#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ রুমের মধ্যে বসে আছে। আমার রুমে হঠাৎ করে আয়াদ! কি জন্য এলো? কথাটা মনে মনে ভাবতেই কেমন যেনো একটা ঘটকা লাগছে তার। অর্শি রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদে দরজার দিকে চোখ পরতেই সে দেখতে পেলো অর্শি দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে।
— এই অর্শি ওখানে কি করছিস? এদিকে আয়।
অর্শি কোনো কথা না বলে রুমের মধ্যে এগিয়ে এলো। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই অর্শি ভিশন কর্কশ গলায় আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এতো রাতে হঠাৎ আমার রুমে? কি জন্য এসেছেন?
— আসলে ফিরতে একটু লেট হয়ে গেছে। আসলে আমি তোর থেকে ক্ষমা চাইতে এসেছি।
অর্শি আয়াদের সামনে থেকে সরে গিয়ে টেবিলের উপর কফি প্লেটটা রেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আয়াদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো
— আমি না এই বিষয়টা বুঝতে পারি না। আপনি সারা দিন আমায় অপমান করবেন। ছোট করে কথা বলবেন। আর গভীর রাতে এসে ক্ষমা চাইবেন। মানে সত্যি আপনার ব্যবহার গুলো আমায় না সবাইকে চমকে দেয়।
অর্শির খোঁচা মেরে বলা কথাটা আয়াদ শুনতে পেয়েও কিছু বলল না। আয়াদ একটা প্যাক থেকে কিছু জিনিস বের করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— অর্শি আমার দিকে ফিরে তাকা দেখ তোর রাগ ভাঙাতে কি নিয়ে এসেছি। এই দেখ এগুলো তোর জন্য।
আয়াদ হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে অর্শির দিকে কিছু গিফট এগিয়ে দিলো। আসলে গিফট আনার কারন রাগ ভাঙাতে নয়। আয়াদের প্রথম ইনকাম। সেই জন্য আর কি কিছু উপহার দেয়া। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে বলতে লাগলো
— আপনি আমার জন্য গিফট নিয়ে এসেছেন। রাগ ভাঙাতে না অন্য কোনো মতলবে? আমি বুঝি না কিছু তাই না। এতোটা ছোট আমাকে ভাববেন না মিস্টার আয়াদ। আপনার সম্পর্কে আমার ধারনা হয়ে গেছে। আপনার এই দয়া আমি নিতে পারছি না। ক্ষমা করবেন।
অর্শির কথাটা আয়াদের বুকে এসে লাগলো। আয়াদের হাসি মাখা মুখটা মলিন হয়ে যায়। আয়াদ মাথাটা নিচু করে ঠোঁটের কোণে মিথ্যে হাসি একে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— নারে বাজে কোনো মতলব নিয়ে আমি আসি নাই। আসলে তোকে তো কখনও কিছু দেই নাই। তাই এই প্রথম বার কিছু নিলাম। গিফট গুলো রেখে দে। আমি আসছি।
আয়াদ সোফার উপর গিফট গুলো রেখে অর্শির রুম থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে অর্শি চেঁচিয়ে বলে উঠলো
— এই আপনার এই ন্যাকামি অন্য কোথাও দেখাবেন। আমার সামনে কোনো ন্যাকামি না। আপনার পরিবার অনেক দয়া করেছে আমার উপর। আমি আর কারোর দয়া নিতে চাই না। এই গুলো নিয়ে চলে যান।
অর্শি গিফট গুলো আয়াদের দিকে ছুড়ে দিলো। আয়াদ অর্শির দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো। এই সব অর্শি কি বলছে? মানছি আমি ওর পিছনে লাগি। আমায় নিয়ে যা খুশি বল। কিন্তু বাবা মা আমার পরিবারকে টানার কি হলো? আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে একটু কর্কশ গলায় বলতে লাগলো
— আমার দেয়া জিনিস গুলো ফিরিয়ে দিতেই পারিস তবে অর্শি আমার পরিবারকে নায়েক যেটা বললি ওটা সত্যি উচিত হয় নাই। আমার পরিবার তোকে নিজেদের মেয়ের মতো মনে করে। দয়া করে বা অন্য কিছু নয়। আমার মা বাবা কখনও তোকে আলাদা করে দেখে নাই। কিন্তু আফসোস তুই সব সময় তাদেরকে আলাদা করে দেখিয়েছিস। তুই আমার পরিবারকে আপন ভাবতে পারিস নাই। সেই জন্যই তাদের ভালোবাসা তোর কাছে দয়া মনে হয়।
আয়াদের কথা শেষ হতেই আয়াদের মা অর্শির রুমের সামনে চলে এলো।
— কিরে আয়াদ এখানে কি করছিস? আর অর্শিকে কি বলছিস তুই? সারা দিন ঝগড়া না করলে হয় না? দেখছিস তোর জন্য আমার মেয়েটা মন খারাপ করে থাকে। তুই একটু ঝগড়া না করলে কি হয়?
মা কথাটা বলে অর্শির রুমের মধ্যে চলে যায়। আয়াদ একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলে
— দেখ একে দয়া না ভালোবাসা বলে। তোকে বুঝিয়েও লাভ নেই।
আয়াদ গিফটের প্যাকেটটা ফ্লোর থেকে তুলে ডাসবিনে ফেলে দিয়ে নিজের রুমে চলে এলো। ”অর্শির জন্য এতো শখ করে গিফট গুলো নিয়ে আসাই ভুল ছিলো। দয়া দেখাই আমি। আরে তোকে আমি কখনও দয়া দেখাইনি। এমনি খুশি হয়ে তোর জন্য কিছু জিনিস নিয়ে এসেছিলাম। আরে ভালো না লাগতে পারে। হয়তো রেগে আছিস। তাও তো জিনিস গুলো না ফেলে দিয়ে রেখে দিতে পারতিস। আমি তো চলেই এসেছিলাম। যাক আমার ভুল ছিলো যে ভুলের সাজাটা মনে হয় আমাকে সারা জীবন ধরে পেতে হবে”। কথাটা আপন মনে বলছে আয়াদ। অর্শির কথা গুলো বড্ড কষ্ট দিচ্ছে তাকে। আয়াদ নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলো।
“আয়াদ ভাইয়া তো সত্যি বলেছে। মা বাবা কেউ তো আমায় তাদের মেয়ের থেকে মন মনে করে না। তবুও কেনো আমি তাদেরকে নিজের আপন মনে করতে পারি না? কেনো মনে হয় সবাই আমার নিজের মা এর মতো নিজের সার্থে আমাকে ব্যবহার করে। কেনো আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না? একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে বলে কি এমনটা হচ্ছে আমার”! বিছানায় শুয়ে শুয়ে অর্শি ভাবছে কথা গুলো। আয়াদের সাথে রাগ দেখিয়ে উল্টোপাল্টা কথা গুলো বলে দিলাম। উনি হয়তো রাগ করেছে। তবে ওনার এটাই প্রাপ্য। কারন উনি আমায় অনেক আঘাত করেছেন। তার কাছে এই আঘাতটা সামান্য।
*সকাল হতেই অর্শি ফ্রেশ হয়ে নিলো। অর্শি নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো। অর্শিকে রেডি হতে দেখে আয়াদের মা অর্শির রুমে আসতেই অর্শিকে রেডি হতে দেখে প্রশ্ন মাখা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো
— কিরে অর্শি এই সকাল সকাল রেডি হচ্ছিস যে! কোথাও কি বের হবি?
— হ্যাঁ, মা আমি একটু চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে আসতে যাবো। মনটা আজ কাল ভালো লাগছে না। তাই একটু বাহির থেকে সময় কাটিয়ে আসলে হয়তো ভালো লাগবে।
— ওহহহ। আচ্ছা টাকা নিয়েছিস?
— না। আমার কাছে যা আছে তাতে চলবে।
— মেয়ে মানুষ বাহিরে যাচ্ছিস টাকা না নিলে যদি কোনো বিপদ হয়। উহু এই দাঁড়া আমি টাকা নিয়ে আসছি।
— মা লাগবে না টাকা। শোনো আমার কথা…..
অর্শির কথা না শুনে মা চলে গেলেন। অর্শি মা চলে যেতেই আবার নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। আসলে অর্শি একটা যাচ্ছে না। সাথে অর্শির দুইজন বান্ধবী ও যাবে। এমনিতে একা কোথাও যাওয়ার মতো সাহস অর্শির নেই। অর্শি রেডি হয়ে আয়াদের মা এর থেকে টাকা নিয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আয়াদকে কোথাও দেখলো না অর্শি। মা এর থেকে শুনেছে আয়াদ নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে। অর্শি লেট না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
* বাড়ি থেকে বেরিয়ে অর্শি চলে যায় তার বান্ধবীর বাড়ি সেখান থেকে রেলস্টেশন যাবে। আর তারপর চট্টগ্রাম। অর্শি অনুর বাড়ি গিয়ে দেখলো অনু একদম রেডি। অনু অর্শিকে দেখে বেশ খুশি হয়ে হাস্যজ্বল মুখে নিয়ে বলতে লাগলো
— বাহ আজকে তো তোকে দারুন লাগছে। তো আয়াদ ভাইয়া কোথায়? দেখছি না যে!
— এই ওয়েট আয়াদ ভাইয়া কোথায় মানে উনি আসবেন কেনো?
— ওমা তোকে একা ছাড়বে বুঝি? আমরা তো ৫টা টিকেট নিয়েছি। গতবার ও তো আয়াদ ভাইয়া আমাদের সাথে গিয়েছে।
— হ্যাঁ, তবে আর যাবেন না।
— ওহহ।
আয়াদ আসছে না শুনে অনুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। অর্শির এই সব সহ্য হয় না। তাই অর্শি মুখে একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে অনু আর বাকি দুজন মিলি ফারজানা কে নিয়ে বেরিয়ে পরলো। রেলস্টেশন এসে অর্শি ট্রেনে উঠে পরলো। অর্শির পাশের সিটূ আয়াদের বসার কথা। অর্শি একা বসে জানলা খুলে দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় যেতেই ট্রেন চলতে শুরু করলো। ট্রেন স্টার্ট হতেই অর্শি জানালা বন্ধ করে দিলো। জানালা বন্ধ করতেই অর্শি দেখতে পেলো তার পাশের সিটে দুম করে একটা ছেলে এসে বসে পরলো। ছেলেটি বসতেই অর্শি চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল
— এই ছেলে এটা তোমার সিট না। এটা আমাদের সিট। এখান থেকে উঠে যাও।
— যদি না উঠি তো!
ছেলেটির কথা শুনে অর্শি রাগে গজগজ করতে লাগলো। কতবড় সাহস আমাদের সিটে উড়ে এসে বসে আবার বলছে উঠবে না। অর্শি চিৎকার করে টিটিকে ডাকতে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে ছেলেটি অর্শিকে অবাক করে দিলো। ছেলেটি অর্শির…………………..
#চলবে………………………
( গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। বেশি বেশি রিসপন্স করুন নেক্সট পার্ট দ্রুত আসছে। ধন্যবাদ)