এক ফাগুনের গল্প part 6

0
299

এক_ফাগুনের_গল্প
পর্বঃ-০৬

– বুঝতে যখন পারছেন তাহলে এই ছোট্ট বাসনা পূর্ণ করা কিন্তু আপনার কর্তব্য। তাছাড়া আমি খুব ভদ্র একটা মানুষ তাই আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।

– নাম কি আপনার?

– সজীব।

– সামনে পিছনে কিছু আছে নাকি সজীব সজীব।

– সাইফুল ইসলাম সজীব।

– নামটা খুব সুন্দর, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ভালো থাকবেন সবসময়।

– কোথায় যাচ্ছেন?

– আমার কাজে।

– আপনার নাম?

– মোহনা আক্তার কলি, তবে কেউ কেউ বলে আর কেউ কেউ কলি বলে ডাকে।

– আমি যদি এখন আপনার ব্যাগের সবগুলো মানে সমস্ত চকলেট কিনে নিয়ে যাই, তাহলে কি আমার সাথে এক কাপ চা খেয়ে একটু পাশাপাশি হাঁটার সময় হবে?

– আপনি এতগুলো চকলেট একা কি করবেন?

– খাবো।

– হাহাহা হাহাহা হাহাহা, একা একা এত্তগুলা চকলেট খেতে পারবেন? পেটুক নাকি?

– না তা নয়, আমি যে অফিসে চাকরি করি সেখানে গিয়ে সবাই কে নাহয় খেতে দেবো। ভেবে দেখুন তো, আমি আগামীকাল অফিসে গিয়ে সবার হাতে হাতে একটা করে চকলেট দিলাম তারপর সবাই একসাথে সেই চকলেট ছিলে খাচ্ছে, কেমন হবে?

– খুবই বাজে।

– দিলেন তো মুডটা নষ্ট করে, কি একটা সুন্দর মুহূর্ত চোখের সামনে এনেছিলাম।

– আপনি সত্যি সত্যি চকলেট কিনবেন?

– কিনতে তো চাচ্ছি কিন্তু আপনি…!

– আমার আজকে একটু তাড়াতাড়ি যাবার দরকার কারণ আজকে মা’কে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হবে। যদিও মামা আছে তবুও আমি যদি যেতে পারি তাহলে ভালো হতো। আপনি সত্যি সত্যি যদি চকলেট নিয়ে আপনার অফিসে দিতে পারেন তবে আমার কোন আপত্তি নেই।

– আর চা?

– সেটা আজকে হবে না, আবারও যদি কোনদিন হঠাৎ করে দেখা হয়ে যায় তবে সেদিন খাবো।

– আমার ভাগ্য সবসময় খারাপ তাই দ্বিতীয় আবার দেখা হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। তবুও আপনি যখন চাচ্ছেন না তখন এ বিষয় বাদ দিলাম।

চন্দ্রা থেকে দুজনেই লোকাল বাসে উঠলাম, তার সাথে যতগুলো চকলেট ছিল সবগুলো আমি নিয়ে নিলাম। আশ্চর্য, সত্যি সত্যি মেয়েটা তার মুখের স্কার্ফ খুলে নাই, আমার সখটা আর মিটলো না।

– বাইপেলের কাছাকাছি আসার পরে বললাম, আপনি তো সরাসরি সাভার গাবতলী হয়ে মেডিকেল চলে যাবেন তাই না?

– হ্যাঁ।

– আমি বাইপেল নামবো, সেখান থেকে “আশুলিয়া ক্ল্যাসিক” বাসে করে উত্তরা যাবো। আমি উত্তরা চার নম্বর সেক্টরে থাকি আর আমার অফিসও বাসার খুব কাছেই।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

– তুমি কি পড়াশোনা করো? কিছু মনে করো না, তুমি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হবে তাই তুমি করে বলছি।

– অনার্স ফাইনাল ইয়ার।

– কোন ভার্সিটি?

– সেটা দ্বিতীয়বার দেখা হলে বলবো।

– কপাল।

– কিছু বললেন?

– নাহহ।

– আপনি একটা বিষয় নিশ্চিত থাকতে পারেন, কারণ যদি বেঁচে থাকি তবে আমাদের আবারও দেখা
সেটা শতভাগ নিশ্চিত। আরেকটা কথা, আপনাকে আমি এর আগে একবার দেখেছি এবং সেটা কোন একটা মানুষের ল্যাপটপের স্ক্রিনে। কিন্তু কার কাছে দেখেছি সেটাও দ্বিতীয় সাক্ষাতে বলবো।

– সকল রহস্য কি দ্বিতীয় সাক্ষাৎে হবে?

– হ্যাঁ আরেকটা কথা, চকলেট বিক্রির বিষয় নিয়েও কিছু সত্যি মিথ্যা লুক্কায়িত আছে সেটাও পরবর্তী দেখা হলে।

– আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক।

– আমিন, হিহিহিহি।

বাইপেল আসার সাথে সাথে আমি তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাস থেকে নেমে গেলাম। চলন্ত লোকাল বাস যাত্রী নিতে নিতে সামনে চলে গেল আর আমি আমার গন্তব্যে যাবার জন্য “আশুলিয়া ক্ল্যাসিক” এ উঠলাম।

পরদিন অফিসে গিয়ে সবার হাতে হাতে চকলেট দিচ্ছি, সবাই কারণ জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু বললাম যে এমনি এনেছি। সবাই খুব আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে নিল, কেউ কেউ পাশে রেখে দিল আবার কেউ কেউ মুখে দিয়ে দিল।

সাড়ে এগারোটার দিকে বড় সাহেব মানে মারিয়ার বাবার বন্ধু আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি মনে মনে ভাবলাম চকলেট দেবার জন্য আবার কোন সমস্যা হয়েছে নাকি? অনেকটা ভয়ে ভয়ে স্যারের রুমে প্রবেশ করে বললামঃ-

– স্যার আসবো?

– হ্যাঁ সজীব আসো আসো।

– আসসালামু আলাইকুম স্যার।

– ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছো?

– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।

– কাজ কেমন চলছে?

– অনেক ভালো স্যার, খুব আনন্দের সাথে আগ্রহ নিয়ে কাজ করছি। কখনো বিরক্তি অথবা অনিচ্ছা আসে না, খুব ভালো আছি স্যার।

– কামরুল (মারিয়ার বাবা) তোমার কথা যখন বলেছিল তখন ও অনেক প্রশংসা করেছে। কামরুলের স্বভাবের মধ্যে কারো প্রশংসা করার অভ্যাসটা নেই কিন্তু তোমার বিষয় প্রশংসা করায় আমি অবাক হলাম। তারপর তোমাকে অফিসে নেবার জন্য ব্যবস্থা করতে শুরু করেছিলাম।

– সে জন্য আমি আপনাদের দুই বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞ, দোয়া করি আপনাদের বন্ধুত্ব চিরদিন স্থায়ী হোক।

– তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।

– জ্বি বলেন।

– আমাদের কিছু মালামাল বিদেশে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রামে একটা লোক পাঠাতে হবে। তোমার বাসা যেহেতু চট্টগ্রাম তাই তোমাকে পাঠাবো ভেবেছি, তাতে করে নিজের শহরে ঘুরে আসা হবে আর কাজ ও করা হবে, কি বলো?

– আপনি বললে আমি যেতে পারি।

– আগামী পরশু তুমি রওনা হবে, সেখানে গিয়ে কি কি করতে হবে সবকিছু ম্যানেজার তোমাকে বুঝিয়ে দেবে।

– ঠিক আছে স্যার।

– আরেকটা কথা।

– বলেন স্যার।

– তুমি নাকি কামরুলের মেয়ের টিউশন মাস্টার ছিলে, তাই না?

– জ্বি।

– আমার একটা ছেলে আছে এ বছর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তুমি কি ওকে রাতের বেলা একটু সময় দিতে পারবে? তাহলে তোমাকে আমি আমার সাথে করে বাসায় নিয়ে যেতাম। আমার বাসায় অনেক রুম ফাঁকা থাকে সেখানে থাকবে তাহলে আমার ছেলেটা মানুষ হলো আর তোমারও আরেকটু উপকার হবে।

– আমার কোন সমস্যা নেই স্যার, তাহলে চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এসে সবকিছু করি?

– ঠিক আছে, আসলে সজীব, শহরে কিন্তু অনেক কোচিং সেন্টার আছে তবে সেগুলোো তাদের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই আমি চাই নিজস্ব মানুষ দিয়ে ছেলেটা কিছু যেন শিখতে পারে।

– ঠিক আছে স্যার আমি চেষ্টা করবো।

– ধন্যবাদ সজীব।

★★

চট্টগ্রামে এসে আগ্রাবাদ একটা আবাসিক হোটেলে উঠলাম, সাথে আরো দুজন আছে। বাসায় গেলে ঝামেলা মনে হয় তাই ভাবলাম এখানেই ভালো। বাবার সাথে দেখা করতে গেছিলাম, বাসায়ও গিয়ে কতক্ষণ ছিলাম। একটা চাকরি আমার জীবনটা যেন বদলে দিয়েছে, এখন আর রাস্তা দিয়ে হাটলে মন খারাপ লাগে না। কোন চাকরিজীবী মানুষ রাস্তা দিয়ে গেলে তার দিকে তাকিয়ে আফসোস করা লাগে না।

এখানে আসার চারদিন পরে একদিন হঠাৎ করে রাত দশটার পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে। রিসিভ করে সালাম দিলাম।

– আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?

– ওয়া আলাইকুম আসসালাম, এটা কি ফায়ার সার্ভিস? (একটা মেয়ে)

– না এটা ফায়ার কারখানা।

– আপনি কি সজীব?

– আপনি যেহেতু আমার নাম জানেন তাহলে শুধু শুধু ফাজলামো করেন কেন?

– চান্দি গরম নাকি?

– আমি মেয়েদের থেকে সবসময় নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলি।

– চাপা মারার স্থান নেই তাই না?

– মানে?

– একটা মেয়ে বাসের ভিতরে ঢুকে চকলেট বিক্রি করার সময় তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে পারেন। তার পিছনে পিছনে বাস থেকে নেমে তার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। তার মুখটা দেখার জন্য চায়ের নিমন্ত্রণ করতে পারেন কিন্তু তবুও বলেন মেয়ে থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় তাই না?

– কে আপনি?

– মোহনা আক্তার কলি, চিনতে পারছেন?

– ওহহ আচ্ছা, তুমি আমার নাম্বার পেলে কীভাবে?

– বলেছিলাম না আপনি উন্নত প্রজাতির একটা হাইব্রিড জাতীয় বুদ্ধিমান।

– তো কি হইছে?

– সেদিন বাস থেকে নামার সময় আপনার একটা কার্ড রেখে গেছিলেন সিটের উপর, তাই না? ওরে বাটপার, কত বড় বুদ্ধি।

– হাহাহা, আমি তো ভেবেছিলাম নাম্বার পাওনি তুমি তাই কল দেও নাই। এতদিন পরে দিলে যে?

– চট্টগ্রাম থেকে কবে আসবেন?

– তুমি কি করে জানো আমি চট্টগ্রামে?

– আরো অনেক কিছু জানি মিঃ হাইব্রিড। কেবল মাত্র আরম্ভ, কবে আসবেন সেটা জিজ্ঞেস করেছি।

– আর দুদিন পর।

– আচ্ছা ঠিক আছে যেদিন আসবেন সেদিন দেখা হবে আপনার সাথে।

– সত্যি বলছো?

– হ্যাঁ, রাখলাম তাহলে?

কল কেটে দিয়ে ভাবতে লাগলাম, ঘটনা কি? মেয়ে এত রহস্যময় কেন? কীভাবে জানে আমি চট্টগ্রাম? নাকি আমার কার্ড দিয়ে অফিসে গিয়ে জানতে পেরেছে? আবার আমাকে ডাকলো মিঃ হাইব্রিড নামে ছি ছি ছি, কি নকমরে বাবা।

আজকে আর ঘুম হবে না।

★★

গতকাল বিকেলে ঢাকা এসেছি, আজকে সকালে অফিসে এসে আজকের পত্রিকা সামনে নিয়ে বসে আছি। বড় সাহেব এখনো আসে নাই তিনি আসলে হয়তো তার সাথে কথা হবে।

মাস খানিক আগে থেকে আমার রুমেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজের মনিটর রাখা হয়েছে। আমি কিছু কিছু স্থানের ফুটেজ দেখতে পারি, তারমধ্যে দেখলাম লিফটের ভেতরে বড় সাহেব আর তার সাথে একটা মেয়ে প্রবেশ করলো। মেয়েটা মোটামুটি ভালো সুন্দরী মনে হচ্ছে কিন্তু বেশিক্ষণ দেখতে পেলাম না।

কিছুক্ষণ পর অবাক হলাম কারণ স্যারের সাথের সেই মেয়ে আমার রুমে এসেছে। আমি তাকে দেখে বললামঃ-

– আপনাকে তো ঠিক..

– আমি আপনাদের স্যারের মেয়ে।

– আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, সরি সরি মেডাম আমি চিনতে পারিনি, বসুন, বসুন।

– কি করছেন?

– কাজ এখনো আরম্ভ করিনি, বসে ছিলাম।

– ওহহ আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করবো?

– জ্বি করুন।

– আপনি কি অনেক বুদ্ধিমান?

– হঠাৎ এমন প্রশ্ন।

– উত্তর দেন।

– নাহহ খুব স্বল্পজ্ঞান আমার।

– কিছু আমি তো জানি আপনি হাইব্রিড জাতীয় বুদ্ধিমান, সেটা কি ভুল?

– আমি চমকে গেলাম, কারণ এ নামটা মোহনা আমাকে দিয়েছিল কিন্তু ইনি কীভাবে?

– আমি কিছু বলার আগেই বললো, রাস্তাঘাটে যে কোন মেয়ে দেখলে কি ওভাবে চায়ের নিমন্ত্রণ করেন নাকি শুধু আমাকেই করেছিলেন?

– আমার গলা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম, বললাম, আপনাকে চায়ের নিমন্ত্রণ মানে?

– চন্দ্রায় চকলেট বিক্রির সময়ের কথা মনে নেই? চোখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখেন তো চোখ দুটো চিনতে পারেন কিনা। অবশ্য সেদিন বোরকা পরে মুখ বাঁধা ছিল তাই না চেনারই কথা কিন্তু কণ্ঠ চেনার কথা ছিল।

– আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললাম, আপনিই সেদিন এর সেই মেয়ে মোহনা আক্তার কলি?

– হ্যাঁ মোহনা আমি, বলেছিলাম না যেদিন চট্টগ্রাম থেকে আসবেন সেদিন দেখা হবে।

– কিন্তু….!

– আপনার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে বুঝতে পারছি, সব প্রশ্নের জবাব দেবো কিন্তু তার আগে চলুন বাবা আপনাকে ডাকছেন।

– পরে যদি না বলেন? বা দেখা না করেন?

– দেখা করবো না মানে? আজ থেকে তো আপনি আমাদের বাসায় থাকবেন তাই না? আমার ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব আপনাকে দিবে বাবা।

– সেটাও জানেন?

– আরো অনেক কিছু জানি, বাসায় একবার চলো মিঃ হাইব্রিড তোমাকে আমি রোজ সকালে এক গ্লাস করলার জুস, আর রাতে এক গ্লাস মরিচের গুঁড়োর জুস খাওয়াবো। তখন বুঝবে কতগুলো চকলেট কিনলে কতগুলো টাকা যায়?

চলবে…?
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here