ইট পাটকেল পর্ব ৪৩+৪৪

0
430

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪৩

হসপিটালে এসে সবার আগে মর্গে গেল আশমিন। ফ্রিজারের ড্রয়ার খুলে মায়া বেগমের বডি টা বের করে দেখালো মর্গে কর্মরত থাকা লোকটি। আশমিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সাদা ফ্যাকাসে মুখটায় হাত বুলিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। বন্ধ চোখ জোড়া খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করে গম্ভীর গলায় বলল,

— আমি আজ মা কে নিয়ে যাবো এখান থেকে। তারা বিদায়ের প্রস্তুতি নিন। ডক্টরের সাথে কথা বলে ফর্মালিটি শেষ করছি। এসে এক সেকেন্ড ও দেড়ি করবো না।

নিজের কথা শেষ করে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো আশমিন। লোকটা আশমিনের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এই মহিলা আশমিনের মা! আশমিন কি তাকে মা ডাকলো? নিজের কান কে বকাঝকা করে লাশ রিলজ করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো সে।

আশমিন নিজের কেবিনে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো। বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে না অনেকদিন। হসপিটালই যেন তার বাড়িঘর হয়ে উঠেছে।

লুবানা সুখ কে নিয়ে বসে আছে। পাখি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। তবে তাদের খাওয়ানো নিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে লুবানা কে৷ বাইরের কেনা বেবি ফুডের কোন দুধ ই খাচ্ছেনা তারা। যতবার খাওয়াতে যায় ততবারই সব উগলে দেয় তারা। কয়েকদিনে মেয়ে দুটো খুব শুকিয়ে গেছে। তানভির এই কয়দিন চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি আর আর এস ইন্ডাস্ট্রি হ্যান্ডেল করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। অমি আর সানভি ও আছে তার সাথে। তবে তানভীর এভাবে খেটে অভ্যস্ত নয়। তাই তার অবস্থা নাজেহাল। দুইদিন হলো অমি আর সানভির কোন পাত্তা নেই। দুই অফিস সামলে পাগলপ্রায় হয়েই আজ আশমিনের কাছে ছুটে এসেছে সে। কেবিনে ঢুকেই ধপ করে সোফায় বসে পরলো তানভীর। আশমিন তখন মাত্র ফ্রেশ হয়ে বিরিয়েছে। লুবানা মুচকি হাসলো তানভীর কে দেখে। তানভীর লুবাবার হাসি দেখে মলিন হাসলো। ক্লান্ত গলায় বলল,

— বুঝলে পিচ্ছি, আমার অবস্থা বর্তমান পাতলা খিচুড়ি। মেসের ডালের মতো অবস্থা। অস্তিত্ব খুজে পাওয়া মুশকিল। তবুও তোমার স্যার আমার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে আছে (আশমিনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে)। উপকারীর ভাত নাই!

আশমিন তিক্ত চোখে তাকালো তানভীরের দিকে। দোলনা থেকে পাখি কে কোলে নিতে নিতে বিরক্ত গলায় বলল,

— চুপ করো ছোকরা ছেলে। তোমার হাসের মতো প্যাক প্যাক গলা শুনে যদি আমার মেয়েদের ঘুম ভাঙে তো তোমার ঠোঁট সেলাই করে দিবো।

তানভীর মুখ টিপে হাসলো। আশমিনের এমন হিংসুটে আচরণ দেখলে ওর ইচ্ছে করে নূর কে আবার বিয়ে দিয়ে দিতে। যেখানে আমজাদ চৌধুরী হবে উকিল বাপ।আর আশমন উকিল ভাই। তখন মন্ত্রীত্ব ছেড়ে সারাদিন বসে বসে বালিশ কামড়ে কামড়ে হিংসা করবে। আশমিন কে আরেকটু জ্বালানোর উদ্দেশ্যে গলা খাকাড়ি দিলো সে। আশমিন মেয়েকে নিয়ে শুয়ে পরেছে ততক্ষণে। তানভীর লুবানার দিকে তাকিয়ে রসিয়ে রসিয়ে বললো,

— জানো লুবানা,নূরের কিন্তু অনেক ফ্যাম ফলোয়ার। ছেলে ফ্যানরা তো নূরের জন্য পাগল। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে তো সারাক্ষণ আই লাভ ইউ বলে ম্যাসেজ করতেই থাকে। নূর কে সামনাসামনি এক পলক দেখার জন্য নাকি জান ও দিয়ে দিবে।কয়েকজন তো নূরের জন্য সুই*সাইড ও করতে চেষ্টা করেছে। কি কান্ড!ভাবা যায়?

লুবানা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

— তাই!

— হুম।

— আসলেই ম্যাম খুব সুন্দর। তার জন্য পাগল হওয়া খুব একটা অবাক হওয়ার বিষয় নয়। তাই না স্যার?

তানভীর সিরিয়াস মুড নিয়ে বললো,

— তা তো অবশ্যই।

আশমিন এখনো চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে। তানভীর কে মুখে পুড়ে চিবাতে ইচ্ছে হলেও সে কোন কথা বলছে না।পাছে মেয়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়! তবে এর শোধ সে ঠিকই নিবে। তানভীর কে কিছু না বললেও মনে মনে সে কয়েকজন ভালো হ্যাকারের নাম্বার মনে করার ট্রায় করলো। তার বউ কে আই লাভ ইউ বলা! কি সাহস! হ্যাকার দিয়ে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম উড়িয়ে দিবে সে। এই খারাপ মুহুর্তে এসে তার কি সব চিন্তা করতে হচ্ছে! এই তানভীর!
দাতে দাত পিষলো আশমিন। ছাড়পোকা স্বভাবের ছেলে একটা।

— লুবানা,,, সুখ কে আমার কাছে দাও।

আশমিনের এক হাতে পাখিকে নিয়ে শুয়ে আছে। লুবানা আরেক হায়ে সুখ কে শুয়িয়ে দিলো।

— কিছু প্রয়োজন হলে ডাকবেন স্যার।

লুবানা বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। আশমিন মেয়েদের বুকে চেপে শুয়ে রইলো। তার বুকটা খুব অশান্ত হয়ে আছে। মেয়েদের বুকে নিলে শান্তি লাগে।

আশিয়ান লারার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। লারার অবস্থা নাজেহাল। নিজের পায়ে দাড়ানোর অবস্থায় নেই সে। জেনি তার এক বাহু চেপে ধরে দাড়িয়ে আছে। সানভি বিরস মুখে তাকিয়ে গর্ত খোড়া দেখছে। তার এসব ভালো লাগে না। কষ্ট হয়। তবুও দেখতে হয়। কারণ তার বস নির্দয়।

আশিয়ান মুখটা কাদো কাদো করে বললো,

— তোমাকে নিজের ভালবাসা দেখাতে পারলাম না সোনা। তাই নিজের হাতে তোমাকে দাফন করছি। মরে গেলে তো দেখবে না। তাই তোমায় দাড় করিয়ে করছি। নিজ চোখে আমার ভালবাসা দেখে রাখো। পরে আবার আমাকে বেঈমান বলতে পারবে না। আচ্ছা, গর্তটা কি আরেকটু বড় করবো?(চিন্তিত গলায়)।তাহলে তোমার ছটফট করতে সুভিধা হতো।

সানভি হতাশ চোখে তাকালো আশিয়ানের দিকে। লারার নিভু নিভু চোখে ভয় দেখে লাজুক হাসলো আশিয়ান। লজ্জা পাওয়ার ভান করে বললো,

— যাহ দুষ্টু! এভাবে তাকাচ্ছো কেন? বললেই তো করে দেই। এই গর্ত টা আরেকটু বড় করো। যাতে লারা ম্যাডাম কমফোর্ট ফিল করে। হয়েছে এবার(লারার দিকে তাকিয়ে) খুশি?

আধঘন্টা পরে মেয়েদের ঘুমে রেখেই বেরিয়ে এলো আশমিন। আমজাদ চৌধুরী কে আজ রিলিজ দেয়া হবে। আশমিন নূরের কেবিনে ঢুকে তার মাথার পাশে বসে পরলো। নূর ঘুমাচ্ছে। ফর্সা মুখ টা ব্যথায় নীল হয়ে গেছে। আশমিন কপালে চুমু খেলো। নিজের মাথাটা নূরের বুকের উপর এলিয়ে দিয়ে চুপ করে রইলো। নূরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আশমিনের তপ্ত চোখের পানি তার বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে। নূর অস্থির হয়ে গেলো। হালকা নড়াচড়া করে উঠলো। আশমিন মাথা উঠিয়ে নূরের চিবুকে ঠোঁট চেপে ধরলো। চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো নূরের ঠোঁটে। আশমিন ঠোঁট চিবুকে রেখেই ধরা গলায় বলল,

— সুস্থ হয়ে যাও বউ। আমার কষ্ট হয় তোমাকে এভাবে দেখলে। সহ্য করতে পারি না আমি। বুকে ব্যথা হয়। তুমি আমার শক্তি। আমার শক্তি এভাবে নির্জিব হয়ে পরে থাকলে আমি যে দুর্বল হয়ে যাবো। কেন এমন করলে নূর। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাকেই মে*রে ফেলতে। এভাবে বাচিয়ে রেখে যন্ত্রণা দেয়ার চেয়ে ম*রে যাওয়া সুখের হতো।

নূর কিছু বলতে পারলো না। চুপচাপ চোখের পানি ঝরাচ্ছে সে। আশমিন চোখ তুলে তাকালো নূরের দিকে। নূরের অশ্রুসিক্ত চোখে চুমু খেয়ে চোখের পানি মুছে দিলো।

— কেদো না বউ। ভালবাসি তো। কাদলে কষ্ট হয়। এই বউ, আমার না একটা লম্বায়ায়ায়ায়া চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। খাই? প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

নূর কান্না রেখে হতাশ চোখে তাকালো। আশমিন অনুমতির অপেক্ষায় নেই। নূরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে গাঢ় চুমু খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পরেছে সে। ব্যথায় জর্জরিত নূর স্বামীর আদরে সিক্ত হয়ে উঠলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো স্বামীর পাগলামি। আশমিন নিজের কাজ শেষ করে সরে আসতে নিতেই নূর নিজের মাথাটা হালকা উচু করে চুমু খেলো আশমিনের ঠোঁটে। আশমিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

— বউ তুমি আমাকে আদর করেছো! আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না। ঝটপট আরেকটা দাও তো। একটু বিশ্বাস করার ট্রাই করি। তুমি কিন্তু দিন দিন রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছো। আগে যদি এতো রোমান্টিক হতে তাহলে আজ আমাদের ডাবল টুইন্স হতো। দুটো মেয়ে আমার একার মেহনতের ফল। তখন আলসেমি না করলে তোমার কি ক্ষতি হতো!

নূর বিরক্তি তে চোখ বন্ধ করে ফেললো। একটা চুমু খাওয়ায় যে এই লোক ওকে কামচোর বলবে এটা তার কল্পনায় ও ছিল না। মনে মনে শপথ করলো আর কখনো আশমিন কে চুমু খাবে না।

আশমিন মুচকি হেসে বেরিয়ে এলো। বউকে রাগানোর মধ্যে আলাদা মজা আছে। নিজেকে তখন রাজা রাজা মনে হয়। বউকে রাগানো চারটি খানি কথা নয়। কলিজা থাকতে হয়।

আমজাদ চৌধুরীর কে নিয়ে মায়া বেগমের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আশমিন। কিছুক্ষণ আগেই দাফন করা হয়েছে তাকে। আমজাদ চৌধুরী নিজ হাতে কবরে শুয়িয়ে দিয়েছে মায়া বেগম কে। গুটি কয়েক মানুষ নিয়েই দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে আশমিন। আশিয়ান, সানভি,তানভীর, অমি, সহ আরো কয়েকজন পুলিশ এসেছে। বাহাদুর হসপিটালে নূর আর সুখ পাখির সাথে আছে।

আমজাদ চৌধুরী কে কড়া সিকিউরিটি তে বাসায় পাঠানো হয়েছে। সারা বাড়িতে দু’শর উপরে গার্ড রাখা হয়েছে। বাড়ির ভিতরে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লেডিস গার্ড রাখা হয়েছে। আশমিন আমজাদ চৌধুরী কে নূর সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত হসপিটালে থাকতে বলেছিল। আমজাদ চৌধুরী জোর করে বাসায় চলে এসেছে। হাসপাতালে তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। বাড়িতে এসে আরো বেশি খারাপ লাগছে তাঁর। মনে হচ্ছে জেলখানায় চলে এসেছে। মায়া বেগমের জন্য তার প্রচন্ড খারাপ লাগছে। বাড়িতে ঢুকে খারাপ লাগাটা বেড়েই চলেছে। অদ্ভুত এক শূন্যতা গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে। নিজের রুমে না গিয়ে মায়া বেগমের রুমে গিয়ে বসে রইলো আমজাদ চৌধুরী। বিয়ের পর কয়েকটা দিন এ রুমে কাটিয়েছে সে। সে বিছানায় থাকলেও মায়া বেগম ঘুমিয়েছে নিচে। তারপর তো রুম আলাদা করে ফেললো। একজনের প্রেমে অন্ধ হয়ে আরেকজনের ভালবাসা কে উপেক্ষা করে গিয়েছে। দিন শেষে মায়া বেগমের মতো সে ও আজ শূন্য।

গভীর রাত,,
আশমিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গোলাম ইশতিয়াকের বেডরুমে তার পাশেই মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে শুয়ে আছে। গত দুই দিনে খুব কৌশলে গোলাম ইশতিয়াকের সমস্ত সিকিউরিটি বদলে দিয়েছে আশমিন। আজ তার বাসভবনের সমস্ত সিকিউরিটি আশমিনের লোক।

ইশতিয়াকের নাক ডাকার ভুসভুস শব্দে বিরক্তিতে মুখ কুচকে ফেললো আশমিন। কপাল কুচকে চকচকে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বলল,

— ওর মুখটা বেধে ফেলো সান। এতক্ষনে বুঝলাম ওর বউ কেন ছেড়ে গেছে। প্রচন্ড বেয়াদব। একজন মান্যগণ্য মন্ত্রী কে বিরক্ত করছে!

সানভির খুব ক্লান্ত লাগছে। আশমিন কে শুয়ে থাকতে দেখে নিজের বিছানার কথা মনে পরছে। মন চাইছে আশমিনের পাশে ধপ করে শুয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে। নিজের ইচ্ছাটাকে গলা চিপে পাশের জন ইশারা দিলো ইশতিয়াকের মুখ বাধতে। এসব ঝামেলা শেষ হলে সে নেপালের একটা টিকিট কাটবে। বাকি জীবন টা হিমালয়ের কোন গুহায় কাটিয়ে দিবে। শত্রুরা নিশ্চয়ই এতো ঠান্ডায় হিমালয়ে তাকে মার*তে যাবে না। সাথে করে সাবানা কেও নিয়ে যাবে। রান্না করার একজন মানুষ দরকার।

চলবে,,,
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪৪

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গোলাম ইশতিয়াক ভিতু চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। একটা চেয়ারে হাত পা বেধে বসিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। পড়নে একটা সাদা ট্রাউজার আর সেন্ডো গেঞ্জি। এসির মধ্যেও দরদর করে ঘেমে যাচ্ছে সে। রুমের মধ্য বিশ জন অ*স্রধারি লোক দাঁড়িয়ে আছে। সাদা পাঞ্জাবি তে আয়াহমিন কে অসম্ভব সুন্দর লাগে। তাই হয়তো সে সব সময় শুভ্র পাঞ্জাবিতে নিজেকে আবৃত করে রাখে।

গোলাম ইশতিয়াকের সামনে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে আশমিন। পায়ের উপর পা তুলে দুই হাত মাথার নিচে দিয়ে সিলিংয়ের দিকে মুক করে বসে আছে। সানভি ষষ্ঠ বারের মতো হাই তুলে ক্লান্ত চোখে তাকালো গোলাম ইশতিয়াকের দিকে। আশমিন বিরক্ত হয়ে চোখ খুললো। সানভির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

— এতো ঘনঘন হাই তুলছ কেন? জানো না অতিরিক্ত হাই তোলা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না? তাই হাই তোলার পর আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে। পড়ো,”আস্তাগফিরুল্লাহ”

সানভি মলিন মুখে পড়লো
— আস্তাগফিরুল্লাহ।

আশমিন বিরক্ত চোখে তাকালো গোলাম ইশতিয়াকের দিকে। হাতের থাকা গা*নের নল দিয়ে কপাল চুলকে শান্ত গলায় বলল,

— কেমন আছেন ইশতিয়াক সাহেব? শরীর স্বাস্থ্য ভালো? দিনকাল কেমন চলে? রাতে বিরিয়ানি কেমন ছিল? আমি পাঠিয়েছি৷ পুরান ঢাকার বিখ্যাত কাচ্চি। গুনলাম আপনি দুই প্লেট খেয়েছেন? সত্যি নাকি? এজন্যই তো এতো বড় ভুড়ি। কমোড ভেঙে পড়লে কি হবে ভেবে দেখেছেন? আপনার বাথরুম ই যদি আপনার হাতে সেফ না থাকে তাহলে জনগণ কিভাবে সেফ থাকবে বলুন তো?

সানভি হতাশ চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে গেলো! আশমিন সোজা হয়ে বসে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,

— এর চেয়ে বেশি ফর্মালিটি করার মুড না ধৈর্য কোনটাই আমার নেই বুড়ো। তারাতাড়ি ঢাকনা খোল আর তোর ভিতরের আবর্জনা বের কর।আমিও দেখি তোর ভিতরে কতটা নর্দমা আছে৷ একটা ও যাতে তোর পেটের ভিতর অবশিষ্ট না থাকে। তাহলে তোর ঢোলের মতো পেট লাথি মেরে ফাটিয়ে কথা বের করবো। নে শুরু কর।

গোলাম ইশতিয়াক ভরকে গেলেন।মন্ত্রী পরিষদ এমনকি দলের সবাই আশমিন কে শান্ত গম্ভীর হিসেবেই চেনে। রেগে গেলেও সে ঠান্ডা মাথায় কথা বলে। আজ আশমিনের এমন ভাষা শুনে শুধু গোলাম ইশতিয়াক ই নয় সানভি ও অবাক হয়েছে।

গোলাম ইশতিয়াককে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আশমিন সত্যি সত্যি তার পেট বরাবর নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে এক লা*থি মারলো। কাঠের চেয়ার ভেঙে নিচে পরলো ইশতিয়াক।

ব্যথায় কুকিয়ে উঠল সামান্য। মুখ দিয়ে গলগল করে র*ক্ত বের হচ্ছে। দুজন গার্ড এসে আবার বসিয়ে দিল তাকে। আশমিনের শান্ত চেহারা রক্তিম আকার ধারণ করেছে। শিকারী চোখ জোড়া দিয়ে হিংস্র বাঘের মতো তাকিয়ে আছে সামনের মানুষ টার দিকে।
আশমিন তার দিকে ঝুকে গলা চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল,

— আমার পরিবারের দিকে হাত বাড়ানোর আগে নিজে বাচার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল না? এখন তোর কি হবে? ক্ষমতা আর টাকা নিয়ে কবরে যাবি? দেখা তোর ক্ষমতা। নিয়ে আয় তোর টাকা। দেখ বাচতে পারিস কি না। আমার মেয়েদের আঘাত করেছিস! আমার ভালবাসা আজও জীবন মৃত্যুর মাঝে ঝুলে আছে। প্রতিদিন যন্ত্রণায় নীল হয়ে যায় ও। তাকাতে পারিনা ওর দিকে। বুকটা পুড়ে যায়। বুঝিস তুই?

ইশতিয়াকের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে জান বের হয়ে যাবে নিশ্চিত।

আশমিন ছেড়ে দিলো। শান্ত ভঙ্গিমায় গিয়ে আবার চেয়ারে বসে পরলো। ইশতিয়াক কাশতে কাশতে নিচে বসে পরেছে। সানভি তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। পানি পেতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিলো সে। আশমিন এখনো নীরব চোখে তাকিয়ে আছে। ইশতিয়াক সেদিকে তাকিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল,

— মিসেস চৌধুরীর সাথে আমার ডিল হয়েছিল।তার জোগাড় করা মেয়েগুলো কে পাচার করতে সাহায্য করলে আমাকে মোটা অংকের একটা কমিশন দেয়া হবে। গত পাচ বছর যাবত আমি তাকে সাহায্য করছিলাম। কিন্তু এর মধ্যেই আপনি সব কিছু জেনে ফেললেন। লাস্টবার যখন মেয়েগুলো কে উদ্ধার করলেন তখন আমাদের অনেক লস হয়েছিল।বিদেশি পার্টি থেকে কোটি কোটি টাকা নেয়া হয়েছিল। তাই মেয়ে দিতে না পারায় তারা খুব চাপ দিচ্ছিল। মিসেস চৌধুরী কে না পেয়ে সেই টাকা তারা আমার কাছ থেকে নিয়েছে। দিতে অস্বীকার করেছিলাম। এতে তারা আমার মেয়েটাকে মে*রে ফেললো। তাই বাধ্য হয়েই দিতে হলো। নাহলে আমার ছেলেটা কে ও মে*রে ফেলতো।টাকা আর মেয়ে হারিয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।আপনাকে বরবাদ করতে চাইছিলাম। সেই সুযোগ করে দিলো আপনার শ্বাশুড়ি। সে চাইতো আপনার সন্তান আর আপনাকে সরিয়ে দিতে।আপনার মায়ের জন্য তার সারা জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। সে তার স্বামী কে হারিয়েছে।তাই প্রতিশোধ নিতে চাইছিল সে। বাড়ির সমস্ত ইনফরমেশন সে আমাকে দিতো। সে জানতো না আমি নূর কেও আক্রমণ করবো। আমি আপনার মেয়ে কে আঘাত করিনি। আপনার মেয়েকে নাফিসা শিকদার আঘাত করেছে। মায়া বেগম কে লারা মেরেছে। আমি শুধু নূর,,

আর কিছু বলতে পারলো না ইশতিয়াক। আশমিন তার কপাল বরাবর শু*ট করে দিয়েছে। চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে ওর। আবার ধোকা! আশমন ইশতিয়াকের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

— নূর নয়,ম্যাম বলা উচিত ছিল ইউ স্কা*উন্ড্রেল।

গান টা সানভির হাতে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

— এটা ওর হাতে ধরিয়ে দাও।পারফেক্ট সুইসাইড লাগা চাই।

সানভি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। আশমিন ফোন কানে নিয়ে বলল,

— সব কয়টা কে উপরে পাঠিয়ে দাও অমি।
একটা ও জেনে বেচে না ফেরে। কাজ শেষ করে আধঘন্টায় আমার গোডাউনে দেখা করো।

অমি আচ্ছা বলে ফোন কেটে দিলো। সে এতক্ষণ আশমিনের অনুমতির অপেক্ষায় ছিল।আশিয়ান তার দিকেই তাকিয়ে। অমি ইশারায় সায় জানাতেই আশিয়ান ক্রুর হাসলো। পুলিশ কমিশনার আর তার চেলাদের দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ গলায় বলল,

— কার কলিজায় হাত দিয়েছিস জানিস? মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর বউ,মাফিয়াআশিয়ান শিকদার আর ভেজালমুক্ত অমি শিকদারের বোন আর
ভাগ্নীর দিকে। তোদের আর বেচে থেকে কি হবে? ম*রে যা।

পরপর কয়েকটা গু*লি তে কাজ শেষ করে বেরিয়ে গেল আশিয়ান আর অমি।

জঙ্গলের সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে রেখেছে আশমিন। বুকের ব্যথা আজ আবার বেড়েছে। সে যাকেই মা বলে ডাকে সেই কেন এমন বিনাশিনী হয়ে উঠে! তার মা ডাকটাই কি বিষাক্ত?
গাড়ি থেকে বেরিয়ে টলমল পায়ে হেটে চলে জঙলের গভীরে।শেষরাত চলছে এখন।অনেকটা ভিতরে ঢুকতেই একটা খালি জায়গায় এসে থামলো আশমিন। আশেপাশেই কোথাও শেয়াল ডাকছে। আশমিন টান হয়ে শুয়ে পরলো ঘাসের উপর। পাশের হালকা ঢিবির মতো উচু জায়গাটা জরিয়ে ধরে ধরা গলায় গুনগুন করে গাইলো,

ওই চাদের টিপে মন ভরে না মা,,,
দোলনা দোলে মন দোলে না মা,,

রাতের চোখে ঘুম যে নামে,,
চাদের পাশে মেঘ যে থামে,,

আমার পাশে নেই তো তুমি মা,,

তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা,,

ডুকরে কেদে উঠলো আশমিন। মা বলে কয়েকবার ডেকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো কামিনী চৌধুরীর কবর। শুভ্র পাঞ্জাবি কবরের মাটিতে মাখামাখি হয়ে গেলো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দুই হাতে কবরের ঘাস পাতা পরিস্কার করতে লাগলো। মাঝে মাঝে হাত থামিয়ে জরিয়ে রইলো কিছুক্ষন। কষ্টে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তার ভাগ্যটা কেন এমন! কেন বারবার আপন মানুষ গুলো তাকে আঘাত করে! যাদের আগলে রাখার কথা তারাই কেন ক্ষতবিক্ষত করে দেয়?

চলবে,,
(আলহামদুলিল্লাহ। আপাতত একটু সুস্থ আছি। যারা এখন এই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হন নি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি,খুবই সাবধানে থাকুন। এই জ্বর আধমরা করে দেয়।আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জ্বর কমিয়ে দেয়ার জন্য। আমি আজ কতদিন ভাত খেতে পারিনা হিসেব নেই। এখনো খাবার পেটে পরে না।শুধু পানির উপর বেচে আছি। দোয়া করবেন সবাই।গল্পের আর কয়েক পর্ব আছে। খুব শীঘ্রই শেষ হবে গল্প। এতো ভালবাসা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। সাবধানে থাকুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here