকে ডাকলাম, আমাদের যা করার সবকিছু একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমার মনে হয় আগামীকালই আমাদের এই বাড়ি ত্যাগ করতে হবে নাহলে বিপদ ঘিরে আসছে।

– তাহলে আগামীকাল সকাল হবার অপেক্ষা না করে আজকে রাতের মধ্যে বেড়িয়ে পরি চলো। যদি কাল সকাল বেলা অন্য কোন বিপদ চলে আসে? একটা রাত কিন্তু অনেক সময় সজীব।

– আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে তো রাস্তায় থাকা যায় না। তুমি বরং রাতে না ঘুমিয়ে জেগে থেকো, আমি ডাকলেই যেন পাই। আর তুমি তোমার যা কিছু নিয়ে আসছো সবকিছু গুছিয়ে তৈরী থেকো। আমি আমার কিছু বন্ধুর সাথে কথা বলে একটা ব্যবস্থা করে তারপর বের হবো।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

★★

মোহনাকে নিজের রুমে রেখে আমি আমার ভাইয়ের রুমে আসলাম, সে ঘুমিয়ে পরেছে। বেলকনিতে গিয়ে যেই বন্ধুর ফ্লেক্সিলডের দোকানে বেশিরভাগ সময় বসতাম তাকে কল দিয়ে সবকিছু বললাম।

– সে বললো, তুই কোন চিন্তা করিস না কেউ কিছু করতে পারবে না।

– না রে দোস্ত এখন তাদের সাথে জোরজবরদস্তি করা যাবে না। গতকাল রাতে রাগের মাথায় অনেক কিছু বলেছি কিন্তু আসল কাজ মাথা ঠান্ডা করেই করতে হবে। তুই আপাতত আমাদের জন্য রাতের ব্যবস্থা কর, আর আমরা বাসা থেকে বের হয়ে যেন গাড়িতে উঠতে পারি। তাই তুই একটা সিএনজি নিয়ে বাসার সামনের গলিতে অপেক্ষা করবি।

– আচ্ছা ঠিক আছে, আর কিছু করতে হবে?

– যেখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হবে সেখানে যেন তুই ছাড়া আর কোন পরিচিত মানুষ না জানে।

– আচ্ছা চেষ্টা করবো।

– আপাতত যা বললাম সেগুলো পালন করলেই হবে মনে হয়, বাকিটা পরে দেখা যাবে।

– কোন চিন্তা করিস না, কাজ হয়ে যাবে।

এগারোটার দিকে মোহনা আমার রুম থেকে কল দিয়ে বললো সে নাকি ওখানে আমার যা যা কাপড় ছিল সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছে। অনেকটা সহজ হয়ে গেল, এখন শুধু অপেক্ষা করছি যেন ভালো করে বের হতে পারি।

রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে তারপর আমি মোহানকে নিয়ে বের হলাম। মোটামুটি যা যা দরকার সবকিছু নিয়ে নিলাম, আমার নিজের যা কিছু ছিল সবই আমার রুমে ছিল। তাই সেগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সবগুলো নিয়ে নিতে সমস্যা হলো না।

বাসার সামনে বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে, আমরা তাই দ্রুত সিএনজির মধ্যে উঠে বসলাম। তারপর সিএনজি চলতে লাগলো, মনে হয় তার কাছে কোথায় যেতে হবে তা আগেই বলা হয়েছে।

আমরা অলংকার মোড় পেরিয়ে সামনে গিয়ে সিটি গেইট এর আগে ডান দিকে ঢুকলাম। এদিকটা হচ্ছে আকবর শাহ থানার অন্তর্ভুক্ত, কিছুটা ভিতরে গিয়ে একটা ছোট্ট গলির মধ্যে সিএনজি দাঁড়াল। আমরা নামার পরে সিএনজি দাঁড়িয়ে রইলো আর আমরা তিনজন হাতের ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। গলির মধ্যে অন্ধকারে তেমন দেখা যাচ্ছে না তাই মোবাইল বের করলাম টর্চ জ্বালানোর জন্য।

মোবাইল বের করে দেখি অর্পিতার নাম্বার থেকে ৬৭ টা Missed Call এসে জমা হয়েছে। অবাক হলাম অনেকটা, মনের মধ্যে কেঁপে উঠল তাই টর্চ জ্বালানো বাদ দিয়ে আমি কলব্যাক করলাম।

– অর্পিতা রিসিভ করে বললো, এতবার কল দিলাম রিসিভ করলে কেন? ঘুমাচ্ছ?

– মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল তাই টের পাইনি কিন্তু এতবার কল কেন? সবকিছু ঠিক আছে তো?

– তুমি আমাকে অনেক অভিশাপ দিচ্ছ তাই না সজীব?

– কোই না তো।

– তাহলে আমার হাতে বিয়ের মেহেদীর রঙ মুছে যাবার আগেই কপালের সিঁদুর মুছে গেল কেন?

– মানে কি? কি হইছে?

– অর্পিতা কান্না করতে করতে বললো, বিজন মারা গেছে সজীব। তুমি কোথায় আছো? একটু আসবে?

– কি…..?

.
.
.
.

চলবে…?

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here